#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব১৮
#Raiha_Zubair_Ripte
সজিব বারবার পেরেও পেরে উঠছে না,সাহিল ও তার হাত থেকে ফসকে গেলো,এবার কিভাবে কি করবে, এতোদিনের করা প্ল্যান ভেস্তে দিলো এই অপদার্থ সাহিল,মনে চাচ্ছে সাহিল কে খুন করতে।
হাতের কাছে থাকা ফোনটা নিয়ে সজিব আরশিয়ার নাম্বারে কল লাগায়,,
আরশিয়া জামাকাপড় গুছাচ্ছিলো,কালই ও বাড়ি ফিরে যাবে, এর মধ্যে ফোনটা বেজে উঠায় চমকে উঠে,মন পায়রাগুলি জানান দেয় হয়তো সাহিল ফোন করেছে,খুশি মন নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সজিব ফোন করেছে মূহুর্তে রাগ আকাশ সমান হয়ে উঠে। ফোনটা আর রিসিভ না করে বিছানায় ফেলে রেখে দেয়।
সজিব একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে আরশিয়া কে,উপায়ন্তর না পেয়ে আরশিয়া এবার ফোন রিসিভ করে ঝাঁজালো কন্ঠে শুধায়,,
_ কি ব্যাপার তুই এতো বারবার ফোন দিচ্ছিস কেনো,দেখছিস না ফোন রিসিভ করছি না মানে আমি ব্যাস্ত এটুকু বুঝার কমনসেন্স নেই তোর মাথায়।
_ সরি দোস্ত রাগ করিস না,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে,সেদিন রাগের মাথায় খারাপ ব্যাবহার করে ফেলছিলা।
_ আমি ক্ষমা করার কে,তুই আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছিস কেনো,ফোন রাখ।
_ প্লিজ আরশিয়া আমি কালই লন্ডনে ব্যাক করছি, শেষ বারের মতো দেখা করে যা না, ঐ যে তোদের বাড়ির তিন রাস্তার মোড়ে যেই ক্যাফে টা আছে না ওটায় তোর বাসা থেকে বেশি দূর হবে না।
_ আমার সময় হবে না আর তুই……ওয়েট ওয়েট তুই জানলি কিভাবে যে আমি আমার বাড়িতে আছি।তুই কি আমায় ফলো করছিস না-কি আবার সাহিলের থেকে খোঁজ নিছিস।
সজিব একটা শুখনো ঢোক গিলে আমতাআমতা করে জবাব দেয়,,
_ না আসলে মানে সাহিল কে ফোন করে জেনেছিলাম ঐ আরকি।
_ ওহ এখন রাখি ফোন।
_ তুই আসবি না আমি কিন্তু ঠিক বিকেল তিনটা বাজে ওয়েট করবো,তুই আসবি কিন্তু।
আরশিয়া আর কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়।
সজিব বুকে হাত দিয়ে বলে যাক বাবা বেঁচে গেলাম আর একটু হলেই ধরা পরে যেতাম। ভাগ্যিস সাহিলের নাম বললাম তা না হলে তো বিশ্বাসই করতো না।
আরশিয়া কাপড় গুলো সুটকেসে ভরে খাটের পাশে রেখে নিচে নেমে আসে।
রান্না ঘরে আরুশি বেগম কে রান্না করতে দেখে আরশিয়া রান্না ঘরে ঢুকে। আরুশি বেগম কে এতো আনন্দ সহকারে রান্না করতে দেখে বেশ অবাক হয় তার উপর আজ সব আইটেম গুলোই আয়ুশের পছন্দের। আরুশি বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে আরশিয়া শুধায়,,
_ কি ব্যাপার মা তুমি এতো খুশি কেনো আজ,আর কাল সকালে কোথায় গেছিলে ওভাবে তড়িঘড়ি করে, আর আজ দেখি সব ভাইয়ের পছন্দের খাবার রান্না করছো।
_ হ্যাঁ আজ আয়ুশ কে একটা সারপ্রাইজ দিবো,ওর জন্য সুখবর আছে।
_ কি সুখবর গো মা আমায় ও বলো আমি ও শুনি।
_ না এখন বলা যাবে না, তুই বরং সাহিল কে ফোন করে আজ আসতে বল এ বাড়ি।
_ বাবা বকবে না আবার।
_ তোর বাবাকে আমি দেখে নিবো চিন্তা করিস না।
_ আচ্ছা আমি ফোন করে দেখি আসতে পারবে কি না।
কথা গুলো বলে আবার রুমে এসে সাহিলের নাম্বারে ফোন করে, ফোনটা বারবার রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না, চার-পাঁচ বার ফোন দিয়ে আর ফোন দেয় নি আরশিয়া।
চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোঁটা অশ্রু। সামান্য ফোনটা ধরার টাইম পাচ্ছো না তুমি সাহিল,এতোটাই ইগনোর করছো তুমি।
