খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৪২ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
473

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

কোলাহলের মাত্রা সময়ের সাথে প্রকোপ হতে শুরু করেছে। সারাদিন গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। তবুও তাইয়ান আর মুনতাসিমের দেখা মিলেনি চৌধুরী গৃহে। দু’জনকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। কাল থেকে মেহেভীনের মনটা স্বাভাবিক থাকলে-ও সময়ের সাথে মনের মধ্যে ভয় জেঁকে বসছে। মনের সুখ গুলোকে আঁধারে ঢেকে নিয়েছে আতঙ্কের কালো ছায়া। মানুষটাকে এক নজর দেখার জন্য ভেতরটা ছটফট করছে৷ মানুষটাকে ছাড়া আজকাল নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে মেহেভীনের। বিষাদের ভরপুর হয়ে উঠল মন, মস্তিষ্ক। কারো সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। তখনই মেহেভীনের কর্ণকুহরে এসে কিছু বাক্য পৌঁছল।

–মুনতাসিম কি এই বিয়েতে রাজি ছিল না? রিয়াদ কি তার ছেলেকে জোর করে বিয়ে দিল? যার কারনে বিয়ের রাতে বউ রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে উধাও হয়ে গেল! আজকাল কার বাবা-মা গুলোও হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের বিয়েতে মত থাকে না। জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় আর ছেলে মেয়েরা বিয়ের পরে প্রেমিক, প্রেমিকার লগে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়ায়। কথা গুলো মাটিতে পড়ার আগেই জ্বলে ওঠা কণ্ঠ স্বর ভেসে এল।

–আমি নিশ্চয়ই আপনার মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়েছিলাম। তা না হলে আপনি কিভাবে জানলেন? আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না! আবার আমার প্রেমিকা ও আছে! কাইন্ড ইওর ইনফরমেশন বিয়েটা আমার পছন্দেই হয়েছে। আমাকে জোর করে কোনো কিছু করানোর ক্ষমতা কারো নেই। কারো সম্পর্কে কোনো কিছু মন্তব্য করার আগে, সবকিছু জেনে তারপর মন্তব্য করবেন৷ যারা না জেনে শুনে অন্যের নামে কটু কথা রটায়। আমি তাদেরকে ভয়ংকর রকমের ঘৃণা করি। আপনি বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছেন। আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আসেন নি। যে কাজে এসেছেন সে কাজ করুন। মুনতাসিম ব্যক্তিগত জিনিস ব্যক্তিগত রাখতে পছন্দ করে। আপনি যদি আমার বিষয়ে আর একটা বাজে কথা বলেছেন। তাহলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার গুরুজন। এই সময়ে মুনতাসিমের উপস্থিতি একদমই আশা করেনি মহিলাটি৷ সে মেহেভীনকে আঘাত করার জন্য সুযোগ বুঝে কথা গুলো বলেছে। মুনতাসিমকে দেখে ভয়ে চুপসে গেল সে। ভীরু দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের উত্তপ্ত মস্তিষ্ক নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যস্ত। মুহুর্তের মধ্যে আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে করে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। মুনতাসিমকে দেখে মেহেভীনের জানে পানি আসলো। সে খুব সংগোপনের স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উথাল পাথাল করা হৃদয়টা মুহুর্তের মধ্যে শান্ত নদী হয়ে গেল। মুনতাসিমের পাশেই বিধস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তাইয়ান। ছেলেটার সমস্ত মুখশ্রীতে মলিনতা ছেয়ে গিয়েছে। খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, যে কারো বুক কেঁপে উঠবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মহিলাটি বলল,

–আমার ভুল হয়ে গিয়েছে বাবা। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি না বুঝেই তোমার মন্তব্য করে ফেলছি। সবকিছু না জেনেশুনে আমার এভাবে মন্তব্য করা উচিৎ হয়নি।

–এরপর থেকে কারো সম্পর্কে কোনো কিছু বলার আগে বুঝে শুনে বলবেন। কথা গুলো বলেই তাইয়ানের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে আসলো মুনতাসিম। মহিলাটি আড়দৃষ্টিতে মেহেভীনকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। মুনতাসিম তাইয়ানের হাত ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন তাইয়ান। তুমি কক্ষ গিয়ে ঘুমিয়ে নাও। আমি সবাইকে বলে দিব৷ তোমার কক্ষের কাছে কেউ যেন কোলাহল না করে।

