(সতর্কতা- নৃ°শং°স খু°নের বর্ণনা আছে, নিজ দায়িত্বে পড়বেন।)
#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ত্রিষষ্টি পর্ব (৬৩ পর্ব)
নিয়াজী এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ শরীফের চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়েছে। এখন সে বাসায় যাওয়ার জন্য একদম ঠিকঠাক আছে। আর কোনোভাবে সে আহনাফ কিংবা ইমতিয়াজের হাতে পড়তে চায় না।
ঘড়ি দেখাচ্ছে সকাল সাতটা বেজেছে, নিয়াজী হাসপাতালের ছোট বিছানা থেকে উঠে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু একটা খুঁজতে, খুব স্বভাবতই তা ফোন। তবে পায় না।
“কিছু খুঁজছো নাকি?”
শরীফ এসে রুমে প্রবেশ করে। নিয়াজী ওকে দেখে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, আমি আসলে বাসায় যেতে চাই।”
“আসল ঠিকানায় যাবে? চলো, পৌঁছে দেই।”
নিয়াজী সরতে পারে না, শরীফ ওকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে,
“রিপাকে মা°রধর করেছি এটাই পৃথিবী দেখেছে, কিন্তু ওকে যে আমি ভালোবেসেছি সেটা কেউ দেখেনি। ওকে মা°রা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”
নিয়াজী শরীফকে ধা°ক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চায়, কিন্তু এবারে সে চির ব্যর্থ হলো। ব্যর্থতাকে আর টপকাতে পারে না।
পি°স্তলে সাইল্যান্সার লাগানো থাকায় শব্দ হয় না, তবে গু°লি চলে। কপাল ভেদ করে চলে যায় গু°লিটি। সাদা বিছানা, সাদা টাইলসের মেঝেতে যেন কেউ আলপনা এঁকেছে। র°ক্তের আলপনা। শেষ নিশ্বাস বের হয়েছে নিয়াজীর।
নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা সেও করেছে। তাহসিনা, তাহমিনা বা রিপা বেগমের মতো সেও বেঁচে থাকার আকুতি ছিল তার চোখেমুখে, কিন্তু বাঁচতে পারেনা।
কপালে একটা গোলাকার গু°লির চিহ্ন, র°ক্তে মাখোমাখো হয়ে আছে। সেই ছিদ্র দিয়ে এখনো বের হচ্ছে টাটকা র°ক্ত।
শরীফ বাইরে এসে ইশারা করলে চারজন লোক নিয়াজীর দেহ নিয়ে ম°র্গে চলে যায়। শরীফ শান্তভাবে হেঁটে নিজের চেম্বারে চলে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠে পুরোনো কথা।
“আমাদের মেয়ের নাম হবে মৃত্তিকা। সুন্দর না নামটা? আমি আগে থেকেই এটা ভেবে রেখেছিলাম।”
মেয়েকে কোলে নিয়ে কথাটা বলে রিপা।
“কি করে বুঝেছিলে মেয়ে হবে?”
“মায়েরা বুঝতে পারে।”
রিপার কথা মনে করে কান্না পায় শরীফের। চোখের পানি বাঁধনহারা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে৷ বয়সের এই প্রান্তে এসে ডি°ভোর্স হয়ে যাওয়া স্ত্রীর জন্য কান্না করাটা বেমানান। কিন্তু ভালোবাসা যে বাধা মানে না।
______________________________________
এলার্জি হয়ে মৃত্তিকার হাত-মুখ-গলা লাল হয়ে আছে। আয়নার সামনে নিজের এ অবস্থা দেখে বলে,
“কি হয়েছে দেখেছেন?”
ইমতিয়াজ অফিসে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওর কথায় ভালো করে দেখে বলল,
“আজকে বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। হঠাৎ এমন হলো কেন?”
“জানি না।”
মৃত্তিকা ছোট করে জবাব দিয়ে নাস্তা তৈরি করতে চলে যায়। টেবিলে নাস্তা রেখে অপরূপার দিকে আড়চোখে কয়েকবার তাকালো।
অপরূপা মৃদু হেসে বলল,
“সকালে অন্য মেয়েদের গায়ে লাভ বাইট থাকে আর তোমার এলার্জি? বাহ, বাহ।”
ঘর থেকে ইমতিয়াজ কথাটা শুনে। সে বেরিয়ে এসে বলল,
“আমার স্ত্রীর লাভ বাইট দেখার শখ তোমার জাগে কেন? এধরনের ফালতু কথা আরেকবার শুনলে খুব খারাপ হবে।”
মৃত্তিকা নাস্তা নিয়ে রুমে চলে যায়। বিছানায় খাবার রেখে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। ইমতিয়াজ ওর মুখোমুখি বসে ওর মুখের সামনে খাবার তুলে বলল,
“খাবে না?”
