#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ঊনবিংশ পর্ব
রাত আটটা, শাফিন সাহেব মাত্রই বাসায় এসেছেন। একটা বিষয় নিয়ে উনি খুবই রেগে আছেন আর তা হলো কলরবের সাথে হওয়া উনার কথা কা°টা°কা°টি।
“মিউকো।”
শাফিন সাহেবের ডাকে মৃত্তিকার সাথে সুরভিও বেরিয়ে আসে। মৃত্তিকা একগ্লাস পানি এনে মামার সামনে রেখে বলল,
“জি, মামা।”
“কলরব কি বলেছে তোমাকে?”
মৃত্তিকা মাথানিচু করে দাঁড়ায়। দেলোয়ারা বেরিয়ে আসে। বিচলিত হয়ে বলে,
“কি হয়েছে?”
শাফিন সাহেব মৃত্তিকাকে জিজ্ঞাসা করে,
“কলরবের সাথে তোমার কি কথা হয়েছে?”
মৃত্তিকা নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রাখলো। তারপর একে একে কলরবের সকল আচরণ খুলে বলল মামাকে। কলরবের সাথে যে ওর বাবাও ছিল তাও জানালো।
শাফিন সাহেবের রাগ বাড়লো। চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
“সাহস কি করে হলো আমার বোনের নামে এধরনের কথা বলার? ওই ছেলেকে আমি..”
রাগে কি°ড়মি°ড় করছেন উনি। মৃত্তিকা উনাকে ধরে বলে,
“মামা, নিজের শরীর খারাপ করবেন না।”
দেলোয়ারা এসে শাফিন সাহেবকে সান্ত্বনা দিলেন,
“দেখো, যা হয়েছে তা হয়ে গেছে। পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ তাও শুকরিয়া করো বিয়ের আগেই এসব হয়েছে না হলে মেয়েটার জীবনের বাকিটাও শেষ হয়ে যেত।”
শাফিন সাহেব সোফায় বসেন। সামনে থাকা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি পান করে। তারপর বলেন,
“আমার দোকানে এসেছিল। যা নয় তাই ব্যবহার করেছে। মি°থ্যাবা°দী, প্র°তা°রক এমন কোনো কথা নেই যা বলেনি।”
শাফিন সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। মৃত্তিকা সুরভির পাশে গিয়ে বসে। সুরভি ওর হাত ধরে চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বলে।
“ইমতিয়াজ ঠিক বলেছিল মিথ্যা বলাটা ভালো নয় বরং আরো খারাপ হবে। জানাজানি হলে বিষয়টা খারাপের দিকেই এগোবে। এখন তাই হলো।”
শাফিন সাহেবের কথায় মৃত্তিকা বড়বড় চোখে তাকায়। হুট করে ইমতিয়াজের নাম শুনে তার মন আবারো ছটফটিয়ে উঠে।
______________________________________
সারাহ্ বারান্দায় বসে আছে। আহনাফ ওকে যতই বোঝাতে চায় সে বুঝতে চায় না। কিছুটা ইগো দেখিয়েই আছে সে।
টেবিলে বসে আহনাফ কিছু পড়ছে আর বারবার দেখছে বারান্দার দরজার দিকে। একপর্যায়ে ডাক দেয়,
“ঐশী।”
সারাহ্ জবাব দেয় না, উঠেও আসে না। আহনাফ আবারো ডাকে,
“ঐশী, এদিকে এসো।”
তবুও সারাহ্-র কোনো সারাশব্দ না পেয়ে আহনাফ দুষ্টুমি করে ডাকে,
“জান, কলিজা, গু°র্দা, পাকস্থলী এদিকে আসো।”
আহনাফের কথায় সারাহ্-র হাসি পায়। সে নিরবে হাসে, কিন্তু এবারেও জবাব দেয় না। আহনাফ ফোঁ°স করে একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে যায়। আহনাফের আসার শব্দে সারাহ্ মলিন মুখে বাইরে তাকিয়ে থাকে।
“ডাকছি যে শুনতে পাচ্ছো না?”
