তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ২১

0
486

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২১

রাত বাজে প্রায় ১১ টা। ড্রয়িংরুমে বসে ইয়ানা, প্রীতি,ইমা, ইতি বেগম ও ইসহাক আহমেদ গল্প করছে।
ইতি বেগম সবার কাছে এতো দিনের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলো। যেহেতু ইতি বেগম নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাই সবাই ক্ষমা করে দিলো কারণ তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অনুশোচনায় ভুগছে। কেউ তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ভোগ করলে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তাই সবাই ইতি বেগমকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার নতুন করে হাসিখুশি একটা জীবন শুরি করতে চাইলো।

সবাই গল্প করছিলো তখব কলিংবেল বেজে উঠলো।
ইয়ানা উঠে বললো আমি খুলে দিচ্ছি এ বলে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে পারফির ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো। এই টাইমে পারফিকে দেখে অবাক হলো বেশ কারণ অনেক রাত হয়ে গেছে তাই ভেবেছিলো পারফি আসবে না।

দরজা খুলে ইয়ানাকে এভাবে শটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পারফি বললো সারারাত কি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে নিবে?

ইয়ানা তারাতাড়ি দরজার সামনে থেকে সরে যেয়ে বললো না না আসুন ভিতরে।

পারফি ক্লান্ত পায়ে ভিতরে প্রবেশ করতে সবার সাথে ড্রয়িংরুমে দেখা হলো। পারফি সালাম দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ইসহাক আহমেদের পাশে যেয়ে বসলো।

সবাই টুকটাক কথা বলছে তখন ইতি বেগম পারফির কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিলো সেদিনের ব্যবহারের জন্য। ইতি বেগম যেহেতু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে শুনে খুশি হলো।

গল্পের মাঝে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ সময় তখন ইতি বেগম ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো ইয়ানা মা পারফিকে নিয়ে রুমে যা আমি খাবার গরম করে রুমে পাঠাচ্ছি, পারফিকে দেখে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে এখন একটু রেস্টের প্রয়োজন।

ইসহাক আহমেদ পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কিছু মনে করো না বাবা আমরা ভেবেছিলাম তুমি আসবে না তাই তোমাকে রেখেই সবাই খেয়ে ফেললাম।

ইসহাক আহমেদের কথায় পারফি মুচকি হেসে বললো সমস্যা নেই বাবা, ভালো হয়েছে সবাই খেয়ে নিয়েছেন।

ইসহাক আহমেদ বাবা ডাকটা শুনে পিল চমকালেন। আশা করে নি পারফি বাবা বলবে কারণ কাল ও আঙ্কেল বলে সম্মোধন করেছিলো। আজ পারফির মুখে বাবা ডাক শুনে খুশি হলেন বেশ। খুশি হয়েই বললো যাও বাবা তাহলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেও।

পারফি সম্মতি দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছু পিছু ইয়ানা ও গেলো।

কিছুক্ষণ পর ইমা এসে খাবার দিয়ে গেলো। পারফি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইয়ানা খাবার সাজাচ্ছে তা দেখে তোলায়া দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এটে নিলো।

পারফিকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে দেখে ইয়ানা পারফি উদ্দেশ্যে বললো খেয়ে নিন।

পারফি অলস ভঙ্গিতে বেডে বসতে বসতে বললো খাইয়ে দাও।

পারফির কথায় ইয়ানার কাশি উঠে গেলো। তারাতাড়ি করে গ্লাসের পানি পুরোটা খেয়ে নিয়ে তাকালো পারফির দিকে। ও কানে ভুল শুনেছে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছে না।

ইয়ানার অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো পারফি। ইয়ানাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো ভুল শোনো নি ঠিকি শুনেছো খাইয়ে দিতে বলেছি।

ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না, এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো আপার হাতে কি হয়েছে?

বউ থাকতে হাত দিয়ে কেনো খাবো? জলদি খাইয়ে দেও খিদে পেয়েছে খুব।

পারফির কথায় ফের ইয়ানার কাশি ওঠার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। এই লোক যে কি লেভেল এর ঠোঁট কাটা স্বভাবের এখন তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। কি করবে না করবে ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে খাবার মেখে পারফির মুখের সামনে ধরলো।

পারফি মুচকি হেসে খাবার টা মুখে নিলো। খাবার মুখে দেওয়ার সময় ইয়ানার আঙুল ঠোঁটে হালকা করে লাগতে ইয়ানা কেঁপে উঠলো। ব্যপারটা খুবি মজা লাগলো পারফির, সাথে ইয়ানাকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য খাবার মাঝে আস্তে করে আঙুলে কামড় মেরে দিলো।

ইয়ানা দ্রুত হাত সরিয়ে বললো হাতে কামড় দিলেন কেনো?

পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আমি কখন কামড় দিলাম?

এই মাত্রই তো দিলেন।

তোমার যেই তুলতুলে হাত আমিতো ভাত ভেবে কামড় দিয়েছি এখন যদি সেই কামড় হাতে পড়ে তাতে আমার কি দোষ?

ইয়ানা দাঁত কটমট করে তাকালো পারফির দিকে, বিরবির করে বললো ফাজিল লোক একটা। তারপর পারফিকে পুরোটা খাইয়ে দিয়ে সব কিছু রেখে দিয়ে আসলো। রুমে এসে এখন বিপাকে পড়ে গেলো ঘুমাবে কোথায়? ওর রুমে তো সোফা নেই। এদিকে পারফি টান হয়ে শুয়ে আছে ইয়ানা এখন কি করবে ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।

ইয়ানার অবস্থা দেখে পারফি মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে বললো বেড টা যথেষ্ট বড় আছে আশা করি এক রাতের জন্য ম্যানেজ করে নিতে পারবে এতে।

ইয়ানা একরাশ দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ধীর পায়ে কোলবালিশের অপজিট পাশে শুয়ে পড়লো। অস্বস্তিতে গা কাটা দিয়ে উঠলো। সাথে ভয় ও লাগছে যদি ঘুমের ঘোরে বালিশের অপজিট পাশে চলে যায় তখন কি হবে?

ইয়ানার অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে পারফি বললো রিলাক্স আমি কিছু করবো না। বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই আমি জানি তোমার সময় প্রয়োজন। তুমি তোমার মতো করে সময় নিতে পারো আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আজকের রাতটার জন্য এক বেডে কষ্ট করে ম্যানেজ করে নেও কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ইয়ানা মনে মনে বললো সমস্যা তো আপনাকে নিয়ে না, সমস্যা তো আমার নিজেকে নিয়েই। আমি জানি আপনি আমাকে টাচ ও করবেন না কিন্তু আমার ঘুম যে ওতোটা ভালো না। নিজেকে নিয়েই নিজের টেনশন হচ্ছে তা কি করে বোঝাই আপনাকে?
ইয়ানা নিজেকে সামলে আস্তে করে বললো সমস্যা নেই আপনি ঘুমান এ বলে অন্যপাশ ফিরে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো ইয়ানা।

পারফি ও আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো।
——-
সকাল সকাল সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইয়ানা ও প্রীতিকে নিয়ে পারফি বেড়িয়ে গেলো। ওদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবে তাই এতো তাড়া। ইতি বেগম আর ইসহাক আহমেদ অনেক করে বললো থেকে যেতে কিন্তু এখন থাকার সময় নেই।

এতোদিন পর ইতি বেগমকে আপন করে কছে পেয়ে ইয়ানার ইচ্ছে হয়েছিলো আরো কিছুদিন থাকার কিন্তু কাল নাকি বাসায় কিসের একটা অনুষ্ঠান আছে তাই থাকা হলো না, সবার সাথে যাওয়া লাগলো। যেতে কিছুটা কষ্ট লাগলেও পড়ে প্রীতির বকবকানিতে মন ভালো হয়ে গেলো।

বাসায় এসে পিয়াসা বেগমের সাথে গল্প জুড়ে দিলো প্রীতি আর ইয়ানা। আর পারফি চলে গেলো শাফিনদের বাসায়। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে শাহানা বেগমকে দেখলো সোফায় বসে আছে।পারফি শাহানা বেগমের পাশে বসতে বসতে বললো কি অবস্থা কেমন আছো আন্টি?

শাহানা বেগম মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ বাবা। তোমার কি অবস্থা? ইয়ানাদের বাসা থেকে কখন আসলে?

এইতো মাত্রই আসলাম বলতে বলতে পারফির চোখ পড়লো শাহানা বেগমের হাতে ছবির অ্যালবামের দিকে। যেখানে ফুটফুটে একটা বাচ্চার ছবি ফুটে আছে। ছবিটা তার মেয়ে শ্রুতির,যেদিন শ্রুতি পৃথিবীতে এসেছিলো সেদিনের তোলা ছবি এটা।
ছবিটা দেখে পারফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো ছবিটা না দেখলে হয় না? কেনো এই ছবি দেখে নিজের কষ্ট বাড়াও?

শাহানা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কালকে আমার সোনা মেয়েটার জন্মদিন। খুব করে ওকে মনে পড়ছে। আজ যদি আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকতো তাহলে কতোই না সুন্দর হতো।

পারফি শাহানা বেগমকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মন খারাপ করো না। দেখবে একদিন ঠিকি আমাদের শ্রুতি পরীকে আমরা খুঁজে পাবো।

শাফিন উপর থেকে নামতে নামতে বললো দুজন মিলে কি কথা হচ্ছে শুনি?

শাহানা বেগম চোখের পানি মুছে অ্যালবামটা বন্ধ করতে করতে বললো তেমন কিছু না।

শাফিন সোফায় বসতে বাসতে শাহানা বেগমের হাতে অ্যালবামটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যা বোঝার তা বুঝে গেলো। এখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

এই টপিক চেঞ্জ করার জন্য শাফিন বললো খিদে পেয়েছে খেতে দাও।

শাহানা বেগম উঠতে উঠতে বললো আয় খাবার দিচ্ছি আমি তারপর পারফির দিকে তাকিয়ে বললে তুমিও চলো কিছু খেয়ে নিবে।

পারফি শাহানা বেগমকে নিষেধ করলো খাবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা। শাহানা বেগম জোর করে খেতে নিয়ে গেলো।

খাওয়া হলে শাহানা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে পারফি আর শাফিন বাসা থেকে বের হলো। বাহিরে এসে শাফিন বললো সিমের ভিতরের তথ্য কালেক্ট করা হয়েছে?

পারফি গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো না। তবে আজকের ভিতরেই সব তথ্য পেয়ে যাবো আশা করি।

পারফি আর শাফিন টুকটাক কথা বলতে বলতে অফিসে পৌঁছে গেলো। অফিসে পৌঁছে পারফি কাউকে ফোন করে অফিসে আসতে বললো। সে আসতে তার হাতে ওই সিমটা দিয়ে বললো এই সিমের ভিতর সকল ইনফর্ম আমার আজকের ভিতরে চাই।

লোকটা সম্মতি দিয়ে সিমটা নিয়ে চলে গেলো।
———————-
সন্ধ্যায় ইয়ানা আর প্রীতি মিলে বিরিয়ানির রান্না করবে ঠিক করলো। পিয়াসা বেগম কিছুতেই রাজি হলো না ওদের রান্না করতে দিতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইয়ানা আর প্রীতি মিলে জোর করে রাজি করালো।

পিয়াসা বেগম রাজি হলো কিন্তু বললো সে পাশে থেকে হেল্প করবে যদি কোনো বিপদ ঘটিয়ে ফেলে।

তখন প্রীতি পিয়াসা বেগমকে বললো উফফ আম্মু আমরা কি বাচ্চা নাকি যে বিপদ ঘটাবো। আজ তুমি রিলাক্স করো আমরা দুজন সামলে নিবো। এমনেতো সারাদিন পক পক করতে কান ঝালাপালা করে ফেলো কেনো কাজ করি না এখন যেই কাজ করতে চাচ্ছি এখন করতে দিচ্ছো না কেনো?

পিয়াসা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। মায়ের মন কি আর এরা বুঝবে?

ইয়ানা পিয়াসা বেগমকে বললো আন্ট… না মানে মা এতো টেনশন করছো কেনো? আমি টুকিটাকি রান্না পারি তাই রান্না করতে সমস্যা হবে না। আজ একটা দিন এইতো করবো আর না করো না প্লিজ।

পিয়াসা বেগম বললো আচ্ছা যা বাবা কর। যদি কোনো অঘটন ঘটাস তাহলে কিন্তু দুটোকেই ধরে পেটাবো মনে রাখিস।

ইয়ানা পিয়াসা বেগমের গাল টেনে দিয়ে বললো কিছু হবে না যাই তাহলে এ বলে প্রীতিকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো।

পিয়াসা বেগম হাসলো দুই মেয়ের কান্ড দেখে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here