কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব২১ #Raiha_Zubair_Ripte

0
332

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২১
#Raiha_Zubair_Ripte

আজ শনিবার থাকায় কলেজ বন্ধ, মিহিকা ব্রেকফাস্ট করে সামিরা কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে শপিং এর জন্য, সামিরা আসতে চাইছিলো না কারন সামনেই পরীক্ষা তার উপর আজ আবার অভি ও আসবে বাসায় কিন্তু মিহিকার জোরাজোরি তে আর না এসে পারলো না আসার পথে রাফিয়া কেও নিয়ে এসেছে মিহিকা।

মার্কেটে এসে একের পর এক ড্রেস দেখছে মিহিকা কিন্তু একটাও পছন্দ হয় নি,তাই মন খারাপ করে মার্কেট থেকে বের হতে নিলে হঠাৎ একটি দোকানের ভেতর একটি শাড়ি দেখে থমকে যায়,সামিরা আর রাফিয়ার হাত ধরে মিহিকা ঐ দোকানের ভেতর যায়। মিহিকা সেলসম্যান কে ডেকে ঝুলিয়ে রাখা মিষ্টি কালারের উপর গোল্ডেন কালারের কাজ করা শাড়িটা বের করতে বলে।সেলসম্যান শাড়িটা এনে মিহিকার হাতে দেয়,মিহিকা শাড়িটা উল্টেপাল্টে দেখে নেয়। সামিরা আপাতত কিছু নিবে না দেখে পাশে রাখা টুলটাতে বসে পড়ে আর রাফিয়া দোকান টা ভালো করে দেখতে থাকে, দোকান থেকে বেরিয়ে সামনে হাঁটতেই একটা গ্রাউন পছন্দ হয় রাফিয়ার। রাফিয়া জামাটার কাছে গিয়ে সেটা নিয়ে সেলসম্যান কে প্যাক করে দিতে বলে, সেলসম্যান সেটা নিয়ে ভালো করে দেখে বলে,,

_ ম্যাম দুঃখিত এটা সেল হয়ে গেছে,আপনি চাইলে এটার অন্য কালার দেখতে পারেন।

সেলসম্যানের কথা শুনে রাফিয়া জামাটা ধরে বলে,,

_ বিক্রি যখন হয়েছে তাহলে এটা এখনো এখানে কেনো,আর কে নিছে তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।

_ আসলে ম্যাম তার ফোন আসায় সে একটু বাহিরে গেছে।

_ তাহলে আমায় দিয়ে দিন এটা আমি পে করে দিচ্ছি তাঁকে না হয় অন্য কালার দিয়েন।

_ সরি ম্যাম তা হয় না আপনি বরং তার থেকে পারমিশন নিয়ে তার পর নিন উনি পে করে তার পরই গেছে।

_ ওকে আমি তাহলে ওয়েট করছি।

এর মাঝেই এক লোক তড়িঘড়ি করে দোকানে এসে বলে,,

_ আমার ড্রেস টা কি প্যাক করেছেন।

লোকটার আওয়াজ শুনে রাফিয়া তাকায় লোকটার দিকে,হাইট হবে ৫’৮, দেখতে শ্যামলা,চুল গুলো গুলো সুন্দর গুছানো দেখতে একদমই কিউটের ডিব্বা।

সেলসম্যান প্যাকটাঐ লোকটার হাতে দিয়ে বলে,,

_ স্যার আসলে এই ড্রেসটা ঐ ম্যাম পছন্দ করেছে উনি এখন এটা চাচ্ছে আমি বলেছি অন্য কালারের মধ্যে দেখতে কিন্তু তাঁর এটাই পছন্দ হয়েছে।

সেলসম্যানের কথা শুনে মামুন নামের লোকটা রাফিয়াকে একবার পর্যবেক্ষণ করে। প্যাক টা নিয়ে রাফিয়ার সামনে ধরে বলে,,