না শুনার ভান করে বসে আছে সারাহ্।
আহনাফ ওকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসে। বিছানায় বসিয়ে নিজে পাশে বসে বলল,
“অবুঝ বাচ্চাদের মতো আচরণ করো না, ঐশী। তোমাকে মানায় না এসবে। (একটু থামে) তুমি জানো আমার অতীত সম্পর্কে। আমাকে একটু সময় দাও।”
এবারে সারাহ্ কান্না করে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ একভাবে কাঁদলো সে, আহনাফ চেয়ে রইলো ওর দিকে।
“সময় লাগলে আগে বলতে পারতেন। কিন্তু না প্রথমদিন থেকে আমার সাথে অদ্ভুত আচরণ করে গেছেন। যেন আমি ঘুড়ি, হাওয়ার দোলায় সুতার সাথে ওড়ছি আর আপনি ইচ্ছামতো সুতা ছাড়ছেন।”
আহনাফ ওর গালে হাত দেয়। সারাহ্ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আহনাফ জোর করে ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“আমি অপরাধ স্বীকার করছি। কিন্তু প্লিজ চুপ করে এরকম গু°ম°রে থেকো না।”
সারাহ্ ওর দিকে তাকায় না। চোখ নামিয়ে রেখেছে। কপালের দুপাশে কয়েকটা চুল এলোমেলো হয়ে এসে পড়েছে। আহনাফ চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,
“ম্যাডাম তো তোমাকে প্রেগন্যান্ট বলে বেড়াচ্ছে।”
সারাহ্ অ°গ্নিদৃষ্টি দেয় আহনাফের দিকে। আহনাফ দাঁত বের করে হেসে বলল,
“বাংলা সিনেমার মতো মাথা ঘুরে পড়লে আর প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে?”
কথা শেষ করে হো হো করে হেসে উঠে সে। সারাহ্ একটু সরে বসে বলল,
“আগের দুইদিন আমার ব°মি হয়েছিল, আবার পিঠার গন্ধে অস্বস্তি হচ্ছিল৷ আগের দিনও খাবারের গন্ধে গা গু°লি°য়েছে। তাই ম্যাডাম এসব ভেবেছে।”
আহনাফ ভ্রূ উঁচিয়ে তাকায়, মুখে দুষ্ট হাসি। সারাহ্ আড়চোখে ওকে দেখে বলে,
“কিন্তু প্রেগন্যান্সির জন্য না, আমার প্রেশার কম ছিল আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছিল।”
আহনাফ হেসে ওর কানের কাছে এসে বলল,
“আমি জানি তুমি প্রেগন্যান্ট নও।”
সারাহ্ গালে চুম্বন করে চলে যায় আহনাফ। সারাহ্ রাগে গাল মুছে। আহনাফের এসব আচরণ ওর একদমই সহ্য হয়না।
আহনাফ আবারো ফিরে এসে বলল,
“কাল বিকেলে ঢাকায় যাবো।”
সারাহ্ একইভাবে বসে থেকে বলল,
“কোথাও যাবো না আমি।”
আহনাফ এসে ওর পাশে বসলো। গালে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে হালকা স্পর্শ করে বলে,
“যেতে তো হবেই তোমার। ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক।”
আহনাফ আবারো সারাহ্-র দিকে এগিয়ে আসলে সারাহ্ আহনাফকে ধা°ক্কা দিয়ে সরে যায়। একটা ঢোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শান্তভাবে বলে,
“যতদিন মেনে নিতে না পারবেন, ততদিন দূরত্ব রেখে চলবেন। যদি তা রাখতে না পারেন, তবে আমি চিরদিনের দূরত্ব তৈরি করতে বাধ্য হবো।”
সারাহ্ একটু থামে। বড়বড় দুটো নিশ্বাস ফেলে বলে,
“বাইরের মেয়েদের সম্মান করতে পারেন, অথচ নিজের তিনকবুলের বিয়ে করা বউকে সম্মান করা যায় না। অধিকার জোর করে পাওয়া যায় না, সম্মান করলে অধিকার আপনা থেকেই আসে।”
______________________________________
রাত ৯ টা বেজে ৪২ মিনিট, মাত্রই অফিস থেকে বাসায় এসেছে ইমতিয়াজ। দরজা খুলতেই বিড়ালটা দৌড়ে ওর কাছে আসে। ইমতিয়াজ তাকে কোলে তুলে আদর করে বলে,
“মিউকো, মিস করছিলি আমাকে?”
