কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব২ #Raiha_Zubair_Ripte

0
680

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripte

সাত সকাল বেলায় সামিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে এক মেয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব বাঁধছে। সামি বিছানা ছেড়ে উঠে মেয়েটির কাছে গিয়ে মেয়েটির কাঁধে হাত রাখে। মেয়েটি পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করে,,

_ সামিরা আপু কখন উঠলে তুমি আমি তো কেবলই তোমায় ডাকতে যেতাম। উঠে ভালোই করেছো আমার হিজাব টা বেঁধে দাও না,আমি অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছি কিন্তু পারছি না। দেখো তো মুখে মেকআপ টা ভালো মতন বসেছে, নাকি এখন ও আগের মতো কালো লাগছে আমায়।

_ তুই কি পা’গল হয়ে গেছিস যে মেকআপ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখবি । তুই তো কালো নোস তুই হচ্ছিস শ্যামাঙ্গীনি। কালো তো এটাকে বলে না কালকের ঘটনার জন্য এভাবে কেনো নিজেকে বাহিরের মানুষের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবি। এসব মেকআপ ধুয়ে আয় যা একদম বাজে লাগছে।

মিহিকাকে হিজাব বেঁধে দিতে দিতে বললো সামিরা।

_ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি, কালকের ঘটনা আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে,আমি কালো বলে আমায় আমার বাবাকে কিভাবে হেনস্তা হতে হলো তুমি দেখলে হয়তো বলতে না আপাই। কলেজে গেলে আমায় আবার হেনস্তা হতে হবে রাফিয়া হয়তো এতোক্ষণে যেনেও গেছে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে ও নিশ্চয়ই আমায় এমনি এমনি কথা না শুনিয়ে থাকবে না। আমি এবার সত্যি পা’গল হয়ে যাবো।

_ সবাই সব কিছুর মূল্য বুঝে না, এমন মেকআপ করে রং চং মেখে কয়দিন নিজেকে আড়াল করে রাখবি তুই। তোকে তো গায়ের রং নিয়ে কখনো আক্ষেপ করতে দেখি নি,কালকের ঘটনার জন্য এমন ভাবে নিজেকে পাল্টে ফেলতে চাচ্ছিস কেনো,আর মেয়েটা এতো বারাবাড়ি করে তাহলে চাচাকে বলিস না কেনো তাহলেই তো মেয়েটা উচিত শিক্ষা পাবে তারা তো আর জানে না তুই কার মেয়ে জানলে নিশ্চয়ই এমন সাহস দেখাবে না।

_ আচ্ছা বাদ দাও আজ কিছু বলে নিক না এমন শিক্ষা দিবো না একদম।

_ এমন সং সেজে কিন্তু চাচার সামনে যাস না, চাচা দেখলে কিন্তু ভাববে কালকের জন্য তুই এমন নিজেকে ঢেকে রেখেছিস,এমনিতেই কাল রাতে চাচা অনেক ভেঙে পড়েছিলো। তোর এই নতুন রূপ দেখলে আবার না অন্য কিছু ভেবে বসে।

_ তুমি চিন্তা করো না আমি মুখ ধুয়ে আসছি,তুমি আছো দেখেই আমি এতো ভরসা পাই আপাই,তুমি না থাকলে কাল হয়তো কিছু করেই বসতাম।

সামিরা মিহিকাকে জড়িয়ে ধরে,

_ চুপ পাগলি আপাই বলে ডাকিস আমায়! তোর আপাই সবসময় তোর পাশেই থাকবে, কখনো একলা ছাড়বে না তোকে আর কালকের কথা নিজের মাথার মেমোরি থেকে পারমানেন্টলি ডিলেট করে দাও। ভাবো কাল কিছুই হয় নি তোমার সাথে।

