তোকে_ঘিরে❤ #পর্ব_০৬ #ফাবিয়াহ্_মমো🍁

0
829

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_০৬
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

চোখ খুলে দেখি মাথার উপর ঘটরঘটর করে সিটি ফ্যান ঘুরছে, কোমরের নিচে আইসপ্যাক, কাটা পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে একইন্ঞ্চি উপরে তোলা হয়েছে, পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে খালামনি। আমি উঠতেই উনি বলে উঠলেন,
– আরে থাম থাম, উঠছিস কেন? শুয়ে থাক। শরীরে কি ব্যথা পেয়েছিস! উঠিস না।
– খালামনি আমি এদিকে? বাড়ির পিছনে না ছিলাম,
– তুই ওমন সন্ধ্যার দিকে ওখানে গিয়েছিলি কেন? মানা করেছিলাম না বাড়ির পেছনে যেতে?
– খালামনি হাওয়া নিতে গিয়েছিলাম গো। আমি একটু বাথরুমে যাবো,
– আয় চল,

খালামনি আমাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে উঠোনের দিকে চলে গেলেন। আমি কমোডের দিকে তাকিয়ে পুরো হা! কেউ কমোডের পেছন দিকে কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছে। কি আজব রে বাপ! বাথরুমে কেউ কয়েল জ্বালায়? কার কাজ এগুলি? আমি গলা উচিয়ে ‘খালামনি ও খালামনি এদিকে এসো’ বলে ডাকতেই খালামনি দরজায় হাজির। আমি দরজা খুলে উনাকে কীর্তিকান্ড দেখালে খালামনি বলে উঠে,

– বাথরুমে কে রে কয়েল জ্বালাইছে? ভুলে পা আলগি দিয়ে উঠতে গেলে পায়খানার রাস্তায় কয়েলের আগুন লাগবো! কার কাজ রে এগ্লি? ওয়াকিল ও ওয়াকিল!! বাপ কই তুই?

ওয়াকিল ভাইকে ডাক দিতেই মামী, মা, সুহাস ভাই বাথরুমে উপস্থিত। ওয়াকিল ভাই তো ইতিমধ্যে ভয়ংকর দুটো গালি ঝেড়ে ফেলেছে বাথরুমে কয়েল রাখা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে নিয়ে!! মামী তেজী গলায় বলে উঠলো,
– দেখছো নি কারবার? বাথরুমে কেউ কয়েল জ্বালায়া যায়? গোয়ার মধ্যে আগুন জ্বললে দৌড়ানোরও জায়গা পাইবো না। কি ছ্যাড়াব্যাড়া কাজ!!
ওয়াকিল ভাই কয়েল বসানো স্টেন্ড এনে বাইরে ছুড়ে মারলো। উনি একদফা ছবক ছেড়ে বললেন,
– যে কাজটা করছে মনটা চাইতেছে ওর পশ্চাদ দেশ পুড়িয়ে দেই! বেত্তমিজ! বাটপার!!

হঠাৎ কাচুমাচু করে খালু এগিয়ে বললেন,
– ওয়াকিলের মা একটু আসবা?একটা কথা ছিলো?
খালামনি কোমরে আঁচল গুজে হুঙ্কার দিয়ে বললেন,
– শুনো! মাথা কইলাম টাল হইয়া আছে!! যা বলার এইখানেই কও!!
খালু মুখটা অমাবস্যার রাতের মতো কালো করে বললেন,
– বাথরুমে শান্তি মতো বসা যায় না গো ওয়াকিলের মা। মশা কামড়ায়। এমন জায়গায় কামড়ায় হাত দিয়া চুলকাইতেও পারিনা। বাথরুমে শান্তি মতো বসতে না পারলে পেট ক্লিয়ার হয়?

খালামনি লজ্জায় মাথা তুলতে পারলেন না সোজা চলে গেলেন মাচা ঘরে। আমি, ওয়াকিল ভাই, সুহাস ভাই, মামী, মা সবাই হো হো করে অট্টহাসি। আমাদের হাসির শব্দে খালু জোরপূর্বক হাসি দিলেন ঠিকই কিন্তু বেচারা হনহন করে পালালো বাইরে। আমি হাসতে হাসতে দরজা লাগিয়ে দিলাম। বাইরে সবাই খিলখিলিয়ে পেট ফাটা হাসিতে মেতে উঠেছে। আহা! খালু! আপনার রসিকতা জিন্দাবাদ!!

জালির জানালা ভেদ করে একটুকরো মিষ্টি রোদ আমার মুখের উপর পড়তেই ঘুম ঠেলে চোখ কচলাতে কচলাতে আমি উঠে বসি। দুইহাত দুইদিকে প্রসার করে শরীর টানা দিলাম। আহ্ কি দারুন একটা দিন! আজ আপুর বৌভাত! কি যে মজা হবে!! পর্দার উপর জালির ত্রিকোনা শেপ ভেসে উঠেছে, মাঝেমাঝে পর্দার নড়াচড়াতে শেপগুলোও নাচানাচি করে উঠে। আমি কলপাড়ে যেয়ে চাপকলের পানিতে মুখ হাত ধুয়ে নাস্তা সেরে ব্যান্ডেজ পুরোটা খুলে ফেললাম। পায়ের কাটা জায়গাটা বাতাসে শুকানো দরকার।