মৃত্তিকা খাবার মুখে নিয়ে বলে,
“কি করবেন ওকে দিয়ে?”
“অফিসারদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করবো।”
“যদি শাফিনের আরো লোক থাকে? আর ওকে আর শাফিনকে বাঁচিয়ে নেয়।”
“সম্ভাবনা কম, শাফিনের অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। ওর লোকেরা ওর সাহায্য আর করবে বলে মনে হয় না।”
“আপনি যে বলেছিলেন এবারে শাফিনকে অন্য ফাঁ°দে ফেলবেন। ওর এ অবস্থায় কিভাবে সম্ভব?”
ইমতিয়াজ মাথানেড়ে খেতে থাকে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে বলল,
“চাইলে এ অবস্থায়ও সম্ভব। অফিসার গালিব চেষ্টা করছে, অফিসার রিজভি চেষ্টা চালাচ্ছে। সবাই তো আর শাফিনের পক্ষে না। তবে ফাঁ°দে তাকে পড়তেই হবে।”
“ফাঁ°দটা কি?”
ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“যদি শাফিন এবারেও বেঁচে ফিরে, তবে বুঝতে পারবে।”
মৃত্তিকা উঠে এসে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“সব ভালো থাকুক। ফে°তনা দূর হোক।”
ইমতিয়াজ ওর গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,
“অফিস যেতে হবে তো।”
মৃত্তিকা সরে যায়। গত পরশুদিন তানজিম আর সুরভি বাসায় এসে ইমতিয়াজকে দেখে যে ভয়টা পেয়েছে, সেটা ভেবে এখন আবারো মৃত্তিকার হাসি পায়।
“নিজে নিজে হাসছো কেন?”
“এমনিতেই, রেডি হয়ে নিন।”
______________________________________
সুরভি শাফিনের কাছেই আছে। মমতাজের দিকে সে ফিরেও তাকায় না। মমতাজ বেগম উঠতে পারে না, নিজে নিজে খেতে পারে না। সামান্য পানিটুকু চাইলেও সুরভি তা দেয় না। ঘৃ°ণার পরিমান এতো বেশি হয়েছে যে সে ওদেরকে মে°রে ফেলতে পারলে বাঁচে।
অপরূপার উপরেও তার রাগ আছে। অপরূপার সত্যটা জানতে পেরে সুরভি বাবাকে আরো বেশি ঘৃ°ণা করছে। পরশু যখন অপরূপাকে মৃত্তিকার বাসায় দেখেছে, তখন থেকে সে আরো চুপ আছে।
ঝড় আসার আগে প্রকৃতি যেমন শান্তরূপে নিজেকে পরিবেশন করে, সুরভিও তেমনি আছে।
“সুরভি, মা আমার, একটু পানি দাও।”
মমতাজ বেগমের কথা উপেক্ষা করে নিজেকে শান্ত রেখে সে বেরিয়ে আসে। মৃত্তিকার বাসায় চলে এসেছে সে।
সকাল সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। মৃত্তিকা মনোযোগ দিয়ে একটা বই পড়ছে আর মিউকোর গায়ে হাত বুলাচ্ছে। বেল বাজায় চমকে উঠে।
মৃত্তিকা ধীরপায়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সুরভি ভিতরে এসে মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইমতিয়াজ বাসায়?”
“না, অফিসে গেছে।”
সুরভি মাথানেড়ে অপরূপার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃত্তিকাকে বলে,
“বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে, মিউকো। দেখা করবে?”
নিজের থেকে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলে দেয় সুরভি। মৃত্তিকা একটু চমকে উঠে। আবার শাফিনের কুৎসিত অবস্থা নিজের চোখে দেখার ইচ্ছাও জাগে। ইমতিয়াজ জানলে ওকে যেতে দিবে না, তাই না জানিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
“আমি যাবো, আপু।”
“ঠিক আছে, তুমি তৈরি হয়ে বের হও। আমি ওকে পাহারা দিচ্ছি।”
মৃত্তিকা অপরূপার দিকে ইশারা করে বলল,
“ও কিন্তু অনেক বিপজ্জনক।”
“ও কতটা খাতারনাক, আমি তার চেয়ে বেশি খাতারনাক।”
মৃত্তিকা মৃদু হাসে। দ্রুত তৈরি হয়ে সে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ও চলে গেছে সুরভি অপরূপার কাছে এসে বলে,
“এখন যদি তোমাকে ছেড়ে দিই, কোথায় যাবে?”
