#এলোকেশী_সে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বসংখ্যাঃ১৩
কলেজের ক্লাস শেষ করেই বাবার ব্যবসায় সময় দেয় অহন।অয়নও বাবার কাজে হাত লাগায় তবে শারীরিক অসুস্থতা আজ তাকে ছুটি দিয়েছে। আগে তিনভাই মিলে ব্যবসাটা দেখলেও এখন সম্পূর্ণ দায়ভার চেপেছে নাঈম মজুমদারের ঘাড়ে। নিজাম মজুমদারের অন্যায়তে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে নিজেই ব্যবসা ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। ছোট ভাই নিলয় মজুমদারের ব্যবসায় মন বসেনা। দেশের আলোবাতাস তার মন স্পর্শ করেনি। তাই তো প্রবাস জীবনটা স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করেছেন। বস্তুতঃ নিজাম মজুমদারের অন্যায়টা মানতে না পেরে, আশেপাশের মানুষজনের তীক্ষ্ণ কথার বান থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যই পরিবার থেকে দূরে আছেন। মাঝেসাঝে প্রিয়তমা স্ত্রীর ফুটফুটে মুখখানা দেখলে ছুটে আসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আঁটকে গেছেন তিনিও। ছুটি বিনে প্রিয় মুখগুলো সশরীরে দেখার সৌভাগ্যটুকুও হয়না।
শুভ্র ধূসর মিশেলের তুলতুলে খরগোশ ছানাটার পেছনে বেশ খানিকক্ষণ দৌড়াচ্ছে তোড়া। কোনমতেই তাকে ধরতে পারছে না। ছানাটাও যেন তার সাথে হুটোপুটিতে মজেছে। শীত শীত আমেজেও অনেকটা ঘেমেছে মেয়েটা। হাল ছেড়ে কোমরে হাত দিয়ে যখন নিজের হারটুকু মেনে নিল তখনই অয়ন এলো সামনে। তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল -“নে তোর খরগোশের বাচ্চা। এতক্ষণ দুই পাগলের খেলা দেখছিলাম। বিনা টিকেটে কি সুন্দর সিনেমা। আহা! আহা পরাণ জুড়ায় গেল।”
হাত বাড়িয়ে খরগোশ ছানাটা নিজের কাছে নিয়ে তোড়া ফিসফিস করে বলল -“অনুকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার সময় ওর বড় ভাই ওকে আপনার সাথে দেখে নিয়েছে। মেরেছে ওকে। ফোনটাও নিয়ে গেছে। ওর ভাবীর ফোন থেকে কল দিয়ে আমাকে বলল। ওর কন্টাক্ট নাম্বারে আপাতত কল বা মেসেজ দিতে নিষেধ করেছে। ফোন ওর কাছে নেই।”
অয়নের হাসিটা মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেল। ‘চ’ শব্দটা আনমনেই চলে এলো ঠোঁটে। ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলল – “ধ্যাৎ শালা না ভুল বলতেছি সম্বন্ধি, ব্যাটা খা/টাশ। নিজে তো আরেকজনের বোনকে তু/লে এনে বিয়ে করেছে আর তার বোন প্রেম করলেই দোষ! ওকে বলে দিস বেশি ঘাটালে আমিও তার বোনকে তু/লে এনে বিয়ে করে নিব। প্রেমে যখন মরেছি তখন ওসব দু-চারটা গুন্ডা সম্বন্ধিকে সুড়সুড়ি দেয়া অসম্ভব কিছু না।”
তোড়া চোয়াল ঝুলিয়ে ভ্রুজোড়া অনেকটা নামিয়ে নাকের কাছে এনে বলল -“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া।”
অয়ন এবার রেগে গেল বেশ। কপালে তিন চারেক কুঞ্চন ফেলে প্রশ্ন করল -“আমি কি পল্লীগীতি গাইছি? আমিও সিরিয়াস। ড্যাম সিরিয়াস। ওকে বলে দিস কান্নাকাটি না করে ঠিকমত খেতে। অমন শুটকি চোরা মেয়ে বিয়ে করে আমি কি করব? আর বেশি কান্নাকাটি করলে রেডি থাকতে বলিস। আমি গিয়ে নিয়ে আসব।”
কথাটুকু বলে আর একদন্ডও দাঁড়ালো না সেখানে। বারবার তার মনকে জিজ্ঞেস করছে কেন মেয়েদের বড় ভাই থাকতে হবে। আর থাকলেও বা কেন বোনের প্রেমে ব্যাকড়া দিতে হবে? রাগে গজগজ করতে করতে হনহন করে এগিয়ে চলল বাড়ির ভেতরে। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই শুনতে পেল কলির কন্ঠধ্বনি -“ভাবী, মেজ ভাই আবার বিয়ে করার পর কি আপনি নিজেই দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন?”
