#এলোকেশী_সে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বসংখ্যাঃ১২
মায়ের কথার পিঠে একটা প্রত্যোত্তরও করল না তোড়া। মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল সারাক্ষণ। মায়ের কথাগুলো এই মুহূর্তে তাকে আবার ভাবাচ্ছে। ভাবনাগুলো মাথা চাড়া দিতেই কপালের পাশের রগটা স্পষ্ট হলো এবার। চোয়ালও শক্ত হলো। কিন্তু নিজের সমস্ত ক্রোধ সংবরণ করে সে বলল -“আমাকে নিয়ে এতটা যদি ভাবতে, তাহলে কি পরজীবীর মত পড়ে থাকতে এখানে এত অপমান, অসম্মান সহ্য করে! কতটুকুই বয়স হয়েছিল তোমার তখন? চলে যেতে পারতে, নতুন করে পড়া শুরু করতে পারতে। কিছুই করোনি। উল্টো নিজের বাবার উপর রাগ করে এখানেই পঁচে গলে আছো। আচ্ছা আম্মু, তুমি যদি তোমার বাবার অসঙ্গতিপূর্ণ কাজের প্রতিবাদস্বরূপ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারো তাহলে আমাকে কেন বাধ্য করছ আমার জন্মদাতার বাধ্য হয়ে থাকতে?”
মেয়ের কঠিন প্রশ্নের কাছে মাথা নত করল রুবাবা। সে নিজেও জানে না কেন সে পড়ে আছে। সে তো চলে যেতে পারত কিন্তু বারবার মনে হয়েছিল মেয়েকে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ দিতে ব্যর্থ হবে। তখন তার ছোট্ট মস্তিষ্কে যতটুকু বুদ্ধি এঁটেছিল ততটুকুই তো সে করেছে। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কথায় তারও মনে হয়েছিল থেকে যাওয়াটা উত্তম হবে। আজ মেয়ের কঠিন কঠিন কথার পিঠে তার একটাই ভাবনা উদয় হয়েছে -সেদিন যদি ঘুরে দাঁড়ানোর সাহসটা রাখত! নতুন করে পড়াশোনা করত! তাহলে আজ স্বনির্ভর হয়ে ঐ লোকটার মুখের উপর উচিত জবাব দিতে পারত। বৃদ্ধা শাশুড়ির অনুনয় উপেক্ষা করে যদি পা রাখত চৌকাঠের ওপারে, তাহলে হয়ত মেয়ের জীবনটাও এতটা কঠিন হতো না। সে তো ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেনি এত এত আভিজাত্য উপেক্ষা করে মেয়েটা বাবা নামক মানুষটার অন্যায়ের বিপক্ষে যাবে।
মায়ের নীরবতায় এবার দ্বিগুণ ফুঁসে উঠল তোড়া। তবুও স্বরটাকে যথাসম্ভব মিহি করে বলল -“আচ্ছা বাদ দিলাম ওসব। তুমি তো হাতের কাজ পারো, বেত দিয়ে সুন্দর বুনন পারো, কত সুন্দর ছবি আঁকতে পারো। এগুলো একটাকে অবলম্বন করেও তো আমাদের দুজনের চলার মত উপার্জন করতে পারতে। কেন ঐ মানুষটার অনুগ্রহে টিকে আছো?তোমায় আমি স্পষ্ট বলে দেই আম্মু – আমি নিজের খরচটা নিজে ম্যানেজ করার জন্য যতটুকু শ্রম দেই তুমি ঐ লোকটার কাছ থেকে আমার নাম করে টাকা নিয়ে সেই শ্রমকে চরম অবজ্ঞা করো। তোমার সিদ্ধান্ত ভুল, ভাবনা ভুল। তুমি ভেবেছো টাকা আদায় করে লোকটাকে চাপে রেখেছো। আদতে কি তাই! ওনার অঢেল অর্থ থেকে সামান্য টাকা সরে গেলে ওনার কিছু হবেনা। তুমি টাকা নিওনা, সব ফেরত দাও। বাঁচার মত বাঁচো, তাহলেই দেখবে কতটা মানসিক টানাপোড়েনে তিনি থাকেন। তোমার হাসিমুখটা তাকে বিব্রত করবে, তোমার স্বনির্ভরতা তাকে লজ্জায় লাল করবে। শোন আম্মু, কোন দায়িত্ব পালন না করে শুধু কাগজের টাকাগুলো দিয়ে ওনাকে দায়মুক্ত হওয়ার শান্তিটুকু দিওনা। আমি চাই উনি যন্ত্রণায় ঝর্ঝরিত হোক।”
কথাটুকু শেষ করেই দম ছাড়ল তোড়া। নিজের এলোমেলো চুলগুলো আবার খোঁপার বাঁধনে বেঁধে শাড়িতে রং করতে বসে গেল। ক্যানভাসে আটকানো লাল জমিনের শাড়িতে পদ্মফুল এঁকেছিল গতকাল। আঁচলের একাংশে রং তুলির ছোঁয়া দেয়া বাকি ছিল।
পদ্মফুলের পাপড়িতে বেবী পিংক কালারটা দিতেই তোড়া শুনল তার মায়ের স্বরটা -“এখন এসব নিয়ে বসছিস কেন? ঘুমাবি কখন?”
