#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৮]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন
আমার মুখ চেপে ধরে অন্ধকার রুমের এককোনে গিয়ে রুমের লাইট অন করলো। এমনভাবে আমাকে চেপে ধরেছে যে আমি তার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। অনেক ছোটাছুটি করেও কোন লাভ হয়নি তাই আমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও থেমে যেতে হলো।
এই বাড়িতে বাহিরের কোন লোক আসার কথা তো না। আর ঘরে এমন কোন লোক তো নেই যে আমাকে এভাবে চেপে ধরবে। তাহলে কি আমাকে এইভাবে আনলো। অবশেষে বুদ্ধি তে-ও ব্যর্থ হয়ে চুপচাপ রইলাম।
আর তখনই লোকটা আমার মুখ চেঁপে ধরে সামনে রাখা টেবিলটাই এগিয়ে গেল। আর টেবিলের সামনে একটা খাতা আর একটা কলম নিয়ে তাতে কিছু লিখলো । আমি লোকটার কান্ড দেখে বেশ বিরক্ত হচ্ছি। মাঝেমধ্যে আবার ভয়-ও লাগছে।
আর তখনি-ই আমাকে চেপে ধরা লোকটি আমার সামনে খাতা ধরলেন । পরিপক্ক হাতের লেখা হলেও তাড়াতাড়ি করে লেখায় লেখাগুলো বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। তাতে লেখা-
” আমি তোমার ধূসর। তোমার মুখ চেপে ধরার একটা লম্বা কারন আছে, আর এখন যেটা বলছি সেইটা করো। সেইটা হচ্ছে আমি তোমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেওয়ার পর কোন চিৎকার করবে না। আর আমি যা করব তাতে বিন্দুমাত্র শব্দ করবে না। শব্দ করলে অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে। ”
এটুকু পড়তেই খাতা সরিয়ে নিয়ে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন ধূসর স্যার। আমি কথা বলতে নিব তখনই তিনি আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দেন।
তারপর নিজ দায়িত্বে আমার শাড়ির কাঁধের দিকে পিনটা সরিয়ে নিলেন। এতে আমি কিছুটা আঁতকে উঠলাম। তিনি কি করতে চাচ্ছেন ? বলার আগেই তিনি আমার শাড়িটা পটু হাতে পেছন থেকে আবার কাঁধে দিয়ে দিলেন। আমি শুধু অবাক হলাম। জিজ্ঞাসা করে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাব টেবিল থেকে কলম নিয়ে আবার লিখতে লাগলেন আর আমিও তার দিকে মনোযোগ দিলাম। মিনিট দুয়েক পর লেখা শেষ হতেই তা পড়তে লাগলাম-
— ” তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর হ্যা এটা জেনে রাখো আমি তোমাকে ভালোবাসি, তবে সেটা পরিস্থিতির কারনে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি। আর হুট করে বিয়ের ব্যাপারটা – ও রহস্য আছে। ভেবেছিলাম বলবো না কিন্তু না বললেই নয়। আর হ্যাঁ, শাড়ি পড়েছো ভালো কথা শরীরের একটা অংশ যেনো অন্য কারোর চোখে না পড়ে। আর তোমার সামনে আমি খারাপ আচরন করবো এতে প্লিজ আমাকে ভুল বোঝো না। ”
আমি কিছু বলার আগেই তার ফোনে কল আসলো আর সে চলে গেল। আমার কিছুটি বলার দিল না। তাই বের হয়ে পাশের রুম মানে ধূসর স্যারের রুমে ঢুকলাম। রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম তিনি নিজের মতো খাচ্ছেন। আর তাই তাকে বিরক্ত না করেই নিজের মতো করে আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবতে লাগলাম।
নিচে গিয়ে দেখলাম বাবা(শশুড়ের) খাওয়া শেষ আর মা বসে খাচ্ছে নিজের মতো। আমি যাওয়াতে মা বললো-
— বসে খেয়ে নাও! ”
আমিও বিনাবাক্য ব্যয়ে তার কথামতো বসে খাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে উঠে দেখি ধূসর স্যার আসছে, তাকে দেখে আমার শশুড় বলতে লাগলেন-
— ধূসরের মা বউমা আর ছেলে কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসো। ”
এই বলে তিনি উঠে দাড়ালেন। উদ্দেশ্য ড্রয়িং রুম। আমিও শাশুড়ী’র সাথে কাজ করে গেলাম ড্রয়িং এ। সেখানে আগে থেকেই ধূসর স্যার বসেছিলেন। আমি যাওয়াতে তারা কিছুটা নড়েচড়ে বসে গেলো।
শশুর বাবা ইশারায় বললেন বসতে আমরাও কথামতো বসে পড়লাম। আর তখনই বলতে শুরু করলেন –
— ধূসর! ”
— জি বাবা ?”
— বিয়ে তো করে নিলে তাহলে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছো না ? ”
ধূসর স্যার আমার দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন-
— না ! কিছুদিন পর ৫ মাসের জন্য আমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে তাই চাচ্ছি না এইসব ঝামেলা মেটাতে। ”
— জি আমি বুঝতে পেরেছি। তাহলে ধূসরের মা ? কি বলো ?”
— আমার ছেলের যাতে সুবিধা তাই আমার মত। আমার এতে কিছু বলার নেই। ”
— তাহলে বউমা’র বাবা বাড়ি থেকে ঘুরে আসো। ”
শশুরের এমন কথা শুনে খানিকটা চমকে গেলাম।সত্যি বলতে আমি এটা চাচ্ছিলাম। বাবার থেকে অনেক কিছু জানার আছে। আমার ভাবনার মাঝে আমাকে উদ্দেশ্য করে বাবা বলল –
— তা বউমা তুমি রাজি তো ?”
— হ্যাঁ বাবা রাজি ! ”
মুখ ফসকে ফট করে বলে ফেললাম। তারপর তাকিয়ে দেখি আমার দিকে ধূসর তাকিয়ে আছে। তারপরই বাবা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,আর তখনি তিনি বলতে লাগলেন –
— ঠিক আছে বাবা যাব! তা কবে যেতে হবে ?
— আজ বিকালবেলা তে-ই যাও! যেহেতু রিসেপশন করছো না। ”
— ঠিক আছে। ”
এই বলে তিনি উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। শাশুড়ি মা ও নিজের কাজে মনোযোগ দিল। আমি জায়গা ত্যাগ করবো তখনই বাবা আমাকে ডাক দিলেন, তিনি ইশারায় নিজের কাছে যেতে বললেন আর তাই আমিও গেলাম। তার কাছে যেতে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলেন –
— দেখ মা! তোমার আর আমার ছেলের মধ্যে এখনো আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থাকা স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তবে মা এটা জেনে রাখো যে তোমার এই বাপ তোমাকে কখনো বিপদে পড়তে দিবে না। আমি এক ওয়াদায় আবদ্ধ থাকাতে তোমাকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছি না আর না আর সহ্য করতে পারছি। ”
বলেই কেঁদে দিলেন। আমি শুধু তার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। তিনি চোখ মুছে আমাকে বলতে লাগলেন –
— এই পরিবারটা কাল থেকেই তোমার। পারবে না মা প্রানহীন এই বাড়িটায় প্রান দিতে ? বলো ?”
— পারবো বাবা ! ”
নিজের অজান্তেই উত্তরটি দিয়ে দিলাম। পরক্ষণে এটা ভাবতেই চমকে উঠলাম। কেন জানিনা এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের প্রতি আমার এক গভীর মায়া কাজ করে। আমি কম সময় বাড়িতে থাকলেও মনে হয় যেনো বাড়িটার প্রত্যেকটা কোণা আমার চেনা জানা।
বাড়ির সকলকে আমার আপন মনে হয়। কিন্তু শাশুড়ি মায়ের আমাকে না পছন্দ করার ব্যাপারটা কেন জানি আমাকে অনেক ভাবায়। তবে তার সাথে কিছু সময় আমাকে কথা বলতে হবে। তবে আমি তার সমস্যাটা বুঝবো।
বাবার সাথে আরও কিছু কথা বলে উঠে গেলাম নিজের রুম মানে ধূসর স্যারের রুমে। আর তখনি-ই দেখলাম রুম থেকে ধূসর স্যার বের হচ্ছেন। তাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। তার যাওয়ার খানিকক্ষণ পর ঘরে মন বসছিল না, তাই আমিও উঠে দাঁড়াইলাম নিচে যাব বলে। বিকেলে আবার ও বাড়ি যেতে হবে ভেবেই আর গেলাম না। লাগেজ নিয়ে কাপড় গোছাতে শুরু করলাম।
বিয়ের তৃতীয় শাড়ি টা নাকি ধূসর স্যারের আলমারীতে রাখা, আর ওটাই পড়ে যেতে বলেছেন শাশুড়ী মা। তুমি ওপর ওপর যতটাই কাঠিন্য দেখাক না কেনো, কেন জানিনা মনে হয় যে তিনিও ধূসর কিংবা শশুর বাবার মত নিরুপায় ।
আলমারি খুলতে গিয়ে দেখলাম ধূসর স্যারের থাক থাক করে সাজিয়ে রাখা কাপড়। আর তার মাঝে গুটিয়ে আছে আমার পিংক কালার কাপড়ে অসম্ভব কাজ করা শাড়ি টা ।আলমারির এক কোণে আমার চক আটকে গেল ।
যেখানে সুন্দর কারো কাছে সাহায্যে লেখা #মনোহারিণী। অজানা এক চাপা কষ্ট ভেতরে ভেতরে আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দিলো। সেসব বাদ দিয়ে শাড়িটি নিতেই কিছু একটা নিচে পড়লো।
(চলবে)
সার্ভারে সমস্যার কারনে গল্পটা দিতে লেইট হয়ে গেলো। রি-চেইক করিনি। ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। 🍁