#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২৬
#Raiha_Zubair_Ripte
দেখতে দেখতে মিহিকার বিয়ের দিন ও চলে আসলো,ধুমধাম করে হচ্ছে না আবার খুব একটা ছোট করেও হচ্ছে না,মোটামুটি আকারে বিয়ে টা হচ্ছে। মিহিকা পার্লার থেকে সেজে এসেছে,খুব একটা গর্জিয়াছ সাজ না, এমনি তেই তো মিহিকা শ্যামলা তার উপর তার এই সাদামাটা সাজ একদম নজর কেড়ে নেবার মতো।
মিহিকা নিজের রুমে বসে আছে বিছানায়,আর তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সামিরা আর আরশিয়ার সাজ দেখছে,সেই কখন থেকে দুটো মিলে সাজছে এদের সাজ হচ্ছেই না। মিহিকা এবার না পেরে বলে উঠলো,,
_ কি গো আপু তোমাদের কি সাজ হলো,বিয়ে হচ্ছে আমার তোমাদের না এতো সেজে কি করবা।
মিহিকা মুখে ব্লাশঅন করতে করতে বলে,,
_ এই চুপ থাক লজ্জা করছে না,বড় বোনের আগে বিয়ে করে নিচ্ছিস,আর তোর বিয়েতে সাজবো না তো কার বিয়ে তে সাজবো।
_ একদম ঠিক বলছিস সামিরা তুই,নিজের বিয়েতে তো সাজতে পারলাম না তোর বিয়েতে সাজবো না তো কি করবো।
কথাটা বলেই মিহিকার দিলে তাকাতে নিলে দেখে মিহিকার মুখ ভার,আরশিয়া মিহিকার পাশে বসে বলে,,
_ সরি আসলে আমি তোকে হার্ট করে কথা বলতে চাই নি।
মিহিকা হেঁসে বলে,,
_ না আপু আমি হার্ট হই নি তোমার কথায়,যা হয় ভালোর জন্য ই হয়,সেদিন বিয়ে টা না ভাঙলে আহিল কে কি করে পেতাম আমি বলতো।
_ সত্যি হার্ট হোস নি তো।
উহু একটু ও না।
এর মধ্যেই সাদিয়া এসে হাজির হয়,দরজা দিয়ে ঢুকগে ঢুকতে বলে,,
_ কই রে আমার সব ননদীরা,তোমাদের কি হলো সাজ।
কথাটা বলেই মিহিকার পাশে এসে বসে মিহিকার মুখটা উচু করে বলে,,
_ বাহ আমার ননদীনি কে তো একদম মিষ্টি পরির মতো লাগছে।
_ তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে সাদিয়া আপু।
_ এহ বললেই হলো নাকি,বিয়ের কনে তো তুমি,সবাই আজ তোমার দিকে চেয়ে থাকবে, আমায় কি কেও দেখবে নাকি।
খানিকটা মন খারাপের ভান করে বলে সাদিয়া।
সাদিয়ার কথা শুনে সামিরা বলে উঠে,,
_ আয়হায় ভাবি কি বলো,আমার আয়ুশ ভাই আজ নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে তোমার এই রূপ দেখে।
_ কচু করবে তোমাদের ভাই,গিয়ে দেখো কোন চিপায় গিয়ে বসে আছে। সে যাইহোক এই মিহিকা আমার ননদাই কি ফোন করেছিলো নাকি।
মিহিকাকে হাত দিয়ে বাহুতে ধাক্কা মেরে বলে,,মিহিকা খানিক লজ্জা পায়,মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,,
_ হ্যাঁ দিয়েছিলো ঘন্টাখানেক আগে।
_ ও তোমার ফোন দাও তো সেলফি তুলি।
কথাটা বলে মিহিকার ফোনের জন্য হাত বাড়ালে মিহিকা ফোন দেয়। মিহিকার থেকে ফোন পেয়ে সাদিয়া সোজা ফোন কলে গিয়ে আহিলের নাম্বারে ডায়াল করে।
ওপাশ থেকে আহিল ফোন ধরে,সাদিয়া কোনো কথা না বলে ফোনটা লাউডস্পিকারে দেয়,আহিল ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই,মিহিকা সাদিয়ার থেকে ফোন কেঁড়ে নিতে গেলে সাদিয়া ফোন সরিয়ে ফেলে।
