#শুধু_তোমায়_ভালোবেসে
#পর্ব_১১
#সাদিয়া_রহমান_হাফসা
____________________
দুইটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলার গতি থামিয়ে পেছন ঘুরে অত্যন্ত শান্ত স্বরে সবার উদ্দেশ্যে আদনান বললো,
– বাড়িতে উপস্থিত দুই না বলে চলে আসা মেহমানদের বলো আদনান সাখাওয়াত তাদের স্মরণ করেছে। তারা যেন আমার রুমে আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমি নিজে তাদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাবো।
রাইদাহ উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত তালি দিয়ে বললো,
– আমি যাচ্ছি ভাই!
•
•
কেঁপে উঠা ঠোঁটের কোণের তরল র/ক্ত খুব সতর্কতার সাথে মুছে দিলো আদনান। ব্যথায় কুকিয়ে ওঠছে আরাধনা, এখনও হেঁচকি তুলে কাঁদছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে সেই কান্না দেখছে আদনান। বুঝতে চাচ্ছে এই কান্নার অর্থ, ব্যথার কান্না নাকি অভিমানের প্রখরতার ঝঞ্জাট! কেটে যাওয়া হাত, কপাল আর তারপর ঠোঁটের কোণে আলগোছে নিজের ওষ্ঠের উষ্ণ পরশ একে দিয়ে ধীর আওয়াজে জিজ্ঞেস করলো,
– অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আরুপুতুল?
কান্না থামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে চাইলো আরাধনা। তার ডাগরডাগর দুই চোখে প্রশ্নের লুকোচুরি দেখে আদনান ভ্রূ নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
– কখন এসেছো আদনান?
রেশমির এমন হুট করে ঘরে চলে আসাতে ক্ষিপ্ত হলো আদনান। নিজেকে যথাসম্ভব সংযত করে বিছানায় বসে থাকা আরাধনার উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে তার কপালে হাত দিয়ে গায়ের তাপমাত্রা চেক করার ভঙ্গিতে বললো,
– তোমার মতো একজন এডুকেটেড মেয়ের থেকে এমন ম্যানারলেস আচরণ আশা করিনি রেশমি! তোমার নিশ্চয়ই অজানা না যে কারো ঘরে প্রবেশ করার আগে নক করে পারমিশন নিতে হয়! ঘরটা যদি হয় কোনো পুরুষের তবে পারমিশন নেওয়াটা বাধ্যকতামূলক। আর ঘরটা যদি হয় আদনান সাখাওয়াতের তাহলে সে ঘরে তার মা, বউ, বোন ছাড়া অন্য কোনো নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ।
আরাধনার সামনে আদনানের এমন ঠান্ডা মাথায় করা অপমানে অসন্তোষ হলো রেশমি। গলা ঝেড়ে বললো,
– রাইদাহ বললো তুমি নাকি আমায় ডাকছো?
– ঘরের বাইরে বের হও। দরজায় কড়া নেড়ে পারমিশন নিয়ে তারপর ভেতরে আসবে।
– আদনান প্লিজ!
– বাইরে গিয়ে পারমিশন নিয়ে ভেতরে এসো রেশমি। ফাস্ট!
ততক্ষণে রুমকি সহ বাড়ির অন্যেরাও চলে এসেছে। মেয়ের পাশে দাড়িয়ে রুমকি ন্যাকা স্বরে বললো,
– কি হয়েছে আদি? মনে হচ্ছে রেশমির সাথে আজ খুব অভিমান হয়েছে! বকাঝকা করছিস যে! কি করেছে রেশমি?
আদনান কোনো ভণিতা না করে সোজাসাপটা জবাব দিলো,
– বকাঝকা করছি না খালামুনি আপনার মেয়ে ম্যানার্স ভুলে গেছে তাই বড় ভাই হিসেবে তাকে ম্যানার্স শেখাচ্ছি। রেশমি! আমি যতদূর জানি তুমি শ্রবণ প্রতিবন্ধী নও তাই আমি তোমাকে যা বলেছি তা তুমি শুনতে পেয়েছো রাইট!?
অপমানে নীলাক্ত হয়ে দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়ায় রেশমি। হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে দরজায় টোকা দিয়ে বললো,
– আসতে পারি?
