#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১০
তোমার হাসির ঢেউ….লাগলো আমার চোখে..
ভিজলো চোখের দু পাতা… জানলো না… তো লোকে….
হো… তোমার হাসির ঢেউ…লাগলো আমার চোখে….
ভিজলো দু চোখের পাতা…জানলো না…তো লোকে…….
ভেজা ভেজা চোখ আমি…. রৌদ দূরে শুকাবো… ভালোবাসি তোমারে..কী করে তা লুকাবো…..
ভেজা ভেজা চোখ আমি…রোদ দূরে শুকাবো…
ভালোবাসি তোমারে… কী করে তা লুকাবো….
তোমার হাসির ঢেউ….. লাগলো আমার চোখে…..
ভিজলো চোখের দু পাতা… জানলো না… তো লোকে…
তোমার… ভালো হোক…. তুমি সুখে থাকো.. কিছুই চাইনা আমি… মনে রাখো বা না রাখো….
তোমার… ভালো হোক…. তুমি সুখে থাকো.. কিছুই চাইনা আমি… মনে রাখো বা না রাখো….
আমি একলা ভালো বেসেই যাবো…
পথো চেয়ে হায়…শুধু বসেই রবো….
ভেজা ভেজা চোখ আমি…রোদ দূরে শুকাবো…
ভালোবাসি তোমারে… কী করে তা লুকাবো…. (গানের মাঝে কোনো ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখনে)
গানটা শেষ করে চোখ খুললো পারফি।
গান শেষ হতে সবাই হাতে তালি দিয়ে উঠলো। একটু আগের মন খারাপ টা মুহূর্তে মাঝে কেটে গেলো গান শুনে।
ইয়ানা এখনো তাকিয়ে আছে পারফির দিকে। লোকটা এতো সুন্দর গান গাইতে পারে আগে জানা ছিলো না। কি মধুর গানের কন্ঠ। পুরো গানটা মুগ্ধ হয়ে শুনেছে ইয়ানা। একটু আগের মন খারাপটা কেটে গিয়ে একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করলো মনে।
পারফির গানের মাঝে ওদের খেলার সমাপ্ত হলো। এবার ডাব খাওয়ার পালা কিন্তু ডাব কাটবে দিয়ে তা নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলো। ভালো করে খেয়াল করতে দেখলো কিছুটা দূরে একজন ডাব বিক্রেতা ডাব বিক্রি করছে। তার কাছ থেকেই ডাব কেটে এনে চারজন হাসি আনন্দের মাঝে ডাব খেলো। তারপর ওই জায়গা থেকে ফিরে আসার সময় যার ডাব গাছ ছিলো তার ডাবের মূল্য দিয়ে তারপর চারজন যেয়ে গাড়িতে উঠলো। আজকের দিনটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে সবার মনে। খুব খুব এনজয় করেছে চারজন মিলে।
এরপর চলে গেলো কেকের দোকানে প্রীতি ওর পছন্দ মতো কেক অর্ডার করে দিলো সন্ধ্যার পর তারা কেক পাঠিয়ে দিবে। তরপর কিছু শপিং করে বাসায় চলে গেলো সবাই।
দিনটা খুবি ভালো কেটেছে চারজনের। বাসায় এসে আরো দুটি মানুষের সাথে ইয়ানার পরিচয় হলো। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদারের সাথে। তারাও ইয়ানাকে আপন করে নিলো। এই দুই পরিবারের সবার ব্যবহার দেখে খুবি মুগ্ধ হলো ইয়ানা।
হাসি আনন্দের মাঝে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। পুরো বাড়ি আরো আগেই সাজানো কমপ্লিট হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন মানুষজনে বাসা ভোরে গেলো। বাচ্চারা হৈ-হুল্লোড় করে খেলতে লাগলো। সবাই রেডি হয়ে কেক কাটা হলো সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা দিন গেলো।
আস্তে আস্তে সব আত্মীয়স্বজন বিদায় নিলো। অনেকটা রাত হয়েছে তাই ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আসতে বলবে তখন প্রীতি বললো আঙ্কেলের এতো কষ্ট আসার দরকার নেই আমি পারফি ভাইয়াকে বলে দিচ্ছি ভাইয়া তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
ইয়ানা বললো উনি কষ্ট করে যাবে আবার এর থেকে বাবাকে ফোন করি আমি।
প্রীতি ধমকে উঠে বললো একদম বেশি বুঝবি না যেটা বলছি সেটা কর। আঙ্কেলকে ফোন করে বলে দে নিতে আসা লাগবে না ভাইয়া পৌঁছে দিয়ে আসবে।
প্রীতির ধমক খেয়ে ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ফোন করে বললো সব তারপর কল কাঁটার সাথে সাথে দেখলো ফোন বন্ধ হয়ে গেছে চার্জ নেই। ভাবলো বাসায় যেয়ে চার্জ দিয়ে নিবে।
প্রীতি পারফিকে বললো ইয়ানাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে। পারফি রাজি হতে ইয়ানা সবার থেকে বিদায় নিলো। পিয়াসা আর শাহানা বেগম অনেক করে বললো থেকে যেতে ইয়ানা তাদের অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললো আরেকদিন এসে থাকবে। এই একটা দিনের ভিতর খুব আপন করে নিয়েছে সবাই ইয়ানাকে। পিয়াসা আর শাহানা বেগম মায়ের মতো স্নেহ করেছে। এক কথায় সবাইকে অনেক অনেক ভালো লেগেছে ইয়ানার।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে পারফির সাথে বেরিয়ে পড়লো।
পারফি বাইকে উঠে ইয়ানাকে বললো বিড়াল ছানা উঠে পড়ো।
ইয়ানা চুপটি করে উঠে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। তা দেখে পারফি বললো ধরে বসো আর নাহলে পড়ে যাবে।
ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো সমস্যা নেই বসতে পারবো এভাবে।
পারফি ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো পড়ে হাত-পা ভাঙলে তখন দোষ দিতে পারবে না বলে দিলাম এ বলে বাইক স্টার্ট দিলো।
নিস্তব্ধ শীতের রাতে এভাবে বাইকে চরে ঘুরার মজাটাই অন্যরকম। কারো মুখে কোনো কথা নেই। ইয়ানার বেধে রাখা চুল আচমকা খুলে গেলো। বাতাসে চুলগুলো উড়িয়ে এলোমেলো করে দিলো। কিছু চুল যেয়ে বারি খাচ্ছে পারফির মুখে। চুলের থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি এক ঘ্রাণ। পারফির ইচ্ছে হলো মুহূর্তটা এখানেই থামিয়ে দিতে।
ইয়ানা খেয়াল করলো ওর চুলগুলো বারবার পারফির মুখের কাছে বারি খাচ্ছে। বিরক্ত হলো খুব চুল খুলে যাওয়ার জন্য। বিরবির করে বললো চুল খোলার আর টাইম পেলো না।
এক হাত দিয়ে বারবার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিচ্ছে কিন্তু লম্বা চুল হওয়াতে বার বার উড়ে পারফির উপরে পড়ছে।
ইয়ানা এবার পারফির উদ্দেশ্যে ছোট করে বললো শুনছেন?
হুম বলো।
বাইকা একটু থামাবেন?
পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো? কোনো সমস্যা?
না মানে আসলে চুল গুলো আপনাকে ডিস্টার্ব করছে। বাইকটা একটু থামালে চুলগুলো বেঁধে নিতাম।
আমি তোমাকে বলেছি তোমার চুল আমাকে ডিস্টার্ব করছে? থাকনা এভাবে আমার সমস্যা হচ্ছে না।
সত্যি সমস্যা হচ্ছে নাতো?
তোমাকে এতো ভাবতে হবে না চুপচাপ বসে থাকো।
ইয়ানা আর কথা বললো না ওভাবে চুপচাপ বসে রইলো।
কিন্তু এই চুপচাপ বসে থাকা যে বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না তা কে জানতো?
আচমকা একটা গাড়ি এসে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো বাইকে। হঠাৎ এমন আক্রমণে পারফি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে বাইক নিয়ে ছিটকে পড়ে গেলো সাথে ইয়ানাও।
বাইকের স্পীড অল্প ছিলো যার জন্য গুরুতর ক্ষতি হলো না কারো। পারফি পড়া থেকে দ্রুত উঠে ছুটে এলো ইয়ানার কাছে। ইয়ানাকে ধরে বসালো হাত পায়ে কিছু কিছু জায়গায় ছিলে গেছে। সেই ক্ষত গুলোতে জ্বালা করার জন্য চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইয়ানা।
ইয়ানার এই ক্ষত দেখে পারফির বুকের ভিতর কামর মেরে উঠলো। স্নিগ্ধ ফুলের এই আঘাত যেনো নিজের বুকে লাগলো। ইয়ানার দুই গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে পারফি বলতে লাগলো বিড়াল ছানা ঠিক আছো তুৃমি? বেশি ব্যথা করছে? হসপিটালে নিয়ে যাবো? বলো না কষ্ট হচ্ছে তোমার অনেক?
পারফিকে এতো বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা বললো আমি ঠিক আছি এতো বিচলিত হবেন না। সামান্য একটু লেগেছে সেরে যাবে।
পারফি ইয়ানার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বললো আমি সত্যি দুঃখিত বিড়াল ছানা। আমার জন্য আঘাত পেলে তুমি। আমি বাইক না এনে গাড়ি আনলে এমন হতো না।
ইয়ানা পারফির দিকে তাকিয়ে বললো আপনি নিজেকে দোষারোপ করবেন না প্লিজ আপনার কোনো দোষ নেই। তখন পিছ থেকে আরেকটি গাড়ি এসে ধাক্কা মেরেছে যার জন্য এমন হয়েছে।
পারফি ইয়ানার দিকে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে বললো তুমি সত্যি ঠিক আছো?
পারফিকে এতোটা বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা অবাক হলো বেশ। অবাকতা কাটিয়ে মুচকি হেসে বললো আমি সত্যি ঠিক আছি।
পারফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর বাইক উঠিয়ে ভাবতে লাগলো কারা করলো এমন কাজ। বুঝলো যে আশেপাশে শত্রুপক্ষের বিরাজমান, এখান থেকে তারাতাড়ি যেতে হবে তাই ইয়ানাকে সাবধানে বাইকে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দিবে তখন কোথা থেকে চারপাঁচটা গাড়ি এসে ওদের চারপাশে ঘুরতে লাগলো।
হঠাৎ এমন হওয়াতে ইয়ানা ভয়ে পারফির শার্ট পিছ থেকে খামচে ধরলো। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছে না কিন্তু বুঝতে পারছে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।
একে একে সব গাড়ি থেকে সারি সারি মানুষ বের হলো সবার হাতে হকস্টিক, ছু/রি আরো ধারালো যন্ত্রপাতি। তা দেখে ইয়ানা ভয়ে চুপসে গেলো হাত-পা কাঁপতে লাগলো।
পারফি এবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে লোকগুলোর দিকে তাকালো। এতগুলো লোকের সাথে ওর একা পারা সম্ভব না। তাই লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো দেখ তোদের সাথে আমার শত্রুতা এই মেয়েটার সাথে না। তাই যা বোঝাপড়া আমার সাথে হবে ওকে ছেড়ে দে।
লোকগুলোর ভিতর একজন বললো এটাইতো গেম। খেলা হবে এবার এ বলে বিশ্রি ভাবে হাসতে লাগলো সবাই।
সবার এমন হাসি দেখে গা কাটা দিয়ে উঠলো ইয়ানার। খামছে ধরা পারফি শার্ট আরো জোরে ধরলো।
পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো বিড়াল ছানা ভয় পেও না আমি আছি তো।
আমি আছিতো কথাটা শুনে ইয়ানা ভয়ের মাঝেও একটু ভরসা খুঁজে পেলো।
পারফি ফের বললো আমাকে শক্ত করে ধরো।
ইয়ানা কোনো বাক্য বিনয় না করে পারফিকে পিছ থেকে দু হাত দিয়ে শক্ত করে ঝাপটে ধরলো।
পারফি সবার দিকে একবার তাকিয়ে আচমকা ফুল স্পীডে বাইক স্টার্ট দিয়ে সামনে এগোতে লাগলো। পারফির হঠাৎ এমন কাজে ভয়ে সামনে থেকে কয়েকটা লোক সরে গেলো জীবন বাঁচানোর জন্য আর পারফি সেই ফাকা জায়গা দিয়ে গুন্ডাগুলোর মাঝ থেকে বাইক নিয়ে চলতে লাগলো।
গুন্ডাগুলো সবাই তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বাইকের পিছে ধায়াও করতে লাগলো।
——————————-
রাত বাজে প্রায় একটা ইসহাক আহমেদ পায়চারি করে যাচ্ছে এখনো ইয়ানা বাসায় ফেরে নি। ইয়ানার ফিরতে এতো দেরি হচ্ছে দেখে ইয়ানার কাছে ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে বার বার। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে প্রীতির কাছে ফোন করলো। প্রীতির কাছ থেকে জানতে পারলো আরো আগেই বেড়িয়েছে ইয়ানারা। এতক্ষণে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
এবার ইসহাক আহমেদ ভয় পেতে লাগলো কোনো বিপদ হলো নাতো। তিনি বেরিয়ে গেলো মেয়েকে খুঁজতে।
এদিকে প্রীতি লাগাতরে পারফি আর ইয়ানার নাম্বারে ফোন করে যাচ্ছে। প্রীতির ফোন বন্ধ বলছে আর পারফির ফোনে রিংটোন বাজছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। প্রীতির এবার ভয়ে হাত-পা মৃদু কাঁপতে লাগলো কোনো বিপদ হয়নি তো।
প্রীতি দৌড়ে যেয়ে বাসার সবাইকে বিষয়টা জানালো। সবাই খুব টেনশনে পড়ে গেলো। পাভেল চৌধুরী আর শাফিন চলে গেলো ওদের খুঁজতে। শরীফ শিকদার ও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তাকে রেখে গেলো বাসার সবাইকে দেখে রাখার জন্য।
শাফিনরা গার্ডদের নিয়ে সব জায়গায় খোঁজ নিতে লাগলো। পারফির ফোনে বার বার ফোন করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। কোনো খোঁজ না পেয়ে পারফির ফোন ট্রাক করে লোকেশন যেখানে বলছে সেখানে চলে গেলো শাফিনরা। সেখানে উপস্থিত হতে পারফিদের কোনো খোঁজ পেলো না কিন্তু রাস্তার এক পাশে পারফির ফোন কুরিয়ে পেলো। সাথে কাচ ভাঙার টুকরো দেখতে পেলো। তা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। কোনো বিপদে পড়েছে তা বুঝে গেলো।
তখন সেখানে উপস্থিত হলো ইসহাক আহমেদ। প্রথমে তাকে কেউ চিনতে না পারলেও পরে পরিচয় বলাতে সবাই চিনলো। ইসহাক আহমেদ তাদের থেকে সবটা জানতে পারলো পারফিরা কোনো বিপদ পরেছে তা শুনে তার কলিজা কেঁপে উঠলো। তার আদরের মেয়ের কিছু হলো নাতো। ভয়ে আশংকায় ভেতরটা সবার দুমড়েমুচড়ে গেলো।
গার্ড দিয়ে সব জায়গায় তন্য তন্য করে খুঁজতে লাগলো সবাই কিন্তু কোনো খোঁজ মিললো না।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