মেঘের_শহর #পর্ব_১১ Saji Afroz

0
196

#মেঘের_শহর
#পর্ব_১১
Saji Afroz

.

সাইয়ারা কে দেখে অন্তরা আহম্মেদ এক গাল হেসে তাকে ভেতরে আসতে বললেন। মিন্নী এবং মেঘও ড্রয়িং রুমে আছে। তাদের পাশে এসে সোফার উপরে বসলো সে। সোফার সামনে থাকা ছোট টেবিল টার উপরে বড় এক বাটি কাঁঠালের কোষ দেখে সাইয়ারা জানালো, কাঁঠাল তার প্রিয় ফল।
শুনে অন্তরা আহম্মেদ বেশ খুশি হলেন৷ তাকে কাঁঠাল খেতে বললেন। সাইয়ারা খাওয়া শুরু করলে মিন্নী জানায়, তার কাঁঠাল পছন্দ নয়। শুধু তার নয়, মেঘেরও পছন্দ নয়।
অন্তরা আহম্মেদ একটু গম্ভীর স্বরে বললেন-
তোদের রুচি ঠিক নেই তাই। কত্ত মজার একটা ফল কাঁঠাল! মজার না হলে নিশ্চয় জাতীয় ফল হত না?
.
তার সাথে তাল মিলিয়ে সাইয়ারা বলল-
শুধুই যে মজার জন্য জাতীয় ফল এমন টা নয়। এর অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, কাঠাল প্রচুর পরিমাণের পুষ্টিকর ফল। রান্না ছাড়া অবস্থায় খেলে এর পুষ্টি উপাদান অবিবৃত অবস্থায় দেহে শোষিত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে কাঁচা অবস্থায় ৯.৪ গ্রাম এবং পাকা অবস্থায় ১৮.৯ গ্রাম শর্করা, কাঁচা অবস্থায় ২.৬ গ্রাম এবং পাকা অবস্থায় ২.০ গ্রাম আমিষ, কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় ১.১ গ্রাম খনিজ লবন এবং যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন পাওয়া যায়। কাঠালের এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের গঠন শক্তি উৎপাদন এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
.
মেঘের মনে হচ্ছে সাইয়ারা কে কোনো প্রতিযোগিতায় কাঁঠাল সম্পর্ক রচনা লিখতে বা বক্তৃতা দিতে বললে, সে প্রথম স্থান অধিকার লাভ করবে!
মেঘ মৃদু হেসে বলল-
ভালোই জানো দেখছি কাঁঠাল সম্পর্কে।
-জানব না আবার! আমাদের গ্রামের বাড়ির সামনে সারি সারি কাঁঠাল গাছ আছে। গ্রামের সবার কাছে আমাদের গাছের কাঁঠলই সেরা। আমারো অনেক প্রিয় একটা ফল। আর এটা কি শুধু পাকা খাওয়া যায়? কাঁচা অবস্থায়ও রান্না করে খাওয়া যায়। কাঠালের বীচিও রান্না করে খাওয়া যায়। শুধু তাই নয়! আমরা ছোট বেলায় বান্ধবী রা মিলে বীচি পুড়িয়ে বাদামের মতো খেতাম। তারপর কাঁঠালের কোষ থেকে রস বের করে আমসত্ত্বের মতো কাঁঠাল সত্ত্ব বানিয়ে খেতাম।
.
অন্তরা আহম্মেদ বলে উঠলেন-
তোমার কথা শুনে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল! আমরাও এমন করতাম পাড়ার মেয়েদের সাথে।
.
মিন্নী হতাশ কণ্ঠে বলল-
যাই বলো না কেনো। কোনোভাবেই আমার এই ফল টা মজা লাগে না।
.
অন্তরা আহম্মেদ তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন-
একটু অন্তত খেতে তো পারিস? শরীরে পুষ্টি জোগাবে।
-পুষ্টির জন্য আরো কত ফল আছে! ওসব খাব।
.
কিছু একটা ভেবে সাইয়ারা বলল-
আমি কাঠালের আরো একটা জিনিস বানাতে পারি। আমি সিউর, এটা খেলে ভালো লাগবে মিন্নীর।
.
মেঘের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল-
আপনারও।
.
মিন্নী উৎসুক ভঙ্গিতে জানতে চাইলো, সে কি বানাতে পারে।
সাইয়ারা বলল-
পুডিং।
-কাঁঠালের পুডিং হয় নাকি?
.
অন্তরা আহম্মেদ বললেন-
এটা আমার জানা নেই।
.
সাইয়ারা বলল-
আপনি চাইলে আমি এখন বানিয়ে দিই?
.
সাইয়ারার কথা শুনে বেশ ভালো লাগলো অন্তরা আহম্মেদের। তিনি কোনো আপত্তি না জানিয়ে সাইয়ারা কে নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলেন। তাদের পিছু নিলো মিন্নী। মেঘ রিমোট হাতে নিয়ে টিভি টা ছেড়ে দিলো।
সাইয়ারা অন্তরা আহম্মেদ কে রান্নাঘর ছেড়ে চলে যেতে বললেন। তিনি আপত্তি জানালে সে বলল, মিন্নী আছে সমস্যা নেই।
মিন্নীও হাসিমুখে বলল-
আপুর কোনো কিছু লাগলে আমি আছি তো! তুমি যাও মা।
.
অন্তরা আহম্মেদ অবাক চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন।
যে মিন্নী সাইয়ারার নাম শুনতে পারতো না, যাকে সে পছন্দই করেনা আজ নাকি তাকে আপু বলে ডাকছে! আবার সাহায্যও করতে চাচ্ছে!
হঠাৎ এমন পরিবর্তন?
মিন্নী মা কে যেতে বললে তিনি মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলেন।
সাইয়ারা তাকে বলল, আগার পাউডার আছে তোমাদের?
-হ্যাঁ আছে।
-বেশ। এবার কাঁঠালের কোষ গুলো নিয়ে এস।
.
মিন্নী এক দৌড়ে টেবিলের উপর থেকে কাঁঠালের বাটি টা নিয়ে আসলো।
সাইয়ারা কাঁঠালের কোষ থেকে বীচি আলাদা করে নিতে নিতে বলল-
মিন্নী, তরল দুধ আছে?
-হ্যাঁ।
-চুলোয় দুধ গরম করতে দাও। আমি ততক্ষণে ব্লেন্ড করে নিই কোষ গুলো।
.
সামান্য পানি মিশিয়ে কাঁঠালের কোষ গুলো ব্লেন্ড করে নিল সাইয়ারা।
এদিকে মিন্নী চুলোতে দুধ গরম করছে। সাইয়ারা এসে চিনি ও সামান্য পরিমাণে লবণ দিয়ে নাড়তে থাকলো।
দুধ ঘন হয়ে আসলে ব্লেন্ড করা কাঁঠাল তাতে ঢেলে দিলো সে। এরপর আবারো নাড়তে থাকলো।
মিন্নী ক্ষীণস্বরে জানতে চাইলো, টাকা নিয়ে তার বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে কি না।
সাইয়ারাও ধীর কণ্ঠে বলল,
নাহ। আমার কাছে ছিল টাকা। ওগুলাই দিয়ে দিয়েছি। চিন্তার কারণ নেই।
.
সাইয়ারা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিন্নী ধন্যবাদ জানালো।
সেই সময়ে উপস্থিত হলো মেঘ। এই দৃশ্যটি দেখে তার চোখ যেন কপালে উঠে গেল। মিন্নী জড়িয়ে ধরে আছে সাইয়ারা কে!
এই যেন অসম্ভব ব্যাপার।
মেঘ কে দেখে তাড়াহুড়ো করে সাইয়ারা কে ছেড়ে দিলো মিন্নী।
ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল টা বের করে মেঘ আবারো ড্রয়িংরুমে চলে এল।
সোফায় বসতে বসতে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল-
হঠাৎ এই দু’টিতে ভাব কিভাবে জমলো?
-আমিও সেটা ভাবছি। যাক ভালোই হলো। সাইয়ারা কে আমার বেশ পছন্দ। মিন্নী ওর থেকে দূরে দূরে থাকতো পছন্দ ছিল না আমার।
.
অন্তরা আহম্মেদ বিষয়টাকে যতটা সহজ ভাবে নিয়েছে মেঘ নিতে পারলো না। কারণ সে মিন্নীর চোখে সাইয়ারার জন্য ঘৃণা দেখেছে। হুট করে তার জন্য ভালোবাসা জন্ম নিলো কিভাবে?
যদিও এটা ভাবার মতো কোনো বিষয়ই নয়। তবুও ভাবতে বাধ্য হচ্ছে মেঘ।
.
বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পর একটা কাপে পানির সাথে আগার পাউডার মেশালো সাইয়ারা। ভালোভাবে মিশিয়ে পাতিলে ঢাললো সে। এরপর মিন্নী কে বলল,
এখন অনবরত নাড়তে হবে৷ ঘনে হয়ে আসলেই নামিয়ে নিব। তুমি একটা কাজ করো। একটা মাঝারি সাইজের কোনো পাত্র দাও।
ঘন হয়ে আসলেই তাতে ঢেলে ঠান্ডা করতে হবে। আর হ্যাঁ, পাত্রটার উপরে সামান্য ঘি লাগিয়ে দাও।
-আচ্ছা।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর যখন সাইয়ারা এসব মাঝারি আকারের পাত্রে ঢেলে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলো।
অন্তরা আহম্মেদ উৎসুক দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করলেন, পুডিং হয়ে গেছে কি না?
.
সাইয়ারা হেসে বলল-
নাহ আন্টি। এখনো ঘন্টা খানেকের মতো সময় লাগবে। প্রথমে পাত্রটা ঠান্ডা করতে হবে ফ্যানের নিচে রেখে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ফ্রিজে রাখতে হবে। পুরোটা জমে গেলেই তৈরী হয়ে যাবে মজাদার কাঁঠালের পুডিং।
-আমি তো লোভ সামলাতেই পারছি না।
-আর কিছুক্ষণ পরেই খেতে পারবেন। আমি তবে আসি আন্টি।
-আরে তুমি যাবে কেনো? বসো। এত কষ্ট করে বানিয়েছ। খাবে না তুমি!
-এতক্ষণ কি করব। তার চেয়ে আমি যাই।
.
মিন্নী সাইয়ারার হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে এসে বসালো। সাইয়ারা উঠে যেতে চাইলে সে বলল-
পুডিং হতে হতে আমরা লুডু খেলি।
.
অন্তরা আহম্মেদও সহমত পোষণ করে বললেন-
আমিও খেলব। কতদিন খেলি না!
.
মেঘ উঠে যেতে চাইলে মিন্নীর অনুরোধে বসলো। তারা দল করে খেলবে ঠিক করলো। মিন্নী জানালো, সে ও সাইয়ারা এক দলে আর অন্তরা আহম্মেদ ও মেঘ এক দলে।
আপত্তি জানিয়ে অন্তরা আহম্মেদ বললেন-
আমি আর তুই এক দলে। মেঘ ও সাইয়ারা এক দলে।
তুই খেলা ভালো পারিস। আমার দলে থাক।
মিন্নী হাসি মুখে বলল-
তবে হয়ে যাক এক ম্যাচ।
.
অন্তরা আহম্মেদ মুচকি হেসে সাইয়ারা ও মেঘের দিকে তাকালেন। দুজন কে এক দলে ইচ্ছে করেই রেখেছেন তিনি। তাদের একসাথে দেখতেই তার ভালো লাগে।
.
.
.

লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে জিকো। আচমকা পেটে ব্যথা অনুভব করলো সে। মনে হচ্ছে পেটের ভেতরের সব ঘুরপাক খাচ্ছে।
দ্রুতবেগে ওয়াশরুমে গেল জিকো।
সালোয়ার খুলতেই জোরে চিৎকার করে উঠল সে।
রক্তে লাল হয়ে আছে তার সালোয়ার। প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো সে। এত রক্ত কিভাবে এল বোঝার চেষ্টা করলো৷ ভালো করে খুতিয়ে দেখলো, শরীরের কোথাও কোনো জখম হয়নি। জিকোর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে তার। একসাথে এত রক্ত দেখে ছেলে হয়েও ঘাবড়ে গেল জিকো। উফফ! কেনো সে ভুলে যায়? এখন সে ছেলে নয়, মেয়ে। তাই তো এখন তার পিরিয়ডও হয়েছে।
সালোয়ার বদলে পরিষ্কার হয়ে রুমে ফিরে এল জিকো। পেটের মাঝে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করছে সে।
পিরিয়ড সম্পর্কে স্কুলে থাকতেই সে পাঠ্যবই তে পড়েছে। এই বিষয়ে ছেলে মেয়ে সকলেরই জানা আছে। জিকোরও ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রথমবার হওয়াতে কিভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে।
এই সময়ে কি ব্যবহার করতে হয় এটাও এখন তার মাথায় আসছে না। এদিকে পেটের ব্যাথায় অস্থির লাগছে তার।কোনোমতে গুগলে সার্চ করে জানলো, এই সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হয়।
দেরী না করে চুলগুলো দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে খোপা করে নিলো জিকো। গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে। ন্যাপকিন কেনার প্রয়োজন তার।
.
ফামের্সীর দোকানের সামনে এসে দেখলো, বেশ কয়েকজন লোক বসে গল্প করছে। হয়তো কাস্টমার এরা।
জিকোর কেমন যেন লাগছে তাদের সামনে ন্যাপকিনের কথা বলতে। কিভাবে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। ফামের্সী তে থাকা ছেলেটি মাঝবয়সী একটা ছেলে। তাকে জিকো চেনে। বেশ ভালো ছেলেটি।
জিকো চারদিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল, এক প্যাকেট প্যাড দিতে।
ছেলেটি জিকোর অবস্থা বুঝতে পারলো। ধীর কণ্ঠে জানতে চাইলো, কোনটা দিবে।
জিকো বলল-
যেকোনো একটা হলেই হবে।
.
ছেলেটি কাগজের প্যাকেট পেঁচিয়ে জিকোর হাতে দিলো। সেই সময় উপস্থিত লোকেরা আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। চটজলদি
টাকা দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করলো সে।
কিন্তু তার পিছু নিলো কিছু বখাটে। বাসার সামনেই একটা বড় গলি। গলিটা পার হয়েই বাসায় আসতে হবে। রাত হওয়াতে অন্ধকার হয়ে আছে গলিটা। জিকো বুঝতে পারছে তার পেছনে কিছু ছেলেও আসছে। এবং ছেলেগুলো ভালো নয়। তাদের মধ্যে একজন চেঁচিয়ে বলে উঠল-
কাগজের প্যাকেট মুড়িয়ে কি নিচ্ছ আমরা কিন্তু দেখেছি।
.
কথাটি বলেই হাসতে শুরু করলো সকলে।
এমন সময় একটি মেয়েলী কণ্ঠস্বর তার কানে ভেসে এল-
লজ্জা করেনা তোমাদের এসব বিষয় নিয়ে মজা করতে? পিরিয়ড কি শুধু আমাদেরই হয়! তোমাদের মা বোনেদের হয় না? তাদের সাথে কেউ এমন আচরণ করলে তখন কেমন লাগবে?
.
ছেলে গুলো কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো। এই মেয়ের সাথে পারা যাবে না এটি বুঝতে পারলো তারা৷ এলাকায় ঝামেলার সৃষ্টি করলে তাদেরই সমস্যা।
জিকো পেছনে ফিরে তাকালো। লাইটের আবছা আলোতে মেয়েটির চেহারা দেখা গেলেও চিনতে পারছে না সে। তবে মেয়েটি কাছে আসতেই চিনতে অসুবিধে হলো না তার। এই সেই মেয়ে, যার কাপড় চুরি করেছিল জিকো।
মেয়েটির সাহস দেখে সে মুগ্ধ হলো। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই মেয়েটি বলল-
তোমার ভাই আসেনি?
-নাহ।
-ওহ! ওমন চুপচাপ চলে যাচ্ছিলে কেনো? এসব ছেলে কে একদম পাত্তা দিবে না। আমি একেবারেই দিই না।
-আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
-হ্যাঁ। আমার পথ আঁটকানোর কারণে এলাকার এক ছেলে কে থাপ্পড় মেরেছিলাম আমি। ভাড়াটিয়া হলে কি হবে? আমার পরিচিতি অনেক।
.
কথাটি বলে হেসে উঠল মেয়েটি। জিকো তার হাসিভরা মুখটা দেখে যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেল।
জিকো কে চুপ দেখে আঙ্গুলে তুড়ি বাজালো মেয়েটি। জিকো চোখ সরিয়ে তার নাম জানতে চাইলে সে বলল-
নবীনা।
.
নাম বলেই নবীনা বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। জিকো কেও আসতে বলল।
নবীনার সাথে গল্প করতে করতে বাসায় চলে এল সে। নিজের রুমে এসে প্রথমেই ওয়াশরুমে গেল। এতটুকুতেই আবারো সালোয়ারে রক্ত লেগে আছে। যা দেখে খুবই বিরক্ত হলো জিকো।
পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে এসে বিছানার উপরে বসলো সে। পেটে ব্যথা কিছুটা কমেছে তার। তবে ভীষণ অস্বস্তি লাগছে জিকোর।
.
একটু আগে যা ঘটেছে
এমন ঘটনা আগেও ঘটেছিল। তবে একটু ভিন্ন। ছেলেগুলোর জায়গায় ছিল সে। আজ বুঝছে সে ভুল ছিল!
একটা মেয়ে কতটা যন্ত্রণায় থাকে এই সময়ে! শারীরিক যন্ত্রণা, মানসিক যন্ত্রণা! এই যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি কোনো ছেলের বোঝার ক্ষমতা নেই। তাই তারা এসব বিষয়ে উপহাস করে। যেমন টা সে করেছিল। কিন্তু তা একেবারেই অনুচিত।
এসব ভাবতে ভাবতে তার ফোনের রিং বেজে উঠল। বোনের নামটা ভেসে উঠেছে ফোনের স্ক্রিনে।
সাধারণত মাস শেষ না হলে বাসা থেকে ফোন আসে না। কারণ সে নিজেই কথা বলতে আগ্রহ দেখাতো না। আজ হঠাৎ ফোন দেখে খানিকটা অবাক হলো সে। সাথে একটু চিন্তাও হচ্ছে। বাসায় সব ঠিক আছে তো?
কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল তার। কিন্তু রিসিভ করতে গিয়েও করলো না জিকো। তার কন্ঠস্বর যে মেয়েলি হয়ে গেছে। মেয়ের কণ্ঠস্বরে সে কিভাবে কথা বলবে!
.
.
.
ব্যবসার হিসাবের খাতা খুলেছে মোখলেস। কিছু হিসেব লিখে রাখতে হবে তার। কিন্তু কাজে এখন একেবারেই মন নেই। কেবল এখন নেই তা কিন্তু না, আজকাল তার সারাক্ষণ মনটা পড়ে থাকে জেসিকার কাছে। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনি হয়!
মাথাটা সামান্য ঝাকিয়ে হিসাব করতে শুরু করলো মোখলেস। হিসাব শেষ করে খাতায় লিখলো সে। এমন সময় তার বোন এসে চায়ের কাপ টা টেবিলে রেখে বলল-
চা খাবে বলেছিলে তুমি।
-ও হ্যাঁ! রেখে যা।
.
হিসাবের খাতার দিকে চোখ পড়তেই হেসে উঠল মোখলেসের বোন।
সে অবাক হয়ে জানতে চাইলো-
হাসছিস কেনো?
-এসব খাতায় কি লিখেছ তুমি?
.
মোখলেস নিজের লেখায় চোখ বুলোতেই চমকে উঠল। সে হিসাবের খাতায় লিখে ফেলেছে-
জেসিকা, জেসিকা, জেসিকা।
.
নিজের অজান্তেই এমনটা করে ফেলেছে সে। নিজের কাজের জন্য লজ্জাবোধ করলো মোখলেস। এদিকে তার বোন হাসতে হাসতে বলল-
এখুনি বাড়ির সবাই কে জানাচ্ছি। হিসাবের খাতায়ও আপুর নাম লেখা হচ্ছে…
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here