স্পন্জের জুতা পায়ে উঠোন পেরিয়ে বাঁধের রাস্তা ধরেছি। বাঁধ হলো অনেকগুলো পুকুরের সমাবেশ। মূলত দুধারে থাকে পুকুরের পর পুকুর এবং মাঝখানে থাকে মেটোপথ। একটা পুকুর শেষ হলে আবার আরেক পুকুরের আগমন। আমি সোজাসুজি দুইটা পুকুর অতিক্রম করে বায়ে মোর নিতেই চলে এলাম সবুজ ঘাসভর্তি ঈদগাহ মাঠের কাছে। ঈদগাহ মাঠটাও অপূর্ব সুন্দর! সামনে ঈদগাহ্ মাঠ, ডানে পুকুর, বামে পুকুর, পিছনে বিশাল বটগাছের পাশ ঘেঁষে ফিরে যাওয়ার রাস্তা। ঈদগাহ্ মাঠে এককোণাতে ছোটখাটো ইটসিমেন্টে বাধাই করে একটা মিনার বানানো হয়েছে। এখান থেকেই বছরের পবিত্র ঈদ দুটোতে আযান এবং জামাতে সালাত আদায় হয়। ঈদগাহ্ মাঠ মুসলিমদের জন্য মিলনস্থল হলেও আপাতদৃষ্টিতে এটা সবার জন্য আড্ডাখানা। এখানে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসে আড্ডা দেয়। আমি মিনারের তিনটা নিচু সিড়ি বেয়ে ভেতরে ঢুকে বসলাম। মিনারের চারপাশটা খোলামেলা। কোনো লম্বা দেয়াল নেই তবে ভূমি থেকে একহাত উচু করে চারদিকে ছোট দেয়াল দেয়া হয়েছে। সবাই ওই একহাত উচু দেয়ালের উপরই বসে থাকে। বাতাস আসে প্রচুর। এখান থেকে ব্রক্ষপুত্র নদের এক ঝলক দৃশ্য দেখা যায়। নদীভাঙনের ফলে এখন ঈদগাহ্ থেকেই নদী দেখা যায়। সকাল আটটা। তাই বড় মানুষ নেই। মাঠে ছোটছোট বাচ্চারা ‘বরফপানি’ খেলছে। সবুজ ঘাসের উপর একপ্রান্ত জুড়ে কাথা, চাদর, জামা – কাপড় রোদ পোহাতে দিয়েছে। হঠাৎ দেখি ওয়াকিল ভাই, সুহাস ভাই, তানিয়া আসছে। উনারা এসে আমার পাশে ছোট দেয়ালে বসেই গল্প জুড়ে দিলেন। খুবই মুখরোচক গল্প! তানিয়া আমার সময়বয়সী, ওয়াকিল ভাই জব করছে, নুহাস ভাই মার্স্টাসে পড়ছেন।

– পূর্ণতা তুই মুখে কুলুপ এটে বসে আছিস কেন? কিছু বল, বফ কেমন আছে?
– ওমা কিসের বফ!
– ওমা করার কি আছে তোর বফ নেই?
– ছিলো এখন নেই।
– নেই মানে? ব্রেকআপ?
– ওয়াকিল ভাই ওটা কোনো প্রেমের জাত হলো? আমার সাথে অন রিলেশনে থাকাকালীন সে আরো দুটো মেয়ের সাথে ফস্টিনস্টি করেছে।
– হায় হায়! কি বলিস? ছেলে লুচ্চা ছিলো?
– ভাই লুচ্চা তো ছিলোই! সাথে লুচির মতো ফুলে উঠতো! খুবই নোংরা কথা বলতো ভাই। রাতে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতো ড্রেসাপ কি, খুবই অশ্লীলভাষী কথা বলতো, খারাপ খারাপ ছবি দেখতো। জানো? খলিফার নাম বলে একটা ভালো বূজূর্গ ব্যক্তিকে নিয়ে প্রচুর বাজে কথা বলতো,
– খলিফার নামে?
– হ্যাঁ..একটা পুরুষজাতীয় নাম বলতো। দাড়াও মনে করছি….হ্যাঁ মনে পড়েছে মিয়া খলিফা।

আমার এই উত্তর শুনে ওয়াকিল ভাই কি যে হাসি হাসলেন আমার মাথা গরম হয়ে গেলো! আমি চেঁচিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
– ওয়াকিল ভাই তুমি হি হি করে হাসছো কেন?
ওয়াকিল ভাইয়ের পিঠ চাপড়ে সুহাস ভাইও হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। তানিয়া মুখ টিপে হাসছে। আমি মুখ গোমড়া করে খালি উনাদের হাসির তেজটা দেখছি! এখানে হাসির কি হলো? ওয়াকিল ভাই অনেক কষ্টে হাসি আটকে বলে উঠলেন,
– বেচারির জেন্ডার চেন্জ করে ফেলছে গাধায়! আরে ওটা একটা পর্ণস্টার!
আবারো হাসতে লাগলেন। মানে? ও মাবুদ! কি দুনিয়ায় বাস করি? আমি খলিফার নাম শুনে আহাম্মকে মতো ভেবেছি কোন্ নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি জানি!! নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্… আল্লাহ্ এই গুনাহ্ মাফ করো! ছি ছি!!

.

