সূচনা_পর্ব #কাজল_কালো_ভ্রমর #Raiha_Zubair_Ripte

0
1014

আমি কিছুতেই এই কালো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না । আমি আপনার ভাগ্নি আরশিয়া কে পছন্দ করি আর আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। বিয়ে করলে আরশিয়াকেই বিয়ে করবো অন্য কাউকে করতে পারবো না বিয়ে। বিয়ের আগে মিহিকাকে দেখলে কখনোই রাজি হতাম না এই বিয়েতে। বিয়ে বাড়িতে হঠাৎ পাত্রর মুখে এমন কথা শুনে আশেপাশে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। পাত্রের বাবা শফিক এগিয়ে এসে ছেলের গালে ঠাস করে চ”ড় বসিয়ে দেয়।

– লজ্জা করে না তোমার তুমি বিয়ে করতে এসে এসব বলছো। আমাদের মানসম্মানের কথা একবারের জন্য ও ভাবলে না। বিয়ের আগে বলতে পারলে না তুমি মিহিকা কে বিয়ে করতে চাও না আর তোমায় তো বলেছিলাম একবার মিট করার জন্য করলে না কেনো তুমি তাহলে তো আমি বিয়েতে আগাতাম না। লোকজন সত্যিই বলে তুমি আহিলের নোখের ও যোগ্য না।

– তাহলে তোমার বড় ছেলেকে বলছো না কেনো বিয়ে করতে ঐ কালো মেয়েকে। সে কেনো এখনো বিয়ে করছে না। ওহ আমি তোমার নিজের সন্তান না বলে যাকে তাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যাও তাই না!

কর্কশ গলায় বলে উঠলো সাহিল।

শফিক সাহেব আজ নির্বাক ভাবতে পারছে না সাহিলের মনে এসব চিন্তা ভাবনা ঘুরে। সাহিল কে কখনোই আহিলের থেকে আলাদা নজরে দেখে নি উল্টো আহিলের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছে। আশেপাশে সবাই বলতে শুরু করেছে নিজের ছেলে না বলেই তাকে এমন কালো মেয়ের সাথ বিয়ে দিতে চাচ্ছেন শফিক সাহেব। আবার কেউ বলছেন,আহারে মেয়েটার কপালটাই খারাপ।

– এসব তুমি কি বলছো সাহিল তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? তোমাকে কখনোই আহিলের চেয়ে কম ভালোবাসি নি সব কিছুর উর্ধে তোমার চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছি যাতে এ কথা কখনোই তুমি মুখ দিয়ে বলতে না পারো কিন্তু আজ তুমি বলেই দিলে।

সাহেল এগিয়ে এসে শফিক সাহেবের দু হাত ধরে।

– বিশ্বাস করো বাবা আমি সেভাবে বলতে চাই নি মুখ ফসকে বলে ফেলছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও, আমি সত্যি আরশিয়াকে ভালোবাসি, তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।

– তুমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না সাহেল অথচ অন্য একজনের বেঁচে থাকাকে গলা টি”পে হ’ত্যা করলে।

কথাটি বলতে বলতে এগিয়ে আসলো মিহিকার বাবা আরমান। এতোক্ষণ ধরে বাবা ছেলের কার্যকলাপ গুলো দেখছিলেন তিনি, এবার আর না পেড়ে বলে উঠলো।

– আঙ্কেল আপনি যা ভাবার ভাবতে পারেন আমার কিছু যায় আসে না।

একনজর মিহিকার পানে চেয়ে কথা গুলো বললো সাহিল।

মিহিকার দু চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুধারায় গড়িয়ে পড়ে জল, এটাতো হবার ই ছিলো কেও যেনে শুনে কি আর কালো মেয়েকে বিয়ে করে,সবাই সুন্দরী স্টাইলিশ মেয়েই তো চায়। ছোট থেকেই এই গায়ের রং নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে তখন অতো খারাপ না লাগলেও আজ খুব আফসোস হচ্ছে নিজের গায়ের রং নিয়ে। মিহিকা আলতো পায়ে হেঁটে তার ফুফাতো বোন আরশিয়ার কাছে যায়। দু হাতে চোখের কোনে থাকা জল মুছে ফেলে।

– আপু তুমি তো একবার বলতে পারতা আমায় যে তুমি সাহিল কে ভালোবাসো তাহলে কখনোই আমি এ বিয়েতে রাজি হতাম না।

– বিশ্বাস কর আমি জানতাম না সাহিলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে, আমি তো জানতাম আহিল ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে,আগে জানলে কখনোই তোকে এ বিয়ে করতে দিতাম না। আমি আহিল কে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

– আজ তোমাদের এই না জানার জন্য আমাকে লোক সমাজের সামনে হাসির খোঁড়াক হতে হচ্ছে। আব্বু চলো আমি আর একমুহূর্ত ও এইখানে থাকতে চাই না। তোমাকে অনেকবার বলেছিলাম আমার বিয়ে নিয়ে এতো না লাফাতে দেখলে কি হলো শান্তি পেলে কি এবার।