অপরপাশের মিউ মিউ শব্দে ইমতিয়াজ হেসে রুমে যায়। শার্ট খুলে বিছানায় ফেলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতঘড়ি খুলছে তখনই ফোন বাজে।
পকেট থেকে ফোন বের করে শাফিন সাহেবের নাম্বার দেখে রিসিভ করে।
“আসসালামু আলাইকুম, মামা। কেমন আছেন?”
কিছুক্ষণের নিরবতার পর অপরপাশ থেকে উত্তর আসে,
“মামা ভালো আছে, আমি ভালো নেই।”
মৃত্তিকার কন্ঠে চমকে উঠে ইমতিয়াজ। ফোন রেখে দিতে চেয়েও রাখে না। বলে,
“আপনার ভালো থাকার মেডিসিন আমার কাছে নেই।”
“এক কথায়ই কোনো ডাক্তার ওষুধ দেয় না। ভালো করে বলতে হয়। ডাক্তারেরও শুনতে হয়।”
“ভণিতা না করে কি বলতে চান তাই বলেন।”
মৃত্তিকা আবারো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“দেখা করতে চাই, কথা আছে। সময় হবে?”
“না, এখন লং টাইম ডিউটি।”
সরাসরি এভাবে না করায় মৃত্তিকার একটু খারাপ লাগলো। তাই সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর কল কে°টে দেয়।
ইমতিয়াজ আবারো কল করে। রিসিভ হলেও মৃত্তিকা কথা বলে না।
ইমতিয়াজ নিজে থেকেই বলে,
“কাল অফিস টাইমের পর দেখা করতে পারবো, ৭ টার পর। কোথায় থাকবেন?”
মৃত্তিকা একটু খুশি হলেও মুখে হাসলো না। বলল,
“কাল কাকরাইল বড়মণির বাসায় যাবো। তবে আশেপাশে যেকোনো জায়গায় দেখা করতে পারি।”
“ওকে, আমি বাসার কাছেই থাকবো। কল দিলে নিচে আসবেন।”
“ঠিক আছে।”
“নাম্বার কি আগেরটাই আছে?”
“হুম।”
“ওকে, বাই।”
মৃত্তিকা ফোন রেখে হেসে দেয়। এতোদিন পর ইমতিয়াজের সাথে দেখা হবে। হঠাৎ তানজিমের কথাগুলো মনে পড়ে। মুখটা মলিন হয় তার। সবাই শুধু তাদের কথা কেন ভাবে? মৃত্তিকার দিকটা কি কেউ বুঝে না?
