হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২২| #শার্লিন_হাসান

0
611

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২২|
#শার্লিন_হাসান

কান্না কাটি শেষ করে সেরিন ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে। চুপচাপ নাস্তা করতে দেখে অনেক বাজার এসেছে। তাঁদের পরিচিত একজন সব বাজার লিভিং রুমের এক কোণে রাখে। মাহী ও পেছন দিয়ে বাজার আনছে। তার কাকীমা তুষি রেডি হয়ে নিয়েছে। তারা কুমিল্লা যাবে। সিহান পাটওয়ারী এবং কিরণ পাটওয়ারী সহ।
সেরিন চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছে তখন আবার অক্ষর আসে। সেও সেরিনের সাথেই নাস্তা করতে বসে। কেউ কোন কথা বলেনি। তবে অক্ষরের মনে প্রশ্ন এতো বাজার কিসের? কোন গেস্ট আসবে নাকী?

পরক্ষণে ভাবলো হয়ত তাঁদের পরিবারের জন্যই। তারা তো এভাবেই বাজার করে নেয়। অক্ষর আবার বিকেলে চলে যাবে।

******

সবার সাথে বসে নাস্তা করে শুভ্র। তখন আরফিন চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন,

“আর্শিয়াকে তোমার কেমন লাগলো?”

“হুম ভালো। তবে দুইদিন পর আমার বিয়ে পাটওয়ারী বাড়ীতে।”

শুভ্রর কথায় আরফিন চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকান। সেও হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়। আর্থ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাবার খাচ্ছে। তবে তার বেশ হাসি পাচ্ছে জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্য। বেচারির রিংটা খোয়া গেলো মাঝখান দিয়ে। তখন আরফিন চৌধুরী বলেন,
“সবাই রাজী তো?”

“হুম।”

“তাহলে আর কথা নেই। বিয়েটা অনুষ্ঠান করে হবে?”

“না পরিবারের কয়েকজন গিয়েই হবে। খুবই গোপনে। আদ্রিতা তো এসেছে এখন অধরা চাচ্চু,কাকীমাকে বলো চলে আসতে।”

“সে বলা যাবে। এখন সবকিছুর ব্যবস্থা তো করতে হবে।”

“বলছিলাম যে এখানে বিয়েটা না হলে হয়না? আর্শিয়া সেরিনের থেকে কম কোন অংশে?”

মাঝখান দিয়ে কথাটা বলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তখন আরফিন চৌধুরী বলেন,
“কথা মাঝে বা হাত ঢুকানো আমার পছন্দ না। এটা সম্পূর্ণ শুভ্রর ইচ্ছে। বিয়েটা ও করবে তুমি বা আমি না।”

“বাবা তুমি আবার বিয়ে করতে চাইছো?”

মাঝখান দিয়ে আর্থ আবার কথাটা বলে। আরফিন চৌধুরী কটমট চোখে তাকায়। আর্থ হেঁসে দিয়ে বলে,
“না ঠিকই বলেছো। ওনার উচিত হয়নি বা হাত টা ঢুকানো।”

“তোমার ও উচিত হয়নি আমাদের মাঝে নাক গলানোর।”

কঠোর গলায় বলেন আরফিন চৌধুরী। মূহুর্তে থমথমে নিরব পরিবেশ। আদ্রিতা আর্থর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার ভাইটা একটু বেশী বলে সবসময়। তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শুভ্র এবং আরফিন চৌধুরীর কথা শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে আদ্রিতা।
তখন মৌনতা বজায় রেখে শুভ্র বলে,
“আজকে সন্ধ্যায় কুমিল্লা যাবো। যা,যা কেনাকাটা আছে করে নেবো। বাকী গুলো আগামী কালকে।”

“তাহলে ঠিক আছে। পাটওয়ারী পরিবার আসবে না বাড়ীতে?”

“আসার আর কী আছে। আমাদের যা কথা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে। আর ওনাদের মেয়েকে জায়গা দেওয়ার জন্য রুমের অভাব নেই সো নতুন করে কিছুই দেখার নেই।”

শুভ্রর কথায় সম্মতি দেন আরফিন চৌধুরী। তাদের দলের কয়েক জনকে বলে সবকিছুর বন্দোবস্ত করতে। আরফিন চৌধুরী এসিস্ট্যান্ট সাথে আয়মান চৌধুরী এবং আর্থর ও কয়েকজন বিশ্বস্ত ছেলে তাঁদের ডাকা হয় চৌধুরী বাড়ীতে। কিছু হেল্প লাগবে সেজন্য।

সেদিনের মতো শুভ্র কলেজে চলে যায়। তার রুমে এসে চিঠিগুলো আবার পড়ে আর হাসে শুভ্র। বেচারী সেরিনের অভিমান বার্তায় সায় দেয়নি সে। বাকী কথা পরে বলবে সেজন্য বেশী গুরুত্ব দেয়নি।

*************

শপিং শেষ করে বাড়ী ফিরতে,ফিরতে রাত হয়ে যায়। তবে চৌধুরী পরিবারের গাড়ীর সাথে তাদের গাড়ী জ্যামে দেখা হয়েছে। তার আসছে আর চৌধুরী পরিবার মাত্র যাচ্ছে। সবকিছু তাড়াতাড়ি হচ্ছে বিধায় তেমন একটা উত্তেজনা নেই। বাড়ীর রাস্তায় আসতে তুষি বলে,
“ভাইয়া সেরিন জানে তো ওর বিয়ে?”

“বলবো একটু পর। গিয়ে আগে ফ্রেশ হই।”

বাড়ীতে এসে ফ্রেশ হতে সাইয়ারা কোল্ড ড্রিং দেয়। সেই সাথে খাবার বেড়ে দেয়। শশী শপিং ব্যাগ গুলো সব তাঁদের গেস্ট রুমে নিয়ে রেখেছে। একটু পর দেখবে।

তবে সেরিনকে কিছুই জানানো হয়নি। সিহান পাটওয়ারী বলেনি তাই কারোরই সাহস হয়নি বলার। যদি বকা শোনতে হয়। এই পরিবারের কর্তা সিহান পাটওয়ারী। তার মত আর কথা ছাড়া কিছুই হয়না। আর একবার মত দিয়েছে মানে এটাই হবে। কেউ কিছু বলার ও সাহস করতে পারে না।

শশী লিভিং রুমে এসে বলে,
“আসো না তাড়াতাড়ি আমার ধৈর্য কুলোচ্ছে না।”

“তাহলে তুমি তোমার ফুফিকে আর জেম্মাকে নিয়ে দেখে নেও। তবে সেরিনকে এখন ডেকো না। আমাদের কাজ আছে।”

সিহান পাটওয়ারী বলেন। তখন শশী তার ফুফিকে আর জেম্মাকে টেনে সেই রুমে নিয়ে দরজা অফ করে দেয়।
বিয়ের ব্যপারটা মোটামুটি সবাই জানে। শুধু সেরিন ছাড়া। সাহিনূর পাটওয়ারী কিছু বলতে পারছেন না। সিহান পাটওয়ারীর মুখের উপর কিছু বলার সাহস ও তার নেই। যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করেন তিনি তার বড় ভাইকে।

চৌধুরী পরিবারের মেয়ে সদস্যদের জন্য শাড়ী, শারোরা কেনা হয়েছে। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি। যদিও পরে বড় করে অনুষ্ঠান হবে। সেগুলোতে আর হাত দেয়নি শশী। সে হলুদের জামাকাপড় দেখছে। সেরিনের জন্য কাঁচা হলুদ কালারের জর্জেট লং গাউন সাথে সি গ্রীন কালারের জর্জেট ওরনা। স্টোনের কাজ করা সেরিনের জন্য কেনা হয়েছে। শশীর ভীষণ পছন্দ হয় গাউন টা। সেসব রেখে বাকী জামাকাপড় দেখে।তার জন্য সী গ্রীন কালারের শারোরা কেনা হয়েছে। সাফা,রাফা,সেরিনের কাজিন মেহেরের জন্য ও শারোরা। তবে ভিন্ন কালারের।

সবকিছু প্যাক করার জন্য ঢালা ও আনা হয়েছে। একটু পর নাকী রাফা,সাফা আসবে। মেহেরের টা শিওর নেই।
মাহী গিয়েছে হয়ত মেহেরকে আনার জন্য।

শশী সেসব রেখে সেরিনের রুমে যায়। তখন সেরিন ফোনে ব্যস্ত। সে বাইরের দুনিয়ার খবর জানে কীনা সন্দেহ। লাইট অন করতে দেখে সেরিন মন খারাপ করে শুয়ে আছে। শশী তাকে টেনে বসায়।

“আজকে রুম থেকে বের হওনি কেনো?”

“এমনিতে! ভাল্লাগে না।”

“বফের সাথে ঝগড়া?”

“ইন্টারেস্টিং আমার বফ আছে?”

“নেই তো জানি।”

“হুম।”

তার পেছন দিয়ে মেহের সেরিনের রুমে প্রবেশ করে। সেরিন মেহেরকে দেখে নেমে হাগ করে। এর পেছন দিয়ে রাফা,সাফা আসতে তারা কিছুক্ষণ আলিঙ্গন করে। সেরিনকে নিয়ে লিভিং রুমে যাওয়া হয়। তবে সবই আগের মতো।

সেরিন সেখানে বসেই শুভ্রকে নক দেয়। মেসেজটা কিছুটা এরকম,
“কই আপনি?”

সাথে,সাথে সীন হতে রিপ্লাই আসে,
“কুমিল্লায় এসেছি। কোন দরকার?”

“আমার চকলেট লাগবে। প্লিজ পাঠিয়ে দিন।”

“কাকে দিয়ে পাঠাবো?”