আরাধনার দিকে আরো ঝুঁকে দাড়ালো আদনান। কপালের সামনে চলে আসা অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,
– ইয়েস কাম ইন।
মেয়ের সঙ্গে আদনানের এহেন ব্যবহারে রুমকি বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ করলো না তবে সে মেয়ের উপর অনেকটা চটে গেছে। এখানে আসার আগে সে বারবার বলেছিলো এমন কিছু না করতে যার জন্যে বাড়ির সবাই রেগে যায় স্পেশালি আদনান। কিন্তু তার উগ্র মেজাজী মেয়ে তার কথার উল্টো টাই করলো। হাসি দিয়ে রুমকি জিজ্ঞেস করলেন,
– আমাদের এই অসময়ে ডেকে পাঠালি যে! কিছু বলবি?
– হ্যাঁ অবশ্যই। কারণ ছাড়া আদনান সাখাওয়াত কখনো বেহুদা কাজ করে না তা আপনারা জানেন নিশ্চয়ই? অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।
রেশমি কিছু না বলে বিনাবাক্যে আদনানের পেছনের দেওয়ালে টাঙানো বিশাল ছবিটার দিকে চেয়ে আছে। রুমকি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো,
– কি কথা?
অতঃপর আরাধনার হাত ধরে নিজের বাম পাশে এনে দাঁড় করিয়ে আদনান শান্ত শীতল কন্ঠে রেশমির দিকে তাকিয়ে রুমকিকে বললো,
– খালামুনি, মিট মাই বেটার হাফ মাই অফিসিয়ালি ওয়েডেড ওয়াইফ মিসেস আরাধনা আদনান সাখাওয়াত।
কয়েক সেকেন্ডের জন্যে যেন রেশমির পুরো পৃথিবী থমকে গেলো। বিস্মিত হয়ে বললো,
– তোমার ওয়াইফ!
আদনান এবার রেশমির মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। প্যান্টের পকেটে দুইহাত গুঁজে পূর্বের ন্যায় শান্ত স্বরে বললো,
– হ্যাঁ, আমার ওয়াইফ। যাকে আমি প্রজাপতির মতো যত্ন করে আগলে রেখেছি। যাকে তুমি কয়েকঘন্টা আগে আমার ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলার স্পর্ধা করেছো। আমি জানতে চাইছি রেশমি, তুমি কিসের অধিকারে আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রীকে আমার ঘর থেকে টেনে বের করলে! আই ওয়ান্ট মাই অ্যান্সার রাইট নাও!
শেষ কথাটা আদনান এতটা জোরে চেচিয়ে বললো যে তার চিৎকারে মুহুর্তেই বাড়ির গুমোট পরিবেশ বদলে থমথমে হয়ে গেলো।
– এটা কি করে হতে পারে! এই মেয়ে তোমার ওয়াইফ কিভাবে হতে পারে? তোমার তো বিয়েই হয়নি? তুমি কেন বিয়ে করবে? আদনান!?
রেশমির এমন অহেতুক কথায় আপনা-আপনি কপাল কুঁচকে গেলো আদনানের সাথে বিরক্তও হলো বটে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে যথেষ্ট ভদ্র ভাবে বললো,
– এটা হওয়ার ছিলো তাই হয়েছে। আমি ওকে ভালোবাসি তাই পরিবারের সকলের মত নিয়ে আরাধনাকে বিয়ে করেছি। তোমার এতো আপত্তি হচ্ছে কেন?
রেশমি দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো,
– না এটা সত্যি না।
– মিথ্যা কেন মনে হচ্ছে?