কথাগুলো বলতে বলতে আরমান সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালো মিহিকা। আরমান সাহেব মেয়ের কথা শুনলে আজ তার মেয়েকে এভাবে কষ্ট পেতে হতো না। ছোট বেলাতেই মিহিকার মা মা’রা যায় সেই থেকেই আরমান সাহেব দু হাতে আগলে মানুষ করেছে মিহিকা কে, কখনো কষ্ট পেতে দেয় নি। আর আজ কিনা বন্ধু শফিকের কথা রাখতে গিয়ে তার কলিজাকে এভাবে আঘাত পেতে হলো। আরমান দু হাতে মিহিকা আগলে নেয়। মিহিকা একটা নির্ভর যোগ্য আশ্রয় পেয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলে।

– মা-রে পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস, আমি যদি জানতাম সাহিল এমন কান্ড করবে তাহলে কখনোই তোর বাবার কাছে তোকে চাইতাম না নিজের ছেলের বউ করার জন্য।

– খবরদার আর একটা কথাও বলবি না তোর ঐ মুখ দিয়ে। তোর ছেলের জন্য,তোর কথা রাখতে গিয়ে আমার মেয়েকে লোক সমাজে এমন অপদস্ত হতে হয়েছে। কোনোদিন ও ক্ষমা করবো না তোকে, চল মিহি।

আরমান কথাটা শফিক সাহেব কে বলে নিজের মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে কমিউনিটি সেন্টার থেকে।

শফিক সাহেব বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে মেঝেতে। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আসমানী শফিক সাহেবের স্ত্রী। তিনি দৌড়ে শফিক সাহেবের কাছে আসে ধরার জন্য।

– তোমায় বলেছিলাম এই ছেলে একদিন আমাদের মানসম্মান সব শেষ করে দিবে দেখলে তো আজ, পর কখনো আপন হয় না। এ কোনোদিন আমাদের ছেলে আহিলের মতো হতে পারবে না।

– আমায় বাড়ি নিয়ে চলো আসমানী, আমি আর এক মূহুর্ত ও এখানে থাকতে চাই না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

বুকে হাত দিয়ে কথা গুলো বলে শফিক। আসমানী তারাতাড়ি ড্রাইভার কে ফোন করে। ড্রাইভার এসে শফিক সাহেব কে ধরে গাড়িতে উঠান।

_________________________

মিহিকা বাড়ি ফিরে একের পর এক জিনিস ভাংচুর করতে থাকে। আরমান সাহেব কিছুতেই থামাতে পারছে না মেয়েকে। আরমান সাহেব আর কোনো উপায় না পেয়ে তার ভাস্তি সামিরা কে ফোন করে। এখন যদি কেও মিহিকা কে শান্ত করতে পারে তাহলে একমাত্র সামিরাই পারবে।

কমিউনিটি সেন্টারে পড়ে আছে সাহিল,আরশিয়া আর আরশিয়ার বাবা মা। আরশিয়া আর সাহিল বারবার টিপু খান আর আরুশি বেগম কে মানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরুশি বেগম মেয়ের হাত টেনে গালে চ”ড় বসিয়ে দেয়।

– তোকে কি এইসব দেখানোর জন্য মানুষ করেছি। তোর কারনে আমার মা মরা মেয়ে মিহিকা এতো কষ্ট পেলো আর তুই এখন নিজের সুখের জন্য উঠে পরে লেগেছিস।

আরশিয়া আরুশি বেগমের হাত দুটো এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়।

– তোমার নিজের মেয়ের সুখের চেয়ে পরের মেয়ের জন্য এতো মন খারাপ হচ্ছে। আমি আমার ভালেবাসার মানুষটাকে কি করে মিহিকার হাতে তুলে দিবো এতোটা উদার নই আমি। তাই আমহ এখনই সাহেল কে বিয়ে করবো এখন তেমরা মত দিলেও আর না দিলেও।

টুপু খান এতোক্ষণ চুপ থেকে এবার মুখ খুললেন।

– কাজি সাহেব এদের বিয়ে পড়ানোর ব্যাবস্থা করুন।

আরশিয়া বাবার মুখে এমন কথা শুনে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে নিলে টিপু খান এক হাত উঁচু করে মান করে।

– যাও গিয়ে বিয়ের আসনে বসো তোমরা।

টিপুর কথা মতো আরশিয়া আর সাহেল গিয়ে বসে পড়ে কাজি সাহেবও বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়।
বিয়ে পড়ানো শেষ হলে সাহিল আর আরশিয়া আরুশি বেগম আর টিপুকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে টিপু খান দু কদম পিছিয়ে আসে। থেমে যায় সাহেল আর আরশিয়া।

– তেমায় বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব শেষ আমাদের। তুমি বিয়ে করতে চেয়েছিলে দিয়ে দিলাম বিয়ে, আজকের পর থেকে তোমার আর আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। আজ থেকে আমাদের এক মাত্র ছেলে আয়ুশ।

