হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২১| #শার্লিন_হাসান

0
426

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২১|
#শার্লিন_হাসান

হুম! একজনের প্রেমেই ভালো ভাবে পড়লাম। চঞ্চল মেয়েটার এতো গুণ এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসলো? যাই হোক তুমি পাশ করেছো।”

“ইয়ে না মানে বাবুর আব্বু এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”

শুভ্র হাসে। তার হাসিটা স্নিগ্ধ লাগছে। মনে হয় সে প্রচুর খুশি। একহাতে আজকের চিঠিগুলো নেয় শুভ্র। দু’টো চিঠি এসেছে। একটর উপর অভিমান বার্তা লেখা শুভ্র সেটাই আগে খুলে দেখলো।
চিঠিটা,
অভিমান বার্তা:
‘বাবু আব্বু’
জানেন? বাবুর আম্মু মানে আমি একটা হার্টলেস মেয়ে মানুষ। সহজে কাউকে মনে বসাই না। যদি বলে ছেলে মানুষদের ইগনোরের কথা আমার মনে হয় আমি প্রথম হবো। না কোন ছেলে ফ্রেন্ড আছে, না ছেলে কাজিনের সাথে তেমন ভাব। বাট একজন ছেলে ছিলো যাকে প্রথম বার দেখে আমি তার এট্টিটিউডে ফিদা হয়ে যাই।
তবে অনেকটা এড়িয়ে যেতে চাইতাম। কিন্তু আমি তো তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি যেটা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব না। চেহারা,কথাবার্তা, সৌন্দর্যের প্রেমে পড়লে হয়ত ভুলে থাকা যেতো কারণ তার থেকেও সুন্দর পুরুষ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু আমি তো তার ব্যক্তিত্বে ডুবে যাই আর হুট করেই আমি তার মাঝে মজে যাই। তবে আমি তার সবটাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি! তাকে চিঠি দিয়ে চিন্তায় ফেলতে আমার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে!সে ব্যস্ত মানুষ, আমি যে ব্যস্ত নই এমনটাও না। আমার হাজারটা ব্যস্ততা থাকলেও তাকে চিঠি লেখার জন্য সময় আমি বের করি। আচ্ছা সে কেনো বুঝে না আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি? সে আমায় বকা দিক আমি শোনবো তাও ছেড়ে গিয়ে অন্য কারোর কারোর না হোক। কারন, ভালোবাসি তো! সবাইকে ইগনোর করে একমাত্র তাকে নিয়ে বুকে আশা পুষি। চিঠি লিখে তো আর সব বলা যায় না তবুও আমি লিখি। কিন্তু সে বুঝেও না বুঝার মতো করে থাকে। সে আমায় একটুও ভালোবাসে না। আবার ঠিকই কিছু হলে আমায় বকা দিতে আসে। আবার আমার গোপনে আমার ভয়েসের প্রশংসা ও করে! আমি তো সবই জানি! করতে হবে না প্রশংসা। সে আমার কোন কথাই রাখেনা। আমায় একটু প্রায়োরিটি ও দেয়না। ব’দলোক একনাম্বারের। আচ্ছা বলুন তো এতোক্ষণ কাকে এসব বললাম?
হ্যাঁ আপনাকে বলেছি। থাক আর কিছু বলবো না। যাই হোক বাবুর আম্মু অভিমান করেছেএএএএএ……!

শুভ্র চিঠিটা পড়ে হাসে। দ্বিতীয় চিঠিটা বের করে পড়ে সেখানে লেখা,
“আপনায় পাবো না বুঝেছিলাম সেদিন। তাই তো দূরে সরে যাওয়ার জন্য উতালা হয়ে গেলাম। কই আপনি তো ভালোবেসে হাত বাড়িয়ে আমায় আগলে নিলেন না? আপনি আমায় ভালোবাসেন না তাই তো আমায় অনুভব ও করতে পারেন না। যাই হোক আর হয়ত চিঠি আসবে না। ভালোবাসিইইইইইইইই!”

শুভ্র চিঠিগুলো একপাশে রেখে তাকায়। কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“সেরিন তুমি তো চালাকী করলে। আমি তো প্রথমেই বুঝেছিলাম এটা তুমি। কিন্তু দ্বিতীয় চিঠিটায় তুমি আর্থ আর আমায় তালগোল পাকিয়ে লিখেছো। আর হ্যাঁ বললাম না? তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার। যতদূরে সরে যাও রবে আমার।”

সেরিনের কেমন জেনো হাত কাঁপছে। মনে অদ্ভূত ঝড় তুলছে। নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারছি না। মনে হয় এক্ষুনি পড়ে যাবে। শুভ্রকে সে ভয় পায়। ভয় পাওয়ারই কথা। ধমকা ধমকি, বদমেজাজি তাকে সব স্টুডেন্ট ভয় পায়। সেখানে সেরিন নগন্য একজন ব্যক্তি। সেরিনের অবস্থা বুঝে শুভ্র বলে,
‘রিলেক্স। এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? আমি ধমকা ধমকি করি ঠিক আছে কিন্তু আমার কঠোরত্বের পেছনে সুন্দর একটা মন ও আছে। বুঝলে? এবার বলো ধরা দিলে না কেনো?”