– বিকজ আই লাভ ইউ আদনান! তুমি কিকরে আমায় চিট করতে পারলে বলো? কিকরে বিয়ে করলে এই ক্ষেত মেয়েটাকে।
আদনান রেগে ধমকে বললো,
– মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ রেশমি! ডোন্ট ফরগেট দ্যট হু ইজ সি! আ’ম ইউর এল্ডার কাজিন ব্রাদার। সি ইজ মাই ওয়াইফ সো ইউ শুড রেসপেক্ট হার।
রেশমি চিৎকার করে বললো,
– রেসপেক্ট মাই ফুট। জাদু কারিণী আমার উচিৎ ছিলো তোর কপাল না ফাটিয়ে মাথাটাকেই ফাটিয়ে দেওয়া।
এ কথা বলেই রেশমি হিংস্র হয়ে তেড়ে যায় আরাধনার দিকে। রেশমি কোনো ক্ষতি করার আগেই আদনান সামনে এসে আরাধনাকে আড়াল করে দাড়িয়ে রেশমির হাত ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো,
– আমার বাবা-মায়ের দেওয়া শিক্ষার উছিলায় তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো। ট্রাস্ট মি! নইলে এতক্ষণে আদনান সাখাওয়াতের কলিজায় আঁচড় কাঁটার অপরাধে তোমার জান কবজ করে ফেলতাম আমি। আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করিও না। গেট লস্ট ফ্রম মাই হাউস রাইট নাউ! (জোরে চেচিয়ে)
•
রুমকি আর সহ্য করতে না পেরে রেশমিকে টেনে জোর করে নিয়ে চলে গেলো। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় আদনান। আরাধনা ভয়ে একদম চুপসে গেছে। আঁখি সাখাওয়াত ছেলের এমন আচরণ দেখে হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে আছে। রাইদাহ-র চোখেমুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। চোখ খুলে আরাধনার হাতের বাধন আলগা করে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে মায়ের সামনে এসে আদনান বললো,
– সরি মামনী। মাফ করে দাও প্লিজ! আর কেউ না জানুক তুুমি তো জানো তোমার ছেলে এর আগে কখনো এমন করেনি। আর আজ কেন করলো সেচটা তোমার ছেলে নিজেও জানেনা।
আঁখি সাখাওয়াত ছেলেকে অভয় দিয়ে বললো,
– তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস। এটা তো আমার করা উচিৎ ছিলো।
কথার মাঝেই রাইদাহ এসে বললো,
– ভাই অনেক হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি রেডি হও। সেলিব্রেট করতে হবে না!?
– কিসের সেলিব্রেট?
– ওহ-হো ভাই তোমার কিছুই মনে থাকে না। কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হও তো সময় নেই। মামনী তুমি আমার সাথে এসো।
•
সবাই চলে গেলে আদনান ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আরাধনার সম্মুখে। ভয়ে চুপসে গুটি-শুটি হয়ে থাকা প্রিয়তমার চিবুকে হাত রেখে মুখটা উচু করে কয়েক পলক তাকিয়ে রইলো তার দিকে। আরাধনা চোখ পিটপিট করে খুলে সম্পূর্ণ দৃষ্টি মনোমত করলো আদনানের চোখের উপর। আদনান আরো একবার ঠোঁটে কোণের কেটে যাওয়া জায়গা অধরের উষ্ণ পরশ একে দিলো। শিহরণে আদনানের শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরে আরাধনা।
|
|
– মামা ঐ হোয়াইট রোজ বুক্যে টা দিন তো! (দুইজন একইসাথে)
দোকানদার মামা দুইজনের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বললো,
– এই তোড়া টার চাহিদা আজকে বেশি ছিলো ভাইগ্না-ভাগ্নি। এই একটা তোড়া-ই আছে। এখন তোমরা ঠিক করো কে ধরবা কে ছাড়বা ততক্ষণে আমি ঐদিকটা দেখি।
– দেখুন আমি লাইফে কখনো ফুলের দোকানে ফুল কিনতে আসিনি এই ফুলটা..আপ..নি? এই আপনি কি আমার বিনাপয়সার বডিগার্ড? শালা যেইখানে যাই না কেন ছায়ার মতো এসে হাজির! ছায়াও সবসময় সাথে থাকে না কিন্তু আপনি যেদিকে তাকাই সেদিকেই চলে আসেন। চায়ের কাপে আপনি, গাছের মগডালে আপনি, কবুতরের খোপে আপনি, ময়লাওয়ালার বেশেও সেদিন আপনাকে দেখে আই আ’ম তো অবাক!! আর এখন এই ফুলের দোকানেও আপনি!! কেন কেন কেন?
আফসান দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো,
– ওহ হো! এই কাউয়াঠুঁটি আমি সেইড বন্ধ ইউর দুই ঠোঁট! সারাটাদিন কাউয়ার মতো কা কা কা কা করা ছাড়া কি তোমার আর কোনো কামকাজ নাই? সাচ অ্যা বিরক্তিকর গার্ল!
