#এলোকেশী_সে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বসংখ্যাঃ২৭
নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করল অহন। আজকাল ঘরে আসলে তোড়াকে হয়ত পড়তে দেখা যায় নয়ত বারান্দায় দেখা যায়। আজ ব্যতিক্রম কিছু ঘটল। ঘরটা ফাঁকা। সুশ্রী মায়াবী আদলটা আজ কোথায় যেন লুকিয়ে আছে। হাতঘড়িটা খুলে টেবিলে রেখে নিজের রুমটা ছেড়ে একবার তোড়ার রুমটায় উঁকি দিল। নাহ, এই ঘরটা তো বন্ধ বাহির থেকে। দ্রুত পদে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো, সদর দরজাটা খুলে বাড়ির চারপাশে দেখে এলো। নাহ, মেয়েটার লুকোচুরি মানতে পারছে না সে। হন্তদন্ত হয়ে মায়ের কাছে গেল। সরাসরি ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করল -“তোড়া কি কোথায় গেছে আম্মা?”
অনিমা ভ্রু কুঁচকে বলল -“কই যাবে? ঘরেই আছে। চোখ মেলে দেখ গিয়ে।”
মায়ের কথায় চোখজোড়া ছোট করে অহন বলল -“আপনি কি আমায় ইন্ডাইরেক্টলি কানা বললেন আম্মা? একটু সুন্দরভাবে বলা যায় তো।”
অনিমা বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বললেন -“ওওওও, তাই। আচ্ছা তোর ইচ্ছে পূরণ করব আব্বাজান। এরপর থেকে বলব সম্মানিত চশমাওয়ালা আব্বাজান, চশমাটাকে নাকের আগায় ভালো করে ঠেসে ধরে তারপর আশপাশটা দেখবেন। তাহলে সহজে দেখবেন।”
অহনের শিথিল আদলে এবার বিরক্তির আভাস স্পষ্ট দৃশ্যমান। বা’হাত দিয়ে ঘাড়টা ডলতে ডলতে বলল -“আমি কিছু বললেই দোষ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এবার তো স্বীকার করেন আমি আর অয়ন আপনাদের অভ্যাস পেয়েছি।”
অহনের কথাটা একেবারে জায়গামতো লেগেছে। অনিমা আমতা আমতা করে বলল -“নিজের বউকে খুঁজে পাচ্ছিস না, আবার হিরোগিরি দেখাতে আসছে।”
অহন এবার হাল ছেড়ে দিল। এখন কথার পিঠে কতা বললে মায়ের খোঁচা শুনতে শুনতে কান পচবে। তাই গম্ভীর স্বরে বলল -“কত কসরত করে একটা বউ জুটালাম, আপনারা তাকে লুকিয়ে রেখে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন? একবার খোঁজ পাই, দু’কান ধরিয়ে এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখব।”
গটগট করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো অহন। তার মনে পড়ল ছাদটা তো দেখা হয়নি। শার্টের টপ বাটন দুটো খুলে, স্লিভস গুটাতে গুটাতে ছাদের দুয়ারে পা রাখতেই শুনল অনুর স্বর -“আমি ভাবছি অন্য কিছু। একদিকে আমি তোর বান্ধবী, অন্যদিকে আমি তোর ছোট জা। তোদের পিচ্চি পাচ্চা হলে আমাকে কি ডাকবে? খালামণি নাকি চাচীমা? আচ্ছা ভাইয়া তো ম্যাথের টিচার। আবার বলবে না তো কমন নিতে! তাহলে তো হবে খালামণির ‘খা’ আর চাচীমা এর ‘চা’। তাহলে কি দাঁড়াল! ‘খাচা’। ছিহ! ম্যাথ সাবজেক্টটা কি বাজে।”
তোড়ার গম্ভীর আদলে তীক্ষ্ণ চাহনি। অনুর বকবক শুনে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে। পড়তে পড়তে একঘেয়েমি চলে এসেছিল। একটুখানি জিরোনোর জন্য ছাদে এসেছিল। সে যদি জানত অনু এসে কানের পোকা নাড়িয়ে দেবে তাহলে আসতোই না। মূল্যায়ন পরীক্ষায় ফেল আসলেও চূড়ান্ত মূল্যায়নে ভালোই ফলাফল এসেছে। দু’দিন বাদে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই পড়ার চাপটাও বেশি। তার পরীক্ষার জন্যই ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে অহন। বাবাকে বলে দিয়েছে তোড়ার পরীক্ষার পর অফিসে নিয়মিত হবে।