_______________________
তো বাবা কেমন লাগলো আজ যখন আয়ুশের মা হতদন্ত হয়ে আসলো বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে।
_ আমার কিন্তু এ বিয়েতে মত আসছে না,ছেলেটা তো তোকে ভালোবাসে না শাস্তি দিবি ঠিক আছে অন্য ভাবে দে বিয়ে করে কেনো।
_ না বাবা ও যেমন আমায় ঠকিয়েছে আমিও ওকে তিলে তিলে তার থেকেও বেশি ঠকাবো,আর সেটা বিয়ে করলেই আমি করতে পারবো।
_ বিয়েটা ছেলে খেলা না সাদিয়া,আয়ুশ কে বিয়ে করে আবার না তোমাকে পস্তাতে হয়।
_ আমি আর কিছুর পরোয়া করি না বাবা ,আমি ওর সাথেই থাকতে চাই,আমার পথটা আমায় চলতে দাও। তুমি বরং বিয়ের আয়োজন করো,আমার তিন ননদীনি গুলো কতে আশায় আছে ভাইয়ের বিয়ে খাবে, হা হা হা।
_ তুমি ঐ মেয়ে দুটোকে কাজে লাগিয়ে এসব করছো।
_ হ্যাঁ বাবা এছাড়া আর উপায় নেই।
____________________
রাফিয়াকে কাল অনেক বুঝিয়েছে অভি,মেয়েটা পিচ্চি বাচ্চার মতো কেঁদেছে, অভি এ-ও বলেছে আয়ুশের থেকে বেটার সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে রাফিয়ার জন্য খুঁজে দিবে,এসব আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে কান্না থামিয়েছে।
আজ সকালে ঠেলে ঠুলে রাফিয়াকে কলেজে পাঠিয়েছে অভি। রাফিয়াকে কলেজে পাঠিয়ে অভি সোজা মিহিকাদের বাসায় আসে। এর মধ্যে একদিন সামিরাকে পড়ানোর ব্যাপারটা নিয়ে সামিরার মা মমতাজ বেগমের সাথে কথা হয়,তিনি ব্যাপার টা শুনে আরো খুশি হন। তার কোনো আপত্তি নেই।
_ মানুষ আজকাল পড়ালেখা পারবে কিভাবে হাতে যদি সবসময় ফোন থাকে,এক্সামে গিয়ে তো পাশ মার্ক তেত্রিশ ও উঠাতে পারবে না,পরে সবাই বলবে অভির বউ উচ্চ মাধ্যমিক ফেইল।
সামিরা শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো হঠাৎ এমন কথা শুনে দরজার পানে চেয়ে দেখে অভি দরজার সাথে বুকে হাত দিয়ে হেলান দিয়ে রয়েছে।
অভিকে দেখে তড়িঘড়ি করে ফোনটা পাশে রেখে শুয়া থেকে উঠে বসে।
সামিরার এমন অবস্থা দেখে অভি হেঁসে রুমে ঢুকে।
_ কি হলো ফোন রাখলে কেনো টিপো ফোন এফবি তে যাও,মেসেঞ্জারে যার হোয়াটসঅ্যাপে যাও, বইয়ের টেবিলে আর যেতে হবে না।
খানিকটা কঠোর হয়ে বলে অভি।
সামিরা বসা থেকে উঠে টেবিলে যায়। অভিও সামিরার পেছন পেছন চেয়ার টেনে বসে পড়ে।
সামিরা পরিসংখ্যান বইটা বের করে অভির সামনে দেয়। অভি বই টা নিয়ে প্রথম অধ্যায়ের কয়েকটা অঙ্ক করায়, সামিরা প্রথম দিকের অঙ্ক গুলো পারলেও লাস্টের উওর মেলাতে গিয়ে হিমশিম খায়।
অভি সুন্দর মতো সামিরাকে বুঝিয়ে দেয় কিভাবে করতে হয়।
পরের বার আবার ও ওমন সেম অঙ্ক দিলে সামিরা চটজলদি করে ফেলে। সামিরার অঙ্ক করা দেখে বলে,,
_ বাহ! এইতো আমার বউ জান অঙ্ক করে ফেলছে।
সামিরা মাথা নিচু করে শুধায়,,
_ এক ঘন্টা পরেই আবার সব ভুলে যাবো। মনে রাখতে পারি না।
সামিরার কথা শুনে অভি বলে,,
_ ব্যাপার না আমি তো প্রতিদিন আসবো, তোমায় মানুষ বানিয়ে ফেলবো উপস সরি পরিসংখ্যানের মানুষ বানিয়ে ফেলবো। চলো অনেক তো পড়লে এবার একটু ছাঁদে গিয়ে প্রকৃতির হাওয়া খেয়ে আসি।
সামিরা ভ্রু কুঁচকে শুধায়,,
_ বিশ মিনিট ও তো হলো না আপনি আমায় পড়াতে বসলেন এর মধ্যেই আবার প্রকৃতির হাওয়া খেতে হবে।
_ চুপচাপ চলো, পড়ার মাঝে এমন ব্রেক নিতে হয় বুঝলে,তোমার চেয়ে আমি বড় আমি জানি কিভাবে বাচ্চাদের পড়াতে হয়।
_ এহ আমি বাচ্চা নাকি।
_ অবশ্যই তুমি একটা বাচ্চা
_ তাহলে বিয়ে করতে আসছেন ক্যান,যান বিয়ে ক্যান্সেল।
_ এই না না না তুমি বাচ্চা নও তুমি তো বুড়ি এবার চলো তো ছাঁদে।
