বুকপকেটের_বিরহিণী কলমে: মম সাহা ১.

0
584

#বুকপকেটের_বিরহিণী
কলমে: মম সাহা
১.

হবে এক শিউলি ফোঁটা ভোর, কৃষ্ণচূড়ায় আবিষ্ট এক পৃথিবী। সেদিন ছিল করবীর মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ। বকুলের আঙিনা যদিও পুষ্পরেণু দিয়ে ভোরে উঠেছিল কিন্তু করবীর মনে ছিল একরাশ পৃথিবী ভাঙা দুশ্চিন্তা। টিউশনির সব টাকা মাস্টার্সের ভর্তির পেছনেই দিতে হচ্ছে, অথচ মাসের আজ সবে পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বাকি মাস টুকু চলবে কীভাবে?
করবীর ব্যস্ত রুনুঝুনু ভাবনায় ঝনঝনিয়ে ছন্দপতন হলো তার বাবার কণ্ঠে,
“রক্তকরবী, খেতে আয়।”

করবী ব্যস্ত হাতে কাগজপত্র গোছগাছ করে নিল দ্রুত। কাঁধে ব্যাগটা নিয়েই ছুটে গেল বারান্দায়। তার ছোটো ঘরের মধ্যবিত্ত বারান্দায় জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বলার মতন কিছুই নেই। আছে একটি শূন্য পাখির খাঁচা আর দু’টি বেতের চেয়ার। পাখির খাঁচা শূন্য বলে যে করবীর পাখি নেই তেমনটা নয়। সকাল হলেই করবী খাঁচা খুলে দেয়। তার পোষমানা বন্ধু টিয়াপাখিটি তখন হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসে খাঁচা থেকে। পাঁচ-ছ’ হাত বারান্দাটিতেই ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে থাকে মনের সুখে। পাখিটির উড়ার গতি দেখলে মনে হবে না এটি বারান্দা, বরং মনে হবে এটি খোলা আকাশ।

এই পাখি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত হলেও করবীর তার পেছনে বেশ শক্ত-পোক্ত একটি যুক্তি আছে৷ তার ভাষ্যমতে— বন্দিনীর মনে কখনো প্রেম জাগে না। প্রেম জাগে তো মুক্তিচারিণীর মনে। বন্দিনী সদা চেষ্টা করে কীভাবে বাঁধন মুক্ত হওয়া যায়, কীভাবে একটু প্রাণ খুলে বাঁচা যায়। আর বাঁধন মুক্ত থাকার ভাবনায় সে এতই মগ্ন থাকে যে ভালোবাসার গাঢ় হিসেব-নিকেশ কষার আর সুযোগ হয়ে উঠে না। কিন্তু মুক্তিচারিণী তো সদা মুক্ত। সে সর্বক্ষণ আকাশ-পাতাল ঘুরে এসে দিনশেষে একটি আশ্রয়স্থল চায়। যেখানে একটু বাঁধন থাকবে, একটু ভালোবাসা থাকবে, একটু প্রেম থাকবে। যার পায়ে শিকল সে ভালোবাসাকেও কারাগার ভাবে। আর যার ডানায় উড়ার স্বাধীনতা সে ভালোবাসাকে নিজের দিনশেষের নীড় ভাবে।
আর এই যুক্তি অনুযায়ীই করবী তার পাখিটিকে প্রতিদিন খাঁচা খুলে উড়তে দেয়। চলে যাওয়ার অনুমতি দেয় বহুদূর। কিন্তু পাখিটি যায় না। সারাদিন বারান্দায় ডানা ঝাপটাঝাপটি করে স্বেচ্ছায় ফিরে যায় খাঁচায়। পাখিটির থেকে যাওয়ার এই নিয়মে করবী হাসে। অবাক চোখে তাকিয়ে সে উপলব্ধি করে, ‘যে থাকতে চায় সে ছোটো বারান্দাকেও আকাশ ভেবে থেকে যায়। আর যে না থাকার সে আকাশকেও খাঁচা ভেবে মুক্তি চায়।’

বারান্দায় চঞ্চল ডানায় উড়ে বেড়ানো টিয়াটি করবীকে দেখেই বার কয়েক আহ্লাদে ডানা ঝাপটালো। তার আদুরে কণ্ঠে ডাকল,
“সই সই, মনের কথা কই?”

