#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২০
#Raiha_Zubair_Ripte
সন্ধ্যায় টিপু খান আর আরুশি বেগম আসে সাদিয়াদের বাসায় সাথে আছে আয়ুশ,আয়ুশ মূলত এসেছে বিয়ে ভাঙার জন্য। সাদিয়া শাড়ি পড়ে বসে আছে তাদের তিনজনের সামনে,টিপু খানের ও মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এখন বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে আর তখন আরুশি বেগমের কানে কানে আয়ুশ বলে উঠে সে সাদিয়ার সাথে আগে কথা বলবে।
আরুশি বেগম সেটা শুনে বলে,,
_ এই তুই আবার কিসের কথা বলবি, পাত্রী কি অপরিচিত নাকি যে তুই আলাদা আগে কথা বলবি,কোনো কথা বলা লাগবে না আগে তারিখ ঠিক করে নেই পরে গিয়ে কথা বলিস।
আয়ুশ দাঁত কিড়মিড়িয়ে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,সাদিয়া আয়ুশের তাকানো দেখে চোখ টিপ দেয়। আয়ুশ সেটা দেখে চোখ দিয়েই শাসায়,বোঝায় যে সময় আমার ও আসবে আমিও দেখে নিবো তোমায়।
ফাইনালি বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো সামনের মাসের পাঁচ তারিখে সাদিয়া আর আয়ুশের বিয়ে। হাতে গোনা মাত্র বিশ বাইশ দিনের মতো সময় আছে। সাদমান খান তার স্ত্রী কে বলে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি আনিয়ে টিপু খানের মুখে ভরে দেয়। সেই সুযোগে আয়ুশ সাদিয়ার হাত টেনে ধরে অন্য পাশে নিয়ে যায়।
সাদিয়া হাত টা আয়ুশের হাত থেকে ছাড়িয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলে,,
_ আহা জান টা আমার তোমার কি তর সইছে না, কি ভাববে বলো তো তারা।
_ একদম ন্যাকামো করবা না তো,তুমি ভালো করেই জানো এ বিয়ে হলে তুমিও সুখী হবা না আর আমিও সুখী হবো না, তাহলে বিয়েটা করছো কেনো।
সাদিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,
_ তুমি আমার থেকে মুক্তি চাইলেও আমি তোমাকে দিবো না মুক্তি। কারণ, আমি ওতোটাও মহান নই, যতোটা তুমি ভাবো। তোমার দ্বার আমার সুখ না হলেও, দুঃখ হয়েই তুমি ঝুলে থাকবে আমার সাথে, আমার তোমাকে চাই মানে চাই বুঝলে,যাও বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রি-পারেশান নাও বেপ্স।
কথাটা বলে সাদিয়া চলে আসে, আয়ুশ পাশে থাকা দেওয়ালে সজোরে ঘুসি মারে।
________________
কাল রাতে সাহিল আর আরশিয়া বাসায় ফেরার পর কেউ আর কারো সাথে কথা বলেনি। না খেয়ে ওভাবেই দুজন ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সকালে আরশিয়া ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলে। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজাতে সিঁড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখে সাহিল নিচে নেমে আসছে।
সাহিল ঘুম থেকে উঠে বিছানায় আরশিয়া কে দেখতে না পেয়ে অজানা আতঙ্কে ভয় পেয়ে যায়। তারাতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে আলমারির কাছে গিয়ে দেখে আরশিয়ার জামা কাপড় আছে কি-না। আলমারি খুলে আরশিয়ার জামাকাপড় দেখে যেনো এতোক্ষণ আঁটকে রাখা শ্বাস টা স্বস্তিতে নিতে পারলো।
তারাতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে আরশিয়া খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। ধীর পায়ে আরশিয়ার সামনে এসে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আরশিয়া একবার সাহিলের দিকে চেয়ে পূনরায় আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
সাহিল হাসফাস করে কিছু বলার জন্য, আরশিয়া সাহিলের এমন হাসফাস করা দেখে বলে,,
_ কিছু বলতে চাইলে বলো,আর তা না হলে দূরে গিয়ে দাঁড়াও।
সাহিল মাথা নিচু করেই শুধায়,,
