_প্রেমের_সম্মোহন💞 #পর্ব_ ০৩ Writer_Nusrat_Jahan_Sara

0
333

#_প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_ ০৩
Writer_Nusrat_Jahan_Sara

(৩)
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়ই অনু,আরুহি,সামান্তা,আর রিংকি বেড়িয়ে গেলো কনসার্ট দেখার জন্য৷

সেখানে মানুষে গিজগিজ করছে এতো পরিমানে মানুষ৷ ওরা চারজন মানুষদের কোনো রকমে টেলে টুলে গিয়ে চেয়ারে বসলো৷

সাতটা বিশ মিনিটে একটা কার ঢুকলো৷ রেড কার্পেট বিছানো হয়েছে তাদের জন্য৷ ওরা একজন একজন করে বেড়িয়ে আসলো কারের ভিতর থেকে৷

সামান্তাঃওয়াও ফার্স্টই আদনান৷ কী হ্যান্ডসাম৷
.
অনুঃওয়াও শ্রাবন চৌধুরীকেও কিন্তু কম হ্যান্ডসাম লাগছেনা৷
.
রিংকিঃআহিল!!!!!এই দেখ আহিলকে কী সুন্দর লাগছে৷
.
আরুহিঃআদিল ওহ মাই গডন্যাস এরে তো আরও হ্যান্ডসাম লাগছে৷
.
অনুঃফাইনালি আবির রায়হান চোধুরী নেমেছে৷ ওরে বাপরে আরুহি এরে তো একেবারে চকলেট বয়ই লাগছে৷পুরাই ক্রাশ৷
.
আরুহিঃএসব যদি তোর আকাশ জানতে পারে তাহলে কী হবে বুঝতে পারছিস৷
.
অনুঃকচু হবে৷ফাজলামি করিস৷ আর যদি আমার সামনে আকাশের নাম উচ্চারন করিস তো আমি তোকে এখানেই মেরে আদিলের হাতে তুলে দিয়ে চলে যাবো৷ ইউ নো ওয়াট আমি আকাশকে ঘৃনা করি৷
.
আরুহিঃজানি৷ বাট ফার্স্ট লাভ কখনো ভুলা যায়না রে৷
.
অনুঃকে বলেছে ভুলা যায়না৷ আকাশ যদি ভুলতে পারে তাহলে আমি কেনো ভুলতে পারবোনা৷এই দেখ একদিন হয়েছে মাত্র জানিস ওকে এখন দেখলে কেমন জানি বিরক্তি লাগে৷ একদম ভালো লাগেনা এক কথায়৷ প্রেমিক প্রেমিকারা যেভাবে সময় কাটায় সেইভাবে আমার একদিনও সময় কাটায়নি৷ একটা গাছের নিচে বসে গল্প পর্যন্ত করিনি৷ জাস্ট ফোনেই আলাপ হতো৷ তাই বোধহয় ওকে দেখলে কষ্ট হয়না৷আলাদা একটা ফিলিংস্ হয়না ফিলিংস মনে পরেনা৷ ফিলিংস নামক জিনিসটা মনে থাকলে তবেই না কষ্ট হবে৷
.
আরুহিঃহুম এইভাবেই সব সময় স্ট্রং থাকবি বিশেষ করে আকাশের সামনে৷ ও যদি তোকে দূর্বল হতে দেখে তাহলে কিন্তু তোকে আরো বড় ভাবে আঘাত করতে পারে৷আমি জানিনা ও কেনো এসব করছে৷ আমার কী মনে হয় জানিস আকাশ যখন মিতা আপুকে এভাবে তারাহুরো করে বিয়ে করার জন্য প্রেশার দিতে পারে তাহলে অন্য কাউকে যে দিবেনা সেটার সিওরিটি কী৷
.
সামান্তাঃআই এ্যাগ্রি উইথ ইউ৷ হ্যাঁ অনু, বলা ওতো যায়না আরও জায়গা জায়গায় বিয়ে ওতো করতে পারে৷
.
সেসব পরে আলোচনা করা যাবে এখন এদের দেখ৷
.
হু৷
.
নীল কাচের সানগ্লাসের উপর দিয়ে তার ভ্রু যুগল দেখা যাচ্ছে৷ মুখে সেই মিষ্টি হাসি৷ আদিলকে দেখেই সবাই চিল্লিয়ে উঠলো৷ আবির সবাইকে হাত দেখিয়ে স্টেজে গেলো৷ সেখানে আরও অনেক মিউজিক ডিরেক্টররাও আছে৷ সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে পিঠ থেকে গিটারের ব্যাগ নামালো৷ মেয়েরা আবিরকে দেখে একটা আরেকটার উপর পরছে৷ আজ কালো শার্টে আবিরকে ধারুন লাগছে৷

অারুহিঃওই আমরা ওতো সুন্দর কোনো ছেলে তো আমাদের দিকে তাকায় না৷
.
সামান্তাঃছেলেরা না তাকালে ভালো এটলিস্ট গুনাহ তো হলো না৷
.
আরুহিঃওমা তাই৷ বোরকা ছাড়া এসেছো তাতে গুনাহ নেই ছেলেরা তাকালেই গুনাহ৷ এসব হাদিস কই পাস৷
.
রিংকিঃএই দেখ শ্রাবনকে নীল শার্টে কিন্তু খুব মানিয়েছে৷
.
আরুহিঃধুর ছোঁয়া নেই তাহলে তো শ্রাবনকে দেখতে পারতো দাঁড়া আমি ওকে আরেকবার ফোন দিচ্ছি৷ আমরা সবাই দেখবো ও মিস করবে নাকি৷ অনু একটু সাইট দে এখান থেকে ফোনে কথা বলা যাবেনা৷ যে চিল্লা চিল্লি৷
.
আরুহি ফোন নিয়ে কোথাও একটা চলে গেলো৷ কিছুটা দূরে যেতেই দেখলো খুব সুন্দর একটা পুল৷ পুলের মধ্যখানে পাকা করার মতো কী যেনো একটা আছে৷আগে এটা দেখেনি৷ আরুহি এবার ছোঁয়াকে কল দিলো৷ রিং হচ্ছে৷ কিছুক্ষন পরেই কল রিসিভ হলো৷

আরুহিঃএই কই তুই
.
কেনো বাসায়৷
.
তারাতরি কলেজের পাশে চলে আয়৷ ওখানে আজ কনসার্ট আছে৷
.
তো আমি কী করবো৷
.
কী করবি মানে৷ আরে আবিরের ফুল গ্যাং এসেছে৷
.
শ্রাবন এসেছে?
.
হ্যাঁ রে ভাভা হ্যাঁ এসেছে৷ তাইতো তোকে এতো মানুষের ভিড় থেকে এসে কল দিয়েছি৷
.
ওকেহ্ আমি এখুনি আসছি৷
.
আরুহি কল কেটে দিলো৷ পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর চাইতে কিছুটা দূরে আদিল স্মোকিং করছে আর ধোয়া আকাশের দিকে উড়াচ্ছে৷

“ওরে শালা!!এই বেটা দেখি স্মোকিং করে৷ যাক মন্দ না৷
.
আদিল কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আরুহির দিকে তাকালো৷
.
আরুহিঃদিল সে দিল তাক৷ এভাবে না তাকালে কী হতো এখন তো মনে হচ্ছে হার্টবিট বেড়ে মরেই যাবো৷
.
আদিল অন্যদিকে তাকাতেই আরুহি চলে গেলো৷

অনুঃকী রে ছোঁয়া কল রিসিভ করেছে৷
.
আরুহিঃহুম৷ আসছে ও৷
.
সামান্তাঃভালো
.
আরুহিঃএ গুড স্মোকার ইজ এ গুড কিসার৷
.
রিংকিঃওই কী বলছিস?
.
আরুহিঃহু আদিলকে দেখেছি স্মোক করতে৷
.
অনুঃকী?ওরা সবাই তারমানে স্মোক করে৷
.
আরুহিঃমেইবি৷
.
সামান্তাঃআর এই জন্যে গুড কিসার হয়ে গেলো৷
.
আরুহিঃধুর সবাই বলে আরকি৷
.
অনুঃআমার মনে হয়না সবাই স্মোক করে৷ একজন করেছে বলে আরেকজন যে করবে সেটাতো কোনো কথা নয়৷

কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোঁয়া চলে এলো৷ আরুহি ওকে বলে দিয়েছিলো ওরা ঠিক কোন পাশে বসেছে তাই ছোঁয়ার ওদের কাছে আসতে প্রবলেম হয়নি৷

মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে কথা বলে আবির এখন মাইক্রোফোন হাতে নিলো৷

ঠিক এমন এভাবে,
তুই থেকে যা স্বভাবে৷
.
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই,
আর তুই ছাড়া গতি নেই৷
.
ছোঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা,
.
কথা দেওয়া থাক,গেলে যাবি
চোখের বাইরে না৷ (২)
.
তরি মতো কোন একটা কেউ
কথা দিয়ে যায়, ছাঁয়া হয়ে যায়৷

তরি মতো কোন একটি ঢেউ,
ভাসিয়ে আমায় দূরে নিয়ে যায়৷

ছোঁয়ে দে আঙুল,ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা!!!”!

কথা দেওয়া থাক,গেলে যাবি
চোখের বাইরে না৷

আবির ওতোটুকু গেয়েই থেমে গেলো৷ চারিদিকে করতালির আওয়াজে ছেঁয়ে গেছে৷

অনুঃইশ একেবারে মাইন্ড ব্লয়িং৷
.
ছোঁয়াঃহুম৷
.
কনসার্ট শেষ হলো রাত নয়টার দিকে৷ অনু,আরুহি,সামান্তা,ছোঁয়া,রিংকি সবাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে৷ অনুকে গাড়িতে তুলে তারপর তারা যাবে৷ অনু সবাইকে ওর বাড়িতে আসার জন্য বলছে বাট কেউই যাবেনা৷ তাদের বাড়ি থেকে ফোনের উপরে ফোন আসছে৷

অারুহিঃঅনু সতর্ক হয়ে থাকিস বোন৷ মনে রাখিস তোর ঘরে কিন্তু তুই নিজেই কুমির পালছিস৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ অনু ও যখন তখন তোর উপরে ঝাপিয়ে পরতে পারে৷ ওকে দেখে মনে হয়না ওর উদ্দেশ্য ভালো৷
.
রিংকিঃভালো করে দেখে দরজা জানালা বন্ধ করে তারপর ঘুমাস৷
.
ছোঁয়াঃআর ওর সামনে যাস না বেশি৷ নিজেকে যত পারিস রুমে বন্দী করে রাখার চেষ্টা করিস৷ আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ মিতা আপুও আকাশের আসল রুপ খুব তারাতারিই জানতে পারবে দেখিস৷ খুব ভয় রে এখন তোকে নিয়ে৷
.
আরুহিঃহ্যা রে অনু তোকে নিয়ে এখন খুব চিন্তা৷ এতো বড় বাসায় মাত্র তিনজন মানুষ৷ মিতা আপুও এতোটা চালাক নয়৷ তারমধ্যে তুই আকাশকে যেভাবে অপমান করিস ও কিন্তু তোর উপরে প্রচুর ক্ষেপে আছে৷ যখন তখন কোন অনর্থক ঘটে যেতে পারে৷ তাই সাবধানে থাকিস বোন৷
.
অনু সবাইকে জড়িয়ে ধরে একটা সিএনজিতে উঠে চলে গেলো৷ ওদের মতো বান্ধবী কয়জনেরই আছে৷ গাড়ি চলছে অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে কিন্তু ওরা চারজন এখনও একদৃষ্টিতে অনুর গাড়ির দিকেই তাকিয়ে আছে৷

(৪)
ঘুমের মধ্যেই অনু টের পাচ্ছে ওকে কেউ খুব গভীর ভাবে দেখছে আর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ নিজের সন্দেহ দূর করার জন্য তারাতারি চোখ খুললো অনু৷লাইট অন করে চারিদিকে চোখ বুলালো৷

“নাহ কেউ তো নেই এখানে হয়তো মনে ভয় পুষে ঘুমানোর জন্যই এমনটা হয়েছে৷ঘুমিয়েও শান্তি পাইনি৷

অনু খাটে শুয়ে আরও কতক্ষণ এপাশওপাশ করলো তবুও তার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছেনা৷ খাটের কোনায় মাথা রেখে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো৷

“যদি আজ সত্যি সত্যি আমার টের পাওয়াটা সত্যি হয়ে যেতো৷ আকাশ যদি এখানে চলে আসতো তখন তাহলে কী করতাম আমি?

অনুর মনে এখন যেনো ভয় আরও ঝেকে বসেছে৷
সে খাট থেকে নেমে পানি খাওয়ার জন্য জগে হাত দিলো৷ না জগ তো খালি৷ এখন পানি আনার জন্য যদি নিচে যাই আর আকাশ চলে আসে তখন কী করবো৷ না না রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই৷

অনু গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনিতে গেলো
বর্ষাকালে যেন বৃষ্টি হওয়াটাই প্রকৃতির প্রধান কাজ৷ এর জন্যই তো বৃষ্টির সিজন বর্ষাকাল৷ মাঝে মধ্যে আকাশে গর্জন দিচ্ছে বজ্রপাত হচ্ছে৷একটু আগে শুধু বৃষ্টি থেমেছে হয়তো আবারও বৃষ্টি হবে প্রকৃতি সেটারই জানান দিচ্ছে৷ কদম ফুলের সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ ঝিঁঝি পোকার ডাকও শুনা যাচ্ছে গাছের পাতা হেলেদুলে নড়ছে বাতাসে সাথে অনুর খোলা চুলও উড়ছে৷ বৃষ্টি হওয়ার পরের দৃশ্য খুব ভালো লাগে৷ যেনো এক স্নিগ্ধ সুবাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবেশে৷আর সাথে সেই মিষ্টি হাওয়া৷ কয়েকটা গাছ থেকে আম পরার শব্দও কানে আসছে৷ এখন কাঁচা আমের সময়৷ কাল সকালে গিয়ে আমগুলো কুড়িয়ে আনবে৷

হঠাৎ একটা ধমকা বাতাস দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো৷ অনু তারাতাড়ি বাইরে দিয়ে দু’হাত এক করে রাখলো তাতে পানি পরে হাতে আটকে যাচ্ছে৷ অনু হাত দিয়ে এনে বৃষ্টির পানি খেলো৷

“একেবারে ফ্রেশ পানি ছিলো এটা৷মনটাও যেমন কেমন ফ্রেশ হয়ে গেছে৷ প্রকৃতি যেমন পরিশুদ্ধ তেমন প্রকৃতির উপাদানও পরিশুদ্ধ৷

অনু ওর রুম থেকে জগ নিয়ে এলো৷ তাতে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভরে রাখবে৷ বৃষ্টির পানির চা দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি খেতেও আলাদা একটা স্বাদ লাগে পাশাপাশি ঘ্রান তো আছেই৷

অনু জগটাকে এমন জায়গায় রাখলো যেখান থেকে ছাঁদের কার্নিশ বেয়ে বৃষ্টির পানি বেশি করে পরছে৷

জগ রেখে আবারো মন দিলো প্রকৃতি দেখায়৷ এই মুহুর্তে যেনো আকাশের কথা একেবারে মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে৷ মানুষ ঠিকি বলে সব কিছু যদি কারও সাথে শেয়ার করা না যায় তাহলে সেটা মন খুলে একমাত্র প্রকৃতির সাথেই শেয়ার করা যায়৷ মানুষ মনে তৃপ্তি না দিতে পারলেও প্রকৃতি পারে৷
অনু মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতি দেখছে আর নিচ থেকে আরেকজন ওকে মন দিয়ে দেখছে৷

মেসেজ টুনের আওয়াজ কানে আসতেই অনুর কপালে বিরক্তির বাজ ফুটে উঠলো৷ কে মেসেজ দিতে পারে এই মুহুর্তে৷ হাতে ফোন থাকায় সহজেই মেসেঞ্জারে ঢুকে মেসেজ চেক করলো৷

মেসেজ এসেছে”হাই৷
অনু অনিচ্ছা সত্ত্বেও হ্যালো লিখে সেন্ড করলো৷কারন সে সিন করে ফেলেছে৷

রিপ্লাই আসলো,,

“আমি নীল প্রজাপতি৷
.
তো আমি কী করবো৷ আপনি যদি নীল প্রজাপতি হয়ে থাকেন তাহলে গিয়ে লাল প্রজাপতির সন্ধান করেন৷ আমাকে কেনো মেসেজ দিয়েছেন৷
.
আমার জানা মতে আমি ঠিক জায়গাতেই মেসেজ দিয়েছি৷
.
মানে৷
.
মানে সিম্পল তুমি আমার লাল প্রজাপতি৷ আর আমি আমার প্রজাপতির সন্ধান পেয়ে গেছি৷ তুমি কী জানো মায়াবতী তোমাকে এই মুহুর্তে কতোটা স্নিগ্ধ আর নিষ্পাপ লাগছে৷ যদিও আমার চোখে তুমি সবসময়ই স্নিগ্ধ নিষ্পাপ৷ আমার খুব শখ ছিলো বৃষ্টি ভেজা এক গুচ্ছ কদম ফুল তোমার হাতে তুলে দিতে কিন্তু কী করবো বলো আমি তো আর গাছে উঠতে পারিনা৷ যদি পারতাম তাহলে এভারেস্টের সমান উঁচু গাছ থেকে হলেও তোমার জন্য কদম নিয়ে আসতাম৷ বাতাসে তোমার চুল উড়ছে আর তোমার মুখে আছড়ে পড়ছে তুমি বিরক্ত হয়ে বার বার কানের পিঠে চুল গুজছো আর চুল বাতাসে বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে৷ আমি যদি তোমার পাশে এইমুহুর্তে থাকতাম তাহলে তোমার চুলে ধরে রাখতাম আর তুমি পরিবেশ,প্রকৃতি দেখতে৷ কিন্তু আমি চাইলেই তোমার চুলে ধরে রাখতে পারবোনা আমি নিরুপায়৷চুল ধরতে গেলেও অধিকার লাগে আমার সেই অধিকার নেই৷ তবে খুব তারাতাড়িই সেই অধিকারটা করে নিবো আর টেনশন করোনা কোন একদিন ঠিকই ধরবো৷ তোমার মনে প্রশ্নে জাগছে যে কে আমি আর তোমাকেই বা কী করে দেখছি তাহলে নিচে তাকিয়ে দেখো একবার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে৷

অনু এতো বড় আর গুছালো মেসেজ দেখে বেহুশ৷ তবুও দেড়ি না করে তারাতাড়ি নিচে তাকালো৷ কিছুটা দূরে একটা শিমুল গাছের নিচেই একটা ছেলে বসে আছে গায়ে তার রেইন কোট৷ মুখটাও টুপি দিয়ে ঢেকে রেখেছে তাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা৷ অনুর ফোনে আবারও মেসেজ এলো৷

“কী দেখছো এতো করে৷ বেশি দেখোনা নজর লেগে যাবে৷
.
অনুও উত্তরে কিছু লিখতে যাবে তার আগেই ওর পায়ের কাছে কিছু একটা এসে পড়লো৷ হাতে নিয়ে দেখলো শিমুল ফুলের ফল৷

“কদম তো দিতে পারবোনা আর শিমুল ফুলও না৷ সব ঝরে গেছে তাই তোমায় শিমুলের ফল দিলাম৷ এটাকে আবার সাধারন ভেবে ফেলে দিয়োনা মনে রেখো ঝিনুকের পেটেই কিন্তু মুক্তো থাকে অথচ এটাকে দেখলে কতো সাধারনই মনে হয়৷ যাইহোক আমি গেলাম আর অনেকরাত হয়েছে তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো৷ নাহলে বাতাসে আবার জ্বর এসে যাবে৷

অনু ব্যালকনি থেকে এসে পর্দা টেনে দিলো৷ হাতে শিমুলের ফল ঠিকই আছে৷ অনু খুব যত্নসহকারে ফলে যে চারটা ফালি আছে, সেই ফালি একটা একটা করে ভাঙতে লাগলো৷ ভেতরে এক গুচ্ছ তুলা৷ কী সুন্দর লাগছে একেবারে ফ্রেশ সাদা৷ মনে হচ্ছে যেনো একটুকরো মেঘ৷ অনু একটু তুলা হাতে নিলো৷ ফ্রেশ তুলা দিয়ে সে গ্লিসারিন লাগাবে৷

গ্লিসারিন তুলাতে ঢালতেই তুলা একেবারে গলে গেলো আর গরমও হয়ে গেলো [আমি এমন করসিলাম একদিন তাই জানি😜]

“যাক ভাভা এটা কী হলো৷ এটার চাইতে তো আমার হাতই বেটার৷৷

বেশ কিছুক্ষন পর আবারও অনুর ফোনে মেসেজ এলো

“কী তুলা নিয়ে দুষ্টুমি করছো তাইতো৷
.
আশ্চর্য আপনি কী করে জানলেন৷
.
আমি জানি ওই একভাবে৷আচ্ছা তুমি এখনো ঘুমাওনি?৷
.
আপনি যদি একটু পর পর এভাবে মেসেজ দিয়ে জ্বালান তাহলে ঘুমাবো কী করে৷?
.
স্যরি স্যরি৷ আমি আর এখন মেসেজ দিচ্ছিনা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো৷
.
অনু ডাটা অফ করে দিলো৷ কোথায় থেকে যে আসে এসব চেনা নেই জানা নেই কেয়ার করতে শুরু করে দেয়৷ আর এসব কী মেসেজ আর রিকুয়েষ্ট আসে রে ভাভা,উরন্ত কাকের ঝুলন্ত লেজ,শ্যাওরা গাছের পেত্নি,শাঁকচুন্নি,লম্বা লেজের বাঁদর,ডানা কাটা পরী৷ নীল প্রজাপতি, লাল প্রজাপতি৷ যদিও নীল প্রজাপতি নামটা মন্দ না৷
আর ছেলেটাকে দেখতে খুব ভালোই লাগছিলো ইশ ভালো করে যদি মুখটা দেখতে পারতাম৷ধ্যাত কী ভাবছি আমি৷ এদের সাথে সাথে আমিও পাগল হয়ে গেছি৷
.
অনু ওর ফোন বেড় করে আবিরের একটা ফটো বেড় করলো৷
.
“জাতির ক্রাশ আবির রায়হান চৌধুরী৷ ইশ সামনাসামনি তো শুধু মাত্র একবার দেখতে পেলাম,আরেকবার যদি দেখতে পারতাম৷ তাহলে বোধহয় জীবনটা সার্থক হতো৷ কতো মেয়ে উনাকে মন দিয়ে বসে আছে উনি কী আদৌ কাউকে মন দিয়েছেন?নাকি দেননি? সেলেব্রিটি মানুষ গার্লফ্রেন্ডের তো নিশ্চয় অভাব নেই৷
🍁
কড়া রোদ এসে পরছে অনুর উপর৷ চোখ মুখ কুঁচকে ঘুম থেকে উঠলো সে৷ ব্যালকনির পর্দা টেনে দেয়নি তাই রোদ এসে সোজা চোখে মুখে পরছে৷ আড়মোড়া ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজে৷ কাল লেট করে ঘুমানোর জন্য আজ লেট করে উঠেছে৷
ফ্রেশ হয়ে হাতে জগ নিয়ে কিচেনে গেলো৷ মিতা আগেই সব নাস্তা বানিয়ে রেখে দিয়েছে৷ অনু একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে চুলায় পাতিল বসালো তাতে কালকের বৃষ্টির পানি ঢাললো চা বানাবে৷

চা হওয়ার পর অনু মিতাকে এক কাপ আর নিজের জম্য এক কাপ নিলো৷ আকাশ বাসায় নেই৷ সে চা নিয়ে সোজা ছাঁদে গেলো৷ ধোঁয়া উঠা চায়ের সাথে পরিবেশ দেখবে৷ চারিদিক দেখে মনে হচ্ছেনা রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে৷সব শুকিয়ে গেছে৷ ছাঁদের অনেক জায়গাতে পানি আটকে আটকে আছে৷ অনু চা শেষ করে রেলিঙের উপর কাপ রাখলো৷ আকাশের দিকে রোদের জন্য তাকানোই যাচ্ছেনা৷ পূর্ব দিকে কী যেমন রং বেরঙের মতো লাগছে৷ অনু ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ওটাতো রেইনবো,রংধনু৷ ওয়াও কতো সুন্দর রংধনু জীবনের প্রথম দেখলাম৷ বইয়ে পেয়েছিলাম বৃষ্টির পরে রোদ উঠলেই রংধনু দেখা যায়৷ এরপর থেকে সব সময় রংধনু দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রংধনু কখনো আমায় দেখা দেয়নি তবে আজ দিয়েছে৷ রংধনুর সাতটি রঙের মতো যদি আমার জীবনটাও রঙীন হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো৷ অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের ক্যামেরা অন করলো৷ রংধনুর ছবি তুলবে সে৷কয়েকটা ছবি তুলতেই অনুর ফোনে একটা নোটিফিকেশনে এলো৷সামান্তা ফটো সেন্ড করেছে৷ফটোতে আবিরের সাথে একটা মেয়ে৷ মেয়েটাকে তো চেনা চেনা লাগছে ও হ্যাঁ এটাতো মডেল নীলা৷ যেরকম পোজের ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড৷ যাইহোক তাতে আমার বাপের কী৷ এই সামুর বাচ্চা কী আমাকে জ্বালানোর আর অন্য কোনো ওয়ে পায়না নাকি৷ আমি কতবার বলেছি যে আমি জাস্ট ওকে লাইক করি৷ আর কিচ্ছুনা৷ অনুও একটা ফটো সেন্ড করলো যেটাতে আদনানের সাথে একটা মেয়ে৷

“এবার দেখ কেমন লাগে হুহ!!!”

#চলবে,,,,,

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ (আবির,অনু),(আদিল,আরুহি),(আদনান,সাামান্তা,),(আহিল,রিংকি), (শ্রাবন,ছোঁয়া) এই জুটি গুলো আমার খুব ভলো লাগে তাই এদের ফিরিয়ে নিয়ে এলাম আবারও]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here