অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী একষষ্টি পর্ব (৬১ পর্ব)

0
333

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

একষষ্টি পর্ব (৬১ পর্ব)

ফজরের পর পরই আহনাফ বেরিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারাহ্ নামাজ শেষ করে খুব তাড়াহুড়ো করে বলে,
“এতো ভোরে যাচ্ছেন কোথায়? এখনো তো ঠিক করে সূর্যই উঠলো না।”

আহনাফ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,
“মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”
“মেয়ে?”
সারাহ্ কপাল কুঁচকায়।

আহনাফ হাসি চেপে বেশ সিরিয়াস ভাব করে বলল,
“হুম, মেয়ে। এক চেহারা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত, তাই নতুন মুখ দেখতে হবে।”

সারাহ্ এগিয়ে এসে ওর শার্ট খুলে ফ্লোরে ফেলে দেয়। রাগ দেখিয়ে বলে,
“আজকালের বেডা জাত, অ°জাত, কু°জাত, বদ°জাত।”
“গা°লি দেও কেন?”

সারাহ্ শার্ট তুলে ফার্নিচার মুছতে মুছতে বলে,
“না, আপনাকে আমি আদর করবো? অসভ্য লোক, ঘরে প্রেগন্যান্ট বউ রেখে বাইরে যাচ্ছে মেয়ে দেখতে।”

আহনাফ তড়িঘড়ি করে বলল,
“আমার শার্ট?”
“এটা আজকে থেকে তেনা।”

সারাহ্ হিজাব খুলে গিয়ে বসে। এখনো সে রাগে ফোঁ°সফোঁ°স করছে। আহনাফ ওর কোলে শুয়ে বলল,
“ঘরে বউ কোথায় দেখতেছো? (একটু থেমে) হ্যাঁ, মানছি একটা বেডি আছে। সে আমার সাইদার আম্মু, বউ তো না।”

সারাহ্ ওকে ধা°ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। কপাল কুঁচকে বলল,
“কবুল পড়েন নাই? এখন অস্বীকার করেন কেন?”

আহনাফ মাথার নিচে দুইহাত দিয়ে বলল,
“একদিন এই বাসায় খাইতে আসছিলাম। একবার খাইলাম একটা বেডি দিয়া দিলো। এখন মনে হইতেছে দুইবার খাওয়া দরকার ছিল, দুইটা বেডি পাইতাম।”

সারাহ্ চোখ রাঙিয়ে বলে,
“একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না, আহনাফ।”

আহনাফ হাসিমুখে ধমক দেয়,
“ওই, আহনাফ কেন? কল মি সাদাবের পাপা।”
“আহনাফই বলবো, দুই বেডি মানে কি হ্যাঁ? আমার বোনের দিকে নজর? চোখ খুঁ°চিয়ে তুলে দিবো।”

আহনাফ উঠে বসতে বসতে বলল,
“আস্তাগফিরুল্লাহ। আল্লাহ মাফ করুক, এসব চিন্তা আমার নাই।”

সারাহ্ কিছু বলে না। আহনাফ আবারো বলে,
“বেডি দিলেও একটু ভালো একটা দিতো। কি খেঁ°কখেঁ°কানি দিছে একটা।”

“বেডি কি? কল মি সাইদার আম্মু।”
ভাব নিয়ে কথাটা বলে সারাহ্।

আহনাফ উঠে গিয়ে আরেকটা শার্ট বের করে পড়তে শুরু করে। সারাহ্ আবারো এসে বোতামে হাত দিলে আহনাফ বলে,
“ভেরি ব্যাড ঐশী, তুমি আমার লজ্জাহরণ করছো।”

সারাহ্ সরে যায়। আহনাফ মুচকি হেসে ঠিকঠাক হয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে সারাহ্-র কপালে গভীরভাবে চুম্বন করে বলল,
“চিন্তা করো না, তুমি ছাড়া..”

