যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয় #আফসানা_মিমি |পর্ব: আঠারো|

0
397

#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: আঠারো|

” আমরা মনে করি, আমরাই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখি মানুষ কিন্তু যখন অন্যজনের দুঃখের বর্ণনা শুনি তখন মনে হয়; আমরা তো তার থেকেও সুখে আছি। দেখো অন্তু, মনি মার দুঃখের সামনে তোমার দুঃখ কিছুই না।”

জীবনের কঠিন সত্যের মুখোমুখি অন্তিক আজ। মিষ্টির মনি তারই মা, রুনা। যিনি বিগত দুই যুগ ধরে পূন্যালয়ের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। অন্তিক মায়ের হাতে মাথা ঠেকে কাঁদছে। কত দিন, কত রাত মায়ের জন্য কেঁদেছে। মা মা বলে গলা শুকিয়ে ফেলেছে! কিন্তু মা আর ফিরে আসেনি। অন্তিক মায়ের হাতে চুমু এঁকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ” একাই চলে এসেছিলে কেন মা! তুমি কী একটা আবারও ভাবোনি, মা হারা ছেলের সাথে ছলচাতুরী মানুষেরা কীরকম আচরণ করতে পারে। তুমি এতোটা স্বার্থপর কীভাবে হতে পারলে,মা?”

রুনা মাথার ঘোমটা ঠিক করে ছেলের দিকে তাকায়। বিগত দুইদিন ছেলেকে মন ভরে দেখেছে সে। শক্ত কর্মঠ ছেলের অন্তরে এখনো নমনীয় ভাব বিদ্যমান। ছেলের মাথায় হাত রেখো প্রত্ত্যুত্তর দেয়,” জীবনটা বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘ হলেও যখন ক্ষত সৃষ্টি হয়! তখন আপনজনের শান্তির জন্য নিজেকে কোরবানি দিতে হয়।”

” মনি মা, এখানে এসেও ভালো ছিল না অন্তু। এমন কোনদিন নেই যে তোমার কথা মনে করে পাগলামি করে নাই। আমি যখন মনি মার কাছে আসি তখন আমার মাঝেই তোমাকে খুঁজে বেড়াতো, মনি মা। তোমার শত হাজার গল্প শুনতে ভালো লাগতো, অন্তু। দাদা তোমার যুবক বয়সী একটা ছবি দাদীর কাছে চিঠির সাথে পাঠিয়েছিল। আমি চুপি চুপি ছবিখানা দেখে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি। দাদাকে যখন দাদী আমার ব্যাপারে জানায়, দাদা অপেক্ষা করেনি। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে তোমার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে।”

অন্তিক অবাক দৃষ্টিতে মিষ্টির দিকে তাকায়। সে মনে মনে ভাবে, মিষ্টি কী জেনে বুঝেই অন্তিককে বিয়ে করেছে! কই অন্তিক ঘুনাক্ষরে টের পায়নি। অন্তিক নিজের মনকে প্রশ্ন করে, মিষ্টি তাকে বলেনি নাকি সে জানতে চায়নি। মিষ্টির উপর অন্তিকের অভিমান হয়। সে সব জানা স্বত্ত্বেও অন্তিককে কিছু বলেনি বলে। অন্তিক গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,” তুমি সব জানতে, মিষ্টি?”
” অল্প অল্প জানি। যতটুকু জানি সব তোমায় ঘিরেই।”

অন্তিক কিছু বলে না। কিন্তু সে মোল্লা বাড়ি থেকে মায়ের চলে আসার পিছনের মূল কারণ শুনতে আগ্রহী। রুনা বুঝতে পারে বিষয়টা। গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে অতীতের কালো দিনগুলোর কথা বলতে থাকে।
বিদারক দিনগুলোর বর্ণনাদাতা সহ আরো দুজন মানুষের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে। অন্তিক মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মায়ের মাথায় হাত রেখে বলে,” তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের এক একটা হিসাব দিতে হবে তাদের। তোমার গা ছুঁয়ে বলছি মা, আমি সবাইকে দেখে নিব।”
————————–