ওদিকে বারবার হ্যালো বলার পরও যখন মিহিকার আওয়াজ ভেসে আসে না তখন আহিল খানিকটা আন্দাজ করে কিছু একটা হচ্ছে ওখানে।
আহিল গলা খাকড়িয়ে বলে,,
_ ফোনের ওপারে যে মিহিকা নেই সেটা আমি বুঝতে পেরেছি,তা কে আছেন সেটা বলুন।
সাদিয়া বলে উঠে,,
_ আমি মিহিকার ভাবি বলছি গো ননদাই।
_ ওহ সাদিয়া ভাবি নাকি,
_ হ্যাঁ
_ মিহিকা কে দিন ফোনটা।
_ না দেওয়া যাবে না,আমার সাথে কথা বলেন।
_ আপনার সাথে কি কথা বলবো?
সাদিয়া কিছু বলতে নিবে আর তখনই মিহিকা এসে ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। মিহিকা ফেনটা কানে নিয়ে আকুল হয়ে শুধায়,,
_ আপনি আসবেন কখন?
_ এই তো ব্লাক হর্নেট বের হবো, আচ্ছা ভিডিও কল দেই তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
_ উহু আপনি আসুন,আপনার অপেক্ষায় আছে আপনার এই ব্লাক হর্নেট, তখন না হয় দেখে দু চোখের তৃষ্ণা মিটাবেন।
আহিল মুচকি হেঁসে বলে,,
_ অপেক্ষার প্রহর যে কাটতে চাচ্ছে না হর্নেট,একটু দেই না ভিডিও কল,
_ না বললাম তো।
_ ফুল বনে ফোটে কত ফুল
ভ্রমর মধু আহরণে থাকে ব্যাকুল
মধু আহরণে ভ্রমর তৃপ্ত হয়
ফুল অজান্তেই কত সুবাস ছড়ায়।
তুমি ফুলের মতো সুবাস ছড়াও
অজান্তেই আমার মনটা কেড়ে নাও
ভ্রমর হয়ে ছুটি তোমার পানে
সাড়া দাও বঁধুয়া আমার আহবানে।
আহিলের এমন কবিতা শুনে মিহিকা হেঁসে ফেলে, মানুষটা সত্যি অন্যরকম,এভাবে আরো টুকটাক কথাবার্তা বলে ফোন রেখে দেয় মিহিকা। পেছন ঘুরতে নিলে তিনজন কে দেখে ভড়কে যায় মিহিকা।
মিহিকা তাদের পাশ কাটিয়ে ঘরে গিয়ে বিছানার এক প্রান্তে বসে পড়ে।
সামিরা, সাদিয়া,আরশিয়া আরো কতোক্ষণ মিহিকার সাথে গল্প করে বাহিরে চলে যায়।
মিহিকা একলা ঘরে বসে টেবিল থেকে ডায়েরি বের করে হাতে কলম নিয়ে কিছু লেখার উদ্ধত হয়।
প্রায় সাত মাস পর আজ আবার মিহিকা ডায়েরি লিখতে বসলো,শেষ লিখেছিলো যেদিন এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছিলো,সেদিন তার মাকে উদ্দেশ্য করে ডায়েরি তে দু এক শব্দ লিখেছিলো আজ আবার লিখতে বসেছে।
ডায়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লিখে,,
” মা দেখতে পাচ্ছো তোমার সেদিনের সেই মেয়োটার আজ বিয়ে হতে চলছে,এবার আর সে ভুল কাউকে বেছে নেয় নি সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছে তোমার মেয়ে,আজ তুমি থাকলে তোমায় জড়িয়ে ধরে খানিকটা সময় কেঁদে নিতাম,তবে সেটা দুঃখের না,সেটা হতো সুখের,তোমার মেয়ের আজ থেকে নতুন এক অধ্যায় শুরু,তুমি দোয়া করো মা আমি যেনো মানিয়ে গুছিয়ে চলতে পারি,,
আরো কিছু লিখতে উদ্বত হলে বাহিরে থেকে আওয়াজ ভেসে আসে বর এসেছে বর এসেছে।
