#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripte
খোলা মাঠের নিচে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। গায়ে তার ব্লাক কোট মুখে লাগানো মাস্ক। একবার হাতে থাকা হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
সাহিল বাইক টা মাঠের এক সাইডে পার্ক করে সোজা লোকটির সামনে চলে যায়। লোকটির কাঁধে হাত রাখে সাহিল।
লোকটি তার কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফেরে।
ঝাঁঝালো কন্ঠে শুধায়,,
_ এটা তোমার আসার টাইম হলো,কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি,আমার এক একটা সময়ের অনেক মূল্য রয়েছে। তোমার মতো বেকার না কাজ কর্ম আছে আমার।
_ দুঃখিত আমার পাওনা টা আমায় বুঝিয়ে দিন আর বিরক্ত করবো না।
লোকটি পকেট থেকে একটি চেক বই বের করে। চেকটা সাহিলের দিকে এগিয়ে দেয়। সাহিল চেক টা নিয়ে ভালো করে পরখ করে দেখে দশ লাখ টাকার একটা চেক।
সাহিল খুশি হয়ে লোকটিকে জড়িয়ে ধরতে গেলে লোকটি এক হাত উচু করে থামিয়ে দেয়। সাহিল মেকি হাসি দিয়ে হাত দুটো গুটিয়ে নেয়।
_ এই টাকা নিয়ে দুজনে ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে যাও আর গিয়ে নতুন ফ্লাটে উঠো। আরশিয়া যেন একটু ও কষ্ট না পায়,
_ হ্যাঁ সেটা না হয় করলাম কিন্তু এ টাকাতে আমি কয়দিন ই বা চলতে পারবো। আর আপনি হঠাৎ কেনো আরশিয়াকে বিয়ে করতে বললেন সেদিন বিয়ের আগ মূহুর্তে ফোন করে।
_ নিজের সীমা তে থাকো,এতো কৌতূহল ভালো না যা বললাম মাথায় রেখো।
কথাটা বলেই লোকটা চলে গেলো।
সাহিল লোকটির যাওয়ার পানে চেয়ে টাকার চেকটাতে একটা চুমু খেয়ে শুধায়,,
_ আজ থেকে আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস আরশিয়া। একে দিয়েই আমি আমার লক্ষে পৌঁছাবো।
কথা টা বলে সাহিল ও চলে যায়।
_____________________
মিহিকা মিনিট বিশেকের মতো বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সকালে বলেছিলো আয়ুশ মিহিকাকে কলেজে ড্রপ করে দিবে।
হঠাৎ সামনের একটি গাড়ি থেকে নেমে আসে আয়ুশ। আয়ুশ কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিহিকা।
আয়ুশ গাড়ি থেকে নেমে মিহিকার সামনে এসে কানে হাত দিয়ে সরি জানায়। মিহিকা কিছু না বলেই সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে।
মিহিকার রাগ দেখে আয়ুশ তড়িঘড়ি করে গাড়িতে এসে গাড়ি চালাতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা থেকে আয়ুশ শুধায়,,
_ কি রে রেগে আছিস এখনো,প্লিজ রাগ করিস না। আমার সত্যি অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিলো তাই বেরিয়ে গেছিলাম, বুঝতে পারি নি এতো দেরি হয়ে যাবে।
মিহিকা আয়ুশের পানে তাকিয়ে শুধায়,,
_ আমি কি তোমায় বলেছি আয়ুশ ভাইয়া আমি রেগে আছি। তাহলে কেনো এমনটা বলছো।
_ না আসলে মনে হলো রোগে আছিস তাই আর কি। আচ্ছা আজ তো সামিরা কে দেখতে আসবে তাই না?
_ হ্যাঁ আমিও তো তাই শুনলাম, সকালে ব্রেকফাস্টের পরে চাচি বললো। আপুর তো কয়েকদিন পর এইচএসসি এক্সাম চাচি এখন কেনো এসব শুরু করতেছে, আপুর সাথে আজ দেখা হয় নি সকালেই প্রাইভেটে চলে গেছে।
মিহিকার কথা শুনে আয়ুশ আর কিছুই বললো না সোজা কলেজের গেটে এসে গাড়ি থামালো।
মিহিকা গাড়ি থেকে নেমে কলেজের গেটে ঢুকতেই পাশ থেকে রাফিয়া ডেকে উঠলো।
মিহিকা ডাক শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে রাফিয়া তার দিকে এগিয়ে আসছে,,
_ হাই মিহিকা,কেমন আছো?
_ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?
_ আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সেদিনের ঘটনার জন্য আমি খুবই লজ্জিত, আমি তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই প্লিজ প্রত্যাক্ষান করো না।
মিহিকা রাফিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না,তার হঠাৎ এতো পরিবর্তন কিভাবে?
