অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী অষ্টাদশ পর্ব

0
439

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

অষ্টাদশ পর্ব

বাসায় এসেও সারাহ্ মৌনতাকে বরণ করে রেখেছে। আহনাফ খেয়াল করেছে শেষ কয়েকদিনে ওর আচরণের পরিবর্তন। আহনাফকে একপ্রকার এড়িয়ে চলছে সে। খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করে না, অনেক দেরি করে ঘুমায়।

সারাহ্ বিছানায় শুয়ে পড়ে। আহনাফ এসে আরেকপাশে অর্ধ শুয়ে ওর মাথায় হাত রেখে ডাকে,
“ঐশী।”

সারাহ্ চুপ করে আছে, চোখ বন্ধ। নিজেকে সে যথেষ্ট শান্ত রেখেছে। ঝ°গ°ড়া, চেঁ°চামে°চি সে পছন্দ করে না আর আহনাফকে যদি কোনো প্রশ্ন করে তবে তাই হবে। সম্পর্কের এমন অবনতি সে চায় না।

আহনাফ আবারো ডাকে,
“ঐশী?”

সারাহ্ চোখ বন্ধ রেখেই বলে,
“আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিন।”

আহনাফ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ো, আসো খাবে।”
“হাত সরান, আহনাফ।”

কড়া ভাষায় কথাটা বলে সারাহ্। আহনাফ হাত সরায়। এভাবে কখনো সারাহ্ কথা বলেনি। কি হলো এখন?

আহনাফ উঠে ডাইনিং এ চলে আসে। সারাহ্-র কথায় অপমানবোধ হচ্ছে আহনাফের। তাহসিনার ঘটনা শোনার পরও যে মেয়ে স্বাভাবিক ছিল, সে এমন কোন ঘটনায় বি°গড়ে গেল বুঝতে পারে না আহনাফ।

সময় ওদের এভাবেই কাটে। মাগরিবের পর সারাহ্ রুম গোছাচ্ছে। ঠিক এমনসময় আহনাফ গিয়ে বিছানায় বসে। এ সময় প্রতিদিন আহনাফ বই পড়ে, তবে আজ ব্যতিক্রম।

“ঐশী, রেগে আছো?”

সারাহ্ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
“না।”

ড্রেসিংটেবিলের উপরে থাকা হিজাব পিনগুলো গোছাতে শুরু করে। আহনাফ পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়ালো। হেসে বলল,
“এগুলো আবারো এলোমেলো হবে।”
“হোক।”

সারাহ্ চলে যেতে নিলে আহনাফ ওর হাত ধরে কাছে এনে বলল,
“কি হয়েছে? আমার কোনো ভুল? বলো তো।”

সারাহ্ হাতের দিকে তাকায়। আহনাফ হাত ছেড়ে ওর কোমড় জড়িয়ে কাছে আনে।

“বলো, নইলে ছাড়ছি না।”

সারাহ্ ছাড়াতে চাইছে না। কোনো চেষ্টা নেই, জো°রজবর°দ°স্তি করছে না। শান্ত একটা দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বি°ভ্রা°ন্ত হয়, সারাহ্-র থেকে সরে আছে। মেয়েটা শান্ত থেকেও ওকে ঘা°য়েল করার ক্ষমতা রাখে।

সারাহ্ চলে গেল। নিজের ভুল নিজেই খুঁজতে লাগলো আহনাফ।
______________________________________

পরদিন সকাল ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট, ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়েছিল মৃত্তিকা। রাতে ভালো ঘুম হয়নি বলে শরীর খারাপ করছিল, ঠিক এ কারণেই এখন ঘুমানো।

ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙে। কেউ ওকে স্বরণ করেছে। হাতে নিয়ে অচেনা একটা নাম্বার দেখে ইমতিয়াজ ভেবে রিসিভ করে।

“জি।”

মৃত্তিকার কথার জবাব এলো,
“কেমন আছো, মা?”