মিহিকা ডায়েরিটা ড্রয়ারে রেখে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে আহিল দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে।তার সামনে ফিতা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া,সামিরা,আরশিয়া।
সাদিয়া,সামিরা,আরশিয়া,সবাই পঁচিশ হাজার টাকার বায়না করেছে,পঁচিশ হাজারের এক টাকা কম হলে আহিল কে তারা ঢুকতে দিবে না।
সাহিল সে কথা শুনে আরশিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
_ তুমি ও ওদের দলে নাম দিছো আরশিয়া,তুমি বরের ভাইয়ের বউ তোমার থাকা উচিত বর পক্ষের সঙ্গে, সেটা না করে তুমি ওদের সঙ্গ দিচ্ছো।
_ কি করবো বলো বোনটা তো আমারই,তাই যতোই বলো না কেনো আমি এক পা ও নড়বো না,আর আহিল ভাইয়া কি মিহিকার জন্য এইটুকু ত্যাগ করতে পারবে না।
আরশিয়ার এমন কথা শুনে পেছন থেকে অভি বলে উঠে,,
_ বুঝলি আহিল আমার বিয়েতে আমি এক টাকাও কনে পক্ষ কে নিতে দিবো না,দরকার পরলে বিয়ে না করেই ঘুরে যাবো যদি ভেতরে ঢুকতে না দেয় তাহলে,, এতো কষ্ট করে টাকা রোজগার করি বউ কে দিবো সেগুলো কেনো বউয়ের বোনদের দিবো হুমম।
অভির কথা শুনে আহিল মুচকি হেঁসে মানিব্যাগ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা ওদের দিয়ে বলে,,
_ কথায় আছে অভি জানিস না শালি অর্ধেক ঘরওয়ালী।
আহিলের বোন আহিয়া বর পক্ষ থেকে সরে এসে সাদিয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,
_ এই আপু রা আমি এখন তোমাদের কনে পক্ষে, আমাকেউ ভাগ দাও,
আহিয়ার কথা,শুনে সামিরা খানিক হেঁসে বলে,,চিন্তা করো দশ পাঁচ টাকা তোমায় ও দিবো আহিয়া,
অভির পানে চেয়ে সামিরা অভিকে কে ঠেস মেরে বলে,,
_ কেউ বিয়ে করতে এসে যদি টাকাই খসাতে না পারে তাহলে তার বিয়ে করা উচিত না,আইবুড়ো থাকুক সে। আহিয়া এখন যা ও পাঁচ দশ টাকা পাবে তখন সেটাও জুটবে কি-না সন্দেহ, বুঝলে।
কথাটা বলে গেট ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ায় সবাই,আহিল আর বাকি সবাই ভেতরে প্রবেশ করে।
সাদিয়া সবার পেছন পেছন হাঁটতে নিলে হঠাৎ উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে কেউ এসে সাদিয়ার হাত ধরে ফেলে,সাদিয়া তাকিয়ে দেখে বর পক্ষের সাথে আসা এক ছেলে, সাদিয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায় ভেতরে।
আয়ুশ সবেই বাহিরে এসেছিলো কিছু একটা মনে করে, বাহিরে এসে এমন দৃশ্য দেখে রাগে চোখ লাল হয়ে যায়,সাদিয়া দেখার আগেই চলে যায় আয়ুশ।
শফিক সাহেব ভেতরে ঢুকে আরমান সাহেব আর টিপু খানের সাথে কথা বলে টুকটাক, এর মধ্যে কাজি তাড়া দেয় মিহিকাকে আনার জন্য, আরমান সাহেব সাদিয়া,সামিরা,আরশিয়া আর মমতাজ বেগম কে পাঠায় মিহিকাকে আনার জন্য। সাদিয়া সিঁড়ি দিয়ে মিহিকাকে ধরে নামায়,আহিল সবেই টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে যাচ্ছিলো সিঁড়ি তে চোখ যেতেই হৃৎস্পন্দনের উঠা নামা বেড়ে যায়। কি অপরূপ লাগছে,ব্লু কালারের লেহেঙ্গায় সাদামাটা সাজে অপসরীর থেকে কম না।