“আর আমি ধরা দিলে বুঝি আপনার মনে আমায় নিয়ো জায়গা হতো? দু’টো থাপ্পড় দিয়ে তো দেওয়ালে পোস্টার বানিয়ে জুলিয়ে দিতেন।”

সেরিনের কথায় শুভ্র হাসে। পরক্ষণে বলে,
“চলো বাড়ীতে যাওয়া যাক। কেউ দেখলে কিছু বলবে না তবে বা’জে ধারণা পোষণ করবে।”

সেরিন মাথা নাড়ায়। তখন শুভ্র বলে,
” আমি আগে যাচ্ছি তুমি একটু পর আসো। হ্যাঁ আমাদের বাড়ীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে আমি আসবো পাঁচ মিনিটের মধ্যে।”

সেরিন পুনরায় মাথা নাড়ায়। শুভ্র দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে। প্রায় আটটা বেজে যাচ্ছে। শুভ্র চৌধুরী বাড়ীর গ্যারেজে যায়। একজন সার্ভেন্টকে বলে তার কারের চাবি আনিয়ে নেয়। সবার কারের শেষের দিকে শুভ্রর কার রাখা। কারণ সে তেমন একটা কার নিয়ে বাইরে যায় না। তার কর্মস্থল যেহেতু তার বাড়ীর সাথেই।

সেরিন চৌধুরী বাড়ীর গেটের সামনে আসতে তখন শুভ্র আসে কার নিয়ে। ডোর খুলে দিতে সেরিন আশেপাশে তাকায়। তখন শুভ্র বলে,
“কেউ কিছু বলবে না। তুমি বোসো না?”

“বাড়ী যেতে হবে তো।”

“সেসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে দিবো। আমার অনেক কথা আছে তোমার সাথে।”

সেরিন বসতে শুভ্র গাড়ী স্টার্ট দেয়। শুভ্র গাড়ী ড্রাইভ করছে আর বলছে,
“শোনো তোমার লেখা ভীষণ সুন্দর। তবে প্লান টাও নোবেল প্রাপ্ত। মানে কতটা গভীর ভাবে পরিকল্পনা করে কাজটা করা হয়েছে। আচ্ছা তোমার মনে একটু ভয় আসেনি? যদি সিসি ক্যামেরায় আমি তোমায় দেখে নিতাম।”

“দেখলেও চিনতে পারবেন না। আমি মুখ ঢেকেই আসতাম।”

“তোহ আর্থ আর আমায় গুলিয়ে ফেললে কেনো?”

“ইচ্ছে করেই। নাহলে সেরিনের গাড়েই দোষটা পড়তো। নামটা গুলিয়েছি যাতে আপনার ধারণা নড়বড়ে হয়ে যায়। যাই হোক সেরিন পাশ করেছে।”

“পাশ করলে লাভ হবে না। আমার বিয়ে ঠিক।”

“কোথায়?”

“গতকাল মেয়ে দেখতে গিয়েছে পরিবার। আম্মু তো রিং টিং পড়িয়েও ফেলেছে।”

“ওহ! তো আমায় গাড়ীতে বসালেন কেনো?”

“তুমি রেগে যাচ্ছো?”

“কিছু না।”

“যাই হোক তোমায় ধন্যবাদ আমায় নিয়ে এভাবে লেখার জন্য। আসলে মুড অফ থাকলে তোমার লেখা গুলো পড়ে হাসতাম আমি। হ্যাঁ তোমার চঞ্চলতা ঠিক আছে। সবসময় এমন হাসিখুশি থাকো দোয়া করি এজ এ টিচার হিসাবে তোমার বাবুর না হওয়া আব্বু হিসাবে বলো। যাই বলো!”

“শা’লা এমনে,এমনেনি তোরে কই মডুলাস। কত নাটক যে তুই দেখাইলি। এখন আবার নাটক করার জন্য আমায় নিয়ে আসছে। বা’লের প্রশংসা লাগবে না আমার। এই বা’ল বলার জন্য পা’গলের মতো কেউ গাড়ী নিয়ে ছুটে? যাহ বা’ল আজকের দিনটাই খারাপ। সেজন্য ধরা পড়ে গেলাম সেই সাথে ওনার বিয়ের কথাও শোনতে হলো।”

মুখটা বাঁকিয়ে মনে,মনে কথাগুলো বললো সেরিন। শুভ্র সেরিনের ফেসের রিয়েকশন দেখে মুখ টিপে হাসছে। শুভ্র পুনরায় বলে,
“আসলে তুমি অনেক বেশী ছোট একটা মেয়ে। বলা যায় খেলনা দিয়ে খেলার বয়স এখনো পার হয়নি তোমার। আবার কিসের বাবুর আম্মু,আম্মু করছো? লজ্জা-শরম কিছুই অবশিষ্ট নেই তোমার মাঝে।”