বিকেলের দিকে গোসল সেরে সাদা থ্রিপিস পড়েছি। টকটকে গাঢ় নীলের সালোয়ার পড়ে, লম্বা ওড়না গলায় ঝুলিয়ে হালকা একটু সেজেছি। আজ আপুর বৌভাত। আনিশা আপু ও নতুন দুলাভাই এ বাড়িতে আসবেন। কাল আপু ফোন কাটার পর আর কল করেনি। মা আমাকে দুপুরে খাইয়ে চলে গেছেন রান্না দেখতে। বড় বড় ডেগ পাতিলে রান্না চলছে হরদমে। পোলাও, মাংস, সবজির গন্ধে চারপাশ মৌমৌ করছে। বাড়ির উঠোনে বিশাল প্যান্ডেল সাজিয়ে টেবিলে খাবারের পসরা মেলে মেহমান আপ্যয়ন করছে বাড়ির সবাই। নানাভাই সকাল থেকেই দস্তর ব্যস্ত। পানি খাওয়ার মতো ফুরসত পাননি এখনো। আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি সবাই খুব হুড়োহুড়ি করে মেহমান দেখছেন। হঠাৎ চোখ আটকালো কালো পান্জাবী পরিহিত এক পুরুষের দিকে। মুখে গাম্ভীর্যের আভা, চুলগুলো ভালো করে সেট করা, হাতের দুই কনুইয়ের একটু আগে মোড়ানো হাতা, মোড়ানো অংশে খয়েরী রঙ ভেসে উঠেছে। বাঁ হাতে মোটা বেল্টের কালো ঘড়ি, ডানহাতে খাচ্ছে। উনি এখানে? নানাভাই কি উনাদের পরিবারও আমন্ত্রণ করেছে? ওই টেবিলটায় কি ছিলো জানিনা, মেয়েরা যারা অতিথি রূপে এসেছে মিচকি মিচকি ওখানেই তাকাচ্ছে। হঠাৎ হুল্কার মতো পিঠে এক ঘা কষে বলে উঠলো তানিয়া,
– মাই গড পূর্ণতা! আজ তো পাক্কা দশটা পটবে মাস্ট! ওহ্ কি লাগছে!
– তুই ফাজলামি বন্ধ করবি? ইশ পিঠে এত জোরে কেউ দেয়? খার খার করে পুড়ছে!
– আচ্ছা বলতো গেস্টদের মধ্যে কোনটা জোশ? ওই কালোটা? নাকি চাশমিশটা? নাকি ওইযে মেরুন রঙেরটা?
– জানিনা।
– জানিনা আবার কি? বল না!!
– তুই ফুটবি এখানে থেকে?
– রাগছিস কেন? চিল! জাস্ট বল কোনটা ধরবো?
– বাড়ির পেছনে কালা কুত্তা আছেনা? কোলে নিয়ে চুমা খা। যা!

হন্তদন্তে বেরিয়ে এলাম উঠোনের কাছ থেকে। বেলা পড়েছে এদিকে যেকোনো মূহুর্ত্তেই আপুরা আসবে। মা আমাকে ডেকে বললেন,
– পূর্ণতা? পিঠার ডালা গুলো বড় ঘরে রাখ তো। ওখানে মূসা সাহেবের পরিবার বসে আছে। পিঠা দিয়ে আয়।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– মা মূসা কে?
– তোর নানাভাইয়ের পরিচিত। বন্ধুসুলভ মানুষ। একসাথে উঠেবসে বুঝলি? এখন কথা না বারিয়ে যা।
– যাচ্ছি। আচ্ছা মা কোন পিঠা আগে দিবো? তেলের পিঠা না দুধপুলি?
– তেলের পিঠা আগে দেওয়ার নিয়ম। ওটাই দিবি।

বড় পিঠার ডালা নিয়ে বড় ঘরের দিকে যাচ্ছি। দুটো সিড়ি টপকে ভেতরে ঢুকে আগত মেহমানদের রুম খুজছি। এখানে একসাড়িতে আটটা রুম, কোন রুমে যে বসে আছে বুঝতে পারছিনা। একটা একটা করে রুমে ঢু মারতেই শেষে ছয়নাম্বার কক্ষে দেখি নানাভাই ও উনারা। সবাই দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসেছে বিধায় আমাকে তারা দেখতে পাচ্ছেনা। আমি নানাভাইকে চোখের ইশারায় পিঠা এনেছি বুঝিয়ে ভেতরে ঢুকে ডালা টেবিলের উপর রাখলাম। প্লেটে পিঠা বেড়ে উনাদের দিকে রাখতেই আমার হাত থরথর করে কাপছে! শরীরের ভেতর ঝিমঝিম করছে! বুক ধুকপুক করছে! আমাকে এভাবে থমকে যেতে দেখে নানাভাই নিজেই পিঠার প্লেট রেখে দিলেন। আমি এখনো উনাদের দিকে এখনো তাকিয়ে আছি। সেম একইদৃষ্টিতে উনারাও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নানাভাই এবং তার বন্ধু মূসা নানার একটু খটকা লাগতেই মূসা নানা বলে উঠলেন,

– তোমরা কি একে অপরকে চিনো? ফুয়াদ, মিথুন, জাওয়াদ, সায়মা? কিছু বলবে?

