কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব৭ #Raiha_Zubair_Ripte

0
487

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৭
#Raiha_Zubair_Ripte

সাইফা বেগম মাংসের এক টুকরো মুখে নিয়ে যেইনা গিলতে যাবে সাথে সাথে উল্টি দিয়ে মুখ থেকে ফেলে দিলো। মাংসে মাত্রাহীন পরিমান মরিচ দেওয়া হয়েছে,যা খাওয়ার উপযোগী না,সাইফা বেগম এক এক করে সব খাবার টেস্ট করলো,ডালে লবন বেশি,মাছ ভাজার ঢাকনা টা উঁচু করে দেখে মাছ একদম পুড়িয়ে কালো করে ফলেছে,ভাতের পাতিলের কাছে গিয়ে দেখে ভাত গুলো একদম নরম হয়ে গেছে।

সাইফা বেগম রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরশিয়ার দিকে,আরশিয়া সাইফা বেগমের তাকানো দেখে ভয়ে চুপসে যায়। আরশিয়া কে একবার পর্যবেক্ষণ করে কাট কাট গলায় শুধায়,,

_ এগুলো কি রান্না করছো তুমি,কোনোটায় লবন বেশি তো কোনোটায় ঝাল,আর মাছ গুলো কি মানুষ এভাবে ভাজে, দেখো তো পুড়িয়ে ফেলছো,আর সামান্য ভাত টাও কি রান্না করতে পারো না,বিয়ে করার যখন এতোই শখ জানতে না শশুর বাড়িতে গিয়ে কাজ কর্ম করতে হবে। শুধু বসে বসে খেতে আসছো নাকি।

সাইফা বেগমের এমন কঠোর কথাগুলো শুনে আরশিয়ার আঁখি জোড়া ভিজে উঠে,শীতল কন্ঠে সাইফা বেগম কে জানায়,,

_ আসলে দাদি আমি তো কখনো রান্না ঘরে ঢুকি নি,জানি না কিভাবে রান্না করতে হয়,আজ ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রান্না করছি।

_ তোমার এসব বাহানা তো আমি শুনতে চাই নি, ভাগ্যিস আমি রান্না ঘরে এসেছিলা বলেই তোমার এই কান্ডকারখানা দেখলাম,হাতে আর তোমার ঘন্টা খানেকের মতো সময় আছে, এখন কিভাবে তুমি ডাইনিং এ কাবার আনবে সেটা আমি জানি না। টাইম মতো যদি খাবার সামনে না পাই তাহলে বুঝতে পারবে আমি কে।

কতাগুলো বলেই রান্না ঘর ছেড়ে চলে যায় সাইফা বেগম।

আরশিয়া ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে এই এক ঘন্টার ভেতরে এতো সব আয়োজন করবে। হাতের কাছে ফোনটা নিয়ে সাহিল কে ফোন করে আরশিয়া।

সাহিল সবেই উঠে দাঁত ব্রাশ করে বেড়িয়েছে ওয়াশরুম থেকে, বিছানায় থাকা ফোনের রিংটোনে আওয়াজ পেয়ে বিছানার কাছে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আরশিয়া ফোন করেছে, ফোনটা রিসিভ করে আরশিয়াকে শুধালো,,

_ কি ব্যাপার এক বাসাতেই থেকে এভাবে ফোনে কল করলা কেনো।

_ সাহিল শুনো না অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে,

একে একে সব ঘটনা সাহিল কে শোনালো আরশিয়া। সব শুনে সাহিলের বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে আসে কাট কাট গলায় শুধায়,,

_ তুমি কি সামান্য রান্নাটাও পারো না ডিজগাস্টিং, অনলাইনে অর্ডার করো খাবার,আর পেছনের গেট দিয়ে আনবা দ্যান ওগুলো সার্ভ করবা।

আরশিয়া ওকে বলে সাথে সাথেই অনলাইনে অর্ডার করে খাবার। খাবার অর্ডার করতে পেরে আরশিয়া একটা জয়ের হাসি দেয়।

অপর পাশে কেউ দরজার আড়াল থেকে সাহিলের কথপোকথন শুনে ভিলেনি একটা হাসি দিয়ে সরে যায় দরজার পাশ থেকে।

