তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ৮

0
538

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৮

হাসি আনন্দের মাঝে কেটে গেলো কয়েকমাস। আজ প্রীতির জন্মদিন তাই সকাল সকাল প্রীতি চলে এসেছে ইয়ানাকে নিতে। ওর জন্মদিন আর ওর জানের বেস্টু যদি সারাদিন ওর পাশে না থাকে তাহলে কি হয়? তাই সকাল সকাল ইসহাক আহমেদের থেকে অনুমতি নিতে আসলো ইয়ানাকে নিয়ে যাওয়ার।

ইসহাক আহমেদ অনুমতি দিতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো প্রীতি। তারপর খুশি মনে ইয়ানাকে নিয়ে বের হলো।

এই প্রথম ইয়ানা প্রীতিদের বাসায় যাচ্ছে। আগে কখনো সেভাবে যাওয়ার সুযোগ হয় নি। কেমন যেনো একটু নার্ভাস লাগছে। এদিকে প্রীতি বকবক করেই যাচ্ছে। ওদের বকবকানির মাঝেই গাড়ি এসে থামলো বিশাল এক গেঁটের সামনে। প্রীতি ইয়ানার হাত ধরে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে ইয়ানার চোখে পড়লো একি রকম পাশাপাশি দুটি আলিশান বাড়ির দিকে। চারেদিকে বিভিন্ন ফল ফুল গাছে ভরপুর। যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো একটা পরিবেশ। বাড়ির চারপাশে কিছুক্ষণ পর পর দেখা যাচ্ছে কালো পোশাকধারী গার্ড। সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বাসায় প্রবেশ করলো প্রীতির সাথে ইয়ানা।

বাসায় প্রবেশ করতেই দেখা হলো পিয়াসা বেগমের সাথে। ভদ্রমহিলাকে ইয়ানা চেনে স্কুলে প্রীতির সাথে কয়েকবার গিয়েছিলো সেই থেকে পরিচয়। ভদ্রমহিলা ইয়ানাকে খুবি আদর করে। ইয়ানাকে দেখেই বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বললো কেমন আছে ইয়ানা মা? আন্টিকে একটু দেখতেও আসো না। সেই কবে দেখেছি তোমাকে আর দেখা হলো না। প্রীতির সাথে মাঝে মধ্যে বাসায় বসলে কি হয় শুনি?

পিয়াসা বেগমের এতো এতো অভিযোগ শুনে হেঁসে ফেললো ইয়ানা। পিয়াসা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো রাগ করে আন্টি এই যে দেখো তোমাকে দেখতে চলে এসেছি। তুমি কিন্তু আগের থেকে আরো সুন্দর হয়েছো।

পিয়াসা হেসে বললো শুনো দুষ্ট মেয়ের কাথা। আমার এখন আর সুন্দর হওয়ার বয়স আছে নাকি? তা কি অবস্থা মামনী কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?

আছি মা আলহামদুলিল্লাহ, এখন থেকে মাঝে মধ্যে প্রীতির সাথে এসো কেমন? আন্টিকে তো একদম ভুলেই যাও…।

আসবো আন্টি কিন্তু শর্ত আছে আমার একটা, এই শর্ত মানলে তোমাকে দেখতে আসবো বুঝলে।

কি শর্ত শুনি একটু..।

প্রীতির মতো আমাকেও তুই করে বলতে হবে তাহলে আসবো। তোমার মুখে তুমি ডাকটা ভালো লাগে না।

পিয়াসা হেঁসে বললো শুনো পাগলি মেয়ের কথা। আচ্ছা তুই করে বলবো। এবার প্রীতির রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় কিছু খেয়ে নিবি।

না না আন্টি কিছু খাবো না মাত্র খেয়েই আসলাম।

আচ্ছা তাহলে কফি করে দেই। সকাল সকাল কফি খেলে ভালো লাগবে। এই প্রীতি তুই আয় আমি কফি করে দেই তুই নিয়ে উপরে যা এ বলে পিয়াসা বেগম কিচেনে চলে গেলো।

প্রীতি ইয়ানার কাছে এসে বললো জানু সোজা উপরে উঠে যা প্রথমে যেই রুমটা পড়বে ওটাই আমার রুম। তুই যেয়ে ফ্রেশ হ আমি কফি নিয়ে আসছি।

ইয়ানা সম্মতি দিয়ে সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। উপরে উঠে বিপাকে পড়ে গেলো প্রথমে একটা রুম আর ঠিক সেই রুমের অপজিট পাশে আরেকটা রুম। এখন কোন রুমটা প্রীতির তা বুঝতে সক্ষম হলো না। অনেক সময় চিন্তা করে একটা রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। মৃদু চিৎকার দিয়ে পিছে ঘুরে বললো আ…আমি কিছু দেখি নি।

পারফি শাওয়ার নিয়ে মাত্রই বের হয়েছে। পড়নে শুধু ট্রাউজার, টি শার্ট পড়ার জন্য হাতে নিতেই কেউ রুমে প্রবেশ করাতে ভড়কে গেলো। কে প্রবেশ করেছে তা দেখতে থম মেরে গেলো। বুঝতে পারছে না স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি। পরক্ষণে মনে পড়লো আজ প্রীতির জন্মদিন তাই হয়তো প্রীতি নিয়ে এসেছে।

সকাল সকাল স্নিগ্ধ মুখটা দেখে পারফির মন ফুরফুরে হয়ে গেলো। তারাতাড়ি টি শার্ট পড়ে ইয়ানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো যা দেখার তাতো দেখেই ফেলেছো এখন চোখ বন্ধ করে কি লাভ? শার্ট পড়ে নিয়েছি এদিকে ঘুরতে পারো এবার।

পারফির কথায় ইয়ানার লজ্জায় গাল রক্তিম হয়ে উঠলো। চলে যাবে নাকি পিছু ঘুরবে বুঝে উঠতে পারলো না। এভাবে চলে গেলেও কেমন দেখায় তাই আস্তে আস্তে পিছে ঘুরে দেখতে পেলো পারফি সত্যি শার্ট পড়ে নিয়েছে।

এদিকে ইয়ানা ঘুরতেই পারফির হার্টবিট কয়েকটা মিস হয়ে গেলো। লজ্জা মাখা রক্তিম গাল দেখে বুকের ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেলো। কারো লজ্জা মাখা মুখশ্রী এতো সুন্দর ও লাগতে পারে? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো পারফির। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো তা বিড়াল ছানা কি মনে করে আমার রুমে?

ইয়ানা তুতলিয়ে বললো আ..আসলে প্রীতির র..রুমে যাওয়ার বদলে ভ..ভুলে এখানে চ..চলে এসেছি।

ইয়ানাকে এভাবে তোতলাতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো পারফি তারপর চোখের ইশারায় পিছে দেখিয়ে বললো ওটা প্রীতির রুম।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আ..আচ্ছা যাই তাহলে এ বলে ছুটে অপজিট পাশের রুমে ঢুকে হাপাতে লাগলো। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে এতো সময় কি ঘটে গেছে ভাবতেই বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।

পারফি ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বুকে হাত রাখে বললো এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। কে বলেছে এই মেয়েকে এতো স্নিগ্ধ হতে? এই স্নিগ্ধ মুখ দেখলে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি সেই খবর কি এই মেয়ে রাখে? না রাখে না এটা ভারী অন্যায়।

প্রীতি কফি নিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে পারফিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো কি হলো ভাইয়া তুমি এমন স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

বেখেয়ালি ভাবে পারফি বলে উঠলো স্নিগ্ধ পরীর জন্য।

পারফির কথায় প্রীতি কিছু না বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো মানে?

পারফির এবার হুঁশ আসলো। কি বলে ফেলেছে মনে পড়তে তারাতাড়ি বললো কিছু না। আমাকে না ঘেঁটে নিজের কাজে যা, যা ভাগ এ বলে দরজা লাগিয়ে দিলো।

প্রীতি রুমে যেতে যেতে বিরবির করে বললো পাগল হয়ে গেছে নাকি?
রুমে আসতে দেখলো ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে। প্রীতি ইয়ানার দিকে একটা কফি বাড়িয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দেখলো ইয়ানার গাল লাল হয়ে আছে। প্রীতি বলে উঠলো তোর গাল এমন লাল হয়ে আছে কেনো?

প্রীতির কথায় ইয়ানা থতমত খেয়ে গেলে তুতলিয়ে বললো ক..কিছু না। বেশ ঠান্ডা পরেছে এই জন্য হয়তো।

প্রীতি ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটলো না। ইয়ানার সাথে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিলো।

গল্পের মাঝে প্রীতি বললো চল তোকে শাফিন ভাইয়াদের বাসায় নিয়ে যাই। শাহানা আন্টির সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেই এ বলে নিচে নেমে চলে গেলো শাফিনদের বাসায়।
ড্রয়িংরুমের সোফায় ইয়ানাকে বসিয়ে দিয়ে প্রীতি চলে গেলো কিচেনে শাহানা বেগমের কাছে। যেয়ে হাত ধরে টানতে টানতে বললো তারাতাড়ি চলো দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।

এই সকাল সকাল আবার কাকে আনলি?

গেলেই দেখতে পারবে এবার তারাতাড়ি চলো এ বলে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো।

ইয়ানা বসে ছিলো তখন এক ভদ্রমহিলাকে এগিয়ে আসতে দেখলো। ভদ্রমহিলার চেয়াহারা স্পষ্ট হতে কেমন যেনো বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো এমন হলো ইয়ানা জানে না। মনের ভিতর কেমন অস্থিরতা ক্রমশ বারতে লাগলো।

ইয়ানা নিজেকে সামলে শাহানা বেগমকে সালাম দিলো। শাহানা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে ইয়ানার গালে হাত রেখে বললো মা-শা-আল্লাহ এতো দেখি একদম ফুটন্ত গোলাপ। এতদিন তোমার কথা অনেক শুনেছি প্রীতির মুখে। তোমার অনেক ছবিও দেখেছি, তুমি ছবির থেকেও দেখতে ভারী মিষ্টি।

পাশ থেকে প্রীতি বলে উঠলো একদম তোমার মতো কিউটের ডিব্বা।

কথাটা শুনে চমকে তাকালো ইয়ানা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো শাহানা বেগমকে। আসলেই সামনে থাকা ভদ্র মহিলা দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর।

শাহানা বেগম ইয়ানাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো বসো মা। তা কি অবস্থা কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আপনি কেমন আছেন?

শাহানা বেগম হেঁসে বললো আমাকে প্রীতির মতো তুমি করে বলতে পারো সমস্যা নেই। তোমার এই মিষ্টি মুখে আপনি মানাচ্ছে না।

ইয়ানা খুশি হলো কথাটা শুনে ওর নিজের ও কেমন আপনি বলতে কেমন কেমন লাগছিলো। তারপর শাহানা বেগমের সাথে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো।

কথায় মাঝে ইয়ানা বললো শাফিন ভাইয়া, আঙ্কেল বাসায় নেই?

তোমার আঙ্কেল কাজে গেছে আর শাফিন এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এই ছেলেকে নিয়ে আর আমি পারি না প্রীতি মা যাতো একটু ডেকে নিয়ে আয়।

প্রীতি আচ্ছা বলে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। এক দৌড়ে শাফিনের রুমের সামনে এসে থামলো। দরজা চাপানো ছিলো তাই সহজে রুমে প্রবেশ করতে পারলো।

শাফিনকে জব্দ করার ফন্দি আঁটতে লাগলো। মাথায় বুদ্ধি আসতে পা টিপে টিপে চলে গেলো ওয়াশরুমে। যেয়ে এক মগ পানি নিয়ে আসলো শাফিনকে ভিজিয়ে দৌড় দিবে সেই নেয়াত করে।

যেইনা পানি মারতে যাবে অমনি শাফিন হেচকা টান মারলো যার দরুন প্রীতির হাত থাকা পানি হাত ফস্কে পুরোটা নিজের গায়ের উপরেই পড়ে গেলো। সকাল সকাল এই ঠান্ডা পানি নিজের উপর পড়তে কেঁপে উঠলো প্রীতি
কি হয়েছে বুঝে উঠতে কাঁদো কাঁদো ফস করে বললো আমার উপরে পানি ফেললে কেনো?

প্রীতির এক হাত শাফিন ধরা ছিলো। প্রীতির কথায় হাতটা টান দিয়ে প্রীতিকে ওর দিকে একটু ঝুকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো নেক্সট টাইম আমার সাথে পাঙ্গা নিতে হলে এই কথা দশবার ভাববি।

প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো তার মানে তুমি জেগে ছিলে ঘুমের নাটক করছিলে?

শাফিন বাঁকা হেসে প্রীতিকে ছেড়ে উঠে প্রীতির দিকে তোয়ালে ছুঁড়ে মেরে ওয়াশরুম চলে গেলো। প্রীতি রাগে গিজগিজ করতে করতে হাত-পা মুছতে লাগলো। জামা অনেকটা ভিজে গেছে।

প্রীতি এখন পড়ে গেলো বিপাকে এভাবে নিচে যাবে কিভাবে?
কি করবে বুঝতে না পেরে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।

শাফিন ফ্রেশ হয়ে এসে প্রীতিকে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে দেখে বললো সকালে কি আন্টি খেতে দেয় নাই যার জন্য নখ খাচ্ছিস ওয়াক।

প্রীতি ক্ষেপে গিয়ে বললো তোমার জন্য সব হয়েছে। আমাকে বিপাকে ফেলে দিয়ে এখন আসছে ওয়াক ওয়াক করতে।

শাফিন ভ্রু কুঁচকে বললো আমি কি করলাম?

আমার উপরে পানি ফেলে দিয়েছো এখন আমি এভাবে নিচে যাবো কিভাবে?

শফিন একবার প্রীতির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে যেতে যেতে বললো উচিৎ শিক্ষা হয়েছে এবার বোঝ ঠেলা।

প্রীতি দাঁত কটমট করে তাকালো শাফিনের যাওয়ার পানে তারপর ওরনা ভালো করে পেচিয়ে নিয়েছে এখান থেকে এখন কোনো রকম পালাতে পারলেই হয়েছে।

শাফিন নিচে যেয়ে ইয়ানাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো। অবাকের রেশ কাটিয়ে হেঁসে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো আরে ফুল পরী যে কখন আসলে?

এইতো ভাইয়া কিছুক্ষণ আগেই আসলাম। কেমন আছেন?

যা বাবা আমাকে ভাই বানালে আবার আপনি করেও বলছো এটা কিন্তু ঠিক না। এখন আপনি ডেকে পর করে দিচ্ছো।

ইয়ানা হাসলো হালকা। এই দুই পরিবারের সবাই কতটা ভালো। কয়েকদিনের পরিচয়ে সবাই কতটা আপন করে নিয়েছে ওকে। মনে হয় এই পরিবারের কেউ একজন ও, এতটা আপন করে নিয়েছে।

ইয়ানা, শাফিন আর শাহানা বেগম মিলে গল্প করছিলো তখন সেখান দিয়ে একপ্রকার ছুটে যেতে যেতে প্রীতি বলে উঠলো আন্টি তোমরা গল্প করো আমি একটু আসছি।

প্রীতির কাজে শাহানা বেগম বলে উঠলো ওর আবার হলো কি?

ইয়ানাও বুঝলো না প্রীতির এভাবে ছুটে যাওয়ার মানে। শুধু শাফিন বুঝলো কেনো এভাবে পালাচ্ছে। প্রীতিকে এভাবে জব্দ করতে পেরে মনে মনে বেশ আনন্দ পেলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here