তোড়ার নীরবতা দেখে অনু ফের বলল -“তুই এমন রোবটের মত থাকিস সবসময়? ভাইয়াও রোবট, তুই রোবট প্রো-ম্যাক্স আর পরবর্তী প্রজন্ম হবে লেটেস্ট, ফিটেস্ট রোবট ভার্সন।”
এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এবার তোড়া ভরাট কন্ঠে বলল -“ভাইয়া আসলে বলব তোর ইমিডিয়েট চিকিৎসা দরকার। আমি ড্যাম শিওর তোর ফেইল আসবে। তুই বেশি রোমান্টিক কিনা! ম্যাথ টিচারের নামে বদনাম হচ্ছে অথচ ঐদিকে ফিজিক্স টিচারের আপেল গবেষণায় তুই এত রোমান্স খুঁজে পাস কিভাবে তা জানার খুব আগ্রহ আমার। কিছু শিখতে হবে, শিখতে চাই।”
তোড়ার গোছানো অপমানটা হজম হলোনা অনুর। মুখ ভেংচি কেটে বলল -“খাটা;শ, একদম আমার জামাইরে নিয়ে কিছু বলবি না। নিরামিষ গণিত শিক্ষকের নিরামিষ ছাত্রী থুক্কু নিরামিষ বউ।”
তোড়া প্রত্যোত্তর করল না। তিতিবিরক্ত হয়ে উঠে হাঁটা ধরল। অনুও লাফাতে লাফাতে তার পিছু নিল। দ্রুত পায়ে ছাদের দরজার সামনে এসেই থমকে দাঁড়াল তোড়া। অনুর দ্রুত গতি হঠাৎ বাঁধা পেতেই সে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষতে পারল না। আপাদমস্তক হুমড়ি খেয়ে পড়ল তোড়ার পিঠে। টাল সামলাতে না পেরে সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে অবলম্বন করতে চেয়েছিলো তোড়া। দরজার সামনেই আছড়ে পড়ল অহন, তার পায়ের উপর আধা বাঁকা হয়ে পড়েছে তোড়া।
অনু কোনমতে উঠে দাঁড়িয়েই ছুট লাগালো নিচে। এক মুহূর্ত থাকলে নির্ঘাত রসগোল্লা এসে পড়বে নরম গালে।
তোড়া উঠে দাঁড়াল। হাঁটুর কাছটায় ব্যাথা পেয়েছে, চামড়া উঠে এসেছে খানিকটা। হাঁটুর ওপর সালোয়ারটা ভেজা অনুভব হচ্ছিল। হাত দিয়ে বুঝল রক্ত বেরোচ্ছে। অহন তখনও পুরোটা বুঝে উঠতে পারল না। আচমকা ঘটনা কোন দিক থেকে কোন দিকে প্রবাহিত হলো তা মিলানোর চেষ্টা করছে। সম্বিত ফিরল তোড়ার কথায় -“উঠুন না। ব্যাথা পেয়েছেন নাকি?”
থতমত খেয়ে অহন জিজ্ঞেস করল -“কি হলো? মানে কিভাবে হলো? বাংলা ছবি দেখছো নাকি ইদানীং, নায়ক দেখলেই হুমড়ি খেয়ে তার বুকে পড়ার ইচ্ছে ছিল? তাহলে তো বলব তোমার নিশানা ভুল। হলো না, ধাক্কা খেয়ে আমার বুকে পড়ার শখ মিটলো না। অত শত কায়দা করতে হবে কেন? আমার তো অধিকার আছে যখন তখন জড়িয়ে ধরার। বললেই জড়িয়ে ধরতাম। কি দরকার ছিল আমাকে আছাড় খাওয়ানোর! পরশু দিন পরীক্ষা, না পড়ে বরকে জড়িয়ে ধরার ট্রায়াল দিলে পাশ আসবে না, ইয়া বড় বড় জিরো পেতে হবে।”
একে তো হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছে, তার উপর অহনের কথায় তোড়ার মুখটা থমথমে হয়ে গেল। পেছনে ঘুরে হাঁটা ধরল। সিঁড়িতে পা ফেলতেই বুঝতে পারল ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। সেদিকে গা না করে আরেক ধাপ নামতেই কানে এলো সেই শীতল স্বরটা -“কিছু বলবে না আমাকে?”
ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালো তোড়া। পরক্ষণেই আবার সামনে তাকিয়ে হাঁটা ধরল। ফের আদেশ এলো মোলায়েম স্বরে -“দাঁড়াও।”
চলন্ত পদজোড়ার গতি শ্লথ হলো। সেই আদেশ যেন শিরোধার্য। অহন এগিয়ে এসে তোড়ার সামনে দাঁড়াল। গভীর পর্যবেক্ষণ করে বলল -“তোমাকে অভিমানিনীরূপে বেশ লাগে। যেন সদ্য ফোঁটা রক্তজবা! তুমি অভিমান করবে আর আমি তোমায় দেখব। বিশ্বাস করো, কখনো ক্লান্ত হবো না। তোমার মান ভাঙাব উল্টো।”
তোড়া আরেক পা এগিয়ে এলো, একেবারে পুরো দূরত্বটা ঘুচিয়ে দাঁড়াল। দু’জনের নিঃশ্বাসের উষ্ণতা ছুঁয়ে দিচ্ছে দু’জনকেই। তোড়া দৃঢ় কন্ঠে বলল -“আপনি মান ভাঙাবেন বলেই তো আশকারা পাই।”
মায়াবী হাসির অধিকারী মানুষটা এবার তোড়ার দু’গালে হাত রেখে বলল -“আমি বাড়াবাড়ি রকমের ভালবাসার বুলি আওড়াতে জানিনা কুইন। আমি আগলে রাখতে চাই আপনাকে।”
নিজের হাতজোড়া অহনের হাতের উপরে রেখে তোড়া বলল -“আমি ভরসা করি, বিশ্বাস করি।”
তোড়াকে নামতে না দেখে অনু ফের দ্রুত বেগে ছুটল ছাদের দিকে। অহন আর তোড়াকে দেখে চোখ বন্ধ করে চেচিয়ে বলল -“আমি কিছু দেখিনি, দেখতে চাইনা।”
অনুর স্বরধ্বনি কর্ণকুহরে আসতেই তোড়া সরে দাঁড়াল। কিছুটা লজ্জাবোধ হলো তার। অহনের ভাবান্তর হলোনা। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাতের আঙ্গুল চালিয়ে পেছনে সরিয়ে বলল -“দেখলেও আহামরি পাপ হওয়ার কথা না। ছোট মানুষ, বড়দের দেখেই তো শিখবে।”
দু’টো বাক্য উচ্চারণ করেই নিচে নেমে গেল। ফের দু’কদম পিছিয়ে বলল -“দুটোই পড়তে যাও। আর এক মিনিটও যেন দাঁড়িয়ে থাকতে না দেখি।”
অনু চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইল। অহন যে তাকে শুদ্ধ, সুন্দরতম ভাষায় গুছিয়ে অপমান করেছে তা বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি। তার ভাসুর তার সব কথা শুনেছে এটা নিশ্চিত হলো। অনু এবার ঠোঁট উল্টে বলল -“বাহ, কেমিস্ট্রি ক্লাস ভালোই চলছিলো। নিজের কপাল দোষে এখন গণিতের গোমড়ামুখো স্যারের ক্লাস করতে হবে।”
অনুর বাচ্চামোতে অহন হাসল নামতে নামতে। অয়ন যে কেন এই মেয়েটার কাছে বারবার ঘায়েল হয় তা প্রতিদিন নতুন করে বুঝতে পারছে সে। এই মেয়েটাকে ছোট ভাইয়ের বউয়ের চেয়ে ছোট বোনের মত ট্রিট করতেই তার ভালো লাগে। অনুও মোটেই ভয় পায়না অহনকে, যখন তখন সে-ও ছোটবোনের ন্যায় আবদার করে বসে।
অনু মুখভার করে ফের বলল -“চল পড়তে বসি, নয়লে পদার্থবিদ এসে আবার ভাষণ দিবে।”
তোড়া ঠোঁট টিপে হাসল। অনুর মাথায় আলতো করে টোকা দিয়ে নিচে নেমে এলো। অনুও নামলো পিছু পিছু।
অনু ঘরে গেলেও তোড়া রান্নাঘরের দিকে এগোলো। চুলায় চায়ের জন্য পানি বসিয়ে শাশুড়ির ঘরে গেল। স্বাভাবিক স্বরে শুধাল -“জ্যেঠীমা, কি নাস্তা বানাব?”
