চুপিসারে (৮) #রেহানা_পুতুল

0
507

#চুপিসারে (৮)
#রেহানা_পুতুল
শ্রাবণ কোন প্রতিউত্তর দিল না। ব্যক্তিত্বপূর্ণ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে তাদের সামনে থেকে চলে গেলো। বাইক ছেড়ে দিলো ক্ষিপ্র গতিতে।

এই শ্রাবণ.. বলে পিছন দিয়ে বার কয়েক ডাকল রজত। ডাকতে ডাকতে এগিয়ে এলো। তাতে কোন লাভ হল না। রজত ও নদী পা চালিয়ে দ্রুত চলে এলো গেটের বাইরে। দেখল শ্রাবণ নেই। নদী তব্দা খেয়ে গেলো। কিছুই বোধগম্য হল না তার। একরাশ কৌতুহল খেলা করছে তার নয়নকোণে।

জিজ্ঞেস করলো,
কি ব্যপার রজত ভাই? বড় ভাইয়া আপনাকে মানা করার পরেও এলেন কেন?

এলাম কেন মানে? তোকে পুরা মাসভর রিকশায় করে কে আনানেওয়া করেছে? বিরক্তি নিয়ে বলল রজত।

সেটাতো আপনিই করেছেন। কিন্তু আমার কথা হলো যেহেতু উনি বলছে আসবে। তাহলে আপনি এলেন কেন?

শীতল কন্ঠে বলল নদী।

আসছি কি হয়েছে? সে হয়েছে চেয়ারম্যান। তার মনে বইছে ক্ষমতার সুবাতাস। হৃদয়পালে সুখ সুখ নতুন হাওয়া। তার কখন কোনদিকে যেতে হয় না হয় তার কোন গ্যারান্টি আছে? যদি বাইচান্স সে না আসতো। একা একা যেতে পারতি বাড়িতে? হাতের কাছে নাকি বাড়ি?সারাবছর খবর নেয়না তোর। থাকে ধান্ধা নিয়ে। এখন আসছে আদিখ্যেতা দেখাতে। হুহ!

প্রবল ক্ষোভ ঝেড়ে বলল রজত।

নদী বেকুব চাহনি নিক্ষেপ করলো রজতের মুখপানে। নিরব থেকে পা বাড়িয়ে হাঁটা ধরলো। রজত পাশাপাশি হাঁটছে নদীর।একটু পর পাশ থেকে নদীর হাত ধরে ফেলল। লংকামরিচ নামে একটি ভর্তাভাতের হোটেলে ঢুকলো। নদীর পছন্দের সব ভর্তা ও গরুর ঝাল গোশত দিয়ে দুজনে লাঞ্চ করে নিলো। খাবার শেষে খেলো দই ও পুডিং। ক্ষুধার্ত পেটে খাবারের প্রতিটি মেন্যু নদীর মুখে অমৃতর মত লাগলো।

শেষে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে রিকশা নিলো রজত। রজত ও নদী পাশাপাশি বসলো। রিকশা ছেড়ে দিলো। পুরো দৃশ্য এতক্ষণ শ্রাবণ অবলোকন করলো রাস্তার বিপরীত পাশে থেকে। সে তার বাইকে বসেছিলো পায়ের উপর পা তুলে। সিগারেটের প্রতিটি সুখটানের ধোঁয়া বাষ্পীভূত করে দিলো মুখ বরাবর সামনের দিকে। তারপর আধপোড়া সিগারেটটাকে নিচে ফেলে দিলো। কেডসের নিচে ফেলে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে পিষে ফেলল।

রিকশায় যেতে যেতে রজত নদীকে বলল,
কিরে ঢেউ মন খারাপ করলি নাকি? চেয়ারম্যান ইশতিয়াকের সঙ্গে বাইকে চড়ে যেতে পারলি না বলে?

ঢেউ ডাকটি কর্ণকুহুরে যেতেই ধুম করে হেসে ফেলল নদী। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

আমার মন খারাপের মতন কিছুই ঘটেনি। আর আমাকে ঢেউ বললেন কেন?

কেন মন্দ লাগছে শুনতে? ওকেহ। তাহলে স্রোতস্বিনী নয়তো তটিনী বলেই ডাকব আজ হতে। নাকি বলিস ঢঙী?

নদী গরম চোখে তাকাল রজতের দিকে। রজত হেসে ফেলল। নদীর বেনী করা দীঘলকালো কেশগুলো ধরে নেড়েচেড়ে দিলো। বলল,
গান শুনাবি কবে?

আপনি যখন চাইবেন?

“পথে যেতে যেতে গাইবে তুমি গান
শুনে ভরে যাবে মোর অশান্ত পরান।”

নদী খিলখিল করে হেসে ফেলল। বলল,
আপনি না পরিক্ষা শেষ হলে আমাকে কি বলবেন রজত ভাই?

রজত বুঝতে পারলো। তবুও ভান করলো না বুঝার। ঘাড় ঘুরিয়ে নদীর চোখে চোখ রাখলো। চোখের পাতা উল্টিয়ে ইশারায় জানতে চাইলো কি?

বারে? পরিক্ষা শুরুর আগে বললেন না, পরিক্ষা শেষে কি যেন জরুরী আলাপ আছে আমার সাথে?

ওরেব্বাস! ভুলিস নি? এই উড়ুউড়ু মন নিয়ে পরিক্ষা দিয়েছিস তো?

হুহ! মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়েছি। এবার বলেনতো শুনি। পরিক্ষা শেষ তাই মনটা বেশ ফুরফুরে আমার।

আচ্ছা বলব সময় সুযোগ করে। এসে গেছি। নাম এবার।

রজত নদীকে নিয়ে নানাদের বাড়ি ঢুকলো। হাফসা বিবি তাকে ভাত খেতে বলল। রজত জানাল,

খেয়ে এসেছি বুড়ী। খাব না। তোমার নাতনিকেও খাইয়েছি পঞ্চ পদের ভর্তা দিয়ে। আমি চলে যাব। তোমার পান,সুপারি,জর্দা, দুধ লাগবে?

হ লাইগবে পান আর জর্দা।

রজত বাজার থেকে এসব এনে দিয়ে নিজেদের বাড়ি চলে গেলো।
নদীর প্রতি রজতের দায়িত্ববোধ,কর্তব্যবোধ,
মায়ামমতা নাহার বেগমের একদম পছন্দ হচ্ছে না। আবার কিছু বলাও যাচ্ছে না রজতকে। কেননা শ্রাবণ বিভিন্ন সভা,সেমিনারে ব্যস্ত থাকে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানামুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে। তাই পারিবারিকভাবে সবাই নদীর পড়াশোনা ও দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছে রজতকে। সুতরাং সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরুর সঙ্গে রজতের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলতে চায়।

নাহার বেগম বড় ননদ রাফিয়াকে ফোন দিলো। বিয়ের প্রসঙ্গ তুলে যা বলার বলল। রাফিয়া জবাবে বলল,

ভাবি আমিওতো চাই আমার ভাইঝি আমার ঘরে আসুক। কিন্তু রজতের সঙ্গে সেইভাবে ফাইনাল করে আলাপ করতে পারিনাই। দেখি আইজকাই আলাপ পাড়ুমনি। তারপর তোমারে জানামু।

পরিক্ষা শেষ হওয়ার পরেরদিন নদী সব কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। উদ্দেশ্য নানার বাড়ি চলে যাবে মায়ের কাছে। এমন সময় শ্রাবণ এলো। নদীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। রাশভারি কন্ঠে বলল,

কিরে স্বশুর বাড়ি যাচ্ছিস নাকি?

কাল নানাদের বাড়ি যাব বড় ভাইয়া।

ওহ! কবে আসবি?

আর আসব না। নদীর কন্ঠে অভিমান,ও তেজ।

কেন আসবি না?

কেন আসবো ভাইয়া?

এটা তোর বাড়ি নয়?

জানিনাতো।

শ্রাবণ দাদীর পানে চাইলো। শক্ত চোয়ালে গমগমে স্বরে বলল,

দেখলে দাদী? তোমার নাতনীর বাঁকা আনসার? এই, তুই নিজের ইচ্ছেমতো তো সব ঠিকই জানিস ও পারিস।

নদী নিরীহ চোখে অপলক চেয়ে রইলো শ্রাবণের দিকে।

আহ! থামতো শাবুন ভাই। বলল হাফসা বিবি।
শ্রাবণ থামেনি। মুখ চালাতে লাগল। চাহনি ঘুরিয়ে নদীর দিকে আনল। বলল,

চোখ নামা বলছি। এভাবে চাইতে হবে না আমার দিকে। একদম চোখ গেলে ফেলব। সেদিন গিয়ে সব তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাইনি। পরে আবিষ্কার হলো কি? সেসব তো খুব ভালো পারিস। ফাজিল কোথাকার।

রাগান্বিত হয়ে বলল শ্রাবণ।

নদী পালটা জবাব দিতে গেলে শ্রাবণ ঝাড়ি মেরে উঠলো তাকে। এবং শ্রাবণ বের হয়ে গেলো ঘর থেকে।

পরেরদিন সকালে মোরশেদা এলো। নদীর চলে যাওয়ার প্রস্তুতি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
নদী কি নানার বাড়িতে যাচ্ছো নাকি?

হ বড়াম্মু।

আচ্ছা যাও। তবে চইলা আইসো কয়দিন পর। তোমার বড় ভাইয়ার জন্য বিয়ের পাত্রী দেখতেছি।

নদী কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর তার নানার বাড়িতে চলে গেলো। দুইদিন পর এক বিকেলে রজত তার ছোটমামী রুবিনা ও মামাতো বোন নদীকে দেখতে গেলো। নিয়ে গেলো নানারকম ফল ফলাদি। মামীর সঙ্গে গল্প গুজব করলো। রুবিনা সেলাইয়ের মেশিনে মন দিলো কিছু একটা সেলাই করতে। মেশিনের খটখট আওয়াজ শুরু হলো। রজত এমন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। নদীকে ডাক দিলো নিরালায়। নদী এলে স্মিত হেসে বলল,

তুই না আমার বলা কথা শুনতে চেয়েছিলি?

হুম চেয়েছিলাম তো। বলেন।

রজত একটু চুপ মেরে রইলো। নদী নেত্রপল্লব উল্টিয়ে তাড়া দিলো বলার জন্য। পরক্ষণেই রজত ভণিতা না করেই সোজাসাপ্টাভাবে নদীকে। জিজ্ঞেস করলো,

আমার ধারণা তুই আমাকে অল্পস্বল্প হলেও পছন্দ করিস। অন্যকিছু হিসেবে নয়। একজন মানুষ হিসেবে। এটা সত্যি?

রজতের সঙ্গে কথা বলতে, মিশতে নদীর কখনো সংকোচবোধ হয় না। দুবার ভাবতে হয় না কিছু বলতে। তাই নদী চটপট করে উত্তর দিলো,

হ্যাঁ পছন্দ করি। হঠাৎ কি হলো এটা জানার?

মা,মামী,মামা আরুকে বিয়ে দিতে চায় আমার কাছে। এটা জানিস তুই?

নাতো। অবাক চোখে নদীর নৈব্যত্তিক জবাব।

এখনতো জানলি।

তো? আমি কি করব? মিটমিটিয়ে হেসে বলল নদী।

হাসবিনা নদী। এটা হাসার মতো কোন কৌতুক নয়।এটা দুজন মানুষের পুরো জীবনের ভালোথাকার বিষয়।

নদী সিরিয়াস মুডে রজতের দিকে চাইলো।
রজত বলল,

আমি আরুকে বিয়ে করতে চাই না। তাকে মামাতো বোন হিসেবে আদর করি,ভালোবাসি। এর বাইরে কিছুই নয়। সে আমার বেশ ছোটও।

তো আপনি কার গলায় মালা পরাতে চান মিষ্টার রজত?

আমি তোকে চাই আমার লাইফে। অন্যকাউকে নয় মাই ডিয়ার নদী।তুই রাজী কিনা বল?

নদীর হাত টেনে নিয়ে তৃষ্ণাত চোখে বলল রজত।

নদী দৃষ্টি লুকিয়ে ফেলল রজত থেকে।লাজুক মুখে মৌন হয়ে চেয়ে রইলো নিচের দিকে।

চলবে

#চুপিসারে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122113601558106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here