#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৪
চারদিকে বাচ্চাদের শোরগোল মেতে উঠেছে চৌধুরী আর শিকদার বাড়িতে। আর সেই বাচ্চাদের সাথে ইয়ানা আর প্রীতি খেলা করছে। আজ যেনো এই বাচ্চাদের সাথে ওরাও বাচ্চা হয়ে গেছে। ক্ষনিক খেলছে কানামাছি, আবার খেলছে লুকালুকি আবার খেলছে দৌড়াদৌড়ি কে কাকে ধরতে পারে।
কিছুটা দূরে শরীফ আহমেদ, পাভেল শিকদার, পারফি, শাফিন ও আরো কিছু স্টাফ মিলে রান্নায় ব্যস্ত।
পাশেই পিয়াসা বেগম আর শাহানা বেগম গল্প করছে বসে বসে। আজ মহিলাদের ছুটি কারণ এই দিনটার সব কাজ ছেলেদের দায়িত্বে থাকে৷ প্রতিবছর এই দিনটা সবার এভাবেই কাটে।
আজ শ্রুতির জন্মদিন তাই এতো আয়োজন। এই জন্মদিনটা অন্য পাঁচটা জন্মদিনের মতো কেক কেটে পার্টি করে পালন করা হয় না। এটা একটু বেতিক্রম ভাবে পালন করা হয়। প্রতি বছর শ্রুতির জন্মদিন আসলে এলাকার সকল এতিম বাচ্চাদের এনে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানো হয়। সাথে সকল বাচ্চাদের নতুন জামাকাপড়, চকলেট, খেলনা আরো অনেক কিছু দেওয়া হয়। প্রতিবাদেরে মতো এবার ও সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দিনটি সবার জন্য মন খারাপ এর হলেও এতো গুলো বাচ্চার মুখে হাসি ফুটাতে পেরে সবার মন ভালো হয়ে যায়।
এইযে এতক্ষণ শানাহা বেগম মন খারাপ করে বসে ছিলো। বার বার শুধু মনের ভিতর হানা দিচ্ছিলো আজ আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকলে কতো সুন্দর হতো। নিজের হাতে সাজিয়ে দিতাম, খাইয়ে দিতাম আরো কতো কি এসব ভেবে মন খারাপ লাগছিলো কিন্তু বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড়ে সেই মন খারাপটা কেটে গেলো। ওই দূরে ইয়ানা আর প্রীতি বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে আর মন খুলে হাসছে তা দেখে মন শান্ত হয়ে গেলো। তার মেয়ে তার কাছে নেই কিন্তু এই দুটো মেয়েতো কাছে আছে তাতেই মনে শান্তি অনুভব করছে।
পিয়াসা বেগম পাশ থেকে বলে উঠলো দেখছো ভাবি মেয়ে দুটো কেমন ছেলেমানুষী করছে। এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে যদি পড়ে যেয়ে ব্যথা পায়।
শাহানা বেগম প্রীতি আর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো থাকনা করুক আজ একটা দিন মন খুলে দুষ্টমি। দেখো আজ কতোটা প্রাণবন্ত ওরা যেটা দেখতেও ভালো লাগছে।
তা ঠিক বলেছো পাগলি দুটি মেয়ে আমার।
সবাই রান্না করছিলো তখন পারফির ফোনে কল আসলো, পারফি ফোনটা নিয়ে একটু সাইডে গেলো কথা বলতে। কথা শেষ করে ফিরে আসতে নিবে তখন হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলো। সামনের ব্যক্তি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে পারফি কোমর আকরে ধরে পড়া থেকে বাঁচালো।
এদিকে ইয়ানা হঠাৎ দৌড়াদৌড়ির মাঝে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিতে ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। একটু পর অনুভব করলো নিচে পড়ে নি তার আগেই কেউ কোমর আকরে ধরে পড়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কে পড়া থেকে বাঁচিয়েছে দেখার জন্য চোখ খুলতে পারফির মুখশ্রী ভেসে উঠলো। পারফিকে এই মুহুর্তে দেখে চমকে গেলো ইয়ানা। তারাতাড়ি আশেপাশে তাকালো কেউ দেখছে কিনা। কিন্তু না কেউ দেখছে না সবাই সবার কাজ নিয়ে বিজি তা দেখে ইয়ানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
পারফি ইয়ানাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো এই মেয়ে তুমি না অসুস্থ তাহলে এমন ছোটাছুটি করছো কেনো? মাত্র এইতো পড়ে হাত-পা ভাঙতে।
পারফির ধমক খেয়ে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আ..আসলে সরি খেয়াল করি নি আপনি এখানে।
ইয়ানার নরম গলা শুনে পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আর ধমক দিলো না। এবার কোমল স্বরে বললো শরীর দুর্বল তোমার তাই এখন এমন ছোটাছুটি করা ঠিক হবে না। অনেক খেলেছো এবার যাও আম্মুদের ওখানে যেয়ে বসে বসে গল্প করো।
ইয়ানা ভদ্রমেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো তা দেখে পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বললো গুড।
পারফিকে গাল টানতে দেখে ইয়ানা ঠোঁট উল্টে বললো আপনি আবার আমার গাল টানছেন।
পারফি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো বাচ্চাদের গাল দেখলে আমার টানতে ইচ্ছে করে তাতে আমার কি দোষ?
পারফির কথায় ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে বললো আমি বাচ্চা?
তো তোমার কি নিজেকে বড় মনে হয়? আমারতো মনে হয় না।
তখন প্রীতি ইয়ানার কাছে আসতে আসতে বললো এই ইয়ানা এখানে কি করছিস? কখন থেকে খুঁজছি তোকে আয় তারাতাড়ি খেলা শেষ হয়ে গেলো।
প্রীতির কথায় পারফি প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো বানরের মতো ছোটাছুটি না করে এবার যেয়ে চুপচাপ বস আর নাহলে কাজ করতে লাগিয়ে দিবো কিন্তু।
প্রীতি কোমরে হাত দিয়ে বললো তুৃমি আমাকে বানর বললে কেনো?
বানরের মতো ছোটাছুটি করলে বানর বলবো নয়তো কি বলবো?
ভাইয়া আরেকবার যদি আমাকে বানর বলছো না তাহলে কিন্তু আমি আব্বুর কাছে তোমার নামে বিচার দিবো।
তুই কি আমাকে ভায় দেখাচ্ছিস?
সরো তুমি তোমার সাথে কথা নেই এ বলে ইয়ানাকে নিয়ে পিয়াসা আর শাহানা বেগমের কাছে চলে গেলো তারপর সবাই মিলে গল্পের আসর জমিয়ে দিলো।
গল্পগুজবের মাঝে রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলো। রান্না শেষ হতে সব বাচ্চাদের এক সাথে বসিয়ে দিয়ে শাফিন, ইয়ানা, প্রীতি, পারফি মিলে খাবার বেরে দিলো।
বাচ্চাদের খাওয়া হলে সবাই মিলে ওদের নতুন জামাকাপড় দিলো। ইয়ানা চকলেট এর বক্স হাতে নিয়ে সব বাচ্চাদের হাতে চকলেট দিচ্ছে। সব বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ওদের হাসি দেখে সবাই তৃপ্তির হাসি হাসলো।
খাবার দাবার বাচ্চাদের নিয়ে মোট কথা আজকের দিনটা খুব ভালো কাটলো। বাচ্চারা সবাই চলে গেছে আরো অনেক সময় হলো। সবাই মোটামুটি পরিশ্রম করেছে তাই সবাই রেস্ট করতো যার যার রুমে চলে গেলো।
বিকেলের দিকে পারফি আর শাফিন বেড়িয়ে গেলো কাজ আছে বলে।
পারফি আর শাফিন সোজা চলে গেলো ওদের গোপন আস্তানায়। আস্তানার ভিতর প্রবেশ করতে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ৫ জন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখলো। সেই সিমকার্ড থেকে যে কয়টা নাম্বার কালেক্ট করেছে এরা এক এক জন তারাই। সিম কার্ডের ভিতর ৬ জনের নাম্বার পাওয়া গিয়েছিলো তার ভিতরে ৫ জনকে গার্ডরা খুঁজে বের করেছে, বাকি আছে একজন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তবে আশা করছে কিছুদিনের মাঝেই খোঁজ পেয়ে যাবে।
পারফি আর শাফিন গিয়ে লোকগুলোর সামনে বসলো। লোকগুলো ভয়ে কেঁপে উঠলো। এক এক জনে থর থর কারে কাঁপতে লাগলো।
পারফি শান্ত গলায় বললো আমি জানি সেদিন তোরা সব কয়জন ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলি এবার সরাসরি শিকার করবি কার কথায় এমন করেছিস নাকি অন্য উপায়ে কথা বের করবো?
লোকগুলো ভয়ে ঘামতে লাগলো। কিন্তু কেউ শিকার করলো না কার কথায় এমন করছে। তা দেখে পারফি গার্ডদের ইশারা করলো এদের উত্তম মাধ্যম দিতে। পারফির কথায় গার্ডরা সবকয়জনকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেললো তবুও কোনো কথা বের করলো না মুখ দিয়ে।
পারফি এবার গার্ডদের ইশারা করলো থামতে। গার্ডরা থামতে পারফি ফের বললো শেষ বারের মতো বলছি কার কথায় এমন করছিস।
৫ জনের ভিতরে একজন বলে উঠলো আমাদের মেরে ফেলুন তবুও আমাদের মুখ দিয়ে কথা বের হবে না। আমরা মুখ খুললে এমনিও আমরা মারা পড়বো সাথে আমাদের পরিবার ও ধ্বংস হয়ে যাবে।
লোকগুলোর কথা শুনে বুঝলো এরা জীবন দিতে রাজি কিন্তু মুখ খুলতে রাজি না তা দেখে পারফি বললো এদের থেকো কিছু জানা যাবে না, এদের লিডার বাকি যেই একজন আছে ওটাকে আগে খুঁজে বের করতে হবে। ওটার থেকেই সব জানা যাবে।
পারফি চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে গার্ডদের নির্দেশ দিলো যেই একজনকে খুঁজে পাওয়া যায় নি তাকে খুঁজে বের করতে সাথে এদের সব কয়টার একটা ব্যবস্থা করতে।
গার্ডরা সম্মতি দিতে পারফি আর শাফিন বেড়িয়ে গেলো। আস্তানার বাহিরে আসতে শুনতে পেলো বাহির থেকে লোকগুলোর আর্তনাদ। তা শুনে শাফিন বললো শালা গুলোর দম আছে বেশ। জীবন দিবে তবুও মুখ খুলবে না।
——-
রাত ১০ টার দিকে পারফি আর শাফিন বাসায় আসলো তা দেখে প্রীতি কোমরে হাত দিয়ে দুজনের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে রইলো।
প্রীতির এমন রনোচন্ডি রুপ দেখে শাফিন বললো এমন শাঁকচুন্নির মতো তাকিয়ে আছিস কেনো?
প্রীতি ক্ষেপে গিয়ে বললো আর একটা কথা বললে মাথার চুল একটাও আস্ত রাখবো না বলে দিলাম।
পারফি প্রীতিকে শান্ত করার জন্য বললো থাম তোরা, কি হয়েছে সেটা বল, কিছু না বলে এমন করে তাকিয়ে থাকলে হবে?
প্রীতি তেতে গিয়ে বললো এতো সময় লাগলো কেনো তোমাদের আসতে? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
শাফিন খোঁচা মেরে বললো তোর মতো সারাদিন কি বেকার ঘুরি যে বললি আর চলে আসলাম।
প্রীতি ক্ষেপে কিছু বলতে যাবে তার আগে পারফি আবার থামিয়ে দিয়ে বললো হয়েছে থাম এখন ঝগড়া বাজানোর সময় না। ঝগড়া করার অনেক টাইম আছে তখন করিস আপাতত চুপ থাক, একটু বিজি ছিলাম তাই আসতে লেট হয়েছে।
পারফির কথায় প্রীতি শাফিনের দিকে দাঁত কটমট করে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। তারপর পারফির দিকে তাকিয়ে বললো যা যা আনতে বলেছি সব এনেছো?
পারফি প্রীতির হাতে কতোগুলো ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো সব আছে।
প্রীতি খুশি হয়ে বললো চলো তাহলে এখন ছাঁদে যাই।
পারফি প্রীতি আর শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো তোরা যেয়ে কাজে লেগে পড় আমি একটু আসছি এ বলে উপরে উঠতে নিয়ে আবার কিছু একটা মনে করে পিছু তাকিয়ে বললো যেয়ে যদি দেখি দুইটায় আবার ঝগড়া লাগিয়েছিস তাহলে দুটোকে ধরে সুইমিংপুলের ভিতরে চুবিয়ে রাখবো মনে রাখিস।
শাফিন প্রীতির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো এই কথা তোর বোনের মাথায় ঢুকা, আমার সাথে যেনো কেউ লাগতে না আসে।
প্রীতি ও চোখ পাকিয়ে বললো বয়েই গেছে যা তা মানুষের সাথে আমার লাগতে।
শাফিন রেগে বললো তুই আমাকে যা-তা বললি কেনো? আজতো তোকে আমি….
পারফি হতাশ হয়ে উপরে চলে গেলো। ঝগড়া না করার জন্য এদের বুঝানোর থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে কথা শেখানো সহজ। এদের বোঝানো মানে যেই লাউ সেই কদু।
পারফি সোজা রুমে চলে গেলো। রুমে আসতে দেখতে পেলো ইয়ানা এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। এতো তারাতাড়ি ইয়ানাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে পারফি এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে কপালে আলতো করে হাত রাখলো জ্বর চেক করার জন্য। কপালে হাত রাখতে হালকা গরম অনুভব করলো। শরীরে হালকা জ্বর আছে তাই হয়তো শরীর খারাপ লাগার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।
পারফি কিছুক্ষণ ঘুমন্ত স্নিগ্ধ ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ইয়ানাকে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে ব্লাংকেট টেনে দিলো শরীরে। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ফের ইয়ানার দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ছাঁদের উদ্দেশ্যে।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….