#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৯
______________
নিস্তব্ধ রাত, মাঝে মাঝে ভেসে আসছে কুকুরের কান্না, কেমন যেন গুমট অনুভুতি । মাইক্রো টা চলছে আপন গতিতে, মাঝে মাঝে শা করে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে অন্য সব যানবাহন। গাড়ির স্পিড টা ঠিক মাঝামাঝি তে না কম না বেশি। কিছু ক্ষন বাদেই গাড়ি টা শহুরে রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের পথ ধরলো, ধীরে ধীরে জঙ্গল টাও ঘন হতে লাগলো কেমন যেন গা ছমছমে রহস্যময়তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারিপাশে । হঠাৎ সামনে সূক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে কিছু একটা দেখতে পেয়ে মাস্কের আড়ালে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো আরুহীর ঠোঁটে ।
গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষতেই গাড়িটা থেমে গেলো, গাড়ি টা থাকলো ঠিক আরেকটা গাড়ির সামনে। আপাতত গাড়ি দুটো সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে। আরুহী মাস্ক টা ঠিক করে গাড়ির দরজা খুলে বের হলো, অপর পাশ থেকে ডোর লাগানোর শব্দ শুনে আরুহী সামনে এগিয়ে গেলো। অপর পাশে থেকে একটা ছায়া ও ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো। আবছা অন্ধকারে ও অবয়ব টা স্পষ্ট আরুহীর চোখে।
দুজন সামনাসামনি দাঁড়াতেই সামনে থাকা লোকটা হাত বাড়িয়ে দিলো আরুহীর দিকে। আরুহী ও বাঁকা হাসি দিয়ে হাত মেলালো লোকটার সাথে।
অন্ধকারে সুলতান যেন সবটাই দেখে নিলো তবে লোকটাকে সে চেনে না কিংবা কখনো দেখে ও নি।
হঠাৎ বাতাসে কারো ফিসফিসানি আওয়াজ টের পেয়ে নড়েচড়ে বসলো সুলতান।
” ওয়েলকাম টু মাই ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড, বাজপাখি! ”
আরুহী আবারো হাসলো, সম্বোধন টা ঠিক তার পছন্দ হলো কি না বোঝা গেলো না তবে কিছু বললো ও না।
” আমার মতো সামান্য একজন সিরিয়াল কিলার কেও আপনার নজরে এসেছে! অবাক ব্যাপার! ”
আরুহী প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বাঁকা হেসে বলল,
” বাজপাখির চোখ তো! ”
সামনে থাকা লোকটা আবারো হেঁসে উঠলো। পরক্ষণেই পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ টাইপ কিছু বের করে আরুহীর দিকে হাত বাড়ালো। আরুহী মুচকি হেসে পেনড্রাইভ টা নিয়ে বলল,
” ধন্যবাদ মিস্টার সরকার ”
” ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট না করলেও হতো। আপনার সব তথ্য এখানে দেওয়া আছে, আমি চাইলে বসেই কথা বলতে পারতাম তবে সেটা সেইফ হবে না। না আপনার জন্য না আমার জন্য। আই থিংক সব দিক থেকে ই শত্রু আসতে পারে তাই রিস্ক নিলাম না, এখানেও যে সেইফ আছেন তেমন টাও না, ভালো থাকবেন আর কখনো দরকার হলে এই সরকার কে পাবেন, শুধু একটা ফোন কল ই যথেষ্ট আজ আসি ”
আরুহী পেনড্রাইভ পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল,
” আসুন”
লোকটা দরজা খুলে বসতে যাবে হঠাৎ আরুহী কিছু একটার সূক্ষ্ম আওয়াজ শুনতে পেয়ে পিছনে থেকে ডেকে উঠলো,
” ওয়েট ”
লোকটা দাড়িয়ে গেলো। ঘাড় বাঁকিয়ে প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকাতেই আরুহী সামনে এগিয়ে গিয়ে লোক টার গাড়ির পিছনে গিয়ে দাড়ালো।
সরকার নামক লোক টা ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে আরুহী করছে টা কি।
পকেটে থেকে হাত সরিয়ে নিচে ঝুঁকে গেলো আর যা ভেবেছিলো তাই। হাত বাড়িয়ে কিছু একটা টান দিতেই লাল রঙের একটা বস্তু হাতে চলে এলো আরুহীর।
আরুহী সোজা হয়ে দাড়ালো, বো*ম টাতে টাইমার দেওয়া আর মাত্র পাঁচ মিনিট টাইম আছে। পাঁচ মিনিট পর ই স্ব শব্দে ফে*টে যাবে বো*ম টা।
আরুহী বের করতেই লোকটা চোখ বড়ো বড়ো করে আরুহীর দিকে তাকালো। এবারো ও নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আরুহী তাকে বাঁচিয়েছে।
লোকটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
” বো*ম!”