বাবার ভিটায় পা রেখেছে রুনা। সাথেই তার সন্তান ও সন্তানের স্ত্রী। মিষ্টিদের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই রুনার বাবার বাসা। মাসে একবার রুনা এখানে এসে ঘর বাড়ি পরিষ্কার করে যেত। অন্তিক ভাড়া বাড়িতে উঠতে চেয়েছিল কিন্তু সেই রাজি হয়নি। বাবার ভিটা এমনিতেই পড়ে আছে। এরমাঝে মিষ্টি অন্তঃসত্ত্বা। রুনা মিষ্টিকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চায় না। তাই ছেলে বউকে নিয়ে বাবার বাড়ি উঠেন। পুরোনো বাড়িটা মিষ্টির বেশ পছন্দ হয় সে অন্তিকের হাত জড়িয়ে ধরে বলে,” বাড়িটা সুন্দর না, অন্তু?”

অন্তিক টু কথাও বলেনি সে মিষ্টির হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে হনহন করে ঘরে চলে যায়। মিষ্টি অবাক নয়নে স্বামীর চলে যাওয়া দেখে রুনাকে প্রশ্ন করে,” তোমার ছেলের মতিগতি আমি কিছুই বুঝিনা, মনি মা। বাহিরের জগতে সে নুন ছাড়া ভাত কিন্তু আমার সামবপ আসলেই লঙ্কা সহ ভাত। যার সকল ঝাল আমার উপরই খাটায়।”

রুনা হাসেন। মিষ্টিকে তার চেনা আছে। অন্তিক রাগ করেছ তিনি জানেন মিষ্টি তার ছেলের রাগ ঠিকই ভেঙে ফেলবে।

রাতের খাবারের পরে মিষ্টির শরীর খারাপ লাগছিল। ঘরে এসেই সে বিছানায় শুইয়ে পড়ে। নড়াচড়া করার শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। অন্তিকও এরমধ্যেই বাসায় ফিরে আসে। সে মিষ্টিকে দেখেও না দেখার ভান করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। চোখ বন্ধ অবস্থায় মিষ্টি সব কিছু উপলব্ধি করতে পারছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মিষ্টি তাকায়। অন্তিক গোসল সেরে বের হয়েছে। গা মুছে মিষ্টিকে দেখিয়ে সে তোয়াল চেয়ারের উপর শব্দ করে ফেলে ধপাধপ পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। অন্তিকের কাণ্ড দেখে মিষ্টি অন্তিককে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, ” ইশ, ঢং দেখে বাচি না!”

অন্তিক ঘরে থেকে বের হয়ে এই নিয়ে পাঁচবার পিছনে ফিরে তাকিয়েছে। উদ্দেশ্য মিষ্টি তার পিছু আসছে কী না তা দেখার। মিষ্টির আগমনের কোনো লক্ষ্মণ না পেয়ে অন্তিক ভাবুকের স্বরে বলে, ” আশ্চর্য! আমি এতো করে মিষ্টিকে বুঝাতে চাইছি যে, আমি রাগ করেছি। সে কী বুঝতে পারছে না! নাকি বুঝেও বুঝছে না।”

অন্তিক নিজেকে পুনরায় প্রশ্ন করে,” মিষ্টি কী আমাকে ভুল বুঝে নিয়েছে? ”

অন্তিক ফট করে ঘুরে নিজেদের ঘরের দিকে এগোয়! তাড়াহুড়োয় শার্টের হাতা লোহার সাথে বেজে ছিঁড়েও ফেলে। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করতেই তার চক্ষু চড়কগাছ! মিষ্টি খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। অন্তিক মাথা চুলকে মুচকি হেসে বলে,” আমাকে চিন্তায় রেখে মহারাণী কী সুন্দর ঘুমাচ্ছে।”

এক পা দুই পা ফেলে মিষ্টির কাছে এগিয়ে আসে অন্তিক। মাথা নীচু করে মিষ্টির গালে ও ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় সে। গলার কাছটায় ছোট ছোট চুমু এঁকে হতাশার সুরে বলে,” আমার অভিমান কী ধরতে পেরেছো, চন্দ্রিমা!”
মিষ্টি ঘুমের ঘরে উত্তর না দিলেও অন্তুকের গলা জড়িয়ে পাশ ফিরে শোয়। অন্তিক তা দেখে মুচকি হাসে। মিষ্টির হাত ছাড়িয়ে দরজা আটকে নেয় সে। এরপর মিষ্টির পাশে শুয়ে তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় সে। মাথায় চুমু এঁকে বলে,” এবার তোমার সাথে লুকোচুরি খেলব,চন্দ্রিমা! সজাগকালে তোমাকে ছুঁয়ে দিতে না পারলেও তোমার ঘুৃমানের ফায়দা নিব, মিষ্টি রাণী! তুমি হয়তো জানো না, তোমার ঠোঁটের স্বাদ অমৃতের চেয়েও সুস্বাদু। এই স্বাদ আমার প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টা, প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড প্রয়োজন।”

মিষ্টিকে উন্মুক্ত বুকের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে ভবিষ্যতের ব্যপারে ভাবতে শুরু করে, অন্তিক।
——————————–

সকাল থেকেই বমি করছে মিষ্টি। অন্তিক গিয়েছিল বাজার করতে। বাড়ি ফিরে মিষ্টির আেহাল দশা দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। রুনা ছেলেকে আশ্বাস দেন, এই সময়ে এমন হয়ই কিন্তু অন্তিক নাছোড় বান্দা মিষ্টির অসুস্থতায় পাগল হয়ে রওনা হয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞ মরিয়ম জানায়, ” সব ঠিকঠাক আছে। বেশি করে পানি খেতে। ডাক্তার দেখানো শেষে বউ শাশুড়ি কেবিন থেকে বের হয়ে আসে। অন্তিক তখন বাহিরে ছিল। মা ও স্ত্রীকে ফিরতে দেখে বলে,” সব ঠিকঠাক আছে তো মা!”
” উফ তুমি অযথা চিন্তা করছো, অন্তু। আমি ও বাবু ঠিক আছি।”
অন্তিক বাঁকা চোখে তাকিয়ে নজর অন্যত্র সাথে সাথেই ঘুরিয়ে নেয়। অদূরে দোকান দেখিয়ে বলে,” আমার সন্তান যেন সুস্থ থাকে বলে দিলাম। যা যা প্রয়োজন সব এনে দিব। স্ত্রীর কোনো কষ্ট পেতে দিব না। তোমরা ঐ চেয়ারটায় বসো। আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।”

অন্তিক চলে যেতে নিলে মিষ্টি পথ আটকায়।
” এখানে কেউ তোমার বা আমার পূর্ব পরিচিত নয়। একটা টেস্ট করিয়ে নিলে হয় না!”

” মিষ্টি ঠিক বলেছে। এখন তুই বাহ্যিক দিক থেকে মেনে নওতে পারছিস ঠিকই কিন্তু কোনো একদিন যদি মিষ্টিকে ভুল বুঝে ছেড়ে যাস তখন এই মেয়ের কী হবে?”

মায়ের কথায় অন্তিক মাথা তুলে তাকায়। তার চোখ জোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে,” আমার জীবন থাকতে মিষ্টিকে ছেড়ে দিবও না আর কোথাও যেতেও দিব না।”

অন্তিক ব্যস্ত পায়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আজ কী হবে সে জানে না কিন্তু নিজের জন্য হলেও ডাক্তার দেখাবে।

রিপোর্ট এসেছে বিকাল চারটায়। অন্তিক না দেখেই বাড়ি ফিরে বসে। মিষ্টি তখন বরইয়ের আচার খাচ্ছিল। অন্তিকের আগমনে সে নড়েচড়ে বসে। হাতের আচার একপাশে রেখে বলে, ” এই অবেলায় কীসের রিপোর্ট নিয়ে এলে?”

অন্তিক নিঃশব্দে রিপোর্টখানা মিষ্টির হাতে দেয়। আজ তার মধ্যে রিপোর্ট দেখার কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। সে অন্যপ্রান্তে ফিরে অপেক্ষা করতে থাকে। এমতাবস্থায় মিষ্টি রিপোর্ট পড়ে আর্তচিৎকার করে ওঠে বলে,” এটা কীভাবে সম্ভব, অন্তু?”

চলবে…………

[দেখী হয়ে গেল। সরি। রিভিশন দেইনি, বানান ভুল হলে বলবেন। ঠিক করে নিব। সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here