তোড়ার কথা শুনে অনিমা চোখ গরম করে জবাব দিল -“তোকে নাস্তা বানাতে কে বলেছে? এক্ষুণি পড়তে যা। নাস্তা বাইরে থেকে আনাব।”
কথা বাড়ালো না তোড়া। মুচকি হেসে শাশুড়ির ঘর ছেড়ে আবার রান্নাঘরে এলো। আদা-চা বানিয়ে দু’কাপে ঢেলে একটা কাপ দিয়ে গেল অনিমাকে। মিষ্টি হেসে তোড়ার গালে হাত রাখলেন তিনি। তোড়াও মিষ্টি হাসিটা উপহার দিলো শাশুড়িকে। অন্য চায়ের কাপটা নিয়ে অহনের ঘরের দিকে এগোলো। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই দেখল বিছানায় আধ শোয়া অহন।
তোড়া ধীরে সুস্থে পড়ার টেবিলটার কাছে গিয়ে চায়ের কাপটা রাখল। চেয়ারটা টেনে বসে প্রথমেই চায়ের কাপে ছোট্ট একটা চুমুক দিল। তার মনে পড়ল রুবাবাও আদা-চা বেশ পছন্দ করত। কথাটা স্মৃতিতে আসতেই ফের নিজেকে প্রবোধ দিল এসব স্মৃতি মনে করে মা’কে কষ্ট দিবে না সে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। এসব স্মৃতি তাকে দূর্বল করবে শুধু, স্বপ্ন পূরণ করতে দিবেনা। টেনেটুনে মনোযোগ আবারও চায়ের কাপে আনল। দ্বিতীয় চুমুকটা কাপের কিনারে দিল। অহন আড়চোখে দেখে গেল তোড়ার কাপে চুমুক দেয়ার দৃশ্যটা। বিছানা ছেড়ে নেমে এসে তোড়ার পেছনে দাঁড়াল সে। ইচ্ছে করছে চায়ের কাপটা নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলতে। ইচ্ছাকে দমন করে গম্ভীর স্বরে অহন বলল -“যে ঠোঁটের উপর আমার আজন্ম অধিকার জন্মেছে, সে ঠোঁটের ছোঁয়া কোন বস্তুতেও না লাগুক। আমি আবার ভীষণ হিংসুটে। একদম সইব না এই অনিয়ম।”
তোড়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পেছনে। তার মাস্টার মশাইয়ের প্রতিটা বচনের গূঢ় অর্থ তার বোধগম্য হলো। চায়ের কাপটা দূরে ঠেলে বইয়ের শক্ত মলাটটা উল্টে পড়ায় মন দিল। পেছন থেকে হাতটা এনে চায়ের কাপটা নিজের দখলে নিল অহন। একটা চুমুক বসাল কাপটার কিনারায়। তোড়া একমনে দেখে গেল সে দৃশ্য। চা শেষ করে অহন বলল -“তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। তোমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বড় একটা অর্ডার পেতে চলেছ হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ির।”
তোড়ার মলিন মুখটায় খুশির ঝলক। বহুদিন পর শব্দ করে হেসে উঠল। তার হাসিটা দেখে অহনের ইচ্ছে হলো তাকে খানিক জ্বালাতে। তাই নিজেও হাসতে হাসতে বলল -“এই খুশিতে আমাকে একটা টাইট হাগ দিতেই পারো।”
উপরে নিচে মাথা দুলিয়ে তোড়া জবাব দিল -“আপনি চাইলেও নিষেধাজ্ঞা নেই। বউয়ের খুশিতে আপনিও খুশি হওয়ার কথা তো।”
কথাটা বলে পা টেনে টেবিলের দিকে ঘুরতেই টেবিলের পায়ার সাথে লেগে হাঁটুতে ফের চোট পেল মেয়েটা। ‘উহ’ বলে হাঁটুতে হাত রাখতেই অহন ব্যস্ত হয়ে বলল -“কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছ নাকি?”
