তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ২৬

0
499

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৬

শাফিন আর প্রীতি ছাঁদের দরজার আরালে লুকিয়ে ছিলো পারফিরা কি করে সেটা দেখার জন্য। শাফিন ঝুঁকে দরজার পাশ দিয়ে মাথাটা বের করে রেখেছিলো আর প্রীতি শাফিনের মাথার উপর দিয়ে নিজেও উকি মেরে ছিলো।

কিছুক্ষণ যাবত একটা মশা খুব জ্বালাতন করছিলো শাফিনকে। বারবার গালের উপর বসে কিস করছিলো। এতক্ষণ মুখ বুজে সহ্য করে নিলেও এবার আর সহ্য করতে না পেরে যেই গালে থাপ্পর মারতে যাবে অমনি হাত ফস্কে নিচে পড়ে গেলো। যেহেতু ঝুঁকে থাকার জন্য শরীরে পুরো ভার হাতের উপরে ছিলো সেহেতু দেয়াল থেকে হাত সরাতে উপর হয়ে পড়ে গেলো। আর প্রীতি যেহেতু শাফীনের পিছু ছিলো তাই শাফিন হঠাৎ এভাবে পড়ে যাওয়াতে প্রীতিও নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পেড়ে ঠাস করে পড়লো শাফীনের উপরে।

প্রীতি শাফীনের উপর পড়তে শাফিন আর্তনাদ করে বলে উঠলো ওরে মোটা হাতি পড়ার মতো জায়গা পেলি না, আমার উপরেই পড়তে হলো। হাতির বাচ্চা তারাতাড়ি সর আমার উপর থেকে, আমাকে চেপ্টা বানিয়ে দিলো রে।

প্রীতি তারাতাড়ি শাফিনের উপর থেকে উঠে বললো আমার দোষ নাকি? তুমি পড়ে গিয়েছো দেখেইতো আমি পড়ে গিয়েছি।

আরে মোটা হাতি কথা পড়ে বলিস আগে এখান থেকে ভাগ, পারফি দেখলে আজ আর রক্ষা নেই।

হ্যা তাইতো ভাইয়া আসার আগে তারাতাড়ি চলো এ বলে প্রীতি দৌড়ে চলে যেতে নিলে শাফিন বলে উঠলো আরে কানি আমাকে আগে তোল।

প্রীতি কয়েক সিঁড়ি নিচে নেমে গিয়েছিলো। শাফিনের কথায় আবার ফিরে এসে শাফিনকে টেনে তুলতে তুলতে বললো তারাতাড়ি চলো ভাইয়া আসছে।

শাফিন প্রীতির সাহায্যে উঠে দাঁড়িয়ে দুজন মিলে দিলো ভো দৌড়।

এদিকে কিছু পড়ার শব্দে পারফি সিঁড়ির কাছে এগিয়ে আসলো, পিছু পিছু ইয়ানা ও আসলো।
সিঁড়ির কাছে আসতে কোনো কিছুই চোখে পড়লো না।

ইয়ানা বললো এখানেতো কিছুই নেই তাহলে কিসের শব্দ হলো?

পারফি চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললো দুটো বাঁদর আছে না আমাদের বাসায়, সে বাঁদরের কারসাজি ছাড়া আর কি হবে?

পারফির কথার মানে ইয়ানা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পড়ে বুঝতে পারলো পারফির কাথার মানে।

পারফিরা আর ছাঁদে না থেকে রুমে চলে গেলো। রুমে এসে ইয়ানাকে মেডিসিন খাইয়ে দিলো যেহেতু জ্বর এখনো হালকা আছে শরীরে।

পারফির প্রতিটা কাজ ইয়ানা মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো। এই যে পারফির ছোটখাটো কেয়ার গুলো বরাবর এই ওকে মুগ্ধ করছে।
—————-
কেটে গেলো এক সপ্তাহ আজ ইয়ানা আর পারফির বিয়ের রিসিপশনের আয়েজন করা হলো।

গেস্টরা সবাই একে একে আসতে লাগলো। সেই সাথে উপস্থ হলো একিজা আর এনামুল খান। এলিজা বাসায় প্রবেশ করেই দাঁত কটমট করে তাকালো সোফায় সেজেগুজে বসে থাকা ইয়ানার দিকে। ইয়ানা আর পারফি পাশাপাশি বসা তা দেখে পুরো শরীরে আগুন ধরে গেলো যেনো। অনেক কষ্টে নিজের রাগ কন্টোল করার চেষ্টা চালিয়ে গেলো।

এদিকে ইয়ানা বার বার সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। অপেক্ষা করছে কখন বাবা-মা, বোনরা আসবে। কতোদিন তাদের থেকে দূরে থাকছে। মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে কখন প্রিয় বাবাকে দেখবে। চাতক পাখির মতো বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেখা মিললো ইসহাক আহমেদের সাথে। প্রীতি ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো ইসহাক আহমেদকে।
ইসহাক আহমেদ ইয়ামার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। এতোদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে বুকটা হালকা হলো। আদরে মেয়েকে ছাড়া থাকতে যে বড্ড কষ্ট হয়।

ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো তা দেখে ইসহাক আহমেদ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো বোকা মেয়ে কান্না করছো কেনো? এই যে বাবাই চলে এসেছি, আজ তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো কান্না করে মা মামনী।

ইতি বেগম পিছ থেকে বলে উঠলো সব ভালোবাসা বাবার জন্যই তাইনা? মাকে তো কারো চোখেই পড়ছে না।

ইতি বেগের কথায় ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ছেড়ে ইতি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছো মা?

ইতি বেগম ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? এখানে থাকতে কোনো অসুবিধা হয়?

ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো যে এখনে থাকতে অসুবিধা হয় না। ইয়ানা ইতি বেগমকে ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো মা ইমা আপু কোথায়?

এই যে আমি, বাসায় প্রবেশ করতে করতে বললো ইমা। ইমাকে দেখে ইয়ানার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। ইমা এসে ইয়ানাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো আমার বোনটা কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো আপু?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো, এখন তোকে দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি।

একে একে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো সবাই। এভাবে সারাদিন কেটে গেলো। এবার সময় এসেছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাই ইসহাক আহমেদ পাভেল চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললো ভাইসাব আজ আমাদের সাথে ইয়ানা মামনীদের নিয়ে যাই মেয়েটা কিছুদিন ঘুরে আসুক।

পাভেল চৌধুরী বললো হ্যা অবশ্যই, নিয়ে যান ঘুরে আসুক কিছুদিন তাহলে মন ফ্রেশ হবে।

ইসহাক আহমেদ খুশি হয়ে ইয়ানাকে বললো ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। ইয়ানার খুশি দেখে কে বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে। খুশি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। একদম শেষ সিঁড়িটা যখনি পার হতে যাবে অমনি কেউ সজরে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো। আকস্মিক ধাক্কায় ইয়ানার কলিজা কেঁপে উঠলো। নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পেরে পড়ে যেতে নিবে তার আগেই কেউ ছুটে এসে বুকের মাঝে আগলে নিলো।

ইয়ানা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। একটু আগে ওর সাথে কি হতে চলেছিলো ভাবতে বারবার শিউরে উঠছে। ইয়ানাকে এতো ভয় পেতে দেখে পারফি পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে দিতে বললো রিলাক্স কিছু হয় নি, তুমি দেখো কিছু হয় নি একদম ঠিক আছো তুমি। একটু শান্ত হও আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।

পারফির কথা শুনে ইয়ানা যেনো জীবন ফিরে পেলো। কিছুক্ষণ নীরবে পারফির বুকের সাথে লেগে থেকে নিজেকে শান্ত করলো। ইয়ানা কিছুটা শান্ত হতে পারফি নিজ থেকে ছাড়ালো ইয়ানাকে। ইয়ানার গালে হাত রেখে বললো কিছু হয় নি সব ঠিক আছে।

ইয়ানা আস্তে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো কে এভাবে ধাক্কা দিলো, তখন চোখে পড়লো কিছুটা দূরে একটা মেয়ে ওর দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা তাকাতে নিজের ভাব ভঙ্গি পাল্টে কষ্ট পাওয়ার ভান করে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো আম এক্সট্রিমলি সরি তখন তারাহুরো করে নামতে যেয়ে তোমার সাথে ধাক্কা লেগে গেছে। আমি সত্যি খেয়াল করি নি।

মেয়েটার কথা কেনো যেনো ইয়ানার বিশ্বাস হলো না কারণ তখন স্পষ্ট ভাবে মনে হয়েছিলো কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এভাবে ধাক্কা দিয়েছে। ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তখন পারফি ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো তুমি রুমে যেয়ে ব্যাগ গোছাও আমি আসছি।

ইয়ানা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রুমে চলে গেলো।

ইয়ানা যেতে পারফি আগুন চোখে তাকালো এলিজার দিকে।

পারফির তাকানো দেখে এলিজা ভয় পেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো পারফি আমি সত্যি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই…

