কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব৩ #Raiha_Zubair_Ripte

0
556

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte

দেখলি আপাই বেয়া’দপ লোক গুলো কিভাবে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আর একদিন শুধু ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে নিক না দেখিস কিভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াই।

_ আচ্ছা তখন দেখা যাবে নি,এখন আইসক্রিম টা খা দেখ গলে যাচ্ছে, আর কলেজের ও তো দেরি হয়ে যাচ্ছে, ঐ দেখ একটা রিকশা আসতেছে চল।

সামিরা আসতে থাকা একটি রিকশা দাঁড় করায়। মিহিকা হাতে থাকা একটা আইসক্রিম সামিরার হাতে দিয়ে অন্যটা নিজে খেতে লাগলো রিকশায় উঠে।

প্রায় দশ মিনিট পর কলেজে এসে পৌঁছালো সামিরা আর মিহিকা। সামিরা রিকশা ভাড়া দেয়,দুজনে মিলে এক সাথে কলেজে প্রবেশ করে, সামিরা পড়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আর মিহিকা ফাস্ট ইয়ারে।

_ এই শোন আজ আর আমি তোদের বাসায় যাবো না, জানিসই তো আম্মু অসুস্থ হসপিটালে আছে,সেদিন তো দেখেও এলি,এখন মোটামুটি সুস্থ আজ বাসায় নিয়ে আসবো মা কে, তাই তুই একলা চলে যাস বাসায়,আম্মু পুরোপুরি সুস্থ হলে আম্মুকে নিয়ে তোদের বাসায় যাবো, আম্মু কালকের বিয়ে ভাঙার ব্যাপার টা জানে না বুঝলি, আমিও হসপিটালে থাকার কারনে যেতে পারি নি বিয়েতে, আম্মুর কাছে মামিকে রেখে এসেছি, আমি যদি বিয়েতে থাকতাম তাহলে ঐ ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিতাম,আর শোন রাফিয়ার সাথে লাগতে যাস না কিছু বললে আমায় এসে বলবি আমি দেখে নিবো বাকি টা কেমন।

মিহিকা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়। সামিরা মিহিকাকে টাটা বলে নিজের ক্লাসে চলে যায়।

মিহিকা ক্লাসে ঢুকতে নিলেই তার পথ আটকে দাঁড়ায় রাফিয়া। মিহিকা পাশ কাটিয়ে ঢুকতে নিলেও রাপিয়া ঢুকতে দেয় না। মিহিকা এবার বিরক্তি চাহনি নিয়ে রাফিয়ার দিকে চায়।

_ প্রবলেম কি তোমার আমায় ভেতরে যেতে দিচ্ছো না কেনো,সামনে থেকে সরো আমি ভেতরে যাবো।

_ এতো তারা কিসের তোমার মিহিকা দাঁড়াও একটু, তোমার কালকের ইতিহাস টা সবাই জানুক।

_ মানে কিসের ইতিহাসের কথা বলছো তুমি।

_ ওলেলেলে আমাদের মিহিকা রানি কিছুই জানে না। বিয়ের আসরে কার বিয়ে ভেঙে গেছে কাল,কাল কাকে কালো বলে রিজেক্ট করেছে পাত্র । ইশ তোর মতো গাইয়া কালো কে কি দেখে যে প্রথমে পছন্দ করেছিলো আল্লাহ ই ভালো জানে। ছেলেটা ভালোই করেছে বিয়ের আগেই বিয়ের ভেঙে দিছে, তোর মতো কালিকে বিয়ে না করে।

মিহিকা আর এসব কথা সহ্য করতে না পেরে ঠাসিয়ে রাফিয়ার গালে চড় বসি’য়ে দেয়।

_ তোর সাহস হয় কি করে আমায় চড় মারার, তোকে যদি এই কলেজ ছাড়া না করছি তবে আমার নাম ও রাফিয়া না।

_ তোমার যা করার করতে পারো আই ডোন্ট কেয়ার। ফারদার এমন বিহেভিয়ার আমার সাথে করলে এর চেয়েও মারাত্মক কিছু করবো তোমার সাথে তাই তোমায় সতর্ক করে গেলাম নেক্সট টাইম বুঝে শুনে লাগবে আমার সাথে। এবার সামনে থেকে সরো ঢুকতে দাও।