মিহিকা রাফিয়ার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে আর তখনই পেছন থেকে আয়ুশ ডেকে উঠে।
আয়ুশের ডাক শুনে মিহিকা ও রাফিয়া পেছন ফিরে।
আয়ুশ গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মিহিকার ফোন পড়ে আছে সিটে।
রাফিয়া আয়ুশকে দেখা মাত্রই ক্রাশ নাম বাঁশ খায়। এতো সুদর্শন ছেলে দেখলে যে কেউই ক্রাশ খাবে। রাফিয়া রীতিমতো হা করে তাকিয়ে আছে আয়ুশের দিকে।
আয়ুশ ফোনটা এনে মিহিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে,একবার রাফিয়ার পানে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চলে যায়।
মিহিকা ফোন টা নিয়ে কলেজে ঢুকে পড়ে। রাফিয়া আয়ুশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে শুধায়,,
_ ছেলে তুমি পড়েছো আমার চোখে, যে করেই হোক, তোমায় আমি আমার নিজের করেই ছাড়বো, তোমায় আমার চাই মানে চাই, সেটা যে কোনোর মূল্যে।
_____________________
সাহিল বাড়ি ফিরে সোজা হাজার টাকার দশ টা নোট আরশিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। আরশিয়া টাকা গুলে দেখে অবাক হয় না, ভ্রু কুঁচকে সাহিলের মানে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
_ আমার হাতে টাকা দিচ্ছো কেনো তুমি। আমি টাকা দিয়ে কি করবো।
সাহিল হাতে থাকা বাকি টাকা গুলোতে চুমু খেয়ে শুধায়,,
_ এই টাকা দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করে খাবার খাও,আমি খেয়ে এসেছু আর হ্যাঁ শুনো খেয়ে দেয়ে রেডি হও আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
আচমকা সাহিলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে চমকে যায় আরশিয়া।
_ কি সব বলছো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে মানে কি?
_ মানে খুবই সিম্পল আমরা আর এই বাড়ি থাকছি না আমরা আমাদের নিজ ফ্লাটে গিয়ে উঠবো।
_ আর ইউ ম্যাড! তুমি নিজের বাড়ি পরিবার ছেড়ে আলাদা থাকবে?
_ হ্যাঁ আলাদা শান্তিতে থাকবো,আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হও আমরা চলে যাবো।
_ তোমার যাবার হলে তুমি চলে যাও, আমি আলাদা পরিবার ছেড়ে একা একা সংসার পাতবো না থাকলে এ বাড়িতেই সবার সাথে থাকবো।
আরশিয়ার কথা শুনে কপাট রাগ দেখিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে শুধায়,,
_ তোমার মাথা টা কি গেছে একেবারে, এ বাড়ির কেউ তোমায় দেখতে পারে না,তুমি কি তাদের লাথি ঝাঁ’টার বারি খেয়ে থাকতে চাও।
_ কোথায় তারা লাথি ঝাঁ’টার বারি দিলো। হয়তো একটু খারাপ ব্যাবহার করে,আর সেটা আমার প্রাপ্য ছিলো। কিন্তু তাই বলে তারা সারাজীবন এমন ব্যাবহার করবে না। আর একটা কথাও শুনতে চাই না, না আমি যাবে এই বাড়ি ছেড়ে আর না তুমি যাবে। যদি এ বাড়ি ছেড়ে যাবার কথা আর একবার ও মুখে আনো তো আমার থেকে কারাপ কেউ হবে না।
_ এই তুমি কি আমায় হুমকি দিচ্ছো।
_ উহু এটা হুমকি না ওয়ার্নিং দিয়ে রাখলাম।
আরশিয়ার কথা শুনে সাহিল পকেট থেকে ফোন বের করে কারো নাম্বারে ডায়ল করে। ওপর পাশের ব্যাক্তি ফোন রিসিভ করলে সাহিল শুধায়,,
_ হ্যালো শুনছেন আপনি আরশিয়া যাবে না এই বাড়ি ছাড়া,আরশিয়া এখানেই থাকবে।
ওপর পাশের ব্যাক্তি সাহিলের কথা শুনে ফোনটা আরশিয়াকে দিতে বলে। সাহিল ফোনটা নিয়ে আরশিয়ার হাতে দেয়।
আরশিয়া ফোনটা নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে শুধায়,
_ দেখো তুমি একদমই আমার সংস্যারের ব্যাপারে কথা বলবা না,আমার সংস্যার আমাকে আমার মতো চালাতে দাও,আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি সংস্যার করলে এই বাড়িতেই করবো।
কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দেয় আরশিয়া,ওপর পাশের ব্যাক্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।
ফোনটা সাহিলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায় ঘর থেকে।
সাহিল আরশিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো মুঠো করে চেপে ধরে। নিজেকে সাহিলের পাগল পাগল লাগছে,এ সে কাদের পাল্লায় পড়লে।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং)