কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব২৩ #Raiha_Zubair_Ripte

0
365

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২৩
#Raiha_Zubair_Ripte

আয়ুশ পানি খেতে নিচে নেমে এসে তার মা আরুশি বেগমের ফোনে বলা কথা গুলো শুনে ফেলে, মিহিকার বিয়ে ঠিক হচ্ছে । মূহুর্তে যতোটুকু মিহিকাকে পাবার আশা ছিলো সেটাও নিভে গেলো। পানি আর না খেয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায় আয়ুশ,বিছানা থেকে ফোন নিয়ে আরশিয়া কে ফোন করে।

আরশিয়া সবে তার মা আরুশি বেগমের সাথে কথা বলে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াতেই আবার ফোন চলে আসে। ফোনের স্কিনে আয়ুশের নাম্বার দেখে বুঝতে আর বাকি নেই আয়ুশ কেনো তাকে ফোন করেছে। একটু সাইডে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে আয়ুশ বলে,,

_ আরশিয়া সত্যি কি মিহিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?

_ এখনো ঠিক হয় নি হবে।

_ পাত্র কে আই মিন কার সাথে বিয়ে ঠিক হবে।

_ আমার ভাসুরের সাথে।

_ কিহ!তুই কি জানিস না আমি মিহিকাকে ভালোবাসি তাহলে কেন তুই আটকাচ্ছিস না।

_ ওহ ভাইয়া এটাকে অন্তত ভালোবাসা বলে দাবি করো না,মিহিকাকে সত্যি ভালোবাসলে কখনোই সাদিয়ার সাথো রিলেশনে যেতে না,আর তোমার কি মিনিমাম কমনসেন্স নেই তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুমি কি-না এখনো মিহিকা মিহিকা করছো,আহিল ভাই শুনলে কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়ো যাবে।

_ তুই নিজের ভাইয়ের থেকে অন্যের ভাইয়ের জন্য এতো ভাবছিস অথচ আমার কথাটা ভাবলি না,ওকে ফাইন আমি ও দেখবো কিভাবে আহিল মিহিকাকে বিয়ে করে।

_ দেখো ভাইয়া তেমন উল্টাপাল্টা কিছু করো না,আহিল ভাইয়া কিন্তু ছেড়ে দিবে না,তার চেয়ে যা হচ্ছে হতে দাও,সামিরাকে নিয়ে থাকো না হ্যাপি, কেনো অন্যের সুখ নষ্ট করতে চাচ্ছো তুমি।

আয়ুশ কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। আয়ুশের ফোন কেটে দেওয়াতে আরশিয়া দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,,যে ছেলে নিজের অনুভূতিকে নিয়েই কনফিউজড সে জানবে কিভাবে হোয়াট ইস লাভ।

আয়ুশ ফোন কলে গিয়ে সাদিয়ার নাম্বারে ফোন দেয়,সাদিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ময়েশ্চারাইজার নিচ্ছিলো ফোন আসায় এগিয়ে এসে বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে আয়ুশ ফোন করেছে।

হঠাৎ আয়ুশের ফোন কল দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে সাদিয়া,ফোনটা রিসিভ করে সাদিয়া হ্যালো বলে। ওপাশ থেকে আয়ুশ বলে উঠে,,

_ সাদিয়া আমায় বিয়ে করতে চাইলে এই মূহুর্তেই তোমার বিয়ে করতে হবে নচেৎ আর কখনো আমায় বিয়ে করতে পারবা না, তখন যতো কিছুই করো না কেনো কাজ হবে না।

আয়ুশের এমন কথা শুনে সাদিয়া চমকে উঠে,, মনে মনে বলে,,এই ছেলের হলোটা কি পরশু দিনও তো বললো সে আমায় বিয়ে করবে না আবার সে এখন নিজে থেকোই বিয়ে করতে চাইছে,ডাল মে কুচ কালা হে।

নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সাদিয়া জবাব দেয়,,

_ হয়েছে কি সেটা বলো,স্বার্থে নিশ্চয়ই আঘাত লেগেছে তাই এমন কথা বলছো,এখন সোজা মেন পয়েন্টে আসো হুয়া কিয়া।

_ কিছু হয়নি আমি আজই বিয়ে করতে চাই,তুমি রাজি না হলে আমি অন্য কাউকে করবো কিন্তু বিয়ে আজ মানে আজই।

_ আরে আজব তো বিয়ে কি মুখের কথা নাকি যে বললাম আর করে ফেললাম,বাব, মা তাদের বলো।

_ তাদের বলার কি আছে এমনিতে তো আমাদের বিয়ে ডেট ফিক্সড করাই সমস্যা কই সেটা কয়েকদিন আগে করলে।

_ আচ্ছা তুমি আমার বাসার সামনে আসো আমি রেডি হচ্ছি, আর শোনো পাঞ্জাবি পড়ে আসবা।

আয়ুশ লাস্টের কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয়।

_ যাহ বাবা ফোন কেটে দিলো,বেটার হয়েছেটা কি বেটা বিয়ের জন্য লাফাচ্ছে কেনো,যাই হোক না কেনো বাসায় বলতে হবে।

সাদিয়া আরুশি বেগম কে ফোন করে আয়ুশের সব কথা জানায়,আরুশি বেগম সব শুনে বলে,,

_ মা তুমি বরং বিয়ে করো, আমার ছেলে মনে হয় আবার কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়ছে,তোমরা গিয়ে বিয়ে সেরে ফেলো আমি, তোমার শশুর আর তোমার বাবা মা যাচ্ছি।

সাদিয়া হুমম বলে ফোন কেটে দেয়। সাদিয়া তার বাবা সাদমান সাহেবের ঘরে গিয়ে সব বলে,, সাদিয়ার মা আলমারি থেকে একটা বেনারসি বের করে মেয়েকে সাজিয়ে দেয়।

সাজানো শেষে সাদিয়া বিদায় নিয়ে বাসার বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিট দশেকের মধ্যে আয়ুশ এসো পড়ে বাইক নিয়ে,আয়ুশের পড়নে ব্লু কালারের পাঞ্জাবি, সাদিয়া দেখে মনে মনে বলে,,উফ কি জোশ লাগছে আমার হিরো টাকে,একটু কারেক্টারেই তো সমস্যা ব্যাপার না বিয়েটা হোক এমন প্যারা দিবো সব ভুলে যাবে।

কথা গুলো মনে মনে বলে একটা হাসি দিয়ে আয়ুশের বাইকে বসে পড়ে। আয়ুশ খেয়াল করে নি সাদিয়ার সাজ ওভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে বাইক চালাতে লাগলো।

সাদিয়া মন খারাপ করে ফেলে যার জন্য এতো সাজ সে ঘুরেও তাকাচ্ছে না। আয়ুশ কাজি অফিসের সামনে এসে গাড়ি থামায়। সাদিয়া আয়ুশ দুজনে বাইক থেকে নেমে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে আর সাক্ষী হিসেবে ছিলে আয়ুশের দুই ফ্রেন্ড।

বিয়ে করে কাজি অফিস থেকে বের হতে নিলে সামনে তাকাতেই নিজের বাবা,মা ও সাদিয়ার বাবা মা কে দেখে চমকে উঠে সাদিয়ার দিকে তাকাতেই বুঝতে আর বাকি নেই এটা সাদিয়ার কাজ।

____________________

মিহিকা ঘর থেকে বেরিয়ে আরমান সাহেবের ঘরে যায়,আরমান সাহেব শুয়ে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলো মেয়ের ডাক শুনে শুয়া থেকে উঠে বসে,,

_ কি রে কিছু বলবি তুই।

মিহিকা রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলে,,

_ হ্যাঁ বলতে তো চাই অনেক কিছু কিন্তু তুমি কি শুনবে আমার কথা।

_ কেনো শুনবো না বল দেখি।

_ তুমি আবার আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছো বাবা,একবার তো হাসির খোঁড়াক হলাম,আবার কি সেই হাসির খোঁড়াক বানাতে চাও।

আরমান সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে শুধায়,,

_ হাতর পাঁচটি আঙুল যেমন এক না, তেমনই সব মানুষই এক না,সাহিল যেই ভুল করছে সেটা আহিল করবে না,আহিল কে আমি চিনি।

_ তুমি তো সাহিলকেও চিনতে তাহলে!

_ মানুষ চিনতে তখন ভুল করেছিলাম,আর এখন তুমি নিজে জাচাই বাছাই করে নিবে আহিল কে। এই সম্বন্ধ টা আমি সম্পূর্ণ তোমার উপর ছেড়ে দিয়েছি,তুমি রাজি হলেই আমি আগাবো। ছেলেটা তোমায় নাকি ভালোবাসে পরখ করে দেখে নাও সে সত্যি তোমায় ভালোবাসে না-কি। একটা সম্পর্ক গড়তে হলে ভালোবাসা থাকতে হয়,আমি জানি আহিলের প্রতি তোমার তেমন অনুভুতি জন্ম নেয় নি। তবুও বলবো একবার কাচ কে হিরে ভাবতে গিয়ে যেই ভুল করছি তুমি আবার হিরে কে কাচ ভেবে সেই ভুল করো না।

মিহিকা হুম বলে আরো টুকটাক কথা বলে সোজা ছাঁদে চলে আসে। ছাঁদের দোলনাটাতে বসে ভাবতে থাকে আরমান সাহেবের বলা কথা গুলো।
“আচ্ছা সত্যি কি আহিল আমায় ভালোবাসে? কই কখনো তো তার আকার ইঙ্গিতে আমি বুঝি নি, আচ্ছা বাবা তো বললো আমায় তাকে পরখ করে নিতে,আহিল যদি সত্যি আমায় ভালোবাসে তাহলে অবশ্যই আমার সব আবদার রাখবে। কথাটা ভেবেই ফোন বের করে আহিলের নাম্বারে কল লাগায়।

আহিল ঘরে বসে ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠায়,ফোনের স্কিনে ব্লাক হর্নেট দিয়ে সেভ করা যার অর্থ কালো ভ্রমর। ফোনের স্কিনে এই নামটা ভেসে উঠায় আহিলের মন টা প্রফুল্লতে ভরে উঠে,তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ফোনটা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায়।

মিহিকা হ্যালো বলতেই আহিল বলে উঠে,,

_ কি ব্যাপার ব্লাক হর্নেট আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে যে আপনি ফোন করলেন।

_ রাতের বেলায় কি সূর্য দেখতে পারছেন আপনি?

_ কারেক্ট সূর্য তো নেই,আছে তো এক জোছনা ভরা চাঁদ। তা হঠাৎ কি মনে করে এই অধম কে ফোন দিলে।

_ আমি কাচ্চি খাবো সাথে চিকেন ফ্রাই, একটা কোল্ড, সাথে চকলেট আইসক্রিম।

_ ওহ আচ্ছা খাও তা এটা আমায় জানাচ্ছো যে,এনি ওয়ে তুমি কি আমায় ইনভাইট করতে চাচ্ছো এগুলো খাওয়ার জন্য।

_ ওহ হ্যালো আপনায় ইনভাইট করি নি আপনায় শুনালাম ত্রিশ মিনিটের মধ্যে এগুলে নিয়ে আমার বাসার সামনে আসবেন।

_ কিহ রাত বাজে ১২ টা এখন এসব নিয়ে তোমার বাসায় আসতে হবে।

_ হ্যাঁ না পারলে বিয়ে ক্যান্সেল।

_ এই এই তার মানে তুমি রাজি বিয়ে করতে,ও মাই গড, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না,ওয়েট আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি তুমি ঘড়ির টাইম দেখো জান আই আ’ম কামিং।

কথাটা বলে বিছানার উপর থেকে গাড়ির চাবি আর মানিব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

মিহিকা ফোন রেখে ছাদের রেল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আহিলের অপেক্ষায়।

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, যারা গল্পটা পড়েন,দয়া করে তারা রেসপন্স করে যাবেন,হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here