সাদিয়া মিহিকা কে এনে আহিলের পাশে বসিয়ে দেয়। সাদিয়া পেছন ঘুরে আসতে নিলে কারে সাতে ধাক্কা খায়,পেছন ঘুরে দেখে তখনকার সেই ছেলেটা,সাদিয়া সরি বলে চলে আসতে নিলে ছেলেটা বলে উঠে,,
_ হেই মিস পার্পল আপনার ফোন নাম্বার টা কি দেওয়া যাবে।
_ এক্সকিউজ মি আপনি কি আমায় বলছেন।
_ হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।
_ বয়স কতো তেমার?
_ বিশ হবে।
_ ফ্লার্ট করার জায়গা পাও না তোমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র আমি।
_ তাতে কি জুনিয়র সিনিয়রের কি প্রেম হয় না।
সাদিয়া মাথায় হাত দিয়ে ফেলে এই ছেলে বলে কি,চিনি না জানি না সেজা প্রেমে চলে গেছে। সাদিয়া হাত উঁচু করে কিছু বলতে নিবে আয়ুশ এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,
_ এই ছেলে তোমার সমস্যা কি,সেই প্রথম থেকে লক্ষ করছি তুমি আমার বউয়ের পিছন মৌমাছির মতোন ঘুরঘুর করছো।
_ কিহ উনি আপনার বউ।
_ হ্যাঁ কেনো কি হয়েছে।
_ সরি ভাইয়া আসলে আপুর কাছে জিজ্ঞেস করছিলাম ওয়াশরুম টা আসলে কোথায়।
কথাটা বলে ছেলেটা তারাহুরো করে চলে যায় অন্য দিকে। সাদিয়া ছেলেটার যাওয়া দেখে হেঁসে কুটিকুটি হয়ে যায়। সাদিয়ার এমন হাসি দেখে আয়ুশ বলে উঠে,,
_ এতো হাসির কি হলো,ছেলে দেখলেই কি গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে নাকি তোমার,ফা’জিল মেয়ে।
_ আরে আমি কখন গায়ে পড়লাম ছেলেটাই তো আমার পেছনে ছিলো,আর তোমার সমস্যা কি আমি যা ইচ্ছে তাই করে।
_ আমার সমস্যা না মানে তাহলে কার সমস্যা, বিয়ে করছি তোমায় অন্য ছেলেদের গায়ে পড়া দেখার জন্য নাকি।
_ সেম কুয়েশ্চেন তো আমি রাখতে পারি।
_ মানে কি বোঝাতে চাইছো,আমি কখনোই গায়ে পড়ি নি কারো।
_ হ্যাঁ জানি তো।
_ জানলেই ভালো,আর পুরো বিয়ের সময় আমার সাথে থাকবে, এক পা এদিক ওদিক গেলে পা ভেঙে।রেখে দিবো।
কথাটা বলে সাদিয়ার হাত ধরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে।
_______________________
কাজি সাহেব মিহিকাকে কবুল বলতে বলছে কিন্তু মিহিকা বলতে পারছে না,বারবার গলার কাছে এসে আটকে যাচ্ছে কথাটা। আহিল কে কবুল বলার সময় আহিল সময় নষ্ট না করে সাথে সাথেই বলে দেয় কবুল।
মিহিকাকে কবুল বলতে না দেখে আহিল মিহিকার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,
_ এতো চিন্তা করছো কেনো ব্লাক হর্নেট, আজীবন তোমার পাশে আছি মৃত্যুর আগ অব্দি,ভালোবাসি তোমায়,নিরদ্বিধায় বলে দাও কবুল,আমি তোমাকে এই প্রতিশ্রুতি দেব না যে আমি তোমার সব অশান্তি দূর করতে পারব, তবে এই কথা দিতে পারি যে আমরা একসাথে সেই অশান্তি মোকাবিলা করব শক্ত হাতে,পাশে থেকে ।
কথাটা শুনে মিহিকা একটু হালকা হয়,অবশেষে বলে দেয় কবুল।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিদায়ের বেলায়,মিহিকা তারা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়
আরমান সাহেবের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোটা অশ্রু।মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়,আরমান সাহেব শফিক সাহেবের হাত ধরে বলে,,
_ তোদের ভরসায় আমার কলিজাকে তোদের হাতে তুলে দিলাম,সেবারের মতো আর কষ্ট পেতে দিস না।
শফিক সাহেব বন্ধুর হাত ধরে বলে,,
_ কথা দিচ্ছি আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো না মিহিকা কে,মিহিকা যেমন তোর মেয়ে আজ থেকে আহিয়ার মতো সে আমার ও মেয়ে।
কথাটা বলে বন্ধুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় তারা সবাই আরশিয়া ও চলে গেছে তাদের সাথে শুধু রয়ে গেলো, সাদিয়া,আয়ুশ,সামিরা,অভি।
সাদিয়া আর আয়ুশ মিহিকাদের বাসার ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে,আয়ুশ নিজেও সরছে না ছাঁদ থেকে আর সাদিয়াকেও যেতে দিচ্ছে না,সাদিয়া এবার অধৈর্য্য হয়ে বলে,,
_ আর কতক্ষণ এখানে।দাঁড়িয়ে থাকবা,নিজেও গেলে না আর আমাকেও যেতে দিলা না।
_ আমার থেকে কি ওখানে যাওয়াটা তোমার জরুরি।
_ সেটা কেনো হবে।
_ তাহলে তোমায় যখন পাশে পাশে রাখতে চাচ্ছি এমন পালাই পালাই করছো কেনো।
_ তুমি তোমার পাশে আমার স্থান দিলে সত্যি কি আমি পালাই পালাই করতাম আয়ুশ,তুমি যেই দেখলে মিহিকার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলো আর তখন তুমি আমায় মেনে নেওয়ার ট্রাই করছো।
_ তুমি যা ভাববে,তবে আমি ট্রাই করবো তোমার পাশে থাকার, তোমায় ভালোবাসার মন থেকে ট্রাস্ট মি,কিন্তু সময় চাই আমার,
_ যতো পারো নাও সময় অপেক্ষায় রইলাম। কতাটা বলে সাদিয়া ছাঁদ থেকে নেমে যেতে চাইলে আয়ুশ হাত ধরে আটকিয়ে বলে,,
_ থাকো না আর কতোক্ষণ পাশে,দেখো চাঁদ টা আজ কতো সুন্দর উপভোগ করো না মূহুর্ত টা।
সাদিয়া মুচকি হেঁসে আয়ুশের পাশে ছাঁদের রিলের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে,হয়তো তার জীবনেও আসবে সেই সময় যেদিন আয়ুশ তাকে চোখে হারাবে। কথাটা মনে করতেই আবার হেঁসে উঠে সাদিয়া।
সামিরা অবশ্য যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অভি যেতে দেয় নি,আজ সে প্রিয়তমার সাথে কিছুক্ষণ একাকী সময় কাটাবে।
গাড়িতে বসে সেই থেকে মিহিকা কেঁদেই যাচ্ছে, আহিল এবার বেশ বিরক্ত সেই কখন থেকে মানা করছে যেনো না কাঁদে কিন্তু মেয়েটা তার কথা কানেই নিচ্ছে না।
আহিল একা একাই বলে উঠে,,
মনের জানলা দিয়ে আমার ঘরে
আসলো উড়ে ভোমরা,—
কোন যে সুখ নিয়ে এলো সে,
বলতে পারো তোমরা?