কথার মাঝেই থেমে যায় সে। দ্রুত পায়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারো বলে,
“বেডি শুধু দেখবো, ঘরে আনবো না।”

সারাহ্ রাগ দেখিয়ে বলে,
“আর ঘরে আসতেও হবে না। ভাগেন।”

সারাহ্ ওকে ধা°ক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আহনাফ হাসতে হাসতে চলে যায়। সারাহ্ সেদিকে চেয়ে থেকে মনে মনে একটা অদ্ভুত কথা ভাবছে,
“লোকটা এতো এতো কথা বলে অথচ ওকে ভালোবাসিটা আজও বলে না, কেন? সেই ভালোবাসা কি তাহসিনার জন্য কেবল প্রযোজ্য?”

হঠাৎ করে সারাহ্-র মনে পড়ে আহনাফের কাছে তো ফোন নেই। নিজের ফোন নিয়ে সে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসে। লিফট থেকে নেমে আহনাফকে গেইটের কাছে দেখে জোরে ডাকে,
“আহনাফ, দাঁড়ান।”

আহনাফ ফিরে আসে। সারাহ্ জোরে জোরে হাঁপাতে থাকে। একটু দ্রুত হাঁটাহাঁটি করায় তার নিশ্বাস ভারি হয়ে এসেছে।

আহনাফ ওকে ধরে বলে,
“কি হলো?”
“ফোন নিয়ে যান।”

আহনাফ ফোনটা পকেটে নিয়ে কঠোরভাবে বলল,
“তোমাকে আমি যত সাবধানে থাকতে বলি, ততই তুমি এসব উল্টাপাল্টা কাজ করে বসো।”
“সরি।”
“বাসায় যাও।”

সারাহ্ যায় না। বলে,
“নাস্তা করে যান, আসেন।”
“বাইরে খেয়ে নিবো, দেরি হচ্ছে।”
______________________________________

“এখন তুমি কি করতে চাও?”

নিয়াজীর কথা ইমতিয়াজ খুব একটা মাথা ঘামায় না। সকালের নাস্তার জন্য রুটি বানাতে বানাতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“কি করার কথা বলো? শাফিনকে মে°রে দেই আর তার আগে তোমাকে।”

মিউকো মিউ মিউ শব্দে এসে ইমতিয়াজের পায়ের কাছে দাঁড়ালে, ইমতিয়াজ তাকে কোলে তুলে নেয়। নিয়াজী বুঝে এই ছেলেটার অন্তত ওকে নিয়ে খুব একটা মাথাব্য°থা নেই।

“তোমার মনে হচ্ছে না শাফিন ওখান বেরিয়ে এলে তোমার স্ত্রীকে মে°রে ফেলবে?”

“ভ°য় দেখাচ্ছো?”

“তুমি কি ভ°য় পাচ্ছো?”

ইমতিয়াজ একটু হেসে একমুঠো ক্যাটফুড নিয়াজীর উপর ছুঁড়ে ফেলে। মিউকো গিয়ে নিয়াজীর শরীরের উপর-নিচে বেয়ে বেয়ে খেতে লাগলো।

নিয়াজী কিড়মিড়িয়ে বলল,
“তোমার বিড়াল তোমার মতোই নিশ্চিন্ত।”

ইমতিয়াজ আবারো হেসে রুটি নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। নাস্তা তৈরি করে টেবিলে রেখে এসে মিউকোকে কোলে নেয়।

ইমতিয়াজ বলে,
“তোমাকে মাসের পর মাস পুষে আমার লাভ নেই।”
“ওয়াদা ভঙ্গ করো না, তুমি তো মুসলিম। আমি সত্য বলেছি, তাই আমাকে ছেড়ে দিতে হবে।”
“তুমি যে সত্য বলেছো তা আগে প্রুভ হোক।”

ইমতিয়াজ রুমে চলে যায়। মিউকোকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে গিয়ে মৃত্তিকাকে ডাকে। ফজরের পর থেকে মেয়েটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সারারাত তার দুচোখের পাতা এক হয়নি। কোনো কারণে সে ঘুমাতে পারেনি, কারণ সে নিজেও নির্দিষ্ট করতে পারেনি।

ইমতিয়াজ আধশোয়া হয়ে ওর মাথায় হাত বুলায়।
“মৃত্তিকা?”