মিহিকা রাফিয়াকে সামনে থেকে সড়িয়ে ভেতরে ঢুকে মেঘলার পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়ে। কলেজে একমাত্র এই মেঘলাই মিহিকার সাথে মিশে।

_ এটা তুমি কি করলে মিহিকা এবার তো ও তোমায় কলেজ ছাড়া করবে।

_ চিন্তা করো না ও আমার কিছুই করতে পারবে না। দোষ টা ফাস্ট ও করছে। আর এই টপিক বাদ দাও ঐ দেখো টিচার চলে আসছে ক্লাসে মন দাও।

মেঘলা হুম বললে দু’জনে ক্লাসে মনযোগ দেয়।

আহিল আলতো পায়ে কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে,বেডে অক্সিজেন মাস্ক পড়া নিস্তেজ ভাবে পড়ে আছে শফিক। আহিল গিয়ে শফিকের পাশে বসে পড়ে,শফিকের হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে পুরে নেয়। আহিলের পেছন পেছন আসমানী ও ঢুকে।

_ আহিল তোর বাবার আজ এই অবস্থা কিন্তু সাহিলের জন্যই। ভরা বিয়ের আসরে মিহিকাকে রিজেক্ট করে তারই ফুফাতো বোন আরশিয়া কে বিয়ে করেছে। এবার আর ওকে ছেড়ে দিস না , ছেলেটাকে তোরা বাপ বেটা মিলে আদর দিয়ে দিয়ে এই রকম তৈরি করেছিস। সাহিল আমার নিজের ছেলে ছিলো না বলে সাহিল কে তেমন ভাবে শাসন করি নি যদি ভাবতো নিজের মা না তাই এমন ব্যাবহার করে আমার সাথে।

_ আচ্ছা মা এখন একটু চুপ থাকো না, সাহিল কে পরে দেখছি,আগে বাবা কে সুস্থ হতে দাও। এসে থেকেই তুমি সাহিল সাহিল করে যাচ্ছো সাহিল এই করেছে সাহিল ঐ করেছে এবার থামো প্লিজ।

ফোনের আওয়াজ পেয়ে আহিল নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে অভি কল করেছে।

_ হ্যালো অভি, কই তুই?

_ দোস্ত কলেজ থেকে ফোন এসেছে আর্জেন্ট যেতে হবে তাই কলেজে যাচ্ছি।

_ আচ্ছা সাবধানে যাস, আর সন্ধ্যায় একটু আমার বাসায় আসিস কথা আছে।

_ আচ্ছা সময় পেলে যাবো এখন রাখি। বলে অভি ফোন কেটে দেয়।

আহিল ফোন টা পকেটে ভরতে নিয়ে দেখে শফিক সাহেব হাত নাড়াচ্ছেন। আহিল তারাতাড়ি করে ডক্টর কে ডেকে আনে। ডক্টর এসে চেক করে ততক্ষণে শফিক সাহেব পুরোপুরি চোখ মেলে তাকিয়েছে।

_ ডক্টর আমার বাবাকে কখন বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।

_ আপনারা চাইলে আজই নিয়ে যেতে পারেন তবে দেখবেন উত্তেজিত হবার মতো কোনো ঘটনা যেনো তার সাথে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন,টাইম টু টাইম ঔষধ আর খাবার খাওয়াবেন।

_ অবশ্যই ডক্টর সেদিকে খেয়াল থাকবে আর ধন্যবাদ।

_ ইট’স ওকে এটা আমাদের কর্তব্য,এখন আসি।

ডক্টর বেরিয়ে গেলে আহিল শফিকের পাশে বসে। শফিক আলতো করে অক্সিজেনের মাস্ক টা খুলে ফেলে।

_ আহিল আমি ছেলেটাকে মানুষ করতে পারলাম না রে। ছেলেটা আমার মানসম্মানের সাথে সাথে এতোদিনের বন্ধুত্ব টাকেও ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিলো। আরমান আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে না।

_ তুমি চিন্তা করো না আঙ্কেলের সাথে আমি কথা বলবো। তবে সাহিলের সাথে আলাদা করে কথা বলতে হবে, ও কি চায় সেটা জানতে হবে। ও যা শুরু করছে এবার সেটা বন্ধ করা উচিত এর আগেও অনেক কান্ড ঘটাইছে আমি চুপ ছিলাম তোমার জন্য এবার কিন্তু আমি চুপ থাকবো না বলে রাখলাম আর তুমিও কিছু বলতে আসবা না।

__________________________🌸

সাহিল বাড়ি ফিরে সোজা গিয়ে সোফায় বসে,আরশিয়া সাহিল কে দেখে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়।

কাল রাতে যখন তারা এ বাসা ঢুকে তখন বাসায় শুধু আহিয়া,কাজের বুয়া,আর সাইফা বেগম শফিক সাহেবের মা বাসায় ছিলো। সাহিল বাড়ি এসে কলিং বেল বাজালে আহিয়া এসে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে সাহিল কে দেখে রেগে যায় আহিয়া।

_ তুমি কেনো এসেছো সাহিল ভাই বাসায়, তোমার জন্য বাবা হসপিটালে ভর্তি, তুমি হসপিটালে না গিয়ে বউ নিয়ে বাসায় এসেছো।

_ কিহ! বাবা হসপিটালে ভর্তি, আমাকে তো ফোন করে জানালো না, আমি এখনি যাচ্ছি কোন হসপিটালে ভর্তি তাই বল।

আহিয়া হসপিটালের নাম বললে সাহিল আরশিয়া কে রেখেই হসপিটালের জন্য বেরিয়ে পড়ে। পেছন থেকে আরশিয়া ডাক দিলেও সাহিল সেটা না শুনেই চলে যায়।

আহিয়া দরজা খুলা রেখেই চলে যেতে নিলে আরশিয়া পেছন থেকে ডাক দেয়।

_ এই শোনো না,আমাকে সাহিলের রুম টা দেখিয়ে দিবে আসলে আমার চেঞ্জ করা প্রয়োজন।

_ সোজা উপরে গিয়ে ডান পাশের সেকেন্ড রুমটাই সাহিল ভাইয়ের।

আহিয়া পেছনে না ফিরেই বলে উপরে উঠে চলে যায়।

_ বাপরে কি এ্যাটিটিউড এই টুকু মেয়ের।

আরশিয়া আহিয়ার যাওয়ার পানে একবার চেয়ে ভেংচি কেটে আহিয়ার বলা রুম খুঁজে চলে যায়।

আহিয়া সোজা নিজের দাদির ঘরে যায়। সাইফা বেগম দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে জিজ্ঞেস করে।

_ কিরে দিদিভাই কে এসেছে?

_ কে আবার তোমার আদরের নাতি সাহিল ভাই।

_ ওকে একবার পাঠা তো আমার রুমে, ওর সাহস দেখে আমি অবাক আমাদের খেয়ে আমাদের পড়ে এখন আমাদের কথার অবাধ্য হয়। ওর জন্য আমার এক মাত্র ছেলে হসপিটালে ভর্তি।

_ সাহিল ভাই বাসায় নেই হসপিটালে গেছে কেবলই। সে নাকি জানতো না বাবা হসপিটালে ভর্তি।

_ ওহ আচ্ছা আসুক হসপিটাল থেকে ফিরে আমি দেখে নিবে নি তুই আয় ঘুমিয়ে পড় কান্না কাটি করে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস।

আহিয়া আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে দাদির পাশে। রাত অনেক টা হওয়ায় আহিয়াকে আর হসপিটালে যেতে দেয় নি সাইফা বেগম।

_______

সাহিল আরশিয়ার হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে। সাহিল একবার আরশিয়ার পানে চায়।

_ একি তুমি এমন ঘেমে গেছো কেনো, আর তোমার এমন অবস্থা কেনো। আর এটা কেমন শাড়ি পড়েছে তুমি, এ শাড়ি তো আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া পড়ে।

_ দাদি সকাল থেকে বাড়ির সব কাজ আমায় দিয়ে করাচ্ছে। কাজের বুয়াকে ছুটি দিয়ে দিছে। কাল রাতে শাড়ি চাইতে গেলে দাদি এই শাড়ি হাতে ধরিয়ে দেয়।

_ কিহ! আর তুমি ও বোকার মতো পড়লে এই শাড়ি,দাদি ও দাদি কই তুমি,নিচে আসো তারাতাড়ি।

সাইফা বেগম উপর থেকে সাহিলের ডাক শুনে সিঁড়ির কাছে আসে।

_ কি হয়েছে এভাবে অভদ্রের মতো ডাকছো কেনো।

_ তুমি আরশিয়াকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাচ্ছো কেনো। আর বাসার কাজের বুয়াকে ছুটি দিছো কেনো,এটা কি শাড়ি দিছো তুমি ওরে, এমন শাড়ি তো আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া পড়ে।

_ আমি কি করবো না করবো সেটা কি তুই আমায় শিখিয়ে দিবি। এটা আমার বাড়ি আমার বাড়িতে থাকতে হলে আমার কথা মতোই চলতে হবে,আর না শুনলে দরজা খুলা আছে বেরিয়ে যেতে পারিস বলে আবার ঘরে ঢুকে গেলে সাইফা বেগম।

_ এই দাদির আবার কি হলো, এমন শুরু করছে কেনো।

_ আচ্ছা বাদ দাও হসপিটালে কি খবর। আঙ্কেল কেমন আছেন।

_ মোটামুটি ভালোই আছে,আর আহিল ভাই এসেছে হসপিটালে আমায় দেখেই চ’ড় মেরে হসপিটাল থেকে পাঠিয়ে দিছে।

_ তোমায় মারছে কেনো আহিল ভাই। আর তুমিও চুপচাপ মা’র খেলে প্রতিবাদ করতে পারো নি।

_ কি প্রতিবাদ করবো দোষ টা তো আমারই। আমার কারনেই তো বাবার এই অবস্থা আজ।

_ আচ্ছা বাদ দাও তুমি বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসি।

_ আহিয়া কই ও কি তোমায় একটু হেল্প করতে পারে না।

_ সরি ভাই আমি তোমার বউ কে হেল্প করতে পারবো না, যার জন্য আজ আমার বাবার এই অবস্থা তাকে কি না আমি হেল্প করবো।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো আহিয়া।

_ এতো কথা কই থেকে শিখলি তুই,আমাকে দেখতে পারিস না ভালো কথা আরশিয়া কি দোষ করলো ওর সাথে এমন করছিস কেনো তোরা।

_ তোমাকে তোমার ব্যাবহারের জন্যই দেখতে পারি না, দেখলে না তোমার বিয়েতেও যাই নি, তোমার বিয়েতে না গিয়ে ভালোই করেছিলাম,তোমার বিয়েতে গিয়ে অন্তত তোমার তামাশা দেখতে হয় নি এমনি তে তো কম তামাশা করো না।

_ মুখ সামলে কথা বল, ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই,চড়িয়ে সোজা করে ফেলবো।

_ এই কথাটা যেনো নেক্সট টাইম তোমার মুখে না শুনি সাহিল ভাই। তুমি কিসের বড় ভাই তুমি একটা স্বার্থপর, শুধু নিজের স্বার্থ টা দেখো। যাই হোক তোমার সাথে কথা বলে নিজের মুখ নষ্ট করতে চাই না, আমি হসপিটালে যাচ্ছি।

সাহিল একবার আহিয়ার যাওয়ার পানে চেয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

_________________________🍁

সিঙ্গাপুরের একটি দালানের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটি ছেলে হাতে থাকা ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে,এক হাত দিয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছে। ছবিটাতে একবার চুমু খেয়ে বলে,,

_ চিন্তা করো না মায়াবতী আমি আসছি খুব শীগ্রই, তোমার সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে আমি তোমায় আমার মনের রানী করে নিতে চাই। তোমার ঐ কাজল কালো চোখের প্রেমে পড়েছি সেই সাতেক বছর আগেই। কখনো বলার সাহস হয়ে উঠে নি কিন্তু এবার আর আমি কোনো বারন শুনবো না তেমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো, আই প্রমিস। দেখা হচ্ছে আমার প্রিয় ভ্রমর তোমার সাথে।

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন লাগলো পর্বটা কমেন্ট করে জানাবেন,হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here