আসলো ভ্রমর কেঁদে কেটে
অবুঝ ভাষায় নিশ্চুপ হয়ে,
অবাক্ হয়ে তাকাই আমি,
মুখটি করে গোম্রা;
বুঝতে নাহি পারি কোন বাণী কয়
আমার উড়ন্ত সেই ভোমরা।
আহিলের এমন কবিতা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিহিকা কোথায় কাঁদছে সে সান্ত্বনা দিবে তা না।
মিহিকা আবার কাঁদতে নিলে আহিল এবার রেগে বলে উঠে,,
_ এই মেয়ে তোমায় কি আমি পানিতে ফে’লে দেবার জন্য নিয়ে যাচ্ছি না-কি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি কান্না করার কি হলো,এ বাড়ি ছেড়ে আমার বাসায়ই তো যাচ্ছো তাহলে।
মিহিকা হাতে থাকা টিস্যু টা নিয়ে নাক মুছে বলে,,
_ আশ্চর্য আপনি জানেন না মেয়েরা কেনো কাঁদে, বাবার ভালোবাসা আদর স্নেহ ছেড়ে চলে আসা কি খুব একটা সহজ,বাবার মতে কি কেউ এতে স্নেহ করতে পারবে?
আহিল দু হাত দিয়ে মিহিকাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
_ আমি হয়তো তোমার বাবার মতোন করে ভালোবাসতে পারবো না,কিন্তু তোমার বাবার পরে যদি কেউ ভালেবাসে তাহলে সেটা এই আহিল,তুমি কি জানো “কাজল কালো ভ্রমর তোমার কাজল কালো ঐ দু’চোখের কোনে জল!আমার সব থমকে দেয়,হয়ে যাই হতবিহ্বল!”
গাছের শাখে ফুল ফুটেছে ভ্রমর এলো উড়ে
আহিলের স্বপ্নগুলোতে, বাঁধা যে সে তার ছোট্ট কুড়েঘরে ।
প্রেমের গান সারাবেলা তোমায় আমি শোনাবো
ওগো প্রিয়ো ভ্রমর তোমারই কাছে আছি আমি ।
ভ্রমর হঠাৎ কষ্ট পেলে তার প্রিয়র ও যে হয় বুক ভারি,
বুকে উপর এক হাত দিয়ে কথাটা বলে আহিল,আহিলের কথা বলার স্টাইল দেখে হেঁসে উঠে মিহিকা,মিহিকার হাসি দেখে আহিল আবার বলে উঠে,,আজ থেকে নতুন জীবন শুরু, নতুন এক অধ্যায় এই অধ্যায়ের কোনো পৃষ্টাতেই যেনো দুঃখরা এসে হানা দিতে না পারে। তুমি দেখো কেউ যেনো আমাদের এই নতুন জীবনের সূচনা থেকে শুরু করে উপসংহার পর্যন্ত কেউ যেনো না টলাতে পারে, এভাবেই যেনো হাসি খুশিতে থাকতে পারি।
সমাপ্ত
( গল্পটার ইতি টানলাম এখানেই,কেমন হলো জানি না,আমি খুবই কাঁচা হাতের একজন লেখিকা,ভুল ত্রুটি হবেই সেক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক, যারা শুরু থেকে পাশে ছিলেন তারা অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো গল্পটা,আবার ফিরে আসবো নতুন কোনো গল্প নিয়ে, ভালো থাকবেন সবাই)