মৃত্তিকা ওর গা ঘেষে শুয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ ঘড়ি দেখে বলে,
“সাতটা বেজে গেছে, উঠে পড়ো। হাসপাতালে যেতে হবে।”
“উম, উম।”

ঘুমের মধ্যেই মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করছে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ ওকে কপালে চুম্বন করে। মৃত্তিকা ধীরে ধীরে চোখ খুলে বলে,
“ঘুম পাচ্ছে।”
“হাসপাতালে যাবে না?”

মৃত্তিকা চোখ কচলে উঠে বসে। ইমতিয়াজের পায়ের কথা স্মরণে আসলে বলে,
“পায়ের কি অবস্থা দেখি?”

ইমতিয়াজ টাউজার উপরে উঠায়। হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ক্ষ°তগুলো দেখে মৃত্তিকা বলে,
“এখন আবার ওষুধ লাগাতে হবে তো? আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।”
“ওষুধ খেতেও হবে।”
“খাবারের পর।”
“হুম।”

মৃত্তিকা জলদি জলদি ওষুধ এনে পায়ে লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,
“তবে আমি নাস্তা বানাতে বানাতে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”
“নাস্তা তৈরি আছে।”

মৃত্তিকা ওষুধ লাগানো থামিয়ে দেয়। ইমতিয়াজ শার্ট সরিয়ে ঘাড়ের কাছে আঁ°চড়ের দাগ দেখিয়ে বলে,
“দুইটা মিউকো ঘরে আছে, দুজনের আর্ট অসাধারণ। এখানেও একটু লাগিয়ে দাও।”

মৃত্তিকা উঠে চলে যায়। কাল ম°র্গে ওর নখ দিয়েই এই দাগের উৎপত্তি হয়েছে। ইমতিয়াজ সামনাসামনি কথাটা বলে ফেলায় বেচারী বেশ লজ্জায়ও পড়ে গেছে।

ইমতিয়াজ হেসে বলল,
“নাস্তা করে বের হতে হবে।”
“আপনিও যাবেন?”

মৃত্তিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে। ইমতিয়াজ ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“উহু, আমি বাসায় থাকবো। তুমি শিল্পাকে নিয়ে যাবে, আহনাফ থাকবে।”

“এখনো কেন নিজেকে লুকাচ্ছেন? যেহেতু আপনি শাফিনকে নিজে মা°রবেন না বলেছেন, তবে কেন বাসায় থাকবেন?”

“বিনা প্রয়োজনে নিশ্চয়ই করছি না।”

“হ্যাঁ, তা করছেন না মানলাম। তবে মি°থ্যা বলায় কি গু°নাহ হচ্ছে না?”

ইমতিয়াজ একটু মলিন মুখে বলল,
“হচ্ছে তো অবশ্যই, ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ্।”

ইমতিয়াজ আয়নায় মৃত্তিকার প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে আজকের জন্য হলেও লুকাতে হবে।”

মৃত্তিকা ওর দিকে ফিরে বলে,
“কি ভাবছেন আপনি?”

ইমতিয়াজ মাথানেড়ে বলল,
“যা ভাবছি, ভাবতে দাও। কালকের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছি বলেই ভাবছি। সময় হলে সব জেনে যাবে। শরীফ সাহেবকে আজকে বাসায় আসতে বলো।”

মৃত্তিকা আর কিছু বলে না। এখন যে জানতে চেয়েও লাভ নেই। মৃত্তিকা ওর শার্ট সরিয়ে আঁ°চড়ের জায়গায় হাত বুলিয়ে দেয়। ইমতিয়াজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে লাগলো।
______________________________________

গালিব শাফিনের শাস্তির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ওর বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠার কারণ একমাত্র এই শাফিনই ছিল। শাফিন ওকে অপমান করেছে, শাফিনকে শাস্তি দেয়ার কারণ হিসেবে তার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট।

সকাল দশটা, কাগজপত্র খুঁজে সে পাকাপোক্ত কোনো প্রমাণ পায় না। শেষবার যখন শাফিনের ফাঁ°সির জন্য উকিল এসব নিয়ে গেছিলো, তারপর এগুলোর হদিস আর কারো কাছে আছে কিনা জানা নেই।