মৃত্তিকার ঠোঁট কেঁপে উঠলো। ডানচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু। চোখজোড়া বন্ধ করলো সে।
______________________________________
পরদিন সকালে,
তানজিম এখনো ভার্সিটিতে আসেনি। একের পর কল করছে সামিহা। রিসিভ করার নামগন্ধও নেই। কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজ আসে,
“আমি আজ ক্লাস করবো না, নোট দিয়ে দিস।”
সামিহার মনটা একটু খারাপ হলো। কারণ জিজ্ঞাসা করে ম্যাসেজ করলে ফোন অফলাইন দেখালো। নিশ্চয়ই তানজিমের বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে।
এদিকে মৃত্তিকা, শাফিন সাহেব তানজিমের বাসায় এসেছে। লুৎফর রহমানও আজ দোকানে যাননি। ফরচুন শপিংমলে উনার দুটো কাপড়ের দোকান আছে। কর্মচারী থাকায় মাঝে মাঝে দোকানে না গেলেও কাজ চলে যায়।
মূলত বাবার কথায় ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করেছে তানজিম। মৃত্তিকার সাথে কথা বলার বা দেখা করার ন্যূনতম রুচি ওর নেই। খালাতো বোনের হাসবেন্ডকে পছন্দ করতে পারে, এরকম মেয়েকে তানজিম সহ্যই করতে পারে না।
লুৎফর সাহেব ইমতিয়াজকে কল করে অফিস ছুটির পর বাসায় আসতে বলেন, ইমতিয়াজও রাজি হয়। বাসার যেকোনো সমস্যা বা সিদ্ধান্তে ইমতিয়াজ উনাদের ভরসার জায়গা।
মৃত্তিকা মমতাজ বেগমের সাথে কথা বলছে। তানজিম এসে মাকে বলল,
“আম্মু, আমার তো এখানে থাকার কোনো দরকার নেই। আমি কি যেতে পারি?”
“না, থাকো। ইমতিয়াজ আসা পর্যন্ত থাকো।”
মৃত্তিকা তানজিমের দিকে একনজর তাকায়। তানজিম বিরক্তি নিয়ে বলে,
“ভাইয়াকে এখানে টা°নার কি দরকার ছিল? যার যার সমস্যা সে সে সমাধান করবে।”
“তানজিম, তোমার বাবা তোমার চেয়ে ভালো বুঝে।”
তানজিম রেগে চলে যায়। মৃত্তিকা বুঝে ওর রাগের কারণ, কিন্তু সে নিরব থাকে। এক্ষেত্রে কথা বলার অর্থ আ°গু°নে ঘি ঢালা।
দুপুরের পর কলরবের ফ্যামিলি বাসায় আসবে। সব বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে আজকে।
______________________________________
আজ আহনাফের সাথেই কলেজে এসেছে সারাহ্। তবে একেবারেই চুপচাপ সে। যেন কথা বলাই ভুলে গেছে। আহনাফও আজ চুপ।
প্রথম পিরিয়ডে ক্লাস আছে আহনাফের। ক্লাসে মন বসাতে কষ্ট হলো তার। কারণটা বুঝতে পেরেছে, গতরাতের সারাহ্-র কথা আর ওদের মাঝে অদৃশ্য দেয়ালের যে বিভাজন তৈরি হয়েছে সেটা আহনাফ মানতে পারছে না।
কোনোমতে ক্লাস করে বেরিয়ে আসে। নিজেকে বারবার বোঝাতে থাকে, কিন্তু শান্ত করতে পারে না। অস্থিরতা বিরাজ করছে তার মনে। দুরন্ত ঘোড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটাছুটি করছে বুকের বামপাশে থাকা সেই য°ন্ত্র।
রুমে এসে বসে মাথানিচু করে থাকে। বারবার নিজেকে একই কথা বোঝাচ্ছে,
“ঐশী কেউ না। ওর কথা ভেবো না, কষ্ট পাবে। সব অনুভূতি মি°থ্যা, এসবের কোনো মূল্য নেই। তাহসিনা ছাড়া আর কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না, বুঝবে না। ঐশীর প্রতি থাকা সকল অনুভূতিকে ক°বর দাও, মূল্যহীন ওগুলো।”