মিহিকা হুম বলে চলে যায় ওয়াশরুমে। সামিরা কাল রাতের কথা ভাবে,

মিহিকা যখন দরজা খুলেছিলো ইশ কি হাল বানিয়ে ফেলছিলো নিজের, ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছিলো, চুলগুলো পাগলের মতো বানিয়ে ফেলছিলো টেনে,শাড়ির আঁচল পড়ে গিয়ে ফ্লোরের সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। চোখের কাজল লেপ্টে ছিলো। সেই মূহুর্তে মিহিকাকে একজন সদ্য হৃদয় ভাঙা এক পা’গল মনে হচ্ছিলো। সামিরা যখন মিহিকাকে জড়িয়ে ধরলো মিহিকা সে কি কান্না, কান্না করতে করতে গলা প্রায় বসিয়ে ফেলছে। নিজের গালপ পাগলের মতো থাপ*ড়াতে লাগলে।

সামিরা মিহিকার এমন রূপ দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো দ্রুত চাচাকে ডাকে। আরমান সাহেব মিহিকার ডাক শুনে তারাতাড়ি করে উপরে এসে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত মিহিকার এমন পাগল পানা চলতে থাকে, সামিরা আর না পেরে আরমান সাহেবের কাছ থেকে মিহিকাকে টেনে দাঁড় করিয়ে ঠাসিয়ে গালে চ*ড় মারে, হাত ধরে টেনে ঘরে আনে।

_ যা নিজেকে যা করার কর আমাদের কথা ভাবিস না তুই, কাল এক বাহিরের ছেলে কি বললো না বললো তার জন্য নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস আঘাত করছিস। তোর বাবার কথা ভাবছিস না একবার ও। তোর বাবার মুখের পানে চেয়ে দেখেছিস কি হাল বানিয়েছে। বাবার চেয়ে এক দিনের চেনা ছেলেটাই তোর আপন হয়ে গেলো। তোর চিন্তায় চাচা এখনো কিছু খায় নি ভুলে গেছিস চাচা হার্টের রুগি সময় মতো তাকে ঔষধ খেতে হয়।

এতোক্ষণ ধরে মাথা নিচু করে রেখেছিলে মিহিকা এবার মাথা উঁচু সামিরার পানে চায় একবার। সামিরার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। প্রায় আধ ঘন্টা পর মিহিকা ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলিয়ে বের হয়ে আসে।

_ বাবা খুব খিদে পেয়েছে কিছু কি খেতে পাওয়া যাবে।

আরমান সাহেব মাথা উঁচু করে মেয়ের পানে চায়।

_ হ্যাঁ মা তুমি আসো আমি এখনই খাবারের ব্যাবস্থা করছি।

_ তুমি আর মিহিকা এখানেই থাকো আমি আসছি খাবার নিয়ে, পেটের ভেতর ইদুর গুলো দৌড়াদৌড়ি করছে।

সামিরা নিচে চলে যায় খাবার আনতে। মিহিকা ধির।পায়ে বাবার পাশে গিয়ে বসে, বাবার হাতে দুটো নিজের মুঠোয় পুরে নেয়।

_ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছো আমার ব্যাবহারে তাই না, প্লিজ রাগ করে থেকো না আমার উপর। প্রমিস করছি আর কখনো তোমার কষ্ট হবে এমন কাজ করবো না।

_ না রে মা দোষ তো তোর না দোষ টা তো আমার, আমার জন্যই তো তোকে কাল এতো অসম্মানিত হতে হলে পারলে তোর এই অধম বাবা টাকে ক্ষমা করে দিস।

_ না বাবা এতে তোমার কোনো দোষ নেই এটাতো ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে।

আরমান সাহেব নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। সামিরা খাবার এনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো। বাবা মেয়ের সুন্দর মূহুর্ত টাকে নষ্ট করতে চায় নি। এদের বাবা মেয়ের মূহুর্ত গুলো দেখলে সামিরার নিজের বাবার কথা খুব মনে পড়ে। সামিরার বাবা পাঁচ বছর হলো দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছে। সামিরা চোখের কোনে থাকা পানি মুছে খাবারের ট্রে টা নিয়ে ভেতরে ঢুকে।

_ হয়েছে হয়েছে আর কান্না কাটি করতে হবে না বা মেয়ের খাবার এনেছি খেয়ে নাও।

আরমান সাহেব খাবারের প্লেট টা হাতে নিয়ে মিহিকাকে খাইয়ে দিতে লাগলে। সামিরা সবেই খাবার মুখে দিতে যাচ্ছিলো এটা দেখে আর খাবার মুখে তুলতে পারলো না বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। আরমান সাহেব বিষয় টা লক্ষ করে সামিরাকে ডাকে।