আর কিছু বলার আগেই পারফি আগুন চোখে এলিজার দিকে তাকিয়ে বললো বিড়াল ছানার গায়ে কেউ একটা টোকা দিলেও তাকে আমি জ্যান্ত পু/তে দিবো। আজ স্নিগ্ধ ফুলের দিকে আঙুল বাড়িয়েছিস, শুধু ছেড়ে দিলাম এখানে প্রেশ মিডিয়া আছে বলে। নেক্সট টাইম স্নিগ্ধ ফুলের দিকে হাত বাড়াবি তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকালেও সেই চোখ আমি উপরে ফেলবো।

পারফির এমন কথা শুনে চুপসে গেলো এলিজা, আর কিছু বলার সাহস হলো না।

পারফি আগুন চোখে এলিজার দিকে তাকিয়ে উপরে যেতে যেতে বললো বি কেয়ারফুল কথা গুলো যেনো মাথায় থাকে।

পারফি ওখান থেকে যেতে এলিজা রাগে ফুঁসে উঠলো। আপনি থেকে সরাসরি তুইতে চলে গেলো সাথে থ্রেট ও দিয়ে গেলো যেগুলো এলিজা মেনে নিতে পারছে না। রাগে ইচ্ছে করছে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে কিন্তু এখানে কিছু করতে পারছে না তাই হনহনিয়ে সোজা বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।

এদিকে পারফি রুমে এসে দেখলো ইয়ানা থম মেরে বেডে বসে আছে। ইয়ানাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে পারফি আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে ইয়ানার পাশে বসলো।

ইয়ানা একবার পারফির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে ফেললো।

পারফি ইয়ানার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কোমল স্বরে বললো এখনো নার্ভাস লাগছে?

ইয়ানা একবার হাতের দিকে তাকিয়ে ফের পারফির দিকে তাকিয়ে বললো ওই মেয়েটা মিথ্যা বলছে কারণ তখন কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে ধাক্কা মেরেছিলো। ওই মেয়েটাকেতো আমি চিনি ও না, কখনো দেখেছি বলেতো মনে হচ্ছে না তাহলে ওই মেয়েটার আমার সাথে কি এমন শত্রুতা থাকতে পারে?

পারফি ইয়ানাকে সারাসরি বললো মেয়েটা আমার বিজনেসপার্টনারের মেয়ে। মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে তাই তোমার ক্ষতি চাচ্ছে। আমি চাইনা আমাদের মাঝে কোনো ভুলবোঝাবুঝি হোক তাই তোমাকে আগে থেকে সবটা বলে রাখলাম। নেক্সট টাইম ওই মেয়ে তোমার আশেপাশে আসলেও সাথে সাথে আমাকে জানাবে কেমন?

পারফির কথায় ইয়ানা অবাক হলো বেশ। সাথে ভালো ও লাগছে পারফি নিজ থেকে ওকে সবটা খুলে বলেছে সেই জন্য। ইয়ানা নিজেও চায় না ওদের মাঝে কখনো ভুলবোঝাবুঝি হোক। একটা সম্পর্ক তখন এই মজবুত হয় যখন একে অপরের কোনো কথা লুকিয়ে না রেখে শেয়ার করলে। একটা সম্পর্ক তখন এই ভাঙন ধরে যখন দুজনের মাঝে লুকোলুকি হয়। পারফির সাথে ওর সম্পর্কটার ঠিক কি নাম দেওয়া যায় ইয়ানার তা ঠিক জানা নেই। কিন্তু ইয়ানা মন থেকে চায় এই সম্পর্কে কোনো দিন যেনো ভুলবোঝাবুঝি যেনো না আসে। সারাজীবন একে অপরের পাশে ছায়া হয়ে থাকতে পারে।

পারফির কথায় ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো যে ওই মেয়ে আশেপাশে আসলেও জানাবে।

ইয়ানার সম্মতিতে পারফি বললো গুড গার্ল, যাও এবার জামাকাপড় গুছিয়ে নেও নিচে বাবারা ওয়েট করছে।

ইয়ানা সম্মতি দিয়ে আলমারির কাছে যেতে যেতে বললো আপনার জন্য কি কি নিবো?

তোমার যেটা ভালো লাগে নিয়ে নেও।

ইয়ানা ফের সম্মতি দিয়ে নিজের জন্য আর পারফির জন্য কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে নিলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here