হঠাৎ জাওয়াদ নামের ছেলেটা আড়মোড়া ভেঙ্গে অনিচ্ছুক একটা হাসি দিয়ে বললেন,
– হ্যাঁ চিনি তো, না মানে মেম্বার নানা তো মাত্রই দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর সাথে সবার পরিচয় করালেন। তাই মেয়েটাকে চিনতে পেরে তাকিয়ে আছি।
– হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো, নাও নাও পিঠা নাও। এ বাড়ির পিঠা কিন্তু খুব সুস্বাদু। একবার খেলে পেট ভরবে! মন ভরবেনা।। খাও।

আমি বড়জোড় একটা ঢোক গিলে চলে গেলাম। পায়ের দিকে একবার চোখ তুলে তাকালাম। সায়মা নামের মেয়েটা পেনসিল হিল দিয়ে জোরে চাপ না দিলে আমার পা-টা এতো কেটে যেতো না। লাত্থির কথা তো না বলাই ভালো। পূর্ব ভাইয়ের সামনে ভুলেও যাবো না! কাল সন্ধ্যায় যেভাবে ট্রিট করলেন এখন কোমর কুজো করে একটা কাজও করতে পারিনা। নাহ্…জীবনেও উনার সামনে যাবো না! কানে চিমটি কেটে ধরছি! সামান্য ভাই বললেই ফায়ার? আচ্ছা বোনের সাবেক প্রেমিককে ভাই বলবো নাতো কি বলবো? বাবু বলবো? যত্তসব আজাইরা! আমার সাথেই যতো পাঙ্গা!

আনিশা আপু – দুলাভাই এবং উনার শ্বশুরবাড়ি থেকে আগত আত্মীয়স্বজনদের মাঝে আমাদের ছোটঘরে বসে আছে। ছোটঘর হলো টিনের ঘর। বড়ঘর হলো ইট সিমেন্টের একতলা দালান বাড়ি। ছোটঘরের সবচেয়ে নান্দনিক রুমটায় আপুদের উপস্থিতি। আমি আপুকে নিয়ে বাইরে বের হলাম ওমনেই আপু বায়না করে বসলো উনি বড়ঘরে যাবেন। নানাকে নাকি দেখবেন। বেশ! নানাকে দেখতে গিয়ে হঠাৎ উনি অবাকদৃষ্টিতে বারান্দার কাছে পূর্ব ভাইকে দেখতে পেয়ে দৌড় দিলেন। পূর্ব ভাই মোবাইলে কথা বলছিলেন হঠাৎ আপুকে দেখে উনি ফোন নামিয়ে ভ্রুকুচকে ফেললেন। আনিশা আপু এরপর যা করলেন তাতে আমি থ! পূর্ব ভাইয়ার পান্জাবীর কলার আকড়ে সোজা খালি রুমে টেনে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমি ঘটনাক্রমে প্রচণ্ড অবাক হলেও আশপাশের অবস্থা দেখছি। কেউ যদি আপুর এই উটকো কান্ড দেখে কেমন হূলস্থুল অবস্থা সৃষ্টি হবে কে জানে! না কেউ দেখেনি। হুড়োহুড়ি ব্যস্ততার চাঁদরে সবাই ন্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমি পা ঘুরিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছি বারবার পিছু ফিরে দরজায় তাকাচ্ছি। আপু পূর্ব ভাইকে নিয়ে একা একটা রুমে দরজা লাগিয়ে কিছু করবে?

– আনিশা হাত ছাড়ো! যেতে দাও বলছি!
– একবার ভুল করেছি আর না! তোমাকে আমি যেতে দিবো না!
– আনিশা প্লিজ বুঝো! তুমি এখন বিবাহিত! তুমি আমার সাথে এভাবে দেখা করতে পারো না!
– আমি তোমার সাথে সব করবো পূর্ব! তুমি আমাকে যে কষ্ট দিয়েছো তা আমি চুকিয়ে ছাড়বো!

কথাটুকু বলেই আনিশা ধাক্কা দিয়ে পূর্বকে বিছানায় ফেলে দিলো। পূর্ব দুহাতে ভর দিয়ে উঠতে নিলে আনিশা আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আনিশার এই রূপ কখনোই দেখেনি পূর্ব! পূর্ব আজ হতবাক, আশ্চর্য, বাকরুদ্ধ! আনিশা নিজের কাধ থেকে আচঁলের সেইফটিপিন খুলছে, চুলের খোপা ছেড়ে দিয়েছে, পা থেকে জুতো খুলতেই পূর্ব ঝট করে উঠে আনিশার গালে থাপ্পর মারে। আনিশা গাল ধরে দু’কদম পিছিয়ে যায়। আহত দৃষ্টিতে পূর্বের দিকে তাকালে পূর্ব হাতঘড়িটা খুলে পকেটে ঢুকিয়ে বলে,
– তোর মতো নোংরামি করার শখ বা ইচ্ছে থাকলে আমি বহু আগেই সেটা করতাম! তোর সঙ্গ পাওয়াটা দূরূহ ছিলো না আনিশা! তুই নিজের হাতেই তিনবছরের প্রেমটাকে ক্ষুন্ন করলি! চলে যা সামনে থেকে! আর কক্ষনো তোর নোংরা মুখখানা দেখাবি না!
আনিশা চোখের পানি ছেড়ে সিক্ত গলায় বলে উঠে,
– আমি তোমাকে চাই পূর্ব! আমি তোমাকে পেতে চাই! শেষমূহূর্ত পযর্ন্ত আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি, ভেবেছি তুমি আমায় নিয়ে যাবে, বিয়ে করবে! তুমি আসোনি! তুমি আমার সাথে এরূপ কেনো করলে পূর্ব? কি দোষ ছিলো আমার? কেনো আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?
– ভুল! তুই ভুল বলছিস! আমি তোকে কষ্ট দেইনি বরং তুই নিজেই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিলি! একবার ভাব্, কখনো আমি নিজ থেকে তোকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি? বিয়ে করতে চেয়েছি? কোনোটার একটাও আমি করিনি। তবুও আমি তোর সাথে প্রেম নামক শিরোনাম দিয়ে এক জটিল সম্পর্কে জড়িয়েছি। যেখানে প্রেম তো ছিলোই না! প্রেম নামে কি ছিলো তাও আমি জানিনা! তুই কি আমার ভালো বন্ধু না? প্রেমিকা হতে পেরেছিলি? হ্যাঁ আমি শেষমূহূর্তে খুব কষ্ট পেয়েছি তুই বিয়ে করেছিস বলে! কিন্তু এখন আমার আফসোসও নেই আনিশা! কেনো নেই তাও জানিনা! ওই মূহুর্তে তোর বিয়েটা আটকাতে আসলে তোর সাথে আমার বিয়েটা হতো কিনা আমি জানিনা! তুই একটা জিনিস খেয়াল করেছিস আনিশা? তোর আমার সম্পর্ক একটা ‘জানিনা’ শব্দের মধ্যে আটকে আছে! এটা কি আদৌ প্রেম? তুই বল! এটা প্রেম? তোর সাইড থেকে তুই প্রেমের দাবী করতে পারিস! আমি কেনো পারিনা! মুখ থুবড়ে বেরও হয়না ‘আমি ভালোবাসি’ বা ‘তোকে পছন্দ করি’। কি নিয়ে তোর সাথে সম্পর্ক করেছিলাম আনিশা? কি ভেবে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম? তোর প্রতি আমি ডেসপারেট ফিল করিনা কেন? কেনো আমি পাগলামি করিনা? তুই দূরে থাকলে কেন চোখ থেকে বর্ষা নামেনা? তুই জানিস, যখন তোর বিয়ের নিউজ তোর ছোট কাজিন বোনের কাছ থেকে পাই কয়েকসেকেন্ডের জন্য আমি বেতাল হয়েছিলাম! জাস্ট কয়েকসেকেন্ড! কিন্তু প্রেমে কেউ কয়েকসেকেন্ড মাতলামি করে? আজীবন মাতলামি করে! আজীবন আফসোসের মায়াজালে নিজেকে খুন করে! আমি আফসোস করতে পারছিনা কেন আনিশা? বলবি তুই?

