লুকোচুরি_গল্প #পর্ব২৩ #ইশরাত_জাহান 🦋

0
388

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব২৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
ছেলের কথা শুনে খুশি হন মিসেস নাজনীন।মেয়ে দেখার জন্য তার কিছু বান্ধবীকে কল করেন।শীঘ্রই ছেলের বিয়ে দিতে চান তিনি।

আজ বাসায় সিঙ্গারা বানিয়েছে নীরা।সিঙ্গারার শেপ একদম পারফেক্ট আর আলু রান্নাটা হুবহু হয়েছে।শুধু সিঙ্গারা খেতে যেয়ে মনে হচ্ছে পড়াটার ভিতর আলুর দম মেশানো।সবাই টমেটো সস দিয়ে নীরার এই সিঙ্গারা উপভোগ করছে।মিসেস সাবিনা বলেন,”মা নীরা,তোমার মাকে একটা কল দিয়ে বলো আমাদের বাসায় আসতে।মেয়ের হাতের প্রথম সিঙারা খাবে।”

নীরা খুশিতে খুশিতে কল দেয় মিসেস নাজনীনকে।মিসেস নাজনীন ফোন রিসিভ করে বলেন,”হ্যাঁ মা বল?”

“তাড়াতাড়ি আমার শশুড় বাড়িতে চলে আসো।আমি সিঙ্গারা বানিয়েছি।”

“এখন তো আর সম্ভব না মা।আমি তো বাইরে।”

“বাইরে কোথায়?”

“তোর জন্য ভাবী দেখতে যাচ্ছি।লাইসেন্স পেয়ে গেছি।এখন কি না করা যায়?”

“আমার জন্য ভাবী আনতে যাচ্ছো মানে কী?”

নীরার কথা শুনতে পেলো দীপান্বিতা। আর খেতে পারলো না সিঙ্গারা।বুঝতে পেরেছে নীরবের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে।মনে মনে বলে,”আমি এই পাঁচটি বছর তার জন্য অপেক্ষা করলাম।এদিকে সে মুভ অন করে নিলো।আমার দোষটা কি তাও বললো না।”

মিসেস নাজনীন বলে ওঠে,”আরে নীরবের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।নীরব অনুমতি দিয়েছে।”

“আমাকে জানাও নাই কেন?”

“আরে আমরা তো দেখতে যাচ্ছি।যদি পছন্দ হয় তারপর তোকে দেখাবো। আর আজই তো বিয়ে হচ্ছে না।”

নীরা বলে ওঠে,”বাড়ির কাছে মেয়ে থাকতে তুমি কোন জায়গায় যাচ্ছো মেয়ে দেখতে?”

“বাড়ির কাছে কোন মেয়ে আছে?সবাই তো ….?”

বাকি কথা বলার আগেই ফোন কেটে গেলো।নীরা আবার কল দেয় মিসেস নাজনীনকে।ফোন বন্ধ বলছে।বাবাকে কল দিতে যেয়েও দিলো না।ভাবলো যেহেতু দেখতে যাচ্ছে যাক।ওরা বাসায় আসলে কথা হবে।

মিসেস নাজনীন ফোন চেক করে দেখেন ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।রাতে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়েছেন।সকালে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে তার ডিটেইলস নিতে নিতে ব্যাস্ত।ফোন আর কখন চার্জ দিবেন?

মিসেস সাবিনা বলেন,”কি হয়েছে?”

“মা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গেছে। আর ভাইয়া মেয়ে দেখার জন্য হ্যাঁ বলেছে।”

সবাই খুশি হলো।কিন্তু নীরা তাকিয়ে আছে দীপান্বিতার দিকে।দীপান্বিতার মন মরা হয়ে আছে।দ্বীপ নেই বাসায়।সে তার কাজে ব্যাস্ত।

নীরব মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন বসে আছেন সোফায়।সাথে করে যে সম্মন্ধ নিয়ে এসেছে সেও আছেন তাদের সাথে।মেয়ে পক্ষ থেকে অনেক ভালো ব্যাবস্থা করা হয়েছে।একে একে সবাই এসে টি টেবিলে সব খাবারগুলো সাজিয়ে রাখছে।মিসেস নাজনীন তার বান্ধবীর সাথে গল্প করছেন।মেয়ের বাড়ি খুব সুন্দর ফিটফাট।মেয়ে সবে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে।বাবা ব্যাবসায়ী মা গৃহিণী।

সবকিছু সাজানোর পর সবার অনুমতি পেয়ে মেয়েকে আনা হচ্ছে।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন মেয়ের হেঁটে আসা দেখছেন।মেয়ে দেখতে মাশাআল্লাহ।যদিও নাম জানে কিন্তু তারপরও ফর্মালিটি এর জন্য মিসেস নাজনীন বলেন,”তোমার নাম কি মা?”