______________________

এয়ারপোর্ট থেকে সবাই সোজা মিহিকা দের বাসায় আসে। বাসায় এসে টুকটাক কথাবার্তা বলে যে যার ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

আয়ুশ ফ্রেশ হয়ে তার লাগেজ থেকে একটা গিফট বক্স আর কিছু চকলেট বক্স নিয়ে সোজা মিহিকার রুমের সামনে চলে যায়।

মিহিকা সবে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাচ্ছিলো হাতে পায়ে,দরজায় টোকা পড়ায় বিছানায় থাকা ওড়না টা নিয়ে ভালো মতো নিজেকে ঢেকে দরজা খুলে দেয়।

আয়ুশ দরজার সামনে তার মায়াবিনী কে দেখে থমকে যায়,চুল গুলে ছাড়া কমেড় অব্দি, ভালোমতে চুল গুলো মুছে নি যার জন্য ফ্লোরে ফোঁটা ফোঁটা পানি,মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম টাও যেনো তার সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

দরজার সামনে আয়ুশকে এভাবে থমকে যেতে দেখে আয়ুশের মুখের সামনে হাত নিয়ে তুড়ি বাজায়।

মিহিকার তুড়ি বাজানো তে আয়ুশের ধ্যান ভাঙ্গে।

_ কি ব্যাপার আয়ুশ ভাই কই হারায় গেলে তুমি, আসো ভেতরে আসো।

আয়ুশ হুম বলে মিহিকার ঘরে ঢুকে। বিছানায় আয়েশ করে বসে মিহিকাকে সরোষ চোখে একবার দেখে বিরস গলায় বলে,,

_ এই নে ফকিন্নি তোর পাঁচ রকমের চকলেট। বলে চকলেটের বক্সটা এগিয়ে দেয়।

মিহিকা বক্স টা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।

_ কি রে তুই না চকলেট লাভার ছিলি তাহলে চকলেট গুলে রেখে দিলি ক্যান,

_ আমি কি এখনো পিচ্চি নাকি যে ছোটদের মতো চকলেট খাবো।

আয়ুশ মিহিকার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে নৈঃশব্দ্যে হাসে।

আয়ুশের হাসি দেখে মিহিকা ভ্রু কুঁচকায়।

_ তুমি হাসছো কেনো আয়ুশ ভাই, আমি কি কোনো জোক্স বলছি নাকি।

কোনোরকমে হাসি থামিয়ে মিহিকাকে বলে,,

_ এটা জোক্স ছিলো না তো কি ছিলো,তুই তো এখনো সেই পিচ্চি যার নাক টিপলে দুধ বের হয় ওহ সরি দুধ না হিনুত বের হয়।

আয়ুশের কথা শুনে নাক ছিটকে দূরে সরে যায়।

_ ছিঃ আয়ুশ ভাই কি সব কথা বার্তা বলেন,খা চ্চর।

_ সত্যি কথার ভাত নেই আজকাল, আচ্ছা যা বাদ দিলাম বল কি পছন্দ করিস তাহলে এখন।

মিহিকা কিছুক্ষণ ভেবে তার পর আয়ুশকে শুধায়,,

_ আয়ুশ ভাই আমায় এখন হাঁটতে নিয়ে যান না,আমি এই রাতে একটু ঘুরতে চাই। দেখেন না কি সুন্দর ওয়েদার রাস্তায় মানুষজন ও কম থাকবে ঐ যে তিন রাস্তার মোড়ে যে খোলা মাঠ টা আছে না সেখানে যাবো।

আয়ুশ কিছুক্ষণ ভেবে বলে আচ্ছা তবে একটা শর্ত আছে।

আয়ুশের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে কি শর্ত।
আয়ুশ হাতে তাকা একটি প্যাকেট মিহিকার হাতে ধরিয়ে দেয়,মিহিকা একবার প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আবার আয়ুশের পানে চায়।

_ এটায় একটা ড্রেস আছে তোর জন্য নিজে পছন্দ করে নিয়ে এসেছি,যদি যেতেই চাস তাহলে এটা পড়ে আয়।

