#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
চারদিকে হাহাকারে ভরে গিয়েছে। কান্নার প্রতিধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। লা’শে’র পাশে বসে দু’টো বাচ্চা আর একজন অর্ধবয়স্ক মহিলা লা’শ’কে জড়িয়ে ধরে অনবরত অশ্রুবিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যে পরিবেশটা বিষাদময় হয়ে উঠল। মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গেল। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ভেতরটা কেমন জানি ফাঁকা লাগছে। চৌধুরী গৃহের সদর কবাটে হাহাকারের মেলা বসেছে। বাচ্চা দু’টোর হৃদয়বিদারক চিৎকার দেখে মেহেভীনের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। মেহেভীন আঁখিযুগল দিয়ে ইশারা করতেই একজন গার্ড বলল,
–এটা শরিফুলের লা’শ স্যারের সাথে জনসভায় ছিল। যেখানে গু’লা’গু’লি হবার সময় সে, সেখানে উপস্থিত ছিল। আমারা বেঁচে ফিরতে পারলেও ভাগ্য তার সহায় হলো না। যারা অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে। তারা শরিফুলের অর্ধাঙ্গিনী আর সন্তান। কিছু ব্যথার কোনো ঔষধ হয় না৷ কিছু দুঃখের কোনো শান্তনা হয় না। শরিফুলের পরিবারকে মেহেভীন কোন ভাষায় শান্তনা প্রয়োগ করবে, তা জান নেই মেহেভীনের। বাচ্চা দু’টো বাবার চরণ দু’টি আলিঙ্গন করে উন্মাদের মতো চিৎকার করে যাচ্ছে। আঁখিযুগল দিয়ে অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মহিলাটি কেমন অস্থির হয়ে হয়ে উঠছে। সমস্ত কায়া নিস্তেজ হয়ে আসছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে মহিলাটি জ্ঞান হারালো। ভালোবাসা কি অদ্ভুত জিনিস! যাকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে। মৃত্যুর কাছে সেই ভালোবাসা হার মেনে যায়। এত মায়া, এত ভালোবাসা, এত এত পূর্ণতা অপূর্ণ করে দিয়ে চলে যায় মানুষটা। মহিলাটির অবস্থা দেখে মেহেভীনের বুকের মধ্যে চিনচিন করে ব্যথা করছে। একটু পরে একটা গাড়ি আসলো। সেই গাড়ি করে শরিফুলকে দেশের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। শরিফুলের শেষ ইচ্ছে ছিল। তার লা’শ’টা যেন তার দেশের বাড়িতে দাফন করা হয়। মুনতাসিম শরিফুলকে দেওয়া কথা রেখেছে। শরিফুলের লা’শ দেশের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিয়েছে মুনতাসিম। তাইয়ান ফোন করে জানিয়েছে তারা হসপিটালে আছে। সবাই শান্ত হলে-ও তিক্ততা হৃদয়কে গ্রাস করে ফেলছে। এত এত হাহাকার প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রনা ভেতর টাকে কাবু করে তুলছে।
রজনীর শেষ প্রহর চলছে। সবাই নিদ্রা দেশে তলিয়ে গিয়েছে। মেহেভীন কায়াতে শীতের বস্ত্র পরিধান করে আস্তরণে বসে আছে। মুনতাসিমের চিন্তায় সারারাত আঁখিযুগল এক করেনি সে। মানুষটাকে দেখার জন্য ভেতরটা ছটফট করছে। মস্তিষ্ক ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। অনুভূতিরা আজ অভিমানে দূর দেশে পাড়ি জমিয়েছে। অশান্ত আঁখিযুগল বারবার কবাটের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। এই বুঝি মানুষটা এসে তার সামনে দাঁড়াবে। কিন্তু মেহেভীনকে হতাশ করে দিয়ে মানুষটা আসছে না। অসহ্য যন্ত্রনায় ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। যাকে কোনোদিন কল্পনা করত না৷ আজ তার জন্যই ভেতরটা কতই না পুড়ছে! তাকে না জানিয়েছিল আমন্ত্রণ না দিয়েছিল অনুমতি। তবুও সে এসেছিল। তার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করল। সে তো বলেনি ভালোবাসলে এভাবে পুড়তে হয়! নিজের জন্য সে কোনোদিন এতটা যন্ত্রনা অনুভব করেনি। আজ মুনতাসিমকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে যতটা যন্ত্রনা দিচ্ছে। নাকের ডগা রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে মেহেভীনের। আঁখিযুগল ফুলে গিয়েছে। সমস্ত মুখশ্রীতে কেমন বিষন্নতা ছড়িয়ে পড়েছে। মেহেভীনের ভেতরের হাহাকার গুলো যেন তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
শুভ্র পাঞ্জাবীটা রক্তে ভিজে রক্তলাল বর্ণ রুপ নিয়েছে। শীতে সমস্ত কায়া থরথর করে কাঁপছে। হাত-পা সহ কায়ার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বরফের ন্যায় জমে আছে। মুনতাসিম আর তাইয়ান সবে মাত্র গৃহে ফিরেছে। মুনতাসিম নিজের কক্ষের দিকে অগ্রসর হতেই কারো গম্ভীর কণ্ঠ স্বর ভেসে এল। মানুষটা মুখশ্রীতে আঁধার নিয়ে এসে বলল,
–তোমার আব্বা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। নিজের কক্ষে যাবার আগে তার সাথে দেখা করে যাও। সাহেলা চৌধুরীর কথায় মুনতাসিম বিলম্ব করে না। দ্রুত রিয়াদ চৌধুরীর কক্ষে ছুটে যায়। রিয়াদ চৌধুরীর হাতে এখনো স্যালাইন বিদ্যমান। আঁখিযুগলে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে তার। ছেলেকে দেখে হৃদয় শীতল হলো। হাত বাড়িয়ে মুনতাসিমকে নিজের নিকটে ডাকল। মুনতাসিম দূরে থেকেই বলল,
–আপনি এত বেশি চিন্তা করেন কেন আব্বা? আমার কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি৷ আপনার কিছু হলে আমার কতটা কষ্ট হয়৷ সেটা আপনি কবে বুঝবেন? যদি বুঝতেন তাহলে নিজের যত্ন নিতেন। আমি বাহিরে থেকে এসেছি। দেখুন সমস্ত কায়াতে রক্তের ছড়াছড়ি। এভাবে আপনার কাছে যাব না। আপনি বিশ্রাম নিন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আপনার শরীর এখন কেমন আছে?
–তোমাকে দেখে উত্তপ্ত হৃদয়টা শীতল হয়ে গেল। তুমি আমার কাছে এসো। ছোট বেলায় কত ধূলাবালি নিয়ে খেলেছ। সেই কায়াতে আমার কোলেও এসেছ। তখন কিছু হয়নি৷ আর এখন কি হবে? সন্তান যেমনই হোক না কেন বাবা-মায়ের কাছে তারা সব সময় রাজকুমার। তুমি আমার জন্য কি সেটা তুমি বুঝবে না। যেদিন বাবা হবে সেদিন বুঝবে। কেন তোমার আব্বা তোমাকে নিয়ে এত বেশি ভাবত? তুমি তোমার কক্ষে যাও। ফ্রেশ হয়ে আসার দরকার নেই বিশ্রাম নিবে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে সকালে কথা হবে। মুনতাসিম বিলম্ব করল না। দ্রুত কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমস্ত কায়াতে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। সাথে মেহেভীনের জন্য ভিষণ মন পুড়ছে৷ মেয়েটা নিশ্চয়ই তার জন্য অস্থির হয়ে আছে। কবাটের কাছে আসতেই মেহেভীনকে দেওয়ালের সাথে মস্তক ঠেকিয়ে চিন্তিত হয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুনতাসিমের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। এই গৃহে তো আরো মানুষ আছে৷ তার বাবা আর মেহেভীন ছাড়া তার জন্য কেউ এতটা যন্ত্রনা নিয়ে ছটফট করতে করতে রজনী পার করেনি। মুনতাসিম কক্ষে প্রবেশ করল। মেহেভীন মুনতাসিম দেখে উঠে দাঁড়াল। মেহেভীনের মুখশ্রী কাছ থেকে দেখতেই ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। মেয়েটার সমস্ত মুখশ্রীতে কেমন বিষন্নতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেহেভীন কোনো বাক্য উচ্চারন না করে আলমারি থেকে মুনতাসিমের টি-শার্ট, প্যান্ট আর তোয়ালে বের করে আস্তরণে রাখল। মুনতাসিম চোরা দৃষ্টি মেহেভীনকে দেখছে। মেহেভীন নিজেই মলিন কণ্ঠে বলল,
–আপনি বস্ত্র বদলে আসুন। এভাবে আপনাকে দেখতে খারাপ লাগছে।
–আপনি রাগ করে আছেন? কথা গুলো বলতে বলতে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসলো। মেহেভীন আগের ন্যায় আস্তরণে গিয়ে বসল। মুনতাসিম কাঁধে হাত রাখতে চাইলে মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,