“আমার নাম লামিয়া লিমা।”

তারপর সবাই ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। নীরব এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়।সহ্য হচ্ছে তার এসব।কিন্তু সহ্য করতে হবে তাকে।

সবাই ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলতে বলছে।তাই নীরব ও লিমা আলাদা কিছু কথা বললো।কথা বলা শেষে নীরব সবাইকে বলে,”আমার পছন্দ হয়েছে।তোমরা চাইলে আংটি পড়িয়ে রাখতে পারো।”

লিমাও কোনো আপত্তি জানায়নি।সবাই খুশি হয়।লিমাকে আজই আংটি পরিয়ে দেয় মিসেস নাজনীন।

নীরবের চোখ কাপছে।তার চোখে ভাসছে দীপান্বিতা।কিছুতেই ভুলতে পারছে না মায়াবন বিহারিনীকে।

সবাই গল্প করে সন্ধার একটু পরে বের হলো।মিসেস নাজনীনের খুব ভালো লেগেছে এই পরিবার।

সন্ধায় দ্বীপ বাসায় আসলে নীরা দ্বীপকে সেই পরাটার স্বাদের সিঙ্গারা খেতে দেয়।সিঙ্গারা খাওয়ার পর দ্বীপ ও নীরা ঘরে চলে আসে।দীপান্বিতা মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে।নীরা সবকিছু দ্বীপকে খুলে বলে।দ্বীপ সব শুনে বলে,”যেহেতু নীরব মতামত দিয়েছে আর সবাই মেয়ে দেখতে গেছে আমার মনে হয় না দীপান্বিতাকে এর ভিতর আনা উচিত।”

“কিন্তু আমি তো দীপান্বিতা আপুকে কান্না করতে দেখেছি।ভালোবাসা হারানোর কষ্ট অনেক ক্যাডার সাহেব।একবার কেউ প্রেমে পড়লে সে তাকে হারাতে চায় না।”

“তুমি কারও প্রেমে পড়েছ?”

“হুম।আমার ক্যাডার সাহেবের প্রেমে পড়েছি।তাই তো আমি বুঝি দীপান্বিতা আপুর কষ্ট।”

“দীপান্বিতার ব্যাপারটা দেখার আগে দেখতে হবে নীরব কি চায়। আর এদের ভিতরে কি আদৌ দুজনের মনের মিলন আছে নাকি এক তরফা প্রেম তাও তো দেখতে হবে। এমনও হতে পারে নীরব অন্য কাউকে ভালোবাসে।”

“আমার এমন মনে হয় না।ভাইকে আমি দেখেছি,দীপান্বিতা আপুর কথা শুনলে কেমন অন্য মনষ্ক হয়ে যায়।আবার ভাইয়ের ফোনে আমি মায়াবন বিহারিনী নামে দীপান্বিতা আপুর আগের নাম্বার সেভ করা দেখেছি।আমি শিওর ওরা আগে একে অপরকে ভালোবাসতো আর তাও গভীরভাবে।”

“সবার ভালোবাসা দেখে শুধু আমারটাই দেখে না।”বিড়বিড় করে বলেই চেয়ারে বসে পরে দ্বীপ।

নীরা মেকি হাসি দিয়ে দ্বীপের কোলে বসে পড়ে।বলে,”কে বলেছে আমি আপনার ভালোবাসা দেখতে পাই না।আপনার ভালোবাসা দেখতে পাই বলেই তো আপনাকে আরো বেশি ভালোবাসি।”

দ্বীপ নীরাকে ধরে রেখে বলে,”তাহলে বলো না কেন?”

“আপনিও তো বলেননি ক্যাডার সাহেব?”

“কি?”

“আমাকে দেওয়া আপনার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা নাম।কতদিন লুকিয়ে রাখবেন আপনার এই লুকোচুরি গল্প?”