_ এই যে মিস নিন ড্রেস টা, ড্রেসটা আমার ছোট বোনের জন্য নিয়েছিলাম কিন্তু তার এটা পছন্দ হয় নি তার উপর পে ও করে ফেলছিলাম,ফেরত ও চাওয়া যেতো না তবে ভালোই হয়েছে এখন এটা আপনি নিতে পারবেন।

রাফিয়া খুশি হয়ে ড্রেসটা নিয়ে নেয়,পার্স থেকে টাকা বের মামুন নামের লোকটার সামনে মেলে ধরে বলে ,,

_ ধন্যবাদ, এই নিন ড্রেসের দাম।

রাফিয়ার এহেন কাজে ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে ফেলে,,

_ ও হ্যালো মিস আপনি টাকা কেনো দিচ্ছেন, আমি আপনায় এটা গিফট হিসেবে দিয়ে দিলাম।

_ পাগল না-কি চিনি না জানি না আর আপনার থেকে গিফট নিবো, এই নিন ধরুন ড্রেসের দাম,গিফট চাই না আমার বুঝলেন।

কথাটা বলেই হাতের টাকাটা মামুনের হাতে গুঁজে দেয়,মামুন টাকাটা ভালো করে দেখে বলে,,

_ এই জামার দাম পাঁচ হাজার না তো আপনি পাঁচ হাজার কেনো দিলেন।

মামুনের কথা শুনে রাফিয়া বলে,,

_ সেলসম্যান ই তো বললো এটা দাম পাঁচ হাজার টাকা।

_ ড্রেস টা কার থেকে নিচ্ছেন আপনি সেলসম্যানের থেকে নাকি আমার থেকে।

_ কেনো আপনার থেকে।

_ তাহলে দাম নির্ধারণ করবে আমি,এটা আমি দশ হাজারের নিচে দিবো না।

মামুনের এমন কথা শুনে রাফিয়ার মুখ হা হয়ে যায়। ড্রেস টার দিকে একবার চেয়ে বলে,,

_ এই ড্রেসের দাম দশ হাজার পাগলা কুত্তায় কামড়ায়ছে নাকি যে দশ হাজার টাকা দিয়ে এই ড্রেস নিবো,এই ধরেন লাগবে না আপনার ড্রেস নিয়ে যান।

কথাটা বলে রাফিয়া লোকটার হাতে ড্রেস দিতে গেলে লোকটার ফোন আসে আর লোকটা আরশিয়ার কথা না শুনেই চলে যায়। রাফিয়া দৌড়ে লোকটার পেছন যায় ততোক্ষণে লোকটা গাড়ি নিয়ে চলে যায়। রাফিয়া দৌড়ে আবার ভেতরে এসে সেলসম্যান কে লোকটার এড্রেস জিজ্ঞেস করলে লোকটা বলে,সে জানে না।

রাফিয়া মন খারাপ করে দোকান থেকে বেরোলে সামিরা আর মিহিকা আসে। মিহিকা রাফিয়ার হাত ঝাঁকিয়ে বলে,,

_ কি গো তুমি কই হারায় গেছিলে, আমরা তো খুঁজতে ছিলাম তোমায়।

_ আরে আর বইলো না। কথাটা বলেই সব কতা খুলে বলে রাফিয়া।

রাফিয়ার কথা শুনে মিহিকা বলে,,

_ জামা না পড়তে চাইলে রেখে দিয়ো ওমনে প্যাকেট ধরেই,এনি চান্স লোকটার সাথে দেখা হলে দিয়ে দিয়ো,আর তা না হলে পড়ে ফেলো ভাববা বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া ফাস্ট উপহার।

কথাটা বলে সামিরা আর মিহিকা হেঁসে উঠে,সামিীা আফসোস শুরে বলে,,

_ ইশ কেউ যদি আমাকেও এভবাে উপহার দিয়ে যেতো বিশ্বাস কর মিহিকা আমি একটুও মাইন্ড করাতম না।

মিহিকা সামিরার কথা শুনে দুঃখ নিয়ে বলে,,

_ আসস বোইন আসস আজ অপরিচিত কারো জামা পছন্দ হলো না বলে ফ্রি তে পেলাম না।

রাফিয়া ওদের কথা শুনে বলে,,

_ ধ্যাত কি বলো এগুলা চলো তো চলে যাই না-কি আরো মার্কেট করবা।

_ না আর করবো এই মিহিকা চল বাসায় যাই আবার অন্য দিন আসিস আর রাফিয়া আমাদের বাসায় চলো তোমার ভাইয়া আসছে তার সাথেই যেয়ো।

রাফিয়া আচ্ছা বলে ওদের সাথে মার্কেট থেকে বের হয়। মার্কেট থেকে বের হবার সময় এক সাত বছরের পিচ্চি এসে মিহিকার জামা টেনে ধরে। জামায় টান লাগায় মিহিকা পেছন ঘুরে দেখে সাত বছরের এক মেয়ে। মিহিকা খানিকটা ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে,

_ কি ব্যাপার বাবু জামা টেনে ধরলা কেনো।

পিচ্চি টা জামা ছেড়ে দিয়ে বলে,,

_ আমারে দশ টা টেহা দেন আমার খিদা লাগছে।

_ দশ টাকায় কি তোমার পেট ভরবে?

_ হ দেন ভরবো পেট।

মিহিকা পার্স থেকে ২০০ টাকার নোট বের বলে,,

_ এই নাও ২০০ টাকা তুমি ইচ্ছে মতো খাবার কিনে খেয়ো।

_ এই টেহা না আমারে দশ টেহা দেন।

_ কেনো এই টাকায় কি হয়েছে?

_ আমি দশ টেহা দিয়া একটা রুটি খামু।

_ হ্যাঁ খেয়ো এই টাকা দিয়ে অনেক গুলো রুটি পাবা।

_ কতো গুলা দিবো আমারে রুটি।

_ বিশ টা দিবে রুটি, আবার এক সাথে কিনে ফেলো না শুধু রুটি,অন্য মজা ও কিনে খেয়ো। নাও এবার ধরো টাকা টা আমি আসি কেমন।

ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। ছেলেটার দিকে একবার চেয়ে মিহিকা চলে আসে গাড়িতে।

________________

শফিক সাহেব এসেছে আরমান সাহেবের অফিসে মূলত বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। বেশ খানিক টা সময় চুপ করে থাকে শফিক সাহেব।

শফিক সাহেবের এমন চুপ থাকা নিয়ে বেজায় বিরক্ত আরমান সাহেব। এবার নিরবতা ভেঙে আরমান সাহেব বলে উঠলো,,

_ কি রে কিছু কি বলবি না এমন চুপ হয়ে আছিস কেনো।

_ আরমান রাগ করবি না তো আসলপ আমি একটা জিনিস চাইবো তোর কাছে।

_ আচ্ছা কি জিনিস বল তো আগে।

_ রাগ করিস না প্লিজ, আসলে আমার ছেলে আহিল মিহিকা কে বিয়ে করতে চায়।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই আরমান চেয়ার ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

_ কি হলে রাগ করিস না প্লিজ আসলে আমার আহিল মিহিকা কে পছন্দ করে ও নিজে এসে আমায় বলছে ও তোর মেয়েকে বিয়ে করবে আর তা না হলে আর কাউকে না।

_ তোর কি আমায় জোকার মনে হয়,একবার তোর ছোট ছেলে তামাশা করলো আবার এখন তোর বড় ছেলেকে দিয়ে করাবি তুই। আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিবো না।

_ আমার আহিল কে কি তোর তাই মনে হয়,তুই তো চিনিস ও কেমন।

_ তবুও আমি চাই না আমার মেয়ে তোদের বাড়ির বউ হোক।

_ মিহিকা চাইলেও কি দিবি না আমার ছেলের হাতে।ওকে তুলে।

কথাটা শুনে আকস্মিক চমকে উঠে আরমান।

_ মানে কি বলছিস, আমার মেয়ে কি তোর ছেলে কে পছন্দ করে?

