তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ২৫

0
454

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৫

ছাঁদে বসে বেলুন ফুলাচ্ছে প্রীতি আর শাফিন ফুল দিয়ে ছাঁদ ডেকোরেশন করছে।
আজ ইয়ানার বার্থডে তাই মূলত এসব কাজ করা। একটু অবাক করার বিষয় হলেও পর পর তিনজনের বার্থডে এক সাথে পড়ে গেলো।

তখন সেখানে আসলো পারফি। চারেদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো তোরা দুজনেইতো সব কিছু করতে পারছিস আমি বরং বসে থাকি তোরা সামলা এ দিকটা।

শাফিন বলে উঠলো শালা তুই করবি সবার থেকে বেশি কাজ বিকজ তোর বউর বার্থডে। এদিকে আয় আমাকে হেল্প কর।

পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো তুই যে সারাদিন শালা শালা করিস তুই আমার কোন বোনকে বিয়ে করেছিস যে আমি তোর শালা হই?

শাফিন বাঁকা হেসে বললো তোর বোন কয়টা শুনি?

আমার বোনের দিকে তাকালে তোর চোখ কানা করে দিবো।

শাফিন মজা করে বললো ওরে বাবা ভয় পেয়েছি আমি। আমার বয়েই গেছে তোর বাদর মার্কা বোনের দিকে নজর দিতে। তারপর শাফিন দূরে বসে বেলুন ফুলাতে থাকা প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো এই ফাটা বাঁশ বেলুন গুলো এখানে নিয়ে আয় জলদি।

প্রীতি ক্ষেপে পারফির উদ্দেশ্যে বললো ভাইয়া আমাকে আলি জালি বলতে না করো কিন্তু বলে দিলাম।

পারফি শাফিনের মাথায় গাট্টা মেরে বললো ওকে না ক্ষেপালে তোর পেটের ভাত হজম হয় না?

শাফিন হেসে বললো এটাইতো মজা।

হাসি ঠাট্টার মাঝে তিনজন মিলে ছাঁদটাকে সুন্দর করে সাজালো।

সব শেষে কেক বের করতে সেখানে লেখা দেখলো শুভ জন্মদিন স্নিগ্ধ ফুল।
স্নিগ্ধ ফুল নামটা দেখে প্রীতি বলে উঠলো ওহ্ হহহো স্নিগ্ধ ফুল।

শাফিন টিটকারি মেরে বললো আজ একটা স্নিগ্ধ ফুল নেই দেখে স্নিগ্ধ ফুল নাম লিখে কেক ও কাটতে পারি না।

প্রীতি খোঁচা মেরে বললো তোমার মতো ঢেরসের হবে আবার স্নিগ্ধ ফুল হুহ্।

তুই চুপ থাক ফাটা বেলুন, আমি এক হাতে তুরি বাজালে এমন হাজারটা ফুল আমার সমনে এসে হাজির হবে। আমি আবার ভদ্র ছেলে তাই মেয়েদের দিকে তাকাই না।

শাফিনের কথায় মুখ ভেঙচি কাটলো প্রীতি।

তখন হাতে পায়েস নিয়ে ছাঁদে আসলো পিয়াসা আর শাহানা বেগম।
পিয়াসা বেগম আসতে আসতে বললো কতদূর হলো তোদের সাজানো?

প্রীতি লাফ মেরে বলে উঠলো সব কিছু কমপ্লিট এবার ১২ টা বাজার অপেক্ষা।

পারফি ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললো আর ১৫ মিনিট আছে, প্রীতি যা ওকে নিয়ে আয় এবার।

প্রীতি বলে উঠলো এখন ইয়ানাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আনা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি গেলে বলবে প্রীতি তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে এতো রাতে ছাঁদে যাবো কি করতে। এতো রাতে ছাঁদে যাবো না, ছাদে ভূত আছে আরো কতো কি। এর চেয়ে ভালো ভাইয়া তুমি নিয়ে এসো গিয়ে কারণ তোমার সব কথা ও এক কথায় এই মেনে নেয়।

শাফিন পারফির পিঠে চাপর মেরে বললো যা যা বউকে নিয়ে আয়।

সবাই বললো পারফিকে নিয়ে আসতে তাই পারফি পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য তখন পিছু ডেকে পিয়াসা বেগম বললো তোর আব্বুকে আর আঙ্কেলকে উপরে পাঠিয়ে দিস। সেই কখন বলেছে আসছে এখনো আসার নাম গন্ধ নেই, তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আর এ জনমে শেষ হবে না।

পারফি সম্মতি দিয়ে পাভেল চৌধুরী আর শরীফ আহমেদকে ডেকে দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে প্রবেশ করতে ইয়ানার স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কম্বল জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।
পারফি আস্তে করে এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। কিছুক্ষণ ওই নিস্পাপ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে এখন না ডেকে কোনো উপায় নেই তাই আলতো করে ইয়ানাকে ডাক দিলো।

করো ডাকে ইয়ানার ঘুম হালকা হয়ে আসলো। পিটপিট করে চোখ খুলতে পারফিকে চোখে পড়লো। এতো রাতে পারফিকে ডাকতে দেখে তারাতাড়ি উঠে বসে বললো ক..কিছু হয়েছে? ডাকছেন কেনো?

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো রিলাক্স কিছু হয় নি। একটু উঠতে পারবে? কাজ আছে।

কি কাজ?

আগে উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসো তারপর বলছি।

ইয়ানা বাধ্য মেয়ের মতো উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলো।

পারফি ইয়ানার দিকে একটা তোয়ালে বাড়িয়ে দিলো। ইয়ানা সেটা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো এবার বলেন কি কাজ?

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বললো ছাঁদে যাবে?

এতো রাতে ছাঁদে যাওয়ার কথা শুনে ইয়ানা বেকুব বনে গেলো। এতো রাতে ছাঁদে যেয়ে কি হবে? নাকি কানে ভুল শুনছে? সঠিকটা জানার জন্য ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো কি?

ইয়ানার বিস্ময় বুঝে পারফি মুখ টিপে হাসলো তাই ফের বললো ছাঁদে যাবে?

পারফির মুখে ফের একি কথা শুনে ইয়ানা কি রিয়াকশন দিবে ভুলে গেলো। কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো এতো রাতে ছাঁদে যাবো কি করতে?

পারফি ইয়ানাকে একটু বিভ্রান্তে ফালার জন্য ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো প্রেম করতে……

পারফির মুখে প্রেম করতে শুনে ইয়ানার চোখ কপালে উঠে গেলো। চোখ গোল গোল করে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কি?

ইয়ানার রিয়াকশন দেখে হেসে ফেললো পারফি। তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো রিলাক্স মজা করছি আমি। আজকে চাঁদটা খুব সুন্দর ইচ্ছে করছে ছাঁদে যেয়ে মুহূর্তটা উপভোগ করতে কিন্তু একা একা যেতে ভয় লাগছে যদি ভূতে ঘাড় মটকে দেয়। আমি শুনেছি দুজন থাকলে নাকি ভূত আসে না। সবাই ঘুমাচ্ছে তাই সাথে নেওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছি না।

পারফির কথায় ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো পারফির দিকে। এই লোক কি এতো রাতে আমার সাথে মজা করছে? ঘুম থেকে উঠিয়ে কিসব আজগুবি কথা বলে চলেছে। ইয়ানা কিছু বলতে যাবে কিন্তু পারফি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো ছাঁদের দিকে।

সিঁড়ি পেরিয়ে চুপচাপ পারফির সাথে ছাঁদে উঠতে লাগলো ইয়ানা। ছাঁদের কাছাকাছি আসতে দেখতে পেলো সব কিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এবার ইয়ানার ভয় লাগতে লাগলো এতো রাতে পারফি কেনো ছাঁদে আসছে তা মাথায় আসছে না। ভয়ে আরেক হাত দিয়ে পারফির শার্টের হাতা খামছে ধরলো।

পারফি একবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছাদের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। তারপর ঠিক ১২ টা বাজতে দরজা খুলে ইয়ানাকে নিয়ে প্রবেশ করলো সাথে সাথে পুরো ছাঁদ আলোকিত হয়ে গেলো উপর থেকে কতোগুলো ফুল এসে পড়লো ইয়ানার গায়ে। আর সবাই চিল্লিয়ে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে ইয়ানা।

সব কিছু দেখে ইয়ানা বিস্ময়ে হতভাগ হয়ে গেলো। অটোমেটিক বিস্ময়ে মুখে হাত চলে গললো। এতো রাতে এমন একটা সারপ্রাইজ পাবে কল্পনাও করে নি। এক কথায় সব কিছু কল্পনার বাহিরে ছিলো।
ইয়ানা খুশিতে প্রীতিকে ঝাপটে ধরলো, এক এক করে শাহানা ও পিয়াসা বেগমকেও জড়িয়ে ধরলো। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো এভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

তারপর আস্তে ধীরে কেক কাটতে সবাই নিয়ে গেলো ইয়ানাকে। কেকের উপরে শুভ জন্মদিন স্নিগ্ধ ফুল নামটা দেখে চমকে গেলো। স্নিগ্ধ ফুল নামটার মানে বুঝলো না, কে স্নিগ্ধ ফুল? এই নামে তো কেউ ডাকে না। তখন হঠাৎ ইয়ানার মনে পড়লো সেদিন কিডন্যাপ হওয়ার পর পারফি ওকে এই নামে সম্মোধন করেছিলো। তখন বিষয়টা ওতোটা খেয়ালে ছিলো না কারণ তখন মাথায় ছিলো ভয় ভীতি। কিন্তু আজ খুব অবাক লাগছে এই নামটা দেখে।
অবশেষে সব বিস্ময় কাটিয়ে ইয়ানা ইয়ানা কেক কাটলো। এক এক করে সবাইকে খাইয়ে দিলো, সবাই ও ওকে খাইয়ে দিলো। কেক খাওয়া হলে পিয়াসা আর শাহানা বেগম ইয়ানাকে পায়েস খাইয়ে দিলো। সবার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে ইয়ানার চোখ চিকচিক করে উঠলো।

সব শেষে সবাই মিলে আরো কিছু সময় থেকে ছোটদের আড্ডা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বড়রা সবাই নিচে নেমে গেলো। এখন ছাদে আছে শুধু পারফি, ইয়ানা, শাফিন ও প্রীতি।

শাফিন ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো সারপ্রাইজ কেমন লেগেছে ফুল পরী?

ইয়ানা মুচকি হেসে বললো অনেক অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রীতি বলে উঠলো সব ধন্যবাদের প্রাপ্য আমি কজ সমস্ত ক্রেডিট কিন্তু আমার।

ইয়ানা প্রীতিকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো এত্তো গুলো ভালোবাসা তোর জন্য জানু।

শাফিন প্রীতির দিকে কিছু একটা ইশারা করতে প্রীতি ইয়ানাকে ছাড়য়ি বললো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তোমরা আড্ডা দেও আমি এবার যাই এ বলে ইয়ানাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।

প্রীতি যেতে শাফিন ও হামি দেওয়ার ভান করে বললো আমার ও মনে হয় ঘুম পাচ্ছে তোমরা থকো আমি যাই কেমন? এ বলে শাফিন ও চলে গেলো।

ইয়ানা বুঝলো যে ওরা প্লান করে ওদের একা ছাড়ার জন্য এভাবে চলে গেছে। এবার ইয়ানার আস্তে আস্তে অস্বস্তি লাগতে লাগলো। পুরো ছাঁদ জুড়ে পিনপতন নীরবতা। পারফি কিছুটা দূরে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে নীরবে। ইয়ানা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না।
তখন পারফি কোমল স্বরে বললো এদিকে আসো।

পারফির ডাকে ইয়ানা ধীর পায়ে পারফির কাছে এগিয়ে গেলো।

ইয়ানা কাছে আসতে পারফি ঠোঁট টিপে হেসে বললো চাঁদ দেখবে না?

পারফির কথায় ইয়ানা আকাশের দিকে তাকালো কিন্তু কোনো চাঁদ খুঁজে পেলো না৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছন্ন আকাশ জুড়ে, তা দেখে ইয়ানা পারফির উদ্দেশ্যে বললো আকাশে তো আজ কোনো চাঁদ এই নেই তার মানে আমাকে এখানে আনার জন্য ওগুলো বলেছিলেন তখন?

পারফি ইয়ানার দিকে তকিয়ে বললো আমিতো চাঁদ দেখতে পারছি।

ইয়ানা ফের আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো কোথায়?

আমার সামনে দাঁড়িয়ে।

পারফির কথার মানে ইয়ানা বুঝতে না পেরে ইয়ানা বললো মানে?

কিছুনা মজা করছিসলাম এ বলে পকেট থেকে একটা বকুল ফুলের ছোট একটা মালা বের করে ইয়ানা হাত ধরে আলতো করে হাতে পড়িয়ে দিলো মালাটা পারফি।

এদিকে ইয়ানা অবাক হয়ে তাকালো পারফির দিকে। বকুল ফুল ওর সবচেয়ে প্রিয় ফুল সেটা এই লোক জানলো কিভাবে তাই ভাবছে। সাথে খুব খুশি ও হলো প্রিয় ফুলের মালা উপহার পেয়ে। এটা ওর কাছে সবচেয়ে দামি উপহার। হাতে পড়িয়ে দেওয়া মালাটা আলতো করে ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো আপনি জানলেন কীভাবে আমার বকুল ফুল পছন্দ?

ইয়ানার কথার উত্তরে পারফি কোনো জবাব দিলো না। তাকিয়ে রইলো ইয়ানা হাস্যজ্জ্বল মুখপানে। সবাই এতো দামি দামি উপহার দিলো সেগুলো রেখে এই মেয়ে সামন্য ৫০ টাকার একটা ফুলের মালা পেয়ে কতোটা খুশি। মনে হচ্ছে সব দামী উপহার এই ফুলের কাছে তুচ্ছ।
পারফি ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বললো পছন্দ হয়েছে?

ইয়ানা ফুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম উপহার এটা আমার কাছে। আপনাকে এত্তোগুলো থ্যাংক ইউ।

ফুল পেয়ে ইয়ানাকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি মনে মনে বললো একটা ফুল যদি তোমাকে এতো আনন্দ দিতে পারে তাহলে এমন ফুল তোমাকে হাজার বার দিতেও আমি রাজি স্নিগ্ধ ফুল।

পারফি ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দরজার কাছে কিছু পড়ার শব্দ সেদিকে তাকালো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here