খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৪৮ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
508

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চারদিক বিষাদে পরিপূর্ণ। তবুও কোথাও জানি এক টুকরো সুখ এসে মনের আনাচেকানাচে ঘুরঘুর করছে! মুনতাসিমকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে মেহেভীনের কাবু হয়ে আসা মুখশ্রী মুনতাসিমকে ভিষণ আনন্দ দিচ্ছে। ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। এমন একটা দিনের জন্য কতগুলো দিন তাকে পুড়তে হয়েছে। প্রেয়সীর অশ্রুসিক্ত আঁখিযুগল ভেতরটা অশান্ত সমুদ্রের ন্যায় উথাল-পাতাল করছে। মুনতাসিম মেহেভীনের অশ্রুকণা গুলো নিজ দায়িত্ব মুছে দিল। মেহেভীনের দু’গাল দু’হাতের তালু দ্বারা আবদ্ধ করে ফেলল। কণ্ঠে কমলতা নিয়ে এসে বলল,

–কি হয়েছে, এভাবে কাঁদছেন কেন?

–আপনি এত নিষ্ঠুর কেন বলেন তো? আমি কি আপনার কাছে এতটাই তুচ্ছতাচ্ছিল্যে করা মানুষ নাকি সহজেই পেয়ে গিয়েছেন বলে সস্তা মনে হচ্ছে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি পাগলের মতো এদিক সেদিক ছুটেছি৷ আপনি কেবল মুখেই ভালোবাসা দেখান। কাজের বেলায় আপনি একদম শূন্য। আর একটু হলেই আমার দেহ থেকে প্রাণপাখিটা বের হয়ে যেতো। আপনি সারাদিন আপনার জনগণের কাছে থাকুন। তাদের সেবা করুন। আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি একটা বার আমাকে ফোন দিয়ে জানাতে পারতেন। আপনি ঠিক আছেন। সুস্থ আছেন। তাহলে এই অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে পারতাম। আপনার কি একবারও আমার কথা মনে হয়নি? ভয়ে বুক কাঁপেনি আপনি হীনা আমার কি হবে সে কথা ভেবে? আমার প্রতি এত অবহেলা, এত অনীহা!

–আপনার প্রতি যদি আমার অনীহা থাকতো। তাহলে রজনীর শেষ প্রহরে গৃহে ফিরে আসতাম না। আমার কোনো পিছুটান ছিল না। আমি যদি সারারাত গৃহে না ফিরতাম। আমার খোঁজ নেওয়ার কেউ ছিল না। শুধু আব্বা ফোন দিয়ে খোঁজ নিতো সুস্থ আছি কি না। আমার এত কিসের টান ছিল গৃহে ফেরার? আমি চাইলেই আজ রাতটা হসপিটালের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বসে কাটিয়ে দিতে পারতাম। এত হাহাকার, এত বিষাদ, এত তিক্ততার মধ্যে থেকে-ও তাইয়ানকে দিয়ে খবর পাঠাতাম না। যেখানে মানুষ রেগে গেলে মানুষের ফোন পর্যন্ত রিসিভ করে না। সেখানে আমি কঠিনতম পরিস্থিতির মধ্যে থেকে-ও আপনার কথা ভেবেছি। আপনাকে আর সবাই নিয়ে ভাবতে ভাবতে সবাই নিজের কথা ভাবতেই ভুলে গিয়েছি আমি। আমি শেষ কবে নিজের কথা ভেবে তা আমার জানা নেই। তবে আজ থেকে জানলাম। আমার নিজের কথা ভাবার দরকার নেই। আমার কথা ভাবার জন্য একটা পূর্ণিমার চাঁদ আছে। এত সুন্দর চাঁদ যদি আমার কথা ভাবে, এরপরেও যদি নিজের কথা নিজে ভাবি। তাহলে এ জীবন আমার বৃথা যাবে।

–আপনাকে বারবার করে বলেছি। আপনি কোনোকিছু করার আগে আমার কথাটা একটু ভাববেন। আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকব? আপনায় ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না। আমি সুখ দুঃখ বলতে আপনাকেই বুঝি।

–কেন?

