কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব৯ #Raiha_Zubair_Ripte

0
415

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৯
#Raiha_Zubair_Ripte

সকাল সকাল অভি চলে আসে আহিলের বাড়ি। বসার রুমে ঢুকতেই দেখতে পারে সোফায় আসমানী বসে আছে। আসমানী কে সালাম দিয়ে আহিলের কথা জিজ্ঞেস করলে আসমানী জানায় আহিল ঘরে আছে।

অভি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা আহিলের ঘরে চলে যায়। আহিলের ঘরে এসে দেখে আহিল এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। দু এক বার ডাকাতেও যখন আহিল সাড়াশব্দ না দেয় তখন পাশে থাকা বোতল টা থেকে পানি বের করে আহিলের মুখে ছিটিয়ে দেয়।

মুখের উপর পানি পড়ায় ঘুম থেকে ছিটকে উঠে পড়ে আহিল। সামনে থাকা অভিকে দেখে বিষয় টা বুঝতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে আহিলের। যখন সবটা বুঝতে পারলো তখন নিশ্চুপে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

_ আর ভালো হলি না তুই,থাক ফ্রেশ হয়ে আসি একসাথে ব্রেকফাস্ট করে বের হবো।

আহিল অভিকে কথাটা বলে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।

মিনিক দশের মধ্যে আহিল ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে চলে আসে। মাথাটা মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে অভির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,,

_ কি রে তোর মুড এমন অফ ক্যান,

অভি মুখটাকে কাচুমাচু করে বিছানার এক প্রান্তে বসে।

_ আর বলিস না মা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে কাল পাত্রী দেখতে যাবে।

_ এটা তো সুখবর তারাতাড়ি বিয়ে টিয়ে করে চাচ্চু ডাক শোনা,চিন্তা করিস না হানিমুনের জন্য সব ব্যাবস্থা করে দিবো।

_ ধুর তুই মজার ছলে নিচ্ছিস কেনো,আমি সিরিয়াস বলতেছি।

আহিল এবার পিছু ফিরে অভির সোজাসুজি হয়।

_ তা আমি কখন মজার ছলে বললাম আমিও তো সিরিয়াস ই বললাম।

_ কিন্তু আমি তো এখনি বিয়েটা করতে চাই না। তুই একটু বুঝা না আম্মু কে তুই বললে নিশ্চয়ই শুনবে।

_ তুই বিয়ে করবি না ক্যান,আর কাল তো পাত্রী দেখতে যাচ্ছে আর দেখতে গেলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না,কাল আগে গিয়ে দেখ কি হয় তার পর অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নিবো, চল এখন।

কথাটা বলেই অভিকে নিয়ে নিচে নামলো আহিল। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে আসমানী খাবার সাজাচ্ছেন আর আহিয়া মাকে হেল্প করছে।

আসমানী অভি আর আহিল কে দেখে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে খাবার টেবিলে বসতে বললো।

আহিল নিজে বসে অভির চেয়ার টান দিয়ে অভি কে বসতে বললো। অভিও আর দ্বিমত করে নি।

আহিল খাবারের প্লেটটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে মা-কে প্রশ্ন করে।

_ মা খাবার গুলো কে বানালো?

আসমানী খাবার জলের পানিটা আহিলের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলো,,

_ কে আবার আমি রান্না করছি।

_ কেনো তুমি রান্না করতে গেছো ক্যান,রান্না থেকে শুরু করে বাড়ির সব কিছু না দেখার কথা তোমার ছেলের বউয়ের।

_ আমি কি পা’গল নাকি, ঐ মেয়ের হাতে আমি আমার সংসার ছেড়ে দিবো। আর কাল যেই কান্ড ঘটালো তার পর আমি আর ওকে আমার রান্না ঘর দিচ্ছি না, তারা তাদের টা রান্না করে খাবে,আমি আমার ছেলে মেয়েকে তাদের জন্য না খাইয়ে রাখতে পারবো না।

_ আচ্ছা বাবা কই তাকে তো দেখছি না,

_ তোর বাবা আজ সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে অফিসে জরুরি কাজ থাকায়।

_ আর দাদি কই?

_ তোর দাদি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিতে গেছে। এই অভি তুমি দেখি কিছু খাচ্ছো না কি চিন্তা করো এতো।

অভি একটা মেকি হাসি দিয়ে জানায়,,

_ না আন্টি কিছুই হয় নি,খাচ্ছি তো।

আহিল একবার অভির দিকে চেয়ে নৈঃশব্দ্যে হেঁসে খাওয়ায় মনযোগ দিলো।

_____________________

কাল রাতে অনেক দেড়ি করে বাড়ি ফেরায় মিহিকা শাড়ি পড়েই ঘুমিয়েছিলো,হঠাৎ বসার ঘর থেকে অচেনা গলার আওয়াজ শুনে আচমকা ঘুম উবে যায় মিহিকার। শাড়ি টার আঁচল কোনোরকম কাঁধে উঠিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে।

অভি আর আহিল মিহিকাদের বাসায় এসে কলিং বেল বাজালে মিহিকার চাঁচি মমতাজ বেগম খুলে দেয়। দরজা খুলে সামনে অচেনা মুখ দেখে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় তারা আরমান সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছে।

মমতাজ বেগম কথা না বাড়িয়ে তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে রান্না ঘরে যায় শরবতের ব্যাবস্থা করতে।

আহিল আর অভি সোফায় বসে পড়ে নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথপোকথন করে

এই অভি জানিস সেদিন না এই বাড়ির ছাঁদেই একটা মেয়েকে দেখেছিলাম,বৃষ্টি তে ভিজতে ছিলো মুখ টা দেখতে পারি নি কথা টা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না আহিল, কথাটা মুখের মধ্যেই আবদ্ধ রইলো, হুট করে সিঁড়ির দিকে চোখ যেতে চোখ জোড়া আটকে যায় আহিলের। সামনে থাকা মেয়েটিকে দেখে তার হৃদয়ে আচমকা হালকা ব্যাথা হতে লাগলো। হার্টবিট টাও দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে,শাড়ির কুঁচি গুলো এলোমেলো হয়ে দলা পাকিয়ে আছে। চুলগুলো উপরে কাকড়া দিয়ে কোনো রকমে আঁটকে রেখেছে যার ফলে সামনে সাইডে চুল বেয়ে পড়ে গেছে।

আহিলের এমন থমকানো চাহনি দেখে অভিও সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহিকা।

মিহিলা সবেই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো ড্রয়িং রুমের সোফায় চোখ যেতেই তার চোখ জোড়া থমকে যায়,”এ সে কাকে দেখছে সেদিনকার ছোঁড়া দুটো তার বাড়ি এসেছে”

কোনোরকম তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

অভি আর আহিল মিহিকাকে এভাবে দৌড়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে দুজন ভরকে যায়।

_ এই আপনারা সেদিনকার দুই বদ ছেলে না,আপনারা আমার বাসায় কেনো,

আহিল ভ্রু কুঁচকে মিহিকাকে পরখ করে শান্ত গলায় শুধায়,,

_ তোমার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছি কিছু কথা ছিলো তার সাথে।

মিহিকা একবার আড় চোখে দেখে আবার শুধায়,,

_ বাই এনি চান্স আপনরার দুজন কি আমার বাবার অফিসে কাজ করনে।

মমতাজ বেগম রান্না ঘর থেকে পাতি লেবুর শরবত এনে অভি আর আহিলকে দেয় খেতে। অভি সবেমাত্র মুখে নিবে আর তখনই মিহিকার কথা শুনে অভির মুখ থেকে শরবত ছিটে ফ্লোরে পড়ে যায়।

মমতাজ বেগম তড়িঘড়ি করে অভির মাথায় পিঠে হাত বুলোয়।

_ এতো কথা না বলে তোমার বাবাকে ডাক দাও,আর ঘরে যাবার পথে একবার নিজেকে দেখে নিয়ো।

কথাটা বলেই শরবত টুকু খেয়ে নেয়।

মিহিকা একটা ভেংচি কেটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আরমান সাহেবের রুমে গিয়ে আরমান সাহব কে জানায়,নিচে কেউ এসেছে তার সাথে দেখা করার জন্য। কথাটা বলে নিজের ঘরে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হা হয়ে যায় মিহিকা,ছিঃ ছিঃ আমি কিনা এভাবে পাগলের বেশে ওদের সামনে গেছিলাম। তড়িঘড়ি করে আলমারি থেকে হালকা পিংক কালারের কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।

আরমান সাহেব নিচে এসে আহিলকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়।

আহিল আরমান সাহেব কে সালাম দেয়। আরমান সালমের জবাব দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।

_ তা কি মনে করে আমার বাসায় আসলে,

_ আসলে আঙ্কেল সেদিনকার ঘটনার জন্য যতোই ক্ষমা চাই না কেনো কম হয়ে যাবে। সাহিলের করা ভুলের জন্য বাবার সাথে বন্ধুত্ব টা কেনো নষ্ট করছেন।

_ আমার মেয়ের সম্মানের থেকে বন্ধুত্ব কখনোই আমার কাছে বড় হবে না। তোমার ভাই যা করেছে তাতে আমি তোমার বাবার সাথে সেই আগের মতো প্রানখুলে কথা বলতো পারবো না।

_ কিন্তু আঙ্কেল সাহিল যা করছে সেটার জন্য বাবা কেনো তার বন্ধুর থেকে দূরে থাকবে। বাবা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয় নি কয়দিন আগেই হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে,এখন যদি আপনার সঙ্গ পেতো তাহলে বাবা একটু স্বস্তি পেতো।

আহিলের কথা শুনে চমকে উঠে,,

_ কিহ! শফিক হসপিটালে এডমিট ছিলো কই আমায় তো একবার ও জানালে না তোমরা।

_ কোন মুখে জানাতো তার ছেলে যেই কাজ করছে তার ফলে আপনার সামনে দাঁড়াতে বাবা সাহস পাচ্ছে না। বাবা সারাক্ষণ অনুসূচনায় থাকে,

_ আচ্ছা আমি আজ একবার দেখা করবো নি তোমার বাবার সাথে। তা চলো কিছু খাওয়া যাক।

এর মাঝেই উপর থেকে নেমে আসে আরুশি বেগম, আর টিপু খান। আরুশি বেগম নিচের দুটো ছেলেকে চিনতে না পেরে আরমান কে জিজ্ঞেস করে এরা কারা।

আরমান আহিল আর অভির পরিচয় দিয়ে দেয়। আরুশি বেগমের মন খা করে উঠলো মেয়ের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার জন্য, তার মেয়ে কেমন আছে,কি দিয়ে কি করছে, জিজ্ঞেস করার জন্য উদ্ধত হলে টিপু খানের চোখের চাহনি দেখে সেই আশা টাকে দমিয়ে রাখে।

আহিল আর অভি অনেক বলেকয়ে ও আরমান সাহেব কে আটকাতে পারে না তিনি তাদের না খাইয়ে ছাড়বেই না। অতঃপর আহিল আর অভি বসে পড়ে টেবিলে।

মিহিকা সবে গোসল করে মাথায় টাওয়েল টা পেঁচিয়ে নিচে নামে ব্রেকফাস্ট করার জন্য।

টেবিলের সামনে এসে দেখে মাত্র একটা চেয়ারই ফাকা আর সেটা আহিলের পাশেই,একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে চেয়ার টা টেনে বসে পড়ে।

আহিল মিহিকাকে শুনিয়ে শুনিয়ে অভিকে বলে,,

_ জানিস অভি মেয়েরা যদি জানতো গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।

অভি কিছু না বোঝায় হা করে তাকিয়ে থাকে আহিলের দিকে, টাওয়েল আসলো কই থেকে আর বিয়ে,জন্মদিন বাড়িই বা কই থেকে আসলো।

মিহিকা আহিলের কথা শুনে কটমট করে তাকায় আহিলের পানে, আহিল সেই চাহনি কে দেখেও না দেখার ভান করে ব্রেডে কামড় বসায়।

_______________

আরশিয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যায় খেতে। টেবিলের সামনে গিয়ে প্লেট উঁচু করে দেখে সব প্লেট খালি কোনো খাবার নেই। রান্না ঘরে গিয়ে পাতিল হাতরে দেখে সেটাতেও খাবার নেই।

আসমানী কেবলই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যাবে, রান্না ঘরে চোখ যেতেই দেখে আরশিয়া কিছু খুঁজছে।

_ খুঁজে লাভ নেই কোনো খাবার নেই। তোমাদের দুজনের জন্য খাবার বানানো হয় নি, চাউল,ডাউল কিনে নিজেরা রান্না করে খাও।

কথাটা আসমানী আরশিয়াকে শুনিয়ে বাগানে চলে যায়।

আরশিয়া দৌড়ে উপরে উঠে সাহিল কে জানায় ব্যাপারটা।

সাহিল সবে পানি খাচ্ছিলো আরশিয়ার কথা শুনে হাতে থাকা গ্লাসটা সোজা ফ্লোরে ফেলে দেয়, মূহুর্তে গ্লাসটা ভেঙে কয়েক টুকরো তে পরিনত হয়।

_ এ বাড়ির লোকজন কি মনে করেছে তারা ভাত না দিলে কি খেতে পারবো না।

কথাটা বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে কল লাগায়।

ওপর পাশের ব্যাক্তি ফোনটা ধরলে বাজখাঁই গলায় বলতে শুরু করে সাহিল,,

_ আপনার সমস্যা টা কি আপনার কথা মতো আরশিয়া কে বিয়ে করলাম, আপনি তো আপনার কথা রাখলেন না, আমার পাওনা টাকা গুলো আমায় দিচ্ছেন না কেনো। টাকা না দিলে কিন্তু আরশিয়া কে ডিভোর্স দিয়ে দিবো আমি বলে রাখলাম।

ওপর পাশ থেকে ভেসে আসে,,

_ তেমার টাকা তুমি পেয়ে যাবা,বিকেলে মিট করো তেমার বাড়ির পাশের খোলা মাঠ টাতে। আর নেক্সট টাইম আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে আসবে না একদম শেষ করে ফলেবো,আর আরশিয়াকে ডিভোর্স দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো,এ কথা আরেকবার মুখ থেকে বের হলে জিহ্বা টা টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবে।

বলেই অজানা লোকটি ফোন রেখে দিলো।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, বড়সড় একটা কমেন্ট করে যাবেন কেমন লাগছে গল্পটা। আমার পাঠকবৃন্দ রা সাড়া দিয়ে যাবেন কেমন? হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here