টিপু খানের কথা শুনে আরশিয়া তার বাবার কাছে যেতে নিলে আবার ও হুংকার দিয়ে উঠে।

– আবার ও বলছি একদম স্পর্শ করবে না আমায় তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ে কখনোই আমার মেয়ে হতে পারে না আরুশি চলো।

আরুশি বেগম কে নিয়ে টিপু খান চলে যায়। আরশিয়া ধপাস করে মাটিতে বসে কান্না করতে থাকে। সাহিল গিয়ে দু হাত দিয়ে আরশিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

– সাহিল বাবা এসব কি বলে গেলো। আমি তোমায় যেমন ভালেবাসি বাবাকেও তেমনই ভাালোবাসি। বাবা কি বলতে পারলে আমি তার মেয়ে না বলো না সাহিল।

সাহিল আরশিয়ার কপালে চুমু খায়। দু হাত দিয়ে আরশিয়ার মুখখানি উঁচু করে।

– তোমার বাবা সব রাগের মাথায় বলছে লক্ষীটি, আর কান্না করো না। কয়েকদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না এবার উঠো চলো আমাদের ও তো বাড়ি ফিরতে হবে।

আরশিয়া দু চোখের পানি মুছে বলে,,

– কিন্তু সাহিল তোমার বাড়ির কেও তো আমায় মেনে নিবে না যদি বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় তখন কি করবে। যদি আমায় ছেড়ে দিতে বলে তখন কি তুমি আমায় ছেড়ে দিবে।

– দূর পাগলি এসব কি বলছো তোমায় আমি কখনোই ছাড়বো না। আর চিন্তা করো না আহিল ভাইয়া কখনোই আমায় বাড়ি থেকে বের করতে দিবে না, এবার চলো যাওয়া যাক।

আরশিয়া হুম বললে বেড়িয়ে পরে সাহিল দের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সামিরা তার চাচার ফোন পেয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পরে মিহিকাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মিহিকাদের বাড়িতে এসে দেখে আরমান সাহেব কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। সামিরা দৌড়ে চাচার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। আরমান খানকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আরমান সাহেব বিয়ে বাড়িতে ঘটা সব ঘটনা সামিরাকে খুলে বলে। সামিরা সব শুনে আরমান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– চাচা আমি তোমায় আগেই বলছিলাম মিহিকাকে এখনি বিয়ে দিয়ো না। সবে কলেজে উঠেছে এখন তো ওর উড়ে বেড়ানোর বয়স, আর তুমি কি করতে যাচ্ছিলে। এক হিসেবে ভালোই হয়েছে বিয়ের আগেই সব শেষ হয়েছে। একবার ভাবতে পারছো বিয়ের পরে এসব ঘটলে কিভাবে সান্তনা দিতে মিহিকাকে।

– আমি বিরাট বড় ভুল করে ফেলছিরে মা। আমি আর কখনোই ওর অমতে কিছু করতে যাবো না ও ওর মতো করে বাঁচবে আজ থেকে। তুই প্লিজ আমার মেয়েটাকে শান্ত কর। রাগের বসে আবার কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে।

– আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি। আর আমাদের মিহিকা এতোটাও দূর্বল না যে এই সামান্য কারনে নিজের ক্ষতি করে ফেলবে।

কথা গুলো বলেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে মিহিকার রুমের উদ্দেশ্য চলে যায়। মিহিকার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করতে থাকে। মিহিকার সারা শব্দ না পেয়ে সামিরা এবার বলে উঠে।

– দেখ মিহিকা এবার যদি তুই দরজা না খুলিস তাহলপ কিন্তু আজকের পর থেকে তোর আর আমার সম্পর্ক বন্ধুত্ব এখানেই শেষ, আর কোনোদিন তোর সাথে কথা বলবো না এখন ভেবে দেখ কি করবি আমি আর তিন পর্যন্ত গুনবো এর মধ্যে দরজা না খুললে চলে যাবো। সামিরা তিন পর্যন্ত গুনা শেষ হলেও যখন মিহিকা দরজা খুলে না তখন সামিরা সামনে ফিরে চলে যেতে নিলে দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে পেছন ফিরে দেখে মিহিকা দরজা খুলে দিছে। দরজা থেকে চোখ সরিয়ে মিহিকার দিকে চোখ যেতেই সামিরার বুকটা ধক করে উঠে ইশ মেয়েটা নিজের এ কি হাল বানিয়ে ফেলছে। এক দৌড়ে মিহিকার কাছে গিয়ে মিহিকাকে জড়িয়ে ধরে সামিরা।

#চলবে
#সূচনা_পর্ব
#কাজল_কালো_ভ্রমর
#Raiha_Zubair_Ripte

( ফিরে এলাম নতুন গল্প নিয়ে আশা করি সবার ভালো লাগবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্টের ভিত্তিতে নেক্সট পর্ব বড় করে দিবো। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here