#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২৪
#Raiha_Zubair_Ripte
আহিল সোজা রেস্টুরেন্টে থেকে মিহিকার বলা খাবার গুলো নিয়ে আসে,গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মিহিকাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়,মিহিকাদের বাসার সামনে এসে বাড়ির দিকে তাকাতেই দেখে ছাঁদের বাতি গুলোর আলোতে স্পষ্ট মিহিকাকে দেখা যাচ্ছে।
গাড়ি থেকে না বের হয়েই ফোনটা নিয়ে মিহিকার ফোনে কল লাগায়। মিহিকা হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠায় গাড়ির দিকে চেয়ে দেখে আহিল ফোন করেছে তাকে। ফোনটা রিসিভ করতেই আহিল বলে উঠে,,
_ কি ব্যাপার ব্লাক হর্নেট, তুমি এখনো ছাঁদে যে,আমি খাবার গুলো নিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি গেট খুলো।
মিহিকা কানে ফোন নিয়েই দৌড়ে নিচে নেমে মেন গেট খুলে দেয়,ততক্ষণে আহিল গাড়ি থেকে খাবারের প্যাক নিয়ে আসে।
দরজা খুলেই আহিল কে দরজার সামনে দেখে ভয় পেয়ে যায়। মিহিকাকে ভয় পেতে দেখে আহিল ফিসফিস করে বলে উঠে,,
_ হোয়াটসঅ্যাপ ব্লাক হর্নেট, ভয় পেলে যে।
আহিলের এমন ফিসফিস করে বলা কথা শুনে মিহিকা ভ্রু কুঁচকে আস্তে করে বলে,,
_ আপনি কি ভুত যে আমি ভয় পাবো।
_ মোটেই আমি ভুত না,এই নাও তোমার খাবার খেয়ে নাও।
মিহিকা হাতে থাকা ফোনটার দিকে টাইম দেখে বলে,,
_ তিন মিনিট পয়ত্রিশ সেকেন্ড লেট করেছেন,আমি এসব আর খাবো না,খাওয়ার মুড নেই।
আহিল খাবারের প্যাকেট গুলোর দিকে একবার চেয়ে শুধায়,,
_ তাহলে খাবার গুলোর কি হবে।
মিহিকা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,
_ আমি জানি নাকি খাবার গুলোর কি হবে।
_ আচ্ছা তোমাদের বাসায় কি কুকুর বা বেড়াল আছে?
_ না কেনো বলুন তো,
_ খাবার গুলো তাদের দিতাম।
_ আমি ওসব বেড়াল কুকুর পালি না ভয় করে।
_ কি বলো আমার বাসায় যে একটা টমি আর মিক্কি আছে।
_ কিহ! আপনি বিড়াল কুকুর পালেন।
_ হ্যাঁ তবে কুকুর বিড়াল দেখে ভয় পাও কেনো ওদের সাথে মিশে দেখো একবার মানুষের থেকেও আপন হয়ে যায়।
_ আমার ভয় লাগে কামড় দিলেই তো সুই দিতে হবে,আবার নাকি সুই না দিলে কুকুরের বাচ্চা ও পেটে হয়।
_ দূর ওসব কিছু না এখন বলো খাবার গুলোর কি করবো।
_ জানি না,আমার এখন ঘুরতে ইচ্ছে করছে।
_ এই মাঝ রাতে তোমার ঘুরতে ইচ্ছে করছে সিরিয়াসলি।
_ হ্যাঁ মাঝা রাতে,শীতল বাতাসে,মানব শূন্য রাস্তায় হাঁটতে বেশ মজাই লাগে।
_ এর আগে হেঁটে ছিলে নাকি।
_ হ্যাঁ এই তো আয়ুশ ভাইয়ার সাথে সেদিন মাঝ রাস্তায় ঘুরেছিলাম।
_ আরশিয়ার ভাই না সে।
_ হুমম,কেনো বলুন তো।
_ তার থেকে দূরে থাকবা কিভাবে যেনো তাকায় তোমার দিকে।
_ দূর কি বলেন,আমার ভাই লাগে তার উপর ভাইয়ার বিয়েও ঠিক করা।