মুহূর্তেই অহনের হাসি মুখটায় আঁধার ছেয়ে গেল। উদ্বিগ্ন হয়ে জবাবের অপেক্ষা করল। তোড়া উশখুশ করে বলল -“ছাদে পড়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছি তখন। এখন আবার টেবিলের সাথে লেগেছে।”
কালক্ষেপণ না করে অহন বসে পড়ল তোড়ার পায়ের কাছে। দ্রুত পা সরানোর চেষ্টা করেছিল মেয়েটা কিন্তু অহনের কুঁচকানো কপাল দেখে শিথিল হয়ে বসল। আলতো হাতে স্ত্রীর পা টেনে নিজের কাছে আনল মানুষটা। গম্ভীর স্বরে আদেশ করল -“সালোয়ারটা উপরে তুলো, দেখি কতখানি কেটেছে?”
তোড়া ইতস্ততভাবে বলল -“আনইজি লাগছে।”
মুখ তুলে চেয়ারে বসা স্ত্রীর পানে চেয়ে অহন বলল -“টেক ইট ইজি। আমি একান্তই তোমার, আমার নিকট আনইজি ফিল করার কোন সুযোগ নেই।”
চোখজোড়া এক পলক বন্ধ করে ফের খুলল অহন। স্ত্রীকে আশ্বস্ত করার ভাষাটা চোখেও রেখেছে সে। তোড়াও সে আশ্বাসটুকুর দাম দিল সম্মানের সহিত। ঢোলা হেম লাইনটাকে ‘নি লাইন ‘ পর্যন্ত উঠিয়ে উন্মুক্ত করল নিজের আঘাত পাওয়া হাঁটু। ফের চোট পাওয়ায় রক্ত গড়িয়ে এসেছে প্রায় গোড়ালির কাছটায়। ফর্সা উন্মুক্ত পা’টা নজরে আসতেই ভ্রু কুঁচকাল অহন। ধমক দিয়ে শুধাল -“তখন কেন বলোনি? বেশ বড় হয়ে গেছ তাইনা? ব্যাথা লুকাতে শিখেছ? আমি কে হই তোমার, সেই কথা ভুলে গেছ? আমার কাছ থেকে কষ্ট আড়াল করছ বুঝি?”
অহনের ছোঁড়া প্রতিটি প্রশ্নবাক্যে ছিল স্পষ্ট অভিমান। ত্রস্ত পায়ে এন্টিসেপ্টিক লিকুইড আর জীবাণুনাশক অয়েন্টমেন্ট আনল কর্ণার টেবিলের ড্রয়ার থেকে। আলতো হাতে সাবধানী কায়দায় পরিষ্কার করল শুকিয়ে যাওয়া লোহিত। ক্ষতস্থানে জীবাণুনাশক অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে চুপচাপ সরে এলো। বিছানায় বসে স্বাভাবিক স্বরে বলল -“এখানে এসো। ওখানে বসলে পায়ে ভাজ পড়লে ব্যাথা পাবে।”
তোড়া যেন এই অপেক্ষায় ছিল। কথাটা কানে আসতেই বই পত্র নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে বসল অহনের পাশে। মুখভার করে বলল -“প্যাসেজ ন্যারেশন ভালো মতো পারছিনা।”
হাত বাড়িয়ে বইটা নিল অহন। ইশারা করলো খাতা বের করার জন্য। তোড়া মনোযোগ দিলো পড়ায় কিন্তু টিচার যদি হয় নিজের প্রিয় মানুষটা তখন মনোযোগ পড়ার চাইতে মানুষটাতেই বেশি আঁটকে। তাই অহনের সাবলীল ভাষায় বোঝানোটাও আত্মস্থ করতে পারল না তোড়া। চোখ ডলতে ডলতে বলল -“সুন্দর করে পড়ান, কিছু বুঝছি না।”
অহন হাসল স্ত্রীর কথায়। দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে বলল -“পড়ায় মন দাও। সহজে বুঝবে।”
ডান দিকে ঘাড় কাত করে সায় জানাল তোড়া। অহন গাল টেনে বলল -“গুড গার্ল।”
চলবে………