#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব১৩
#Raiha_Zubair_Ripte
মা আমি এখনি বিয়ে করতে চাই না।
অভির কথা শুনে উপস্থিত সকলেই আশ্চর্য হয়ে তাকায় অভির দিকে।
সামিরা মাথা উঁচু করে অভির দিকে চেয়ে মৃদু হাসে।
সবার এমন চাহনি দেখে অভি আমতা আমতা করে শুধায়,,
_ না মানে আমি বিয়ে করবো কিন্তু আরো পাঁচ মাস পর,আসলে সামনে তো সামিরার এক্সাম তাই আর কি…
অভির কথা শুনে রাশেদা বেগম বলে,,
_ আমরা কি বিয়ের ডেট ঠিক করছি নাকি? আমরা শুধু আজ আংটি পড়িয়ে যাবো সামিরার এক্সাম শেষ হলে তারপর বিয়ের ডেট ফিক্সড করবো।
মাঝখান থেকে অভির চাচি বলে,,
_ দেখলে ভাবি আমাদের অভি এখনি সামিরা কে নিয়ে কতো চিন্তা করে,
সামিরা আড় চোখে অভির দিকে চেয়ে মনে মনে শ’খানেক বকাবকি করে,এভাবে বলার কি আছে।
মিহিকা অভির কথা শুনে মনে মনে ভাবতে থাকে,বাপ্রে বিয়ের আগেই এমন চিন্তা আপাইকে নিয়ে।
রাশেদা বেগম ব্যাগ থেকে একটা আংটি বের করে সেটা অভির হাতে দিয়ে সামিরার হাতে পড়িয়ে দিতে বলে।
অভি আংটি টা নিয়ে সামিরার হাতে পড়িয়ে দেয়।
সন্ধ্যার আগে হালকা পাতলা খাওয়া দাওয়া করে চলে যায় অভিরা। যাওয়ার আগে অভি নিজের নাম্বার টা সামিরার ফোনে সেভ করে দিয়ে যায়।
ক্যাফে তে বসে আছে সাদিয়া। অপর পাশে আহিল তাকে কিছু দেখাচ্ছে কিন্তু সেদিকে সাদিয়ার মন নেই।
আহিল কথা বলেই যাচ্ছে সাদিয়ার কোনো আওয়াজ না পাওয়ায় সাদিয়ার দিকে চেয়ে দেখে সাদিয়া কিছু একটা ভাবছে। হাত দিয়ে সাদিয়ার চোখের সামনে তুড়ি বাজায়,চমকে উঠে সাদিয়া।
_ কি হলো মিস সাদিয়া কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি, আমি কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছি।
_ না কোথাও হারাই নি আপনি কন্টিনিউ করুন।
আহিল একবার সাদিয়ার দিকে চেয়ে আবার শুরু করে মিটিং টা।
মিটিং টা কোনোরকম ভাবে শেষ হতেই সাদিয়া উঠে দাঁড়ায়,
_ মিস্টার আহিল ডিল টা আমরা নিচ্ছি,আর বাকি সব কথাবার্তা আমার বাবা বলে নিবে,আমি এখন আসি।
কথা গুলো বলে সাদিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যায়। সাদিয়ার যাওয়ার পানে চেয়ে আহিল বিরক্তি তে মুখ কুঁচকে ফেলে,বিরবির করে শুধায়” ম্যানারলেস মেয়ে একটা।
আহিল ও বেরিয়ে আসে ক্যাফে থেকে।
আয়ুশ আরশিয়া কে নিতে ও বাড়িতে গিয়েছিলো। আরশিয়া নিয়ে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আয়ুশ গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ একটা দোকানের দিকে চোখ পরতে গাড়িটি থামিয়ে ফেলে। আয়ুশের গাড়ি থামানো দেখে আরশিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে” কি হয়েছে?