_ ওহ আচ্ছা তো ব্লাক হর্নেট কোথায় যেতে চাও তুমি।
_ এই তো আমাদের বাড়ির মোড়ের সেই নিরিবিলি রাস্তা টায়।
_ ওকে চলো তাহলে মিসেস আহিল চৌধুরী।
_ আমি এখনো মিসেস না জনাব আমি মিস এখনো।
_ ব্যাপার না হতে কতক্ষণ মিস থেকে মিসেস।
_ খাবার গুলো হাতে নিয়ে চলুন ওখানে কিছু পিচ্চি আছে তাদের দিবো।
_ ওকে চলো।
কথাটা বলে আহিল খাবারের প্যাক নিয়ে গাড়িতে উঠতে গেলে মিহিকা বলে উঠে,,
_ কি ব্যাপার আপনি গাড়িতে উঠছেন কেনো,আমরা হেঁটে হেঁটে যাবো,এই রকম মূহুর্ত গাড়িতে বসে এনজয় করা যায় না বুঝলেন,
_ বাব্বাহ ব্লাক হর্নেট তো দেখি খুবই রোমান্টিক।
কথটা বলে মিহিকার পায়ের সাথে পা মিলাতে লাগলো আহিল। মিহিকা হাঁটতে হাঁটতে জবাব দেয়,,
_ এই আপনি আমায় ব্লাক হর্নেট বলে ডাকেন কেনো, আমি কালো তাই বলে এই নামে ডাকবেন।
_ চুপ তুমি কোথায় কালো তুমি যদি কালো হও তাহলে আফ্রিকার মানুষেরা কি। তুমি কি জানো আফ্রিকার এক লোক যার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা তিনি এই ফর্সা কালো নিয়ে যেই বৈষম্য সেটার জন্য যুদ্ধ করেছে,তিনিও তো কালোই ছিলেন।
_ হ্যাঁ জানি আমার পড়ার বইতে আছে এটা।
_ তাহলে ওভাবে বললে কেনো,তোমায় ভালোবেসে আমি ব্লাক হর্নেট বলে ডাকি,যার মানে কালো ভ্রমর। তুমি আমার কাছে উড়ে আসা এক ভ্রমর।
_ এই তো এসে পড়ছি।
কথাটা বলে দৌড়ে এক গাছের তলে গিয়ে ঘুমন্ত তিন বাচ্চাকে ডেকে তুলে। আহিল এগিয়ে যায় সেই গাছটার নিচে। তিন বাচ্চার পাশে তাদের মা ও ছিলো,মিহিকা খাবার টা নিয়ে পিচ্চি গুলোর মা কে বলে,,
_ আন্টি এই ধরুন খাবার টা,ওদের জন্য এনেছি।
মহিলা টা খাবার গুলো নিলে মিহিকা চলে আসে। আহিল মিহিকা পেছন পেছন এসে বলে,,
_ তুমি কি ওদের চিনো?
_ ঠিক সেভাবে চিনি না ,প্রায় উনাদের এখানে দেখি।
_ ওহ চলো তাহলে ঐ বেঞ্চ টাতে গিয়ে বসি।
মিহিলা হুম বলে এগিয়ে যায়।
রাত বাজে দুইটা মিহিকা আর আহিল বসে আছে বেঞ্চ টাতে,থেকে থেকে আহিল দু একটা প্রশ্ন করছে আর মিহিকা উত্তর দিচ্ছে। মিহিকা হঠাৎ বলে উঠলো,,
_ আচ্ছা আপনি আমায় বিয়ে করতে চাইছেন কেনো,আমি তো আহামরি সুন্দর না,তার উপর আপনার ভাই আমায় রিজেক্ট করেছে সেই জন্য কি দয়া করে এটা করছে।
আহিল বসা থেকে উঠে মিহিকার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে,,
_ থাপ্পড় চিনো তুমি থাপড়িয়ে গাল লাল করে ফেলবো। আমি কি তোমার রূপ দেখে তোমায় বিয়ে করতে যাচ্ছি না-কি, আমি আমার মানসিক শান্তির জন্য তোমায় চাই।
_ শুধু মানসিক শান্তির জন্য।
বিরস গলায় বলে উঠে মিহিকা।
_ সব কি বলে বোঝাতে হয়,আমি তো সেভাবে ভেঙে বলতে পারি না মিহিকা, আমি জানি আমার শুধু তোমাকেই চাই।
_ আমি বাসায় যাবো।
_ কেনো?