•
থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বাড়িতে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সেইজন্য ডেকোরেশনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্যে বেরিয়েছে আফসান। আর ওদিকে মীর খাবার আর ড্রিংকস এর দিকটা দেখছে। ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার নজর আঁটকে যায় লাল-সাদা গোলাপের কম্বিনেশনের সুন্দর একটা কিউট ফুলের তোড়ার উপর। কেনার জন্যে দোকানদারকে বলার সময় আরো একজন সেই একই তোড়াটা চেয়ে বসে। আফসান তো মহাবিরক্ত! তার পছন্দের জিনিসে হস্তক্ষেপ! সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় কায়নাতের মুগ্ধতায় ছেয়ে যাওয়া মুখটা দেখে। আফসানের পছন্দ করা ফুলের তোড়াটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে না দেখেই অনুরোধের সুরে উপরোক্ত কথাগুলো বলতে শুরু করে কায়নাত কিন্তু যখনই তার নজর আফসানের উপর যায় নিমিষেই তার কথার ধরণ, রূপ, ভাবভঙ্গি পাল্টে যায় যা আফসানের মোটেও পছন্দ হয় না। তাই সে সকল ভালোলাগাকে সাইডে রেখে ঝগড়াটে হয়ে বললো,
– ফুল দিয়ে তুমি কি করবা? তোমার তো কোনো মুগ্ধ নেই তুমি হলে হে হে শিঙ্গেল! কিন্তু আমার মুগ্ধতা আছে তাই এই ফুল আমিই নেবো আর আমার মুগ্ধতাকে দেবো। মামা ফুলের দাম কত?
দোকানদার তাড়া দিয়ে বললো,
– তোমার জন্যে তিন হাজার টাকা ভাইগ্না।
কায়নাত চোখ কপালে তুলে বললো,
– এইটুকু ফুলের দাম তিন হাজার টাকা!? এটা তো ডাকাতি!
দোকানদার হেসে বললেন,
– কি যে বলেন ভাগ্নি!
আফসান কায়নাতকে টিটকারি মেরে দোকানদারকে বললো,
– আরে রাখো তো মামা। ও হলো হে হে শিঙ্গেল! এখনো রঙিন চশমা পড়ে নাই। ফুলটা দাও।
অবশেষে আফসানই জিতে গেলো। ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে শিস বাজিয়ে বললো,
– তুমি তো ইনভাইটেড। চলো একসঙ্গে যাই।
কায়নাত বাজখাঁই গলায় জবাব দিলো,
– আপনার মতো অসহ্য বেডার সাথে আমি জাহান্নামেও যেতে চাই না।
– জান্নাতে যেতে চাও?
•
•
– তিতির আমার অলিভিয়া আমি তোমার পাগল প্রেমিক অগি। কেন করো জেরির মতো ঝগড়া? আমি নই টম নই ডগি! তোমাকে ভালোবাসিয়া আমি যেতে চাই মরিয়া। ছেলেবেটি হবো আমি তোমার প্রেমে কবিতা লিখিয়া!
দাঁত কটমট করে বসে আছে তিতির। ঈশানের এমন বলদ মার্কা কবিতা শুনে তার ঈশানকে কাঁচা গিলে মন চাইছে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে গাড়ি থেমে গেলো মাঝপথে। ঈশান হকচকিয়ে ওঠে বললো,
– এএএ গ্রে/নে/ড হামলা! ঐ বো/মা মারছে! ওরে মইরা গেলাম।
তিতির এবার রাগের সপ্তম আকাশে থেকে লাফ দিয়ে নেমে ঠাস করে ঈশানের ঠোঁট চেপে ধরে বললো,
– শালা নোয়াখাইল্লা! বো/মা মারে নাই টায়ার পান্চার হইছে। যা গাড়ি ঠিক কর।
বউয়ের ঝাড়ি থেকে বাঁচতে অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে পড়লো ঈশান। নষ্ট টায়ারে জোরে একটা লাথি দিয়ে বললো,
– অশিক্ষিত টায়ার! তোর এত বড় সাহস তুই পান্চার হোস! তুই জানস কে আমি? আমার মতো শক্তিশালী একটা হ্যান্ডসাম ছেলের গাড়ির টায়ার হয়ে তুই কেমনে পান্চার হোস?
গাড়ির ভেতর থেকে তিতির ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দিলো,
– তোর মতো শক্তিশালীর শক্তির ওজন সইতে পারে নাই তাই পান্চার হইছে। এখানে টায়ারের কোনো দোষ নাই সব দোষ তোর।
•
•
গ্রে রঙের শাড়িতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে শ্যামবতী আরাধনাকে। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে একদম হালকা লিপস্টিক আর কপালে কাজল দিয়ে আঁকা ছোট্ট একটা টিপ। আয়নায় আরাধনার প্রতিবিম্বের দিকে কি যেন ভাবছে রাইদাহ। কিছু একটার ঘাটতি আছে সাজের মাঝে। হুট করে ভাবনায় মশগুল রাইদাহ-র হাতে নাড়া লেগে আরাধনার খোঁপা খুলে পিঠে ছড়িয়ে পড়লো তার ঢেউ খেলানো চুলগুলো। রাইদাহ লাফিয়ে উঠে বললো,
– ওয়াও ভাবী! এই জিনিসটার-ই তো কমতি ছিলো৷ ভাই তো আজ সব ফেলে তোমাকেই দেখে যাবে।
আরাধনা আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমাকে দেখবে! আমাকে এভাবে দেখলে আদনানের ভালো লাগবে?
– কেন লাগবে না? অবশ্যই লাগবে! কি মিষ্টি লাগছে তোমায় ভাবী!
রাইদাহ-র দুই হাত ধরে অনুনয়ের স্বরে আরাধনা বললো,
– তাহলে তুমি আমাকে রোজ এমন করে সাজিয়ে দেবে রাই? তাহলে আদনানের রোজ ভালো লাগবে!
আরাধনার অবুঝ প্রশ্নে মুচকি হেসে রাইদাহ বললো,
– ভাইকে অনেক ভালোবাসো তাই না ভাবী?
আরাধনা পুনরায় বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞেস করলো,
– ভালোবাসা! ভালোবাসা কি রাই?
– এটা তো আমি বলতে পারবো না! তুমি বরং ভাইয়ের থেকে জেনে নিও কেমন? এবার চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো চলো!
•
ছাদের উপর ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বেলুন, ফেস্টুন আর কাগজের ঘুড়ি দিয়ে অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে ছাদের চারপাশ। আদনান, আফসান, মীর, রৌদ্র, ইশান, তিতির, কায়নাত, নিশি সবাই আজ এখানে মিলিত হয়েছে। আড্ডা মাস্তি চলছে একে-অপরের সাথে। আদনান বরাবরই চাপা স্বভাবের, সে ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলো ওমন সময় আরাধনাকে আগমন ঘটে রাইদাহ-র। চোখ শীতল হয়ে গেলো আদনানের। বিরবির করে আপনমনে বললো,
– আমার চন্দ্রাবতী!
সবাইকে ছেড়ে আরাধনা আদনানের পাশে এসে দাঁড়ালো। আদনানের কোমরের দিকের শার্টের অংশ টেনে বললো,
– ভালোবাসা আসলে কি আদনান?
আদনান হালকা হাসি উপহার দিয়ে আরাধনাকে নিজের বামপাশে দাঁড় করিয়ে আলতো হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
– এই যে হসপিটালে ডাক্তার যখন তোমায় ট্রিটমেন্ট করছিলো তখন তোমার পাশে মামনী, রাইদাহ, আফসান, মীর সবাই ছিলো যারা প্রত্যেকে তোমার কেয়ার করে কিন্তু তুমি এত মানুষের ভীরে শুধু আমায় খুঁজছিলে, আমায় ডাকছিলে, আমাকে না পেয়ে কাঁদছিলে এটাই ভালোবাসা৷
আরাধনা আদনানের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বাচ্চাদের মতো বললো,
– আমি তোমায় ভালোবাসি আদনান!
ডাগরআঁখির দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আদনান।
•
এ প্রণয়ে অন্ধ হলাম…প্রাণের আলো তুমি
দুঃখ এলে ভুলে যেও না…বাঁচব না তো আমি!
🎼…….🎶……..🎵….🎻….🎵………🎶……..🎼
এ প্রণয়ে অন্ধ হলাম…প্রাণের আলো তুমি..হো..
দুঃখ এলে ভুলে যেও না…বাঁচব না তো আমি!