বাধ্য হয়ে আহনাফকে কল দেয় গালিব। মৃত্তিকার কাছে বিথী অনেকদিন থাকায় সে মৃত্তিকার সাথে দেখা করতে চায়, যদি বিথীর কোনো কাগজপত্র মৃত্তিকার কাছে থাকে। তবে ইমতিয়াজের মৃ°ত্যুর খবর পেয়ে সরাসরি মৃত্তিকাকে কল দেয়া তার কাছে অদ্ভুত ঠেকলো।

“হ্যালো?”

গালিবের কথায় অপরদিক থেকে অচেনা একটা নারী কন্ঠ বলে,
“জি।”

গালিব মনে করে, এটা হয়তো আহনাফের স্ত্রী। খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন করে,
“মিস্টার আহনাফকে দেয়া যাবে? কিছু জরুরি কথা ছিল।”

“আহনাফ? উনি তো এখানে নেই।”

“কখন আসবেন জানেন?”

“উনি আসবে না, আমি যাবো।”

গালিব কপাল কুঁচকে বলল,
“আচ্ছা বুঝলাম, কখন যাবেন?”

“তা তো আমি জানি না। আজও যেতে পারি, আবার চারদিন পর।”

বির°ক্ত হয়ে গালিব ফোন রেখে দেয়। আহনাফের ফোন হাতে নিয়ে হেসে উঠে অপরূপা। কাল যখন আহনাফ হন্যে হয়ে নিয়াজীকে খুঁজছিলো, তখন সে এই ফোনটা নিয়েছে। ঠিক যেভাবে একজন পকেটমা°র পকেট থেকে ফোন নেয়।

ইমতিয়াজের মৃ°ত্যুর খবর সে পেয়েছে, তবে তার পরপরই মৃত্তিকার বাসায় চলে আসাটা ওর সন্দেহের কারণ হয়েছে। তবুও সে চায় সংবাদটা সত্য হোক, ইমতিয়াজ সত্যিই মা°রা যাক।

এবারে সে আহনাফের নাম্বার থেকে মৃত্তিকাকে ম্যাসেজ দেয়,
“ম্যাডাম মিউকো, মমতাজ বেগম আইসিইউতে নেই। উনি পল্টন আছেন, একটা বাসায় অপরূপার সাথে। আপনি জলদি আসুন।”

ম্যাসেজ সেন্ড করে অপরূপা অপেক্ষা করতে থাকে। ওর উপর করা মৃত্তিকার প্রতিটা আঘাতের বদলা সে নিবে।

ফোন কেঁপে উঠলো। মৃত্তিকা ম্যাসেজটা দেখে চোখ কুঁচকে তাকায়। আহনাফ মাত্রই ওর সামনে থেকে গেল। ওরা আছে ঢাকা মেডিকেলে, তবে পল্টন কখন গেল?

“আহনাফ ফয়েজ?”

মৃত্তিকার ডাকে ফিরে দাঁড়ায় আহনাফ। মৃত্তিকা দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে ম্যাসেজটা দেখিয়ে বলে,
“আপনার ফোন খুঁজে পাননি?”
“না তো। আমার কাছে ঐশীর ফোন।”

মৃত্তিকা মাথা নেড়ে বলল,
“চলুন, আগে আপনার ফোনটা নেয়া যাক। আর এই ব্যক্তিকেও।”

মৃত্তিকা কথা শেষ করে আহনাফের ডাক না শুনেই তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে, আইসিইউতে থাকা মমতাজ বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে আহনাফও বেরিয়ে যায়। মৃত্তিকা এক কাজে এসে আরেক কাজে কেন যাচ্ছে।

এরমধ্যে আবারো মৃত্তিকার ফোন কেঁপে ওঠে। এবারে তানজিম কল করেছে।

“হ্যাঁ, তানজিম।”
“আপু, কাল থেকে কোথায় আছো তুমি? ঠিক আছো?”

তানজিমের কন্ঠে উৎকন্ঠা বোঝা যাচ্ছে। অনেক ভ°য়ে ঘাবড়ে আছে সে। ইমতিয়াজের মৃ°ত্যুতে যদি শো°কের বশে মৃত্তিকা কিছু করে বসে, বেচারা ভয় পাচ্ছে।

মৃত্তিকা ওর অবস্থা বুঝেও চুপ থাকে। ইমতিয়াজ ওকে এটাই বলেছে, ওর জীবিত থাকার খবর এখনই কাউকে দেয়ার দরকার নেই।

“হাসপাতাল থেকে সব ব্যবস্থা করবে তানজিম। তবে যেহেতু এখানে পুলিশ কে°ইস আছে, তাই আমাদের ইমতিয়াজের কাছে যেতে দিচ্ছে না।”

“এ কেমন কথা? (একটু থেমে) কিন্তু তুমি কোথায়?”

“রাখছি তানজিম, কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।”

ফোন রেখে মৃত্তিকা দেখে আহনাফের নাম্বার থেকে আরো একটা ম্যাসেজ এসেছে। সেখানে একটা বাসার ঠিকানা দেয়া আছে।

আহনাফ বাইরে আসলে মৃত্তিকা ওকে ম্যাসেজটা দেখালে আহনাফ একটু জোর গলায় বলল,
“আপনার মনে হচ্ছে না, আপনি বাঘের গুহায় যেতে চাচ্ছেন? (একটু থেমে) এটা জামিল ফুপার এপার্টমেন্টের ঠিকানা।”

মৃত্তিকাও পালটা জবাব দেয়।
“তো? ওখানে যে আছে, সে শাফিনেরই কেউ আর আমি ভুল না করলে অপরূপা। এই মেয়েটা প্রতি°শোধের আ°গুনে জ্ব°লছে। একটা চড়ের জন্য তানজিমকে কি মা°র মে°রেছিল জানেন?”

আহনাফ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
“আপনি বারবার অতিরিক্ত বুঝেন। ইমতিয়াজ আপনাকে এসব কিছুই করতে বলেনি। সো, যা করতে এসেছেন তাই করেন, আপনার বড়মণির সাথে থাকেন। এছাড়া আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না।”

“আশ্চর্য ব্যবহার তো আপনার।”

আহনাফ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসে। সুস্মিতার সাথে দেখা করে। মৃত্তিকাও এসেছে।

সুস্মিতা ওদেরকে বসতে ইশারা করে। তারপর শাফিনের ফাইলটা বের করে বলল,
“গতরাতে শাফিনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে মনে হয়েছিল, তবে এখন আবারো ওর অবস্থার অবনতি হয়েছে।”

আহনাফ মাথা নেড়ে বলল,
“বাঁচবে না মনে হচ্ছে?”

“বেঁচে যাবে, তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। ডা: মাহিন আজকে দেখবে, তারপর আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।”

“আচ্ছা, ধন্যবাদ। আর মমতাজ বেগমকে আইসিইউতেই আটকে রাখতে হবে। বাইরের সাথে যোগাযোগ উনার যত কম থাকবে, ততই ভালো।”

“সবটা তো আমার হাতে নেই, পুলিশ যাকে অনুমতি দেয় সেই ভিতরে যায়। উনাকে আমি ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখছি।”

“ঠিক আছে।”

আহনাফ চলে যেতে নিলে সুস্মিতা বলল,
“তবে মমতাজ বেগম প্রায়ই জেগে থাকেন। ঘুমের ওষুধ উনার খুব একটা কাজ করে না।”

মৃত্তিকা মুখ কুঁচকে ফেলে। অনেকদিন উনাকে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করেছে সে, এজন্য উনার শরীর এটা সয়ে নিয়েছে।

এখন আবারো মৃত্তিকার ফোনে ম্যাসেজ আসে,
“আপনি এখনো আসলেন না যে।”

মৃত্তিকা বারবার ম্যাসেজ দেখেও কোনো রিপ্লাই না দেয়ায় অপরূপা ধরে নেয় মৃত্তিকা ইমতিয়াজের শো°ক পালনে ব্যস্ত। তার মুখের চওড়া হাসি জানান দেয় সে খুব খুশি।