ইমতিয়াজ নয়, ফোনের অপরপাশে ওর বাবা ছিল। মৃত্তিকা হতাশ হয়, সাথে বি°র°ক্ত।

“কেন ফলো করেন আমাকে? আমি আপনার কি এমন কাজে লাগতে পারবো?”
“আমি ভালোবাসি তোমাকে।”

মৃত্তিকা জবাব দিলো না। এসব ভালোবাসাকে ঘৃ°ণা করে সে। যেসব ভালোবাসা পরিবার ভা°ঙে, সন্তানকে বাবার থেকে দূরে রাখে, সকলের কষ্টের কারণ হয়। সেসব কোনো ভালোবাসা হতেই পারে না।

দুদিকে থাকা স°মা°ধী নিরবতা মৃত্তিকা টুকরো করে বলল,
“আমার কল্পনায় সবসময় আমার একজন বাবা ছিল। সে বাবা আমাকে ভালোবাসতো, আমার মাকে ভালোবাসতো। সে বাবা আমার কান্নার সময় চোখ মুছে দিতো, আমাকে গল্প পড়ে শোনাতো, আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতো, আমার সঙ্গে খেলা করতো।”

মৃত্তিকা থামলে আবারো সেই পূর্ব নিরবতা বিরাজ করে। শীতল কণ্ঠে মৃত্তিকা বলে,
“কিন্তু আমার বাস্তবের বাবা আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন সব ধ্বং°স করেছে।”

কল কে°টে যায়। মৃত্তিকা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে৷ বাবা শিশুকালের স্বপ্ন যেভাবে শেষ করেছে, ঠিক সেভাবে ওর যৌবনকালের স্বপ্নও শেষ করছে। বাবার জন্যই নিজের ইচ্ছার বি°রু°দ্ধে একটা চরিত্রহীন ছেলেকে বিয়ে করতে হচ্ছে ওর।
______________________________________

নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে বেরিয়ে গেল সারাহ্। আহনাফ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি।

“ঐশী, নাস্তা রেডি করেছো?”

সারাহ্-র কোনো সারাশব্দ পাওয়া গেল না। কিভাবে পাওয়া যাবে, সে তো বাসায়ই নেই।

“ঐশী, ঐশী।”
কয়েকবার ডেকেও সারাহ্-র কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে আহনাফ রুমের বাইরে এসে দেখে টেবিলে নাস্তা আছে কিন্তু সারাহ্ কোথাও নেই।

সদর দরজার কাছে গিয়ে বুঝলো সারাহ্ বেরিয়ে গেছে, কারণ ওর জুতো জোড়াও নেই এখানে৷ আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, এভাবে এড়িয়ে চলার মানে কি?

বাসায় তালা ঝুলিয়ে আহনাফও বের হয়। কলেজে পৌঁছে মাঠের আশেপাশেও সারাহ্-কে দেখে না। নিশ্চয়ই টিচার্স রুমে আছে।

আহনাফ সাত পাঁচ ভাবে না। সোজা টিচার্স রুমে চলে যায়। রুমের দরজায় গিয়ে ম্যাডামদের উদ্দেশ্যে একটা লম্বা সালাম দেয়।

“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।”

দুই একজন ম্যাডাম সালামের জবাব দিলেন। আহনাফ চোখ বুলিয়ে কোথাও সারাহ্-কে না দেখে একজন ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কেমিস্ট্রির সারাহ্ ম্যাডাম আসেনি?”

আহনাফের প্রশ্ন যারা শুনেছে তাদের কয়েকজন হেসে দিলো। ম্যাডাম উত্তর দিলো,
“না, ও কি বাসায় নেই?”

আহনাফ থ°তমত খায়। বলল,
“ওকে, থ্যাংকস।”

ম্যাডামের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আহনাফ দ্রুত বেরিয়ে আসে। টিচার্স রুমে একটু হাসাহাসি এখনো চলছে। হয়তো কেউ কেউ এখন একটা গল্প বানানোর চেষ্টা করবে আহনাফ আর সারাহ্-কে নিয়ে।

মাঠের পাশে এসে দাঁড়ায় আহনাফ। ফোন বের করে সারাহ্-কে কল দেয়। একবার, দুবার, তিনবার রিসিভ হয় না। তরতর করে আহনাফের রাগ বাড়ে।