_ আ’ম রিয়েলি সরি আরশিয়া। কালকের ঘটানার জন্য সত্যি অনুতপ্ত এমন ভুল আর কখনোই করবো না,অন্যের কথা শুনে কখনোই তোমায় জার্জ করবো না।
আরশিয়া হাত কাজ থামিয়ে সাহিলের দিকে ঘুরে বলে,,
_ তোমার কি আমায় খারাপ মনে হয় সাহিল,ভালোবাসি তোমায় তাই সেদিন বিয়ের আসরে ওমন একটা অন্যায় করে ফেলছি,সেটার জন্য কম তো অনুতপ্ত হই নি,আমি সেই ভুলটার জন্য আজও ধুঁকে ধুঁকে মরছি,মানুষ মাত্রই ভুল করে আমি ভুল না অন্যায় করে ফেলছিলাম,তার জন্য আজও বাবা আমার সাথে কথা বলে না,আমি কি মানুষটা এতোই খারাপ।
_ আমি ও তো কম অন্যায় করি নি, টাকার লোভে তোমায় বিয়ে করছিলাম,বাবা ভাইয়ের চোখে নিচু হয়ে গেছি, নিজেকে বদলে ফেলতে চাইছি কিন্তু পুরোনো কথা তো থেকেই যায়,বাবা ভাই দাদি আহিয়া, মা’য়ের কথা না হয় বাদই দিলাম আর বাকিরা কখনোই হয়তো আমায় বিশ্বাস করবে না,মনের কোথাও আমায় নিয়ে দ্বিধা থাকবেই।
_ আচ্ছা বাদ দাও,একটু সময় দাও তাদের দেখবে ঠিক আমাদের মেনে নিবে। তা এভাবে তারাহুরো করে নিচে নামছিলে কেনো?
_ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো কালকের ঘটনার জন্য চলে গেছিলে তাই আর কি…..
_ এই সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও, তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না, সামান্য মনোমালিন্য তে ছেড়ে যাবার প্রশ্ন-ই আসে না। যাও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যেতে হবে তো নাকি।
সাহিল মাথা চুলকে হ্যাঁ জানিয়ে মুচকি হেঁসে উপরে চলে যায়।
আরশিয়া হাক ছেড়ে ডাকে,,
_ কই গো শাশুড়ী মা,শশুর মশাই,দাদি,ননদিনী, ভাইয়া,তাড়াতাড়ি আসুন খাবার বেরেছি।
আরশিয়ার ডাক শুনে আসমানী বেগম,শফিক সাহেব,আহিয়া,আহিল,সাইফা বেগম নিচে নেমে আসে।
আরশিয়া সবাইকে দেখে বলে,,
_ নিন নিন বসে পড়েন এবার ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে এসেছে তো।
সবাই একএক করে বসে পড়ে খাবার খেতে,এর মধ্যে সাহিল ও তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসে।
খাবার একপর্যায়ে আহিল বলে উঠে,,
_ বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
_ হ্যাঁ বলো আমি শুনছি।
_ বাবা আমি বিয়ে করতে চাই।
আহিলের কথা শুনে শফিক সাহেব বিষম খায়,আর বাকিরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আহিলের দিকে,আহিল নিশ্চিন্তে খাবার খাচ্ছে আশেপাশে তার খেয়াল নেই। শফিক সাহেবের মুখ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে আহিল মাথা উঁচু করে বলে,,
_ কি হলো কিছু বললাম তো বিয়ে করতে চাই আমি,মেয়ে আমার পছন্দ তুমি গিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলবে জাস্ট।
শফিক সাহেব এক ঢোক গিলে বলে,,
_ তুই কি আমার সাথে মজা করছিস আহিল।
_ আশ্চর্য মজা করতে যাবো কেনো,আমার তো বয়স হচ্ছে তোমাদের কি ইচ্ছে করে না ছেলের বউ দেখতে তাদের ছেলে মেয়ের সাথে খেলাধুলা করতে।
_ হ্যাঁ করে তো কিন্তু কার বাবার সাথে কথা বলবো।
_ মিহিকার বাবার সাথে।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই শফিক সাহেব আকস্মিক চমকে উঠে,পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরশিয়ার মুখ টা হা হয়ে যায়,সাহিল, আহিয়া রীতিমতো অবাক,আসমানী বেগম তো বেজায় খুশি।
শফিক ভ্রু কুঁচকে শুধায়,,
_ পাগল হয়ে গেছো তুমি, আরমান কখনোই রাজি হবে না, এমনিতে আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে তার কাছে আবার মিহিকা কে চেয়ে বসলে সে মিহিকাকে দিবে না সাথে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরবে।
