#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৭(১ম ভাগ)||
২৭।
চার বছর পর আফিফের মুখোমুখি হলো আহি। মানুষটাকে দেখেই তার মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে গেলো। যাকে আহি চার বছর আগে পেছনে ফেলে এসেছিল, সে কল্পনাও করতে পারে নি সেই মানুষটা আবার তার সামনে এসে দাঁড়াবে। আহির চোখ ছলছল করছে। আফিফ এখনো আহিকে খেয়াল করে নি। সে ব্যস্ত তার হাতে থাকা কাগজপত্র দেখায়। এদিকে রাদ আহিকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রূ কুঁচকে সামনে তাকালো। আহির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে সে কিছুদিন আগেও ক্যাম্পাসের গেটের সামনে দেখেছিল। আহি নিজেই রাদকে দেখিয়ে দিয়েছিল। তাহলে সেদিন আফিফের ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়ানো কোনো কাকতালীয় ব্যাপার ছিলো না। তার সাথে এখনো হয়তো এই ক্যাম্পাসের কোনো যোগসূত্র আছে। রাদ এতোটুকু জানে আফিফ আর আহি একই ডিপার্টমেন্টে। এখন যদি আফিফ ভার্সিটির প্রফেসর হয়, তাহলে আহির মানসিক ভাবে আরো কষ্ট সহ্য করতে হবে।
যন্ত্রণাদায়ক অতীত যদি বর্তমানে চলে আসে, তাহলে বর্তমানটাই এলোমেলো হয়ে যায়। আহি তো আফিফকে অতীত আর কল্পনার মাঝেই রাখতে চেয়েছিল, তাহলে কেন এই মানুষটা আবার তার সামনে এলো? তার কি আরো কষ্ট পাওয়া বাকি আছে? এই মুহূর্তে আহির মনে হচ্ছে সে শূন্যের উপর ভাসছে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া প্রবাদটি সে আজ অনুভব করতে পারছে। আদতে মাটি সরে না গেলেও তার মনের শূন্যতা পৃথিবীর ব্যস্ততাকে ক্ষণিকের জন্য থামিয়ে দিয়েছে। আহির অস্থির মনটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।
আহির প্যানিক এট্যাক আসার সম্ভাবনা আছে। খালি চোখে আহিকে দেখে কেউ বুঝবেই না তার মনের অবস্থা। কিন্তু রাদ সূক্ষ্মভাবে দেখছে তাকে। আহির হাত কাঁপছে। রাদ আহির কাছে এসে তার হাত ধরে তাকে নিজের দিকে ফিরালো। আহি রাদের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। রাদ চাপা স্বরে বলল,
“আহি, রিল্যাক্স। প্লিজ নিজেকে শক্ত কর। তোর অবস্থা দেখলে ছেলেটা বুঝে যাবে, তুই এখনো তাকে মনে রেখেছিস। এমন হয় না আহি। ওর সামনে তুই দুর্বল হতে পারবি না।”
আহি কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমার এমন লাগছে কেন, রাদ?”
রাদ আহির দুই হাত শক্ত করে নিজের হাতে আবদ্ধ করলো। তারপর মুচকি হেসে বলল,
“আমার এখন ইচ্ছে করছে তোকে জড়িয়ে ধরতে।”
আহি রাদের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো। রাদ আবার বলল,
“আহি, আমি তোকে ভালোবাসি।”
আহি রাদের হাত ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রূ কুঁচকে বললো, “কি বললি!”
রাদ হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ, তোকে শান্ত করতে পেরেছি।”
আহি মলিন হেসে বলল,
“তুই আসলেই আমার মেডিসিন।”
(***)
আহি উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। পেছনেই আফিফ দাঁড়িয়ে আছে। তাই আহি আর পেছনে তাকালো না। কিন্তু ভাগ্যটা আজ তার বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ পেছন থেকে তার নাম ধরে মেয়েলী কন্ঠে কেউ একজন ডাক দিলো। আহি কন্ঠটা শুনেই চমকে উঠলো। আহি পেছন ফিরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু আবার সেই কন্ঠটি আহির নাম ধরে ডাকলো। এবার আর ডাকটি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আহি পেছন ফিরে তাকাতেই সামনে থাকা মেয়েটির চোখে আনন্দাশ্রু ভীড় করলো। আহিও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নিজের অশ্রু আটকে রাখতে পারলো না। দু’জনই প্রায় আবেগী হয়ে গেছে। এবার দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
পদ্ম চোখের পানি মুছে আহির দিকে তাকালো। কাঁপা কন্ঠে বলল,
“কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই? কতো খুঁজেছি তোকে! একটা কল দেওয়া কি যেতো না? কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা। সব ভুলে গেলি, আহি?”
আহি পদ্মের হাত ধরে বলল,
“আমি কখনো তোদের ভুলতে পারি নি। তোরা আমার কাছে বেস্ট ছিলি।”
“বেস্ট, এটাকে বেস্ট বলে? এভাবে যোগাযোগ শেষ করে দূরে চলে যাওয়ার কোনো মানে হয়? সবার কাছেই ফোন আছে এখন। একটা কলও কি দেওয়া যেতো না? আমি তো তোকে অনেক খুঁজেছিলাম। কিন্তু তুই আমাকে ব্লক করে দিয়েছিলি। কেন আহি? আমার অপরাধ কি ছিল?”
“তোর কোনো অপরাধ ছিলো না। আমিই অপরাধী। এখন কারণ জানতে চাস না প্লিজ। এতোটুকু জেনে রাখ, আমার পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিলো না। আর আমিও ভালো ছিলাম না।”
পদ্ম আহির হাতে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
“আমার আজ এতো খুশি লাগছে, আমি বলে বোঝাতে পারবো না। এখন বল, কেমন আছিস?”
“ভালো, তুই কেমন আছিস?”
“আমিও ভালো। এই মুহূর্তে আরো বেশি ভালো আছি। কতো বছর পর তোর সাথে দেখা হলো! তুই এমন শুকিয়ে গেছিস কেন? খাওয়া-দাওয়া করিস না না-কি? শুনেছি বাইরের দেশে গেলে মানুষ মোটাসোটা হয়ে ফিরে। আর তোকে দেখে মনে হচ্ছে, সেই দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল।”
আহি পদ্মের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে তাকে জড়িয়ে ধরলো, আর মনে মনে বলল,
“জগতের দুর্ভিক্ষ আমার মনের দুর্ভিক্ষের কাছে হেরে গেছে, পদ্ম। যদি ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় আর চাঁদ ঝলসে যাওয়া রুটির মতো মনে হয়, তবে আমার প্রণয় বিরহে পৃথিবী মরুভূমি আর পদ্মফুল সেই মরুভূমিতে উঠা ধূলিঝড়।”
আহি এবার পদ্মকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“তুই তো ভীষণ সুন্দর হয়ে গেছিস। তোর রূপের রহস্য কি?”
পদ্ম লাজুক হেসে পেছন ফিরে তাকালো। আহিও পদ্মের দৃষ্টি অনুসরণ করলো। আফিফ এতোক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে দুই বান্ধবীর উষ্ণ আলিঙ্গন দেখছিলো। দু’টি তৃষার্ত প্রাণকে জল খুঁজে পাওয়ার আনন্দে মত্ত দেখে আফিফের মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠল।
পদ্ম আফিফের কাছে এসে তার হাত ধরে তাকে আহির মুখোমুখি এনে দাঁড় করালো। রাদ একপাশে দাঁড়িয়ে আহির দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলছে,
“আল্লাহ, আহিকে ধৈর্য ধরার শক্তি দাও। ও অন্তত দুর্বল না হোক।”
এবার পদ্ম আফিফকে বলল,
“আফিফ, ও আমার ছোট বেলার বান্ধবী, আহি। আপনার মনে আছে, ও আমাদের বিয়েতে এসেছিল!”
পদ্মের কথা শুনে আফিফ সেকেন্ড খানিক আহির দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। পদ্ম বলল,
“আমি আপনাকে ওর কথায় বলতাম। হুট করেই মেয়েটা গায়েব হয়ে গিয়েছিল।”
পদ্ম এবার আহির হাত ধরে বলল,
“এখন আর পালাতে পারবি না তুই।”
আফিফ গলা খাঁকারি দিয়ে পদ্মকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুমি কথা বলো। আমি কাজ শেষ করে আসছি।”
আফিফ দ্বিতীয়বার আর আহির দিকে তাকানোর সাহস পেলো না। তার মনটা কেমন যেন কচকচ করছে। সে সোজা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে পড়লো। কিন্তু আহির চোখ দু’টি এখনো আফিফের যাওয়ার পানেই স্থির। তার চোখ জোড়া আবার ছলছল করে উঠলো। লজ্জা আর জড়তায় তার গলায় কথা আটকে গেছে। সে মনে মনে ভাবছে, যদি একবার জানতো তাকে আবার কোনো একদিন আফিফের মুখোমুখি হতে হবে, তাহলে চার বছর আগে সেই বর্ষার রাতে কখনোই তার মনে জমিয়ে রাখা কথাগুলো সে আফিফকে জানাতো না। মনের কথা মনেই রেখে দিতো।
পদ্মের কথায় আহির ঘোর কাটলো। সে জিজ্ঞেস করলো,
“তোর সাথে লিনুর কিছু হয়েছে?”
আহি না সূচক মাথা নেড়ে বলল,
“এখন এসব কথা রাখ। আগে বল, তুই এখানে কি করছিস?”
পদ্ম বলল,
“এখানে আমি আমার কাজে আসি নি। আফিফের কাজে এসেছি।”
আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“উনি কি এখানে চাকরি নিয়েছে?”
পদ্ম হেসে বলল,
“না। আফিফ এ বছর মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে।”
পদ্মের কথা শুনে আহির বুকটা কেঁপে উঠলো। সে পদ্মকে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। সে যতোদূর জানে আফিফ চার বছর আগে অনার্স শেষ করেছিল। তাহলে চার বছর পর সে মাস্টার্সে কেন ভর্তি হতে এসেছে? যাই হোক, ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু সেই মুহূর্তেই বা কেন, যখন আহিও মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে?কয়েকদিন আগে জানলে আহি কখনোই এখানে ভর্তি হতে আসতো না।
হঠাৎ পুষ্প কোথা থেকে এসে পদ্মকে দেখে চমকে উঠলো। সে চোখ বড় বড় করে বলল,
“পদ্ম! আমাদের নাওশিন পদ্ম যে!”
পুষ্প গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে পদ্মের দিকে তাকিয়ে রইলো। পদ্ম পুষ্পের এমন কান্ড দেখে হেসে বলল,
“কেমন আছিস তুই?”
পুষ্প ভাব নিয়ে বলল,
“আমি তো সবসময়ই ভালো থাকি। পলি আপু গ্রুপে আমার চেয়ে সুখী কেউ নেই।”
পদ্ম পুষ্পকে জড়িয়ে ধরলো। পুষ্প পদ্মের গাল টেনে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তো এখানে কেন তুই? চার বছর পর আবার নতুন করে পড়াশুনা শুরু করতে এসেছিস নাকি? তোর ঝগড়ুটে শাশুড়ি এতো ভালো হলো কবে থেকে রে?”
পদ্ম হেসে বলল,
“আরেহ না। আমার বরের সাথে এসেছি।”
পুষ্প অবাক হয়ে বলল,
“দুলাভাই কি আমাদের ক্লাস পাবে নাকি?”
“ধুর, ও মাস্টার্সে ভর্তি হতে এসেছে।”
পুষ্প চোখ দু’টি গোল গোল করে আহির দিকে তাকালো। আহি পুষ্পের এমন মুখভঙ্গি দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
পুষ্পের এই এক অভ্যাস! নতুন কিছু শুনলে সে মুখের এমন ভাবভঙ্গি দেখাবে, মনে হবে কোনো ভয়ংকর খবর শুনেছে। পুষ্পের মুখভঙ্গি দেখে পদ্ম হাসতে হাসতে বলল,
“তোর সেই কার্টুন ভাবটা এখনো গেলো না, তাই না?”
পুষ্প মুখটা স্বাভাবিক করে বলল,
“আচ্ছা, এসব বাদ দে। আগে বল, ভাইয়া কি আমাদের সেইম ব্যাচ নাকি?”
“না, উনি তো আমাদের সিনিয়র।”
“তো এতোদিন পর মাস্টার্স করতে কেন এসেছে?”
“আসলে আমাদের বিয়ের পর উনি চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। চাকরিটা ওই সময় খুব দরকার ছিল৷ আর উনি একসাথে দুইটা সামলাতে পারছিলেন না, তাই তখন মাস্টার্স করেন নি।”
“আর এখন কি চাকরি চলে গেছে নাকি?”
পুষ্পের কথা শুনে আহি পুষ্পের মাথায় গাঁট্টা মেরে বলল,
“তুই এতো প্রশ্ন করিস কেন, ভাই? চুপ কর না।”
পুষ্প ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“তোর সমস্যা কি? আমার বান্ধবী, আমি প্রশ্ন করবো না? আর ও তো বিয়ে করেছিল, ভাইয়া যখন বেকার ছিল তখন, তাই না?”
পদ্ম হালকা হেসে মাথা নাড়লো। পুষ্প তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ভাইয়া কিন্তু খুবই ভাগ্যবান পুরুষ। বামুন হয়েই চাঁদ ধরে ফেলেছিলেন।”
আহি পদ্মের দিকে তাকিয়ে ধরা কন্ঠে বললো,
“চাঁদটা ধরা দিয়েছে বলেই তো ধরতে পেরেছে। ধরা না দিলে আজ বামুন ভিন্ন কিছু পেতো।”
পুষ্প বলল,
“কাচ পেতো, কাচ। কোনো মেয়েই ভাইয়াকে পদ্মের মতো ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবে না।”
আহি মলিন হাসলো। পুষ্প যদি জানতো, আহির এআর, পদ্মের বর, তাহলে আহির সামনে কখনোই এই কথা বলতো না। অগোচরে তার বান্ধবীগুলো তাকে আঘাতের পর আঘাত করেই যাচ্ছে। কিন্তু সে নিরব দাঁড়িয়ে শুধু নিজের ক্ষতের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে।
রাদ আহির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সে বুঝতে পেরেছে পদ্ম আর পুষ্পের কথোপকথন আহিকে কষ্ট দিচ্ছে। তাই সে এসে আহির হাতটা ধরলো। এই মেয়েটা যে এখন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই! হুট করে কি না কি করে বসে বলা যায় না। রাদই তো তাকে সামলাতে পারবে।
(***)
প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হতেই আফিফ আর আহির চোখাচোখি হলো। আহি আফিফকে দেখে আবার দুর্বল হয়ে পড়লো। ছেলেটাকে একটা সময় দেখলেই তার হৃদ স্পন্দন বেড়ে যেতো, আর আজ তার চোখাচোখি হতে আহির প্রাণটাই বেরিয়ে যাচ্ছে।
আফিফ পদ্মের কাছে এসে বলল,
“ওরা বলছে অনার্সে ভর্তি হওয়ার এখনো সময় আছে। চলো তোমাকে ভর্তি করিয়ে দেই।”
পদ্ম আফিফের হাত ধরে চাপা কন্ঠে বলল,
“মা যা চান না, আমি তা কেন করবো?”
আফিফ শান্ত কন্ঠে বললো, “মাকে আমি বোঝাবো।”
“না, আফিফ। এখন আমার দায়িত্ব সংসার সামলানো। এমনিতেই আমার উপর মায়ের অভিযোগের শেষ নেই। আমাকে বিয়ে করার পর আপনি মাস্টার্সটা শেষ করতে পারেন নি। এ নিয়ে কি কম কথা শুনেছি? তার ইচ্ছে ছিল, তার ছেলে মাস্টার্স করবে। এখন তার সেই ইচ্ছেটা পূরণ করার দায়িত্ব আপনার। প্রতিবেশীর ছেলে, আপনার বন্ধুরা মাস্টার্স শেষ করে মাকে মিষ্টি খাইয়েছে, আর আপনি নাকি আমার জন্য তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নি!”
পদ্ম আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বললো। পদ্মের কথা শুনে আফিফ তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। মা তো বুঝে না যে মাস্টার্স ছাড়াও ভালো চাকরি পাওয়া যায়। দেখো, আমি নতুন চাকরি নিয়ে মায়ের ভুলটা ভাঙিয়ে দেবো। মা মনে করছে মাস্টার্স করি নি, তাই চাকরিটা চলে গেছে। কিন্তু আসল কারণ তো কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
আহি দূরে দাঁড়িয়ে আফিফ আর পদ্মকে দেখছে। এসব দেখতে ভালো লাগছে না তার। সে চোখ বন্ধ করে নিজের আবেগ লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো। আফিফ তার আবেগ। আর বর্তমানে তার বান্ধবীর বর। আফিফের উপর এখন তার কোনো অধিকার নেই। তাহলে শুধু শুধু এই ছেলেকে ভেবে কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়ে কি তার কোনো লাভ হবে? দিনশেষে তার বুকটাই ভেসে যাবে, আর পদ্মের বুকে আফিফ মাথা রেখে ঘুমাবে। আহির এই খালি বুকটাতে আফিফের কোনো জায়গা নেই। আর প্রকৃতির শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে গিয়ে সে আফিফকে নিজের করেও রাখতে পারবে না।
(***)
পুষ্প ধপাস করে আহির পাশে বসতেই আহি চোখ কচলে চোখের জল আড়াল করে নিলো। পুষ্প আহির কাঁধে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“দেখ, ভাইয়া কিভাবে ফিসফিস করছে পদ্মের সাথে!”
আহি চোখ ছোট করে বলল,
“তো! এসব আমাকে কেন বলছিস?”
“ধুর, বোকা। কিছুই বুঝিস না তুই। মানুষ কখন ফিসফিস করে, বল তো?”
“আমি কিভাবে বলবো?”
“আরেহ, যখন প্রেমের কথা বলে তখন। দেখ, ওদের বিয়ে হয়েছে চার বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কতো সুন্দর সম্পর্ক তাদের! আর এদিকে আমরা। বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো প্রেমিক পুরুষ কপালে জুটে নি। আর তুই কেন বসে আছিস, বল তো? তোর সেই এআরের খবর কি?”
আহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“জানি না সে কোথায় হারিয়ে গেছে। এসব কথা আর জিজ্ঞেস করিস না।”
আহির দৃষ্টি আবার আফিফ আর পদ্মের দিকেই গেলো। তাদের দেখে আহি মনে মনে বলল,
“হারানো জিনিস হারিয়ে যাওয়ায় ভালো। পেয়ে গেলে হয়তো আগলে রাখতে পারতাম না। ভাগ্য যেখানে আমাকে আগলে রাখে নি, আমি আবার কাকে আগলে রাখবো? পুষ্প ঠিকই বলেছে, আমি আফিফের কাছে কাচ আর পদ্ম চাঁদ। কাচের হৃদয় আজ মরুভূমি। যেখানে ভালোবাসার জল নেই। আছে শুধু হাহাকার। প্রিয় মানুষগুলোকে হারানোর হাহাকার।”
চলবে-
(আগামীকাল ২য় অংশটা দেবো)