“তুমি সব জানো?”(অবাক হয়ে)

“নীরা দুই হাত দিয়ে দ্বীপের গলা জড়িয়ে বলে,”অনেক আগে থেকে।সেদিন আমি যখন রাগ করে ছিলাম তখন একবার আপনি বলেছিলেন।আমি শুনেছি কিন্তু প্রতিক্রিয়া করিনি।ভাবলাম পরীক্ষা শেষ হলে বলবেন।কিন্তু আপনি তো বলছেন না।একবার বলুন আমাকে দেওয়া নাম।আপনার মুখে শুনতে চাই এই নামটি।”

“চন্দ্রপাখি।”

বলেই দ্বীপ নীরার কপালের সাথে নিজের কপাল এক করে নেয়।দ্বীপ নীরাকে আরও একটু এগিয়ে আসতে যাবে তখনই কল আসে মিস্টার রবিনের।নীরা বাবার কল দেখে রিসিভ করে।

মিস্টার রবিন খুশিতে খুশিতে বলেন,”মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।মেয়ের নাম লামিয়া লিমা।আজই আংটি পরিয়ে এসেছি।তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে তোর ভাইয়ের।”

“মা যে বললো মেয়ে দেখে চলে আসবে।আংটি কেনো পরালে?”

“আরে তোর ভাইয়ের তাড়াহুড়া বেশি।তাই আংটি পরানো হয়েছে।মেয়ে দেখতে সুন্দরী।”

“রাখো তোমার সুন্দরী।আমি এখনই আসছি।”

বলেই কল কেটে নীরা যেতে নিলে দ্বীপ বলে,”কোথায় যাচ্ছো?”

“দুই ভাঙ্গা মনের জোড়া লাগাতে।আজকের রাত আমি ওখানে থাকবো।আপনি গেলে আসেন আমি দৌড়ালাম।”

বলেই নীরা দৌড়।দ্বীপ আহত কণ্ঠে বলে,”হায়রে আমার কপাল!এতদিন বউ কাছে আসতো আমি পরীক্ষার অজুহাত দিতাম।এখন আমি বউয়ের কাছে যাই বউ পরিবারের অজুহাত দেয়।আমার মনে হয় আর চুনু মুনু আনা হবে না।”

আজ দ্বীপ নীরাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু নীরবের কথা শুনে নীরা দৌড়ে চলে গেলো নীরাদের বাসায়।নীরা ভেবেছিলো আজকে মেয়ে দেখতে গেছে যাক।আসার পর নাহয় নীরবের সাথে কথা বলবে।কিন্তু এখন তো নীরব নিজেই ঝামেলা করে দিয়েছে।

নীরা বাসায় এসে সোজা ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”আরে এই খাদ্য বিশেষজ্ঞ ভাই আমার।খুব শখ না বিয়ে করার!মেটাচ্ছি তোর শখ।আমার ননদ কান্না করে বন্যা বয়ে দিবে আর তুই করবি অন্য মেয়ে বিয়ে?”

কথাগুলো বলেই হাফাতে থাকে নীরা।নীরার চিল্লানো শুনে বেডরুম থেকে মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসে হাজির হয়।নীরব তখনও আসেনি।

মিসেস নাজনীন বলেন,”এটা কেমন ব্যাবহার নীরা?পাশে তোমার শশুড় বাড়ি। আর কয়দিন পর তোমার ভাইয়ের বিয়ে।লোকজন এই সময় খোঁজ খবর নিতে আসে।এসব দেখলে কি বিয়ে হবে?”

“নিকুচি করেছে বিয়ের।কে বলেছে একজনের মন ভেঙ্গে বিয়ে করতে।”

এবার ঘর থেকে নীরব বের হয়ে আসে।নীরাকে বলে,”কি হয়েছে বোন?এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো?মেয়ে দেখতে তোকে নিয়ে যাইনি তো কি হয়েছে?বিয়ের আগে ঠিকই যাবি।”

“তোর ওই বিয়েতে যদি আমি তোকে জবাই করে কিমা বানিয়ে ওই লিমাকে না খাইয়েছি তো আমার নাম মুনজেরিন নীরা না।”

মিসেস নাজনীন চোখ রাঙিয়ে বলেন,”বড় ভাই হয় তোমার।মুখ সামলে কথা বল।”

“আরে কিসের বড় ভাই?যে বড় ভাই আমার ননদের মন নিয়ে খেলা করে সে কি করে বড় ভাই হয়?একজনকে মায়াবন বিহারিনী বলে করে দেয় তার হৃদয় হরিণী।করাচ্ছি তোকে বিয়ে।”

বলেই নীরবের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ঘরে।মিসেস নাজনীন এগোতে আসলে নীরা বলে,”ভাই বোনের পার্সোনাল কথা চলবে।মা বাবা নট এলাউ।”

বলেই ধুম করে দরজা লাগিয়ে দেয়।মিসেস নাজনীন ক্ষিপ্ত হয়ে মিস্টার রবিনকে বলেন”এই শিক্ষা দিয়েছো মেয়েকে।এবার বুঝো।”

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here