#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩৩
ছেলে দুটো প্রথমে বলতে চায় নি কিছু। কিন্তু সমুদ্র যখন মারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তখন আর সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ বলেই দেয় আসলে এই দুজনকে কে পাঠিয়েছে। কম্পনরত স্বরে কোনোরকমে উচ্চারণ করে নাহিদ চৌধুরীর নাম। উনি’ই তো এই দুজনকে ভাড়া করেছেন আরভীকে মৃত্যুপুরীতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। পরেরটা উনি সামলে নিবেন এরকমটাই বলেছিলেন। আর ছেলে দুটো উনার এ কথাতেই রাজি হয়েছিলো এতো বড় একটা কাজ করার জন্য। নয়লে এর আগে কখনো এতো রিস্ক নিয়ে কোনো কাজ করে নি। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে কাজটা করার আগেই ধরা পড়ে গেছে। সাথে বেধড়ক মারও খাওয়া হয়েছে।
সমুদ্রের আগে থেকেই ধারণা ছিলো আরভীকে মারার চেষ্টা কে করতে পারে। তবু দুজনের থেকে নামটা জেনে নিশ্চিত হয়ে নেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তন্ময়ের হাতে দুজনের দায়িত্ব দিয়ে নাহিদ চৌধুরীর বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করে।
আজ অনেক গুলো বছর পর চৌধুরী বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। শৈশবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। শৈশবের বেশিরভাগ সময় তো এ বাড়িতেই কেটেছে।
নাহিদ চৌধুরী ছিলেন সমুদ্রের আইডল। লোকটার প্রতিটি কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখতো সমুদ্র। আর মনে মনে ভাবতো বড় হয়ে আমিও একদিন মামার মতো হবো। সেসব কথা মনে হলে এখন হাসি পায়।
ধীরস্থির পায়ে মনে সংশয় নিয়ে সমুদ্র বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। আজ এতো বছর পর সমুদ্র এ বাড়িতে পা রেখেছে তা নিয়ে কি সমুদ্রের ধুরন্ধর মামার মনে সন্দেহ জাগবে না? সেটাই ভাবাচ্ছে সমুদ্রকে। কিন্তু সমুদ্র হয়তো ভুলে গেছে নাহিদ চৌধুরী মিনহাজ ও সমুদ্রের বেলায় বড্ড আবেগি। পুরো পৃথিবী এক দিকে আর এ দুজন আরেকদিকে। তাই তো সমুদ্রকে দেখার পর মনে কোনো প্রকার প্রশ্ন জাগে নি উনার। উল্টো খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে। আজ এতো বছর পর ভাগ্নে এ বাড়িতে পা রেখেছে এটাই যে অনেক নাহিদ চৌধুরীর জন্য।
নাহিদ চৌধুরী সমুদ্রকে দেখতে পেয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন সমুদ্রের দিকে। সব চিন্তা ভুলে জড়িয়ে ধরলেন স্নেহের ভাগ্নেকে। আর বললেন,”আমি জানতাম ভাগ্নে, একদিন না একদিন তুই ঠিক এ বাড়িতে আসবি।”
“আমাকে ক্ষমা করে দাও মামা। আমি বুঝতে পারি নি তখন। কিন্তু এখন বুঝেছি, জীবনে চলার পথে অনৈতিক পথে হাটতেই হয়। অন্যথায় জীবন হয়ে যায় পানসে।” চোখেমুখে অনুতপ্তের ছায়া ফুটিয়ে বললো সমুদ্র।
সমুদ্রের কথা শুনে নাহিদ চৌধুরীর কাছে মনে হচ্ছে উনি আজ চাঁদ হাতে পেয়েছে। কেননা চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে মনে। উনি সমুদ্রকে দেখে মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন মিথ্যা বলে সমুদ্রের মনে নিজের জন্য জায়গা তৈরী করে নিবেন আগের মতো। পুরো দেশের সামনে নিজের আসল রূপ আড়াল করে রাখতে পারলে সমুদ্রের সামনে আড়াল করা রেখা বড় কিছু না। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে এসব কিছুই করতে হবে। সমুদ্র নিজেই পাল্টে গেছে।
নাহিদ চৌধুরী এবার সমুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে প্রফুল্ল চিত্তে বললেন,”তুই সত্যি বলছিস ভাগ্নে? তুই আমাকে বুঝতে পেরেছিস?”
“হ্যাঁ মামা। আমি তো ভেবে রেখেছি এখন থেকে আমিও তোমাকে সাহায্য করবো। তোমার থেকে এসব শিখবো। তুমি আমার আইডল বলে কথা। তোমার থেকে ভালো আর কে শেখাতে পারবে আমায়?”