আনিশা নিশ্চুপ! চোখের পানি নাকের ডগা, চোখের কোনা দিয়ে টলটল করে বেয়ে পড়ছে পূর্বের কথার প্রতিটি প্রশ্নচিহ্নে নিজেকে দিশেহারা ভাবছে। আনিশা হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে ঢোক গিলে শান্ত সুরে বলে উঠলো,
– তুমি আমাকে ভালোবাসো পূর্ব। তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। আমি বুঝি। আমি টের পাই। কিন্তু তুমি সেটা মেনে নিচ্ছোনা। একটাবার আমাকে ছুয়ে দেখো তুমি দিব্যি বুঝে যাবে তুমি আমাকে কতো ভালোবাসো। হাতটা নিবে? তোমার বুকে ওই হার্টসিস্টেমটার ওইদিকে আমার এই হাত রেখে দেখবে? দেখো না একবার। একবার দেখো পূর্ব!!

পূর্ব বুকফুলিয়ে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে আনিশার কাছে এগিয়ে গেলো। আনিশা ওর ডানহাত পূর্বের প্রশস্ত বুকের বামপাশটার উপর রাখলো। আনিশা আরেকহাত এগিয়ে পূর্বের চোখ ঢেকে মৃদ্যূস্বরে বললো,
– আমার ছোঁয়া অনুভব করো পূর্ব, তুমি আমার স্পর্শ গভীরভাবে অনুভব করো। আমার জন্য তোমার বেড়ে ওঠা প্রেমটা তুমি টেনে বের করো পূর্ব, ওটাকে বন্ধুত্বের নামে আটকে রেখোনা…

পূর্ব কিছু সময় পর বলে উঠলো,
– আমার কোনো ফিল হচ্ছেনা।
– হবে! কেনো হবেনা? হবে! তুমি আমার স্পর্শে প্রচুর অস্থির ফিল করবে তোমার নিশ্বাস আটকে আসবে, তুমি শ্বাস নিতে প্রচুর হিমশিম খাবে, মাথা রিন রিন করবে, বুকে ভেতর চাবুকের ঘা ঠুকবে, শিরা উপশিরায় রক্তের বেগ দ্রুতগতিতে ছুটবে…তুমি অজানা শিহরনে কম্পিত হবে পূর্ব!

পূর্ব আনিশার হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে কঠিন কন্ঠে বললো,
– তোমার আজগুবি ম্যালোড্রামায় আমাকে জড়াতে এসো না! তুমি এখন বিবাহিত! তুমি অন্য কারো সম্পদ! আজ থেকে তুমি দূরে থাকবে এটাই তোমার নিয়ম! যদি কাছে আসো ! কসম! তুমি জিন্দা থাকবেনা!

