#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২২
#Raiha_Zubair_Ripte
আহিল সযত্ন সহকারে মিহিকার পায়ে বরফ লাগায়। আরমান সাহেব সেটা দেখে একটু স্বস্তি পায়,সে তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে না। আহিল বরফ লাগানোর শেষে মিহিকাকে জিজ্ঞেস করে,,
_ পায়ের ব্যাথাটা কি এখন একটু কমেছে।
মিহিকা নিজের পা আহিলের হাত থেকে সরিয়ে নিয়ে আমতা-আমতা করে বলে,,
_ আমি তো তেমন আহামরি ব্যাথা পাই নি, এখন ঠিক আছি,আর আপনি বাবাকে কি বলছেন এগুলো।
_ সেটা তোমার না জানলেও চলবে,সামিরা ওকে ধরে ঘরে নিয়ে যাও।
সামিরা একবার আহিলের দিকে তাকিয়ে আরমান সাহেবের দিকে তাকালে তিনিও সম্মতি দেন। সামিরা মিহিকাকে ধরে উপরে নিয়ে যায়।
আহিল বসা থেকে উঠে আবার আরমান সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
_ আঙ্কেল আপনি কিছু বলবেন না,আমি যে বললাম আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
আরমান সাহেব গলাটা ঝেড়ে জবাব দেয়,,
_ তেমার সাথে আমি আমার মেয়েকে কেনো বিয়ে দিবো,তুমি যে সাহিলের মতো করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে।
_ আমাকে কি আপনার তাই মনে হয় যে সহিলের করা ভুল আমি ও করবো। আর সাহিল সেদিন ভুল করছে সেটার জন্য অনুতপ্ত ও, এখন ও নিজেকে অনেকটা চেঞ্জ করে ফেলছে। আর আপনি চাইলে এখনই কাজি ডেকে বিয়ে পরিয়ে দিন আমার সমস্যা নেই,কিন্তু মিহিকাকে আমি আমার বউ করবো।
_ আমার মেয়ে কি তোমায় ভালোবাসে বা তেমন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছে যে তুমি তাকে বিয়ে করতে চাইছো?
_ না আঙ্কেল মিহিকা এসবের কিছুই ইঙ্গিত দেয় নি, ইভেন ও জানে ও না।
_ আমার মেয়েতো রাজি হবে না তোমার সাথে বিয়ে করতে।
_ সেটা আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন,আমি ঠিক রাজি করিয়ে ফেলবো,এখন তো আপনি রাজি হয়ে যান।
_ আমার মেয়ে রাজি হলে আমি রাজি।
_ তার মানে আপনি রাজি?
_ আমি কখন বললাম আমি রাজি,আমি তো বললাম মিহিকা রাজি হলে আমি রাজি।
আহিল আরমান সাহেবের দু হাত মুঠোয় নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়।
সামিরা ঘরে এসে মিহিকাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মিহিকা ব্যাথা যুক্ত পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পায়চারি করছে। সামিরা এবার আর না পেরে বলে উঠে,,
_ কি রে তুই তলে তলে আহিল ভাইয়ের সাথে প্রেম ও শুরু করে দিছিস আর ভাইয়াও এই ক মাসে তোর জন্য পাগল হয়ে বিয়ের প্রস্তাব ও নিয়ে চলে আসলো বাহ!
মিহিকা হাঁটা থামিয়ে সামিরার দিকে ঘুরে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে বলে,,
_ তুমি অন্তত এ কথা বলো না আপাই,তুমি জানো ওনার সাথে আমার তেমন কোনো ঐরকম সম্পর্ক হয় নি,আমি বুঝতে পারতেছি না উনি কেনো আমায় বিয়ে করতে চাইছে।
_ কেনো আবার হয়তো তোর প্রেমে পড়েছে তাই।
সামিরার সোজাসাপ্টা জবাব।
_ আমার মতো কালো মেয়ের প্রেমে কি-না উনি পরবে,হাউ স্ট্রেঞ্জ!
_ চুপ তুই কই কালো বলদ,তুই শ্যামলা আর তুই যদি কালো হোস তাহলে সাব্বিরের আব্বা তাহলে কি সে কি তাহলে!
_ ধুর আপু গায়ের রং নিয়ে ওভাবে বলো না।
সামিরা বিছানা ছেড়ে উঠে মিহিকাকে বিছানায় বসিয়ে বলে,,
_ আমি সেভাবে বলি নি আমি জাস্ট তোকে বুঝালাম,গায়ের রং ম্যাটার করে না যে তোকে ভালোবাসবে সে তোর এই রং টাকে মেনেই করবে। আর আহিল ভাইয়ের কাছে হয়তো গায়ের রং ম্যাটার করে না।
_ কিন্তু আপাই আমি তো জানি না তিনি আমায় ভালোবাসে কি বাসে না।
_ বোকা মেয়ে, ভালো না বাসলে কি আর বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসতো নাকি।
মিহিকা কিছু বলতে নিবে আর তখনই মিহিকার ফোনে কল আসে। মিহিকা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে সেদিনের সেই নাম্বার টা। ফোনটা রিসিভ করে মিহিকা সালাম দিলে ওপাশে ব্যাক্তু সালামের জবাব নেয়।
মিহিকা লোকটির পরিচয় জিজ্ঞেস করলে লোকটি বলে,,
_ গলার কন্ঠ স্বর শুনেও চিনতে পারছো না,আমি কে?