_ ভালো লাগছে না,বাসায় দিয়ে আসুন।
_ আচ্ছা চলো। বলে মিহিকা আর আহিল হাঁটতে লাগে। বাসার সামনে আসতেই মিহিকা বাসায় ঢুকতে নিলে পেছন থেকে আহিল ডেকে উঠে,আহিলের ডাক শুনে মিহিকা পেছন ঘুরে তাকালে আহিল সামনে এগিয়ে গিয়ে মিহিকার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,
_ আমাকে বিশ্বাস করে দেখতে পারো প্রমিস করছি কখনো জেনে শুনে তোমায় কষ্ট পেতে দিবো না। একটু ভরসা না হয় করো,শেষ নিশ্বাস অব্দি তোমার পাশে থাকবো। ভালোবাসি,যাও এখন গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়ো।
মিহিকা আর কিছু না বলেই সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে।
আহিল মিহিকার যাওয়ার পানে চেয়ে গাড়িতে চড়ে চলে যায়।
মিহিকা রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে,ঘুম নেই দু চোখে,দ্বিধায় পরেছে মন নিয়ে,আদৌ কি আহিল কে বিয়ে করা উচিত,এসব ভাবতে ভাবতেই ফজরের আজান দিয়ে দেয়। ফজরের আজান কানে আসতেই মিহিকা ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ পড়ে বিছানায় যায় আবার যদি ঘুম ধরা দেয়,মিনিট দশেকের মধ্যে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় মিহিকা।
সকাল সাতটা বাজতেই সামিরার চিল্লানিতে মিহিকার ঘুম ভেঙে যায়,আড়ষ্ট গলায় মিহিকা বলে,,
_ উফ আপা চিল্লাইয়ো না তো সরো ঘুমাতে দাও সারা রাত ঘুমাতে পারি নি।
সামিরা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বলে,,
_ আরপ তুই তোর ঘুম নিয়ে আছিস,ওদিকে কি হয়েছে জানিস।
_ কি হয়েছে আবার।
_ আরে আয়ুশ ভাই কাল রাতে বিয়ে করে ফেলছে।
কথাটা শুনেই মিহিকার ঘুম উবে যায় তড়িৎগতিতে বিছানা থেকে উঠে বলে,,
_ কি বলো এসব ভাইয়া বিয়ে করে ফেলছে সত্যি।
_ আরে হ্যাঁ তারাতাড়ি উঠ ফ্রেশ হয়ে রেডি হ সবাই যাবে ও বাড়ি।
________________
আয়ুশদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছে মিহিকা,আরমান,আরশিয়া,সাহিল,মমতাজ বেগম,আরুশি বেগম,টিপু খান,আয়ুশ,সাদিয়া,আর সাদিয়ার মা বাবা। কাল রাতেই আয়ুশের বিয়ের খবর শুনে আরশিয়া আর সাহিল চলে আসে,টিপু খান আর কথা না বলে থাকতে পারে নি মেয়ের সাথে, মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি হতে দেয় নি।
আরমান সাহেব বলে উঠে,,
_ কাজ টা কি ঠিক করলি আয়ুশ না বলেই বিয়ে করে ফেললি,সামনের মাসেই তে বিয়ে ছিলো তোর,এতো তাড়া কিসের তোর।
_ বিয়ে ঠিক ছিলো,বউ ছাড়া আমার পক্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না তাই বিয়ে করে নিয়ে এসেছি।
আয়ুশের এমন ঠোঁট কা’টা কথা শুনে আরমান সাহেব কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।