পূর্ব হন্তদন্তে বেরিয়ে দাদা ও ভাইবোনকে নিয়ে চলে গেল বাড়িতে। রাস্তায় অনেকবার জিজ্ঞাসা করেও জানতে পারেনি কেনো পূর্ব হুট করে চলে আসলো। পূর্ব রুমে গিয়ে দরজা সেটিয়ে পান্জাবীর গলা টেনে মাঝ বরাবর ছিড়ে ফেললো! এই পান্জাবী সে আর পরবে না! পুড়িয়ে ফেলবে এই পান্জাবী! হঠাৎ পান্জাবীর পকেট থেকে সাদা আলো জ্বলে ভুম ভুম কম্পনে শব্দ হলো। পূর্ব ফোনটাকে তুলে কানে সেটে বলে উঠলো,
– হ্যালো, আয়াশ ওয়াসিফ পূর্ব বলছি। কে আপনি?
– পূর্ব দা, আমি কৈলেশ বলছি। ফোন কাটবেন না পূর্ব দা!! আপনার জানের ঝুকি আছে!! রাতে আপনাকে খুন করতে লোক আসছে! আপনি শীঘ্রই পালান!
– হোয়াট! কে! কখন! কেন!
– মাত্রই গুপ্তচর থেকে খবর পেলাম পূর্ব দা!! চ্যাটার্জী মশাই লোক অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছে!! রাতের মধ্যেই আপনার গ্রামের বাসগৃহে লোক চলে আসবে!! আপনি পালান পূর্ব দা!
পূর্ব বিচলিত না হয়ে নিজেকে যথা সম্ভব ঠান্ডা রেখে বলে উঠলো,
– তোমাক একটা কাজ দিবো কৈলেশ! তুমি নিজে অফিসে যেয়ে পার্টিকে জানাবে! আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি। কে আসছে তাকেও আমি আপ্যয়ন করছি। তুমি পার্টির কাছে তথ্য জানাও! আর্জেন্ট! নাও!
– সব আপনার কথা মতোই হবে পূর্ব দা। সর্তক থাকবেন। রাখি।

কৈলেশ হলো পূর্বের ডানহাত বা-হাত মানুষ। সবচেয়ে বিশস্ত, ভরসাযোগ্য এবং বিশ্বাসী। পার্টির কাজে প্রায়ই মতভেদের প্রেক্ষিতে উনিশ-বিশ ঘটনা হলে পূর্বের উপর হুটহাট মৃত্যুর হুমকি আসে। কৈলেশ সেখানে গোপনচারীতার মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পূর্ব ভয় পায়না। ঠান্ডা মস্তিষ্কে বিচক্ষনতার সাথে সব ঝামেলা একাই মিটমাট করে। পূর্বকে এজন্য ‘ঠান্ডা মস্তিষ্কের খুনি’ও বলে অবশ্য। বড় বড় জটিল সব সমস্যা সে তুড়ি বাজাতেই মিটিয়ে দেয়। চ্যাটার্জী ওদের পার্টির খুব দামী লোক। টাকা পয়সা, মিডিয়া, সব যেনো হাতের মুঠোতে করে বেড়ানো লোক! পুরো নাম মহেশ চ্যাটার্জী। পার্টি থেকে বহিস্কারের পূর্বজ্ঞান পেয়ে সে পূর্বকে মারার জন্য নীল নকশা সাজিয়েছে বৈকি। পূর্বের মতো জোয়ান ছোকরার কাছে হেরে যাবে?প্রশ্নই উঠেনা! মহেশ চ্যাটার্জী আগাছা সাফ না করে, বরং মূল থেকে গাছটাই উখরে দিবে! এখন রাতে কি হয়, দেখবার বিষয়!

নিস্তব্ধ শান্ত নিবিড় রাত। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিপোকার ডাক। পথে পথে ডাকছে ভুখা কুকুর।। গাছ গাছালি ভূতুড়ে ভঙ্গিতে পাতা নাড়াচ্ছে।ডালপালা বাকাচ্ছে। কি অদ্ভুত নিশব্দ রাত! গা ছমছম করা ভয়! কাপুনি দিয়ে লোমকূপ জেগে উঠে এই সুনশান প্রহরে। পূর্ব বাড়ির সদর দরজার কাছে ঝোপের আড়ালে চুপটি করে আছে।। চোখ উজ্জ্বল, কান সজাগ, একহাত পিঠের পেছনে গুটানো, মস্তিষ্ক সচল! হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত শব্দের আশা পেলো। কেউ ধীর পায়ে খুবই চতুরতা সাথে এগিয়ে আসছে বাড়ির কপাটের দিকে। পূর্ব আধো অন্ধকারে দূরের এক নিয়ন বাতির স্বল্প আলোতে মুখে গামছা বাধা এক লোককে দেখতে পেলো। মাথাসহ পুরো মুখ গামছা দিয়ে বাধা শুধু টগবগ করা একজোড়া চোখ খোলা। হাতে লম্বা চকচকে ছুড়ি, দূরের আলোটা ছুড়িতে পড়তেই চোখ ধাধিয়ে উঠে, যেনো সদ্য ধার দেওয়া নতুন ছুড়ি। মস্তদেহী লোকটা খুব সাবধানে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে বাড়ির দরজায় আলতো চাপ দেয়। দরজা খোলাই ছিলো সেটা ক্যাচ করে পুরোটা খুলে যায়। পূর্ব পিঠের কাছে গুটানো হাতটা বের করে লোকটার ঠিক পিছনে দাড়িয়ে মুখের উপর চেপে ধরে। লোকটা তিনমিনিটের মধ্যে দাপাদাপি করে হুঁশ হারায়। মাটিতে ধপ করে পড়ে যায়। পূর্ব টানতে টানতে লোকটাকে বাড়ির পিছনে নির্জনস্থানে নিয়ে যায়। এখানে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারেনা, স্যাতস্যাতে তীব্র গন্ধ! পূর্ব কোমরের কাছ থেকে সেটে রাখা ছুড়িটা বের করে। হাটু মাটিতে লাগিয়ে অজ্ঞানে ডুবে থাকা লোকটার গলায় এক টান মারে! ফেনকি দিয়ে উঠে তাজা তরল রক্ত! লোকটা অজ্ঞান অবস্থাতেই কয়েকবার মাটির সাথে যুদ্ধ করলো! এরপর চিরতরে শায়িত হলো মৃত্যুর কোলে। ফিরেনা কোনো মানুষ যেই অদ্ভুত জায়গা থেকে! পূর্ব আধঘন্টার মধ্যে তিনহাত সমান গর্ত খুড়লো! পুতে দিলো লোকটার বিশাল লম্বা দেহ, লুকিয়ে ফেললো সেই ধারালো অস্ত্র! পূর্বের সারাগায়ে রক্তের ছড়াছড়ি, মুখেও ছিটাফোঁটা লেগে আছে, গায়ের ধূসর টিশার্ট লাল বর্ণে আলিঙ্গন করেছে। পূর্বকে বীভৎস খুনির মতো ভয়ঙ্কর লাগছে! একটা খুন করে শান্তির নিশ্বাস কিভাবে নিচ্ছে? সে কি খুনের কাজে পটু? হয়তো। নাহলে কেউ জবাই করে নিজেকে এতোটা ‘কাম ডাউন’ রাখে?

দাদুবাড়িতে প্রবেশ পথ তিনটা। একটা সম্মুখ দুয়ার, আরেকটা পেছন দুয়ার। তৃতীয়টা রান্নাঘরের ওদিকে। পূর্ব তৃতীয় দুয়ার দিয়ে খুব চুপিচুপি রুমে যেয়ে পৌছল। রান্নাঘর থেকে সোজাসুজি রুমে আসতে ওকে চারটা রুম অতিক্রম করতে হয়েছে। সব রুমেরই দরজা লাগা। সবাই মরার মতো ঘুমুচ্ছে।সপূর্ব রুমে যেয়ে গোসল সেরে গায়ের টিশার্ট আগুনে পুড়িয়ে ফেললো। ছাইগুলো জানালা দিয়ে পিছনের জঙ্গলে ফেলে দিলো। বিছানায় শুলো। কিন্তু চোখে ঘুম নেই। রুমের মধ্যেই পায়চারি করতে লাগলো। সে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে একটা কল দিয়ে বসলো। সাথেসাথেই রিসিভ করে ওপাশ থেকে উত্তর,

– আমাকে তুই কল দিবিনা! তোর মতো বেজন্মা কুলাঙ্গার সাথে কথা বলে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাইনা।
– আব্বু তুমি আমার কথা না শুনে কল কাটার ভুল করবেনা। আমি কিন্তু তোমার বাবার কাছে আছি। ভুলো না তোমার বাবার কাছে তোমার নামে নালিশ বসালে কি হতে পারে।
– তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?
– তোমার ছেলে হুমকির মতোই কথা মিশিয়ে বলে আব্বু। এখন অপর পক্ষ সেটা কিভাবে নিবে তার ব্যাপার।
– তুই এতোরাতে কি জন্যে কল করেছিস সেটা বল!
– আমার একাউন্টে টাকা লাগবে টাকা পাঠাও।
– এখানে আমার মান ইজ্জত ডুবিয়ে তুই টাকা টাকা করছিস! বেহায়া কুলাঙ্গা!
– তোমাকে তো আমি জোরপূর্বক বিয়ের আয়োজন করতে বলিনি। কেন করতে গেলে? কার ক্ষতি হলো? আমি কি ‘না’ করেছিলাম না? বলিনি এ বিয়ে আমি করবো না?
– তোর সাথে কথা বলাই আমার ভুল!
– কল কাটার ভুল তুমি করতে যাবা না। আমি এক কথা বারবার রিপিট করবো না। তোমার পছন্দসই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না!তা আগেই বলেছি। তুমি নিজেদের স্ট্যাটাস দেখে খানদানী মেয়ে তুলে আনবা তা তো আমি কিছুতেই মানবো না আব্বু।
– কেন? কি সমস্যা বিয়ে করতে? আনিশাকেও তো বিয়ে করলি না! আচ্ছা তুই চাস কি বলতো? আমাকে মেরে ফেলতে চাস?
– আব্বু তুমি আনিশার কথা মাঝখানে টেনো না। তুমি যেই মেয়েকে আমার জন্য চুজ করেছিলে তার ঘটনা বলি। সেই মেয়ে অলরেডি তিনজনের সাথে বেড শেয়ার করেছে। মেয়েটা যতই খানদানী হোক! চরিত্রে সে খানদানী নাহ্! আমি অবশ্যই নিজের জন্য ওমন মেয়েকে পছন্দ করবোনা!
– তুই কি বললি?
– একশো ভাগ সত্য বলেছি আব্বু। আমার ভার্সিটির ছেলেগুলো পযর্ন্ত ওই মেয়ের ব্যাপারে জানে। তোমরা যে জানো না সেটা নিয়ে আমার ডাউট হচ্ছে! আচ্ছা সিরিয়াসলি কি জানে না? নাকি নাটক করছো কোনটা?
ওপাশ থেকে আশ্চর্যজনক কন্ঠে বলে উঠে,
– আমি…আমি জানতাম না।
– আমি বিশ্বাস করি। যাইহোক টাকা পাঠাও। আমাকে কেউ যেনো কল না করে বলে দিও। আমি কোনো বিয়েশাদি করবোনা। না আমাকে ফোর্স করবে। দাদুর কাছে কিছুদিন থাকবো। নির্দিষ্ট করে জানিনা কবে আসবো। আল্লাহ্ হাফেজ।
.

তানিয়ার ফোনের টুংটাং নোটিফিকেশনের শব্দে কান আমার ফেটে যাচ্ছে! এইযে বলছি মিউট করে রাখ! তাও হারামিটা শুনছেনা। আমি না চাইতেও ওদের চ্যাটিং পড়ছি। বয়ফ্রেন্ড মেসেজ করেছে,

– hagso?

হাগছো মানে? হাগছে কিনা জিজ্ঞেস করা লাগে? আমি এক ধাক্কা মেরে তানিয়াকে বললাম,
– ওই বদমাইশ! তোর জামাই তোকে হাগছো জিজ্ঞেস করে কেন? তুই হাগবি কিনা এইটা নিয়ে ওর মাথাব্যথা কেন?
তানিয়া বেক্কলের মতো তাকিয়ে বললো,
– আরে বোন টাইপ মিস্টেক! আমার জান্টুসের প্রায়ই s এর জায়গায় g টাইপ উঠে।

আমি হাবার মতো হ্যাংলা মেরে মাথা চুলকিয়ে শুয়ে পড়ি। কি দুনিয়া রে বাপ! একদিকে বাথরুমে কয়েল জ্বালায় আরেকদিকে ‘হাসছো’ কে ‘হাগছো’ বানায়! বড়ই অদ্ভুত দুনিয়া। আমি বাথরুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। বাইরের উঠানের লাইটটা নষ্ট। তাই অন্ধকারের মধ্যেই টর্চলাইট জ্বালিয়ে বাথরুমে এসেছি। দরজার হুক লাগিয়ে কমোডের দিকে তাকাতেই আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম! বুকে থুথু দিয়ে কমোডের দিকে একটু ঝুকতেই দেখি কমোডের ভেতর থেকে বাতি জ্বলছে! কি লীলাখেলা রে বাপ! কমোডের ভেতর থেকে কোন জৌলুসের বাতি জ্বলে? আমি নাকে ওড়না চেপে আরেকটু পর্যবেক্ষণ করতেই দেখি, কার ফোন জানি কমোডের ভেতর উকি দিয়ে জ্বলছে!! আমি দ্রুত বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করে ডাকতেই সবাই ধুপধাপ করে ‘ পূর্ণতা চিল্লায়!! বাইর হ বাইর হ!!’ বলে বেরিয়ে আসে। মা হাত খোপা করছে, বাবা ঘুমে চোখ ডলছে, মামী দা হাতে বেরিয়েছে। মামা তো রীতিমতো লাঠি নিয়ে হৈচৈ! এদিকে খালুর লুঙ্গির গিট্টু খুলে মাটিতে পরে আছে সেদিকে উনার হুশ নেই! আমি লজ্জায় মুখে হাত দিয়ে আছি!! আমাকে লজ্জা পেতে দেখে খালামনি চেচিয়ে উঠে,
– মুখে হাত দিলি কেন?
– পিছে তাকাও।

খালামনি পিছনে তাকাতেই জিহবায় এক কামড় দিয়ে খালুকে ঝাড়ি দিয়ে বললেন,
– পোলাপাইনের সামনে তুমি উদনা হইয়া আছো শরম নাই? লুঙ্গির গিট্টু দাও!!
– এলিগাই তো কই নিচে এতো ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে কে? এহন দেখি এই কারবার।। শালার এই লুঙ্গিটাই পড়তাম না!

আমি বাথরুমের অবস্থা দেখাতেই মা বলে উঠে,
– কমোডের মধ্যে মোবাইল ফেলে গেছে! কত্তো বড় সাহস!! পূর্ণতা কার মোবাইল রে এটা? দেখতো চিনিস কিনা?
আমি নাকে ওড়না চেপে বললাম,
– বাথরুমে থাকতেই আমার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে তুমি আমাকে চেক করতে বলো!!

খালামনি নাকে হাত দিয়ে দেখতে গেলেন। উনি বেরিয়ে চেচানো সুরে বলে উঠলেন,
– পায়খানা করছে পানি ঢালে নাই! খাচ্চর!

মামী পাশ থেকে বলে উঠলেন,
– আপা এইটা কার কাজ হইবো কন তো? রাতের দশটা বাজে কে এমনে স্মার্ট ফোন ফালায়া যাইবো?
খালামনিকে বলতে না দিয়ে মামা বলে উঠলেন,
– কথা কম কবার পারো না? কেডা করছে কে জানে আমি তুলবার ব্যবস্থা করি খাড়াও।।
মামা যেতেই খালামনি বলে উঠলেন,
– উহ্ ! একটু পানি ঢাললে কি হইতো? পেট পচা পায়খানা করছে খাচ্চর!

বাথরুমের গা গুলানো গন্ধে আমি একমিনিটও ওই জায়গায় থাকতে পারিনি হাটা দিয়েছি ওখান থেকে। বাড়ির পেছনে আমগাছের পেছন থেকে বাশেঁর কন্ঞ্চি বের করছে মামা। আমি পাশ থেকে দেখছি। মামা সেটাকে নিয়ে চলে গেলে আমি পিছু পিছু আসবো হঠাৎ কেউ ফিসফিসিয়ে অন্যরকম কন্ঠে বলে উঠলো,

– এই…এই…

আমি ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই একটা কালো অবয়ব দেখতে পাই। খুবই লম্বা সেই কালো ছায়া! ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমগাছটার পেছনে বেড়ার কাছে দেখা যাচ্ছে। আমি শিউরে উঠি। পায়ের হাটু থরথর করে কাপছে। যেই দৌড় দিবো অন্ধকারময় অবয়বটা ফোস ফোস করে খুবই অদ্ভুত শব্দ তৈরী করলো…

-চলবে🍁

#FABIYAH_MOMO

(পূর্ণতার জীবনে তোলপাড় আসতে বাকি….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here