নিজেকে বোঝাতে ব্যর্থ হয় আহনাফ৷ এই একটা মেয়ে ওকে সর্বোচ্চ এলোমেলো করেছে। ভদ্র আহনাফকে অভদ্র করেছে, শান্ত আহনাফকে অশান্ত করেছে। মেয়েটার শান্ত চাহনি, কথা কিংবা অনবরত কাঁপতে থাকা সেই ওষ্ঠোধর সবকিছু আহনাফকে পাগল করেছে।
আহনাফের এমন অস্থিরতার ঠিক উলটো চেহারা সারাহ্ ধারণ করেছে। শান্তভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করছে। ক্লাসে যাওয়ার সময় টিচার্স রুমে আহনাফকে দেখেছে। আহনাফ যে অন্যমনস্ক হয়ে আছে তা সে খেয়াল করেও নিশ্চুপ।
ওরা দুজন যেন দুটি দ্বীপের বাসিন্দা। একটি দ্বীপের ঢেউ শান্ত, আরেকটি দ্বীপে হচ্ছে সুনামি। আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ আর ভেসে যাচ্ছে সে দ্বীপে থাকা আহনাফ।
______________________________________
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মৃত্তিকার নাম্বারে ম্যাসেজ দেয় ইমতিয়াজ,
“আমি অফিস থেকে বেরিয়েছি, বাসার কাছে চলে এসেছি। আপনি রেডি থাকেন। – ইমতিয়াজ।”
ম্যাসেজটা দেখে মৃত্তিকা দ্রুত ডি°লিট করে দেয়। বাসার সবার সামনে বসে আছে সে। দ্রুত চোখে সকলের দিকে তাকায়। কিভাবে বের হবে সে তাই ভাবতে থাকে।
বিকালে কলরবের ফ্যামিলি এসেছিল। মৃত্তিকা নিজেই বিয়ে ভা°ঙার কথা বলেছে আর তা ইতোমধ্যে ভে°ঙেও গেছে। বাবাকে নিয়ে অনেক কথা হলেও মৃত্তিকা সেখানে ছিল না। এখন বাসার সবাই মোটামুটি স্বাভাবিক আছে।
মৃত্তিকা উঠে রুমে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে। সাদা সুতির থ্রিপিসের সাথে সোনালী রঙের স্কার্ফ মাথায় পেছিয়ে নেয়। বুকের ভেতর সাহস জুগিয়ে ড্রইংরুমে আসে সে।
শাফিন সাহেবকে বলল,
“মামা?”
“জি, মামা।”
মৃত্তিকা চঞ্চল চোখে এদিকওদিক তাকিয়ে বলে,
“আমি একটু বাইরে যেতে চাই। যেতে পারি?”
শাফিন সাহেব হেসে বলেন,
“সুরভি নেই বলে ভালো লাগছে না? আচ্ছা, যাও। বেশি দূরে যেও না।”
“থ্যাংক ইউ।”
মৃত্তিকা হাসি হাসি মুখে বেরিয়ে যায়। পড়ার টেবিলে বসে মৃত্তিকার কথা শুনেছে তানজিম। কিন্তু ওর আন্দাজে ইমতিয়াজের কথা আসে না।
বাসার বাইরে এসে ইমতিয়াজকে কল দেয়। ইমতিয়াজ রিসিভ না করে ওর দিকে এগিয়ে আসে।
“বাসার কাছে থাকবো বলেছিলাম, সামনে না।”
মৃত্তিকা একপ্রকার লাফিয়ে উঠে বামদিকে ইমতিয়াজকে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। মৃত্তিকা পূর্ণদৃষ্টি দেয় ইমতিয়াজের দিকে। গাঢ় খয়েরী শার্ট, সাথে কালো প্যান্ট, শার্টের হাতা কনুই অব্ধি গুটিয়ে রাখা, প্যান্টের কোমড়ের দিকে অফিস আইডি কার্ড ঝুলানো।
ইমতিয়াজ হাত বাড়িয়ে হাঁটতে ইশারা করে। হাঁটতে হাঁটতে মৃত্তিকা আবারো ওর দিকে তাকায়। নিজেই নিজেকে ফিসফিস করে বলল,
“নজর খারাপ হয়ে গেছে, আর দেখিস না।”
একটা ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত ওদের গন্তব্য হয়। কফি অর্ডার করে মুখোমুখি বসে দুজনে।
“বলুন, কি কথা বলতে চাচ্ছিলেন?”