দ্বিতীয় পাপড়িতে তুলিটা ছুঁইয়ে শাড়ির পানে দৃষ্টি রেখেই তোড়া জবাব দিল -” সামনের মাসে কলেজ মাঠে একটা মেলা হবে। উদ্যোক্তারা আসবে তাদের পণ্য নিয়ে। আমিও যাব আমার শাড়িগুলো নিয়ে। যা আমার আয়ত্তে আছে তাকে কেন কাজে লাগাব না বলো তো! হয়ত কিছু রাত কম ঘুমিয়ে কাটাবো, হয়ত পরিশ্রমের পাল্লাটা একটু ভারী হবে। তাতে যদি আমার পরিচিতি বাড়ে তাহলে ক্ষতি কোথায়?”
মেয়ের দৃঢ়তায় হার মেনেছে মায়ের ভয় আর সন্দেহ। কিন্তু এই বয়সের আবেগটা মেয়েকে ঠিক কোন পথে নিবে তা নিয়ে তিনি দ্বিধান্বিত। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশব্দে মেয়ের ঘরটা ত্যাগ করলেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চোখের জলগুলো মুছে নিলেন সন্তর্পণে। একদিকে মেয়ে আর অন্যদিকে অহনের পাগলামির খবর যদি সবার কানে পৌঁছে তখন তো তোড়ার দোষটাই দিবে সবাই। সমাজে সব দোষের দায় তো মেয়েদেরই। কথাটা রুবাবার মনে হতেই হাত পা অবশের মত লাগছে। মেয়েটা সে সব সমালোচনার জবাব দিতে পারবে তো! নাকি হার মানবে!
আর ভাবতে পারছে না রুবাবা। মাথাটা যেন ফেটে যাবার জোগাড়। একটা গভীর ঘুম দরকার, সেই ঘুম যেন চিরতরে শান্তি দেয় তাকে। এমন উদ্দেশ্যহীন জীবনে সত্যি সে অতিষ্ঠ।
_________
ঘরের কাজ নিয়ে বাড়ির বউরা ব্যস্ত ভীষণ। এই সময়টায় বাড়ির সব পুরুষই নিজ নিজ কর্মস্হলে থাকে। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রাটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় অয়ন বাড়িতেই আছে৷ শুধু জ্বর নয়, সেই সাথে সর্বাঙ্গে তীব্র ব্যাথা। আরক্ত মুখটা জ্বরের তোড়ে জ্বলছে যেন। এতক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকলেও এখন সে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো বসার ঘরে। ক্ষীণ কন্ঠে এক কাপ চা চাইল মায়ের কাছে। সে যেখানেই থাকুক, সারাদিনে কয়েক কাপ চা না হলে চলে না তার।
মিনিট পাঁচেক বাদে চায়ের কাপ নিয়ে হাজির হলো তোড়া। অনিমার হাতে কাজ থাকায় সে নিজেই চা বানিয়ে এনেছে। এতক্ষণ সে-ও অবশ্য সবার হাতে টুকটাক এটা সেটা কাজ করছিল।
চায়ের কাপটা নিতে নিতে অয়ন প্রশ্ন করল -“কলেজে যাসনি?”
তোড়া ব্যস্ততার ভঙ্গিতে বলল -“প্রতিদিন কলেজ যেতে ভালো লাগে না।”
চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে অয়ন উপরে নিচে মাথা দুলালো। এমন ভাব করছে যেন গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে গভীর জ্ঞান পেয়েছে। আরেক চুমুক চা খেয়ে বেশ গম্ভীর স্বরে বলল -“বিয়ে করে নে। বরের পা টিপে দিবি আর বাচ্চার নাক দিয়ে বেরোনো প্যারাসুট তেল মুছে দিবি। কি সুন্দর চাকরি। আহা! ভাবতেই মন জুড়িয়ে যায়।”
অয়নের গোছানো দুষ্টুমিটুকুতেই বেশ আশকারা পেল তোড়া। অয়নের পাশে বসে মৃদু হেসে বলল -“ভাইয়া, আপনার ফোনটা দিয়ে আমার ডিজাইন করা শাড়িগুলোর ভিডিও করে দিন না। আমার ফোনের ক্যামেরা অত ভালো না। আপনি বাসায় না থাকলে এগুলো নিয়ে এখন অনুর বাড়ি যেতাম। আপনার ফোনে ভিডিও করলে আর অতদূর যেতে হবে না।”
অয়নের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসিটা চলে এলো। ফিসফিসিয়ে বলল -“তাহলে অনুকে চলে আসতে বল। ব্যাপারটা হবে গিভ এন্ড টেক। তুই অনুকে আনার ব্যবস্হা কর, আমি তোর শাড়ির দারুণ দারুণ ভিডিও করে দিব।”
ঠোঁট টিপে হাসল তোড়া। চোখ দিয়ে ইশারা করল সে রাজি। পান্ডুর মুখটায় তখনই হাসি ফুটল। ঐ মেয়েটাকে কবে যে নিজের করে পাবে তা ভেবে আনমনে হাসল অয়ন।
অয়ন আর তোড়াকে একসাথে বসে গল্প করতে দেখে অপলক চেয়ে রইল অনিমা। কলিও এসে দাঁড়াল তাঁর পাশে। মিনমিন করে কলি বলল -“ভাবী, আমি যা ভাবছি তুমিও তা ভাবছ নাকি? তোড়া কিন্তু অয়ন ছাড়া কারো সাথে মিশে না বা মিশতে পারে না, সেটা খেয়াল করেছ?”
অনিমা একটু শব্দ করেই হেসে দিল। ছোট জা’য়ের মাথায় আলতো করে টোকা দিয়ে বলল -“মনের কথা কিভাবে বুঝিস? দাঁড়া আগে অহনের একটা ব্যবস্হা করি, তারপর ঘরের মেয়ে ঘরেই রেখে দিব। অয়নের সাথে সারাজীবন থাকলে মেয়েটার এই হাসিটা মুছবে না ঠোঁট থেকে।”
দুই জা’য়ের ফিসফিসানি দেখে কানন চোখজোড়া সরু করে কান খাঁড়া করে শুনতে চাইল তাদের কথা। তার আগেই কলি ইশারা করে অনিমাকে সাবধান করে দিল। দুজনেই গলার স্বর আরো খাদে নামিয়ে নিল এবার। কলি একদম স্বল্প আওয়াজে বলল -“হুম ঠিক বলছ ভাবী। তুমি দেখোনা, তোড়াকে কেউ কিছু বললে সবার আগে অয়ন প্রতিবাদ করে!”
অনিমা চোখ টিপে ইশারা করল। আজই নিজের শাশুড়ির কাছে প্রস্তাবটা রাখবে। তিনিই না হয় ছেলেদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সম্পর্ক এগোবেন। বাকি রইল অয়ন, তাকে না হয় অনিমাই জানাবে ব্যাপারটা।
শাশুড়ির গোসলের গরম পানিটা দিয়ে সবে ঘর থেকে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে রুবাবা। তাকে দেখেই অনিমা আর কলি ঠোঁট কামড়ে হাসা শুরু করল। ব্যাপারটা রুবাবাকে ঘাটালো না খুব একটা। গরম পানির পাতিলটা রান্নাঘরে রেখে ফিরে এলো অনিমার কাছে। কলির দিকে কপট রাগী দৃষ্টিতে তাকানোর ছল করে বলল -” ভাবী, তুমি এই পাজিটার সাথে থেকে থেকে আমায় ভ্রান্ত করার চেষ্টা করছো তাইনা! পাজিটা এমন একটা ভাব করে যেন আমায় নিয়ে কিছু বলছে। যেই সামনে যাব অমনি হাসা শুরু করে আর বলে ঢপ দিয়েছি। একদম পাজিটার পাল্লায় পড়ো না, নির্ঘাত গোল্লায় যাবে।”
তিন জা’য়ের খুনসুটি আর হাসিতে রিনরিন করে উঠল মজুমদার বাড়ি। মেহেরজান গোসলে না গিয়ে ঘর ছেড়ে এসে দু-চোখ ভরে দেখছেন ছেলের বউদের আনন্দ। তাকিয়ে দেখলেন রুবাবার মলিন হাসি। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সত্যটা খুব শীঘ্রই জানাবেন সকলকে। এই মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে তার জীবনের যে ক্ষতিটুকু করেছেন তার সমমূল্যের না হলেও আংশিক ক্ষতিপূরণ তিনি দিয়ে যাবেন। তিনি ভেবেছিলেন হয়ত নিজের ছেলেটার সুমতি ফিরবে, স্ত্রী সন্তানকে আবার নিজের করে নিবে। কিন্তু বিধি বাম, মাঝে থেকে এই মলিন হাসিওয়ালা মেয়েটার সুখটাই নষ্ট হয়েছে। হয়তো এটাই ভবিতব্য ছিল।
_________
বাড়ির পেছনে ঘাস আর গাছের আশেপাশে ভিডিও করার জন্য প্রস্তুতি নিল তোড়া আর অয়ন। ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের শেপ দিয়ে সব কয়টা শাড়ি ঝুলানো হলো। তার আশেপাশে খরগোশ ছানাদের আনাগোনা। মাঝেমধ্যে রঙবেরঙের পাখিগুলো উড়ে এসে এপাশ থেকে ওপাশে বসছে।
অয়ন ভিডিও করা শুরু করল। হালকা মৃদুমন্দ বাতাসে দুলে ওঠা শাড়িগুলো যেন ঢেউ খেলাচ্ছে নিজ জমিনে।
অয়ন হেসে বলে উঠল -“তোর খরগোশ আর পাখিরা কিন্তু ভিউটাকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।”
তোড়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলল -“ভাইয়া, প্রত্যেকটা শাড়ির আলাদা কয়টা ছবি তুলে দেন। দাঁড়ান আমি আঁচলটা মেলে ওপাশে দাঁড়াব, আর আপনি আমার চুলসহ শুধু আঁচলের ছবিটুকু নিবেন।”
অয়ন হেসে রাজি হলো। একে একে প্রত্যেকটা শাড়ির আঁচল মেলে ধরে ক্যামেরার দিকে পিঠ দিয়ে আলাদাভাবে ছবিগুলো তুলল তোড়া। ভীষণ উত্তেজনা কাজ করছে তার মধ্যে। ছবিগুলে আর ভিডিওগুলোও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবে সে। সবাই কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে তা ভেবে ভীষণ আকুপাকু করছে মনটা।
নিজের ফোনে ক্যাপচার করা ফটোগুলো আগে ভাইকে পাঠিয়ে ছোট্ট করে লিখল -“তোর বউ।”
এদিকে টিচার্স রুমে বসে কলিগদের খুনসুটিময় আড্ডা দেখছিল অহন। সবাই তাকে নিয়েই ঠাট্টা করছিল, কবে সে বিয়ে করবে, কবে তারা কব্জি ডুবিয়ে খাবে, কবে সবাই নাচ গানে মাতোয়ারা হয়ে তার গায়ে হলুদ করবে। কথাগুলো শুনতে শুনতে সয়ে গেছে মানুষটার। আগে নীরব থাকলেও আজকাল বুক ফুলিয়ে বলে -“বিয়ে করব আমি, বউ হবে আমার কিন্তু আপনারা এত খুশি কেন?”
তাদের আড্ডার মাঝেই পকেটে কম্পন অনুভব করল অহন। পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করতেই ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরো গাঢ় হলো। অয়নের ছোট্ট মেসেজটা দেখে ভ্রু কুঁচকাল। শাড়ির আঁচলের আড়ালে ঢাকা পড়া রমণীটাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখল। বুকের বা’পাশে হাত রেখে থামাতে চাইল অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকা হৃৎস্পন্দন। তখনই ওপাশ থেকে আরেকটা বার্তা এলো। সেখানে অয়ন হাসির ইমোজির সাথে লিখে পাঠিয়েছে -“বুকে চিনচিন করছে হায়, মন তোমায় কাছে চায়। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে বাজবে ট্যান ট্যান ট্যান ট্যানা ট্যানা।”
মেসেজটা দেখে অহনের ভীষণ হাসি পেলো। কেউ সামনে না থাকলে হো হো করে হেসে উঠত নিশ্চয়ই।
ভাইয়ের সাথে দুষ্টুমিষ্টি মুহূর্তগুলো ভেবে মুচকি হেসে পেছনে ঘুরে তোড়াকে ডাকতেই চমকালো অয়ন। কালো চুড়িদারে নিজেকে সাজানো মাস্কের আড়ালে মুখটা ঢাকা মায়াবী চোখজোড়ার শীতল দৃষ্টিতে পুনরায় ঘায়েল হলো অয়ন। আশেপাশে তাকিয়ে অয়ন ছোট্ট করে জিজ্ঞেস করল -“এখানে কে এনেছে?”
খরগোশ ছানাটা কোলে নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল -“আমি।”
অয়ন ইশারায় ধন্যবাদ জানাল তোড়াকে। তার ঠোঁটের কোণের ঝলমলে হাসিটা বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কতটা খুশি হয়েছে। সামনের মানুষটাকে বেশ রাগাতে ইচ্ছে হলো। কতক্ষণ উশখুশ করে মাথা চুলকে বলল -“আজ তুমিও কলেজে যাওনি? বাহ, কি দারুণ। কলেজে না গিয়ে বান্ধবীর বাসায় হবু বরকে দেখতে চলে এসেছো। এতই যদি দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে বললেই পারো। বেনারসী পরিয়ে, শানাই বাজিয়ে, তিন কবুল বলে বিয়ে করে নিব। যত ইচ্ছে দেখবে।”
অয়নের কথায় তোড়া বুঝতে পারল না মানুষটা ঠিক রেগে আছে নাকি মজার ছলে কথাগুলো বলছে। ওদিকে অনু চোখজোড়া ছোট করে মুখের আদলে গাম্ভীর্য টেনে তোড়াকে বলল -“এই লোকটার অমন বেসামাল কথা শোনানোর জন্য ডেকেছিলি?”
অনুর কথা শুনে অয়নের হাসি পেল খুব, তবুও চোয়াল ঝুলিয়ে ঝাঁঝাল স্বরে বলল -“ও হ্যালো, বেসামাল কথা মানে কি? আমি কি একবারও বলেছি তোমায় চুমু খাব?”
কথাটা বলে ঠোঁট উল্টে কাঁধ উচিয়ে ইশারা করল সে। তোড়া মুখে হাত দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা ধরল। পেছনে রেখে এসেছে বিস্মিত অনুকে। অয়নের কথা শুনে তার কান যেন জ্বলে উঠল। মাথা ভনভন করতে লাগল। কোনমতে ছুট লাগালো তোড়ার পেছনে। পালাতে পারলেই যেন এ যাত্রায় বেঁচে যাবে।
চলবে…………