“তুই একদম চিন্তা করিস না ভাগ্নে। তোর মামা আছে তো? দেখিস তুই, একদিন আমার মতো পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে যাবি।”
হসপিটালের দরজায় খটখট শব্দ হলে সমুদ্র বর্তমানে ফিরে আসে। চোখ মেলে দেখতে পায় একজন নার্স এসেছে ব্যাথা কম হওয়ার মেডিসিন দেওয়ার জন্য।
নার্স সমুদ্রকে মেডিসিন দিয়ে চলে গেলে সমুদ্র বিরবির করে বলে উঠে,”আপনার জন্য কত কি’ই না করেছি ললনা। মামার সাথে হাত মেলানোর নাটক করেছি। আপনার থেকে নিজের পরিচয় গোপন করেছি। মামা ভেবেছিলো আমি মামার পক্ষ নিয়ে আপনাকে খুন করার নতুন নতুন পরিকল্পনা মামাকে দিয়ে যাবো। কিন্তু মামা জানতোই না যে পরিকল্পনা আমি আপনাকে মারার জন্য করতাম সেই পরিকল্পনা আমি নিজ হাতেই ধূলিসাৎ করে দিতাম। এমন কি অনেকবার ধরা পড়তে গিয়েও কোনো রকমে সব কিছু সামলে নিয়েছি।”
——–
একটু পরে সমুদ্রকে রিলিজ করে দেওয়া হবে। ইয়াসমিন সমুদ্রের পাশে বসে সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। উনার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠছে একটু পর পর। আর নিলু সমুদ্রের পায়ের ধারে বসে আছে। নোমান আহমেদ নিচে গিয়েছেন হসপিটালের বিল মেটাতে।
সমুদ্র ইয়াসমিনের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো,”মা আর কেদো না প্লিজ। দেখো আমার কিছু হয় নি। আমি একদম ঠিক আছি।”
“চুপ কর। তুই বললেই আমি বিশ্বাস করবো? এখন পর্যন্ত এটাও সঠিক ভাবে বললি না এসব কিভাবে হলো।”
“বলেছি তো মা, রড নিয়ে ভ্যান যাচ্ছিলো পাশ দিয়ে। কিভাবে কিভাবে যেনো রডে আঘাত লেগে যায়।”
সমুদ্র ও ইয়াসমিনের কথার মাঝেই দরজায় আবার শব্দ হলো। সবাই দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আরভী হাসি মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
সবার দৃষ্টি আরভীর দিকে বুঝতে পেরে আরভী ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নিতে বলল,”আসতে পারি?”
সবাই এখনো আরভীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। এখানে উপস্থিত কেউ ভাবতে পারে নি আরভী আসবে।
ইয়াসমিন এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,”হ্যাঁ হ্যাঁ। ভেতরে এসো। এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি?”
আরভী হাসি মুখে ভেতরে প্রবেশ করলো। এই মূহুর্তে আরভীকে এরকম হাসিমুখে দেখে সমুদ্রের মনে সন্দেহ জাগছে। সব কিছু জানার পর আরভীর এরকম প্রতিক্রিয়া তো হওয়ার কথা না।
“আন্টি ভালো আছেন?”
“হ্যাঁ মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?”
“হ্যাঁ আন্টি আমিও ভালো আছি।”
আরভী তারপর নিলুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তুমি সমুদ্রের বোন নিলু তাই না?”
“হ্যাঁ তুমি জানলে কিভাবে? ভাইয়া তোমাকে আমার কথা বলেছে?” কৌতুহলী চোখে আরভীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো নিলু।
“না, তা বলে নি। কিন্তু জেনেছি কোনো একভাবে। তা সমুদ্র মুনতাসিন, এখন কি অবস্থা?”
“ভালো।” এক শব্দে উত্তর দেয় সমুদ্র।
“খুব ব্যাথা করছে বুঝি?” চোখে-মুখে দুঃখী ভাব ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে আরভী।
আরভীর প্রশ্ন শুনে সমুদ্রের খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু নিলু ও ইয়াসমিনের জন্য মনের এই বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেলো। তবে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিত্তোরে বলল,”একদম’ই না মিস আরভী রায়হান। আমার এতো সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে যে আপনাকে আর কি বলবো?”
“বাবু, কিভাবে কথা বলছিস মেয়েটার সাথে? ভুলে যাস না উনি আমাদের হৃদয়পুরের মেয়র। উনি যে তোকে দেখতে এসেছেন এটাই অনেক।” ইয়াসমিন বললেন।
“আরে আন্টি, কোনো সমস্যা নেই। অযথাই উনাকে বকবেন না। আর সমুদ্র, আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে হৃদয়পুর ব্যাক করুন। আশা করছি সারপ্রাইজটা আপনার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ হবে। যা আপনার কল্পনাতীত।” বলে রহস্যময় হাসলো আরভী।
সমুদ্র আরভীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আরভী যে ভালো কোনো সারপ্রাইজ দিবে না তা ভালো করেই জানা আছে। কিন্তু আরভী কি করতে যাচ্ছে সেটাই ধরতে পারছে না।
“আজ তবে আসি। ভালো থাকবেন সবাই।” বলে আর দাঁড়ালো না আরভী। চলে গেলো ক্যাবিন থেকে। আর সমুদ্র আরভীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। এ মেয়ের মতিগতি ঠিক লাগছে না সমুদ্রের কাছে।
চলবে….
বি.দ্র. : একটু অনুমান করার চেষ্টা করুন তো কি সারপ্রাইজ হতে পারে?