“আপনি আমায় জ্ঞান আর অপমান করার জন্য নিয়ে এসেছেন? আসলে আপনি একটা করলার জুশ। প্রতিদিন করলা খান সেজন্য মুখ দিয়ে তেতো কথা ছাড়া কিছুই বের হয়না। গাড়ী থামান আমি নেমে যাবো।”

“তোমার কাছে টাকা নেই যে অন্য গাড়ী দিয়ে যাবে।”

“সেটা আপনায় ভাবতে হবে না। বা’লের ভাষণ দেওয়া আর শেষ হলো না আপনার। একটা কথা মনে রাখবেন আমি সেরিন যদি আপনায় আমার বাবু কোলে নিতে দিয়েছি তো আমার নামটাই পাল্টে দিবেন।”

“তোমার বাবু আমি কোলে নিবো কেন? আমি আমার বউয়ের বাচ্চা বাবুকে কোলে নিবো। আর তোমার কার সাথে না কার সাথে বিয়ে হয়। আমি যাবো নাকী তোমার বাবুকে দেখতে?”

“আপনায় আমি কোলে নিতে দিলে তো নিবেন।”

“তোমার বাবু আমি কোলে নিবো না।”

“গাড়ী থামনননননন!”

শুভ্র গাড়ী থামায় না। সেরিনের জেলার্সি মুখটা দেখছে আর মজা নিচ্ছে শুভ্র। সেরিন বাইরের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে। তখন শুভ্র বলে,

“আল্লাহ আমি স্টুডেন্ট নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। আসতাগফিরুল্লাহ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন বাচ্চা মেয়েকে কেনো যে গাড়ীতে তুললাম।”

সেরিন কিছু বলেনা। শুভ্র তখন সেরিনদের বাড়ীর দিকে গাড়ী ঘুরায়। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে একটুও প্রায়োরিটি দেয়না। সে যে অভিমান বার্তা দিয়েছে সেটাতেও হেলদোল নেই। শুধু,শুধু সময় আর ঘুম নষ্ট করে এসব লিখলো। তাও গাড়ীতে বসিয়ে কত খোঁটা। সে নাকী বাচ্চা হ্যানত্যান। একটু প্রশংসার জন্য কেউ প্রপোজ করার মতো রিয়েকশন নিয়ে এভাবে গাড়ীতে বসায়? দূর সেরিন করলার জুশ তোর হবে না। তার বিয়ে ঠিক। হুদাই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলি।

শুভ্র পাটওয়ারী বাড়ীর গেটের সামনে গাড়ী থামাতে সেরিন নেমে পড়ে। শুভ্রর সামনে এসে বলে,

“অন্য কাউকে বাবুর আম্মু বানিয়ে দেখিস শুধু। তোর খবর আছে। এই একদম আমি তোকে ভয় পাইনা। প্রথমদিন থেকেও না। আর তোর বা’লের প্রশংসা আমার লাগবে না। এমন কত হাজার প্রশংসা আমার অডিয়েন্স আমায় ডেইলি দেয়। তোর প্রশংসা তোর পকেটে ঢুকা। আগামী কালকে যদি তোর পরিবারকে না পাঠিয়েছিস তো তোকে তোর বাড়ীতে গিয়ে খু’ন করে আসবো। মনে রাখিস শুধু!”

সেরিন থ্রেট দিয়ে ভেতরে চলে যায়। শুভ্র হা হয়ে বসে আছে। সিরিয়াসলি তাকে এভাবে বলতে পারলো সেরিন? তাও তুই তোকারী করে? শুভ্র কী সেরিনকে বেশী মাথায় তুলে ফেলেছে? মেয়েটার কত বড় সাহস হলে তাকে চিঠি দিয়েছিলো আবার আজকে ধরা পড়েছে তাও একটু ভয় পায়নি। কী সুন্দর ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটার আসলেই ভীষণ সাহস! শুভ্র গাড়ী ঘুরিয়ে চৌধুরী বাড়ীতে চলল আসে।

সেরিন নিজের রুমে এসে দরজা অফ করে দেয়। বিরক্ত লাগছে সব কিছু। কেনো যে ধরা পড়ে গেলো। এতোদিন ধরা পড়লো না। ভুল হয়েছে চিঠিটা করিডোরের বেঞ্চের উপর রেখে দিলেই ভালো হতো। অন্তত শুভ্রর মুখে অন্য মেয়ের নামটা শুনতে হতো না।৷ সেরিনের দেখতে ইচ্ছে করছে কে সেই মহীয়সী নারী যে তার বাবুর আব্বুর উপর নজর দিয়ে বসেছে।

#চলবে

(সেরিন কিন্তু রেগে গেছে।🫣 এখন বলুন শুভ্রর করণীয় কী? যাই হোক এটা কাল্পনিক গল্প বাস্তবতার সাথে মেলাতে যাবেন না। বিশেষ অনুরোধ। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here