চোখ যায় কলেজের বড় গেইটের দিকে, সারাহ্ ভিতরে আসছে। আহনাফকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে উলটো পথে হাঁটা লাগালেও খুব একটা ফল হলো না। আহনাফ তাকে পাকড়াও করলো।

“কিসব হচ্ছে এসব ঐশী? কল রিসিভ করছো না কেন?”
“যখন কলের জন্য অপেক্ষা করতাম তখন দেন নাই, তাই এখন রিসিভ করি না।”
“স্কুল-কলেজের বাচ্চাদের মতো বিহেভ করবা না। রাগ উঠতেছে আমার।”

সারাহ্ ওর দিকে তাকিয়ে ব্য°ঙ্গসুরে বলল,
“ও, তাই নাকি? রাগ হচ্ছে? তো আর কি? পুরো কলেজের সামনে আমাকে কিস করেন। এতে তো আপনার রাগ কমে। হিজাবটা খুলবো নাকি?”

আহনাফ আশেপাশে তাকায়। অনেকে ওদেরকে দেখলেও কথা বোধহয় কেউই শুনছে না। মাঠে অনেক কোলাহল আছে।

আহনাফ নিচুস্বরে বলল,
“ঐশী, প্লিজ থামো।”

আহনাফ চলে যায়। সারাহ্-র নিরবতা অথবা তার কথা দুটোই ওকে আ°হ°ত করছে। সারাহ্ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে সেও চলে যায় টিচার্স রুমে।

নিজের চেয়ারে বসতেই ওর পাশে বসা ম্যাডাম বললেন,
“স্যার তো এসে তোমাকে খুঁজে গেছে।”

সারাহ্ উনার দিকে তাকাতেই উনি বলেন,
“কোথায় ছিলে?”

সারাহ্ অপ্রস্তুত হয়। বলে,
“উনি ভাড়া দিচ্ছিলেন, তখন আমি ভিতরে চলে এসেছিলাম। মাঠের ওদিকে ছিলাম তাই খুঁজে পায়নি।”
“চোখে হারায়।”

ম্যাডামরা মিটিমিটি হাসলেও সারাহ্ নিচুস্বরে বলল,
“ঘেচু হারায়।”
______________________________________

টিএসসিতে এসেছে সামিহা ও তানজিম। মনমরা অবস্থায় বসে আছে তানজিম। সামিহা এটা ওটা বললেও “হু” ছাড়া আর কোনো জবাব দিচ্ছে না সে।

সামিহা তানজিমের হাত ধরে বলে,
“কি রে? কয়েকদিন ধরেই তোকে চুপচাপ দেখছি। কোনো সমস্যা?”

তানজিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সামিহা আবারো বলল,
“আন্টি ঠিক আছে?”
“আম্মু ভালো আছে। সমস্যা অন্যকিছু নিয়ে।”

সামিহা তানজিমের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“কি?”
“মিউকোপু ইমতিয়াজ ভাইয়াকে পছন্দ করে।”
“আপুর না বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
সামিহা কপাল কুঁচকে কথাটা বলল।

তানজিম মাথা নেড়ে বলল,
“হুম, হয়েছে। তবুও আমি খেয়াল করেছি সে ভাইয়ার প্রতি দুর্বল।”

সামিহা ঠোঁট উল্টায়৷ বলে,
“এই ইমতিয়াজ ভাইটা কে?”
“আমার বড় বোন তাহমিনা আপুর হাসবেন্ড।”

সামিহা “অ্যা” নামক একটা অদ্ভুত বিকৃত শব্দ উচ্চারণ করে। তানজিম বলে,
“উনার সাথে এই বিষয় নিয়ে আমার একদফা ঝ°গ°ড়াও হয়েছে। বাট আমার মনে হয়না উনি ভাইয়াকে ভুলে যাবেন।”

সামিহা বলে,
“ভালোবাসা তো ভুলে যাবার মতো কিছু নয় তানজিম। আর তাহমিনা আপু বেঁচে নেই, তাই ভাইয়াও একা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে অবশ্যই একটা ভালো অপশন।”

তানজিম সামিহার দিকে তাকালে সামিহা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“মানে আমি বলতে চাচ্ছিলাম মানুষ তো আর একা থাকতে পারে না।”