অপরূপা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“আগে তোমাকে মা°রবো আর তারপর মৃত্তিকাকে। ইমতিয়াজকে একা করবো আমি।”
“তোমার কি সমস্যা ইমতিয়াজের সাথে?”
“মৃত্তিকাকে এতো ভালোবাসে কেন? এতো আদর কিসের জন্য?”
হিং°সার অনলে জ্ব°লছে অপরূপা। সুরভি সোজা হয়ে বসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“চলো তবে, মা°রবে মৃত্তিকাকে।”
প্রায় আধঘন্টা পর সুরভি অপরূপাকে নিয়ে বের হয়। কোনো জোরাজুরি না করেই অপরূপা ওর সাথে আসছে। সিএনজি করে হাসপাতালে পৌঁছায় ওরা।
এদিকে মৃত্তিকা শাফিনের সাথে দেখার করার অনুমতি পেয়ে ভিতরে এসে শাফিনের অবস্থা দেখে।
পঁ°চা অংশ থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। সময়মতো পরিষ্কার করা হয়নি বলে এ অবস্থা হয়েছে। মৃত্তিকার গা গু°লিয়ে আসে।
মমতাজ বেগমের কাছে গিয়ে বলল,
“বড়মণি?”
দুবারের ডাকে মমতাজ বেগম চোখ খুলেন। হাত উঠিয়ে বলে,
“এসেছো মা? একটু পানি দিবে।”
দুর্ঘটনায় উনার বুকে ব্য°থা পেয়েছিল। থেকে থেকে সে ব্যথায় কাতরে ওঠে। মৃত্তিকা উনাকে ধরে উঠিয়ে পানি পান করিয়ে দেয়।
মমতাজ বেগম আবারো শুয়ে বলে,
“আমি তোমাকে মা°রার জন্য শাফিনের ঠিকানা বলিনি, তোমাকে আমি এখন আর মা°রতে চাই না মা।”
মৃত্তিকা অপলক তাকিয়ে বলল,
“মাম একটা কথা বলতো, খালা নাকি মায়ের চেয়ে ভালা। আর আমার খালা আমার মাকেই মে°রেছে।”
মৃত্তিকা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত হয় সে।
শাফিনের কাছে গিয়ে বলে,
“তোমার মনের মতো তোমার শরীরটাও পঁচতে শুরু করেছে। এই হাত দিয়ে মেয়েগুলোকে স্পর্শ করেছিলে, তাই না? মজলুমের অভিশাপ বিফলে যায় না মামা।”
কঠিন প্রশ্নে চেয়ে থাকে শাফিন। মৃত্তিকা আবারো বলে,
“কেন ডেকেছো তাই বলো? কেন দেখা করতে চেয়েছো?”
শাফিন নিচুস্বরে বলল,
“তোমাকে আমি আসতে বলিনি।”
শাফিনের বামহাতে হাতকড়া লাগানো আছে। লোহার ভারি কড়াটা শব্দ করে নাড়িয়ে বলে,
“এই হাত খোলা থাকলে এখনই তোমাকে মে°রে দিতাম। তোমার জন্য আমি মৃ°ত্যু য°ন্ত্রণা সহ্য করছি।”
“এগুলো কর্মফল।”
শাফিন আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডানহাতের আঙ্গুলগুলো তার নড়ছে। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে, যেন সে হাত নাড়াতে চাচ্ছে। মৃত্তিকা সেদিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর অপরূপাকে টে°নে ভিতরে এনে ফেলে সুরভি। মৃত্তিকা চমকে উঠে বাইরে তাকায়। দুজন পুলিশ তাদের জায়গায় নেই। আইসিইউর সামনে পুরো স্থান ফাঁকা।
“আপু?”