“আপনি আসুন। গেট দিয়ে প্রবেশ করে সোজা বিল্ডিংয়ের উত্তর সাইডে আমার বেলকনির সামনে আসবেন।”

“লেট হবে। এই রাত বারোটা একটা বাজতে পারে।”

“সমস্যা নেই আপনি আসবেন এটাই আসল কথা।”

“ঠিক আছে।”

সেরিন মেসেজ সীন করে বেড়িয়ে পড়ে লাইন থেকে। যদিও দুপুরে একটু কথা হয়েছে তাঁদের। সেটাও সেরিনের আজাইরা বকবক। তাকে একটুও প্রায়োরিটি দেয়না মেইন টপিক এটাই। নাহলে এই প্রায়োরিটির উপর একশ মেসেজ দেওয়া হয়েছে। শুভ্র মেসেজ পড়ে আর হাসে। মেয়েটাকে যা চঞ্চল ভেবেছে তার থেকেও ওভারঅল। সেরিন আড্ডা রেখে খুশি মনে রুমে চলে আসে। ব্যাগ থেকে একটা শোপেজ বের করে। সেটাতে একটা কাপল আর উপরে লেখা “Babur PaPa” সেটা প্যাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেরিন।

সেরিন যেতে তারা চারজন রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে ঢালা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চৌধুরী পরিবারে মেয়ে মাত্র দু’জন। তাঁদের জন্য একটা আর মহিলা তিনজন তাদের জন্য আরেকটা। মিষ্টি, ফল সব কিছু ঢালায় প্যাক করে নিতে,নিতে অনেকটা সময় কেটে যায়।

কুমিল্লা থেকে ফিরতে,ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায়। তবে শুভ্র আর্থ আর আয়মান চৌধুরীকে বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে পাটওয়ারী বাড়ীর দিকে গাড়ী নেয়। মাহীকে মেসেজ দিয়ে বলে গেট খোলা রাখতে। শুভ্র গেটের সামনে গাড়ী রেখে ভেতরে প্রবেশ করে সেরিনকে নক করে। সোজা সেরিনের বেলকনির সামনে চলে যায়। বেলকনিতে একটা দরজা লাগানো আছে যেটা দিয়ে বাইরে যাওয়া যায় আবার ভেতরে আসা যায়। শুভ্র একটা কার্টুন সেরিনের হাত ধরিয়ে দিতে সেরিন ‘ধন্যবাদ’ জানায়। শুভ্র আর কিছু বলেনা। সেরিন প্যাক করে রাখা শোপেজের বক্সটা শুভ্রকে দেয়। শুভ্র চুপচাপ সেটা হাতে নেয়। তবে সেরিন কথা না বলে থাকতে পারলো না। শুভ্র বায় বলতে সেরিন বলে,
“একদম এক পা ও নড়বেন না। নাহলে খবর আছে।”

“এই তুমি এতো থ্রেট দেও কেনো?”

“দিবো না?”

“আচ্ছা বলো কী বলবে?”

“বলুন যে…”

“বলো?”

“সেরিন।”

“তারপর?”

“সেরিন আমি তোমাকে ভালেবাসি।”

“পারবো না। তোমায় না বলেছি আমার আকদ হয়ে গেছে।”

“তোর আকদের নানীর….

বলার আগে শুভ্র বলে,
” একবারে থাপ্পড় দিয়ে বেলকনির গ্রিলে জুলিয়ে দেবো। এতো গালি কার থেকে শিখেছো তুমি? আমি কে হই ভুলে গেছো? বে’য়াদব মেয়ে! আর কখনো আমার সামনে গা’লি দিয়ে দেখো শুধু তোমার কী হাল করি। এখন আসি সময় নেই এসব ফাল’তু কথা বলার।”

শুভ্র মেজাজ দেখিয়ে চলে যায়। সেরিন সেদিকে তাকিয়ে রয়। হাতের বক্সটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে আসে। শুভ্র তাকে কতগুলো বকা দিলো। -“আসলেই কী বেশী গা’লি দেই আমি?”

নাহ আর গা’লি দেওয়া যাবে না। সেরিন কার্টুন খোলতে দেখে পুরো কার্টুন ভর্তি চকলেট সাথে ছোট্টো একটা চকলেট কেক। যেটার উপরে লেখা, ‘Ugly meye vlo hoye jao’

সেরিন কিছু চকলেটস খায়। বাকী গুলো সাফা,রাফা,মেহেরের জন্য রেখে দেয়।

শুভ্র বাড়ী ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার খাটটা কেমন জেনো নড়বড় করছে। যাই হোক চেন্জ করতে হবে হয়ত। শুভ্র আর মাথা ঘামায় না সেসবে।

রাত তিনটায় কাজ শেষ করে সেরিনের রুমে আসে ওরা চারজন। আজকে তারা পাঁচজন একসাথে ঘুমাবে। ঘুমাবে বললে ভুল হবে গল্প করেই সময় পার করে দিবে। রুমে আসতে সেরিন থমথমে মুখ করে কেকটা ওদের সামনে রাখে। সাথে চকলেট গুলোও। কিছু পিকচার তুলে এই তিনটা বাজেই ডে দেয় সেরিন। কেক টেক কেটে আড্ডা দিতে,দিতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। আড্ডা ছেড়ে তারা এবার শুয়ে পড়ে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here