তানজিম একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে বলে,
“হয়তো তুই ঠিক বলছিস। কিন্তু ভাইয়া মিউকোপুর সাথে সংসার করবে এটা আমি কোনো এক কারণে মানতে পারছি না।”

সামিহা তানজিমের হাত ধরে৷ আপাতত এই অস্থির মানুষটাকে শান্ত করার প্রয়োজন। বোনের প্রতি ভালোবাসা আছে, তাই বাস্তবতা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
______________________________________

বিকাল সাড়ে চারটা, বাসার সামনের রাস্তায় হাঁটছে মৃত্তিকা। চিন্তাহীনভাবে হাঁটছে সে। যার জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, তার আবার কিসের চিন্তা। যেটুকু চাওয়া ছিল, তাও এখন মাটিচাপা পড়ে গেছে।

কলরবের গাড়িটা একটু দূরে দেখতে পেয়ে থেমে যায় মৃত্তিকা। গাড়ির পাশেই কলরব দাঁড়ানো। বিদেশে চাকরি করা কলরব ছুটিতে দেশে এসেছে, তাই তার এখন প্রতিদিনই শুক্রবার।

কলরবের পাশের মানুষটাকে দেখে দুনিয়া এক জায়গায় স্থির হয় তার। এ যে ওর বাবা শরীফ। মৃত্তিকা পিছিয়ে যেতে নিলে কলরব ওকে ডাকে,
“হেই মিউকো, কাম হেয়ার।”

পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করলেও মৃত্তিকা পালায় না। বাবাকে নিয়ে কলরবের মুখোমুখি আজ নাহয় কাল হতেই হতো। মৃত্তিকা এগিয়ে যায়।

কলরব শরীফের দিকে ইশারা করে বলে,
“উনাকে চেনো?”

মৃত্তিকা হ্যাঁ বা না কিছুই বলে না। কেবলই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। শরীফ পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে বলে,
“আমার মেয়ে আমাকে চিনবে না তা কি করে হয়?”
কথাটা বলেই শরীফ হেঁটে চলে যায়।

মৃত্তিকা একবার সেদিকে তাকিয়ে মাথানিচু করে। কলরব গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে,
“মানে এতো বড় মিথ্যা কথা কেন? তুমি মিথ্যা বলেছো, তোমার মামা মিথ্যা বলেছে, তোমার খালু মিথ্যা বলেছে। মানে মিথ্যা আর মিথ্যা। ডিরেক্ট বললেই তো হতো তোমার মা আর বাবার বিয়ের আগেই তুমি হয়েছো।”

মৃত্তিকা চোখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
“চুপ করেন, আমার মামকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না।”

কলরব কান চুলকে মাথা ঝে°ড়ে বলল,
“আহা, রেগে যাচ্ছো কেন? এসব নরমাল তো। (একটু ভেবে) কি যেন বলেছিলে তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল না?”

কলরব শব্দ করে হেসে বলল,
“না জানি এ শরীরে কতশত হাত পড়েছে। বাই দা ওয়ে, তোমার মা কি প্র°স্টি°টিউট ছিলো?”

কলরবের ডান গালে একটা চ°ড় পড়ে৷ ওর শেষের কথায় মৃত্তিকার মাথায় র°ক্ত চ°ড়েছে৷ শান্ত মেয়েটা ধীরে ধীরে হিং°স্র হয়ে গেছে। মামের নামে একটু বাজে কথা যে সহ্য করতে পারে না, সে এতো বড় কথা কিভাবে সহ্য করবে।

মাথা তুলার আগেই কলরবের বাম গালে আবারো একটা চ°ড় পড়ে। কিছু বলার আগেই ওকে ধা°ক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মৃত্তিকা।

আঙ্গুল উঁচিয়ে চোখ রা°ঙিয়ে বলে,
“সবার জানা উচিত, কোথায় থামতে হয়। না জানলেই বি°পদ।”

কলরব উঠে বসে বলল,
“ঠিক করলে না এসব মিউকো?”
“চুপ, মামকে নিয়ে কথা বলে আপনি ঠিক করেছেন?”