এ প্রণয়ে..কথা দিলাম সূর্য, চন্দ্র, তাঁরা
সাক্ষী থেকো মরণ যেনও হয় না তোমায় ছাড়া…
আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই
আমায় কতটা ভালোবাসো সেই কথাটা জানতে চাই
ভালোবাসার যত কথা হৃদয় দিয়ে শুনতে চাই
তুমি শুধু আমার হবে পৃথিবীকে বলতে চাই
হো…ওও..ওও…ওওও..হো…ওও…🎼🎵🎶
•
আজ নিশির সাথে তালে তাল সুরে সুর মেলানোর সাথে সাথে মনে মন মেলানোর প্রয়াস চালাচ্ছে রৌদ্র। একসময় যেই ছেলে এই মেয়েটাকে এড়িয়ে গেছে বারেবার আজ সেই একই ছেলে এই মেয়েটার একটুখানি সান্নিধ্য পাওয়ার লোভে সুযোগ খুঁজছে শতবার। একজন চোখ বুঁজে গিটারের তারে সৃষ্ট সুরে হারিয়ে আছে আরেকজন সেই হারিয়ে যাওয়াকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে।
|
|
সময় রাত ১২:০০~
একটা, দুইটা, তিনটা এমন করে আস্তে আস্তে শত-শত ফানুসে চেয়ে গেলো বিশাল চাঁদনী আকাশ। তার সাথে জোর শব্দ করে দূর আকাশে ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন রঙের আতসবাজি। বিস্মিত হয়ে সবকিছু দেখছে আরাধনা। এসবকিছু তার কাছে নতুন, চোখের প্রথম দেখা, অপরিচিত এক সৌন্দর্য। কানের কাছে উষ্ণ শ্বাস ফেলে ঘোরলাগা কন্ঠে আদনান বললো,
– ফুলের মতো দেখতে তুমি চাঁদের মতো হাসি সত্যি করে বলছি আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি৷ হ্যাপি নিউ ইয়ার মাই লাভ! জীবনের প্রতিটি বছর, প্রতিটা মুহুর্ত, প্রতিটা নিশ্বাস আমি তোমার সাথে পাড় করতে চাই।
একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে পেছন ফিরে আদনানের দিকে তাকিয়ে আরাধনা বললো,
– ভালোবাসি!
•
সবার হৈ-হুল্লোড় মাতামাতির মাঝেই হঠাৎ একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে রাইদাহ। ভমিট করে দেয় মীরের কোলের উপর। উপস্থিত কারোরই ব্যাপারটা বুঝে এলো না। এমন বোকা কান্ড করায় রাইদাহ লজ্জায় অপরাধীর মতো মীরের দিকে তাকায়। নিজের জামাপ্যান্ট নোংরা হয়ে গিয়েছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মীর তাড়াতাড়ি রাইদাহ-র সন্নিকটে চলে এসে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– রাই খারাপ লাগছে? কোথায় খারাপ লাগছে বলো আমায়! কতবার বললাম এতো স্পাইসি খাবার না খেতে। আমার একটা কথাও শোনো না তুমি।
– মীর আমি..
কথা থামিয়ে রাইদাহ মুখ চেপে ধরে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। তার পিছুপিছু ছুটলো সকলে। মেয়েকে এভাবে ভমিটিং করতে দেখে চিন্তিত হয়ে রান্নাঘর থেকে পানি নিয়ে এগিয়ে আসলো আঁখি। একনাগাড়ে ভমিটিং করেই যাচ্ছে রাইদাহ, থামার নামগন্ধ নেই। এতটুকু সময়েই চঞ্চল মেয়েটা কেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে। মীরের চোখ ছলছল করছে। সে এক হাতে রাইদাহ-র কোমর আরেক হাত তার কোমর সমান চুলগুলোকে ধরে আফসানকে অসহায়ের মতো বললো,
– আফসান দেখ না ভাই এমন কেন হচ্ছে?
আদনান ভরসা দিয়ে বললো,
– টেনশন করিস না মীর। আফসান তুই কিছু মেডিসিন সাজেস্ট কর আমি কাউকে পাঠাচ্ছি।
– ভাই আই থিংক বনুকে আগে হসপিটালে নেওয়া উচিৎ। এতো ভমিটিং হচ্ছে আগে চেক আপ করিয়ে তারপর নাহয় মেডিসিন দেই?
আফসানের কথায় সায় দিয়ে সবাই মিলে রওনা দিলো হসপিটালে।
•
•
•
চলবে…
(শব্দসংখ্যা~২৩৬৬। কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না যেন! সাথে ভুলগুলিও ধরিয়ে দিবেন আমি সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। বানান সংক্রান্ত ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং🤍🌼)