–কারন আমি আপনাকে… বাক্যটা কণ্ঠ নালিতে এসে আঁটকে গেল। হৃদস্পন্দনের ক্রিয়া দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করল। বক্ষথলে ধড়ফড় করতে লাগলো। সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে। মুনতাসিমের আঁখিযুগলে তীব্র আগ্রহ। বাক্যটা শোনার জন্য ভেতরটা ছটফট করছে। মুনতাসিমের তীব্রতা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে মেহেভীন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শান্ত নদীর ন্যায় স্থির হয়ে গেল। আঁখিযুগল নিচের দিকে বিদ্যমান। মুনতাসিম মেহেভীনের নিরবতা দেখে নিজেই বলতে শুরু করল,

–যাকে হারানোর ভয়ে আপনার বুক কেঁপে ওঠে। যাকে হারানোর ভয়ে চেতনায়, অচেতনায় আপনার আঁখিযুগলে অশ্রুকণা এসে জমা হয়। আপনি তাকে ভালোবাসেন।

–মিথ্যা কথা।

–আমাকে তো আপনি ভালোবাসেন না। তাহলে হারাতে ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি কখনো চাইনি আমাদের মাঝে প্রেম হোক। কারন প্রেমে বিচ্ছেদ হয়। আমি সব সময় চেয়েছি আমাদের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হোক। কারন ভালোবাসায় বিচ্ছেদ নেই। হাত ধরলে মানুষ হাত ছেড়ে চলে যায়। সেজন্য আমি আপনার মনে ধরেছি। মন তো আর ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। আমার মন বলেছে। আপনি আমায় মায়ায় পড়ুন। ছায়া কখনো ছেড়ে যায় না। আর মায়া কখনো পিছু ছাড়ে না৷ ধরনীর বুকে সব নেশা কাটানোর ঔষধ আছে। কিন্তু মায়ার নেশা কাটানোর কোনো ঔষধ নেই। মায়ার নেশায় যে পড়েছে। সে মরেছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই নেশা বয়ে বেড়াতে হয়। জানেন ম্যাডাম আপনার মতো কেউ আমারে এত মায়া করেনি। আমার জন্য নির্ঘুম রজনী পার করেনি। আমায় ভালোবেসে খাইয়ে দেইনি। আমারে হারানোর ভয়ে ছটফট করেনি। আপনার মতো আমার জন্য কারো আঁখিযুগলে অস্থিরতা দেখিনি। আমার অসুস্থ কায়াকে দ্রুত সুস্থ করার চেষ্টা করেনি। আপনি আমায় এত মায়ায় কেন বাঁধছেন? এত সুখ, এত আনন্দ, এত ভালোবাসা আমার জীবন সহ্য করতে পারবে তো! আমাকে এতটা মায়ায় বাঁধবেন না। আপনায় ছাড়া চলতে ভিষণ কষ্ট হয়৷ আগে বাহিরে গেলে ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করেনি। আর এখন বাহিরে গেলে দ্রুত কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করে। কোন জাদুবলে আমায় গ্রাস করে নিলেন আপনি? আমি ভুল করলে অভিযোগ করবেন। তবুও যেন বিচ্ছেদ শব্দটা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে না আসে। যদি আসে তাহলে আমার আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। মেহেভীন মনযোগ দিয়ে প্রতিটি বাক্য মস্তিষ্কে গেঁথে নিল। মানুষটাকে দুঃখ দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। নিশ্চুপ হয়ে গেল মেহেভীন। অধীর আগ্রহ নিয়ে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে সে। এই বুঝি মুনতাসিম আজ তাকে ভালোবাসি বলে দিবে। মেহেভীনকে হতাশ করে দিয়ে মুনতাসিম নিদ্রা যাবার জন্য প্রস্তুত হলো। মেহেভীনের কুঁচকে যাওয়া মুখশ্রী আড়দৃষ্টিতে দেখে মুনতাসিমের ভিষণ আনন্দ লাগছে। সে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। মেহেভীন বেলকনির গ্রিল ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।

চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। শীতল পরিবেশে নিস্তব্ধতার মেলা বসেছে। পাখিরা যেন আজ সুর তুলতে ভুলে গিয়েছে। মানুষ যেখানে কম্বলের উষ্ণ আলিঙ্গনের নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সেখানে নিদ্রা ত্যাগ করে শহর থেকে দুইশো আটান্ন কিলোমিটার দূরে আসতে হয়েছে জারিফকে। জারিফের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ানো আছে। প্রলয় জারিফের কলার চেপে ধরে বলল,

–এতদিন অনেক জ্বালিয়েছিস। আজকে যদি একটুও ফাজলামি করার চেষ্টা করেছিস। তবে তোর বোনকে একদম শেষ করে ফেলব। তাড়াতাড়ি বল লা’শ কোথায় রেখেছিস? প্রলয়ের কথায় জারিফের মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। রক্তিম আঁখিযুগল দিয়ে প্রলয়কে ভস্ম করে দিতে ইচ্ছে করছে। ক্রোধ যেন শিরায় শিরায় চলাচল করছে। জারিফ পুলিশকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা সেদিকেই যাচ্ছে। পথ চলতে চলতে একটা নিস্তব্ধ শ্মশানের কাছে এসে জারিফ স্থির হলো। শ্মশানের পাশ দিয়ে আঁকাবাকা নদী বয়ে গিয়েছে। শীতল বাতাস এসে সমস্ত মন মস্তিষ্ককে কাঁপিয়ে তুলছে। নদীর পাশেই বিশাল একটা বটগাছ। জারিফ বটগাছটা দেখিয়ে বলল,

–এখানে মিরাজুলের লা’শ পুঁ’তে’ছি। প্রলয় গভীর ভাবে চারদিক পর্যবেক্ষণ করে নিল। চারদিকে গাছপালায় ঘেরা। জনবসতি নেই বললেই চলে। ছেলেটা দারুন বুদ্ধিমান না হলে লা’শ গায়েব করার জন্য এত সুন্দর স্থান নির্ধারণ করে। এই পর্যন্ত আসতে তাদের অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যেতো। চারদিক কেমন সুনশান একটা মানুষকে খু’ন করে রেখে গেলে-ও কেউ দেখার নেই। প্রলয় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আর আরিয়ানের লা’শ কোথায় পুঁ’তে’ছ?

–নদীর ওপারে জঙ্গলের মধ্যে গেলে দেখাতে পারব। প্রলয় লা’শ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে দিতে বলল। মিরাজুলের লা’শটা বের করার জন্য মাটি খুঁড়তে শুরু করে দিল। প্রলয় জারিফকে নিয়ে সাঁকো দিয়ে জঙ্গলের ভেতরে গেল। জঙ্গলটা বেশ ভয়াবহ। জঙ্গলের যত গভীরে যাচ্ছে ভেতরটা ততই কেঁপে উঠছে। একজন পুলিশ সদস্য বলল,

–আমাদের সামনের দিকে না আগানোই ভালো হবে স্যার। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে জঙ্গলের গভীরে যেতে হবে। এভাবে জঙ্গলের ভেতর গেলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। বলা তো যায় না জঙ্গলের কোনো হিংস্র পশু এসে আক্রমণ করল! তখন আমরা কি করব স্যার? পুলিশ সদস্যের কথায় জারিফ শব্দ করে হেসে উঠল। তাচ্ছিল্য করে বলল,

