#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে বিধস্ত অবস্থা মস্তক নুইয়ে আছে জারিফ। সমস্ত কায়া জুড়ে শত-শত প্রহারের চিহ্ন। গত সাতদিন ধরে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। তবুও মুখ দিকে একটা বর্ণ ও বের করছে না। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আঁখিযুগলের কালো দাগ প্রকাশ করে দিচ্ছে। সে কত নির্ঘুম রাত না ঘুমিয়ে পার করেছে। জারিফের সামনে বসে আছে ওসি প্রলয়। সবাই যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই প্রলয়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রলয় চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–আমি তোকে ভালো ভাবে বলছি। সত্যি করে বল লা’শ দু’টো কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? তুই যদি আমাকে সত্যি কথা বলে দিস। তাহলে আমি তোর শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রলয়ের কথায় শব্দ করে হেসে উঠল জারিফ। প্রলয় চোয়াল শক্ত করে জারিফের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। জারিফ তাচ্ছিল্য করে বলল,
–আমি কেন বলব? আপনার এত ক্ষমতা আপনি খুঁজে বের করে নিন। এমনিতেও আমার বাঁচার ইচ্ছে নেই স্যার। আমি মৃত্যুকে কাছে চেয়েছি বলেই দু’টো জা’নো’য়া’র’কে খু’ন করেছি। জারিফের সহজ সরল স্বীকারোক্তি প্রলয়ের ভেতরটা কাঁপিয়ে তুলল। ছেলেটার মুখশ্রী জুড়ে অসম্ভব মায়া লেগে আছে। যেন তার মুখশ্রীতে দৃষ্টি পড়লেই সবাই তার মায়াতে আঁটকে যেতে বাধ্য। প্রলয় কণ্ঠে কোমলত্ব নিয়ে এসে বলল,
–তোমার মুখশ্রীতে ভিষণ মায়া ছাড়ানো আছে। এত সুন্দর একটা ছেলে হয়ে ধংসের পথে আসলে কেন?
–ভালোবেসে ভালো আর মহৎ সবাই হতে পারে স্যার। কিন্তু ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষের ভালোর জন্য খারাপ সবাই হতে পারে না৷ আমার জীবনটা ছন্দহীন গানের মতো সুর আছে। কিন্তু কোনো তাল নেই। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে, সেই ভালোবাসাকে কলঙ্কিত করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা কুলাঙ্গার আমি। জারিফের বাক্য গুলো কর্ণকুহরে আসতেই প্রলয় আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠল। সে উৎসুক দৃষ্টিতে জারিফের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। জারিফ শান্ত নদীর ন্যায় স্থির হয়ে গেল। প্রলয় স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
–কার বিরহে এগুলো করলে?
–প্রেয়সীর জন্য।
–পেয়েছিলে তাকে?
–না পাইনি।
–কেন?
–কারন সে মানুষকে ভালোবাসতে পছন্দ করে। কিন্তু আমি তো মানুষ রুপি জা’নো’য়া’র!
–সবকিছু আমায় খুলে বলা যাবে? প্রলয়ের কথায় জারিফ সোজা হয়ে বসলো। শান্ত দৃষ্টিতে প্রলয়কে পরখ করে নিল। প্রলয়ের আঁখিযুগলে আগের মতো রাগ নেই। সে আগ্রহ নিয়ে জারিফের কথা শুনছে। এই জন্যই তাকে সবাই জাদুকর বলে সম্মোধন করে। খুব সহজ মনের ভেতরে গিয়ে কথা বের করে নিয়ে আসতে পারে। জারিফ বুক ভারি করা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সে অপরাধীর ন্যায় মস্তক নুইয়ে বলতে শুরু করল,
–আমি আর মেহেভীন একসাথে পড়াশোনা করতাম। সে শুধু আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করতো। আর আমি তাকে মন দিয়ে বসেছিলাম। তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে দীর্ঘ দিন মনের কথা গুলোকে নিজের মনের মধ্যে গোপন করে রেখেছিলাম৷ আমার মনের কথা গুলো তাকে বলতে না পারার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলেছি। মানুষকে তো দমিয়ে রাখা যায়৷ কিন্তু মন! মনকে কিভাবে দমিয়ে রাখবো বলেন স্যার? আমি নিজেকে দমাতে পারলেও মনকে দামাতে পারিনি। তাকে হারিয়ে ফেলার ভিষণ ভয় ছিল আমার। তাকে মন গহীনে যত্ন করে রাখতে চেয়েছিলাম। সে আমার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি স্যার। সে আমায় বলেছি সে আমাকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। আমি নাকি তার কাছে তার ভাইয়ের মতো। আপনিই বলুন স্যার কোনো প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সীর জামাই থেকে মায়ের পেটের ভাই হতে চাইবে? সেদিন আমাদের ভার্সিটিতে কনসার্ট চলছিল। শহরে নামী-দামী শিল্পীরা এসে তাদের মধুর সুর তুলে সবাইকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছিল। মেহেভীন সেদিন লাল টকটকে রঙের একটা শাড়ি পড়েছিল। তার দিকে আমার দৃষ্টি যেতেই আমার হৃদস্পন্দনের গতিবেগ থেমে গিয়েছিল। আমার আঁখিযুগল পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছিল। আমার অনুভূতিরা নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গিয়েছিল। মনকে কড়া বাক্য প্রয়োগ করে-ও সেদিন মনকে দমাতে পারিনি। সমস্ত কার্যক্রম ছেড়ে তার পেছনে ছুটতে শুরু করলাম। সে কয়েকদিন ধরে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তার অবহেলা আমাকে পোড়াতে পোড়াতে দগ্ধ করে দিচ্ছিল। আমি তাকে ডাকলাম সে আমাকে উপেক্ষা করে চলে গেল। তখন আমার ভিষণ রাগ হয়। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ছুটে যাই তার পেছনে পেছনে। সেখানে গিয়ে দেখি তার চাচাতো বোন শাড়ি বদল করছে। আরো একদল মেয়ে ছিল। সবাই তৈরি হয়ে বের হয়ে গেল। প্রাপ্তির ফোন আসে প্রাপ্তি ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগটাই আমি নেই। সেই কক্ষের মধ্যে মেহেভীন একাই ছিল। তার বোনের জিনিস গুলো ব্যাগে তুলছিল। হয়তো সে বাসায় চলে যাবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি মেহেভীনের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসি। মেহেভীন নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমাকে থা’প্প’ড় দিয়ে বসে। এতে আমি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যাই। মেহেভীন আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে কাউকে দেখতে না পেয়ে কবাটের দিকে অগ্রসর হয়। তখনই আমি তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরি। সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছিল। ভয়ে তার আঁখিযুগল ছোট ছোট হয়ে আসছিল। আঁখিযুগল বেয়ে অনবরত অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছিল। ওর মুখশ্রীতের ভয় দেখে ভিষণ আনন্দ পাচ্ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম ওকে একবার কলঙ্কিত করতে পারলে, কেউ আমাকে আর ওকে আলাদা করতে পারবে না। মেহেভীনকে বিয়ে করতে হলে আমাকেই করতে হবে। আমার ভেতরে শুধু মেহেভীনকে পাবার নেশা জাগছিল। আমি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে মেহেভীনের শাড়ি খুলে ফেলি। মেহেভীন ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে আর চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে। প্রাপ্তি কাছে থাকায় টের পেয়ে যায়। কিন্তু কবাট ভেতর থেকে লাগানো দেখে ভেতরে আসতে পারছিল না। এই সুযোগ টাই আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। সেদিন মেহেভীন হৃদয়বিদায় চিৎকার দিয়ে বলছিল। আমার সাথে এমন করিস না ভাই আমি মরে যাব। সেদিন মেহেভীনের কোনো বাক্যই আমার কর্ণকুহরে আসছিল না। আমি মেহেভীনকে নিজের মুঠোয় বন্দী করে ফেলি। সে আমাকে অনবরত প্রহার করতেই থাকে। একটা সময় বিরক্ত হয়ে ক’ষে থাপ্পড় বসিয়ে দেই তাকে। এতে মেহেভীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমিও পৈশাচিক হাসি হেসে মেহেভীনের পাশে বসে পড়ি। মেহেভীন একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছিল। আমি একটু একটু করে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। মেহেভীন দেওয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকে। আমি ওর গালে হাত রাখতেই আমার হাতে ও কামড় দিয়ে বসে। আমি রেগে ওর গাল দু’টো চেপে ধরে। শার্টের বোতাম খুলে ওর ওপরে ঝাপিয়ে পড়ার চেষ্টা করতেই ওর আমার গোপনাঙ্গে প্রহার করে। আমি ব্যর্থায় কুঁকড়িয়ে উঠি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার হিংস্রতা প্রকোপ পায়। এতক্ষণ আদরে বোঝানোর চেষ্টা করে-ও যখন পাখি পোষ মানেনি৷ তখন আদেরর দরকার নেই। ওর দুই হাতের ভাজে আমার হাত রেখে যখনই ওর ওপরে ঝাপিয়ে পড়তে যাব। তখনই প্রাপ্তি ছেলেমেয়ে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ছেলেরা আমাকে তুলে প্রচুর মারধর করে। প্রাপ্তি এসে মেহেভীনকে আগলে নেয়। জীবনের প্রথম মেহেভীনকে সেদিন জ্ঞান হারাতে দেখছিলাম। আমার হিতাহিত জ্ঞান আসতেই বুঝলাম। কি করে ফেলছি আমি। পরিস্থিতি আমার হাতের বাহিরে চলে গিয়েছে। মেহেভীনকে নিয়ে সবাই চলে গেল। সিনিয়ররা আমাকে উল্টো ঝুলিয়ে মেরেছিল। আমাকে ভার্সিটি থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছে। অপরাধবোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতো। কিন্তু বিবেক কাজ করতো না। আমি এসব ঘটনা পর আরো দু’বার মেহেভীনকে তুলে চেয়েছি। কিন্তু পারিনি। মেহেভীনের মা একটা জিনিস। মেয়েকে দশ দিক থেকে প্রটেকশন দিয়ে রাখছিল। তারপর বাবার অপ্রিয় সন্তান হলাম। গৃহ হারা হলাম। মেহেভীনের মতো ভালো বন্ধু হারা হলাম। সমাজের চোখ নষ্ট পুরুষ হিসেবে বিবেচিত হলাম। এতকিছুর পরে-ও প্রিয় মানুষটাকে পেলাম না। জারিফের কথা শেষ হবার সাথে কথা প্রলয়ের সমস্ত কায়াতে কাটা দিয়ে উঠল। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,
–ছি এভাবে ভালোবাসা পাওয়া যায়! তুমি তো ভালোবাসা শব্দটাকেই কলুষিত করে ফেলছ। তুমি ভালোবাসার মানুষকে পাবার যোগ্যতা রাখো না বলেই বিধাতা তোমায় ভালোবাসার মানুষ মিলিয়ে দেয়নি। তুমি ভালোবাসার মানুষের ভালোর জন্য দু’টো খুন করেছ বলে তোমার সব অপরাধ মাফ? একটা কথা সব সময় মনে রাখবে। পাপ কখনো তার বাপ কেও ছাড় দেয় না। ভালোবাসা আগলে নেওয়ার জিনিস কলুষিত করে নষ্ট করার নয়। তুমি কথা গুলো কতটা সহজে বলে দিলে! কিন্তু মেহেভীনের পরিস্থিতিটা এতটা সহজ ছিল না। যে মেয়েটা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে৷ সেই মেয়েটা জানে মৃত্যু কতটা কাছে। তোমাকে ধিক্কার জানাতে বাধ্য হলাম। জারিফ মলিন হাসলো। হাসতে হাসতে বলল,
–জানি স্যার আপনিও সবার মতো আমাকে ঘৃণা করবেন। আমি ঘৃণা করার জন্যই কথা গুলো বলেছি। কারন মানুষ ভালো জিনিসের কদর কম দেয়। আমাদের ভালো মুহূর্তের কথা গুলো বললে আপনি-ও আমায় ভালোবেসে ফেলবেন। আমি তো মেহেভীনের ক্ষতি করারই চেষ্টা করেছি সেদিনের পর। তারপর যখন জানলাম সে অন্য পুরুষে আসক্ত হয়ে গিয়েছে৷ সেদিন আমার কায়ার সমস্ত হাড় গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়ে ছিল। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছিল না। মৃত্যুর আগে মেহেভীনের জন্য ভালো কিছু করতে চাইছিলাম। তখনই আরিয়ান আর মিরাজুলের তথ্য আমি পাই। মেহেভীনের বিয়ের দিন আমিই ওদের সরিয়েছি। ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকা দেখতেও শান্তি লাগে। এটা আমি এতদিনে বুঝেছি৷ সেদিন বুঝলে মেহেভীন আমার হয়ে যেতো। পরপারে আল্লাহকে বলব। আল্লাহ তুমি আমাকে মুনতাসিম বানিয়ে দাও। তাহলে মেহেভীন আমাকে ভালোবাসবে। এই জীবনে পাইনি তো কি হয়েছে। পরপারে আল্লাহর কাছে ঠিক চেয়ে নিব। আপনি ভিষণ গভীর জলের মাছ স্যার। কি সুন্দর আমার পেট থেকে কথা গুলো বের করে নিলেন। আপনি এখন এখানে থেকে চলে যান। আমি আর একটা বাক্যও উচ্চারন করব না। প্রলয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জেলের মধ্যে থেকে বের হয়ে গেল। সে সময় মতো এসে জারিফের থেকে তথ্য বের করে নিবে।
চারদিকে প্রভাতের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। মেহেভীন ঘুম থেকে উঠেই মুনতাসিমের বাগানে ফল চুরি করতে এসেছে। আজকে এই বাগানে আসার এতটুকু ইচ্ছে ছিল না তার। কিন্তু বড়ই গাছের হলদে রঙের বড়ই গুলো মেহেভীনের আঁখিযুগলকে আকর্ষণ করে টানছে। এমন লোভনীয় বড়ই আঁখিযুগলের সামনে থাকলে নিজেকে দমিয়ে রাখা যায়। জিভে পানি চলে আসলো মেহেভীনের। সে গাছের নিচে এসে হতাশ হলো গাছটা অতিরিক্ত উঁচু যার ফলে সে বড়ই গুলো পারতে পারছে না। আশেপাশে কোনো কিছুই পাচ্ছে না। যেটা দিয়ে বড়ই গুলো পারবে না। বিরক্ততে মুখশ্রী কুঁচকে এল তার৷ সে বিরক্ত হয়ে লাফাতে শুরু করল। হাত বড়ই ছুঁই ছুঁই হয়েও ধরতে পারল না। তখনই মেহেভীন অনুভব করল সে হওয়াতে ভাসছে। সে দ্রুত নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিমকে দেখে দ্রুত হাত বাড়ির বড়ই গুলো পেরে ওড়নার মধ্যে নিচ্ছে। মেহেভীনের বড়ই পারা হলে মুনতাসিম মেহেভীনকে নিচে নামিয়ে দিল।
–বেলকনি থেকে দেখছিলাম। একটা পাখি বড়ই খাওয়ার জন্য কতটা ছটফট করছে। পাখিটা ভিষণ ছোট গাছের নাগাল পাচ্ছে না। আমি এই বাগানটা পাখিদের জন্যই তৈরি করেছি। আমি থাকতে একটা নিরীহ পাখি ফল খেতে পারবে না। তাই কখনো হয়! নিজ দায়িত্বে আসলাম পাখিকে ফল পেরে খাওয়াতে। আপনার ফল পারা হয়েছে পাখি আর কোনো ফল লাগবে?
–আর লাগবে না এতেই আমার হয়ে যাবে।
–ইশশ, আমার বাগানে কত সুন্দর পাখি প্রবেশ করেছে। এত সুন্দর পাখি দেখলে মন স্থির থাকে! এমন পাখি দেখলেই আমার আদর করে দিতে ইচ্ছে করে। আপনাকে একটু আদর করে দেই পাখি? মুনতাসিমের কথায় মেহেভীনের মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। সে লজ্জা মিশ্রিত মুখশ্রী আড়াল করে গৃহে দিকে যেতে যেতে বলল,
–অসভ্য একটা।
–ভালো মানুষের দাম নেই। এত বড় উপকার করলাম। কই আমাকে পারিশ্রমিক দিবেন। তা না করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চলে যাচ্ছেন!
–কক্ষে আসুন পারিশ্রমিক দিচ্ছি। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিম মেহেভীনের পেছনে পেছনে গেল। মুনতাসিম কক্ষে প্রবেশ করে দেখল। মেহেভীন খুব আয়েশ করে লবন দিয়ে বড়ই মাখিয়ে খাচ্ছে। মেহেভীনের খাওয়া দেখে মুনতাসিমের ইচ্ছে জাগল খাওয়ার জন্য। মেহেভীন একটা বড়ই এগিয়ে দিয়ে বলল,
–এই নিন আপনার পারিশ্রমিক। মুনতাসিম বিলম্ব না করে দ্রুড বড়ইটা হাতে নিল। মুখে দিতেই সমস্ত মুখশ্রী কুঁচকে এল তার। সে বিরক্তি মাখা মুখশ্রী কর বলল,
–কি টক, এগুলো মানুষ খায়!
–একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনারা ছেলেরা শুধু মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। আর আমরা মেয়েরা সেই মিষ্টিকে জাস্ট ইগনোর করি। আমার টক পছন্দ সেটা যেমন আপনার পছন্দ না। ঠিক তেমনই আপনার মিষ্টি পছন্দ আমার পছন্দ না।
–আপনি একটু হাসুন তো। আপনি হাসলে হালকা করে আপনার গালে টোল পড়ে। আপনি হাসলেই আপনাকে মিষ্টি লাগে। আমি আপনার টোলের মধ্যে লবন রেখে বড়ই খাব। তাহলে আর টক লাগবে না। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন আঁখিযুগল বড় বড় করে, মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিম বলাতে সে কৃত্রিম হাসলে মুনতাসিম সত্যি সত্যি তার গালে লবন রেখে বড়ই খেল। মেহেভীন হতভম্ব হয়ে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনতাসিম মেহেভীনের গালে চুমু খেয়ে বলল,“এবার মিষ্টি লাগছে।” কথা গুলো বলেই মুনতাসিম কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। মেহেভীন গম্ভীর দৃষ্টিতে মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। তখনই মেহেভীনের ফোনটা টুং করে বেজে উঠল। মেহেভীন ফোনটা হাতে নেওয়ার আগেই মুনতাসিম এসে খপ করে ফোনটা কেঁড়ে নিল।
চলবে…..