_ না ধরবে না ফাটল, তুমি জাস্ট আঙ্কেলের সাথে কথা বলো আর রাজি করানোটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি ঠিক রাজি করিয়ে ফেলবো। তোমাদের যদি নাতি নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে মিহিকার সাথে বিয়ে দাও। আর তা না হলে নাতি নাতনির মুখ দেখার আশা বাদ দাও।
কথাটা বলেই সাহিল চলে যায় অফিসের জন্য। ছেলের এমন লাগামহীন কথা শুনে শফিক সাহেব মাথা নিচু করে ফেলেন,সাইফা বেগম মুখ চেপে হেঁসে ফেলেন।
_ যাক আমার ছেলে তাহলে এতোদিনে আমার মনের কথা বললো। মিহিকা কে ছেলের বউ করার ইচ্ছে টা এবার তাহলে পূরণ হবে কি বলো আহিয়ার বাবা।
শফিক সাহেব যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে কিই বা বলবেন তিনি, খাবার অর্ধেক টা প্লেটে রেখে হাত ধুয়ে চলে গেলো উপরে।আহিয়া পরোটার টুকরা মুখে নিয়ে বলে,,
_ ইয়াহু মিহিকা আমাট ভাইয়ের বউ হবে,আমি অনেক সাজুগুজু করবো।
_ আমার মনে হয় না মামু এতো সহজে রাজি হবে।
মাঝখান থেকে আরশিয়া কথাটা বলে উঠে। আরশিয়ার কথা শুনে আসমানী গলা খাকড়িয়ে নিয়ে শুধায়,,
_ তা আরশিয়া তুমি তো এ বাড়ির বউ তোমায় আমি এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবো যদি তুমি পারো মিহিকার বাবা কে রাজি করাতে তাহলেই।
প্রথম কথাটা শুনে আরশিয়া খুশি হলেও লাস্টের কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়,এরা কি আদৌও পারবে সে।
_ কিন্তু শাশুড়ী মা, মামু কি রাজি হবে।
_ সে আমি জানি নাকি তুমি বুঝাবে তোমার মামু কে,যদি করাতে পারো রাজি,তাহলে আমি আসমানী বলছি,মন থেকে তোমায় এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবো।
কথাটা বলে আসমানী চলে যায়,আহিয়া খাবার টা শেষ করে সাইফা বেগম কে ধরে নিয়ে উপরে উঠে যায়,টেবিলে পরে রইলো সাহিল,আরশিয়া সাহিলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকালে সাহিল বলে,,
_ চিন্তা করছো কেনো তুমি নিশ্চই পারবে,আগে বাবা গিয়ে কথা বলুক তারপর রাজি না হলে তুমি যাবা সাথে আমিও যাবো,আর আহিল ভাই তো আছেই সে ঠিক রাজি করিয়ে ছাড়বে। তুমি বরং ওসব না ভেবে খাবার খেয়ে নাও আমার শেষ খাওয়া আমি আসি।
কথাটা বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে আরশিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়।
আরশিয়া তো সাহিলের এমন কাজে অবাক,তার মানে তার কপালেও সুখেরা ধরা দিচ্ছে, এই সুখের নাগাল পেতে হলে অবশ্যই এ কাজে সফলতা আনতে হবে, যে করে হোক মামু কে রাজি করাতেই হবে।
__________________
সক্কাল সক্কাল আয়ুশের বিয়ের ডেট ফিক্সড হবার কথা শুনে সারা বাড়িতে হৈ-হুল্লোড়ের শুরু করে দিয়েছে মিহিকা,আহা আয়ুশ ভাইয়ের বিয়ে খাবে সে,কতো মজা করবে। মিহিকা সোজা আরমান সাহেবের কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,
_ বাবা ও বাবা শুনো না।
_ হ্যাঁ মা বলো তুমি আমি শুনছি তো।
_ ইয়ে মানে আমার কিছু…
_ বুঝতে পেরেছি তোমার টাকা লাগবে,কিন্তু বিয়ে তো সামনে মাসে এখন টাকা দিয়ে কি করবে।
_ প্রতিদিন টুকটাক করে কিনে রাখবো,বিয়ের সামনের মাসে তো কি হইছে দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়, পরে আর মার্কেট করার সময় পাবো না।
_ হয়েছে আর বলতে হবে না এই নাউ কার্ড, মনে রেখো হিসেব করে টাকা ভাঙবে, অযথা টাকা নষ্ট করা কিন্তু আমি পছন্দ করি না।
_ ওকে মেরি পাপা আই লাভ ইউ, এখন আমি আসি,ব্রেকফাস্ট করে আপাইকে নিয়ে যাবো শপিং করতে।
কথাটা বলে কার্ড টা নিয়ে বেরিয়ে আসে আরমান সাহেবের ঘর থেকে মিহিকা।
#চলবে
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং)