#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৯
ফজরের নামাজ আদার করে পাভেল, শরীফ, পারফি ও শাফিন এক সাথে বাসায় প্রবেশ করলো। সবার মন খুব ফুরফুরে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চারজনে এক সাথে হাসি আনন্দ গল্প করতে করতে আসছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর সবাই এক সাথে প্রাণ খুলে হাসছে গল্প করছে।
তখন মসজিদে যাওয়ার আগে পারফি শাফিনকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার সে কি খুশি ছেলেদের এভাবে সকাল সকাল নামাজে যাওয়ার জন্য।
বেলকনি থেকে ইয়ানা চারজনের হাসিখুশি মুখশ্রী মুগ্ধ হয়ে দেখলো। তারা সবাই কতোটা প্রাণবন্ত, কতটা মিশুক দেখতেও ভালো লাগে।
ইয়ানা বেলকনির রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে স্নিগ্ধ সকালের আবহাওয়াটা অনুভব করতে লাগলো তখন হঠাৎ পিছ থেকে পারফি বলে উঠলো এই ঠান্ডার ভিতরে বেলকনিতে কি করছো?
কারো কন্ঠস্বর শুনে ইয়ানা পিছু ঘুরে তাকালো। পিছে তাকাতে চোখে পড়লো পারফি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে। ইয়ানা এবার আস্তে করে বললো এমনি দাঁড়িয়ে আছি, ভালো লাগছে সকালের এই আবহাওয়াটা।
পারফি মুচকি হাসি দিয়ে বললো ঠান্ডা লেগে যাবে। এবার ভিতরে এসে ঘুমিয়ে পড়ো।
ইয়ানা বাধ্য মেয়ের মতো সম্মতি দিয়ে রুমে চলে আসলো।
পারফিও ইয়ানার সাথে আসলো তারপর সোফায় চলে গেলো এখন একটু ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ভালো ঘুম হয় নি তাই মাথা ধরেছে।
পারফিকে আবার সোফায় শুতে দেখে ইয়ানা ভাবলো বেডে শুতে বলবে কিনা। অবশেষে নিজের ভিতর জড়তা কাটিয়ে থেমে থেমে ইয়ানা পারফির উদ্দেশ্যে বললো আপনি চাইলে এখন বেডে শুতে পারেন, সোফায় শুতে কষ্ট হবে আপনার।
পারফি তাকালো ইয়ানার দিকে তারপর ধীর গলায় বললো সমস্যা নেই আমি এখানে শুতে পারবো।
ইয়ানা কি বলবে বুঝতে পারলো না। বুঝতে পারছে যে পারফি ওর জন্যই বেডে আসতে চাচ্ছে না কিন্তু ওর জন্য লোকটা এতো কষ্ট করবে ভাবতে খারাপ লাগছে ইয়ানার। তাই ফের পারফিকে বললো আপনি বেডে আসতে পারেন আমি এখন ঘুমাবো না। বেড তো ফাঁকা আছে তাই ঘুমাতে পারেন।
পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো ঘুমাবে না কেনো?
আ..আসলে এখন ঘুম পাচ্ছে না, আপনি ঘুমান না। আমার ঘুম পেলে সোফায় ম্যানেজ করে নিতে পারবো।
পারফি বুঝলো ইয়ানা ওর জন্যই এমন করছে তাই বসা থেকে উঠে ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়ালো।
পারফিকে হঠাৎ নিজের সামনে আসতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো ইয়ানা।
ইয়ানাকে অবাক করে দিয়ে পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বললো বাচ্চা মেয়ে আমার জন্য এতো চিন্তা করতে হবে না বুঝলে এখন চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
পারফির এভাবে গাল টেনে দেওয়াতে বেকুব বনে গেলো ইয়ানা। ঠোঁট উল্টে ভাবলো আমি কি বাচ্চা যে এভাবে গাল টেনে দিলো? আবার বাচ্চা বলেও সম্মোধন করলো।
ইয়ানাকে এমন ঠোঁট উল্টাতে দেখে শুকনো ঢোক গিললো পারফি। এই মেয়েকে এমন ঠোঁট উল্টালে যে কি মারাত্মক লাগে আর তাতে যে কারো বুজে ঝড় বয়ে যায় সেটা কি এই মেয়ে জানে? এটা ভারী অন্যায়। অন্যের বুকে ঝড় উঠিয়ে দিয়ে নিজে রিলাক্সে দিন পার করছে।
নিজেকে সামলে পারফি ডাক দিলো বিড়াল ছানা….
বিড়াল ছানা ডাকটা শুনে চমকে তাকালো ইয়ানা পারফির দিকে। বিড়াল ছানা বললে আগে রাগ লাগতো কিন্তু সব সময় এই নামটা পারফির মুখে শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই ছোট করে বললো জ্বি?
পারফি কিছু বলতে যেয়েও বললো না, কথা ঘুরিয়ে কোমল স্বরে বললো যাও ঘুমাও এখন জেগে থেকে একা একা কি করবে? এতো সকালে কেউ উঠবে না যে যার রুমে আছে।
ইয়ানা সম্মতি দিয়ে বললো তাহলে আমি সোফায় যাই? সত্যি আমার সমস্যা হবে না।
ইয়ানার কথায় হালকা হাসলো পারফি, এখন বেডে না গেলে যে এই মেয়ে মন খারাপ করবে তা ভালো করেই জানে তাই পারফি সম্মতি দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।
পারফি ওর কথায় সম্মতি দিতে ইয়ানা খুশি হয়ে গেলো। তারপর আস্তে ধীরে সোফায় যেয়ে ছোট শরীরটা এলিয়ে দিলো সোফায়। তেমন একটা সমস্যা হলো না এভাবে শুতে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
দরজায় কারো করাঘাতে ঘুম ভাঙলো ইয়ানার। আস্তে ধীরে উঠে দরজা খুলতে প্রীতিকে দেখতে পেলো।
প্রীতি ইয়ানাকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো ঘুম কেমন হলো ভাবিজী?
প্রীতির মুখে ভাবি ডাক শুনে থতমত খেয়ে গেলো ইয়ানা। কুনোই দিয়ে পাশ থেকে ইয়ানাকে খোঁচা মেরে বললো আমাকে ভাবি বলছিস কোন দুঃখে?
প্রীতি হেসে বললো তুই আমার ভাইর বউ তাহলে তোকে ভাবি ডাকবো নয়তো কি খালাম্মা ডাকবো?
ইয়ানা প্রীতির কান টেনে দিয়ে বললো ফাজিল মেয়ে উল্টা পাল্টা বকবকানির স্বভাব তোর জীবনেও যাবে না।
প্রীতি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বললো তোর সাথে বকবক করবো নাতো কার সাথে করবো? সবাই নিচে ওয়েট করছে ফ্রেশ হয়ে নিচে চল।
পারফি পিছ থেকে বলে উঠলো যেভাবে চিপকে ধরে আছিস এভাবে থাকলে সারাদিন ও নিচে যেতে পারবে না আবার বলছিস তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে।
পারফির কথায় প্রীতি ইয়ানাকে ছেড়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো আমার জানুকে আমি ধরেছি দরকার হলে সারাদিন ধরে রাখবো কোনো সমস্যা?
সমস্যা মানে ওফ কোর্স সমস্যা। আমার বউকে তুই ক্যান ধরে রাখবি?
ওহ-হহহো এক দিনেই বউকে নিয়ে এতো জেলাস?
দুই ভাই বোনের কথায় ইয়ানা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। লজ্জায় গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। এই দুই ভাই বোনের মুখে যে কোনো কথা আঁটকায় না ভালো করেই জানে। এখন যে মুখ দিয়ে আরো কি কি বেফাঁস কথা বের করে তার ঠিক নেই তাই ইয়ানা ফাঁক বুঝে ওখান থেকে কেটে পড়লো। এখন এখানে থাকা মানেই লজ্জায় পড়া এর থেকে কেটে পড়া ভালো তাই চুপচাপ ওখান থেকে কেটে পড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ইয়ানাকে এভাবে যেতে দেখে পারফি আর প্রীতি এক সাথে হেসে ফেললো।
——————
ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে সকালের নাস্তা করছিলো তখন পাভেল চৌধুরী পারফি উদ্দেশ্যে বললো আমি চাচ্ছিলাম নেক্সট উইকে তোমাদের বিয়ের জন্য রিসিপশন করতে। যেহেতু বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়েছে তাই কেউ তোমাদের বিয়ের ব্যপারে জানে না তাই চাচ্ছিলাম রিসিপশন করে সবাইকে বিষয়টা জানিয়ে দেই এতে তোমার মতামত কি?
পারফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো আমার সমস্যা নেই।
পিয়াসা বেগম বললো যাক ভালো তাহলে আর শোন বাবা আজ একটু ইয়ানাকে নিয়ে ওদের বাড়ি ঘুরে আয় তাহলে ওর একটু ভালো লাগবে।
ইয়ানা চমকে তাকালো পিয়াসা বেগমের দিকে। ওর সত্যি বাবার কাছে খুব যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু কাউকে বললো না আর পিয়াসা বেগম কিনা না বলতেও মনের অবস্থাটা বুঝে ফেললো ভাবতেই চমকে গেলো ইয়ানা। মনে মনে খুব খুশি হলো পিয়াসা বেগমের উপরে।
পারফি তাকালো ইয়ানার দিকে। বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে মেয়েটা যে খুশি হয়েছে তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছ। মনে মনে বললো তোমার এই মুখে সবসময় এই খুশিটাই দেখতে চাই স্নিগ্ধ ফুল।
খাওয়া শেষ হলে পারফি ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো রেডি হয়ে নেও এ বলে উপরে চলে গেলো।
পাভেল চৌধুরী ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো সাবধানে যেও মামনী। যদি থাকতে ইচ্ছে হয় তাহলে আজ থেকে যেও সেখানে।
পাভেল চৌধুরীর কথায় অশ্রুসিক্ত নয়নে ইয়ানা তাকালো তার দিকে। এই বাসার লোক গুলো কতো ভালো কতোটা বোঝে ওকে ভাবতেই মনের ভিতর একরাশ ভালোলাগায় ভরে গেলো।
পাভেল চৌধুরী ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো কাজে। পাভেল চৌধুরী যেতে ইয়ানা কিছু একটা মনে করে পিয়াসা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো আন্টি একটা কথা বলি?
পিয়াসা বেগম টেবিলের সব কিছু গুছাতে গুছাতে বললো আমি কারো আন্টি না যদি কেউ মা বলতে পারে তাহলে কিছু বলতে পারে শুনতে পারছি।
ইয়ানা মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে পিয়াসা বেগমকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো আন্টি না মানে মা প্রীতিকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই?
পিয়াসা বেগম হেসে একপাশ থেকে ইয়ানার গালে হাত রেখে বললো এবার ঠিক আছে। আর কখনো যদি আন্টি ডাকিস তাহলে মার খাবি আমার হাতে।
আচ্ছা আর ডাকবো না এবার বলো প্রীতিকে নিয়ে যাবো?
ও গেলে নিয়ে যাবি তা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করা লাগে? তারপর প্রীতি দিকে তাকিয়ে বললো যাবি তুই?
প্রীতি লাফ দিয়ে উঠে বললো যাবো মানে অবশ্যই যাবো। আমি না গেলে হয় নাকি?
প্রীতির কথায় ইয়ানা আর পিয়াসা বেগম হেসে ফেললো তারপর ওরা রেডি হতে রুমে চলে গেলো।
সবাই রেডি হয়ে পিয়াসা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। সোজা চলে গেলো ইয়ানাদের বাসার সামনে। বাসার সামনে গাড়ি থামাতে ইয়ানা আর প্রীতি নেমে দাঁড়ালো। পারফি গাড়ি থেকে না নেমে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো আমার একটু জরুরি কাজ আছে তাই এখন বাসায় যেতে পারবো না। সমস্যা নেই রাতে আসবো তোমরা ভিতরে যাও আর সাবধানে থেকো।
ইয়ানা আর প্রীতি সম্মতি দিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেলো। ইয়ানারা যেতে পারফি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফোন লাগালো শাফিনকে। শাফিনকে কিছু গার্ড নিয়ে অফিসের সামনে দাঁড়াতে বলে বললো আমি আসছি।
পারফির কথা মতো কিছু গার্ড নিয়ে শাফিন অফিসের সামনে দাঁড়ালো তখন আসলো পারফি।
পারফি নেমে আসতে শাফিন বললো কোনো সমস্যা? এখানে গার্ড নিয়ে আসতে বললি কেনো?
একটা জায়গায় যেতে হবে তাই এদের নিয়ে আসতে বলেছি চল এবার।
এখন আবার কোথায় যাবি?
গাড়িতে ওঠ তারপর বলছি এখন চল সময় কম আজকের ভিতরেই আবার সেখান থেকে ফিরতে হবে।
শাফিন আর কথা না বাড়িয়ে পারফির সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগলো আর পিছু পিছু গার্ডের গাড়ি যাচ্ছে।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