আরুহী মুচকি হেসে বলল,
” মাত্র ই লাগিয়ে রেখে গেছে ”
” আপনি কি করে দেখলেন! আপনি তো আমার সাথে ই কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন ”
” বাজপাখির চোখ তো! ”
” দেখলেন যখন কিছু বললেন না যে ”
বিরক্তিকর দৃষ্টি তে আরুহী লোকটার দিকে তাকালো,
” চারপাশে শত্রুর অভাব নেই, গা ঢাকা দিয়ে আছে ”
বলেই বোমটা হাতে নিয়ে আরুহী ওই সরকার নামক লোকটার গাড়ি তে উঠে বসলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝড়ের বেগে নিজের গাড়ি কে পাশ কাটিয়ে জঙ্গলের ভেতরে যেতে লাগলো।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে লোকটা আরুহীর গাড়ি তে উঠে বলল,
” তাড়াতাড়ি ওই গাড়ি কে ফলো করো, ওনার হাতে বো*ম যেকোনো সময় ব্লা*স্ট হতে পারে,”
সুলতান থমকে গেলো, আরুহীর হাতে বো*ম! কাঁপা হাতে গাড়ি স্টার্ট করলো।
আরুহী ঝড়ের বেগে গাড়ি চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য সামনেই একটা খাল আছে সেখানে যাওয়া। হাতে আছে তিন মিনিট। আরুহী গতি বাড়ালো। বো*ম টা জঙ্গলের ভেতরে দিলেই হতো কিন্তু আরুহী তা করে নি। কত জীব জন্তুর বাসস্থান সেখানে। তার অধিকার নেই সেই বাসস্থান বিনষ্ট করার। সামনে তাকাতেই খাল টা নজরে এলো। আরুহী কোন মতে গাড়ি থামিয়ে বো*ম হাতে দৌড় দিলো খাল পাড়ের দিকে।
হাতে মাত্র চল্লিশ সেকেন্ড বাকি। আরুহী সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বো*ম টা ঢিল দিলো খালের পানিতে। বো*ম টা ঢিল দিয়ে বিপরীতে আবারো দৌড় দিয়ে কিছু দুর সামনে এগিয়ে কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো মাটিতে।
প্রায় সেকেন্ড কয়েক পরেই বিকট শব্দে ব্লাস্ট হলো বো*ম। আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
ততক্ষনে তার গাড়িও এসে পড়েছে। সুলতান কে দৌড়ে আসতে দেখে আবারো হাসলো আরুহী। টেনশনে মনে হয় ঘাম বের হয়ে গেছে সুলতানের।
আরুহী মুচকি হেসে সুলতানের দিকে এগুলো।
সুলতান আরুহীর সামনে এসে আপাদমস্তক দেখতে দেখতে বলল,
” কোথাও লাগে নি তো? ”
” মরি নি ”
সুলতান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” দিবো না এক চর ফালতু কথা বললে ”
আরুহী হাসলো।
সুলতানের ঠিক পিছনে রিসাদ সরকার দাঁড়ানো।
লোকটা এগিয়ে এলো আরুহীর দিকে,
” আপনি আজ আবারো আমাকে ঋণী করে দিলেন! ”
” সময় হোক আপনার মতো সিরিয়াল কিলারদের ও আমার দরকার পড়বে। সেদিন না হয় ঋণ টা পরিশোধ করে দিয়েন এখন আপাতত এখান থেকে যান, জায়গাটা মোটেও আপনার জন্য সেইফ না। শত্রুরা আমাকে মারতে এসেছে এখনো উৎ পেতে আছে, আপনি যান নয়তো আমাকে না পেলে আপনাকেও মেরে ফেলবে। আবার দেখা হবে”
লোকটা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আরুহী সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে তাকালো। পাতার মরমরে আওয়াজ টা এখনো আছে তার মানে আশেপাশে অনেকেই আছে। তারা কিসের অপেক্ষা করছে আরুহী বুঝতে পারছে না তবে যেকোন সময় আক্রমণ করতে পারে এটা নিশ্চিত।
আরুহী সুলতান কে ইশারা করলো মাইক্রো তে গিয়ে বসতে। সুলতান এক পলক চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।
আরুহী চারপাশে এক পলক তাকিয়ে কোমড় থেকে গোল্ডেন রঙের রিভলবার বের করে নল উঁচু করে শূন্যে শুট করে দৌড়ে গাড়ি তে বসে গেলো।
” সুলতান ভাই কুইক ”
সুলতান তৎক্ষনাৎ গাড়ি স্টার্ট করে ছুট লাগালো। শত্রুদের এই জিনিস টা আরুহীর ভীষণ বিরক্ত লাগে। আক্রমন তো করবে তবে পিছনে থেকে কাপুরুষের মতো। হিম্মত থাকে তো সামনে থেকে আক্রমন কর! না সেটা করবে না।
কিছু দুর যেতেই পিছনে কয়েক টা বাইকের আওয়াজ শুনতে পেলো। আরুহী সাইড মিরর দিয়ে এক পলক দেখে নিলো বাইক গুলো। সব মিলিয়ে ছয় টা বাইক আর প্রতিটাতে দুজন করে। সামনে হয়তো আরোও আছে। আরুহী বুঝলো তাদের সাথে শক্তি দিয়ে কখনোই সে পেরে উঠবে না তাই দরকার পরিমাপকৃত জটিল বুদ্ধি।
কিছু একটা ভাবতেই আরুহী গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বাঁকা হাসলো। ওরা যদি চলে ডালে ডালে তবে আরুহী চৌধুরী ও চলে পাতায় পাতায়। ওরা যদি হয় বুনো ওল আরুহী চৌধুরী ও বাঘা তেঁতুল।
ওদের মাস্টার মাইন্ড এখনো আরুহী চৌধুরী কে ঠিক ভাবে চিনতেই পারে নি।
চলবে..
[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ ]