#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মেহেভীন আড়দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম মনোমুগ্ধকর হাসি হেসে বেলকনিতে চলে গেল৷ মুনতাসিমের এমন ব্যবহারে মেহেভীনের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেল। মেহেভীন সন্দিহান দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে চেয়ে আছে। মুনতাসিমের হাত অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে। নিজের প্রতি নিজেরই ভিষণ বিরক্ত লাগছে। জীবনে এত কঠিন কঠিন কাজ সে করেছে। কিন্তু কোনোদিন এতটা ভয় পাইনি। যতটা ভয় সে মেহেভীনের সামনে পায়!
–আপনার ফোনটা দিন তো।
–আমার ফোন নিয়ে, আপনি কি করবেন?
–আমি কি আপনার ফোন দেখতে পারি না?
–অবশ্যই পারেন। কথা গুলো বলেই ফোনটা এগিয়ে দিল। মনের মধ্যে অস্থিরতার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে ভীরু দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীন কিছু একটা দেখে ফোনটা এগিয়ে দিল। মেহেভীনের মুখশ্রী দেখে বোঝা যাচ্ছে না। সে কোনো কিছু দেখেছে কি না। সে অপেক্ষা করতে পারল না৷ সে নিজেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–একে তো আমার কথা রাখেননি। তার ওপরে আজকে এসেই আমার ফোন নিয়ে টানাটানি করছেন! আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ?
–আপনি রাগ দেখাবেন, ভালো ভাবে দেখান। এভাবে তোতলানোর কি আছে? অন্যদের সাথে তো ঠিকি গর্জন করে উঠেন। কথা গুলো বলেই মেহেভীন কক্ষে চলে গেল। মুনতাসিম দ্রুত ফোন চেক করল। ভিডিওটা ডিলিট করে দেওয়ার হয়েছে। এটা দেখেই মুনতাসিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রজনীর শেষ প্রহর চলছে। সবাই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে আছে। মুনতাসিম আঁখিযুগল মেলে তাকালো। পাশে তাকিয়ে দেখলো। মেহেভীন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সে ফোনের আলো জ্বালিয়ে উঠে বসলো। গায়ে কালো রঙের চাদর মুড়িয়ে কবাটের কাছে আসতেই মেহেভীনের নিদ্রা মিশ্রিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল,
–এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন? মেহেভীনের বাক্য গুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই থেমে যায় দু’টি চরণ। মুহুর্তের মধ্যে মুনতাসিমের মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গেল। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে পালাতে শুরু করেছে। ভেতরটা ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে আসতে শুরু করেছে। মুনতাসিম নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। কণ্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল,
–আপনি ঘুমান নি?
–ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার কথায় পরে আসুন। আগে আপনি বলুন। এতরাতে আমাকে না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন?
–আমার প্রয়োজন পড়েছে, তাই যেবে হবে। আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন। তাই জানাতে পারিনি। সব কথা কিছুর কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে!
–হ্যাঁ হবে একে তো মাঝরাতে উঠে বাহিরে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। আবার আমাকেই উল্টো রাগ দেখাচ্ছেন! আপনি আর এখন একা নন। আপনার জীবনের সাথে আমার জীবনটা জড়িয়ে গিয়েছে। আপনার কিছু হলে আপনার থেকে আঘাতটা আমার বেশি লাগবে। এখন থেকে কোথাও গেলে আমাকে কৈফিয়ত দিয়েই যেতে হবে। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। এখন সে কি করবে? মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম কথা বাড়ালো না। সে দ্রুত আস্তরণে এসে শুয়ে পড়লো। মেহেভীন বিরক্ত মাখা মুখশ্রী করে মুনতাসিমের দিকে চেয়ে থাকলো। মাঝেমধ্যেই মুনতাসিম এমন আচরন করে, কিছু বললেই চুপ হয়ে যায়। মেহেভীন হতাশ হয়ে আঁখিযুগল বন্ধ করল।
চারিদিকে প্রভাতের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মেহেভীনের নিদ্রা ভেঙে যায়। সে উঠে বেলকনিতে আসে। আজকে সে দেখেই ছাড়বে। এত পাখির ডাক কোথায় থেকে আসে? সে বেলকনিতে আসতেই দৃষ্টি যায় গৃহের পেছনের দিকে বিশাল ফলের বাগানের দিকে। যেখানে নানারকমের ফলের গাছ লাগানো রয়েছে। সেখানে কিছু কিছু গাছে লোভনীয় ভাবে ফলে পেকে আছে৷ মেহেভীন ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। এই গৃহটা দূরে থেকেই দেখেছে সে। তার কোনোদিন কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আজকে সে গৃহের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখবে।
–এত সকালে কোথায় যাবে ভাবি? শেহনাজের কথায় মেহেভীন হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,
–আমাদের কক্ষের পেছনে ফলের বাগান দেখলাম। সেখানে অনেক রকমের ফল পেকে আছে। আমার দেখে ভিষণ লোভ লাগছে। আমি গিয়ে পেরে নিয়ে আসি।
–সর্বনাশ! ওটা তো ভাইয়ের বাগান। আমাদের কাউকে যেতে দেয় না। কেউ যদি ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া বাগানে প্রবেশ করে, তাহলে ভাইয়া গৃহে তান্ডব চালানো শুরু করে দেয়। ভাইয়া বাগান টা খুব শখ করে তৈরি করেছে। ভাইয়ার চিন্তাধারা অনুয়ায়ী বাগানের ফল গুলো নাকি পাখি খাবে। ভাই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে ভিষণ পছন্দ করে। রোজ প্রভাত বেলায় পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভাইয়ের নিদ্রা ভাঙে। আমাদের কাউকে ফল খেতে দেয় না ভাইয়া। ঐ বাগান নাকি শুধু পাখিদের জন্য বরাদ্দ আমাদের জন্য না। কথা গুলো বলতে বলতে শেহনাজের মুখশ্রী মলিনতায় ছেয়ে গেল। শেহনাজের কথায় বিস্ময় হলো মেহেভীন। সে বিস্ময় কণ্ঠে বলল,
–তোমাদের ফল পেরে খেতে ইচ্ছে করে না?
–আমি যে পরিমাণ ফল খেতে ভালোবাসি। বাগানে যাবার অনুমতি থাকলে, এই লোভনীয় ফল গুলো এতদিন বাগানে থাকতো!
–উনি কোনোদিন একটা ফলও বাসার কাউকে দেয় না?
–দেয়, তবে বছরে একবার। ভাইয়ের মন চাইলে তবেই দেয়।
–আমার সাথে চলো। আজকে তোমার ভাইয়ের বাগানে দু’টো নতুন পাখির আগমন ঘটবে।
–আমি যাব না ভাবি। আমার এত সাহস নেই। তুমি গিয়ে নিয়ে এসো। আমার জন্য কয়টা লাল পেয়ারা পেরে নিয়ে এসো। আমার অনেক দিন ধরে খেতে ইচ্ছে করেছে। আমি ভয়ে যেতে পারি না। শেহনাজের কথায় মেহেভীন হাসলো৷ সে বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে বাগানের দিকে চলে গেল। কাঁচা-পাকা ফল দেখে মেহেভীনের ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরে গেল৷ মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি অপরুপ সুন্দর। দেখলই সমস্ত মন মস্তিষ্ক শীতল হয়ে যায়। ভেতরে স্নিগ্ধ অনুভূতি কাজ করে।
অন্ধকারে আচ্ছন্ন কক্ষে মুনতাসিমের অপেক্ষায় বসে আছে যুকব। মুখশ্রীতের তার প্রশান্তির হাসি বিদ্যমান। আজকে নিজেকে ভিষণ করে সার্থক বলে মনে হচ্ছে তার। জীবনে প্রথম সে মুনতাসিমের ভেতরে ভয় প্রবেশ করাতে পেরেছে। আনন্দে তার ভেতরটা শান্তি অনুভব করছে। সে আয়েশি ভঙ্গিতে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে ব্যস্ত। তখনই মুনতাসিম হন্তদন্ত হয়ে কক্ষে প্রবেশ করে। যুবককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলার চেপে ধরলো। মুহূর্তের মধ্যে সে নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেল। যুবককে প্রহার করতে করতে যুবকের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল। তবুও আজ যুবক রাগলো না। সে আজ মুনতাসিমের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছে। আঁখিযুগলে প্রেয়সীকে হারানোর ভয় দেখতে পাচ্ছে সে। এই দিন টা দেখার জন্য সে কত গুলো প্রহর অপেক্ষা করেছে। সে তাচ্ছিল্য করে বলল,
–তুই আমাকে মে’রে ফেললেও সত্যিটা আড়াল করতে পারবি না মুনতাসিম। আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথে ভিডিওটা সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। জনগণ দেখবে আর ধিক্কার জানাবে। আর তোর মেহেভীন! তুই তোর মেহেভীনকে কিভাবে সামলাবি? এতকিছুর পরে-ও মেহেভীন বাঁচতে পারবে তো। তোর সামনে তোর প্রেয়সীর প্রাণহীন দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকবে। তখন তোর কেমন লাগবে? ব্যাপারটা অনেক জোস হবে তাই না। প্রকৃতি ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। আমি যেভাবে প্রতিনিয়ত পুড়েছি। তার থেকে দ্বিগুন ভাবে তুই পুড়বি। তোর বিধস্ত রুপ আমাকে তৃপ্তি দিবে। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে যুবকের মস্তকে বন্দুক ধরলো। বজ্রকণ্ঠে বলল,
–মুনতাসিম কোনোদিন হারতে শিখেনি। তুই কি ভেবেছিস? তোর দেওয়া সামান্য একটা ভিডিও দেখে মুনতাসিম ভয়ে কাবু হয়ে যাবে। তোর মতো কত-শত চুনোপুঁটিকে আমি শায়েস্তা করেছি। তুই আমার কাছে কিছু না। আব্বার দয়ায় বেঁচে আছিস৷ তুই না হয় আমাকে আর মেহেভীনকে আলাদা করবি। আমি পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে যাব। আমার কয়ার সমস্ত হাড় গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। আমার এমন করুন অবস্থা দেখে, তোর প্রতিশোধের জ্বলন্ত আগুন শীতল হয়ে গেল। কিন্তু তোর যে বোন তোকে সাহায্য করছে। তার ছোট্ট দেহটা যদি কেউ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে যায়। একদল নরপশু তার নরম দেহটা শেয়াল কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তোর বোন নামক অস্তিত্ব ধরনীর বুকে গায়েব হয়ে গেল। তখন তোর কেমন লাগবে? নাকি খ’ন্ড খ’ন্ড করে তোর কাছে পাঠাব বল? আচ্ছা আগের সব পরিকল্পনা বাতিল। তুই আমাকে যতটুকু ভাঙবি। আমি তোর বোনকে সেই কয় পি’স করব। যখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না৷ তুই ক্ষুদার জ্বালায় কাতরাবি। তখন আমি তোর বোনের পি’স করা অংশ গুলো তোর খাদ্য হিসেবে পাঠাব। ব্যাপার টা অনেক জোস তাই না বল ভাই! মুনতাসিমের কথায় সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল যুবকের। সমস্ত কায়া থরথর করে কাঁপছে। হাসোজ্জল মুখশ্রীটা মুহুর্তের মাঝে বিষাদগ্রস্ত হয়ে উঠল। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সে কেন বারবার মুনতাসিমের কাছে হেরে যায়। মুনতাসিমের বলা প্রতিটি বাক্য যুবকের রুহু কাঁপিয়ে তুলেছে। ভয়ে সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কালকে সঞ্চয় করা সমস্ত শক্তি নেতিয়ে পড়েছে। সে নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,
–অমানুষ একটা! এসব কথা বলতে তোর বুক কাঁপল না? তোর মতো জা’নো’য়া’রে’র বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুই ম’রে যেতে পারিস না। তুই ম’রে গেলে আমি একটা সুস্থ জীবন কাটাতে পারতাম। তোর জন্য আমার সবকিছু ধংস হয়ে গিয়েছে। তোকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করব না। আমার বোনের কায়াতে একটা ফুলের টোকা পড়লে, তোকে আমি জ্যান্ত পুঁতে ফেলব।
–কালকে রাতে আমাকে ভিডিও দেওয়ার সময় তোর বুক কাঁপেনি? তোর বুদ্ধি কি হাঁটুতে থাকে? আমাকে ভিডিও টা দেওয়ার আগে তোর মনে হয়নি। আমি কাকে মিছে ভয় দেওয়ানোর চেষ্টা করছি৷ মুনতাসিম কাউকে ভয় পায় না। যে মুনতাসিমকে কাবু করতে আসবে। সে নিজেই ধরনীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোর বোনের বুক কাঁপে না। আমাকে প্রতিনিয়ত মা’রা’র প্রচেষ্টা করেই যাচ্ছে। আমি সবকিছু জেনেও তাকে ক্ষমা করছি। যেদিন আমার হৃদয়ে আঘাত পড়বে আল্লাহর কসম বাঁচতে পারবে না। নিজের বোনকে সাবধানে থাকতে বলিস। কথা গুলো বলেই যুবকের বুকে লা’থি মা’র’ল মুনতাসিম। যুবক আহত দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম গর্জন করে বলল,
–এই কু’লা’ঙ্গা’রে’র বোন আসলে এবার আর ছেড়ে দিবি না। রক্তাক্ত করে আমাকে ফোন দিবি। বারবার এই ঝামেলার কাছে আসতে আমার ভালো লাগে না। আমার কাজের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। আমাকে মন্ত্রী সভায় যেতে হবে। আমার সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করলে, কাজে প্রামাণ দেখিয়ে দিব কি হয়। এই জা’নো’য়া’র’কে দু’দিন খেতে দিবি না। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম স্থান ত্যাগ করল। যুবক ব্যর্থ হয়ে নিজেই নিজেকে প্রহার করতে লাগলো। এ জীবনের সে মুনতাসিমের হার দেখতে পাবে না। পরের জন্ম বলে যদি কিছু হয়। তাহলে সে পরের জন্মে মুনতাসিমের থেকে শক্তিশালী হয়ে জন্মামে।
ধরনীর বুকে আঁধার নামতে শুরু করেছে। চৌধুরী গৃহের সবাই নাশতা করার জন্য ড্রয়িং রুমে আসর জমিয়েছে। মেহেভীন মুনতাসিমের বাগানের ফল গুলো সাহেলা চৌধুরীর হাতে দিয়েছিল। তিনি গম্ভীর দৃষ্টিতে একপলক মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিল। সে কিছুটা কড়া কণ্ঠে বলেছিল, “মুনতাসিম তার বাগানে যাওয়া পছন্দ করে না। তুমি আর ওর বাগানে যেও না।” সাহেলা চৌধুরীর কথায় মেহেভীন মস্তক নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সেই ফল গুলো কেটে সবাইকে দেওয়া হয়েছে। শেজনাজ আর মেহেভীন দু’জন আগেই পেট ভরে পেয়ারা খেয়ে নিয়েছে। দু’জন চোরের মতো এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই যেভাবে মেহেভীনকে ভয় দেখিয়েছে। প্রথমে মেহেভীনের ভয় না লাগলে-ও এখন ভিষণ ভয় লাগছে। মেহেভীনের ফোন আসায় মেহেভীন নিজের কক্ষে চলে গেল। মেহেভীন চলে যেতেই মুনতাসিম গম্ভীর মুখশ্রী করে গৃহে প্রবেশ করল। সবার হাতে তার গাছের পেয়ারা দেখে ধপ করে জ্বলে উঠল। রাগান্বিত হয়ে বলল,
–তোমাদের কি খাবারের অভাব পড়েছে? তোমরা কি তিনবেলা খেতে পাও না। আমি সবাইকে কড়া গলায় বলে দিয়েছি। কেউ আমার ফলের বাগানে প্রবেশ করবে না। আমি বাগানটা পাখিদের জন্য তৈরি করেছি। ফলের বাগানে ফল না থাকলে পাখিরা আসবে! কার এত বড় সাহস আমার বাগানের ফল পেরে নিয়ে আসছে? তার কত বড় কলিজা হয়েছে। আমি আজকে তার কলিজা মেপে দেখব। আমি বছরে একবার করে আমার বাগানের ফল সবাইকে খাওয়াই। তবুও কে চুরি করেছে আমার বাগানে? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না তাড়াতাড়ি স্বীকার করো। মুনতাসিমের রাগান্বিত মুখশ্রী দেখে সবাই ভয়ে চুপসে গেল। কারো কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারিত হচ্ছে না। উপস্থিত সবার মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। মুনতাসিমের চিৎকার চেচামেচি শুনে মেহেভীন নিচে নেমে আসলো। তার জন্য এভাবে সবাইকে কথা শুনতে হচ্ছে। বিষয়টা মেহেভীনের কাছে ভিষণ খারাপ লাগলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–এভাবে সবার সাথে চিৎকার চেচামেচি করছেন কেন?
–আমার বাগানের ফল চুরি করা হয়েছে। আমি সেই ফল চোরকে খুঁজছি। ধরতে পেলে আগে হাত কাটব। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীনের মুখশ্রী মলিন হয়ে আসলো। দু’টো ফল পারার জন্য সোজাসাপ্টা তাকে চোর বলে সম্মোধন করবে! সে কোনো বাক্য উচ্চারন না করে হাত দু’টো এগিয়ে দিয়ে বলল,
–আমি আপনার গাছের ফল চুরি করেছি। এই নিন আমার হাত কা’টু’ন। মুনতাসিম উত্তপ্ত হতে গিয়েও শান্ত হয়ে গেল৷ বাঘের মতো গর্জন করা ছেলেটা বিড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করে বলল,
–আপনি পেরেছেন আগে বলবেন না। আমি তো সবার সাথে মজা করছিলাম। আপনি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন কেন? মুনতাসিমের রুপ বদল দেখে বসে থাকা প্রতিটি মানুষের মুখশ্রীতে বিস্ময় এসে ধরা দিয়েছে। নিজের আঁখিযুগলকে বিশ্বাস করতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। রিয়াদ চৌধুরী ঘটনা এড়াতে খবরের কাগজ নিয়ে মুখশ্রী আড়াল করলেন। হয়তো নিজের অজান্তে আসা হাসি টুকু আড়াল করতে। মেহেভীনের এবার ভিষণ রাগ হলো সবার সামনে উচ্চ স্বরে কথাও বলতে পারছে না। রক্তিম চোখে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
–সিরিয়াস ভাবে মজা করলে সিরিয়াস ভাবে নিব না। আপনি তো সবাইকে আপনার বাগানে যেতে নিষেধ করেছেন। আমিও দেখব আপনি আমার হাত কিভাবে কা’টে’ন। আমি এখন থেকে নিয়মিত আপনার বাগানের ফল পেরে খাব। আমার মতো এত সুন্দর পাখিকে আপনার পছন্দ হচ্ছে না! আমাকে দেখে একটা পাখিরও মায়া হবে। আপনার আমার প্রতি মায়া হচ্ছে না! মেহেভীনের কথায় মুনতাসিম লজ্জা পেয়ে গেল। আড়দৃষ্টিতে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। লজ্জায় দাঁড়াতে পারল না মুনতাসিম। সে দ্রুত কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। মুনতাসিম চলে যেতেই সবাই শব্দ করে হেসে দিল। সাহেলা চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–যাকে দেখলে বনের সকল পশুরা ও ভয়ে কাঁপে। আজ সে-ও কাউকে দেখে ভয়ে কাঁপছে! সব জায়গায় গর্জন চলে না। দিনশেষে ভিষণ খারাপ মানুষটাও কারো কাছে ভয়ে কাবু হয়ে যায়। এতদিন সবাইকে নাচিয়েছে। এবার তার নাচার সময় এসে গিয়েছে। এবার সে নিজে নেচে দেখুক নাচতে কেমন লাগে। সাহেলা চৌধুরীর কথায় সবাই আবার হাসতে শুরু করল। সুখ যেন তাদের মুখশ্রীতে এসে ধরা দিয়েছে। এই একটা সুখের মুহূর্তে উপভোগ করার জন্য জীবনে কতই না দুঃখ কষ্ট উপভোগ করতে হয়!
চলবে…..