আয়ুশ কথার জবাব না দিয়ে দৌড়ে দোকানটার ভেতরে ঢুকে পড়ে।
দোকানে ঢুকে একটি পায়েল হাতে তুলে নেয়। পায়েল টা তার ভ্রমরের পায়ে দারুণ মানাবে। কথাটা ভেবেই মুচকি হেঁসে দোকানদার কে বিল পে করতে গেলে কেউ থাবা দিয়ে আয়ুশের হাত থেকে পায়েল টা নিয়ে নেয়।
আচমকা এমন ভাবে কেঁড়ে নেওয়াতে রেগে কিছু বলতে নিবে কিন্তু ওপর পাশের ব্যাক্তিকে দেখে তার কথা বলার ভাষা হারিয়ে গেছে।
আয়ুশ অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে,, সাদিয়া তুই!
সাদিয়া আয়ুশের দিকে তাকিয়ে বলে,,
_ হ্যাঁ আমি, কি ভেবেছিলে তুমি সিঙ্গাপুর থেকে পালিয়ে আমায় না বলে চলে আসবে আর আমি বুঝতেও পারবো না।
_ আমি না বলে চলে আসি নি, তোমার ফ্রেন্ড সাফা কে বলে এসেছিলাম।
সাদিয়া তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে বলে,,
_ তা তুমি হঠাৎ পায়েল কিনছো কাকে দিবে?
_ সেটা তোমার না জানলেও চলবে।
_ আমারই তো জানা উচিত,একসময় তো আমাকেও দিয়েছিলে তুমি পায়েল,সাথে আরো কিছু।
_ হ্যাঁ দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা আবেগে….
মূহুর্তেই সাদিয়া রেগে আয়ুশের শার্টের কলার ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,
_ তোমার এই আবেগের জন্য আমায় যে ক্ষনে ক্ষনে পস্তাতে হচ্ছে, যখন ভালো লাগলো তখন আমার সাথে রিলেশনে জড়ালে আর যখন ভালো লাগলো না ছেড়ে দিলে।
আয়ুশ সাদিয়ার হাত থেকে নিজের শার্টের কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,
_ পাগল হয়ে গেছো তুমি, পাবলিক প্লেসে কি করছো ছাড়ো আমার শার্টের কলার।
_ না ছাড়বো না,তুই না বলে চলে আসাতে জানিস তোকে কতো পাগলের মতো খুঁজেছি,তুই একটা বার ফোন করে জানাতে পারলি না আমায়।
_ জানানোর মতো সিচুয়েশন হয়ে উঠে নি তাই…
আয়ুশের কথার মাঝেই আরশিয়া এসে দেখে কেউ তার ভাইয়ের শার্টের কলার ধরে চেঁচিয়ে কথা বলছে, দৌড়ে এসে সাদিয়ার থেকে কলার ছাড়িয়ে সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে শুধায়,,
_ এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলার।
সাদিয়া আয়ুশের দিকে চেয়ে বলে,,
_ তা তোমার গুনধর ভাইকে জিজ্ঞেস করো না, তোমার ভাই জানে আমার সাহস সম্পর্কে,সেলফিস ছেলে একটা।
কথা গুলো বলে চলে যায় সাদিয়া। সাদিয়ার যাওয়ার দিকে চেয়ে আরশিয়া চেয়ে বলে,,
_ ভাইয়া এই মেয়ে টা কে রে তোর সাথে ওমন ব্যাবহার করলো কেনো?