কলরব দাঁড়িয়ে শার্ট ঝা°রতে ঝা°রতে বলল,
“তোমাকে বিয়ে করছি না আমি, এমন মেয়ে আমার যোগ্য নয়।”

মৃত্তিকা ভ্রূ উঁচিয়ে ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“ভাবটা এমন যেন আমি বউ সেজে বসে আছি। এমন চরিত্রহীন ছেলের থেকে নি°স্তার পেয়ে শান্তি লাগছে।”

মৃত্তিকা বাসায় চলে আসে। শরীফ রিপা বেগমের নামে উল্টাপাল্টা কথা ছড়ায় এটা মৃত্তিকা আগে থেকেই জানে। শরীফের পরিবার অর্থাৎ মৃত্তিকার দাদাবাড়ির সবার কাছে রিপা বেগমকে খল°নায়িকা বানিয়েছে শরীফ, বাইরের লোকের কাছেও নিজের সন্তানের মায়ের নামে খারাপ কথা বলতে তার ঠোঁটে আটকায় না।

রুমে এসে দরজা লাগিয়ে মৃত্তিকা কান্না করে দেয়। নিজেকে এতোক্ষণ যতই শক্ত রাখুক না কেন বদ্ধ ঘরে, একাকিত্বে ওর কান্নারা এসে জুড়ে বসে। এ কান্না রিপা বেগম দেখলে হয়তো কলরবকে খু°ন করতো।

মৃত্তিকার কাছে আজ এমন কেউ নেই যে ওর চোখের পানি মুছে দিবে, যে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে নিষেধ করবে। মৃত্তিকার একাকিত্ব ঘু°চবে না।
______________________________________

আহনাফের আগেই বাসায় এসেছে সারাহ্। মিটিং থাকায় আহনাফের বের হতে দেরি হয় আর বেরিয়ে সে সারাহ্-কে দেখে না। বাসায় এসে ব্যাগটা সোফায় ছু°ড়ে ফেলে আহনাফ।

ডাইনিং এ কাজ করছে সারাহ্। আহনাফ গিয়ে একটা চেয়ার টেনে সারাহ্-কে বসিয়ে দিয়ে বলে,
“কি সমস্যা তোমার?”

সারাহ্ কিছুই হয়নি এমন একটা চেহারা করে তাকিয়ে আছে। আহনাফ ওর দিকে ঝুঁ°কে বলল,
“কি হয়েছে?”

সারাহ্-র এমন নরমাল চেহারা দেখে আহনাফের রাগটা বাড়ে। ধ°ম°কের সুরে বলল,
“কথা বলছো না কেন?”

সারাহ্ আহনাফের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। বলে,
“আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে নাকি চিন্তার অভিনয় করছেন?”

আহনাফ সারাহ্-র থুতনিতে হাত রেখে বলে,
“এসব কেন বলছো?”
“পারফেক্ট হাসবেন্ড হওয়ার অভিনয় করেছেন? ঠকিয়েছেন আমাকে।”

সারাহ্-র দুইগালে হাত দেয় আহনাফ। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“একটু শান্ত হও। আমি কখনোই পারফেক্ট হাসবেন্ড হতে পারবো না। হ্যাঁ, অভিনয় করেছি, কিন্তু সেটাও তোমার খুশির জন্য।”
“কেন?”

সারাহ্-র প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওর ডানগালে ঠোঁট ছোঁয়ায় আহনাফ। সারাহ্ উত্তরের আগ্রহ দেখিয়ে বলে,
“কেন অভিনয় করেছেন আহনাফ?”
“কথা বলো না প্লিজ। এতো উত্তর আমি দিতে পারবো না।”

সারাহ্-র নিরবতা আহনাফকে বুঝিয়ে দিয়েছে সারাহ্ ওর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উপনীত হয়েছে। এই মানুষকে অনুভূতিটুকু জানিয়ে দিলেই তা পুরোনো হয়ে যাবে। তার জানার আগ্রহ থাকুক আর আহনাফ অনুভূতি গোপন করতে থাকুক।

চলবে……

(আমার গ্রুপের লিংক কমেন্টে দেয়া আছে, যারা গল্প পড়েন তারা এড হতে পারেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here