মৃত্তিকা লজ্জার চাদর ফেলে স্বাভাবিক হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার কথা আসলে শোনার মতো কেউ নেই। কারো ধৈর্য নেই, সময় নেই। (একটু থামে) নিজেকে কেমন যেন যাযাবরের মতো মনে হয়। হয় মামার বাসা আর না হয় বড়মণির বাসা। নিজের বলে কিছু নেই আমার এদেশে।”
ওদের কফি চলে আসে। ইমতিয়াজ ওকে খেতে ইশারা করে কাপে চুমুক দেয়।
মৃত্তিকা এক চুমুক কফি পান করে আবারো বলা শুরু করে,
“কলরবের সাথে অনেক ঝা°মেলা হয়েছে, বিয়েও ভে°ঙে দিয়েছি।”
“কিরকম ঝা°মেলা?”
ইমতিয়াজের কথায় কথা থামে মৃত্তিকার। ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“মামকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছে। বলেছে আমি নাকি..”
মৃত্তিকা আর বলতে পারে না। ইমতিয়াজ জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি কি?”
মৃত্তিকা মাথানিচু করে ভারি কন্ঠে বলল,
“আমি মামের (একটু থামে) মামের না°জায়েজ সন্তান আর আমার (আবারো থামে) শরীরে নাকি অনেক পুরুষের..”
ইমতিয়াজ ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দেয়। মৃত্তিকা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকায়। ইমতিয়াজ হাত সরিয়ে নেয়। মৃত্তিকার নয়নের ধারা আবারো গড়িয়ে পড়ে।
ইমতিয়াজ টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
“চোখ মুছে নেন।”
মৃত্তিকা চোখ মুছে নাক ঝে°ড়ে নেয়। ইমতিয়াজ বলে,
“এতো কথা বলে কেউ পার পেয়ে গেল?”
“থা°প্প°ড় মে°রেছি।”
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ইমতিয়াজ বলল,
“একটা মেয়ের থা°প্প°ড়ে কি এমন হয়েছে? প্রত্যেকটা শব্দের জবাব দেয়া উচিত ছিল।”
মৃত্তিকা মাথানিচু করে রইলো। স্কার্ফ পেরিয়ে কপালের দুপাশে চুলগুলো এসে পড়েছে। মৃত্তিকা কানের পিছনে চুল গুজে বলে,
“বাবাকে কি করবো? সারাজীবন মামের নামে এসব বলেই গেল। উনিই তো কলরবকে এসব বলেছে।”
ইমতিয়াজ শান্তভাবে বলে,
“আপনার বাবা কি করে?”
“ডাক্তার।”
ইমতিয়াজ হেসে দেয়৷ বলে,
“ডাক্তার হয়ে মেয়ের পেছনে সারাদিন কিভাবে থাকে?”
মৃত্তিকা একটু ভেবেচিন্তে নিজের মনের সন্দেহের কথা বলেই দেয়।
“উনি সারাদিন থাকে না, মাঝেমধ্যে থাকে। আর (একটু থেমে আশেপাশে তাকায়) উনার স্পা°ই আমার আশেপাশে থাকে।”
“কি?”
মুখ বাকিয়ে কপাল কুঁচকায় ইমতিয়াজ।
মৃত্তিকা মাথা নাড়ে। মুখে বলে,
“এটা আমার সন্দেহ। নাহলে আমার প্রত্যেক পদক্ষেপের খবর উনার কাছে কিভাবে থাকে?”
মৃত্তিকা আবারো আড়চোখে এদিকওদিক তাকায়। বলল,
“বাবার কাছে একটা পি°স্ত°লও আছে। আমি নিজে দেখেছি ওটা। অ°বৈ°ধ নয়, বৈ°ধ।”
ইমতিয়াজ চোখ ছোট করে তাকায়। ওই লোকটা কি আসলেও একজন ডাক্তার নাকি এর আড়ালে অন্যকিছু? প্রশ্নটা মৃত্তিকাকে না করলেও জানার আগ্রহ তীব্র থেকে তীব্র°তর হতে থাকে ইমতিয়াজের।
চলবে…..