রুবাবার চাপা পড়া দীর্ঘশ্বাসটা শুনলো না অয়ন, শুধু শুনতে পেল কন্ঠ নিঃসৃত সেই যন্ত্রণার একেকটা মুহূর্ত। কেমন উদাস কন্ঠে শোনা যাচ্ছিল -“নাহ কলি, আমি তখন বারবার নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তার কাছে ছুটে যেতাম, আকুতি জানাতাম, কত মিনতি করতাম। ভালবাসায় ডুবে গেছিলাম তো। কিন্তু মানুষটা দ্বিতীয় বিয়ের পর কেমন অচেনা হয়ে গেল। সবসময় আমাকে বলত এখান থেকে চলে যেতে, এখনো বলে। তখন অতশত বুঝতাম না তো। আবেগের বয়স ছিল। মানুষটার বারবার প্রত্যাখানে মনে হয়েছিল মরে যাব। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সেটাও করতে পারিনি।”
অনিমা আর কলি চোখ মুছলো শাড়ির আঁচলে। রুবাবার ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি। শাশুড়ির পানে চেয়ে সে বলল – বাবার উপর মিছেই অভিমান করেছিলাম আম্মা। তখন বাবার সাথে যদি ফিরে যেতাম! আজতো বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। ভাইদের সংসারে অনাহুত হওয়ার কোন মানেও নেই। যত তাড়াতাড়ি নিঃশ্বাস থামবে ততই সম্মানের।”
এতদিন বাদে রুবাবার হুহু করে ওঠা কান্নাটা দেখলো সকলে। আঁচলে মুখ লুকিয়ে করুণ আহাজারি করছে। সিঁড়িতে রাখা পা’টা নামিয়ে ধীর কদমে এগিয়ে গেল দাদীর ঘরটার দিকে। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে দেখে যাচ্ছে মেজ কাকীর করুণ আর্তনাদ। সবাই নির্বাক হয়ে দেখছে রুবাবাকে। কতবছর এই মানুষটার অশ্রু দেখেনি কেউ। সেই পাহাড়ের ন্যায় অটল রমণীর টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া হৃদয়ের আর্তচিৎকার সবাই দিব্যকর্ণে শুনছে। অয়নের কঠিন হৃদয়টাও ঐ দৃশ্যটুকু দেখার জন্য ক্ষমতাধর নয়। যেভাবে নীরবে এসেছিল সেভাবেই আড়াল করে নিলো নিজেকে।
মেহেরজান উদাস চোখে দেখছে রুবাবাকে। স্বামী আর সংসারের জন্য মেয়েটার অমায়িক দৃঢ়তা ছিল কিন্তু নিজাম মজুমদার বারবার দূরে ঠেলেছেন তাকে। অবশ্য সময় হারিয়ে নিজের অন্যায় বুঝতে পারলেও নিজের ইগোর জন্য আর ক্ষমা চাওয়া হয়নি অবলা রমণীটার কাছে।
________
মায়ের ফোলা ফোলা নয়নজোড়া দেখে বুকটা হুহু করে উঠল তোড়ার। বিড়ালছানাটার মত মায়ের আঁচলে আঁচলে ঘুরে ঘুরে উশখুশ করছিল বেশ। রুবাবা আঁচ করতে পেরেছে মেয়ে কিছু বলতে চায়। হাতের থাকা উপন্যাসের বইটা পাশে রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল -“কিছু বলবি?”
কানের পেছনে গোঁজা চুলগুলোকে পেছনে নেয়ার কপট ভঙ্গিমা করল তোড়া। মায়ের দিকে খানিক ভীত নয়নে দৃষ্টি মিলিয়ে বলল -“কেঁদেছিলে কেন?”
রুবাবা এবার মৌন হয়ে আবার মন দিল উপন্যাসের পাতায়। আঁড়চোখে মেয়ের ভাবগতিক বোঝার চেষ্টা করছে আর উপন্যাসের পাতায় নজর দেবার মিথ্যে ছল করছে। নুইয়ে রাখা মাথাটা আবার উপরে তুলে রুবাবা মেয়েকে দেখলেন। ওড়নার কোণাটা আঙ্গুলে পেঁচিয়ে আবার খুলে নিচ্ছে। একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে, তো আরেকবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। মেয়ের অস্হিরতা দেখে আবার জিজ্ঞেস করলেন -“কিছু বলবি?”
তোড়া এবার সাহস পেলো যেন। ঢোক গিলে আশপাশটা দেখে মাকে বলল -“একটু মার্কেটে যাওয়ার ছিল আম্মু। আমার রঙ তুলি, ক্যানভাস আর কিছু আর্টিফিশিয়াল ফুল লাগবে। চলো না আমার সাথে।”
মেয়ের সব চাওয়াতে আশকারা দেয় রুবাবা। শুধু মেয়েকে অন্য কেউ কিছু বললেই মনে হয় কলিজায় আঘাত লাগে। অন্যদের অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্যই মেয়েটার প্রতি রূঢ়ভাষী হয়ে উঠেছেন তিনি। খানিক নীরব থেকে হাতের বইটা তাকে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললেন -“তৈরী হয়ে নে।”
তোড়া মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দ্রুত পদে হাঁটা ধরল। সিঁড়ি বেয়ে ছুট লাগালো উপরে। ঘরে ঢুকেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিল। সাড়ে ছয়টা ঢাকা শহরের জন্য সবে বিকেল। তড়িঘড়ি করে হিজাবটা পরে রূপোলী হাতঘড়িটা কব্জিতে লাগিয়ে ছুটে এলো। রুবাবা শাশুড়িকে জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে বের হলো। মা-মেয়ে রাস্তার পাশ ধরে হেঁটেই এগোলো কাছের মার্কেটের পানে। মায়ের হাত ধরে বাধ্য মেয়ের মতন এগিয়ে যাচ্ছে তোড়া। হাঁটতে হাঁটতে রুবাবা মেয়েকে প্রশ্ন করল -“আমি যদি কখনো না থাকি তাহলে নিজেকে নিজে সামলে নিতে পারবি না?”
শ্লথ হলো চলন্ত পা’জোড়ার চলার গতি। রূহ কেঁপে উঠল যেন। অবাধ অশ্রুকণা চোখের কোলে চিকচিক করছে। কাঁপা কাঁপা স্বরে তোড়া জিজ্ঞেস করল -“উল্টোপাল্টা না বললেই নয়? কেন এসব বলছ আম্মু?”
মেয়ের হাত ধরে এগোলো রুবাবা। এপাশ ওপাশ দেখে রাস্তা পার হলো। মেয়ের হাতটা এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েনি, ছেড়ে দিলেই যেন কিছু একটা হয়ে যাবে। রাস্তার কিনার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে সে বলল -“সবাই তো সারাজীবন বেঁচে থাকে না মা। কখনো না কখনো যেতেই হয়। নিজেকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবি, সে যে পরিস্থিতিই হোক। শক্ত ভিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবি।”
তোড়া আর এগোনোর সাহস পেলো না যেন। তার পা থমকে গেছে। স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মেয়েটা। আবারো মায়ের হাতটা আঁকড়ে ধরল তার হাত। নাক টেনে এগিয়ে গেল, মাকে কিছু বলতেও পারছে না। কথাগুলো যেন বদহজমের মত গলার কাছটায় এসে আটকেছে।
মার্কেটে এসে রঙ কিনল তোড়া। কিছু এন্টিক জুয়েলারির সরঞ্জাম নিল। রঙবেরঙের সুতোও স্হান নিলো তার ক্রয়ের তালিকায়। ছোট ছোট ক্যানভাস নিল। কাঠের রঙহীন গহনার সরঞ্জাম, চুড়ি নিল। রুবাবা তাকিয়ে তাকিয়ে মেয়েকে দেখছে। ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা করে বের হয়ে তোড়া বলল -“আম্মু মেলায় হ্যান্ড পেইন্ট নিয়েই স্টল দিব। আবার হ্যান্ড ওয়ার্কটার একটু টাচ রাখব। তুমি দেখো আম্মু, একদিন তোমার মেয়ে বড় হয়ে তোমার দায়িত্ব নিতে শিখে যাবে।”
রুবাবা মুচকি হেসে বলল -“পিচ্চি মেয়ে, আগে বড় হ। এসবের পাল্লায় পড়াটাকে হেলা করিস না।”
উপরে নিচে মাথা দুলিয়ে সায় জানাল তোড়া। তার স্বপ্ন এখন আকাশ ছোঁয়ার, সাধ থাকলে সাধ্যও নিশ্চয়ই সাড়া দিবে- এই বিশ্বাসে প্রত্যয়ী মেয়েটা।
_________
ঘরে বসে রঙগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল তোড়া। দরজায় শব্দ পেয়ে বিছানা থেকে নেমে এসে দরজাটা খুলে বাইরে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকাল। তাকে এক পাশে সরতে বলে গটগট করে তার ঘরে ঢুকে এলো অয়ন। ধুপ করে তোড়ার বিছানায় বসে তাকে বলল -“অনুকে আর কল দিয়েছিস?”
দু’পাশে মাথা দুলিয়ে উহু বলল তোড়া। মুঠোফোনটায় আবার দৃষ্টি রাখল অয়ন। কারো নাম্বারে ডায়াল করে কানের কাছে নিল ফোনটা। আবারও যান্ত্রিক নারীকন্ঠটা শুনে সজোরে ফোনটা ছুঁড়ে মারল ফ্লোরে। দু’হাতে নিজের চুলগুলো টেনে রাগে গজগজ করতে করতে বলল -“অনুর যদি কিছু হয় না, ঐ লোকটাকে আস্ত রাখব না। ফোনটা সুইচড অফ করে রেখেছে।”
অহন নিজের ঘর থেকে স্পষ্ট শুনতে পেল কিছু ভাঙার তীব্র আওয়াজ। নিজের ঘরটা ছেড়ে বের হতেই দেখলো তোড়া ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তোড়ার ভীত চাহনি দেখে এগিয়ে এলো অহন। ভ্রু নাচিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দেখতে পেল অস্হির ছোট ভাইটাকে। দ্রুত পদে ভাইয়ের পাশে এসে বসল। তোড়াকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল কিছু।
ছোট ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে অহন জানতে চাইল কি হয়েছে। চোখের কোণের চিকচিক করা জলকণা মুছল অয়ন। মেঝেতে তাকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস টানছে সে। তোড়া পাশে এসে বসল। নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করল। ওপাশ থেকে সাড়া পেতেই মৃদু স্বরে বলল -“অনু কি করছে ভাবী? ওকে কি একটু দেয়া যাবে?”
ওপাশ থেকে নেতিবাচক উত্তর পেয়ে অনুনয় করল তোড়া। ওপাশ থেকে মানুষটা জানাল রাত আরেকটু গভীর হলে তখন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। নয়ত হিতে বিপরীত হতে পারে।
হাল ছেড়ে তোড়া অয়নকে বলল -“এখন হয়ত সমস্যা আছে, এজন্য ভাবী অনুকে দেয়নি ফোনটা।”
অয়ন রক্তজবার মত টকটকে নয়নজোড়া নিয়ে তোড়ার দিকে চেয়ে বলল -“এতই যদি সীমাবদ্ধতা থাকবে তাহলে প্রেম করে কেন? তখন মনে থাকে না?”
ভাঙা ফোনের টুকরোগুলো ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একবার সেদিকে তাকিয়ে তোড়ার ঘর ছাড়ল অয়ন। ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তার। নিজের ঘরে এসেই সশব্দে দরজা বন্ধ করল। অহন আর তোড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারল না।
ভাইয়ের যাওয়ার পথ পানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অহন। তারপর শীতল স্বরে ডাক দিল -“তোড়া!”
ব্যস বুকের ভেতরটায় হাতুড়িপেটা শুরু হলো মেয়েটার। নিজের শক্ত, দৃঢ় মনটা এই স্বরেই গলে যায়। শত চেষ্টা করলেও এখন আর ঐ নয়নজোড়ায় নজর রাখতে ব্যর্থ সে। তবুও ছোট্ট করে জবাব দিল -“হু।”
গলাটা শুকিয়ে চৈত্রের খরার মত হয়ে গেছে এতক্ষণে। ওপাশ থেকে মানুষটা বলল -“কি হয়েছে অয়নের?”
কাঁপা কাঁপা স্বরে সবটা খুলে বলল তোড়া। আদ্যোপান্ত শুনে অহন বলল -“রাম ছাগল একটা। এত প্যারা নেওয়ার কি আছে? সোজা কাজী অফিসে গিয়ে কাজীর লেজ ধরলেই তো খেল খতম। আপদের চোখে আঙ্গুল দিলেই তো আপদ কানা হবে। কি বলিস?”
তোড়া উপরে নিচে মাথা দুলিয়ে বলল -“হু।”
অহন নিজের চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল -“গিয়ে গাধাটাকে বলে আয়। বড়ভাই হয়ে তো আর বলতে পারিনা প্রেমিকা নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বউ বানিয়ে আন। প্রেম করে মুরগির কলিজা নিয়ে।”
তোড়া হেসে উঠল অহনের কথা শুনে। পরক্ষণেই হাতজোড়া দিয়ে হাসিটা আড়াল করল। সেই হাসিটাই মনের দরজায় ঝংকার তুলল কারো।
চলবে……….……