মিহিকা আয়ুশের কথা শুনে প্যাকেট খুলে দেখে একটা সুন্দর কালো কালারের জরজেট শাড়ি। তার উপর ছোট ছোট পাথর বসানো, শাড়িটা দেখে মিহিকা আয়ুশকে শোধায়।

_ তুমি আর কালার পেলে না আয়ুশ ভাই,আমি এমনিতেই কালো তার উপর এই কালো শাড়ি পড়লে আমায় আর দেখতে পাওয়া যাবে না।

মিহিকার কথা শুনে কপাট রাগ দেখিয়ে মিহিকাকে শুধায়,

_ একটা চ*ড় মেরে না বুঝিয়ে দিবো। আর আমি জানি আমার ভ্রমর কে কোন কালারে মানাবে, সো এমন সেন্টি মার্কা কথা না বলে যা রেডি হ,সময় মাত্র ত্রিশ মিনিট।

কথাগুলো বলেই মিহিকার রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আয়ুশ।

মিহিকা একবার আয়ুশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রেডি হতে চলে যায়।

____________________

বাড়ির পেছনের গেটে দাড়িয়ে আছে খাবার নিয়ে আরশিয়া এখন পেমেন্ট করবে কিভাবে সেই চিন্তায় রয়েছে। আরশিয়ার কাছে এক কানাকড়ি ও নেই। হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে সাহিল কে ফোন করে পেছনের গেটে আসতে বলে।

সাহিল আরশিয়ার ফোন পেয়ে পেছনের গেটে এসে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে যেয়ে দেখে টাকা নেই,পুরো মানিব্যাগ খুঁজেও কোনো কানাকড়ি ও পেলো না। মানিব্যাগে থাকা কার্ড নিয়ে চলে গেলো কার্ড থেকে টাকা তুলতে।

কার্ড দিয়ে যতোবারই টাকা তুলতে যায় ততোবারই ফলাফল শূন্য তার কার্ডে এক টাকাও নেই। সাহিল বিষয় টা বুঝতে পারছে না তার একাউন্টের টাকা মানিব্যাগের টাকা গুলো সব গেলো কই।

ডেলিভারি ম্যান এবার বিরক্ত হয়ে বললো,,

_ আজব ব্যাপার ম্যাম আপনি কাবার অর্ডার করছেন আমি নিয়ে আসছি আপনি পেমেন্ট টা করতেছেন না কেনো।

_ আর একটু দাঁড়ান ভাই এক্ষুনি টাকা দিয়ে দিবো,

বলতে বলতেই সামনে তাকিয়ে দেখে সাহিল আসছে। খুশি মনে ডেলিভারি ম্যানকে শুধায়,

_ ঐ যে চলে আসছে আপনার টাকা আপনি পেয়ে যাবেন।

সাহিল এগিয়ে আরশিয়ার কাছে আসলে আরশিয়া বলে,,

_ সাহিল উনাকে উনার পাওনা টা দিয়ে দাও না অনেকক্ষণ ধরে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে।

সাহিল তপ্ত শ্বাস ফেলে জানায় তার একাউন্ট বা মানিব্যাগ কোথাও তার এক পয়সা ও অবশিষ্ট নেই।

_ আমি বুঝতে পারছি না আরশিয়া আমার একাউন্ট মানিব্যাগের সব টাকা গুলো কই গেলো।

পেছন থেকে এক কন্ঠ ভেসে আসে,

_ তোমার একাউন্ট থেকে শুরু করে মানিব্যাগের সব টাকা আমি নিয়ে নিয়েছি।

কন্ঠের আওয়াজ শুনে মিহিকা সাহিল পিছন ফিরে দেখে……

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আচ্ছা মানুষ টা কে হতে পারে যে সাহিলের টাকাগুলো নিয়ে নিলে? কাল সময় পাই নি এর জন্য গল্প দিতে পারি নি,আর দুঃখিত না জানিয়ে দেবার জন্য অনেকে হয়তো অপেক্ষারত ছিলেন গল্পের জন্য, এমন ভুল আর হবে না গল্প দিতে না পারলে নেক্সট টাইম থেকে জানিয়ে দিবো। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here