খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৪৬ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
434

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চারিদিকে সুখানুভূতিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সুখ যেন তার অনুভূতির রাজত্বে শাসন কার্য শুরু করে দিয়েছে। মনের শহরের অলিতে-গলিতে আনন্দ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এত সুখ, এত আনন্দ সইবে তো! আজকে মুনতাসিমকে জনসভায় যেতে হবে। মুনতাসমি তৈরি হয়ে গিয়েছে। মেহেভীন মুনতাসিমের শুভ্র পাঞ্জাবীর ওপরে পড়া কটির বোতাম গুলো যত্ন সহকারে লাগিয়ে দিচ্ছে। মুনতাসিম মুগ্ধ নয়নে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীন বোতাম লাগানো শেষ করে মুনতাসিমের কেশ গুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল,

–মেয়ে ভক্তদের থেকে দশ হাত দুরত্ব বজায় রেখে চলবেন। যদি কোনো মেয়ের গা ঘেঁষে ছবি তুলতে দেখেছি। পরের দিন প্রভাত বেলা ব্রেকিং নিউজ হবে। মন্ত্রী মুনতাসিম ফুয়াদকে কে’টে পিস পিস করে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাবতেই আনন্দ লাগছে। আপনার কেমন লাগছে মন্ত্রী সাহেব? মেহেভীনের কথায় মুনতাসিম সহজ সরল মুখভঙ্গি করে ফেলল। আঁখিযুগলে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট! সে শুকনো ঢোক গিলে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আপনি আমাকে হু’ম’কি দিচ্ছেন?

–না আপনার ঘরে যে একটা বউ আছে। সেটা মনে করিয়ে দিলাম। আমি কি ছুরিতে ধার দিয়ে রাখব মন্ত্রী সাহেব? বলা তো যায় না কখন কোন কাজে গেলে যায়।

–হ্যাঁ দিয়ে রাখুন বলা তো যায় না। ওটা দিয়ে আমি আপনার গ’লা’ও কাটতে পারি। আমার যে বউ আছে৷ সেটা যেমন মনে রাখা আমার দায়িত্ব। ঠিক তেমনই আপনারও যে স্বামী আছে। সেটা মনে রাখাও আপনার কর্তব্য।

–লোকে বলে তুমি তার মাঝে কি দেখেছ? আমি বলি তাকে দেখার পর আর কিছু দেখিনি। আপনার মায়ায় আমি এমন ভাবে আঁটকে গিয়েছি। যে আপনার থেকে যতই সুদর্শন পুরুষ আসুক না কেন? আমার কাছে আপনার থেকে সেরা কেউ হবে না। আপনার মতো সুন্দর পুরুষ আমি দু’টো দেখিনি। আপনাকে দেখার পর আমার আর কাউকে ভালোই লাগে নি। আমার মহারাজা ছাড়া ধরনীর বুকে সকল পুরুষ আমার কাছে বিষাক্ত। আমার স্বামী আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। আপনার যত রকম অস্ত্র আছে। আপনি সব গুলো মেরামত করে রাখুন। আমি আপনাকে একশো পারসেন্ট গ্যারান্টি গিয়ে বলতে পারি। সেগুলো আপনার কোনো কাজেই আসবে না। আমাদের যদি কোনোদিন বিচ্ছেদও হয়ে যায়। তবে আমি মেহেভীন আজকে আপনাকে কথা দিলাম। আপনি ব্যতিত কোনো পুরুষ আমার জীবনে প্রবেশ করবে না। মেহেভীনের বাক্য গুলো শেষ হবার সাথে সাথে মুনতাসিম মেহেভীন মুখ চেপে ধরলো। মেহেভীনের মুখশ্রীতে বিচ্ছেদের কথা কর্ণকুহরে আসতেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। আনন্দ উল্লাস করা হৃদয়টা মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে গেল। সে কাতর স্বরে বলল,

–আপনি আমায় সবকিছু বলবেন। আমি মেনে নিব। কিন্তু আর কোনোদিন বিচ্ছেদের কথা মুখে আনবেন না। বিচ্ছেদ নামটাও বিষাক্ত। নামটা কর্ণে প্রবেশ করার সাথে সাথে ভেতরটা ভিষণ বাজে ভাবে পুড়তে শুরু করেছে। আপনি বিচ্ছেদ চাইলে আমার মৃত্যু অনিবার্য। আপনি যতটুকু জানেন তার থেকেও বেশি আপনার সাথে বাঁচার ইচ্ছে আছে আমার। আপনি আমাকে রক্তাক্ত করে দিয়েন। তবুও আমার সাথে থাইকা যাইয়েন। আমি আপনায় ছাড়া আর বুঝি না৷ আমি সকাল সন্ধ্যায় প্রতিনিয়ত আপনারেই খুঁজি। বিচ্ছেদ শব্দটা উচ্চারিত হলেই বুকটা ভিষণ ব্যথা করে আমার। মুনতাসিমের কাতর কণ্ঠ স্বর আর অসহায়ত্ব মাখা মুখশ্রী মেহেভীনকে আহত করল৷ সে মলিন মুখশ্রী করে মুনতাসিমে দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীনের বিষন্ন মন দেখে মুনতাসিম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,

–আপনি দিন দিন কালো হয়ে যাচ্ছেন।

–কালো হয়ে যাচ্ছি বলে, আমাকে আর ভালো লাগছে না?

–আমি চাইলে আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারি।

–কিভাবে?

–স্ত্রীকে স্বামী বেশি বেশি চুমু দিলে, স্ত্রীর সৌন্দর্য বেড়ে যায়। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে দূরে সরে গেল। রক্তিম আঁখিযুগল মুনতাসিমকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। মুনতাসিমের অধরের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। মেয়েটাকে রাগানো খুব সহজ। তার অপছন্দের একটা কথা বললেই দুনিয়াদারী ভুলে যায় সে। মুনতাসিমের এটা ভেবে ভালো লাগছে। মেহেভীনের বিষন্নতাকে সে দূর সরাতে পেরেছে। মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–দূরে না গিয়ে কাছে এসে ভালোবেসে দিন। যাকে অবহেলা করে দূর সরিয়ে দিচ্ছেন। তাকে আদর করার জন্য বাহিরে অনেক তরুনী অপেক্ষা করছে। আপনি কাছে আসবেন নাকি আমি বাহিরে যাব?

–সাহস থাকলে যান। কথা গুলো বলেই সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার নিয়ে এসে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরালো মেহেভীন। মুনতাসিম নিজেই মেহেভীনের অতি সন্নিকটে এগিয়ে আসলো। মেহেভীন দূরে সরতে চাইলে মুনতাসিম মেহেভীনকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিল। মেহেভীন মুহুর্তের মধ্যে আদুরে বেড়ালের মতো গুটিসুটি মেরে মুনতাসিমের বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকলো। মানুষটা তার সামনে আসলেই মেহেভীনের সমস্ত ক্রোধ ছুটি নেয়। মুনতাসিম মেহেভীনের কর্ণের কাছে গিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,

–শুনুন মেয়ে আপনাকে ছোঁয়ার ইচ্ছে আমার নেই।

–আমাকে ছুঁয়েই কথা গুলো বললেন। ছাড়ুন আমাকে পাপী বান্দা। আমাকে ম’রা’র শখ জেগেছে বুঝি। যে ধরণীর বুকে আমি থাকতে পারব না৷ সেখানে আপনিও থাকতে পারবেন না। আপনাকে খু’ন করে তবেই ধরনীর মায়া ত্যাগ করব। এত সহজ নয়। আমাকে আপনার থেকে আলাদা করা। আপনি আমার না তো কারো না।

–কেন আমি আপনার হলে, আপনি আমাকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিতেন? মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেহেভীনের আঁখিযুগলের দিকে দৃষ্টিপাত করে আঁতকে উঠল মুনতাসিম। মেয়েটার আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন হয়ে গিয়েছে। সমস্ত মুখশ্রীতে প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়। মুনতাসিম অস্থির হয়ে বলল,

–আপনি আমার কথায় দুঃখ পেয়েছেন? আমি আপনার মন ভালো করার জন্য মজা করছিলাম। আপনি দুঃখ পেলে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমি ভুল করে ফেলছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর কখনো এমন করব না৷ মুনতাসিমের কথায় হেসে ফেলল মেহেভীন। সে হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–আপনি অস্থির হবেন না। আপনি অন্য কারো হবার কথা বলছেন। এতেই আমার খারাপ লেগেছে। আর কখনো বলবেন না। কারন সব মজা, মজা লাগে না আমার কাছে। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের হৃদয়ে অস্থিরতার ঝড় বয়ে যেতে শুরু করল। সে তার প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীকে আঘাতপ্রাপ্ত করতে চায়নি। মুনতাসিম মেহেভীনের সমস্ত মুখশ্রীতে আদরে আদরে ভরিতে তুলতে লাগল। মুহুর্তের মধ্যে মলিনতাকে গ্রাস করে ফেলল এক টুকরো লজ্জা। বিষন্নতা কেটে গিয়েছে প্রয়নের হাওয়ায়। অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে মনে গহীনে। মুনতাসিম মেহেভীনের ললাটে চুমু খেয়ে বলল,

–আমি বের হচ্ছি। যেতে সময় লাগবে। আপনি দেখে শুনে থাকবেন। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করবেন। আপনার ফোনটা আজ আমার কাছে থাক। আমি আমার দ্বিতীয় ফোনটা আপনার কাছে রেখে গেলাম।