_ কিরে তুই ওখানে কেনো এখানে আয়, আমি আমার দুই মেয়েকে খাইয়ে দিবো আজ।

সামিরা বিনা বাক্যে উঠে গিয়ে মিহিকার পাশে বসে পড়ে। দুই মেয়েকে খাইয়ে নিজেও খেতে লাগলে আরমা। খাওয়া শেষে মিহিকা ঔষধ এনে আরমানকে খেতে বললো। আরমান ঔষধ খেয়ে দুজন কে গুড নাইট বলে চলে গেলো নিজের ঘরে।

সামিরা মিহিকার ঘরে এক বার চোখ বুলিয়ে নেয়।

_ ঘরেই যেই অবস্থা করেছিস এ ঘরে আর শোয়া যাবে না। চল আমার ঘরে যাই।

সামিরার এ বাড়িতে এসে প্রায় বেশির ভাগ সম থাকে তাই তার জন্য আলাদা একটা ঘর বরাদ্দ। মিহিকা আর সামিরা গিয়ে সামিরার ঘরে শুয়ে পড়ে। ঘুমের ঘরে বারবার বিরবির করছিলে মিহিকা। সামিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে দু হাতে আগলে নেয়। আস্তে আস্তে নিজেও ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যায়।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে মাথা ঘুরিয়ে দেখে মিহিকা মুখ ধুয়ে বের হয়েছে। সামিরা মিহিকার গালে ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখলো মিহিকার গালে থাপ্প”ড়ের দাগ ভেসে আছে। সামিরার আর বুঝতে বাকি নেই কেনো মিহিকা ওমন চওড়া মেকআপ করেছিলো মুখে। মিহিকা নিজে বের হয়ে সামিরাকেও বলে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে কলেজে যাবে। সামিরাও ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে যায় গিয়ে দেখে তার জন্য মিহিকা আর আরমান সাহেব অপেক্ষা করছে। সামিরা চেয়ার টেনে বসলে সবাই খাওয়া শুরু করে।

________________________🥀

প্রায় বিশ মিনিট ধরে এই রোদে দাঁড়িয়ে আছে মিহিকা আর সামিরা। আজ আর তারা গাড়ি নিয়ে আসে নি। সামিরা মিহিকার পানে একবার চেয়ে রাস্তার ওপর পাশে চায়।

_ মিহিকা আইসক্রিম খাবি ঐ দেখ রাস্তার ওপারে আইসক্রিম।

সামিরা হাতের ইশারায় দেখায়। মিহিকা রাস্তার ওপর পাশে তাকায়।

_ এই গরমে আইসক্রিম খাওয়াই যায়। তুমি দাঁড়াও আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি।

_ আচ্ছা রাস্তা সাবধানে পাড় হয়ে যাবি।

মিহিকা মাথা নাড়িয়ে সাবধানের সাথে রাস্তা পাড় হয়ে আইসক্রিমের ভ্যানের কাছে যায়। দুটো ভ্যানিলা আইসক্রিম নিয়ে যেই রাস্তা পাড় হতে নিবে তখন একটা গাড়ি এসে মিহিকর সামনে ব্রেক কোষে। মিহিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে দু হাতে থাকা আইসক্রিম পড়ে যায়। সামিরা তারাতাড়ি করে রাস্তা পাড় হয়ে এসে গাড়িটার সামনে দাঁড়ায়। ততক্ষণে গাড়ি থেকে এক ছেলে বের হয়। বয়স ২৬-২৭ হবে,ছেলেটি বের হয়ে সোজা মিহিকার কাছে যায়।

_ এই যে মিস সাবধানে চলতে পারেন না আরেক টু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পড়তে যাচ্ছিলেন। তখন তো দোষ আমাদের দিতেন।

_ তখন দোষ দিতাম মানে এখন ও দোষ দিচ্ছি গাড়ি কি চোখ বন্ধ করে চালান নাকি অন্ধ লোক একটা।