মৃত্তিকার ডাকে সুরভি উত্তর দেয়,
“চুপ করো, বাধা দিও না।”
সুরভি শাফিনকে ডেকে বলে,
“বাবা, তোমার সুন্দরী, যুবতী, সুনয়না স্ত্রী দেখা করতে এসেছে। যার রূপে পাগল হয়ে তুমি আমার মায়ের সাথে প্র°তা°রণা করেছো, সেই অপরূপা এসেছে। দেখো তুমি।”
শাফিন ধীরে ধীরে চোখ খুলে। সুরভি অপরূপার চুলের মুঠি ধরে ওকে শাফিনের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
“সবাই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, শুধু আমার বাবা আর আমি ছাড়া।”
অপরূপার মাথাটা বিছানায় চেপে ধরে ওড়নার নিচ থেকে বড় ছু°ড়িটা বের করে অপরূপার গলায় গভীর করে চালিয়ে দেয় সুরভি। চিৎকার দেয়ার সময়টুকু অপরূপা পায় না। ছু°ড়ি দিয়ে খুঁচিয়ে র°ক্ত আরো বের করে সুরভি।
মৃত্তিকা ধরতে আসতে নিলে সুরভি ধমক দেয়,
“খবরদার কাছে আসবে না। এখানে তোমার কিছু নেই। চলে যাও।”
সে নিজেও কান্না করে দিয়েছে। র°ক্তে মাখোমাখো হয়েছে তার শরীরের পোশাক। ছটফট করতে থাকা অপরূপাকে ধরে রাখতে রাখতে মুখে-গলায়-হাতে র°ক্ত মেখে ভ°য়ং°কর রূপ এসেছে সুরভির।
“সন্তানের হাতের মৃ°ত্যুর চেয়ে তোমার জন্য কোনো বড় শাস্তি নেই বাবা।”
মমতাজ বেগম এসব দেখে চিৎকারে করে উঠে। শব্দ শুনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিতরে চলে আসে।
সুরভি শাফিনের উপর ছু°ড়ি চালাতে নিলে দুজন মহিলা কন্সটেবল জোরপূর্বক সুরভিকে ধরে ফেলে। সরিয়ে আনে শাফিনের কাছ থেকে। তবুও শাফিনের হাতে ছুড়ির আঁ°চড় পড়ে, কে°টে র°ক্ত ঝরা শুরু হয়েছে।
সুরভি এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে। বাবার প্রতি তার চরম ঘৃ°ণা, এতোটাই ঘৃ°ণা যে বাবাকে মে°রে ফেলতেও সে দ্বিধা করবে না।
মৃত্তিকা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আকস্মিক ঘটনায় মানসিকভাবে বিপ°র্য°স্ত হয়ে পড়েছে সে। এই পরিবারের কেউ আবারো খু°ন করলো। তানজিম ঠিক বলেছিল এ র°ক্তে খু°ন ঘুরছে।
______________________________________
দশদিন পেরিয়ে যায়। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সারাহ্ নিজের রুমে শুয়ে আছে। আহনাফ গতকাল আসেনি, সেই যে শুক্রবারে গেল তারপর যেন বাসার পথই ভুলে গেছে। সারাহ্ও অভিমান করেছে, কোনো কল দেয়নি।
কলিং বেল বাজলে সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে অপরিচিত কয়েকজন মেয়ে এসেছে, হাতে একটা দানবাক্স।
“আসসালামু আলাইকুম।”
এক মেয়ের সালামের জবাব দেয় সারাহ্।
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। জি বলুন।”
“আমরা একটা বৃদ্ধাশ্রমের জন্য টাকা সংগ্রহ করছি।”
মেয়েগুলোর পিছন থেকে “টুকি” বলে বেরিয়ে আসে সামিহা। তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আমি ওদেরকে নিয়ে এসেছি, জলদি জলদি টাকা বের করো।”
সারাহ্ পুরো দরজা আগলিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“এ টাকা কোথায় যাবে?”
“বৃদ্ধাশ্রমে, সত্যি বলছি। আমরা মিথ্যা বলি না, আমি তো না-ই।”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে গিয়ে পার্স থেকে দুইশ টাকার নোট দিয়ে বলে,
“যাবো একদিন ওই বৃদ্ধাশ্রমে, দেখবো টাকার কি হচ্ছে।”
মেয়েগুলো চলে যায়। সামিহা ভিতরে এসে হেলেদুলে হেঁটে হেঁটে বলছে,
“আপু, তুমি সোজা হবা কবে?”
“কেন? আমি কি বাঁকা?”