–এই জান নিয়ে পুলিশ হয়েছিস! এই তোকে পুলিশের চাকরি দিয়েছিল কে? আমি যদি তোদের থানায় কাজ করতাম। তাহলে আগে তোকে লা’থি দিয়ে থানা থেকে বের করতাম। তোরা আটজন মানুষ এসেছিস। তা-ও ভয় পাচ্ছিস! আর আমি একা এসেছি তা-ও লাশ কাঁধে নিয়ে। আমার তোকেও আরিয়ানের মতো বুঝাইতে ইচ্ছে করছে। জারিফের কথায় প্রলয় রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুমি কিন্তু আমার কথা ভুলে যাচ্ছো জারিফ। আমার এক ফোনে তোমার বোনের জীবন শেষ। মুহুর্তের মধ্যে জারিফের মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। সে মুখশ্রী গম্ভীর করে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। গভীর অরণ্যের মাঝখানে এসে জারিফ থামলো। চারিদিক থেকে বিশ্রী গন্ধ এসে নাসারন্ধ্রে ঠেকছে। জারিফ সামনের দিকে ইশারা করতেই সবার দৃষ্টি সামনের দিকে গেল। গাছের সাথে রশি দিয়ে আরিয়ানকে ঝুলানো আছে। দু’চরণের মাংস হাঁটুর অবধি নেই। হয়তো কোনো হিংস্র পশুর খাবার হয়েছে। মস্তকের সমস্ত কেশগুলো ঝরে পড়েছে। দেহ থেকে মাংস গুলো খসে পড়তে শুরু করেছে। আঁখিযুগল দু’টি বেড়িয়ে পড়ে গিয়েছে। লা’শে’র দেহ জুড়ে শতশত মাছি ভনভন করছে। কিছু বিষাক্ত পোকা লা’শ টাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কায়ার হাড্ডি গুলো বের হতে শুরু করেছে। হাতের আঙুল থেকে নখ খসে পড়েছে। পেটের অর্ধেক নাড়িভুড়ি হয়ে আসছে। লা’শে’র বিশ্রী গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। প্রলয় সবাইকে নিয়ে একটু দূরে অবস্থান করল। আরিয়ানের এমন ভয়াবহ রুপ দেখে একজন পুলিশ সদস্যের মস্তক ঘুরতে শুরু করল। সে শীতের মধ্যেও তরতর করে ঘামছে। প্রলয় কাউকে ফোন দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে কিছু লোক পাঠাতে বলল। ত্রিশ মিনিট পর কিছু লোক এসে আরিয়ানের লা’শ নামিয়ে নিয়ে শ্মশানের দিকে অগ্রসর হলো। তারা প্রায় সাত ফিটের মতো মাটি খুঁড়ে ফেলেছে। তবুও লা’শে’র দেখা মিলছে না। প্রলয় জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–লা’শ কোথায়?

–সবে তো শুরু আরো নিচে যাও ওসি সাহেব।

–আনুমানিক কত ফিট নিতে পুঁ’তে’ছ?

–বিশ থেকে পঁচিশ ফিট হবে। মেপে দেখেনি।

–তোর কলিজা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।

–অবাক হবার কিছু নেই। তুমি আমাকে কথা দিয়েছ। ফাঁসির আগে মেহেভীনের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। তুমি তোমার কথার বরখেলাপ করলে আমার পরবর্তী টার্গেট তোমার অর্ধাঙ্গিনী আর সন্তান। মৃত্যুর আগে নিষ্ঠুর মনটাকে বুঝিয়ে যেতে পারব। মেহেভীনের সাক্ষাৎ পাইনি তো কি হয়েছে। যে কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তার সমস্ত সুখ কেঁড়ে নিতে পেরেছি। আর জারিফ যেটা বলে সেটা করেই ছাড়ে বাকিটা তোমাকে বলে দিতে হবে না।

–প্রলয় কথা দিলে কথা রাখে। প্রলয়ের কথায় জারিফ মৃদু হাসল। কুয়াশাকে গ্রাস করে নিয়েছে একফালি রৌদ্র। আশেপাশেই দু’একজন মানুষ দেখা যাচ্ছে। কিছু সময়ের ব্যবধানের শ্মশানটা মানুষ দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। লা’শ দেখতে ভিড় জমিয়েছে শত মানুষ। এক কান দু’কান করতে করতে আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে গেল খু’নের কথা। বেলা গড়িয়ে দুপুরে হয়ে আসতে শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পর লা’শের’ দেখা মিলল। লা’শে’র নাড়িভুড়ি বের হয়ে গিয়েছে। লা’শ পঁচে মাটির সাথে মিশতে শুরু করেছে। লা’শ পঁচা গন্ধে নিচে থাকা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। ওপর থেকে কেরোসিন ফেলা হলো। লা’শে’র ওপরে কয়েক কেজি কেরোসিন ঢেলেও গন্ধ দূর করা গেল না। কয়েকজন তো বমি করে দিল। বাচ্চারা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। একজন কিশোরী লা’শ দেখা মাত্রই জ্ঞান হারালো। এমন ভয়াবহ লা’শ তারা জীবনে দেখেনি। প্রলয় সবাইকে ধমকে দূরে সরতে বলল। সময়ের সাথে মানুষের ভিড় বাড়ছে। কড়া বাক্য গুলো যেন মানুষের কর্ণে যাচ্ছে না। উদ্ধার কর্মীদের মধ্যে একজন সহ্য করতে না পেরে অনবরত বমি করতে শুরু করল। মস্তক রীতিমতো ঘুরছে। সমস্ত কায়া তরতর করে ঘামছে। লা’শ ধরে তুলতে গেলেই গলে গলে খসে পড়ছে। লা’শ তোলার জন্য ওপর থেকে বস্তা ফেলা হলো। সেটার ওপর লা’শ তুলে রশি দিয়ে লা’শ টাকে মুড়িয়ে ফেলল। ওপর থেকে রশি ফেলতেই লা’শটা বেঁধে টেনে ওপরে তোলা হলো। চারদিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। লা’শে’র আশেপাশে কাউকে আসতে দিচ্ছে না। সবাই শোরগোল শুরু করে দিল। লা’শ দু’টো গাড়িতে তুলে জারিফকে নিয়ে দ্রুত স্থান করল প্রলয়।

বিষাদে ভরপুর মুহুর্ত গুলো ভিষণ দীর্ঘ হয়। কিন্তু সুখ! সুখ জিনিস টা এমন কেন? দমকা হাওয়ার মতো আসে আবার সুখের স্থানটাতে দুঃখ পুষিয়ে দিয়ে সুখ কেঁড়ে নিয়ে চলে যায়! সুখ শব্দটা যেমন সুন্দর তার স্থায়িত্ব তেমনই ক্ষণিকের জন্য হয়। কিন্তু দুঃখ শব্দটা যেমন বিষাক্ত তার স্থায়িত্ব তার থেকে-ও দীর্ঘ হয়। এই যে মানুষ বলে আমাকে হয়তো সুখে মানায় না। আমি দুঃখ নিয়েই আছি বেশ। তবে দুঃখ গুলো কি মানুষের চাওয়া-পাওয়া গুলোকে আদরে গ্রহণ করে নিল। দুঃখের চেয়ে সুখের পরিমাণ বেশি হলেই যে, দুঃখ আমাদের জীবনে পোড়াতে চলে আসে। মুনতাসিম রাজনৈতিক আলোচনায় মশগুল ছিল। তখনই মুঠোফোনেটা অনবরত বেজেই যাচ্ছে। মুনতাসিম বিরক্ত হয়ে ফোনটা তুলতেই ওপর পাশ থেকে কিছু বিষাক্ত বাক্য মস্তিস্কে এসে বাসা বাঁধল।

–আমি আজকে আত্নসমর্পণ করে ফেলব। আমি আর পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এভাবে থাকলে আমি নিজের ক্ষতি নিজে করে ফেলব। আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও। তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না।

–আপনি এমনটা করতে পারেন না। আপনি আমায় কথা দিয়েছিলেন। আপনাকে তো আমি বলেছি। আপনি আমাকে তিনমাস সময় দিন। আমি সবকিছু ঠিক করে দিব।

–আমি তিনটা সেকেন্ডে তিনবার করে মরছি। তিনটা মাস কিভাবে বাঁচব বলো? আমায় তুমি মাফ করে দিও। আমার ফুল টাকে দেখে রেখো। আমার খুব যত্নে তৈরি করে ফুল সে। তাকে আঘাত করলে পরকালে হিসাব নিব। ভালো থাকবে এবং তার খেয়াল রাখবে। কথা গুলো বলেই ফোনটা রেখে দিল। মুনতাসিম অনবরত ফোন করেই যাচ্ছে। কিছু সময়ের ব্যবধানের ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। জীবনে কোনোদিন সে এমন ভাবে দিশেহারা হয়নি। আজ যেভাবে সে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মুনতাসিম চিৎকার করে বলল,“আপনি বেইমান। আপনি আমায় কথা দিয়ে কথা রাখলেন না। আপনি আমায় কোনোদিন ভালোই বাসেননি। যদি ভালোবাতেন। তাহলে আমার সুখ কেঁড়ে নেওয়ার আগে আপনার বুক কাঁপত। আপনি কিভাবে পারলেন এতটা স্বার্থপর হতে? আপনি তো এমন ছিলেন না! আমাকে গুছিয়ে ওঠার সময়টা দিয়েও কেঁড়ে নিলেন? আপনি যেমন আমার কাছে হিসাব চাইবেন। পরপারে আমাদের দেখা হলে আমার সুখ কেঁড়ে নেওয়ার হিসাবটাও আমি আপনার থেকে চেয়ে নিব।”

চলবে…..

(সবাইকে মে’রে ফেলব বলেছিলাম। সবাই আমাকে দিয়ে শুরু করতে বলেছে। বেঁচে থাকলে দেখা যাবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here