_ দুজন একে ওপর কে পছন্দ না করলে আমার ছেলের কি সাহস পেতো এভাবে বলার।

_ আমার মেয়ে রাজি হলে আমার আপত্তি নেই তবে আমি এখনই দিবো না বিয়ে আগে দেখি তোর ছেলে আমার মেয়েকে পাবার জন্য কি কি করতে পারে।

_ কি করতে চাচ্ছিস তুই।

_ দেখ কি করি তোর ছেলে কে এসব বলবি না,বলবি আমি রাজি হই নি তার পর দেখ কি করি।

_ কি করবি সেটা তো বল।

_ সময় হলেই জানবি।

___________________

শফিক সাহেব বাসায় এসে জানায় আরমান সাহেব রাজি নয় মিহিকার সাথে আয়ুশের বিয়ে দিতে,সেটা শুনে আহিল বেজায় বিরক্ত। মনে মনে শুধায়,,

_ আমার বিয়ের আগে শশুর কে আর বিয়ের পর বউ কে মানাতে মানাতেই জীবন অর্ধেক বেরিয়ে যাবে। মেয়েকে পটানোর আগেই এখন শশুর পটানোর মিশনে নামতে হবে ও খোদা দেখো তুমি।

কতাগুলো ভেবে গাড়ির চাবি টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আহিল।

আরমান সাহেব সোফায় বসে খেলা দেখছে টিভিতে,মমতাজ বেগম কিচেনে রান্না করছে।

আহিল সোজা মিহিকাদের বাসায় ঢুকে ড্রয়িং রুমে আরমান সাহেবের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে,,

_ আঙ্কেল আমি আপনার মেয়ে মিহিকাকে বিয়ে করতে চাই,বাবাকে দিয়ে আপনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আপনি না করে দিছেন,আমি কিন্তু আপনার মেয়েকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না,আর না আপনার মেয়েকে করতে দিবো বিয়ে।

মিহিকা আর সামিরা কেবলই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো আহিলের এমন কথা শুনে ধপাস করে পড়ে যায় মিহিকা।

কিছু পড়ে যাওয়ায় আহিল আর আরমান সাহেব সিঁড়ি দিকে চেয়ে দেখে মিহিকা পড়ে গেছে।

আহিল দৌড়ে গিয়ে মিহিকা কে কোলে উঠিয়ে সোফায় এনে বসায়। হাঁটু গেড়ে বসে বলে,,

_ কোথায় ব্যাথা পাইছো তুমি দেখি বলো তো,চোখ কোথায় রেখে হাঁটো তুমি।

মিহিকা কি বলবে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না,এই ছেলের কথা শুনেই তো পড়ে গেলো সে।

মিহিকা কে কিছু বলতে না দেখে আহিল কটাক্ষ গালয় বলে,,

_ কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করছি কানে ঢুকে নি কোথায় ব্যাথা পাইছো কুইকলি বলো আমায়।

মিহিকা হাতের ইশারায় বলে পায়ে। আহিল সেটা দেখে বলে ফ্রিজ কোথায় তোমাদের।

সামিরা বলে উঠে রান্নাঘরে সেটা শুনে আহিল ধমকিয়ে বলে,,

_ তো এখনো বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও তারাতাড়ি বরফ নিয়ে এসো। সামিরা দৌড়ে ফ্রিজ খুলে বরফ এনে সেটা আহিলের হাতে দেয়। আহিল যত্ন সহকারে মিহিকার পায়ে বরফ ডলতে থাকে।

আরমান সাহেব সেটা দেখে স্বস্তির একটা শ্বাস ফেলে।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here