কথা গুলো বলেই সামিরার হাত ধরে ছাঁদে নিয়ে যায় অভি।
________________________
রাফিয়া স্কুলে এসে দাঁড়িয়ে আছে মিহিকার জন্য অপেক্ষা করছে। কলেজের গেটের দিকে তাকালেই দেখে মিহিলা কলেজে ঢুকছে। রাফিয়া দৌড়ে গিয়ে মিহিকার সামনে দাঁড়ায়।
হঠাৎ সামনে কাউকে দৌড়ে আসতে দেখে ভরকে যায় মিহিকা। রাফিয়াকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
_ মিহিকা আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,এতো দেরি করলে কেনো।
_ আমার জন্য অপেক্ষা করছো কেনো তুমি কিছু বলবে নাকি।
_ হুমম আসলে ভাইয়া তো তোমাদের বাড়ি গেছে তাই আর কি ছুটির পরে তোমার সাথে তোমাদের বাসায় যাবো তাই আরকি।
_ ওহ সমস্যা নেই ছুটির পর যেয়ো আমার সাথে এখন ক্লাসে যাই বেল দিয়ে দিবে।
_ হ্যাঁ চলো।
🌸
বিকেল তিনটায় সজিব এসে অপেক্ষা করছে ক্যাফে তে, মিনিট দশেকের মধ্যেই আরশিয়া ও চলে আসে আরশিয়া সজিবের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
_ কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
_ দোস্ত তোর সাথে একটু দেখাই তো করতে চাইছি,ওভাবে কথা বলিস কেনো।
আরশিয়ার দু হাত ধরে বলে সজিব।
আরশিয়া ঝাড়া দিয়ে হাত সড়িয়ে আনে।
সজিব টুকটাক কথা বলে টাইম ওয়েস্ট করে সামনে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে আরশিয়া কে জড়িয়ে ধরে।
_ আরশিয়া প্লিজ আর একবার সুযোগ দে আর কখনোই তুই কষ্ট পাস এমন কাজ করবো না,তোর জন্য ভালো হয়ে যাবো, তোর মনের মতো নিজেকে গড়প তুলবো।
সাহিল কেবলই ক্যাফে তে ঢুকতে নিচ্ছিলো সজিবের কথা গুলো শুনে থমকে যায়।
আজ ইন্টারভিউ টা ভালো মতোই দিয়েছে সাহিল,হয়তো দু এলদিনের মধ্যে জয়েন লেটার চলেও আসবে,ফোন সাইলেন্ট থাকায় আরশিয়ার করা ফোন গুলো শুনতে পায় নি। ইন্টারভিউ শেষে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আরশিয়া ছয় টা মিসকল, দুপুরে খাওয়া হয়নি সাহিলের ভেবেছিলো অফিসের সামনে থাকা ক্যাফে টায় গিয়ে কিছু একটা খেয়ে তার পর আরশিয়াকে ফোন দিবে। কিন্তু ক্যাফে তে ঢুকে এসব দেখবে ভাবতে পারে নি। ক্যাফের ভেতর আর না ঢুকে সোজা বেরিয়ে যায়।
আরশিয়া ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় সজিব কে,
_ তখন থেকে কিসব আজাইরা পেঁচাল পারছিস তুই,এসব ফালতু কথা বলার জন্য ডেকেছিস, আর একবার গায়ে হাত দিবি তো তোর হাত ভেঙে রেখে দিবো।
_ আমার কাজ শেষ এখন যা বাসায় আমিও আসি বাই বাই।
সজিব কথাগুলো বলে চলে যায়,সজিবের যাওয়ার পানে চেয়ে আরশিয়া দাঁত গুলো কিড়মিড় করে নিজেকেই বকতে থাকে কেনো যে আসলো।
আরশিয়া ক্যাফে থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে আসে,দুপুরের খাবার কেউ খায় নি এখনো। আয়ুশ আর টিপু খান কেবলই বাসায় ফিরলো। হাত মুখ ধুয়ে টেবলে বসে পড়ে, আরুশি খাবার বেরে দেয়, আয়ুশ আর টিপু খান খাবার খেতে থাকে।
খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে আরুশি বেগম বলে উঠে,,
_ তোমাদের একটা কথা জানিয়ে রাখি আমি আয়ুশের বিয়ে ঠিক করে ফেলছি,মেয়েটা কে আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে বিয়ের তারিখ ও ঠিক করে এসেছি। আমি চাই আহিল সেই মেয়েকেই বিয়ে করবে।
টিপু খানের কথাটা কর্ণকুহর হতেই খাবার খাওয়া থামিয়ে বউয়ের দিকে চেয়ে রয়,আর আয়ুশ কথা টা শোনা মাত্রই খাবার গলায় আঁটকে যায়।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং)