#_প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_২
Writer_Nusrat_Jahan_Sara
(২)
আবির অনুর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে এতোটাই কাছে যে আবিরের নিঃশ্বাস অনুর চোখে মুখে আছড়ে পরছে৷ অনু নিবুনিবু চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর আবির অনুর দিকে৷
.
পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দিতেই অনু ঠাসস করে আবিরকে নিয়ে পড়ে গেলো৷
.
“”ধপাসসসস
অনু চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে সে খাট থেকে পড়ে গেছে
“একি আবির কোথায়?৷ আবির!! আবির কোথায় আপনি?
খিলখিল করে হাঁসির শব্দ শুনে পাশে তাকালো অনু৷ আরুহি পেটে হাত দিয়ে হাসছে৷
.
এইভাবে ছাগলের মতো হাসার কী আছে৷ ৷
.
যা করেছি তাতে না হেসে পারা যায়৷ কী ঘুম থেকে উঠে আবির আবির করছিস৷ আবিরকে নিয়ে কল্পনা করতে করতে এখন আবির তোর স্বপ্নে এসেও দেখা দেয় নাকি৷
.
কী জানি৷ তুই আমাকে ছাদ থেকে নিয়ে আসার পর বালিশে মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে পরি আর স্বপ্নে দেখলাম আবির আমার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে এতটাই কাছে যে ওর নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার মুখে পরছিলো তারপরই কোন শাঁকচুন্নি যেনো আমাকে ধাক্কা দেয় আর আমি আবিরকে নিয়ে পড়ে যাই৷ ওমা উঠে দেখি সত্যি সত্যি খাটের পাশে পড়ে আছি৷
.
ওই শাঁকচুন্নিটা আমিই ছিলাম আমিই তোকে ধাক্কা দিয়েছি৷ তুই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমন ভাবে মুচকি মুচকি হাসছিলি দেখেই আমি বুঝতে পারলাম তুই স্বপ্ন দেখছিলিস তাই ধাক্কা দিয়েছিলাম যাতে তোর ঘুম ভাঙে কিন্তু ওমা তুই এক ধাক্কাই নিচে পড়ে গেলি৷
.
“তবে রে৷
অনু আরুহির দিকে তেড়ে আসতে গিয়েও থেমে গেলো৷ কালকের কথা মনে হতেই চোখে আবারো পানি এসে ভর করলো৷ আরুহিও অনুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে৷ অনু সব কথা ওর সাথে শেয়ার করতো তাই আরুহি জানে অনু কতোটা আকাশকে ভালোবাসে৷ আরুহির চোখ দিয়েও পানি পড়ছে৷
অনু আরুহির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কাঁদছে৷
“একি রুহি তুই কাঁদছিস কেনো?
.
আরুহি কিছু না বলে অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷
.
“এতো ভালো কেনো রে তুই হে৷ নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বোনের হাতে তুলে দিতে একটু হাত কাপলোনা তোর৷ চাইলেই কিন্তু এদের আলাদা করতে পারতিস কিন্তু করিসনি৷ কারন তোর বোনের মুখে হাসি দেখতে চাস৷ হে হাসি দেখতে চাস ভালো কথা তাই বলে সত্যিটাকে গোপন করে৷ আকাশের পর্দা ফাঁস করার খুব দরকার ছিলো রে অনু৷
.
আপু যখন জানতে পারবে তখন নাহয় পর্দা ফাঁস করা যাবে৷ এখন যখন জানেনা তখন জানানোর দরকার নেই৷ বাবা মা দেশের বাইরে যাওয়ার পর আপুই আমার দেখবাল করেছে৷ কোনদিন আমাকে কষ্ট দেয়নি৷ তারমনেও আমি কষ্ট দিতে পারবোনা৷
.
আরুহি অনুকে ছেড়ে দিয়ে ওর ফোন বের করলো৷
“অনু এই দেখ আবির রায়হান চৌধুরী ফেসবুকে ফটো আপলোড দিয়েছে৷
অনু কথাটা শুনে তারাতাড়ি আরুহির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো৷
সাদা শার্ট ইন করা৷ বুকের কয়েকটা বুতাম খোলা যে কারনে তার সাদা বুক দেখা যাচ্ছে৷ চোখে কালো সানগ্লাস একটা কারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
অনুঃওয়াও কী কিউট এই আবির রায়হান চৌধুরী৷ তবে বেটায় বুক কেনো দেখায় আল্লাহ্ জানে৷
দাঁড়া কমেন্ট দেখি৷এসব সেলেব্রিটিদের কমেন্ট পড়তে খুব ভালো লাগে৷
.
একটা মেয়ে কমেন্ট করেছে,,,
“ওয়াও কী কিউট তুমি আবির তোমার গান আর অভিনয় খুব ভালো লাগে আমার৷
আরেকটায় কমেন্ট করেছে,,,,
“ওয়াও তোমার বুক দেখে তো আমি শেষ৷ কী সুন্দর যে লাগছে তোমাকে বলে বুঝানো সম্ভব নয়৷ আমার দেখা সব থেকে হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং বয় তুমি৷
.
ওয়াও আমার ক্রাশ বয়৷
.
ব্লা ব্লা,ব্লা৷
.
অনুঃদূর দূর এসব কী কোনদিন ছেলে দেখেনি নাকি৷ কী আজে বাজে কমেন্ট করে দেখ৷ আরে তোদের যদি ভালোই লাগে তবে ভিতরেই রাখনা ভালো লাগাটা৷ এভাবে প্রকাশ করে নিজেদের লুজার প্রমান করার কী দরকার৷
.
আরুহিঃবা্হ বাহ্৷ তা তুই আবির কে লাইক করিস নাকি লাভ৷
.
ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নয়৷ আবিরকে আমার ভালো লাগে নাথিং এল্স৷ তাছাড়াও আবির একজন সেলেব্রিটি মানুষ তাকে নিয়ে স্বপ্নও দেখতে নেই৷ আমাদের মতো সাধারন মানুষদের কাছে ওরা কোনদিন আসবেনা রুহি৷
.
হুম কথাটা সত্যি৷
.
তা তোর ক্রাশের কী খবর৷
.
আমার ক্রাশ,,,,,,
আদিল পুল থেকে উঠে আসছে তার গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট৷ উন্মুক্ত বুক আর পিঠ বেয়ে পানি পরছে৷ আদিল তার চুল গুলো ঝেড়ে ঝেড়ে আসছে৷ আরুহি সুইমিংপুলের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে টাওয়াল হাতে৷আদিল ওর কাছে যেতেই আরুহি মুচকি হেঁসে আদিলের শরীর মুছে দিতে শুরু করলো৷ আদিল আরুহির কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো৷
.
আউচচচচচচ
.
হাহাহাহা৷ কোথায় হারিয়ে গেলি৷
.
আব…কই কোথায় হারাবো৷ তোর এতো সাহস কেনো কোন সাহসে আমাার হাতে চিমটি কেটেছিস৷ কতো সুন্দর একটা স্বপন দেখেছিলাম জানিস৷
.
আরেহ বাহ রুহি৷ আমি তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি তুই তো দেখছি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখিস৷ ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস বুঝি হুম৷
.
জ্বী না৷
.
হুম৷তা কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলি নিশ্চয় আদিল খাঁন কে নিয়ে৷
.
জানতিই যখন তাহলে চিমটি দিয়ে স্বপ্নটা কেনো ভেঙে দিলি৷
.
ওটাকে স্বপ্ন বলেনা কল্পনা বলে৷ আমাকে যে খাট থেকে ফেলে দিলে তার বেলায় কী৷ নিজের বেলা ষোলো আনা আমার বেলা চার আনা৷
(৩)
অনু ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে কিচেনে যেতেই আকাশ অনুকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷
আকাশকে কিছু বলতে না দিয়ে অনু বললো,,,
“হাউ ডেয়ার ইউ!!!! কোন সাহসে আমাকে চেপে ধরেছো৷ ছাড়ো বলছি৷
অনু আকাশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো৷
.
দ্বিতীয় বার আমার হাত ধরা তো দূর কাছে আসলেও এর ফল ভালো হবেনা বলে দিলাম৷ আমার হাত ধরার পারমিশন নেই তোমার আর তুমি আমায় চেপে ধরেছো৷ হাত ভেঙে একেবারে ঘুরিয়ে দিবো আকাশ৷ মনে রেখো আমার হাত কী চুলে ধরার অধিকারও নেই৷ যদিও তোমাকে আমি কখনো আমার হাতও স্পর্শ করতে দেইনি৷ তোমার শুধু এক জায়গাতেই টাচ করার অধিকার আছে আর সেটা হলো আমার পা৷ ইউ নো ওয়াট আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন৷
আরুহিও তখন কিচেনে এলো৷ এদেরকে কথা বলতে দেখে কিছুটা এগিয়ে গেলো৷ আকাশ আর অনুর দুজনেরই চেহারায় রাগী ভাব ফুটে উঠেছে৷
.
কী হয়েছে অনু৷ ও তোর সাথে কী করেছে৷
.
কতো সাহস ওর জানিস আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে৷ ইচ্ছে তো করছিলো কষিয়ে কয়েকটা চড় বসিয়ে দেই৷ কিন্তু না পারবোনা আমার বোনের হাসবেন্ড ও৷ কিন্তু চিন্তা নেই একদিন আমার এই আশাটা ঠিক পুরন হয়ে যাবে৷
.
আরুহিঃচল এখন এখান থেকে এই ছেলের মুখ দেখতেও ঘৃনা করে৷
ওরা দুজন চলে গেলো৷ আকাশ রাগী চেহারা নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷
আাকাশঃমিস অনু তোমার অহংকার আর জেদ যদি আমি মাটির সাথে না মিশিয়ে দিচ্ছি নাহলে আমার নামও আকাশ নয়৷
🍁
আরুহি,অনু,মিতা,আকাশ সবাই একসাথে খেতে বসেছে৷ আকাশ আর অনুর অনেকবারই চোখাচোখি হয়েছে৷ যতবার চোখাচোখি হয়েছে ততবারই দুজনে রাগে চোখ সরিয়ে নিয়েছে৷ মিতা হেঁসে হেঁসে গল্প করছে আর আকাশ গম্ভীর মুখ করে খেয়ে যাচ্ছে৷
অনুঃএকি দুলাভাই মুখটাকে এমন হুতুম পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছেন কেনো৷
.
আরুহিঃএক্সাক্টলি তাই৷ দুলাভাই কী হয়েছে আপনার? আপু গল্প করছে কিন্তু আপনি তো কিছু বলছেন না৷ এনি প্রবলেম?নাকি কোন প্রাক্তন কে খুব মনে পড়ছে৷ (খোঁচা দিয়ে)
.
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,সেইরকম কিচ্ছুনা৷
অনুঃতাহলে তো ভালোই আপনিও গল্প করুন আমরাও শুনি আমাদের দুলাভাই কেমন গল্প করতে পারে৷
.
অনুকে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে দেখে খুব রাগ লাগছে আকাশের৷একটা মেয়ে এই মুহুর্তে কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে৷
🍁
সোফায় বসে টম এন্ড জেরি দেখছে আরুহি আর অনু৷ দুইজন হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর গিয়ে পরছে৷ আরুহির চোখ মেইন ডুরে চোখ পরতেই সে চোখ সরিয়ে নিলো৷ সামান্তা আর রিংকি এসেছে৷ দুজনই এসে দুজনের পাশে বসে পরলো৷
অনুঃকেনো এসেছিস তোরা৷
.
সামান্তাঃস্যরি রে বাসায় অনেক কাজ ছিলো তাই আসতে পারিনি৷
.
অনুঃতাই বলে।দুজনেরই কাজ ছিলো৷
.
রিংকিঃনা কাল আমার মামা এসেছেন তাই আমি আসতে পারিনি৷যাইহোক সকাল সকাল তো এসে পরলাম৷
অনুঃসব বুঝলাম বাট ছোঁয়া কোথায় ওকে তো ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা৷
.
সামান্তাঃআমিও ফোন করেছিলাম বাট রিসিভ করেনি৷
.
সামান্তা ফোন বেড় করতেই ওর ওয়ালপেপারের পিক দেখে হেঁসে দিলো আরুহি৷
আরুহিঃলাইক সিরিয়াসলি তুই আদনানের পিক ওয়ালপেপারে এনে রেখেছিস৷ এসব তোর দ্বারাই সম্ভব ইয়ার৷
.
সামান্তাঃহু হইছে৷ এই একটা গুড নিউজ শুনেছিস৷
.
অনুঃকী?
.
রিংকিঃআবির, আদিল,আদনান,আহিল,শ্রাবন ওরা সবাই কনসার্টে আসছে আজ৷ আমি খুব এক্সাইটেড৷
.
আরুহিঃওয়াও রিয়েলি৷আজকেই তো কনসার্ট সন্ধ্যা সাতটায়৷ তারমানে এট লাস্ট আমরা ওদেরকে সামনাসামনি দেখতে পারবো৷ আমারতো ইচ্ছে করছে নাচতে৷
.
অনুঃতো নাচ বারন করেছে কে?
.
সত্যি!!!
.
একদম৷
.
আরুহি গিয়ে মিউজিক প্লে করলো৷ চার বান্ধবী একসাথে নাচচে৷ আর উপর থেকে সব দেখছে আকাশ৷ তার কপালে বিরক্তি আর রাগের ভাজ ফুটে উঠেছে৷ অনুকে ছ্যাকা দিয়েও অনু কীভাবে নিজেকে স্ট্রং রাখছে সেটাই ভাবছে৷
.
জো ভি জিতনে পাল জিয়ো,উনহে তেরে সাঙ্গ জিয়ো
জো ভি কাল হো আব মেরা,উসে তেরে সাঙ্গ জিয়ো৷
অনুঃজানিস এই দিল ইবাদাত গান শুনলে আমার আবিরের কথা মনে পরে যায়৷
.
সামান্তাঃহুম একদিন ফেসবুকে আবিরের কন্ঠে এই গানটা শুনেছিলাম কী জস তার কন্ঠ৷
.
অনুঃতোরা দাঁড়া আমি ড্রিংকস্ নিয়ে আসি৷ ড্রিংক ছাড়া তো পার্টি সার্টি সব ফালতু৷
.
আরুহিঃআমরা পার্টি করছি না বরং ডান্স করছি৷
.
অনুঃএটাকেই একধরনের মিনি পার্টি বলে৷
.
অনু ট্রেতে করে চার গ্লাস কুক নিয়ে এলো৷
আরুহিঃকোকাকোলা,,, আমি তো ভাবছিলাম,,,
.
অনুঃকী ওয়াইন তাইতো৷ দেখ ওসব বরং আদিলের সাথে খাস আমরা কুক খাবো তুইও খা৷
.
রিংকিঃএটা কী করলি!!!!
.
অনুঃআমি আবার কী করলাম৷
.
সামান্তাঃতুই ওকে আদিলের কথা কেনো বললি এবার দেখিস সে নাচ গান সব বাদ দিয়ে আদিলকে নিয়ে কল্পনায় বসে যাবে৷
.
আরুহিঃধুর!!!😑😑
.
অনু অনেক্ষন ধরেই দেখছে আকাশ উপর থেকে নিচে কী হচ্ছে সব দেখছে আর জ্বলছে৷ তাই আকাশকে আরও জ্বালানোর জন্য বললো,,,,,
অনুঃআরে আরে লুচ্চা জিজু৷ ওপস্ স্যরি৷ গুনধর দুলাভাই উপরে কেনো নিচে আসুন এসে আমাদের সাথেও এঞ্জয় করুন৷নাচুন, গান,মাস্তি করুন৷
.
“তার আর দরকার নেই৷
আাকাশ রুমে চলে গেলো৷
সামান্তাঃআমার তো মন চাইছে এই আকাশের মাথা ফাটিয়ে দেই৷
.
রিংকিঃআমারও
.
অনুঃমাথা পরেও ফাটানো যাবে৷
চলবে…