–আমি ঠিক আছি স্যার, সমস্যা নেই।

–তোমার থেকে কোনো কথা শুনতে চেয়েছি। আমার চোখের সামনে থেকে যাও। মুনতাসিমের কড়া কণ্ঠে বলা কথা গুলো তাইয়ানের হৃদয় স্পর্শ করে গেল। সেই সাথে অভিমান এসে ভিড় জমালো মনে। মনের গহীনে থেকে ভিষণ করে বলতে ইচ্ছে করছে, “আপনি এত পাষাণ কেন স্যার? সব সময় কঠিন কঠিন কথা বলেন। আজকে অন্তত একটু নরম হতে পারতেন। আপনি আমার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মৃত্যু আগ পর্যন্ত আপনার পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকব৷ আপনার রাগের মধ্যে, গম্ভীর কণ্ঠ স্বরের মধ্যে এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা খুঁজে পাই। এত ভালোবাসা পাবার পরে কিভাবে আপনার সাথে বেইমানি করব স্যার? আপনি আমার সব পথ বন্ধ করে দিলেন। আপনার মতো মানুষের সাথে বেইমানি করার আগেই আমার মৃত্যু আসুক। তবুও বেইমানি না আসুক। তাইয়ান বিলম্ব করল না দ্রুত পায়ের কক্ষে চলে গেল।

পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে। সন্ধ্যায় আজকে চৌধুরী গৃহে অনুষ্ঠান করবে। শেহনাজ মেহেভীনকে নিয়ে সাজতে যাচ্ছিল। তখনই মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–মেহেভীনকে আমার কক্ষে আসতে বল।

–কিন্তু ভাই পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে। সাজাতে সময় লাগবে। সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আপনি ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিন। মুনতাসিম কোনো উত্তর করল না। ক্লান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো।

চারিদিক আঁধারে আচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। রাইমা বেগমের সাথে কয়েকজন স্বজন এসেছে মেহেভীনকে নিয়ে যেতে। মেহেভীনকে মেরুন রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। সমস্ত কায়া ভর্তি বাহারি রকমের অলঙ্কার পড়ানো হয়েছে। মেহেভীনের এমন রাজরানীর মতো রুপ দেখে মায়ের চক্ষু শীতল হয়ে গেল। অজানা অনুভূতিতে ভেতরটা আনন্দে নেচে উঠছে। রাইমা বেগম মেয়ের পাশে বসলেন। আজ খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে। তার মেয়েটা কেমন আছে? নিজের ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারল না। হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–কেমন আছিস মা?

–আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি মা। তুমি ভরসা করে আমায় পাঠিয়েছ। আমি কি খারাপ থাকতে পারি? তোমার রাতে একা থাকতে কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? প্রাপ্তি আপুর আম্মু তোমাকে কোনো কথা শুনিয়েছে? আমার কাছে কিছু লুকাবে না বলে দিলাম।

–আমার গৃহ ভর্তি এত মানুষ ছিল। ক্ষতি করার সাহস কার আছে শুনি? তা আমাকে দেখে কাঁদছিস না যে!

–তুমি তো কালকে বললে আমি বাচ্চাদের মতো আচরণ করছি।

–তাই এক রাতে বড় হয়ে গেলি?

–হয়তো!

–মায়ের ওপরে অভিমান হয়েছে?

–না।

–তোর ভালোর জন্যই আমাকে শক্ত হতে হয়েছে মা। আমার কথা মনে রেখে কষ্ট পাস না। তোর সাথে যদি আমিও কান্না করতাম। তাহলে পরিস্থিতি খারাপ দিকে চলে যেতো। কালকে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। কালকে জীবনের প্রথম আমি এত কেঁদেছি জানিস! তুই চলে আসার পর আমার বুকটা খালি খালি লাগছিল। আমার ইচ্ছে করছিল ছুটে চলে আসি তোর কাছে। মায়ের নরম কণ্ঠে বলা কথা গুলো মুহূর্তের মধ্যে মেহেভীনের মন গলিয়ে ফেলল। মেহেভীন কোনো বাক্য উচ্চারন না করেই মাকে জড়িয়ে ধরল। মেহেভীনের মা পরম যত্নে মেয়ের ললাটে চুমু খেল। তখনই মুনতাসিম এসে সেখানে উপস্থিত হলো। মুনতাসিম রাইমা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে সেখানে বসলো। রাইমা বেগম বললেন,

–আজকে মেহেভীনকে নিয়ে যেতে দিবে না বাবা?

–না, আমি কালকে গিয়ে আপনার কাছে রেখে আসব।

–তাহলে দেরি না করি চলে যাব।

–আপনাকেও যেতে দিব না। আপনি যদি আজ চলে যান। তাহলে আমি ভিষণ রাগ করব।

–মেহেভীনের নানির বাড়ি থেকে অনেক স্বজন এসেছে। আমি তাদের রেখে কিভাবে থাকি বলো বাবা? আমাকে আজ যেতে হবে। পরে না হয় মেহেভীনের সাথে এসে থাকব।

–কথা দিন।

–কথা দিলাম। মুনতাসিমের মুখশ্রীতে হাসি ফুটে উঠল। রাইমা বেগম অদ্ভুত ভাবে দু’জনকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মায়ের দৃষ্টির ভাষা বুঝতে পারছে না মেহেভীন। তার মা তো কোনোদিন তাকে এভাবে দেখেনি। তবে আজ এভাবে দেখছে কেন? অদ্ভুত ভাবে মেহেভীনের ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো শব্দও উচ্চারিত হচ্ছে না। ভেতর অনেক কথা কিন্তু তা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে মেহেভীন।

আস্তে আস্তে সমস্ত গৃহ ফাঁকা হতে শুরু করেছে। রাত যত গভীর হচ্ছে কোলাহল ততই কমছে। অর্ধেক বাসা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। কালকের ন্যায় আজ-ও মুনতাসিমের কক্ষটা সাজানো হয়েছে। মেহেভীন আস্তরণে বসে ছিল। তখনই মুনতাসিম আসে। মুনতাসিমের রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত রয়েছে। সেজন্য কবাটে টাকার নেওয়ার ঝামেলা কেউ করেনি। মুনতাসিম এসে মেহেভীনের পাশে বসলো।

–আপনি কি রাগ করেছেন? আমি কালকে ওভাবে তাইয়ানের সাথে চলে যাওয়াতে?

–আমি হচ্ছে একজন মানুষ। আর একজন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যেটা বেশি থাকা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে মনুষ্যত্ব যা আমার আছে। আমি এতটা বিবেকহীন হয়ে যাইনি যে, এমন হৃদয়ভাঙা খবর শুনেও রাগ করব! আপনাকে প্রচুর ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।

–আপনাকেও ভিষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এসব ভারি অলঙ্কার আর লেহেঙ্গা বদলে রেগুলার ইউজ করার বস্ত্র পরিধান করুন। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন শান্তি অনুভব করল। সে দ্রুত উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পরিধান করে বের হলো মেহেভীন। মেহেভীন বের হতেই মুনতাসিম ফ্রেশ হতে চলে গেল। মেহেভীনের ভেতরে ভিষণ অস্বস্তি কাজ করছে। অদ্ভুত ভাবে সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। এতক্ষণ তো স্বাভাবিকই ছিল সবকিছু। কিন্তু এখন অস্বাভাবিক ভাবে ভয় লাগছে কেন তার! ওয়াশরুমের কবাট খুলার শব্দে চমকে উঠল মেহেভীন। দু’জনের মাঝে পিনপতন নীরবতা চলছে।

–আপনি কি ভয় পাচ্ছেন ম্যাডাম?

–না।

–আমি তো দেখতে পাচ্ছি। আপনি ভয় পাচ্ছেন৷ আপনি ভয় পাবেন না ম্যাডাম। আপনার আঁখিযুগলে আমার প্রতি ভয় নয় ভরসা দেখতে চাই। আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার ছায়ার ওপর দিয়েও আমি হাঁটব না। মুনতাসিমের পুরোটাই ভালোবাসাময় চাই। সেখানে এতটুকু ভালোবাসার কমতি থাকবে, সেটা আমার চাই না।

–আমি কি আপনাকে সে কথা একবারও বলেছি?

–তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ঘুমিয়ে পড়ুন। কি অদ্ভুত! মেহেভীনের বাক্য গুলো কণ্ঠনালিতে এসে আঁটকে যাচ্ছে। সে দৃষ্টি লুকিয়ে আস্তরণে গিয়ে উঠে বসলো। ভয়ে সমস্ত কায়া অবশ বয়ে আসছে। এই ভয়ের সমীকরন মিলছে না মেহেভীনের। এর আগেও সে কত সুন্দর সময় মুনতাসিমের সাথে কাটিয়েছে। তখন তো ভয় লাগেনি। তবে আজ কেন ভয় লাগছে? মুনতাসিম একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। হয়তো মেহেভীনের ভয় আর অস্থিরতা তার মনটাকে পোড়াচ্ছে। মেহেভীন মুনতাসিমের সরে যাওয়ার কারন উপলব্ধি করতে পেরে আড়দৃষ্টিতে তাকালো৷ সে তো স্বাভাবিক হতেই চাইছে। কিন্তু তার অনুভূতিরা তার সাথে ছলনা করছে। কিছুতেই স্নিগ্ধ অনুভূতিতে এসে ধরা দিচ্ছে না৷ মেহেভীন উঠে মুনতাসিমের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। মুনতাসিম আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,

–না ঘুমিয়ে উঠে আসলেন যে?