গলার আওয়াজ টা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমতাআমতা করে শুধায়,,
_ আ আহিল আপনি?
মিহিকার তুতলানো দেখে আহিল নিশ্চুপে হাসে।
_ হ্যাঁ আমি, কেনো তোমার হবু স্বামির গলা শুনেও চিনতে পারলে না জান।
_ এই কিসের হবু স্বামি আর কিসের জান।
_ কেনো তুমি আমার একমাত্র হবু বউ প্লাস জান,কলিজা।
_ এই চুপ করুন তো কিসব বলছেন আপনি এগুলো।
_ কেনো এখনকার ছেলে মেয়েরা তো এসবই বলে ডাকে প্রেমিক প্রেমিকাদের।
_ আপনি কি আমার প্রেমিক না-কি আর না আমি আপনার প্রেমিকা।
_ তা না তুমি তো আমার হবু বউ।
_ এই কি শুরু করছেন কিসের হবু বউ আমি আপনার কোনো হবু বউ টউ না।
_ এসব কি বলো জান আমি যে গিয়ে বিয়ে ঠিক করে আসলাম তোমার আর আমার আঙ্কেল তো রাজি বিয়ের ডেট ফিক্সড করা বাকি শুধু।
_ আমি আপনায় বিয়ে করবো না,ফোন রাখেন, মামার বাড়ির আব্দার নাকি হুমম।
_ মামার বাড়ির আব্দার না জান শশুর বাড়ির আব্দার এটা। বিয়ের প্রি-পারেশান নাও জান,খুব শীগ্রই তোমায় নিয়ে আসবো আমার বাড়ি,পরে না হয় চুটিয়েপ্রেম করবো।
_ যেখানে আপনায় বিয়েই করবো না সেখানে প্রেম তো দূরে থাক, রাখেন আপনি ফোন।
কথাটা বলেই মিহিকা ফোন রেখে দেয়। সামিরা এতোক্ষণ ধরে মিহিকার কথাবার্তা গুলো শুনছিলো।
_ এই তুই এভাবে কথা বললি কেনো উনার সাথে?
_ তে কিভাবে কথা বলবো, দেখলি না কিভাবে জান, কলিজা বলছিলো, আবার বললো বাবা নাকি রাজিও হয়ে গেছে।
_ তো সমস্যা কি,একদিন তো বিয়ে করতেই হতো সেটা আজ হোক আর কাল।
মিহিকা সামিরার কথা শুনে দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
___________________
আহিল বাসায় এসে সবাইকে এক এক করে ডেকে বলে দেয় যেনো এই মাসের ভেতরেই তার আর মিহিকার বিয়ে ঠিক করে ফেলে।
শফিক সাহেব আহিলের কথা শুনে বলে,,
_ আরমান তো রাজি না তাহলে…
_ প্যারা নাই উনি রাজি এখন তোমরা গিয়ে শুক্রবারে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে আসবে,আর ডেট টা এ মাসের ভেতরেই ঠিক করবে।
আরশিয়া খুশি হয়ে পাশে থাকা সাহিলের হাত জড়িয়ে ধরে, সাহিল কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আরশিয়া বলে,,
_ আরে তুমি বুঝতে পারছো তিন তিনটা বিয়ে খাবো আমরা। আহিল ভাইয়ের আয়ুশ ভাইয়ের আর সামিরার,কত্তো এনজয় করবো উফ ভেবেই আনন্দ লাগছে,তুমি থাকো আমি মা’কে খবরটা গিয়ে দিয়ে আসি।
আরশিয়া সাইডে গিয়ে তার মা আরুশি বেগমকে ফোন দিয়ে মিহিকার বিয়ের খবর জানায়। আরশি বেগম মিহিকার বিয়ের খবর শুনে আরশিয়াকে শুধায়,,
_ আরমান মিহিকার বিয়ে ঠিক করলো কই আমায় তো জানালো না।
_ আরে মা এখনো ঠিক হয় নি শুক্রবার এ বাড়ি থেকে যাবে সবাই ডেট ফিক্সড করতে।
_ ওহ ভালোই হবে সিরিয়ালে সব ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে।
_ হুম আচ্ছা রাখি মা পরে কথা বলবো নি।
কথাটা বলেই আরশিয়া ফোন রেখে দেয়।
আয়ুশ পানি খেতে এসে তার মা আরুশি বেগমের ফোনে বলা কথা গুলো শুনে ফেলে। মূহুর্তে যতোটুকু মিহিকাকে পাবার আশা ছিলো সেটাও নিভে গেলো।
#চলবে
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, হ্যাপি রিডিং)