–একদম ছোঁবেন না আমাকে। মুনতাসিম বুঝল মহারাণীর রাগটা বেশ গভীর ভাবেই হয়েছে। আগে নিজেকে বাঁচাতে হবে। তারপর মহারনীর ক্রোধকে দমন করা যাবে। সে কোনো বাক্য উচ্চারন করল না। বস্ত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহেভীন অশ্রুসিক্ত নয়নে মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। অভিমানী আঁখিযুগল নিরবে শতশত অভিযোগ করে যাচ্ছে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই মুনতাসিম গোসল করে বের হলো। সামনের চুল বেয়ে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ শীতে থরথর করে কাঁপছে মুনতাসিম। মেহেভীন উঠে এসে মুনতাসিমের হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে মস্তক মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
–আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন? এই ভোর রাতে গোসল করতে গিয়েছেন কেন? সকালে উঠে গোসল করলেই পারতেন! হায় আল্লাহ সমস্ত কায়া বরফের ন্যায় জমে গিয়েছে। আপনি আস্তরণে গিয়ে বসুন। আমি আসছি। কথা গুলো বলেই মেহেভীন কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। একটু পরে সরিষার তেল নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল। মুনতাসিমের মস্তক আরো একবার ভালোভাবে মুছে দিল। মুনতাসিমের দুই হাত নিজের হাতের মধ্যে নিতেই সমস্ত কায়া কেঁপে উঠল। মেহেভীন বিলম্ব না করে দ্রুত সরিষার তেল মুনতাসিমের দুই হাতের তালুকে ঘষতে লাগল। মুনতাসিম চুপচাপ মেহেভীনের কর্ম পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মেহেভীন মুনতাসিমের হাত ছেড়ে চরণের কাছে গেল। এবার মুনতাসিম বাঁধা সাধলে মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,
–আমাকে বেশি জ্ঞান দিতে আসলে আপনার সাথে আমার তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যাবে।
–সে যাক, কিন্তু পা ছুঁতে দিব না।
–কেন আপনার পা ছুঁলে আমার হাত নষ্ট হয়ে যাবে? এসব কেমন ধরনের পাগলামি! কথা গুলো বলেই মেহেভীন দ্রুত মুনতাসিমের দু’টি চরণ নিজের কোলে তুলে নিয়ে তেল দিয়ে ঘষতে শুরু করে দিল। অদ্ভুত ভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে মুনতাসিমের হাত-পা গরম হয়ে আসতে শুরু করল। মুনতাসিম বিস্ময় নয়নে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। কায়ার কম্পন কমে গিয়েছে৷ সে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
–আপনি অপেক্ষা করুন খাবার নিয়ে আসছি।
–বেশি করে নিয়ে আসবেন। দু’জন একসাথে খাব। ভুলেও রান্না ঘরে ঢুকবেন না। খাবার গরম করার কোনো ব্যাপার থাকলে গার্ডকে ডেকে নিবেন। মেহেভীন কোনো উত্তর করল না। দ্রুত কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। একটু পরে খাবার গরম করে নিয়ে এসে মুনতাসিমের মুখের সামনে ধরল। মুনতাসিম মুখশ্রী অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,
–আগে আপনি খাবেন।
–আমি খেয়েছি।
–মিথ্যা কথা বলছেন কেন?
–আমাকে নিয়ে আপনার এত ভাবতে হবে না। যার কেউ নেই। তাকে নিয়ে ভাবার জন্য আল্লাহ তায়ালা আছেন।
–আসলে…মুনতাসিমকে সম্পূর্ণ বাক্য শেষ করতে না দিয়ে মেহেভীন এক লোকমা ভাত মুনতাসিমের মুখে পুরে দিল। মুনতাসিম রক্তিম আঁখিযুগল নিয়ে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমকে দেখতে পেয়ে মেহেভীন যেন নিজের জান ফিরে পেয়েছে। অভুক্ত পেটটা জানান দিচ্ছে তার প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে। রাগ আছে মুনতাসিমের সাথে আছে। খাবারের সাথে কোনো রাগ নেই। মেহেভীন নিজেও মুনতাসিমের সাথে খেতে শুরু করল। তা দেখে মুনতাসিম মুচকি হাসল। সবকিছু গুছিয়ে মেহেভীন শায়িত হবার জন্য প্রস্তুত হতে মুনতাসিম মেহেভীনের হাত ধরে ফেলল।
–আপনাকে ছুঁতে নিষেধ করেছি।
–কি একটা বউ পেয়েছি। এতবড় বিপদের মধ্যে থেকে বেঁচে ফিরলাম। অন্য কোনো বউ হলে এতক্ষণে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দিত। স্বামীর সমস্ত মুখশ্রীতে হাজার খানেক চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিত। আর আমি হতভাগা বাহিরেও যুদ্ধ করব। ঘরে এসেও বউয়ের রাগে ধংস হব। ভালোবাসা আমার ভাগ্য নেই। নিরামিষ কোথাকার। এত রাগে আসে কোথায় থেকে আপনার?