“না, কোমড়ে হাত দিয়ে এমন সাপের মতো হাঁটা থামাবা কবে তাই বলো।”
“তবে রে।”
সারাহ্ ওর দিকে কুশন ছুঁড়ে দিলে সামিহা দৌড়ে পালায়। তারপর আবার রুম থেকে উঁকি দিয়ে বলে,
“আমিও ইমতিয়াজ ভাইয়ার মতো একদিন ম°রার ভাণ ধরে থাকবো। তখন দেখবো তুমি কেমনে কা°ন্দো।”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে ফেলে। সামিহা রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তানজিমের কাছ থেকে ইমতিয়াজের মৃ°ত্যুর অভিনয়ের কথা শুনেছে সামিহা।
সারাহ্ রুমে চলে এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বলল,
“কোলে কবে আসবি, সোনা? আমার যে আর ধৈর্য থাকছে না।”
______________________________________
সুরভিকে জে°লে নেয়া হয়েছে আজ দশদিন। রাইদ মাকে ছাড়া খুবই কান্নাকাটি করে। সুরভি ছেলেকে দেখে না, দেখা করতে আসলেও কাছে যায় না।
অপরূপার দা°ফনের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে৷ নিয়াজীর খু°নের কথাও এখন ওপেন সিক্রেট বলা যায়, তবে শরীফকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেলোয়ারা তো আগে থেকেই নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। স্বামীর এ অবস্থার পর মেয়ের জেল, উনি যে বেঁচে আছেন সেটাই বেশি।
রাইদকে মৃত্তিকা কোলে নিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করছে। দেলোয়ারা এখন মৃত্তিকার বাসায়, ওর সাথেই আছে।
“বাবা আমার, সোনা আমার, আর কাঁদে না। একটু খাও।”
ফিডার দিয়ে অল্প অল্প করে দুধ খাওয়াচ্ছে ওকে মৃত্তিকা। ছোট মানুষ, মা ছাড়া বুঝেটা কি? বাবা তো মাকে ছেড়েই দিয়েছে।
সমস্তটা দিন মৃত্তিকা ওকে নিয়েই কা°টিয়েছে। রাতে ইমতিয়াজ বাসায় এসে দেখে ক্লান্ত মৃত্তিকা রাইদের পাশে আরামে ঘুমাচ্ছে। ওকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুম্বন করে দেয়।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রাতের খাবার প্রস্তুত।
ইমতিয়াজ নিজে নিজেই বলে,
“গিন্নি তবে পারফেক্ট হচ্ছে।”
পেছন থেকে দেলোয়ারার কন্ঠ পাওয়া যায়।
“আরে ইমতিয়াজ, এসে গেছো। ফ্রেশ হয়ে নাও, আজ আমি রান্না করেছি।”
ইমতিয়াজের মুখটা শুকিয়ে যায়। তবে এসব রান্না দেলোয়ারা করেছে। পরক্ষণেই হাসে সে, সবসময় স্ত্রীরা রান্না করবে কেন? মাঝে মাঝে স্বামী তাকে রেঁধে খাওয়াতে নিষেধ নেই। ওদের সম্পর্ক না হয় উল্টোই হোক।
______________________________________
মধ্যরাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্ব°র এসেছে শাফিনের। জ্ব°রে কাঁপছে, ব্য°থায় চিৎকার করছে আর মনে মনে আফসোস করছে সে।
যদি জামিল, দুলাল বেঁচে থাকতো, তবে সে ঠিকই বেঁচে যেতো। আজ তার খারাপ সময়ে বিশ্বস্ত লোকগুলোও যেন পালিয়েছে। কারো কোনো খোঁজখবর নেই।
মমতাজ বেগম অনেকটাই সুস্থ, তবে বয়সের তুলনায় দুর্ঘটনার ভারটা সে নিতে পারছে না। শাফিন জানে মমতাজ পালাবে না, তবে তাকেও যে পালাতে দিবে না।
পা তার সম্পূর্ণ অবশ, হাত একটু নাড়াতে পারে। নাড়ালেই পঁ°চা-গলা মাংস খুলে পড়তে শুরু করেছে। শাফিন চিৎকার করে। একজন কর্তব্যরত ডাক্তার ভিতরে আসলে মমতাজ বলে,
“ওকে দূরে সরাও, না হয় আমাকে সরাও। ওর চিৎকার আমার ভালো লাগে না।”
ডাক্তার শাফিনকে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করে। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। ক্ষ°ত সারানোর ওষুধ ওর উপর কেন যেন কাজ করছে না। ক্ষ°ত শুকাচ্ছে না, বরং আরো বাড়ছে। ভ°য়ং°কর রকম দূ°র্গন্ধ আসছে তার থেকে।
“আমাকে সুস্থ করো, নাহয় মে°রে ফেলো। সহ্য হচ্ছে না আমার। মিউকো, ছাড়বো না আমি তোমাকে।”
চলবে….