করবী হাসল, বলল, “আমারে না কইলে, কারে কইবি, বাণী? কইয়া ফেল।”

করবীর উত্তর শুনেও টিয়াটি তার আর মনের কথা বলে না। বলবে কীভাবে? সে যে কেবল এতটুকুই বলতে শিখেছে বাবার কাছ থেকে! বাকিটুকু যখন শিখবে, তখন টিয়াও নিশ্চয় তার মনের কথা বলবে। আচ্ছা, টিয়াটিরও কী মন আছে? হয়তো আছে। মন আছে বলেই তো করবীর ভালোবাসা বুঝে থেকে গেছে। মন না থাকলে তো সে কবেই উড়াল দিত, বিশাল আকাশের খুঁজে। এই পৃথিবীতে সকলেরই মন আছে। ঘাস, পাতা, আকাশ, নদীর……. কেবল মন নেই মানুষের। তাই তো তারা বিশাল পেলেও বিস্তরের লোভে উড়ে যায়। প্রেম, ভালোবাসার পিছুটানও তাকে আটকে রাখতে পারে না।

যথারীতি টিয়াপাখির থেকে বিদায় নিয়ে করবী উপস্থিত হলো রান্নাঘরে। ছোট্টো রান্নাঘর তাদের। সেখানেই তারা বাবা-মেয়ে পেট পুরে, মন ভোরে খেয়ে নিতে পারে। বাবা-মেয়ের ছোটো এই সংসার। ছোটো দু’টো ঘর, একটি ছোটো টিয়ার ছোটো বারান্দা নামক আকাশ আর ঘূণেধরা কয়েকটি আসবাবপত্র ছাড়া তেমন কিছুই নেই। হ্যাঁ, আরেকটি জিনিস অবশ্য আছে, তা হলো আধ পুরোনো এই রুমের পাঁচিল জুড়ে অভাব-অনটনের এক মুঠো সুখ।
গরম ভাতে সিদ্ধ আলুর অর্ধেকটা ঘি দিয়ে মাখিয়ে মুখে পুরে নিতে নিতে করবী বাবাকে শুধাল,
“বাজার লাগবে, আব্বা? কিছু তো নেই মনেহয়। আমাকে বলো কী লাগবে, নিয়ে আসব।”

তৈয়ব হোসাইন তখন ডাল নামাচ্ছিলেন। মেয়ের কথায় এক গাল হেসে বললেন, “দু’টো ডিম নিয়ে আসিস তো। গত চার-পাঁচ দিন যাবত এক আলু সিদ্ধ দিয়েই ভাত খাচ্ছিস। সারাদিন এত খাটাখাটুনি করিস, শরীরে তো শক্তি লাগবে না-কি!”
করবী মাথা নাড়ায়, আবারও ভাত মুখে পুরে নিয়ে বলে, “ভাবছি আজ মাছ আনবো। ডাক্তার বললেন তোমার প্রোটিনের অভাব। মাছ-মাংস আনতেই হবে।”

মেয়ের কথায় বড়ো বিরক্ত হলেন যেন বাবা। মুখ-চোখ কুঁচকে বললেন, “ডাক্তারদের কথা ধরিস না তো এত। আজকালকার ডাক্তারদের ভরসা হয় না। একবার তোর হালিম চাচাকে ডাক্তার বলল তোর চাচার নাকি ক্যান্সার, বেশিদিন বাঁচবে না। অথচ তোর হালিম চাচা বেশিদিন বাঁচল, শেষমেশ মরল স্ট্রোক করে।”
করবীর এই গল্প মুখস্থ। এটা নতুন না। যতবার সে তার বাবাকে ডাক্তারের কথা বলে, ওষুধের কথা বলে, খাবারের কথা বলে ঠিক ততবার তার বাবা এই গল্প শুনাবেন। কিন্তু সে তো জানে, তার বাবা যে ভিতর ভিতর জানেন মেয়ের একেকটা দিন কত যুদ্ধ করে যায়! তাই মেয়ের কাঁধের চিন্তার ভার কমাতে এসব গল্প বুনেন। বেঁচে থাকার যুদ্ধে কিছুটা ধৈর্য আরেকটু বাড়ানোর গল্প সাজান।

করবীর খাওয়া শেষ হয় ঝটপট। মুখ ধুয়েই উঠে যায় ব্যস্ততা নিয়ে। বাবার ওষুধের প্রেসক্রিপশনটা আলগোছে ব্যাগের ভেতর নিয়ে নেয়। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।
ব্যাগে টাকা মোট তেরো হাজার৷ তার মাঝে পাঁচ হাজার চলে যাবে বাসা ভাড়ায়, আর থাকবে আট হাজার। ভর্তির জন্য লাগবে চার হাজার এবং অবশিষ্ট হাতে থাকবে আর চার হাজার। এই ব্যয়বহুল বাজারে চার হাজার টাকা দিয়ে সে কীভাবে মাস পার করবে তার কিছু কাল্পনিক হিসেব করে নেয়। কিন্তু হিসেব শেষে বিরাট গড়মিল। এত অল্প টাকায় মাস টেনে নেওয়া যে সম্ভব নয়! হতাশার শ্বাস ফেলে। টিউশনি করিয়ে আর হবে না। একটা চাকরি অন্তত পেতেই হবে।

নিম্ন-মধ্যবিত্তের এই অভাব অনটনের হিসেব মিলাতে মিলাতে করবী চলে এলো মেইন রাস্তায়। মেইন রোড থেকে তাদের বাড়িটা বেশ খানিকটা ভেতরে। এবং বহু পুরোনো দু’তালার এক ফাটল ধরা দালান সেটা। বাড়িটিতে মোট চারটা পরিবার থাকে এবং চারটা পরিবারেই করবীদের মতন। টাকা-পয়সা থাকলে কেউ এমন একটা বাড়িতে থাকতে চাইতো না। নেই বলেই থাকে। বাড়ি ভাড়াও তো কম। শহরে এতে কমে সচারাচর বাসা পাওয়া যায় না।

করবী ঘড়িতে সময় দেখল। অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কলেজ পৌঁছাতে হবে। তাই আজ টাকা-পয়সার হিসেব না করেই বাস ধরল। রঙ থিতিয়ে আসা ওড়নাটা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখটা মুছে নিল। আজকাল বড্ড গরম পড়েছে! নাকি তার শরীর এখনো আরামপ্রিয়! শরীর কী ভুলে গেছে? বাবার যে রোজগার নেই বহুদিন!

২.

ভার্সিটির কাজ মেটাতে মেটাতে করবীর প্রায় লেগে গেল অনেকটা সময়। তখন অন্তরিক্ষে ভানুর তেজ বেশ। ঘড়ির কাটায় সময়টা দেখে নিল- ৪:২০। তার পেট ক্ষুধায় মুচড়িয়ে এলো। সেই সকাল আটটায় খেয়েছে, খিদে লাগা স্বাভাবিক। অথচ তার এখন পড়াতে যাওয়ার সময় হয়েছে। বাসায় গিয়ে খেয়ে আসবে তা সম্ভব না। বাহিরে হোটেলে খাওয়ার বিষয়টাকে তার টাকা অপচয় বলে মনে হলো।
অতঃপর সাত-পাঁচ না ভেবে সে কলেজের সামনের পার্কটাতে ঢুকে পড়ল। একটি খোলামেলা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। একটি শুকনো রুটি আর চায়ের অর্ডার দিয়েই কিছুক্ষণ ঝিমিয়ে নিল। করবী দেখতে বেশ সুন্দর। অপ্সরা কিংবা পরীর মতন। মুখে কোনো প্রসাধনী ছাড়াই তাকে মনে হচ্ছে রূপকথার সিন্ড্রেলা। মাঝারি আকারের চুল গুলো ঢিলে খোপায় ছেড়ে রেখেছে কাঁধে। চোখে আছে গতদিনের কাজলের লেপ্টে যাওয়া কিছুটা ছায়া। করবীর ঝিমিয়ে যাওয়া মুহূর্তেই তার চা আর রুটি এলো। ভীষণ খিদে থাকায় সে বেশ তাড়াহুড়ো করেই খাবারটা খেলো। এতটুকু খাবারেই তার রক্ষসের মতন খিদেটা নিভে গেলো দ্রুত৷ সে উঠে গেলো বিল দিতে এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটল বিপত্তি। বিল দিতে গিয়ে সে আবিষ্কার করল তার ব্যাগে অবশিষ্ট টাকা গুলো নেই। কোথায় গেল? করবীর বুকে হুট করেই মোচড় দিয়ে উঠল। ততক্ষণে দোকানদার তাড়া দিলেন,
”আফা, ট্যাকা ডা দেন।”

করবী ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজল। একবারের জায়গায় দু’বার। দু’বারের জায়গায় চারবার। কিন্তু টাকাটা নেই, নেই। তার এখনো মনে আছে ভর্তির টাকাটা দেওয়ার সময়ও বাকি টাকা গুলো ছিল। তারপর……. ভিড়ে দাঁড়িয়ে ফর্মালিটি গুলো পূরণ করার সময়ই কী তার টাকা গুলো কেউ নিয়ে নিল! করবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আসার সময় বাড়িওয়ালাকে পায়নি বলে বাসা ভাড়াটাও দিতে পারেনি, সব টাকা ব্যাগই ছিল। তার এক মাসের সম্বল। সব শেষ হয়ে গেলো, সব শেষ।
দোকানদার হয়তো করবীর লাল হয়ে যাওয়া মুখমন্ডল দেখে কিছু আঁচ করতে পারলেন। আর মানুষের স্বভাব অসহায়কে আরও অসহায় করে দেওয়া। সেই স্বভাব অনুসারেই দোকানদার হাঁক-ডাক শুরু করলেন। প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই রুক্ষ হয়ে বললেন,
“ট্যাকা না থাকলে আপনারা খাইতে আসেন ক্যান? ট্যাকা দেন। নাহয় কিন্তু খবর আছে।”

দোকানদারের আকস্মিক হাঁক-ডাকে করবী আরও দিকভ্রান্ত হলো। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে মলিন কণ্ঠে বলল,
“চাচা, আমার টাকাটা পাচ্ছি না। একটু আগেও টাকা গুলো ছিল। এখন পাচ্ছিনা।”

দোকানদার খেপলেন, “মগের মুল্লুক নাকি? আমার ট্যাকা দিবেন এহনি। আপনাগো ধান্দা আমরা জানিনা ভাবছেন।”

করবী হাতজোড় করল, মিনতি স্বরে বুঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু দোকানদার বুঝতে নারাজ। একে একে রঙ্গ তামাশা দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ল। কেউ করবীর হয়ে সুপারিশ করল টাকাটা মাফ করে দেওয়ার আর কেউ দোকানদারের হয়ে হুমকিধামকি দিল।
ঠিক এই মুহূর্তে এসে লজ্জায়-অপমানে করবীর মাথা ঘুরে গেল। ইশ্, জীবন তার পরীক্ষা এমন বাজে ভাবে নিচ্ছে! শেষমেশ কিনা সম্মানের নিলামি দেখতে হচ্ছে। হাহ্।

ঠিক সেই মুহূর্তে বাক-বিতন্ডার একই ধরণের কথার বিপরীতে একটি ভিন্ন কথা ভেসে এলো,
“কত টাকা হয়েছে? আমি দিচ্ছি।”

ব্যস্, সকল উৎসুক দৃষ্টি ঘুরে গেল সেই ব্যাক্তির দিকে। করবীও তাকাল ফ্যালফ্যাল করে। একটি পাঞ্জাবি পরিহিত শ্যামলা বর্ণের সুপুরুষ এগিয়ে এলো। একশ টাকার একটি নোট দোকানদারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ভার্সিটির সামনে দোকান বসিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর দুঃখই যদি না বুঝেন তাহলে তো আপনার এই দোকান এখানে টিকবে না, চাচা। রাখুন টাকাটা। ওর বিলটা রেখে বাকি টাকাটাও রেখে দিয়েন নিজের কাছে। ভবিষ্যতে আবার কেউ এমন বিপদে পড়লে তাকে এমন বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না। আমার এই টাকাটা ধরুন তার জন্য আগে থেকে দিয়ে রাখলাম।”

জনসমাগম অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। সেই সুন্দর চিন্তার পুরুষটি এবার জন সমাগমের অবাক দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বলল,
“ভিড় না করে কেউ একজন সাহায্য করলেই তো পারতেন। মানুষের বিপদে মজা নেওয়ার মতন অমানবিকতা নিয়ে বেঁচে না থাকলেও পারেন আপনারা।”

ব্যস্, এতটুকু কথাতেই ভিড় খালি হয়ে গেলো। জনশূন্য হয়ে গেলো জায়গাটি। কেবল একধারে বহুক্ষণ যাবত এখানে বসে ঝিমুতে থাকা কুকুরটিই অবশিষ্ট রইল।
আগন্তুকের এহেন সাহায্যে কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে গেল করবী। বারংবার বলতে লাগল,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে কী যে হতো! ধন্যবাদ।”

আগন্তুক মুচকি হাসল। করবীর হাতে পাঁচশ থাকার একটি নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা রাখো। টাকা তো বোধহয় হারিয়ে ফেলেছো, রাস্তায় তোমার প্রয়োজন হতে পারে। পরে সময় করে নাহয় শোধ করে দিও।”
করবী দোনোমনা করে টাকাটা নিল। এখন অতিরিক্ত আত্মসম্মান দেখানো মানেই আবারও রাস্তায় কোথাও না কোথাও সম্মানহানির মুখোমুখি হওয়া। এরচেয়ে টাকাটা নিয়ে নেওয়াই উত্তম। করবী টাকাটা নিল এবং সাথে আগন্তুকের ফোন নাম্বারটিও নিল৷ কথা দিল খুব দ্রুতই পরিশোধ করে দিবে টাকাটা। অপরিচিত লোকটি হাসল, ঘাড় কাঁত করে বলল,
“দিও সময় করে। সমস্যা নেই। আমাকে ভার্সিটিতেই পাবে। আমি ভার্সিটির পুরোনো স্টুডেন্ট। সকলে তিমির ভাই বলেই ডাকে। নাম বললেই হবে। আজ যাই। আমার কাজ আছে।”

করবী ঘাড় কাঁত করল। তবে কিছু একটা মনে হতেই বলল,
“আমার নাম করবী। পরে যদি না চিনেন তাই নামটা জানিয়ে রাখলাম। ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করব না, স্যার। কখনো যেন আপনার উপকারে আসি, দোয়া করবেন।”

তিমির ঘাড় কাঁত করল, খানিক হেসে বলল, “স্যার ডেকে এত ফর্মাল হওয়ার প্রয়োজন নেই, রক্তকরবী। তুমি আসতে পারো এখন।”
করবী আর কথা বাড়াল না। লোকটা তার সাথে কথা বাড়াতেও চায় না বুঝতেই সে পথ ধরল। পেছন থেকে সে তিমির নামক লোকটার রাশভারী কণ্ঠ শুনতে পেলো। লোকটা কাউকে ডেকে যেন বলছে, ‘ইমন, কলেজের সামনে এমন দোকানদার বসে কীভাবে? উনার একটা ব্যবস্থা করে দে শীগ্রই। এমন অস্বস্তিতে ফেলা মানুষজনের প্রয়োজন নেই এখানে।’

আর কিছু বলছে লোকটা কিন্তু করবী শুনতে পায়নি। অনেকটা পথ যাওয়ার পর সে আবার পিছু ফিরে দেখলো। কিন্তু শ্যামবর্ণের সেই সুদর্শন পুরুষটি ভুল করেও তাকায়নি একটি বার। তবে করবী তাকিয়েছে। তার চব্বিশ বছরের জীবনে সে এই প্রথম কোনো পুরুষকে দ্বিতীয়বার ঘুরে দেখেছ। অথচ সে পুরুষ কি-না একবারও চাইলো না? এই প্রথম কেউ বোধহয় করবীর আগুন ফুল্কির মতন রূপ দেখেও আগ্রহ নিয়ে তাকালো না!

(সূচনা পর্ব)

চলবে……?

[রেসপন্স করবেন কেমন? ভালোবাসা অফুরন্ত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here