#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২
ভাইয়া……
প্রীতির ডাকে হুঁশ আসলো পারফির। নিজের কাজে নিজেই অবাক হলো পারফি। সকাল থেকে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজেকে স্বাভাবিক করে গলা পরিস্কার করে বললো.. হ..হুম?
কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে? কখন থেকে ডাকছি।
প্রীতির কথায় পারফি পাশে তাকালো দেখলো সেই মেয়েটা গুটিশুটি হয়ে প্রীতির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এবার চোখ পড়লো মেয়েটার চোখের দিকে। চোখ জোরা কেমন লাল হয়ে আছে। মেয়েটা কি কান্না করেছে? কিন্তু কেনো?
নিজের ভাবনার মাঝে পারফি নিজেই এবার বিরক্ত হয়ে গেলো কি ভাবছে তখন থেকে। এই মেয়ে জাদু জানে নাকি? কেমন এক ঘোরের ভিতর বারবার ফেলে দিচ্ছে। এই মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে। মেয়ে মানেই ভেজাল।
জিভ দিয়ে পারফি ঠোঁট ভিজিয়ে বললো ১৫ মিনিটের জায়গায় কয় মিনিট লাগিয়েছিস?
উফফ ভাইয়া ১৫ মিনিটে কি একটা মেয়ের রেডি হওয়া সম্ভব?
হয়েছে গাড়িতে ওঠ এবার।
প্রীতি ইয়ানার হাত ধরে গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ইয়ানা ফিসফিস করে বললো উনি কে?
ওহ্ তোর সাথে পরিচয় করাতে তো ভুলেই গিয়েছি। এটা হলো আমার একমাত্র ভাই পারফি ভাইয়া। আর ভাইয়া ও হলো আমার জানের বেস্টু ইয়ানা।
ইয়ানা এবার তাকালো পারফির দিকে, লম্বা চওড়া সুদর্শন এক যুবক। মুখে চাপ দাড়ি এতে যেনো ফর্সা মুখের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সব চেয়ে আকর্ষণীয় হলো নীলমনি। যে কারো নজর কারার জন্য এই মনিটাই যথেষ্ট। ইয়ানা এবার খেয়াল করলো কাকতালীয় ভাবে পারফির শার্টের কালারের সাথে ওর শাড়ীর কালার ম্যাচিং হয়ে গেছে। যে কেউ দেখলে ভাববে এরা কাপল। এসব ভেবে কেমন যেনো এক অসস্তিতে পড়ে গেলো। ইয়ানা এবার আমতা আমতা করে বললো আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
পারফি সালামের জাবাব দিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো এ তাহলে তোর সেই বিড়াল ছানা?
বিড়াল ছানা ডাকটা শুনে ইয়ানার সকালের কথা মনে পড়ে গেলো। সকালে ফোনেও বিড়াল বললো আর এখন ও বিড়াল বলছে। রাগ লাগলো ইয়ানার কিন্তু কিছু বললো না নাকের পাটা ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
পারফি সে দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো তা দেখে ইয়ানার রাগ আরো বাড়লো। কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না।
প্রীতি এবার বললো ভাইয়া একদম আমার জানুকে বিড়াল ছানা বলবা না বলে দিলাম এবার তাড়াতাড়ি চলো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
গাড়িতে না উঠলে যাবো কিভাবে? এখন কি কোলে করে গাড়িতে উঠানো লাগবে?
প্রীতি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো এ যা খেয়াল এই নেই যে গাড়িতে উঠি নি এ বলে ইয়ানার হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসলো।
গাড়িতে উঠার পর পারফি গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে। হঠাৎ পারফির সামনে থাকা লুকিং গ্লাস এর দিকে চোখ চলে গেলো যেখানে ফুটে উঠলো স্নিগ্ধ ফুলের স্নিগ্ধ হাসি। কিছু নিয়ে প্রীতির সাথে কথা বলছে আর হালকা করে মুচকি হাসছে। যেই হাসি দেখে কয়েকবার হার্টবিট মিস করলো পারফি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। এক হাত দিয়ে পাশে থাকা পানির বোতল নিয়ে পানি খেতে লাগলো। পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ভাবতে লাগলো এ মেয়ে খুবি ভয়ানক, আর তাকানো যাবে না। নিশ্চয়ই এই মেয়ে কোনো জাদু যানে। জাদু দিয়ে আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই মেয়ের থেকে ১০ হাত দূরে থাকতে হবে।
দেখতে দেখতে কলেজের সামনে এসে পড়লো গাড়ি। প্রীতি আর ইয়ানাকে নামিয়ে দিয়ে বললো আমি আশেপাশেই আছি। কোনো প্রয়োজন হলে ফোন করিস এ বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে সবাই সিটে যেয়ে বসলো। যেহেতু ইয়ানারা কলেজে নতুন তাই তেমন একটা ফ্রেন্ডস এখনো হয়নি। তাই ওরা দুজন এক সাথে বসে বসে স্টেজে চলতে থাকা নাচ গান দেখতে লাগলো।
হাসি আনন্দের মাঝে অনুষ্ঠান কাটতে লাগলো।এক ভাবে বসে থাকতে থাকতে এবার বোরিং লাগছে। তাই
প্রীতি বললো ইয়ানা এত সময় বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। একটু হেঁটে আসলে ভালো হবে। চলনা একটু হেটে আসি।
ইয়ানার ও বোরিং লাগছে তাই দুজন উঠে আশেপাশে একটু হাটতে লাগলো। হঠাৎ ইয়ানার পাশ দিয়ে কেউ একজন দ্রুত বেগে হেঁটে গেলো আর ইয়ানা হাতে ধারালো কিছুর আঘাত অনুভব করলো। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলো। কাঁপা কাঁপা হাতটা চোখে সামনে আনতে চোখের সামনে অস্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠলো তাজা রক্ত। কি হয়েছে বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো নিচে। হারিয়ে গেলো গভীর অন্ধকারে।
এদিকে প্রীতি ইয়ানার হঠাৎ এভাবে পড়ে যাওয়াতে ইয়ানা বলে চিৎকার দিয়ে ইয়ানার পাশে বসে পড়লো। ইয়ানার হাতের দিকে চোখ যেতে আঁতকে উঠলো। যেখান দিয়ে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরতাছে। প্রিতি চিৎকার দিয়ে ইয়ানার হাত চেপে ধরে রক্ত আটকানো চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কিছুতে রক্ত থামানো যাচ্ছে না।
পারফি আর ওর বন্ধু শাফিন মিলে প্রীতিকে নিয়ে যেতে আসছিলো। তখন বোনের চিৎকার শুনে পারফির বুকের ভিতর কামর মেরে উঠলো এক দৌড়ে সেখানে উপস্থিত হতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। ইয়ানা মাটিতে লুটিয়ে আছে রক্তে শাড়ির একপাশ ভিজে গেছে। কি হয়েছে বুঝতে বিচলিত হয়ে বোনের পাশে বসতে প্রীতি পাগলের মত কান্না করতে করতে বললো ভ..ভাইয়া আমার ইয়ানা…. আমার ইয়ানা ওকে বাঁচাও। কিছু এ..কটা করো ভাইয়া প্লিজ র..রক্ত পড়া আটকাও না ভাইয়া আর নাহলে আমার ইয়ানা ব..বাঁচবে না বলে আহাজারি করে কান্না করতে লাগলো।
পারফ দ্রুত অবচেতন ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো আমার গাড়ি নিয়ে আয় কুয়িক।
শাফিন দৌড়ে গাড়ির কাছে যেয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসলো। সবাই গাড়িতে উঠতে গাড়ি দ্রুত চালাতে লাগলো হসপিটালের দিকে। পারফি রুমাল বের করে হাত বেধে দিলো তাও রক্ত পড়া কমছে না। এক হাত দিয়ে কাটা হাত চেপে রেখে আরেক হাত দিয়ে ইয়ানাকে আগলে ধরে বসে রইলো। বুকের ভিতর কোনো এক অজানা কারনে চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। তাকালো ইয়ানার অচেতন মুখ পানে। সকালের সেই স্নিগ্ধ মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। বার বার মাথায় একটা কথাই আসছে এরকম স্নিগ্ধ একটা ফুলের গায়ে কে এভাবে আঘাত করলো?কেনোই বা করলো। এতটুকু একটা মেয়ের এমন শত্রুই বা থাকবে কেনো? এর পিছে নিশ্চিই কোনো কারণ আছে।
হসপিটালের পৌছে পারফি ইয়ানাকে আবার কোলে তুলে নিলো। পরিচিত হসপিটাল হওয়াতে দ্রুত ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করা হলো। ইয়ানাকে কেবিন এর ভিতরে নিয়ে গেলো। বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো প্রীতি, পারফি আর শাফিন।
প্রীতি এখনো কান্না করেই যাচ্ছে তা দেখে পারফি বোনকে বুকে আগলে নিলো।
প্রিতি পারফিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলতে লাগলো ভাইয়া আমার ইয়ানা ঠিক হয়ে যাবে তো? বলো না ভাইয়া ওর কিছু হবে নাতো? আমার ইয়ানাকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দেওনা ভাইয়া।
বোনের এমন আহাজারি দেখে পারফি মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রীতিকে শান্ত করতে লাগলো..চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো কিছু হবে না তোর ইয়ানার। কান্না করে না বোন আমার, ও ঠিক হয়ে যাবে।
পারফির কথায় প্রীতি কিছুটা শান্ত হলো।
তখন কেবিন থেকে ডক্টর বের হয়ে বললো পেশেন্টের শরীর থেকে প্রচুর ব্লাড বেরিয়ে গেছে এখন ইমার্জেন্সি ও পজিটিভ রক্ত লাগবে।
ডক্টরের কথায় পারফি আর প্রীতি একে অপরের দিকে তাকালো কারণ ওদের কারোই ও পজিটিভ রক্ত না। তখন শাফিন বলে উঠলো আমার ও পজিটিভ রক্ত, আমার থেকে নিতে পারেন।
ডক্টর শাফিনকে নিয়ে দ্রুত চলে গেলো।
রক্ত দেওয়া শেষ হলে শাফিন এসে বসলো পারফির পাশে। প্রীতি কৃতজ্ঞতার সহিতে শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো আমার কলিজার জীবন বাঁচানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
শাফিন মুচকি হেসে বললো জীবন বাঁচানোর আমি কেউ না। সবি আল্লাহর হাতে বুঝলি। এবার বল এরকম হলো কিভাবে?
প্রীতি সবটা খুলে বললো ওদের, সবটা শুনে পারফি বলে উঠলো এইটুকু একটা মেয়ের এরকম শত্রুই বা কেনো থাকবে?
বুঝতে পারছি না কেনো এমন হচ্ছে। আগে তো কখনো এমন কিছু ঘটে নি। আচ্ছা ভাইয়া আমাদের কোনো শত্রুপক্ষ এরকমটা করলো নাতো আবার?
প্রীতির এবারের কথায় টনক নড়লো পারফি আর শাফিনের।
পারফি আর শাফিনের বাবা দুজন বন্ধু। দুজনেই জার্নালিস্ট যার জন্য ওদের শত্রুর অভাব নেই। তার উপরে পারফি আর শাফিন মিলে বিজনেস সামলায়। টপ বিজনেসম্যান হওয়ায় এ দিক থেকেও শত্রু কোনো অংশে কম না। এই শত্রুতামির জন্য শাফিন হারিয়েছে ওর ছোট বোনকে। যাকে জন্মের পর এই হসপিটাল থেকে শত্রুপক্ষের কেউ নিয়ে গেছে। আদো বোনটা বেঁচে আছে কিনা কারো জানা নেই। পারফি আর শাফিনের পরিবার মিলে কম চেষ্টা করে নি খোঁজার কিন্তু কোনো খোঁজ পায় নি।
পারফি ফোন বের করে কাউকে ফোন করলো। তারপর বললো কলেজের সিসিটিভির ফুটেজ কালেক্ট করতে। এই আক্রমণের পিছে কারা আছে তা জানা খুব দরকার। আজ তাদের জন্য এই নিস্পাপ মেয়েটা এতটা কষ্ট পেলো এর একটা বিহিত তো করতে হবেই।
——————-
কয়েক ঘন্টা পরে ইয়ানার জ্ঞান ফেরলো। জ্ঞান ফেরার পর বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো কোথায় আছে, কি হয়েছে ওর সাথে। আস্তে আস্তে মনে পরলো হঠাৎ আক্রমণের কথা। তাকালো হাতের দিকে যেখানে ব্যান্ডেজ করা। অন্য হাতে স্যালাইন চলছে। ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইয়ানা।
ইয়ানার জ্ঞান ফিরেছে দেখে প্রীতি পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কান্না করে ফেললো। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো খুব ব্যথা করছে হাতে?
ইয়ানা এত কষ্টের মাঝেও মুচকি হাসলো প্রীতির এতো গভীর ভালোবাসা দেখে। এই মেয়েটা ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে আগলে রাখে সবসময়।
তখন কেবিনে প্রবেশ করে পারফি আর শাফিন। ইয়ানার জ্ঞান ফিরেছে দেখে দুজনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। স্যালাইন শেষ হলে একজন নার্স এসে সেটা খুলে দিলো। প্রীতির সাহায্যে ইয়ানা উঠে বসলো।
সবাই টুকটাক কথা বললো ইয়ানার সাথে। শাফিনের সাথেও পরিচয় হলো। কথায় মাঝে জানতে পারলো শাফিন এই ওকে রক্ত দিয়েছে। শাফিন খুবি মিশুক তাই অল্পতে ইয়ানার সাথে মিশে গেলো। বিভিন্ন কথা বলে সবাইকে হাসাতে লাগলো। এক কথায় সবার মন খারাপটা নিমিষেই ভালো করে দিলো।
পারফি কিছুটা দূরে বসে এদের কান্ড কালাপ দেখে গেলো কিন্তু কিছু বললো না। মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে কে এমন আক্রমণ করলো আর কেনোই বা করলো।
ইয়ানা এখন একটু সুস্থ বাসায় নিয়ে যেতে পারবে ডক্টর জানালো। রাত ৯ টা বেজে গেছে তা দেখে ইয়ানার চোখ কপালে। মাথা ঘুরতে লাগলো এখন বাসায় গেলে কি হবে? বাবা তো বাসায় নেই কাজের জন্য ঢাকার বাহিরে গেছে। আর মা তো আমাকে শেষ করে দিবে একদম। ভয়ে চুপসে গেলো ইয়ানা, প্রীতিকে তাড়া দিয়ে বললো বাসায় যাওয়া দরকার।
ইয়ানার অবস্থাটা হয়তো প্রীতি কিছুটা বুঝেছে তাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হসপিটালের বাহিরে এসে শাফিন বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
পারফি গাড়ি স্টার্ট দিলো, অনেক সময় পর গাড়ি এসে থামলো ইয়ানাদের বাসায়।
ভাইয়া তুমি এখানে একটু ওয়েট করো আমি ওকে দিয়ে আসি।
পারফি সম্মতি দিতে প্রীতি ইয়ানাকে নিয়ে চলে গেলো। পারফি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো তখন চোখে পরলো ঔষধের প্যাকেট গাড়িতে পড়ে আছে। কিছু একটা ভেবে ঔষধের প্যাকেট টা নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