–তাহলে সেই সব বউদের কাছে যান। কথা গুলো বলেই হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল মেহেভীন। মুনতাসিমের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। শীতল কণ্ঠে বলা বাক্য গুলো ভিষণ ভয়ংকর রকমের হয়। পাথরের ন্যায় শক্ত মানুষটার হৃদয় টাও কাঁপিয়ে তুলে। মেহেভীন বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সমস্ত শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করেছে। শক্ত আবরণের খোলস টা বরফের ন্যায় গলতে শুরু করেছে। চাইলেই সব সময় স্ট্রং থাকা যায় না। ভেতরের চাপা আর্তনাদ লুকিয়ে রাখা যায় না৷ জমে থাকা ব্যথা গুলো হঠাৎ করেই বলে ওঠে, আমি আর পারছি না। মেহেভীনের আঁখিযুগলের কার্নিশ অশ্রুকণা এসে জমতে শুরু করেছে৷ ভেতরে অসহনীয় যন্ত্রনার মাত্রা প্রকোপ পেয়েছে। ছুটে গিয়ে মানুষ টাকে আলিঙ্গন করে হাজারো অভিযোগ করতে ইচ্ছে করছে। তবুও নিজের মনকে দমিয়ে নিল মেহেভীন। শান্ত নদীর ন্যায় স্থীর হয়ে গেল সে। যে মানুষের জীবনে তার কোনো মূল্য নেই । সে চাইলেই তো আর জোর করে মূল্য আদায় করে নিতে পারবে না৷ সে তার মতো ভালো থাকুক। সে ভালো থাকলেই ধরনীর সমস্ত সুখ মেহেভীনের হৃদয়ে এসে ধরা দিবে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই মুনতাসিম মেহেভীনকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল। মেহেভীনের কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে অপরাধীর ন্যায় বলল,
–আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমার ফোনটা নিজের কাছে ছিল না৷ সেজন্য আপনাকে দিকে জানাতে পারিনি৷ এত এত মানুষ আহত হয়েছে। চারিদিকে প্রিয়জনদের এত এত হাহাকার আমাকে দিশেহারা করে দিয়েছিল। আমার জন্য এত গুলো মানুষ আহত হলো। শরিফুল পরপারে গমন করল। তার বউ স্বামী হারা হয়ে গেল। তার সন্তানরা বাবা হারা হলো। আমি উন্মাদের এদিক সেদিক ছুটেছি। আমি আপনার কথা ভুলিনি। তাইয়ানকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি। নিজে খবর দিতে পারিনি বলে, আপনি যে আমার কাছে মূল্যহীন এমনটা কোনোদিন ভাববেন না। আমার নিজের থেকে-ও বেশি আপনি আমার কাছে মূল্যবান। আপনার অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি আপনাকে আমার পরিবারকে যেমন ভালোবাসি। ঠিক তেমনই জনগণকেও আমি ভিষণ ভালোবাসি। তাদের ভালো রাখার শপথ গ্রহন করেছি। তাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বটাও আমার। আমি সবাইকে নিরাপদ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে দিয়ে কিভাবে গৃহে আসতাম বলেন? আমি যদি নিজের কথা ভেবে চলে আসতাম। তাহলে আমার ভালোবাসার মানুষদের সাথে অন্যায় করা তো। আপনি রাগ করুন। আমাকে শত-শত কথা শোনান৷ আপনার সমস্ত শাস্তি আমি মস্তক পেতে নিব। তবুও আপনি এভাবে কষ্ট পাবেন না। আপনার ব্যথা আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। আমার ভেতরটা রক্তাক্ত হয়ে যায়। মেহেভীন নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না। মুনতাসিমকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। মুনতাসিমের ভেতরটা অশান্ত নদীর ন্যায় উথাল-পাতাল করতে শুরু করে দিয়েছে। সে শক্ত বন্ধনে নিজের প্রেয়সীকে বুকের মধ্যে আবদ্ধ নিল।
চলবে…..
(গল্প শেষ হয় না কেন! এই পর্বে কতদূর ভেবে রাখছিলাম লিখব। শব্দ সংখ্যা পার হয়ে যায় লিখা শেষ হয়ে যায় না৷ এই গল্পে আমার সবাইকে মে’রে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আপনারা অনুমতি দিলে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করব৷ আলহামদুলিল্লাহ বলে প্রতিটি চরিত্রকে শে’ষ করে ফেলব। সবাই রেসপন্স করবেন।)