_ তেমন কেউ না বাদ দে চল বাসায় ফিরি।
_ না আগে বল, মেয়েটা যেমন ব্যাবহার করলো মনে হলো অনেক দিন ধরে চেনে তোকে।
আয়ুশ হেয়ালি না করে বলে,,
_ হ্যাঁ সিঙ্গাপুর থাকতে ওর সাথে আমার রিলেশন ছিলো বছর চারেক,তার পর ভেঙে যায় আমাদের রিলেশন।
আরশিয়া আয়ুশের কথা শুনে অবাক চোখে চেয়ে বলে,,
_ কি বলছিস তুই,তুই মিহিকা কে ভালেবাসা স্বত্তেও কিভাবে রিলেশনে নিজেকে জড়াতে পারলি অন্য একজানের সাথে।
_ আবেগের বসে হয়ে গেছে যখন বুঝতে পারলাম তখন আমি নিজে থেকেই সরে এসেছি।
_ এটা আবেগ হলো,আমি এতোদিন ভেবে এসেছি আমার ভাই মিহিকা কে প্রচন্ড ভালোবাসে এখন দেখছি আমার ভাইয়ের মনে আরো একজনের বসবাস ছিলো। ছিঃ ভাইয়া,
_ তুই বেশি বলে ফেলছিস এটা জাস্ট একটা রিলেশন ছিলো,বাইরের দেশে এসব নর্মাল।
_ এটা তর কাছে নর্মাল মনে হচ্ছে, একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছিলি এদিকে মিহিকাকেও ঠকাচ্ছিস আর ঐ মেয়েটার মন নিয়েও খেললি।
_ এ বিষয়ে যেন মিহিকা বা অন্য কেউ না জানে,মনে যেনো থাকে। আর আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মামুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।
_ তোমাকে বিয়ে করার জন্য মিহিকা বসে থাকবে,মিহিকার সাইড থেকে কখনোই তোমার জন্য তেমন ফিলিংস দেখি নি।
কিছুটা খোঁচা মেরে কথা বলে আরশিয়া।
আয়ুশ আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে পড়ে,আরশিয়া আয়ুশের যাওয়া দেখে মনে মনে বলতে থাকে,, আল্লাহ আমি মানছি আমি অনেক পাপ করে ফেলছি সেদিন মিহিকার সাথে ওমন করা ঠিক হয় নি,আজ কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার ভাই মিহিকার জন্য পারফেক্ট না,তুমি দেখো মিহিকা যেনো আর কষ্ট না পায়।
কথাগুলো বলে আরশিয়া ও গিয়ে উঠে পড়ে গাড়িতে।
_______________
রাতে আহিল ফোন করে অভিকে।
_ কি রে অভি আন্টি কে বিয়ে ভাঙার জন্য কিছু বলতে হবে নাকি।
অভি তড়িঘড়ি করে জবাব দেয়,
_ এই না না আর কিছু বলতে হবে না,আমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
_ কি বলিস বাপ্রে তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে, তা তোর কোনো শালি থাকলে আমার জন্য তো দেখতে পারিস।
_ আর ইউ শিওর দেখবো আমার শালিকা কে তোর জন্য।
_ অবশ্যই দেখতে পারিস মাইন্ড করবো না।
_ ভেবে বলছিস তো।
_ এতে ভাবার কি আছে।
_ মিহিকাকে কেমন লাগে তোর।
_ তুই হঠাৎ ওর কথা বলছিস কেনো।
_ আহা বলনা কেমন লাগে।
_ কেমন লাগবে আর ভালোই।
_ আচ্ছা তাহলে তোর কথাই রইলো আমার শালিকার জন্য তুই।
_ তা ভাবির সাথে মিট করাবি কবে।
_ করাবো নি একদিন সময় পেয়ে।
দুই বন্ধু এমন আরো টুকটাক কথা বার্তা বলে। দরজার আড়াল থেকে রাফিয়া অভির কথা গুলো শুনে।
সন্ধ্যায় জানতে পারে তার ভাইয়ের বিয়ে মিহিকার বোনের সাথে ঠিক হয়েছে। কথাটা জানার পর থেকেই রাফিয়ার মন উড়ু উড়ু করছে এখন থেকে নানান বাহানায় সে আয়ুশ কে দেখতে পারবে।
#চলবে..
( দুঃখিত আমি গল্পের প্লট বদলিয়ে ফেলছি,নায়ক নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলছেন,আমিও আপনাদের কথা শুনে ভুল করেছি, এই ভুল আর কখনোই করবো না, এখন থেকে আমি আমার মতো করে লিখবো এতে পাঠক পাঠিকারা রাগ করলে কিছু করার নেই, নায়ক আয়ুশ আহিল নিয়ে দন্ড বেঁধে গেছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,)