তেড়ে এসে কথা গুলো বললো সামিরা।

_ এই অভি এতো কথা কিসের হাতে পায়ে ব্যাথা লাগে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে চলে আয়,এমনি তেই লেট হয়ে যাচ্ছে হসপিটালে যেতে।

এতোক্ষণ মিহিকা চুপ থাকলেও এখন আর চুপ থাকলো না। তারাতাড়ি করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের গ্লাসে টুকা দিলো।

গাড়ির ভেতর থাকা ব্যাক্তি বিরক্তি চাহনি নিয়ে গাড়ির গ্লাস টা নিচে নামায়।

_ সমস্যা কি তোমার তোমার তো কোনো ক্ষতি হয় নি, এই অভি হাজার টাকা দিয়ে চলে আয়।

_ এই যে মিস্টার টাকার গরম কাকে দেখাচ্ছেন। আপনার এই ফাফর অন্য কোথাও দেখাবেন,একে তো গাড়ি শরীরের উপর দিয়ে নিতে যাচ্ছিলেন তার উপর টাকার বড়াই করছেন। পুলিশের দু ঘা পিঠে পড়লে না দেমাক বেড়িয়ে যাবে।

_ সাট আপ তুমি এই আহি..

_ উফ চুপ থাক তুই এই মিস দুঃখিত ভুল হয়ে গেছে আমাদের আসলে খুব তারাতাড়ি গাড়ি চালাচ্ছিলো তাই বুঝতে পারে নি। গাড়ির ভেতর থাকা ব্যাক্তিকে চুপ করিয়ে বলে অভি।

_ বুঝতে পারে নি মানে কি তার এই তারাহুরোর জন্য তো আরেকটু হলে আমার জানটাই চলে যেতো।

_ জান টা তো যায় নি তাহলে এতো কথা বাড়াচ্ছেন কেনো আপনার আইসক্রিম নষ্ট হয়েছে এই নিন আইসক্রিম এবার শান্তি মতে নিজের গন্তব্যে যান আর আমাদের ও যেতে দিন। বলেই অভি গাড়িতে উঠলে ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটি গাড়ি চালাতে শুরু করে।

_ এতো মিষ্টি করে কথা বলার কি দরকার ছিলে তোর।

_ একে তো দোষ তোর আহিল তার উপর আবার বলছিস মিষ্টি করে কেনো কথা বললাম।

আহিল আার কিছু বললো না এমনিতে খুব প্যারায় আছে। কাল রাতে শফিক সাহেব কে নিয়ে রওনা হলে মাঝ রাস্তায় এসে প্রচুর বুকে ব্যাথা উঠে। আসমানী তড়িঘড়ি করে হসপিটালে নিয়ে আসে। ব্যাবসার কাজে চিটাগং ছিলে আহিল মাঝরাতে মায়ের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর এসে পৌঁছালো হসপিটালে আহিল রিসিপশন থেকে কেবিন নম্বর জেনে সেখানে চলে গেলে।

কেবিনের বাহিরে সাহিল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহিলের মাথা গরম হয়ে গেলে ফোনে সব বলেছে আহিলকে আসমানী। সাহিলের সামনাসামনি গিয়ে সাহিলের গালে চড় বসিয়ে দিলে আহিল। মূহুর্তে পাশে থাকা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলে, সাহিল গালে হাত দিয়ে আহিলের পানে চেয়ে কিছু বলতে নিলে আহিল সাহিল কে থামিয়ে দেয়।

_ মা এই ছেলেকে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলো আমি কেবল শুধু একটা চড় দিছি আমার সামনে থাকলে আরো কিছু করে ফেলতে পারি ওকে তাই বলছি ওকে যেতে বলো।

আসমানী চোখের ইশারায় সাহিল কে চলে যেতে বললো। সাহিল বিনাবাক্যে ছলছল নয়নে একবার আহিলের দিকে চেয়ে বেড়িয়ে গেলো হসপিটাল থেকে।

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর নেক্সট নেক্সট না করে আমার গল্প কেমন লাগলো সেটা জানাবেন, গল্পের ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন। আমার সময় হলে তো আমি গল্প দিবোই। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here