_ আয়ুশ ভাই এটা কি ঠিক হলো কতো ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে আমি আর সামিরা আপু কতো এনজয় করবো তুমি তো তা আর হতে দিলে না।
_ নিজের বিয়েতে এনজয় করো সামনে তো তোমারও বিয়ে, সেটায় করো এনজয় না করছে কে।
_ আয়ুশ ভাই মিহিকার বিয়ে এখনো ঠিক হয় নি,তোমার বিয়ে খেতে পারলাম না আফসোসে ম”রে যেতে ইচ্ছে করছে।
মাঝখান থেকে সামিরা বলে উঠে কথাটা।
_ জীবনে বিয়ে খাস নি তোরা,এসব গোল মিটিং আর ভালো লাগছে সাদিয়া আমার রুমে আসো তো।
কথাটা বলেই আয়ুশ উঠে যায় সোফা ছেড়ে। আয়ুশের যাওয়া দেখো আয়ুশের মা আরুশি বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,,
_ আয়ুশের কথা বাদ দে তো আরমান,বুঝতেছি না ছেলেটার হঠাৎ কি হলো,বিয়ে তো ওর হবু বউ কেই করছে অন্য কাউকে তো আর না,এতে আর আমাদের সমস্যা কি।
_ তোর ছেলে আপা তুই ভালো বোঝ, আমি আর কি বলবো।
_ বলছি ছোট করে একটা বউভাতের আয়োজন করবো পরিবারের সবাই থাকবে ,আর বাহিরের দুই একজন থাকবে। বেয়াই কি বলেন।
সাদমান সাহেব খানিকটা নড়েচড়ে বসে বলে,,
_ আপনারা যা ভালো বুঝবেন,আমার কোনো আপত্তি নেই।
_ আচ্ছা আমি পরে আসবো নি আমার অফিসে যেতে হবে,মিহিকা আর ভাবি,সামিরা বরং থাকুক অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে যাবো নি।
সবার থেকে অনুমতি নিয়ে আরমান সাহেব চলে যায়।
সাদিয়া বসা থেকে উঠে আয়ুশের ঘরে চলে যায়। আয়ুশ বিছানায় বসে আছে,সাদিয়া গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
_ কি ব্যাপার ওভাবে আঙ্কেলের সাথে কথা বললে কেনো,এবার বুঝলাম মিহিকার বিয়ে ঠিক হচ্ছে বলে তোমার এতো জ্বালা।
_ জানোই যখন তাহলে কা’টা গায়ে নুনের ছিটা কেনো দিচ্ছে।
_ কেনো দিচ্ছি জানো না,এভাবে কি সংসার হয়,মনে থাকবে এক মেয়ে আর সংসার করবে অন্য মেয়ের সাথে।
_ আমি সংসার করার জন্যই বিয়ে করছি,তুমি তোমার চাহিদা গুলো ঠিক মতো পেলেই হলো,মনে কে আছে সেটা দেখবে কেনো।
_ ও হ্যালো মিস্টার আয়ুশ তোমার কি আমায় গরিব মনে হয় যে আমার বাপ মা আমায় পালতে পারছিলো না বলে তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিছে,তোমার মতো দশ টা আয়ুশ কে আমার বাবা আরামসে খাওয়াতে পারবে। আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তোমার,আমি বোকা বা অবলা না যে তুমি যা খুশি করে বেড়াবে আর আমি চুপচাপ দেখবো,আজকের পরে মুখে যেনো মিহিকার নাম না দেখি আর যতো দ্রুত সম্ভব মিহিকার নাম মুছে সাদিয়া লিখে টাঙিয়ে রাখবে। কথাটা যেনো মাথায় থাকে।
দরজার আড়াল থেকে কথাগুলো সামিরা মিহিকা শুনে ফেলে,তার সাদিয়ার পেছন পেছন এসেছিলো তাদের প্রেম আলাপ দেখতে,কিন্তু এসে যে এগুলো শুনবে ভাবতে পারে নি,মিহিকা দৌড়ে বাহিরে চলে আসে,পেছন পেছন সামিরাও আসে।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, হ্যাপি রিডিং)