সামনে থাকা দুজনকে বলে,
“শাফিন বের হোক বা না হোক, আমরা আমাদের ইনতেকাম নিবোই নিবো। মৃত্তিকা বাসায় আছে, আমরা ওখানেই যাবো।”
______________________________________

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আহনাফ সোজা বাসায় এসেছে। সারাহ্-র সাথে দেখা করে আজই কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। দুদিন ধরে ক্লাস করাতে পারেনি, নিজের দায়িত্বে অবহেলা সে পছন্দ করে না। তবুও এখন নিরুপায়।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজেছে বাসায় আসতে আসতে। রাস্তায় বেশ ভালোই জ্যাম ছিল।

বেল বাজালে জাহাঙ্গীর সাহেব দরজা খুলেন। আহনাফ বেশ লম্বা একটা সালাম দিয়ে ভিতরে আসে। জাহাঙ্গীর সাহেব সালামের জবাব দেন।

“বাবা, আসলে আমি চলে যাবো এখন। ক্লাস মিস হচ্ছে।”

নার্গিস পারভিন ভিতরের রুম থেকে এসে বলল,
“এখন যাবে কেন? সকালে যেও। কুমিল্লা যেতে আর কতক্ষণ লাগবে?”

“তবুও যদি এখন যাই..”
ইতস্তত করে কথা থামায় আহনাফ।

জাহাঙ্গীর সাহেব বললেন,
“আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হও। (নার্গিস পারভিনকে বলেন) নাস্তা রেডি করো।”

আহনাফ রুমে আসলে সারাহ্ বলে,
“সকালে গেলে হয় না?”

আহনাফ হেসে বলল,
“কেন? আসতেই তো বারণ করেছিলে।”
“আহা, সকালে গেলেই হবে।”

আহনাফ ওর কাছে এসে বলল,
“বলো যে, আমাকে তোমার জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ইচ্ছা করে। এটা বললে থাকবো।”

সারাহ্ চোখ পাকিয়ে সরে গেল। এই লোকটার কি লজ্জাশরম বলে কিছুই নাই। বেহায়া-বেশরম লোক।

“তুমি বলতে পারবে না, আমিও থাকতে পারবো না।”

সারাহ্ কোনো প্রতি°বাদ করে না। ইচ্ছা কি শুধু ওর করে, তার কি কোনো ইচ্ছা নেই? সারাহ্-কে আগলে রাখতে ইচ্ছা করে না তার?
______________________________________

মিউকোকে নিয়ে ডাইনিং এ বসে আছে ইমতিয়াজ। সন্ধ্যা থেকে নিয়াজী ইমতিয়াজ আর মিউকোর এসব রঙ-তামাশা দেখে যাচ্ছে। মুখে ক্রচটেপ থাকায় সে কিছুই বলতে পারছে না।

মৃত্তিকা এখনো বাসায় আসেনি। সে কোথায় গেছে তা ইমতিয়াজকে জানায়নি। অপরূপার পাঠানো ঠিকানায় সে চলে গেছে অপরূপারই খোঁজে। একা কাজে ঝুঁকি বেশি, অথচ তার একা কাজই বেশি পছন্দ।

দরজার লকটা ঘুরছে, মানে কেউ ভিতরে আসার চেষ্টা করছে। ইমতিয়াজ সেদিকে তাকিয়ে মিউকোকে ফ্লোর থেকে টেবিলে তুলে দেয়।

অপরূপা ভিতরে আসে। ইমতিয়াজকে দেখে ভূ°ত দেখার মতো চমকে উঠে সে। ইমতিয়াজ এগিয়ে এসে বাইরে আর কাউকে না দেখে শব্দ করে দরজা লাগায়।

অপরূপার দিকে ফিরে বলে,
“সারপ্রাইজ, ভাবোনি কখনো এভাবে মৃ°ত কারো সাথে দেখা হবে? ম°র্গের লা°শ তোমার সামনে স্থির। আমি জানতাম তুমি আসবে।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here