–আপনি সাবধানে যাবেন। আপনাকে নিয়ে আমার ভিষণ চিন্তা হয়। ড্রাইভারকে বলবেন গাড়ি আস্তে চালাতে।

–আমার ম্যাডাম যা বলবে। আমি সবকিছু শুনতে বাধ্য। আসছি। বলেই কক্ষ ত্যাগ করল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফিরে এসে মেহেভীন আলিঙ্গন করল। যাবার সময় বলে বলে গেল, “বাহিরে যাবার আগে বউকে জড়িয়ে ধরলে বিপদ কম হয়।” মুনতাসিমের এমন অদ্ভুত কথায় মনের অজান্তেই মেহেভীনের অধরের কোণে হাসির রেখার দেখা মিলল।

মুনতাসিম গাড়ি থেকে নামতেই মানুষেই হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা তার দৃষ্টিতে এসে আঁটকে গেল। তার সামনে পেছনে পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে প্রিয় নেতার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রিয় নেতাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে জেগেছে মুনতাসিম ভক্তদের। সবাই হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। মুনতাসিম নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সবার সাথে হাত মেলানোর চেষ্টা করছে। মুনতাসিম মঞ্চ উঠতেই সবাই গর্জন করে উঠল। মুনতাসিম হাত উঁচু করে সবাইকে ভালোবাসা নিবেদন করল। আশেপাশে আরো নেতারা রয়েছে। মুনতাসিমের জন্য রাখা নিধারিত চেয়ারে গিয়ে সে বসল। মুনতাসিমকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আহবান করা হলো। মুনতাসিম সালাম দিয়ে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করল। বাঘের ন্যায় গর্জন করে বক্তৃতা দিচ্ছে মুনতাসিম। তার গর্জন করে বলার বাক্য গুলো কারো কারো কলিজা কাঁপিয়ে তুলছে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় একটু সময়ের জন্য তার কথা গুলো বেঁধে যায় না। সেজন্য মুনতাসিমের বক্তৃতা দেওয়া সবার কাছে ভিষণ প্রিয়। দীর্ঘ আটচল্লিশ মিনিট বক্তৃতা দেওয়ার পর মঞ ত্যাগ করল মুনতাসিম। সমস্ত জনতা তাকে ঘিরে ধরতে ব্যস্ত, তখনই গু’লি’র শব্দে সেই স্থান নিরব হলো। তাইয়ানের দৃষ্টি সেদিকে যেতেই তাইয়ান মুনতাসিমকে নিয়ে মস্তক নিচু করে ধরল। গু’লি’টা গিয়ে লাগলো একটা গার্ডের কায়াতে। গার্ডটা যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল। তখনই ভয়াবহ ভাবে মঞ্চের দিকটায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো। আনন্দ আয়োজনের স্থানটা মুহুর্তের মধ্যো ভয়ানক রুপ নিল। জনগণ নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে প্রাণপণে এদিক সেদিক ছুটে চলেছে। পুলিশ প্রশাসন তাদের টিম, ফারার সার্ভিস সহ আরো নিরাপত্তার দলকে দ্রুত সেখানে আসতে বলল। দেড়শো জনের মতো মানুষ গুরুতর ভাবে আহত হলো। টাইম বো’ম’টা মাঝারি ধরনের হওয়ায় মঞ্চের আশেপাশে থাকা মানুষ গুলোর বেশ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। পরপর আরো চারটা গু’লি এসে মুনতাসিনের কর্ণ ভেদ করে চলে গেল। পুলিশ সদস্য কোনদিকে গুলি করবে বুঝে উঠতে পারল না৷ হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কে গুলি করছে। তারা সেটা কিভাবে বের করবে? ভূল বসত যদি নিরীহ মানুষের কায়াতে গিয়ে লাগে। মুনতাসিমের বিচক্ষণ দৃষ্টি সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

–কালো চাদর মুড়িয়ে থাকা মানুষটাকে মারুন গুলিটা সে-ই করছে। দেরি করবেন না, তাইয়ান সুট করো। পুলিশ সদস্য তাক করার আগেই ব্যক্তিটা পুলিশ সদস্যের বুকটা গু’লি দিয়ে ছিদ্র করে দিল। পুলিশ সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তারা তাকে সুট করতে যাবে। তখনই সে মস্তক নুইয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। এত ভিড় ঢেলে সামনের দিকে আগানোও যাচ্ছে না। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে ভিড় ঠেলে সামনের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই একজন সিনিয়র নেতা এসে মুনতািসমের হাত ধরে ফেলে। সে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,

–তুমি প্রটেকশনের বাহিরে যেও না। তোমার ক্ষতি হবে।

–জা’নো’য়া’রে’র বা’চ্চা’কে তো আমি দেখে নিব। ও আমার হাতে পড়লে আমি ওকে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলব। আপনি আমার হাত ছাড়ুন স্যার। আমার ভালোবাসার মানুষদের আঘাতপ্রাপ্ত করেছে। তার চামড়া ছি’লে লবন মরচি লাগাব আমি। তার ভয়াবহ শরীরটা জনগণের সামনে আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মা’র’ব।

–মুনতাসিম এটা ক্রোধের সময় নয়। তুমি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গিয়েছ। তুমি দ্রুত স্থান ত্যাগ করো। আমার অভিজ্ঞতা বলছে। ওরা তোমাকেই মারতে এসেছে। তুমি যতক্ষণ এখানে থাকবে। ততক্ষণ তারা আক্রমণ করতেই থাকবে। তুমি এখানে থাকলে হিতে বিপরীত হবে। তোমাকে আঘাত করতে গিয়ে ক্ষত হবে সাধারণ জনতা। এই ভিড়ের মধ্যে কেউ তোমাকে খু’ন করে দিয়ে গেলে-ও আমরা টের পাব না কে তোমাকে খু’ন করে গেল? তার থেকে ভালো তুমি স্থান ত্যাগ করো।

–আমি মরলে মরব। মরার আগে কু’ত্তা’র বাচ্চাকে খু’ন করে তবেই মরব। মুনতাসিম সামনের দিকে এগোনোর প্রস্তুত হতেই দেড়শোর মতো গাড়ি নিয়ে নিরাপত্তা দল এসে হাজির হলো। একজন পুলিশ এসে বলল,

–স্যার আপনি স্থান ত্যাগ করুন। আপনি থাকলে পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাহিরে চলে যাবে। আপনি দূরে অবস্থান করলে, আমরা খুব সহজে পরিস্থিতি হাতের নাগালে নিয়ে আসতে পারব। মুনতাসিম আজ নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গিয়েছে। চারদিকে হাহাকার লেগে গিয়েছে। মুনতাসিম সবার কথার অর্থ উপলব্ধি করতে পেরে নিজ থেকেই স্থান ত্যাগ করল। চারিদকে আতঙ্কের ছাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। পরে আরো পঞ্চাশটা গাড়ি এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছে। সন্দেহ জনক উনিশ জনকে আটক করা হয়েছে। আহতদের হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। খবরটা মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। হামলার কথা কর্ণকুহরে আসতেই রিয়াদ চৌধুরী অস্থির হয়ে উঠলেন। সে অনবরত তাইয়ানকে ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু তাইয়ানকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সময়ের সাথে চিন্তার মাত্রা প্রকোপ পেতে শুরু করল। সে তার পরিচিত পুলিশকে ফোন করেছিল। সেই পুলিশটা বলেছে। মুনতাসিম সমাবেশ থেকে এক ঘন্টা আগে বের হয়ে গিয়েছে। ভয়ে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল রিয়াদ চৌধুরী। রাজনীতিতে শত্রু বেশি প্রাণ হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়। সেজন্য সে রাজনীতি জিনিসটা পছন্দ করে না। ছেলেকে কত করে নিষেধ করেছিল। রাজনীতিতে যাস না। মুনতাসিমের জেদের কাছে হেরে গিয়েছিল সে। ভয়ে ভেতরটা কাবু হয়ে আসছে তার। মুনতাসিমের খবরটা পেয়ে মেহেভীনও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। বরাবরের মতোই ফলাফল শূন্য। অদ্ভুত ভাবে হাত পা কাঁপছে তার। সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। সে যদি বেরই হয়ে থাকে তাহলে গৃহে আসছে না কেন! তখনই বাহিরে থেকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল। অ্যাম্বুলেন্স থেকে সাদা কাপড়ে ঢাকা লা’শ বের করে নিচে নামানো হলো। সাদা কাপড়টা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। একদম তাজা রক্ত। যেন সবে মাত্র আহত হতেই দেহ থেকে প্রাণপাখিটা বিদায় নিয়েছে। তখনই শেহনাজ এসে বলল,

–ভাবি তাড়াতাড়ি নিচে এসো। নিচে অ্যাম্বুলেন্সে করে কার জানি লা’শ নিয়ে আসা হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ স্থির হয়ে গেল। রিয়াদ চৌধুরী কক্ষে থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে বের হয়ে এল। মেহেভীন দৌড়ে বাহিরে চলে আসলো। রিয়াদ চৌধুরী সামনের লা’শে’র দিকে তাকিয়ে জ্ঞান হারালো। মেহেভীন রক্তে মাখা সামনে শুয়ে থাকা লা’শ’টা দেখে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। সমস্ত কায়া নিস্তেজ হয়ে আসতে শুরু করেছে। সে মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here