–আপনি এখানে আসলেন কেন? আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি দু’টো রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। এভাবে রাতে ঘুম না হলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

–আমার অভ্যাস আছে। একটু আগে কি বলেছি শুনতে পাননি। আমাকে দেখে আপনার ভেতর ভয় বা জড়তা কাজ করুক এটা আমি চাই না। আমার জন্য আপনার মধ্যে ভয় দেখলে ভেতরটা আমার পুড়বে। মেহেভীন নিশ্চুপ হয়ে গেল। সে তার অনুভূতিটা কিভাবে মুনতাসিমকে বোঝাবে। অনুভূতি এমন একটা জিনিস যা সহ্য করা যায়৷ আর না কাউকে বোঝানো যায়।

–আসলে প্রথবার বিয়ে করেছি। তাই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে গিয়েও অনুভূতির কাছে ব্যর্থ হয়ে, অস্বাভাবিক হয়ে উঠছি।

–আর আমার এটা চার নাম্বার বিয়ে তো তাই আমি স্বাভাবিক আছি। মুহুর্তের মাঝে মেহেভীনের মন মস্তিষ্ক জ্বলে উঠল। সাথে নিজের বলা বোকা বোকা কথা গুলোর জন্য নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো মেহেভীন। সে রক্তিম চোখে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিম আড়দৃষ্টিতে মেহেভীনকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেহেভীনের মুখশ্রী দেখে ভিষণ হাসি পাচ্ছে তার৷ মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,

–কি বললেন আরেকবার বলেন?

–আজকে আপনাকে ভিষণ সুন্দর লাগছিল৷ আপনার রুপের সৌন্দর্যকে ভেদ করে, আপনার ভেতরে বিলীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার। আপনার মতো সুন্দর নারী আমি আমার জীবনে দু’টো দেখিনি। আমার অস্তিত্ব বলতে যতটুকু ছিল। আপনাকে দেখার পরে আপনি তা গ্রাস করে ফেলছেন।

–এসব মন গলানো কথা বলে লাভ নেই। বাজে লোক একটা! খুব শখ তাই না চার টা বিয়ে করার?

–এটা প্রতিটি পুরুষের স্বপ্ন আমি ছাড়া। কারন আমার বউ আছে। মেহেভীন রেগে মুনতাসিমের হাত ধরে কক্ষ নিয়ে আসতে যাবে। তখনই মুনতাসিম হাত সরিয়ে মেহেভীনের দিকে ঘুরবে, এমন সময় মেহেভীনের হাত মুনতাসিমের হাত স্পর্শ করতে পারে না। মেহেভীন শান্ত গলায় বলল,

–আমাকে স্পর্শ করবেন না। আপনার হাত নোংরা হয়ে যাবেন। কথা গুলো বলেই কক্ষের দিকে অগ্রসর হতেই মুনতাসিম মেহেভীনের হাত ধরে ফেলল।

–এটা আপনি কেমন কথা বললেন ম্যাডাম? কখনও কখনও আপনার স্পর্শ পাবার তৃষ্ণা এতটা প্রকট হয় যে, মনে হয় আপনি যে পথ দিয়ে হেঁটে যান। সেই পথের ধুলাবালি হয়ে যাই।

–তাহলে হাত সরিয়ে নিলেন কেন?

–হাত সরিয়ে নেইনি। আপনার দিকে ঘুরতে যাচ্ছিলাম। তখনই আপনি হাত বাড়িয়েছেন৷ সেজন্য আপনার হাত আমাকে ছুঁতে পারেনি। যেদিন আমার অধিকার নিয়ে আপনার সামনে দাঁড়াব। সেদিন আপনি আমাকে আটকাতে পারবেন না। মুনতাসিমের শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো মেহেভীনের মুখের ভাষা কেঁড়ে নিল। সে ধীর কণ্ঠে বলল,

–আপনার কায়াতে শীতের বস্ত্র নেই। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লাগবে। কক্ষ চলুন ঘুমাব। মেহেভীনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে মুনতাসিম মেহেভীনকে জড়িয়ে ধরল। আচমকা জড়িয়ে ধরাতে কেঁপে উঠল মেহেভীনের সর্বাঙ্গ। মুনতাসিম মেহেভীনের কর্ণের কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল, শীতল কায়াকে উত্তপ্ত করে নিতে জানি ম্যাডাম। উস্কে দেওয়া মূলক কথা কম বলবেন। কথা গুলো বলেই মেহেভীনের ললাটে চুমু খেল। মেহেভীনের সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। ধীর গতিতে কাঁপছে সে। শক্তি গুলো ক্ষয় হতে শুরু করেছে। সে আদুরে বিড়ালের মতো মুনতাসিমের বুকে লেপ্টে আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here